জেন অস্টেনের ম্যান্সফিল্ড পার্ক - প্রথম পর্ব

ম্যান্সফিল্ড পার্ক

(১)

সে প্রায় বছর তিরিশেক আগের কথা।1 হান্টিংডনের2 মিস মারিয়া ওয়ার্ডের কপালটা খুলে গেল। মাত্র সাত হাজার পাউন্ডের অধিকারিণী হয়েও মিস মারিয়া ওয়ার্ড নর্দাম্পটন কাউন্টির ম্যান্সফিল্ড পার্কের3 স্যর থমাস বার্ট্রামকে পাকড়াও করে ফেললেন। বিয়ের পর স্যর থমাস বার্ট্রামের স্ত্রী হিসেবে তিনি যে শুধু ব্যারোনেট লেডির4 পদে উন্নীত হবেন, তাই নয়, তিনি একই সঙ্গে বিশাল বাড়ি আর অতুল সম্পদের যে আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য তারও অধিকারিণী হয়ে উঠবেন। মিস মারিয়া ওয়ার্ডের এহেন সৌভাগ্যে হান্টিংডনের সবাই খুব খুশি।4 স্যর থমাসের মতন ধনী পাত্রের সঙ্গে বিয়ে, তাই আর্থিক লেনদেনের ব্যাপার তো থাকেই।5 তাঁর এক কাকা ছিলেন উকিল। তিনি জানান6 এই সম্বন্ধ বাবদ হাজার তিনেক পাউন্ড খরচ করা যেতেই পারে।7 এরপর মারিয়ার মতন সৌভাগ্য তাঁর বাকি দুই বোনেরও হবে বলেই সবাই ধরে নিল। যতই হোক, মিস ওয়ার্ড আর মিস ফ্রান্সেস, দুজনেই মারিয়ার সমান রূপসী। কিন্তু মুশকিল এটাই যে দুনিয়ায় যত রূপসী মেয়ে আছে, তত বেশি ধনী পুরুষ নেই।

বছর ছয়েক পর মিস ওয়ার্ডকে রেভরেন্ড মিস্টার নরিসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই খুশি থাকতে হলো।8 মিস্টার নরিসের সঙ্গে মিস ওয়ার্ডের সম্বন্ধটা খুব একটা সুবিধার হলো না। তিনি স্যার থমাস বার্ট্রামের বন্ধু হলেও তাঁর সহায়সম্পত্তি বিশেষ কিছু ছিল না বললেই চলে। তবে স্যর থমাস বার্ট্রাম খুব খুশির সঙ্গেই মিস্টার নরিসের জন্য ম্যান্সফিল্ড পার্কে একটা রোজগারের ব্যবস্থা করে দিলেন।9 মিস্টার ও মিসেস নরিস যখন ম্যান্সফিল্ড পার্কে তাঁদের বিবাহিত জীবন শুরু করলেন তখন তাঁদের আনুমানিক আয় বছরে এক হাজার পাউন্ডেরও কম।10

অন্যদিকে মিস ফ্রান্সেসের কপালটা দেখা গেল আরও খারাপ। তিনি বেছে নিলেন এক মেরিন লেফটেন্যান্টকে।11 সেই লেফটেন্যান্টের না আছে পড়াশোনা, না আছে টাকাপয়সা। এমনকি বিশেষ কারোর সঙ্গে সেরকম চেনা পরিচিতিও ছিল না তাঁর। সবাই একবাক্যে স্বীকার করলেন যে মিস ফ্রান্সেস এর থেকে খারাপ কাউকে বেছে নিতে পারতেন না; এই মেরিন লেফটেন্যান্টকে পছন্দ করে তিনি তাঁর পরিবারের সবার মুখ পুড়িয়েছেন। অহংকার আর নীতিগত দিক থেকেই স্যর থমাস বার্ট্রাম চাইতেন তাঁর পরিবারের সকলেই যেন বেশ অবস্থাসম্পন্ন হয়। তাঁর মতন না হলেও অন্তত তাঁর কাছাকাছি। লেডি বার্ট্রামের বোনকেও তিনি সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু মিস ফ্রান্সেসের স্বামীর কাজের ধরণটা এমনই যে চাইলেও তিনি বিশেষ কিছু সাহায্য করে উঠতে পারলেন না। ইতিমধ্যে  লেফটেন্যান্টকে সাহায্য করার অন্য কোনও উপায় খুঁজে বের করার আগেই বোনেদের মধ্যে চরম অশান্তি হয়ে গেল। দেখতে গেলে এই ঝামেলায় সবারই দোষ ছিল। অবশ্য মিস ফ্রান্সেস যেরকম কারোর মতামতের তোয়াক্কা না করেই পাত্র পছন্দ করলেন তাতে এরকম ঝামেলা হওয়াই স্বাভাবিক। অকারণ বাদানুবাদ এড়াতে তিনি বিয়েটা একেবারে না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যাপারে আর কারোর সঙ্গে যোগাযোগই করলেন না, কারো থেকে বিয়ের জন্য অনুমতিও চাইলেন না।12

