জেন অস্টেনের ম্যান্সফিল্ড পার্ক - ত্রয়োদশ পর্ব

(১৩)

মাননীয় জন ইয়েটস – টমের নতুন বন্ধু। আর কোনও গুণ থাকুক বা না থাকুক, ঠাটবাটের অন্ত নেই তার। সঙ্গে আছে হাত খুলে খরচ করার অভ্যাস। তার বাবা একজন লর্ড। সেই লর্ডের ছোটো ছেলে হিসেবে যথেষ্ট টাকাপয়সাও আছে তার। ম্যান্সফিল্ডে জনের আসায় স্যর থমাসের যে খুব ভালো লাগার ব্যাপার কিছু আছে, তা কিন্তু নয়। টমের সঙ্গে জনের পরিচয় হয়েছে ওয়েমাউথে। সেখানে ওরা দিন দশেক একসঙ্গে একই জায়গায় দিন কাটিয়েছে। তারপর ওদের বন্ধুত্ব, যদি আদৌ এই সম্পর্কটাকে বন্ধুত্ব বলা যায়, সেটা আরও পাকাপোক্ত হয় জনকে ম্যান্সফিল্ডে নেমন্তন্ন করার পর। জনের বাড়ি ফেরার পথে যখন সম্ভব ম্যান্সফিল্ডে একবার ঢুঁ মেরে যাওয়ার জন্য নেমন্তন্ন করা হলে সেও কথা দেয় যে ম্যান্সফিল্ডে একবার আসবে। শেষে দেখা গেল, যে সময় জন আসবে বলে আশা করা হয়েছিল, সে তার আগেই এসে উদয় হয়েছে।

সে ওয়েমাউথ থেকে বেরিয়েছিল এক বন্ধুর বাড়িতে একটা বড়সড় পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু হঠাৎ করে সেই পার্টি আর হবে না এই খবর পেয়ে হতাশ জন ম্যান্সফিল্ডে এসে হাজির হয়েছে। ওই পার্টিতে সবাই মিলে একটা নাটক মঞ্চস্থ করার কথা ছিল। সেখানে জনেরও একটা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল। তাই ওর মাথায় এখন শুধু অভিনয় আর নাটকই ঘুরছে। নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আর মাত্র দিন দুই বাকি ছিল। এমন সময় আচমকা সেই পরিবারের এক নিকটাত্মীয় মারা যাওয়ায় পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে গেল। কর্নেলের মাননীয় লর্ড রেভেনশয়ের বাড়িতে এক্লেসফোর্ডের ব্যক্তিগত নাট্যমঞ্চে নাটকে অভিনয় করে অপার আনন্দ, খ্যাতি আর লম্বা লম্বা প্রশংসা বাক্যের স্রোত প্রায় হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছিল। এরপর ওরা কমপক্ষে বছর খানেকের জন্য বিখ্যাত হয়ে যেত নির্ঘাত। সেই সম্ভাবনার এতটা কাছাকাছি এসেও সবকিছু এরকম হঠাৎ করে বানচাল হয়ে যাওয়ায় জনের মনটা ভারি দমে গিয়েছে। এখন আর কোনও কথা নয়, থেকে থেকে ঘুরেফিরে শুধু সেই নাটকের কথাই জনের মুখে লেগে রয়েছে। এক্লেসফোর্ডের ব্যক্তিগত নাট্যমঞ্চ, সেখানকার ব্যবস্থাপনা, সাজসজ্জা, অনুশীলন, মজা – সবসময় এসবকিছু নিয়েই জনের মুখে খই ফুটে চলেছে। সেইসব পুরনো দিনের গল্প করাই এখন জনের একমাত্র সান্ত্বনা।

