অন্যস্বর পত্রিকার শুরু আজ থেকে দু-দশক আগে, কিছু কমিউনিস্ট রাজনৈতিক কর্মীর উদ্যোগে। রাজনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন – সমাজতন্ত্রের পতনজনিত হতাশা-শূণ্যতার সুযোগে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণপন্থার উন্মার্গগতি এবং তার মুখে বাম রাজনীতির অসহায়তার প্রেক্ষিতে বেশ কিছু প্রয়োজন সামনে আসছিল, যাদের অন্যতম ছিল –বামপন্থার ডিস-কোর্সটির সম্প্রসারণ; কিছুটা ওভার–অ্যামবিসাশ শোনালেও বলতে বাধা নেই যে তার মূল স্পিরিটটা ছিল ‘বামপন্থার পুনরাবিস্কার’। নতুনভাবে মার্কসবাদের ইতিহাসকে পড়া, বিগত সময়ে তার পরিবর্তনশীল গতিপথের কারণ-গুলি অনুধাবন করা, সমাজ-বিপ্লবে বিভিন্ন শ্রেণীগুলির ভূমিকাকে ফিরে দেখা,  সমসাময়িক পুঁজি ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনপ্রিয় সংগ্রামগুলির মধ্যে হেজিমনি-কাউন্টার হেজিমনির টানাপড়েন গুলি বোঝা এবং সর্বোপরি নয়া-উদারবাদের যুগে কৃষক আন্দোলনকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া – বামপন্থা তথা মার্কসবাদের পুনরাবিষ্কারে এগুলোই ছিল পাথেয়।

এই খোঁজে ক্লাসিকাল মার্কসবাদীরা ছাড়া তত্ত্বগত দিক থেকে যারা উদ্দীপনা যুগিয়েছিলেন তাদের মধ্যে যেমন গ্রামশি থেকে ফুকো-লাকাঁ-দেরিদা ছিলেন, তেমনি ছিলেন রেজনিক-উলফ, ছিলেন নানা ঘরাণার নারীবাদী, এডওয়ার্ড সইদ, সাব-কমান্দান্তে মারকোস, সামির আমিন। আর ছিলেন আমাদের এই শহরের অগ্রজ-প্রতিম শিক্ষক-কমরেড অজিত চৌধুরী, গৌতম ভদ্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু দাশগুপ্তরা। যেসব উৎসাহী লেখকরা  লিখে, ধারণা দিয়ে সর্বরকমে সামনে থাকতেন সেইসব মেডিক্যাল কলেজ, প্রেসিডেন্সির ছাত্র এবং স্কটিশ-চার্চ কলেজের টিচাররা তাদের কেউ কেউ আজ আর নেই। আবার অনেকেই আছেন, থাকছেন, থাকবেন।

শুরুর প্রতিজ্ঞা ছিল দ্বিভাষিক ত্রৈমাসিক – যা তেমনভাবে রাখা যায়নি কখনই। প্রথম কয়েকটি সংখ্যার পরিসরে ধরা পড়েছে ‘সারপ্লাস অ্যাজ রেন্ট’ এর মত ধারণা ও তার ব্যাখ্যা, যা একভাবে তৃতীয় বিশ্বের মার্কসবাদকে বোঝার তাত্ত্বিক মেরুদণ্ডও বটে। পরে অবশ্য অচিরেই পত্রিকাটি বিষয়ভিত্তিক সাময়িকীতে পর্যবসিত হয়। কখনও খুব সংবেদনশীল বিষয় (গুজরাত গনহত্যা, আফগান যুদ্ধ) বা ব্যাক্তি (বিশ্বায়নের প্রথম শহীদ কার্লো জিউলিয়ানি) জনপ্রিয়ও হয়।  সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছিল ডেভেলপমেন্ট হেজেমনি সংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গ যখন পরিবর্তনের আবর্তে বামফ্রন্টকে সরিয়ে তৃনমূলকে ক্ষমতায় আনছে সেই সন্ধিক্ষণে প্রকাশ পেল পরিবর্তনের অন্যস্বর। আবার বামদলগুলি যখন সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদকে ঠেকাতে হবে – এই অছিলায় সংবিধান তথা তার প্রণেতা বি আর আম্বেদকরকে মাথায় তুলছেন, তখন প্রকাশিত হল আম্বেদকর সংখ্যা – অন্যস্বরের সাম্প্রতিকতম সংখ্যা। তবে সে তার তাত্ত্বিক ক্ষেত্র থেকে বিচ্যূত হয়নি কখনো – আগামীদিনেও যাতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে আপনাকেও সমান উদ্যোগী হতে হবে আমাদের সঙ্গে – বিশেষত অন্যস্বরের ওয়েব অস্তিত্বের প্রারম্ভ লগ্নে।