লেডি বার্ট্রাম মানুষটা একটু নির্বিরোধী গোছের। কোনও ব্যপারেই বিশেষ উত্তেজিত হন না। বোনের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকেবুকে গেছে ধরে নিয়ে এই ব্যাপারে তিনি আর মাথা ঘামালেন না। কিন্তু মিসেস নরিস এতো সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। রাগ করে একটা লম্বাচওড়া চিঠি না লেখা পর্যন্ত তাঁর শান্তি হলো না। সেই চিঠিতে তিনি মিস ফ্রান্সেস বা ফ্যানি যে কিরকম বেয়াক্কেলে কাজ করেছেন আর এরকম কাজের কী কী খারাপ ফল হতে পারে তার বিস্তারিত বর্ণনা ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সেই চিঠি পড়ে মিস ফ্রান্সেস আহত হলেন আর তিনিও একটা রাগী চিঠি লিখে তার উত্তর দিলেন। এর ফলে তিন বোনের মধ্যে এক তিক্ততার সৃষ্টি হলো। মিসেস নরিস এই চিঠির কথা স্যর টমাসেকে জানাতে ভুললেন না। আর তাতে স্যর থমাস অপমানিত ও আহত বোধ করলেন। এসব কিছুর ফলস্বরূপ তাঁদের সকলের মধ্যে বেশ অনেকদিন পর্যন্ত আর কোনও যোগাযোগ রইল না।

ওঁদের সবার বাড়িগুলো শুধু যে বেশ দূরে দূরে ছিল তাই নয়, ওঁদের ঘোরাফেরাও এমন আলাদা আর দূরের বৃত্তে ছিল যে একে অপরের ব্যাপারে কিছু জানতেই পারতেন না। প্রায় বছর এগারো এরকমই চলল। এতে স্যর থমাস বেশ শান্তিতেই ছিলেন। কারণ এই দূরত্বের কারণেই মিসেস নরিস তাঁকে ক্ষণে ক্ষণে শোনাতে পারতেন না যে ফ্যানির আবার একটা বাচ্চা হয়েছে। আজকাল রাগত গলায় এই কথাটা প্রায়ই বলে থাকেন তিনি।

বিয়ের এগারো বছর পর মিসেস প্রাইস আর তাঁর অহংকার বা রাগ ধরে রাখতে পারলেন না। একমাত্র যে জায়গা থেকে কিছুটা সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা তখন তাঁর ছিল, সেটাকে অগ্রাহ্য করার জোর আর তাঁর ছিল না। রোজগারে অক্ষম মদ্যপ স্বামী, ক্রমাগত বেড়ে চলা পরিবার আর সামান্য আয় – সব মিলিয়ে তিনি তখন জেরবার। একসময় যাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তিনি হেলায় নষ্ট করেছেন এখন আবার তাঁদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করতে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। মিসেস প্রাইস লেডি বার্ট্রামকে একটা চিঠি লিখলেন। সেখানে তাঁর হতাশা, অনুশোচনা, এতো বেশি সংখ্যক ছেলেমেয়ে, সাংসারিক অভাব এসব কিছু এমন করে বর্ণনা করলেন যে তিন বোনের মধ্যে যে সংঘাত ছিল সে সবকিছু মিটে গেল। তখন তিনি নবম সন্তানের জন্ম দেবেন। সেই অনাগত সন্তানের জন্য তিনি সাহায্য প্রার্থনা করে এটাও জানালেন যে এর আগের আটটি সন্তানের দেখভাল করাই তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই তিনি তাঁর বড় ছেলে, যার বয়স বছর দশেক, তার জন্য কোনও রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় কীনা সেটা জানতে চান। মিসেস প্রাইস জানালেন যে যেকোনোও কাজ হলেই চলবে। ছেলেকে কি স্যর থমাসের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ায় কোনও কাজে লাগানো যায়? কিম্বা উলউইচে রয়্যাল মিলিটারিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারেই বা স্যর থমাস কী মনে করেন? কিছু না হোক অন্তত ছেলেকে কী করে পুবের দেশে কোনও একটা কাজে পাঠানো যায়, সেই খবর দিলেও চলবে।