জনের কপাল ভালো এই যে নাটক এমন একটা বিষয় যে সবারই ভালো লাগে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নাটকে অভিনয় করার ইচ্ছেটা এতোটাই প্রবল যে জন যতই এই এক বিষয়ে বকবক করুক না কেন, শ্রোতাদের আগ্রহ কিছুতেই কমে না। প্রতিটা চরিত্রের জন্য অভিনেতা বাছাই থেকে শুরু করে নাটক শেষের এপিলগ পর্যন্ত সমস্ত বর্ণনাই দারুণ মোহময় সকলের কাছে। দলের মধ্যে এমন ছেলেমেয়ে খুব কমই আছে যে মনে মনে ওই নাটকের দলের অংশ হতে না পারার জন্য আক্ষেপ করছে না। প্রায় সবাই ভাবছে ইশ, সেও যদি তার অভিনয় দক্ষতার প্রকাশ করতে পারত। যে নাটকটা অভিনীত হওয়ার কথা ছিল্, সেটার নাম Lovers’ Vows আর সেই নাটকে জনের কাউন্ট কাসেলের চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল জন বলছিল, “আরে, চরিত্রটা একেবারেই তুচ্ছ একটা চরিত্র আমার একেবারেই পছন্দ হয় নি যদি আবার কখনও এই নাটকে অভিনয় করি, তাহলে আমি মোটেই আর ওই চরিত্রে অভিনয় করব না নেহাৎ তখন আমি কোনও বাগড়া দিতে চাই নি যে দুটো চরিত্র সত্যিকারের অভিনয় করার যোগ্য, আমি এক্লেসফোর্ডের পৌঁছনোর আগেই লর্ড রেভেনশ আর ডিউক সেই চরিত্র দুটো নিজেদের জন্য বাগিয়ে নিয়েছিলেন পরে অবশ্য লর্ড রেভেনশ তাঁর সেই চরিত্রটা আমার জন্য ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তোমরা তো বুঝতেই পারছ যে সেটা গ্রহণ করা আমার পক্ষে একেবারে অসম্ভব আমার তো ওঁর জন্য বেশ খারাপই লাগত উনি আসলে নিজের কতটা কী করার ক্ষমতা আছে, সেটা ঠিকমতন বুঝে উঠতে পারেন নি সত্যি কথা বলতে কী, ব্যারনের চরিত্রের জন্য উনি একেবারেই বেমানান ছোটখাটো চেহারা, দুর্বল কণ্ঠস্বর মিনিট দশেক অনুশীলনের পরই গলা ভেঙে যায় ফলে পুরো নাটকটাই বরবাদ কিন্তু আমি ঠিকই করে নিয়েছিলাম যে কোনও ঝুটঝামেলা করব না স্যর হেনরির মতে ডিউক ফ্রেডেরিক চরিত্রের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নন। কিন্তু তাঁর এরকম মনে করার পিছনে একটাই কারণ, আর সেটা হলো এই যে, তিনি নিজেই ওই ফ্রেড্ররিক চরিত্রে অভিনয় করতে চাইছিলেন। নাহলে ফ্রেড্ররিক চরিত্রের জন্য ডিউক যথেষ্ট উপযুক্ত। স্যর হেনরির কাঠকাঠ অভিনয় দেখে আমি তো হতবাক। কপাল গুণে নাটকটা স্যর হেনরির উপর খুব একটা নির্ভরশীল ছিল না। আমাদের আগাথার অভিনয় অসামান্য। আর ডিউককেও অনেকেরই খুব ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে মঞ্চস্থ করা হলে পুরো নাটকটা দারুণ জমে যেত।”

“নাহ, তোমার কপালটা সত্যিই খারাপ। এরকম কঠিন পরিস্থিতি – তোমার মনটা খারাপ হওয়াই তো স্বাভাবিক;” সবাই সহানুভূতির গলায় এসব বলে উঠল।

“এমনিতে এরকম কিছু নিয়ে কিছু বলার কোনও মানে হয় না। তবে একথা বলাই যায় যে ওই বিধবা ভদ্রমহিলা বেচারি মরার জন্য এর থেকে আর খারাপ সময় পেতেন না। আফসোস না করে পারা যায়! আমরা চাইছিলাম দিন তিনেক যেন তার মৃত্যু সংবাদটা লোক জানাজানি না হয়। মাত্রই তো তিন দিনের ব্যাপার। আর তাছাড়াও ওই বুড়ি মহিলা ওদের ঠাকুমা, আর ঘটনাটা ঘটেছেও দু’শো মাইল দূরে। এতে তো আমার মনে হয় না, সেরকম বিশেষ ক্ষতি কিছু হতো। তাই আমার জানা মতে এই প্রস্তাবটাই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লর্ড রেভেনশ – ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির একেবারে। আমাদের কোনও কথাই কানে তুললেন না।”

টম বলল, “যাহ্‌ বাবা, এতো মজার নাটকের বদলে তার পরের নাটক হয়ে গেল। প্রেমিকদের কথা দেওয়া তো ছিল নাটকের একেবারে শেষে। আর এদিকে লর্ড আর লেডি রেভেনশ তো Grandmother অভিনয় করে ফেললেন। হয়তো তিনি তাঁর ঠাকুমার থেকে অনেক টাকাপয়সা পাবেন। আর এটা শুধু আমাদের বন্ধুদের মধ্যেই বলা যায় যে হয়তো ব্যারনের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি নিজের সুনাম আর দম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরে গিয়েছিলেন, তাই নিজেকে বাঁচানোর সুযোগ পেয়ে তার সদ্যবহার করতে একটুও দুঃখ পান নি। তোমার দুঃখটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য আমার তো মনে হয় আমাদের ম্যান্সফিল্ডেও একটা একটা ছোটখাটো নাটক মঞ্চস্থ করতেই পারি। আর সেই নাটকের জন্য জন তোমাকেই কিন্তু সব কিছু দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলব।”

