পাগলা সাহেবের কবর - শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের নবম আখ্যান
- 04 January, 2025
- লেখক: মনীষা নস্কর
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ১ - মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ২ - গোঁসাইবাগানের ভূত - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৩ - হেতমগড়ের গুপ্তধন - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৪- নৃসিংহ রহস্য - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৫ - বক্সার রতন - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৬ - ভূতুড়ে ঘড়ি - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৭ - গৌরের কবচ - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৮ - হীরের আংটি - আলোচনার লিংক
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৯ - পাগলা সাহেবের কবর - আলোচনার লিংক
“হেঁটেও নয়,ছুটেও নয়,সাপের মতো। দূরেও নয়,কাছেও নয়,গভীর কত। আলোও নয়,অমাও নয়,যায় যে দেখা। আজও নয়,কালও নয়,ভাগ্যে লেখা। ”
তপেশ যখন ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ লিখতে বসেছিল, ফেলুদা ওকে বলেছিল গুপ্তধনের সাংকেতিক ছড়াটা ‘বুড়ো হয় মুড়ো গাছ’ একেবারে গল্পের শুরুতেই দিয়ে দিতে। ওতে নাকি পাঠক মাথাটা খাটাবার রসদ পায়। রহস্যগল্প লেখার টেকনিকগুলো সত্যজিৎ রায় যেমনটি শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, আজও তার খুব বেশিরকম অন্যথা হতে দেখি না। ছকভাঙা এক্সপেরিমেন্ট চলে, তবে সত্যজিৎ ঘরানার রহস্যগল্পের কাঠামোটা আজও জনপ্রিয়। কিন্তু শীর্ষেন্দু যে শীর্ষেন্দুই। ‘পাগলা সাহেবের কবর’-এ হালকা পলকা রহস্যের মেজাজ থাকলেও তা মোটেই ক্লাসিক রহস্য গোত্রের উপন্যাস নয়। এ হল খাঁটি অদ্ভুতুড়ে। ভূত, ছিঁচকে চোর, দুষ্টু লোক, বোকাবোকা ভালোমানুষের ছা, ভীতু পুলিশদের এ সিরিজে অবাধ যাতায়াত। তাই গুপ্তধনের সংকেতসূত্রটা এ গল্পের শো স্টপার নয়। ওই চারটে লাইন আসলে সাঁইত্রিশটা বছর ধরে নস্টালজিয়া বয়ে বেড়াচ্ছে। ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্যের’ সেই ছড়াটার মতো অক্ষর ধরে ধরে সমাধান করার মতো কিচ্ছুটি নেই ওতে। কিন্তু ওই যে একটা মনকেমনিয়া সুর, ওইটিই যেন ভুলতে দেয় না লাইনগুলোকে।
‘পাগলা সাহেবের কবর’ প্রথম প্রকাশিত হয় সেই ১৯৮৭ সালে। আমরা মিলেনিয়ালরা বেশিরভাগই তখন অস্তিত্বহীন, নয়তো কেউ কেউ সদ্য হামা টানছে, আমাদের কারও কারওর মা-বাবাদেরই তখনও পর্যন্ত মোলাকাত হয়নি একে অপরের সাথে। জেন জেডের কথা তুলছি না, ওরা কতটা বইয়ের পাতা উল্টোয় তা সত্যিই বিতর্কের বিষয়। কারণ ওরা এসেছে, আর দুম করে সময়টা গেছে বদলে। ইন্টারনেট হয়েছে সহজলভ্য। এন্টারটেইনমেন্টের হাজারও একটা উপকরণ ঢেলে সাজানো ওদের সামনে। তবু ‘পাগলা সাহেবের কবর’ জেন এক্স, মিলেনিয়াল, জেন জেড— এই তিন প্রজন্মের কাছেই পরিচিত। এ গল্প নিয়ে ইউটিউবে মজুত অসংখ্য অডিওস্টোরি। গল্প অবলম্বনে বানানো হয়েছে কমিকস। মুভি বানিয়ে ফেলার যথেষ্ট উপকরণ এ গল্পে থাকলেও কেন যে কেউ এখনও ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে না কে জানে! অদ্ভুতুড়ে সিরিজের নয়নম্বর উপন্যাস এটি। আগের গোটাকতক গল্প তাড়াহুড়োয় শেষ করতে গিয়ে ঘেঁটে ঘ হয়েছে। কিন্তু ‘পাগলা সাহেবের কবর’ নিয়ে এতটুকু অভিযোগের জায়গা নেই। অত্যন্ত যত্নে, সময় নিয়ে লেখা এই মিনি উপন্যাসটি। আড়েবহরে ওই নববইপাতার বেশি করা যাবে না— এইটি হয়তো লেখককে মাথায় রাখতেই হয়। তাই সুযোগ থাকলেও কিছু চরিত্রের ওপর তেমন করে স্পটলাইট ফেলা হয়ে ওঠে না। তবু সেসব খামতি পুষিয়ে যায় গল্পের মুচমুচে স্বাদে। গরম শিঙারা, বেগুনি, ফুলুরি এইগুলো ইয়াব্বড় পাহাড় প্রমাণ সাইজের হলে মোটেই মানাতো না। চট করে ফুরিয়ে যায়, কিন্তু তৃপ্তিটা দিয়ে যায় ষোলোআনা।
ডাক্তারবাবুর ছেলে হরিবন্ধুর সব ভালো, শুধু পড়াশোনাটাই কেমন যেন নট কাপ অফ টি।
“হরি সামনে এসে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়ানোর পর গগনবাবু বললেন, "হরি, লেখাপড়া যা করেছিস তা তো দেখতেই পাচ্ছি। এখন বল্ তো, কোন্ সাবজেক্টটা তোর কাছে তত কঠিন বলে মনে হয় না।"
হরিবন্ধু এই প্রশ্নে খুবই ভড়কে গিয়ে অনেকক্ষণ আমতা-আমতা করে বলল, "ইয়ে, বাংলা কবিতাটা বেশ সোজা।"
"বাঃ, বাঃ, তা হলে কবিতার দিকে ঝোঁক আছে! বেশ, এবার বল্ তো, লেখাপড়া ছাড়া আর তোর কোন গুণ আছে বলে মনে হয়? সোজা কথায় তুই আর কী কী পারিস?"