মিসেস প্রাইসের এই চিঠি লেখা বিফলে গেল না। সবার মধ্যে শান্তি ফিরে এল। এই দুঃখের চিঠি পড়ে সবারই মনটা খারাপ হলো। লেডি বার্ট্রামর তরফ থেকে কিছু টাকাপয়সা, বাচ্চার জন্য জামাকাপড় পাঠানোর ব্যবস্থ করলেন আর স্যর বার্ট্রামের তরফ থেকে ভালো ভালো কথা সহ চিঠিটা মিসেস নরিস লিখলেন।

এতো গেল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এরপরের একবছরের মধ্যে মিসেস প্রাইসের জন্য সুবিধাজনক আরও কিছু ঘটল। মিসেস নরিস যখনই একমনে কারোর দিকে তাকান, তখনই তাঁর বেচারি গরিব বোনটার কথা আর তাঁর পরিবারের কথা মনে পড়ে যায়। মিসেস প্রাইস আর তাঁর পরিবারের কথা ভাবতে ভাবতে তাঁর সবসময় মনে হয় যদি ওদের জন্য আরেকটু কিছু করা যেত। এমন কী তিনি এটাও ভাবতে শুরু করলেন যে অতগুলো ছেলেমেয়ের মধ্যে থেকে অন্তত একটা বাচ্চার দায়দায়িত্ব থেকে যদি তাঁর বোনকে একেবারে মুক্তি দিতে পারতেন। সেটা যে তিনি করতে পারবেন না তা তিনি বিলক্ষণ জানেন, তবুও বারেবারে এটাই মনে হয় তাঁর। তাঁর মনে হয়, “ফ্যানির বড় মেয়েরটার বয়স এখন নয় বছর। এই সময়টাই তো মা’কে বেশি করে দরকার হয়। কিন্তু বেচারি ফ্যানি! মা হিসেবে ও কি মেয়েকে কখনই সেই সময়, সেই মনোযোগ দিতে পারবে? যদি ফ্যানি ওর দুই বোনের কাউকে ওর বড় মেয়ের দায়িত্ব নিতে দেয়, তাহলে কেমন হয়? এজন্য এই দুই বোনকে যে ঝামেলা বা খরচ পোয়াতে হবে, সেটা ওই মেয়ের যে উপকার হবে তার তুলনায় তো কিছুই না।“ প্রস্তাবটা শুনে লেডি বার্ট্রাম সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিলেন কথাটা। “ঠিকই তো, তার থেকে ভালো আর কিছুই হয় না। আমরা বরং মেয়েটাকে এখানে নিয়ে আসি।“

স্যর থমাস অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যাপারে একমত হতে পারলেন না। দ্বিধান্বিত হয়ে তিনি একটু চিন্তাভাবনা করলেন। সত্যিই, ব্যাপারটা তো খুব একটা সামান্য কোনও ব্যাপার নয়। একটা মেয়েকে এভাবে নিয়ে এলে তাকে তো ঠিকমতন দেখভালও করতে হবে। তার পড়াশোনা থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে তার বিয়ে দেওয়া, সব কিছুই ভাবতে হবে। নাহলে তাকে পরিবারের সবার থেকে আলাদা করে এখানে আনলে তাতে দয়া দেখানোর থেকে নিষ্ঠুরতা করা হয় বেশি। তিনি নিজের চার ছেলেমেয়ের কথাও ভাবলেন। তাঁর দুই ছেলে। সেই ছেলেদের কারোর সঙ্গে প্রেম ভালোবাসা হয়ে গেলে! কিন্তু স্যর থমাস তাঁর আপত্তির কথা বলতে শুরু করতেই তাঁর বলা আর না বলা সব কথার উত্তরে মিসেস নরিস তাঁর কথার মাঝে বলে উঠলেন,