কথাটা সেই মুহূর্তে মাথায় এসেছে বলে বলা হলেও কথাটা আর কথার কথা হিসেবে রইল না। অভিনয়ের ইচ্ছে সবার মধ্যেই জেগে উঠল। বিশেষ করে এখন যার হাতে বাড়ির কর্তৃত্ব, অথচ হাতে অখণ্ড অবসর, সে যে নতুন ছোটখাটো আনন্দ করার সুযোগ পেলে লুফে নেবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! তাছাড়া তার নিজেরই এমন প্রাণচঞ্চলতা আর মজা করার স্বভাব যে সে অভিনয়ের মতন নতুনত্বের দিকে ঝুঁকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তাই ম্যান্সফিল্ডে নাটক মঞ্চস্থ করার ভাবনাটা বারেবারে ফিরে ফিরে এল। “ইশ, একলেসফোর্ডের থিয়েটার মঞ্চের মতন মঞ্চ, সাজসজ্জা যদি এখানেও থাকত, আমরাও নাটক করার চেষ্টা করতে পারতাম।” দুই বোনই এই ইচ্ছায় সায় দিল। আর হেনরি ক্রফোর্ড – সে তো আহ্লাদের ডগমগ একেবারে। যতই হোক, এরকম নাটকে অভিনয়ের স্বাদ তো সে আগে কখনও পায় নি। তাই এরকম নাটক মঞ্চস্থ করার প্রস্তাব হতেই সে তো একপায়ে খাড়া। বলল, “সত্যি বলছি, যে কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে বললে আমি তো এক্ষুনি রাজি। সে শাইলক হোক বা রিচার্ড থার্ড থেকে শুরু করে কোনও প্রহসন, যাইই হোক না কেন। উৎকট রঙের কোট গায়ে চড়িয়ে, তিরছি টুপি পরে নাচনকোঁদন করা ভাঁড় নায়ক হলেও আমি করতে রাজি। আমার তো মনে হচ্ছে যেকোনোও চরিত্রেই আমি অভিনয় করতে পারব। তার জন্য ইংরেজি ভাষায় লেখা যেকোনো দুঃখের বা মজার নাটকে রাগারাগি, চিৎকার চেঁচামেচি বা বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলা বা লম্ফঝম্ফ যা করতে হয়, সব করতে পারি। চলো, সবাই মিলে কিছু একটা করি। সে যদি একটা গোটা নাটক না হয়ে অর্ধেক নাটকও হয় বা এক অংকও হয়, তাইই সই। অসুবিধে তো কিছু নেই। আর তোমাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে তোমাদেরও কারোর কোনও আপত্তি নেই। আর তাছাড়া কোনও থিয়েটার মঞ্চের তো দরকার নেই, নিজেরা মিলে আনন্দ করব, তার জন্য এই বাড়ির যে কোনও একটা ঘর হলেই চলবে।” শেষের কথাটা সে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।

“আমাদের তো শুধু একটা পর্দা হলেই চলবে। সবুজ কাপড় দিয়ে বানানো কয়েক ইয়ার্ড লম্বা পর্দা। ব্যস, তাহলেই আমাদের কাজ চলে যাবে,” টম বলল।

জন সোৎসাহে বলে উঠল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাতেই যথেষ্ট কাজ চলে যাবে। দুপাশে কয়েকটা সাইড-উয়িং, কয়েকটা দরজা আঁকা বাড়ি, আর তিন চারটে দৃশ্য নামানোর ব্যবস্থা। তার থেকে বেশি আর কিছুই লাগবে না আমাদের এরকম নাটক অভিনয় করার জন্য। নিজেদের আনন্দের জন্য তার থেকে বেশি কারোরই চাহিদা থাকার কথা নয়।”

মারিয়া বলল, “আমার তো মনে হয় কম দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া ভালো। বেশি সময়ও তো নেই। এছাড়া অন্যান্য ঝামেলাও দেখা দেবে। মিস্টার ক্রফোর্ডের কথা মেনে নেওয়াই বরং আমাদের জন্য ভালো হবে। থিয়েটার নয়, অভিনয়টাই হোক মুখ্য। অনেক ভালো নাটকেরই এমন অনেক অংশ আছে, যেখানে সাজসজ্জার ওপর নির্ভর করতে হয় না।”

এসব আলোচনা বেশ মন দিয়ে শুনতে শুরু করা এডমন্ড বলে উঠল, “এহ, না, না, না। মোটেই না। এরকম অর্ধেক কাজ করার কোনও মানেই নেই। যদি নাটক মঞ্চস্থ করতেই হয় তবে সেটা আদবকায়দা মেনে করাই ভালো হবে। কোনও একটা থিয়েটার মঞ্চে যেখানে দর্শকদের ঠিক মতন বসার জন্য পিট, বক্স, গ্যালারি থাকবে, সেরকম জায়গায় করাই ঠিক হবে। নাটকটাও হতে হবে একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। তাতে যদি কোনও জার্মান নাটক করতে হয়, তাইই সই। যাই হোক না কেন, নাটকটা জমজমাট হতে হবে। শেষে আরেকটা ছোটো নাটক, সব চরিত্র মিলে নাচ, হর্ন পাইপের সুর আর প্রতি অংকের শেষে একটা গান, সব কিছুই থাকতে হবে। আমরা যদি একক্লেসফোর্ডকে ছাপিয়েই না যেতে পারি, তাহলে আর কী করলাম আমরা!”

“উফ, এডমন্ড, রকম কোরো না তো! তোমার থেকে বেশি তো আর কেউ নাটক ভালোবাসে না! নাটক দেখার জন্য তুমি কী না করো!” জুলিয়া বলে উঠল।

“হ্যাঁ, সেটা তো ঠিকই। সত্যিকারের অভিনয়, মানে পাকা অভিনেতাদের আসল অভিনয় দেখার জন্য আমি অনেক কিছু করতে পারি। কিন্তু সখের অভিনেতাদের কাঁচা অভিনয় দেখার জন্য আমি এই ঘর থেকে হেঁটে পাশের ঘরেও যেতে রাজি নই। আর এই সব অপেশাদার অভিনেতা আসলে কিছু ভদ্রলোক – ভদ্রমহিলার দল, যাদের যথেষ্ট পড়াশোনা, শিক্ষাদীক্ষা আর ভদ্রতাবোধ থাকলেও জীবনের কোনও উদ্দেশ্য বা মানে খুঁজে পায় না বলে অভিনয় করতে চায়।”

কিছুক্ষণের জন্য সবাই চুপচাপ হয়ে গেলেও আলোচনা কিন্তু থামল না, বরং বেশ আগ্রহের সঙ্গেই চলতে থাকল। আলোচনা যত এগোয়, সবার নাটক করার ইচ্ছেও ততো বাড়ে। বাকিদের উৎসাহ দেখে সবাই ব্যক্তিগতভাবে আরও আগ্রহী হয়ে উঠল। টমের ইচ্ছে হাসি মজার নাটক, এদিকে হেনরি আর মেরির ইচ্ছে বিয়োগান্তক নাটক। সবারই পছন্দ হবে, এমন একটা নাটক খুঁজে বের করা নাকি দুনিয়ার সহজতম কাজ বলে সবার মনে হচ্ছে। যদিও শেষ পর্যন্ত কোন নাটক অভিনয় করা হবে সেটা স্থির করা গেল না, তবু সকলে মিলে নাটক মঞ্চস্থ করার ব্যাপারে এক্কেবারে একমত। পুরো ব্যাপারটাই এডমন্ডকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল। সম্ভব হলে ও এই নাটকে মঞ্চস্থ হওয়ার ব্যাপারটাকে আটকাবেই আটকাবে বলে ঠিক করল। তবে ওর মা পুরো আলোচনা শুনেও সামান্যতম আপত্তি করলেন না।

সুযোগটা এল সেদিন সন্ধ্যায়। মারিয়া, জুলিয়া, হেনরি আর জন, সবাই বিলিয়ার্ড খেলার ঘরে। টম বিলিয়ার্ড খেলার ঘর থেকে বসার ঘরে এল। সেখানে এডমন্ড চিন্তাচ্ছন্ন মনে আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে। একটু দূরে লেডি বার্ট্রাম সোফায় বসে আছেন আর ফ্যানি ঠিক তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাজ গুছিয়ে দিচ্ছে। ঘরে ঢুকেই টম বলতে শুরু করল, “উফ, আমাদের এই বিলিয়ার্ড টেবিলটার মতন অসহ্য জিনিস এই দুনিয়ার আর একটাও দেখিনি আমি। আর সহ্য হচ্ছে না। আমার তো মনে হয়, কোনও কিছুর বিনিময়েই আমি আর এই খেলাটা খেলতে যাব না। তবে একটা ভালো জিনিস এইমাত্র বুঝতে পারলাম আমি। ওই ঘরটা আমাদের নাটক করার জন্য একদম আদর্শ। যেমনটা চাই, ঠিক সেরকম লম্বা, চওড়া। দরজাগুলো একেবারে অনেকটা দূরে, কোনার দিকে। এক দরজা দিয়ে বেরিয়ে আরেক দরজা দিয়ে ঢোকা যাবে খুব সহজেই। আর চাইলে সেই ব্যবস্থাও খুব সহজে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই করে ফেলা যাবে। শুধু বাবার পড়াশোনার ঘরের বইয়ের আলমারিটা সরিয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বাবার পড়াশোনার ঘরটা দারুণ গ্রিন রুম হয়ে যাবে। ঘর দুটো যেন নাটক করার জন্যই তৈরি বলে মনে হচ্ছে।”

কথাগুলো বলতে বলতে আগুনের দিকে এগিয়ে গেল টম। আর টমের কথা শুনে হালকা গলায় জানতে চাইল এডমন্ড, “টম, তুমি নিশ্চয়ই সত্যি সত্যিই নাটকটা করতে চাও না?”