“স্যর থমাস, আমি আপনার কথাটা একদম জলের মতন পরিষ্কার বুঝতে পারছি। আপনি যে কতটা দয়ালু আর ভদ্র, তা কি আর আমি জানি না? এই ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে একদম একমত যে একটা বাচ্চাকে দূর থেকে যতোটা সম্ভব সাহায্য করা আর নিজের কাছে নিয়ে আসা দুটো একেবারেই আলাদা। এখন ব্যাপার হচ্ছে এটাই যে এক্ষেত্রে যে সামান্য সাহায্য করার ক্ষমতা আমার আছে তা না করে চুপ করে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার নিজের তো কোনও বাচ্চা নেই, তাই নিজের বোনঝির জন্য না ভাবলে আর কার জন্য ভাবব? আমি জানি মিস্টার নরিসও সেরকমই ভাবেন। আমি ‘কথা কম, কাজ বেশি’ মন্ত্রে বিশ্বাসী একজন মহিলা, তাই আর বেশি কথা বলব না। তবে একটা কথা অবশ্যই বলব যে একটা ভালো কাজ করার আগে এতো ভয় পেলে চলবে না। মেয়েটাকে উপযুক্ত শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে সময় এলে বাইরের জগতের সঙ্গে ঠিকমতন পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। হয়তো সম্ভাবনা খুব বেশি নেই, তবুও কে জানে, হয়তো কোনও যৌতুক ছাড়াই একটা ভালো বিয়ে করে মেয়েটা জীবনে ঠিকমতন থিতু হয়ে যেতে পারবে। ও আমাদের বোনের মেয়ে। স্যর থমাস, আপনার আত্মীয় একটা বাচ্চা মেয়ে ওই পরিবেশে কোনও সুযোগ সুবিধা ছাড়াই বড় হয়ে উঠবে, সেটা কী করে হয়! আমি এটা বলছি না যে মেয়েটা রূপে গুণে ওর মাসতুতো বোনেদের সমান হবে, বা বলা ভালো হবেই না, তবুও আমাদের সমাজে বড় হয়ে উঠলে এই সমাজের সব রকম সুযোগ সুবিধা পেলে ও হয়তো ভালো একটা বিয়ে শাদি করে ওর জীবনে বেশ ভালোভাবেই থিতু হতে পারবে। আমি জানি আপনি আপনার ছেলেদের কথা ভাবছেন। কিন্তু একসঙ্গে ভাইবোনের মতন বড় হয়ে উঠলে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে, সেটা নিশ্চয়ই জানেন আপনি। আমি তো বলব, এক বাড়িতে বড় হলে সেরকম কিছু হওয়া একেবারেই অসম্ভব। অন্তত আমি তো এরকম কোনও ঘটনার কথা আজ অবধি শুনি নি। সত্যি কথা বলতে কী, সেরকম কিছু যাতে না হয় সেটা আটকানোর জন্য এটাই সবথেকে নিশ্চিত উপায়। ধরুন, মেয়েটা খুব রূপসী, আর আজ থেকে বছর সাতেক পর টম বা এডমন্ড ওকে প্রথমবারের জন্য দেখল, তখন কী হতে পারে একবার ভাবুন। ওই মেয়ে যে আমাদের থেকে এতো দূরে এতো অভাব আর অবহেলার মধ্যে বড় হয়েছে, সেটা ভেবেই তো আপনার এতো ভদ্র আর দয়ালু দুই ছেলের কেউ একজন ওর প্রেমে পড়ে যেতে পারে, তাই না? বরং এই বয়স থেকেই যদি ওরা একসঙ্গে বড় হয় তাহলে মেয়েটা যতই সুন্দরী হোক না কেন ওকে কখনই বোন ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারবে না।“

“তুমি যা বলছ, তা একদমই সত্যি। এই ব্যাপারে আমি আপত্তির কিছু দেখছি না। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই যে এরকম গুরুতর একটা বিষয়ে খুব হালকা ভাবে না এগোনই ভালো। মিসেস প্রাইসের যদি সত্যিই কোনও উপকার করতে হয় আর আমরা যদি সত্যিই একটা ভালো কাজ করতে চাই তাহলে আইনি কাগজপত্র তৈরি করে মেয়েটাকে নিয়ে আসাই ভালো। কিন্তু তুমি যেরকম আশা করছ যে এখানে বড় হলে যৌতুক ছাড়াই ওর একটা ভালো বিয়ে হবে, সেটা নাও হতে পারে। এমনকি অ যদি বিয়ে না করে তাহলেও ও যেন একজন ভদ্রমহিলার মতন আরামদায়ক জীবনযাপন করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।“ – স্যর থমাস বললেন।

খুশিতে কলকল করে উঠলেন মিসেস নরিস। “এই তো, একদম ঠিক বলেছেন আপনি। আমি ঠিক বুঝতে পারছি যে আপনি কী বলতে চান। আপনার মতন দয়ালু, সুবিবেচক যে আর দ্বিতীয় কেউ হয় না, এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করে। আপনি তো জানেন আমি আমার ভালোবাসার মানুষদের জন্য যখন, যেভাবে, যতটুকু করা সম্ভব ঠিক ততোটাই করার চেষ্টা করি। আপনার মেয়েদের যতোটা ভালোবাসি তার একশ ভাগের এক ভাগও আমি ওই মেয়েকে আমি ভালোবাসি না, সে আমি ওকে যতই নিজের বলে মনে করি না কেন। তবুও আজ ওকে যদি আমি অবহেলা করি তাহলে আমি নিজের চোখে নিজেই ছোট হয়ে যাব। যতই হোক, ও তো আমাদের বোনের মেয়ে! যখন ওর দিকে একটু সাহায্যের হাত বাড়ানোর ক্ষমতা আমার আছে, তখন সেটা না করে কী করে পারা যায় বলুন তো! স্যর থমাস, আমার যত দোষই থাকুক না কেন, মনটা আমার খুবই নরমসরম। বেশি অর্থকড়ি তো নেই আমার, তাই দরকার হলে একটা ভালো কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই জীবন থেকে বাদ দিতে প্রস্তুত আমি। এখন আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি কালকেই আমার বেচারি বোনটাকে চিঠি লিখে সব কথা জানাব। তারপর যেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে মেয়েটাকে এখানে ম্যন্সফিল্ডে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করব। আপনাকে কিচ্ছুটি ঝামেলা ভোগ করতে হবে না। কী বলুন তো, যে কাজ আমার করার কথা, সেই কাজ আমি কক্ষনো এড়িয়ে যাই না। এই কাজটা করার জন্য আমি আমার কাজের মেয়ে ন্যানিকে লন্ডনে পাঠাব। ওখানে ওর কাজিন যে কীনা ঘোড়ার জিন বানায়, সে থাকে। ন্যানি ওর কাজিনের কাছে থাকতে পারবে। আর সেখানেই ফ্যানির মেয়েকে ন্যানির সঙ্গে দেখা করানোর ব্যাবস্থা করা যাবে। আমার মনে হয়, কোনো সম্মানিত ব্যবসায়ীর স্ত্রী বা অন্য কেউ না কেউ সবসময়ই পোর্টসমাউথ থেকে লন্ডনে যান। বিশ্বাসযোগ্য এমন কারোর সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে করেই ফ্যানির মেয়েকে লন্ডনে নিয়ে আসা সহজ হবে।”

আগে থেকে কিছু না বলে ন্যানিকে ওর কাজিনের কাছে থাকতে হবে, সেটা স্যর থমাসের সম্মানের জন্য খুব একটা ভালো হবে না। তাই এই ব্যাপারে স্যর থমাস একটু আপত্তি জানালেন। তবে এই একটা ব্যাপার ছাড়া তিনি আর বিশেষ আপত্তি কিছু করলেন না। এরপর আরেকটু ভালো জায়গায় ফ্যানির মেয়ের সঙ্গে ন্যানির দেখা করানোর বন্দোবস্ত করা হলো। সেই ব্যবস্থায় অবশ্য একটু বেশি খরচা পড়বে। তবে শেষপর্যন্ত সবকিছু যখন ঠিক হয়ে গেল তখন এই যে একটা ভালো কাজ করতে চলা হচ্ছে সেটা ভেবেই সবাই ভারী খুশি হয়ে উঠলেন।

দেখতে গেলে এই যে সবাই এতো আনন্দিত হয়ে উঠলেন এই আনন্দের ভাগ কিন্তু সবার জন্য সমান হওয়ার কথা নয়। কারণ, স্যর থমাস ঠিক করেই নিয়েছেন যে তিনিই মেয়েটার দেখভাল করার জন্য সমস্ত খরচ আর অন্যান্য দায়িত্ব বহন করবেন। আর অন্যদিকে, মিসেস নরিসের কিন্তু ওই মেয়ের দেখভাল করার ব্যাপারে খরচ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। হাঁটা, চলা, কথা বলা বা পরিকল্পনা করার ব্যাপারে তাঁর মতন উপকারি আর কেউ হতে পারেন না, কিন্তু সেই উদারতা কীভাবে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানতেন। অন্যকে উপদেশ দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর ভালোবাসা আর অর্থের প্রতি তাঁর ভালোবাসা দুটোই ছিল সমপরিমাণ। আর নিজের পয়সা বাঁচিয়ে বন্ধুদের পয়সা খরচ করাতে তাঁর জুড়ি ছিল না। স্যর বার্ট্রামের স্ত্রীর বোন হিসেবে তিনি ধনী আর সম্মানীয় কাউকে বিয়ে করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি। তাই সামান্য আয়ের একজনকে বিয়ে করে তিনি প্রথম থেকেই কম খরচ করার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিলেন। কোনও সন্তান না থাকায় পরবর্তীতে এতো সাবধানী হওয়ার আর কোনও দরকার ছিল না। বিয়ের পর যেটা প্রয়োজন ছিল সেই কম খরচ করার ব্যাপারটা কিন্তু পরে তিনি ইচ্ছে করেই চালিয়ে গিয়েছেন।  ছেলেমেয়ে থাকলে তাদের জন্য সঞ্চয় করার একটা ব্যাপার থাকে। কিন্তু যেহেতু সেরকম কোনও দায়দায়িত্ব তাঁর ছিল না, তাই তাঁর এই সাশ্রয়ী মনোভাবের কোনও কারণ ছিল না। এমন কী তাঁদের বাৎসরিক যা আয় ছিল, তাতে সুখ স্বাচ্ছন্দ কম করারও কোন প্রয়োজনও ছিল না। তবুও তাঁর এই সাশ্রয়ী মনোভাবের কারণেই, বোনের প্রতি যত ভালবাসাই থাকুক না কেন, বোনের মেয়েকে সাহায্য করার ব্যাপারে পরিকল্পনা আর আয়োজন করার থেকে বেশি আর কিছু তিনি প্রাণে ধরে করতে পারবেন না। আর সেটা হয়তো তিনি নিজে বুঝতেও পারেন না। তাই চার্চ থেকে দেওয়া যে বাড়িতে তিনি থাকেন সেখানে ফেরার সময় নিজেকে দুনিয়ার সবথেকে উদার বোন আর মাসি ভেবে যারপরনাই খুশি হয়ে উঠলেন।