“সত্যিই করতে চাই না মানে? অবশ্যই চাই। এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে শুনি?”

“আমার মনে হয় এটা খুব বড় একটা ভুল হবে। দেখো, এমনিতে নিজেরা মিলে নাটক অভিনয়ের ব্যাপারে আপত্তি করার মতন অনেক কিছুই আছে। আপাতত আমাদের যেমন পরিস্থিতি, তাতে তো আপত্তির আরও অনেক বেশি কারণ আছে। এরকম কোনও কিছু করার চেষ্টা করাও খুব বড় ভুল হবে। বাবার কথাটা ভাবো! তিনি এখনও অনুপস্থিত। যেখানে আছেন সেখানে সর্বদাই কিছু না কিছু বিপদের আশংকা রয়েছে। এই সময় নাটক মঞ্চস্থ করা মানে তাঁর পরিস্থিতিকে অসম্মান করা। এছাড়া, মারিয়ার দিকটাও ভাবা দরকার। আমার মনে হয় মারিয়ার পরিস্থিতিটাও খুব জটিল। সবকিছু মিলিয়ে খুবই সংবেদনশীল একটা পরিস্থিতি। এই সময় এই নাটক টাটক বেশ বেপরোয়া একটা ব্যাপার হয়ে যাবে।”

“ওহ, তুই না বড্ড বেশি বেশি ভেবে ফেলিস! এমন করে বলছিস যেন বাবা না আসা পর্যন্ত আমরা সপ্তাহে তিনদিন নাটক করব, আর সেই নাটক দেখার জন্য গ্রামের সবাইকে নেমন্তন্ন করব! আরে, আমরা তো লোকজনকে দেখানোর জন্য সেরকম কিছু করছি না। শুধুমাত্র আমরা নিজেরা নিজেরা একটু আনন্দ করব, এই তো। এই একটু পরিবেশ বদল করা, একটু নতুন কিছু করার চেষ্টা করা, এই আর কী! আমাদের নাটক দেখার জন্য আমরা কোনও দর্শকও চাই না, লোক জানাজানিও হবে না। আমরা এমন একটা নাটক বেছে নেব, যেটা এক্কেবারে নির্দোষ একটা নাটক হবে, কারোর আপত্তির কোনও কারনই থাকবে না। এমনিতে তো আমরা কত অযথা কথা বলি, গল্প করি। সেই সময়টা কোনও সম্মানীয় লেখকের লেখা শালীন সংলাপ বললে আমার তো মনে হয় না, কারোর কোনও ক্ষতি হতে পারে। আমার তো এতে কোনও ভয়ও নেই, আর নেই কোনও আপত্তিও। আর বাবা’র অনুপস্থিতির কথা দেখলে আমার তো মনে হয় এটাই তো একটা বড় কারণ হতে পারে এই নাটক মঞ্চস্থ করার। ভেবে দেখ, বাবার ফেরার জন্য মায়ের অপেক্ষার সময়টা নিশ্চয়ই বেশ দুশ্চিন্তার। এখন আমরা যদি বাবার ফেরার সময় মায়ের এই দুশ্চিন্তার সময়টা মাকে আনন্দে রাখতে পারি, আগামি কয়েক সপ্তাহের জন্য মায়ের মনটা ভালো রাখতে পারি তাহলে তো আমার মনে হয় আমাদের সময়টা যেমন ভালো কাটবে, তেমন বাবাও সেরকম কিছু মনে করবেন না। যাই বলিস না কেন, বাবার ফেরার সময়টা মায়ের পক্ষে সত্যিই বেশ দুশ্চিন্তার সময়।”

কথাটা বলতে বলতেই টম আর এডমন্ড, দুজনেই মায়ের দিকে তাকাল। লেডি বার্ট্রাম সোফার এক কোণে ঢুকে হেলান দিয়ে বসে। স্বাস্থ্য, আরাম, ধন-সম্পদ আর সম্পূর্ণ শান্তির প্রতিমা যেন। হালকা ঘুমে ঢলে পড়ছেন। এদিকে ফ্যানি তাঁর কাজের ছোটখাটো ভুলভ্রান্তিগুলো ঠিক করে দিচ্ছে।