পরবর্তীতে যখন এই বিষয়টা নিয়ে আবার কথা উঠল, তখন মিসেস নরিস আরও খুলে বললেন তিনি ঠিক কী চান। কিন্তু যখন লেডি বার্ট্রাম শান্ত ভাবে জানতে চাইলেন, “দিদি, মেয়েটা প্রথমে কোথায় আসবে? তোমার ওখানে নাকি আমাদের এখানে?”, তখন স্যর থমাস অবাক হয়ে শুনলেন যে ওই মেয়ের দেখভাল করার ব্যাপারে মিসেস নরিস নাকি কিছুই করতে পারবেন না। স্যর থমাস ভেবেছিলেন যেহেতু মিসেস নরিসের নিজের সন্তান নেই, তাই বোনের মেয়েটা এসে তাঁর বাড়িতেই থাকলে মাসির হয়তো ভালো লাগবে। কিন্তু দেখা গেল যে তিনি ভুল ভেবেছিলেন। মিসেস নরিস খুব দুঃখের সঙ্গেই জানালেন যে এখন যা পরিস্থিতি তাতে ওই বাচ্চা মেয়েটা তাঁদের কাছে থাকার প্রশ্নই উঠছে না। বেচারা মিস্টার নরিসের শরীরটা একদমই ভালো নেই। এই অবস্থায় সারাদিন একটা বাচ্চার কলকাকলি সহ্য করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। যদি মিস্টার নরিসের গেঁটে বাতের ব্যথাটা সেরে যায়, তাহলে অবশ্য ব্যাপারটা আলাদা। তখন মাসি হিসেবে তিনি খুব খুশি মনেই বোনঝির দায়িত্ব নেবেন, আর সেটা করতে তাঁর বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে বেচারা মিস্টার নরিসের দেখভাল করতেই তাঁর সমস্ত সময়টা চলে যায়। এমন কী এখন এই বিষয়ে কিছু বলতে গেলেও মিস্টার নরিসকে বিব্রত করা হবে।

“তাহলে মেয়েটা আমাদের এখানে এলেই তো ভালো হয়, তাই না?” লেডি বার্ট্রাম খুব শান্তভাবেই বললেন। স্যর থমাসও ভদ্রভাবে বললেন, “হ্যাঁ, ও তাহলে আমাদের বাড়িতেই আসুক। ওর প্রতি আমাদের যা কিছু দায়িত্ব সে সবই আমরা পালন করব। আর এখানে থাকলে ও আরেকটা সুবিধা পাবে, ও ওর বয়সী বাচ্চাদের সঙ্গও পাবে আবার ঠিকমতন অনুশাসনের মধ্যেও থাকতে পারবে।“

কলকলিয়ে উঠলেন মিসেস নরিস, “একদম ঠিক কথা। দুটো ব্যাপারই বিবেচনা করার মতন। মিস লিয়ের জন্য দুটো মেয়েকে পড়ানো আর তিনটে মেয়েকে পড়ানো, ব্যাপার তো একই। শুধু যদি আমি আরেকটু উপকারে আসতে পারতাম! কিন্তু দেখতেই তো পাচ্ছেন যে আমার যতোটা ক্ষমতা, ততোটা আমি ঠিকই করি। আমি সেরকম মানুষ নই যে নিজের অসুবিধা এড়িয়ে চলব। এই তো দেখুন না, আমার নিজের কাজের লোক ন্যানি না থাকার জন্য দিন তিনেক আমার বেশ অসুবিধা হলেও ওকে ঠিকই মেয়েটাকে আনার জন্য আমি পাঠিয়ে দেব। মারিয়া, আমার মনে হয় মেয়েটাকে পুরনো নার্সারির পাশে ছাদের সাদা ঘরটায় থাকতে দিলে ভালো করবি। ওর জন্য সেটাই ভালো হবে। ঘরটা মিস লিয়ের ঘরের কাছাকাছি হবে। একই সঙ্গে বাচ্চাদের ঘরের থেকেও দূরে নয়। বাড়ির কাজের মেয়েগুলোও ঘর তো আরও পাশাপাশি। ওরা দরকার পড়লে মেয়েটাকে সাজতে গুজতে সাহায্য করতে পারবে। ওর পোশাকআশাকের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে পারবে। আমি ধরে নিচ্ছি যে এলিস যেমন অন্যদের জন্য কাজ করে তেমন ও যে এই মেয়ের জন্যও করবে, তুই সেরকম কিছু নিশ্চয়ই আশা করছিস না। তাই সত্যি কথা বলতে কী, ওকে ওই ছাদের ঘরটা ছাড়া আর কোথায় থাকতে দিবি সেটা আমি বুঝতে পারছি না।“

কথাটা শুনে লেডি বার্ট্রাম কোনও আপত্তি করলেন না।

“আশা করি মেয়েটার স্বভাবটা ভালো হবে। ও যে কত বড় ভাগ্যবান যে এরকম শুভাকাঙ্ক্ষী পাচ্ছে, সেটা বোঝার মতন বুদ্ধি আশা করি ওর থাকবে।” মিসেস নরিস আরও বললেন।

স্যার থমাস বললেন, “কিন্তু যদি ওর স্বভাব খারাপ হয়, তাহলে ছেলেমেয়েদের খাতিরেই ওকে আমাদের পরিবারের মধ্যে রাখাটা ঠিক হবে না। তবে, ও যে খুব একটা খারাপ স্বভাবের হবে, সেটা ধরে নেওয়ারও কোনও কারণ নেই। হয়তো ওর মধ্যে এমন অনেক কিছুই দেখতে পাব যা বদল করলে ভালো হয়। আমাদের ধরে নিতে হবে যে ও হয়তো আমাদের সমাজের আদবকায়দা সম্পর্কে কিছুই জানবে না। সবার সঙ্গে কেমন করে ব্যবহার করতে হয় সেই নিয়েও ওর সঙ্কীর্ণতা থাকা সম্ভব। কখনও কখনও কিছু অসভ্য আচরণ করবে সেটাও হতে পারে। তবে এগুলো সবই শুধরে ফেলা সম্ভব। আর আমার মনে হয় না এসব কারণে ওর সঙ্গে যারা থাকবে তাদের কোনও ক্ষতি হতে পারে। আমার মেয়েগুলো যদি এই মেয়েটার থেকে ছোট হতো তাহলে অবশ্য ওকে এই সময় নিয়ে আসার ব্যাপারে আমার একটু চিন্তা থাকত। কিন্তু তা যখন নয়, তখন আমার মেয়েদের জন্য আমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং এখানে এসে আমাদের সঙ্গে থাকলে ওই মেয়েটা ভালোই হবে।“

মিসেস নরিস আবার কলকল করে বলে উঠলেন, “ আমিও তাই মনে করি। আজ সকালে আমার স্বামীকে আমি এটাই বলছিলাম। মিস লি ওকে যদি কিছু নাও শেখাতে পারে, তবুও শুধুমাত্র ওর মাসতুতো ভাইবোনদের সঙ্গে থেকেই ও অনেক কিছু শিখতে পারবে। অন্তত সভ্য ভদ্র আচার আচরণ শিখবে, একটু চালাকচতুর তো নিশ্চয়ই হবে।“

“আশা করি মেয়েটা আমার আদরের কুকুর পাগকে জ্বালাতন করবে না। জুলিয়া ওকে জ্বালাতন করত। সেটা মাত্র বন্ধ করিয়েছি আমি।” লেডি বার্ট্রাম বললেন।

স্যর থমাস একটু চিন্তান্বিত গলায় বললেন, “দেখুন মিসেস নরিস, আমাদের একটু আধটু অসুবিধা তো হবেই। ওই মেয়েটা আর আমার মেয়েরা একসঙ্গে বড় হয়ে উঠবে। এখন আমার মেয়েদের এটা খেয়াল রাখতে হবে যে ওদের আসল পরিচয় কী। একই সঙ্গে ওরা যেন ওদের মাসতুতো বোনকে নিচু নজরে না দেখে সেটাও দেখতে হবে। ওই মেয়েটা যেন কষ্ট না পায়, যেন ওর মন ছোট না হয়ে যায় সেটাও যেমন খেয়াল রাখতে হবে তেমন ও যে মিস বার্ট্রাম নয়, সেটাও যেন ভুলে না যায়, ওর সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে হবে। আমি চাই ওদের মধ্যে বেশ সুন্দর একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠুক। আমার মেয়েরা যেন ওর সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার না করে সেটা দেখতে হবে। তবে ওরা যে আদতে সমান নয়, সেটাও তো ঠিক। ওদের সামাজিক অবস্থান, সম্পদ, অধিকার বা আশা আকাঙ্খা সবসময় আলাদাই থাকবে। ব্যাপারটা খুবই সংবেদনশীল, বুঝলেন মিসেস মরিস? তাই ওর সঙ্গে যেন ঠিকমতন, মাপমতন ব্যবহার করা হয়, বাড়াবাড়ি যেন না হয়ে যায় কখনই, সেটার ব্যাপারে কিন্তু তোমাকে আমাদের সাহায্য করতেই হবে।“