মায়ের অবস্থা দেখে একটু হেসে মাথা নাড়াল এডমন্ড।

এদিকে বেদম হাসতে হাসতে টম একটা চেয়ারে ধপাস করে বসে বলল, “বাপ রে! এতো একেবারেই ভুল করে ফেলেছি। আমার মায়ের দুশ্চিন্তা হবে একথা বলে আমি যে নেহাত বোকামো করে ফেলেছি সেটা বুঝতে পারছি।”

“কী হয়েছেটা কী, শুনি? আমি কিন্তু মোটেই ঘুমাইনি।” আধো ঘুমে একটু জড়ানো গলায় জিজ্ঞাসা করলেন লেডি বার্ট্রাম।

“আরে না, না, মা! কেউ মনে করছে না যে আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।” বলতে না বলতেই লেডি বার্ট্রাম আবার ঘুমে ঢুলতে শুরু করলেন। মাকে কথাটা বলে টম আবার আগের কথার সুত্রে একই সুরে কথা বলা শুরু করল। “দেখ এডমন্ড, তবুও আমি কিন্তু এটা বলবই যে এই নাটক করার জন্য কারোর কোনও ক্ষতি হবে না।”

“আমি তোমার সঙ্গে একমত হতে পারছি না। আমি নিশ্চিত যে বাবা এই ব্যাপারটা একেবারে অপছন্দ করতেন।”

“আর আমার মনে হয় ব্যাপারটা একদম উল্টো। তরুণ প্রজন্মের কোনও প্রতিভার স্ফুরণ ঘটলে সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাবার থেকে বেশি উৎসাহী আর কেউ হতেই পারে না। সে অভিনয়, বক্তৃতা, আবৃত্তি যাইই হোক না কেন, তিনি খুব পছন্দ করতেন। আমি নিশ্চিত যে তিনি এখানে থাকলে আমাদের খুবই উৎসাহ দিতেন। মনে নেই, আমাদের ছোটবেলায় তাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য কতবার তাঁর সামনে জুলিয়াস সিজারের মরদেহ নিয়ে শোক প্রকাশ করেছি, সেই যে, ‘to be’d and not to be’ – সেটা তো এই ঘরেই! আর সেই যে একবার পুরো বড়দিনের ছুটির প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমি ‘my name was Norval’ বলে নাটক করা শুরু করতাম!”

“সেটা একেবারেই অন্য রকম পরিস্থিতি ছিল। তুমি নিজেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তফাতটা কোথায়। তখন ছিলাম আমরা স্কুল পড়ুয়া। তাই সেই বয়সে ভালো করে কথা বলতে শিখব, বাবা এটাই চাইতেন। কিন্তু তাই বলে তিনি কখনই চাইতেন না যে তাঁর বড় হয়ে ওঠা মেয়েরা অভিনয় করুক। তাঁর সামাজিক নীতিনিষ্ঠা যে যথেষ্ট কড়া, সেটা তো তুমি জানো।”  

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, সে আমি সব জানি। বাবাকে তুই যতোটা চিনিস, আমিও ততোটাই চিনি। আমি নিজে দায়িত্ব নিচ্ছি যাতে তাঁর মেয়েরা এমন কোনও কাজ না করে যাতে বাবার খারাপ লাগতে পারে। তুই বরং নিজের চরকায় তেল দে এডমন্ড, আমি পরিবারের বাকিদের সামলে নেব।” একটু অখুশি হয়েই বলল টম।

এতেও হাল না ছেড়ে এডমন্ড বলল, “সে তুমি যদি নেহাতই অভিনয় করতে চাও, তাহলে আমার মনে হয় নাটকটা যেন খুব ছোট্ট একটা নাটক হয়। আর পুরো ব্যাপারটা যেন নিজেদের মধ্যেই হয়। আর আমার মনে হয় ওই থিয়েটার মঞ্চ বানানোর কোনও চেষ্টাই করা ঠিক হবে না। সেরকম কিছু করা মানে বাবার বাড়িতে বাবার অনুপস্থিতিতে সর্দারি করা, যেটা কোনওমতেই ঠিক হবে।”