মিসেস নরিসের আপত্তির কোন কারণ নেই। এই ব্যাপারে স্যর থমাসের সঙ্গে তিনি এক্কেবারে একমত যে সবদিক বজায় রেখে মেয়েটার সঙ্গে ঠিকমতন ব্যবহার করা, তাকে বড় করে তোলার মতন কঠিন কাজ আর হয় না, তবুও তিনি ভরসা দিলেন যে দুজন মিলে চেষ্টা করলে সবকিছু ভালো ভাবেই সামলে নেওয়া যাবে।

মিসেস নরিসের তাঁর বোন মিসেস প্রাইসের কাছে চিঠি লেখা বৃথা যায় নি, তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য তিনি একটু অবাক হলেন যে তাঁর এতগুলো সোনার টুকরো ছেলে থাকা সত্ত্বেও একটা মেয়েকে ওঁরা বেছে নিয়েছেন। তবে অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। মেয়েটা যে খুবই হাসিখুশি আর লক্ষ্মী স্বভাবের, তা জানিয়ে তিনি ওঁদের আশ্বস্ত করলেন। মেয়েটাকে ফেরত পাঠানোর মতন পরিস্থিতি কখনই যে হবে না, সেটাও তিনি জানালেন। মেয়েটা একটু দুর্বল স্বাস্থ্যের সেটা জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করলেন যে হাওয়াবদল হলে মেয়ের শরীরটা নিশ্চয়ই ভালো হয়ে উঠবে। বেচারি মিসেস প্রাইস! হাওয়াবদল তাঁর আরও অনেক ছেলেমেয়ের জন্যই ভালো হতে পারে, হয়তো সেটাই তিনি ভাবতেন।

---

টীকা

1. ম্যান্সফিল্ড পার্কই একমাত্র উপন্যাস যেখানে জেন অস্টেন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন কত বছর আগে এই আখ্যানের চরিত্রদের কাহিনী শুরু হচ্ছে।

2. হান্টিংডন পূর্ব ইংলণ্ডের একটি শহর।

3. বড় বড় বাড়ির নিজস্ব নামকরণ ছিল সেযুগের এক বহু প্রচলিত রীতি।

4. সেকালে সম্পদশালী পরিবারগুলি বিয়ের সময় আর্থিক অবস্থা ও সামাজিক প্রতিপত্তির চুলচেরা হিসাব নিকাশ করত।

5. সে সময়কার ইংলণ্ডে উপাধিগুলি সামাজিক মর্যাদার অবস্থানকে সূচীত করত। ক্রমোবনতভাবে এগুলি হল - ডিউক, মার্কুইস, আর্ল, ভিস্কাউন্ট, ব্যারন। ব্যারনেট হলেন ব্যারনের স্ত্রী।

6. আইনী পেশায় থাকা ও বিবাহবন্ধনের আর্থিক দেনাপাওনার হিসাব নিকাশে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণেই তিনি এক্ষেত্রে পরিবারের সবার ভরসাযোগ্য ছিলেন।

7. বিয়ের সময় সম্পদশালী কণের পরিবার বরপণ হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাত্রকে দিত।

8. যাজকরা ছিলেন সেকালের ইংলণ্ডের এক গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি। জেন অস্টেনের বাবা ও দুই দাদাও ছিলেন যাজক। জেন অস্টেনের অনেক উপন্যাসেই যাজক চরিত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ।

9. সে সময়কার ইংলণ্ডে সবচেয়ে ছোট ও তলার প্রশাসনিক একক ছিল পারুশ। প্রতিটি পারুশে একটি চার্চ ও তার একজন করে যাজক থাকতেন। যাজকদের নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা করা হত।

10. এই আয় থমাস বার্টামের আয়ের চেয়ে কম হলেও একেবারে সামান্য ছিল না।

11. নৌ বাহিনী ছিল ব্রিটিশ সেনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

12. সে কালের ইংলণ্ডে একুশ বছর বয়েস হয়ে গেলে সবারই আইনত বিয়ের অধিকার জন্মাত। তবে বিয়ের আগে অভিভাবকদের থেকে সম্মতি চাওয়া ছিল সামাজিক প্রথা।