টম এমন গলায় কথা বলা শুরু করল যে বোঝা গেল সে নাটক করার ব্যাপারে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। “সে আমি বুঝে নেব। তার জন্য যা কিছু জবাবদিহি করার সেসব আমিই করব। বাবার এই বাড়ির কোনও ক্ষতি হবে না। যেমন তুই এই বাড়িটাকে ভালবাসিস, তেমন আমি নিজেও এই বাড়িটাকে খুবই ভালোবাসি। বাড়িটার যা কিছু সামান্য বদলের কথা আমি এইমাত্র বলছিলাম সেটা সামান্য একটা বইয়ের আলমারি সরানোর মতন বদল। বা হয়তো একটা বন্ধ দরজা খুলে দেওয়া হবে। কিম্বা বিলিয়ার্ড খেলার ঘরে সপ্তাহখানেক বিলিয়ার্ড না খেলে নাটকের মহড়া দেওয়া। তুই তো এবার বলবি বাবা থাকাকালীন আমরা খাবার ঘরে যতক্ষণ বসতাম তার থেকে কম সময় সেখানে বসছি আর তার বদলে বসার ঘরে বেশি সময় বসছি; বাবার তাতেও আপত্তি হবে। কিম্বা মারিয়া, জুলিয়ার পিয়ানোটা ঘরের একদিক থেকে আরেক দিকে সরালেও বাবার রাগ হবে। তাই হয় নাকি! যত্তসব হাবিজাবি কথা!”

“সে হয়তো বাড়ির এসব বদল করলে সেটা অসুবিধা কিছু নয়, কিন্তু এসব অদলবদল করলে খরচটাও যে বাড়বে, সেটাও তো দেখতে হবে।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা তো বটেই। এইসব ছোটখাটো বদল করতে গিয়ে আমাদের বিশাল খরচ হবে! হতে পারে হয়তো পুরোপুরি কুড়ি পাউন্ড খরচা হয়ে গেল। নিঃসন্দেহে আমরা যে থিয়েটার মঞ্চ তৈরি করব, সেটা একটা বিশাল কিছু হবে! আরে বাবা, একটা ছোটখাটো সহজ কিছু একটা করা হবে। সবুজ পর্দা, আর সামান্য কাঠের কাজ, ব্যস। আর কাঠের কাজ তো আমাদের ক্রিস্টোফার জ্যাকসন নিজেই করে দিতে পারে। এই সামান্য ব্যাপারে খরচ নিয়ে কথা বলাটা একেবারেই হাস্যকর। আর জ্যাকসন কাজ পেলে বাবা খুশিই হবেন। ভাবিস না যে বাড়িতে বিচার-বুদ্ধি শুধু তোরই আছে। না চাইলে অভিনয় করিস না। কিন্তু তাই বলে ভাবিস না যে বাকিদের তুই নিয়ন্ত্রণ করবি।”

“না, না, আমি তো অভিনয় একেবারেই করব না।” দৃঢ়ভাবে বলল এডমন্ড।

কথাটা শুনে টম ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আর একলা বসে বসে এডমন্ড বিরক্তি সহকারে আগুন উসকে দিল।

ফ্যানি সব কথাই শুনল। সম্পূর্ণ বিষয়টাতেই ও এডমন্ডের সঙ্গে একমত। এবার একটু সাহস সঞ্চয় করে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এল। “শোনো, ওরা হয়তো এমন কোনও নাটকই খুঁজে পাবে না, যেটা সবার মনমতন হবে। তোমার দাদা আর দিদিদের এই ব্যাপারে পছন্দ একেবারেই আলাদা।”

“সেই ব্যাপারে আমার খুব একটা আশা নেই। ওরা যদি মনে করে করবে, তাহলে ঠিকই কিছু না কিছু একটা খুঁজে নেবে। আমি দিদিদের সঙ্গে কথা বলে দেখি। দেখি, ওদেরকেই যদি নিরুৎসাহিত করতে পারি। শুধু এটুকুই তো আমি করতে পারি।”

“আমার মনে হয় নরিস মাসি তোমার সঙ্গে একমত হবেন।”

“সে হয়তো হবেন। কিন্তু টম, মারিয়া বা জুলিয়া, কেউই তো ওঁর কোথায় বিশেষ পাত্তা দেবে না। ওদের যদি আমি নিজেই না বোঝাতে পারি, তাহলে যা হওয়ার তা হবে, শুধু শুধু নরিস মাসিকে দিয়ে ওদের বোঝানোর চেষ্টা আমি করব না। পরিবারের ভিতরে মনোমালিন্য সবথেকে খারাপ একটা ব্যাপার। আমরা আর যাইই করি না কেন পরিবারের একে অপরের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনও অর্থ হয় না।”

পরের দিন সকালে এডমন্ড যখন ওর দিদিদের সঙ্গে কথা বলল, তখন দেখা গেল ওরাও ওর কথা শুনে বিরক্ত। ওর কথা শুনে নিজেদের মত বদল করা তো দূরের কথা, বোঝা গেল এই নাটক করার যে আনন্দ, সেটা পাওয়ার ব্যাপারে ওরা নিজেদের মনস্থির করে ফেলেছে টমের মতোই। লেডি বার্ট্রামেরও কোনও আপত্তি নেই। আর এই নাটক করা নিয়ে ওদের বাবার যে কোনও আপত্তি থাকতে পারে ওরা সেটাও মনে করছে না। যে কাজটা আগেও আরও অনেক অভিজাত পরিবার করেছে, অনেক মহিলা করেছে, সেটা করলে ওদের পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে এটা মানতে কেউই রাজি নয়। আর এই নাটক তো শুধুমাত্র ভাইবোন আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব মিলে করা হবে, তার বাইরে আর কেই বা এই নাটকের কথা জানতে যাচ্ছে! কাজেই এই নাটকে কোনও দোষ খোঁজা বড্ড বাড়াবাড়ি।

মারিয়ার পরিস্থিতি যে একটু সাবধানে বুঝে চলার মতন সেটা অবশ্য জুলিয়া একটু মেনে নিল। তবে তার মানে তো এই নয় যে ওকেও বুঝেশুনে চলেতে হবে! যতই হোক, ও তো আর কাউকে বিয়ে করার জন্য বাগদান করে বসে নেই। এদিকে মারিয়া মনে করছে ওর যেহেতু বাগদান হয়েই গিয়েছে, সেহেতু ও আরও বেশি স্বাধীন, কোনও কিছু নিয়েই ভাবার নেই। সেদিক থেকে ও নিজেকে জুলিয়ার থেকেও বেশি স্বাধীন, ওকে তো এখন বাবা, মায়ের কথা শুনেও চলতে হবে না।

খুব একটা আশার আলো দেখতে না পেলেও এডমন্ড সমানে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে গেল। ঠিক এমন সময় গির্জা বাড়ি থেকে এসে হেনরি ঘরে ঢুকল। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “আমাদের নাটকের জন্য লোকবলের কোনও অভাব হবে না মিস বার্ট্রাম। আমার বোন তো মহা খুশি। ও নিজেও নাটকের দলে যোগ দিতে চায়। তুমি যেসব চরিত্র করতে চাইবে না, সেরকম বয়স্ক দাই বা সামান্য সঙ্গিনীর চরিত্র পেলেও ও অভিনয় করতে চায় বলে জানিয়েছে।”

মারিয়া এডমন্ডের দিকে তাকিয়ে যেন বলতে চাইল, “দেখলি তো? মেরি ক্রফোর্ডও যদি এতে আগ্রহী হয়, তবে আমরা কী করে ভুল হতে পারি?” এবার এডমন্ড চুপ করে গেল। মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে অভিনয় করার আকর্ষণ তাবড় তাবড় লোকের মনেও আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারে। ভালোবাসার টানে ও মেরির এই প্রস্তাবকে অন্য কিছু না ভেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব হিসেবেই ধরে নিল।

নাটকের পরিকল্পনা ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে শুরু করল। এখন বিরোধিতা করা নিতান্তই অর্থহীন। এমনকি মিসেস নরিস সম্পর্কেও এডমন্ড যে ভেবেছিল বিশাল আপত্তি করবেন, দেখা গেল সেটাও এডমন্ড ভুল ভেবেছিল। তিনি এমন কোনও আপত্তি তুললেন না যেটা টম আর মারিয়া, জুলিয়া মিলে পাঁচ মিনিটে সমাধান করতে পারবে না। ওরা সবাই বেশ জোরের সঙ্গেই মিসেস নরিসের তোলা ছোটখাটো আপত্তি উড়িয়ে দিল। আর সবথেকে বড় কথা এতে কারোরই সেরকম বিশেষ খরচ হবে না। বিশেষ করে তাঁর নিজের তো কোনও খরচই নেই। বরং তিনি বুঝতে পারলেন যে এই বাড়িতে বেশ কিছুদিন হইহই রইরই চলবে। তাতে তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখা ছাড়াও গুরুত্ব পাওয়ার মতন আনন্দও পাবেন। সেক্ষেত্রে তিনি নিজের বাড়িতে নিজের খরচে থাকার ঝামেলা ছেড়ে সবার সুবিধার কারণেই এখানে থাকছেন এই বাহানায় এই বাড়িতেই থেকে যেতে পারবেন। সব কিছু হিসেব কষে তিনি তো এই নাটকের পরিকল্পনায় যারপরনাই খুশি।    

 

প্রথম পর্বের লিংক

দ্বিতীয় পর্বের লিংক

তৃতীয় পর্বের লিংক

চতুর্থ পর্বের লিংক

পঞ্চম পর্বের লিংক 

ষষ্ঠ পর্বের লিংক

সপ্তম পর্বের লিংক

অষ্টম পর্বের লিংক 

নবম পর্বের লিংক 

দশম পর্বের লিংক 

একাদশতম পর্বের লিংক 

দ্বাদশতম পর্বের লিংক