হরিবন্ধু ফের আকাশ-পাতাল ভাবল, তারপর মাথা চুলকে-টুলকে বলল, "ইয়ে... বোধহয় গাছ বাইতে পারি।"
"বাঃ, বেশ। টারজান। টারজানও বেশ ভাল গাছ বাইতে পরিত। তা আর কী পারিস?"
"গুলতিতে পাখি মারতে পারি।"
"বাঃ, এটাও তো গুণই ধরতে হবে। তার মানে লক্ষ্যভেদ করতে পারিস। অর্জুনের এ-গুণ ছিল, একলব্যের ছিল, কর্ণের ছিল। বাঃ, বাঃ। আর কী কী করতে ভাল লাগে তোর?"
হরি নির্দ্বিধায় বলল, "খেতে।”
গগনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, "এটা খারাপ কিছু নয়। খেতে সকলেই ভালবাসে। স্যার আশুতোষও বাসতেন। আর?"
"আর? আর ঘুমোতে।"
গগনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, "নট ব্যাড। ঘুম জৈব ধর্ম। নেপোলিয়ন ঘোড়ার পিঠে বসে যুদ্ধ করতে করতে ঘুমোতেন। তোর পড়তে পড়তে ঘুম পেতেই পারে। আর কী ভাল লাগে তোর?" একটু লাজুক গলায় হরি বলল, "আর স্কুল-পালাতে।"
গগনবাবু গেল বার হরিদ্বারে বেড়াতে গিয়ে একখানা কাঠের লাঠি কিনে এনেছিলেন। সেটার দিকে হাত বাড়িয়েও থেমে গিয়ে বললেন, "স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও স্কুল করতে পছন্দ করতেন না, তোর আর দোষ কী?"
হরি বিনয়-বিগলিত মুখে মাথা নিচু করে রইল।”
প্রত্যেক ক্লাসে ক্লাসে এক আধবার করে গাড্ডু মেরে মেরে হরি এসে ঠেকেছে ক্লাস সেভেনে এবং তিনটে বছর ধরে তার আর নড়ার নামটি নেই। স্কুল থেকে টিসি দিতে বাবা তাকে পার্সেল করে বসলেন সাঁওতাল পরগণার মোতিগঞ্জে। সেখানের স্কুলে নাকি গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানানো হয়। হরিবন্ধুও তার টিনের স্যুটকেস আর বিছানা বেঁধে এসে পড়ল মোতিগঞ্জ। এইবারেই হল গল্পের শুরু।
মোতিগঞ্জে হরি যে বাড়িতে আছে ওই বাড়িটা আগে ছিল কোনও এক পাগলাসাহেবের সার্ভেন্টস কোয়ার্টার। পাশেই পড়ে আছে সাহেবের ফাঁকা বাড়িটা। অনেকগুলো লুকনো চোরাগলি দিয়ে দুটো বাড়ি কানেক্টেড। হরি যে ঘরে থাকে সে ঘরের দেওয়ালের ছবিটা সরালেই বেরিয়ে পড়ে গুপ্ত সুড়ঙ্গ, অলিগলি দিয়ে দিব্যি চলে যাওয়া যায় পাশের বাড়িতে। গুপ্ত সুড়ঙ্গের ভেতরেও রয়েছে গুপ্তমহল, গুপ্তঘর। মোটকথা, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলে এদেশের ঘরদোরের ডিজাইনই বদলে ফেলতেন।
হরি এখন তার নতুন স্কুলে নতুন মুখ। আর সে স্কুলে বাঁদরস্য বাঁদর ছেলেপিলে ভর্তি। সাংঘাতিক বুলি চলল। শেষমেশ ত্রাতা হয়ে এল আরেকটি দুষ্টু ছেলে, নাম তার গোপাল। উপন্যাসের আয়তনের সীমাবদ্ধতাটুকু না থাকলে নিশ্চয়ই হরি-গোপালের বন্ধুত্বটার ওপর আরেকটু বেশি জোর দিতেন লেখক। কেমন করে বন্ধুত্বটা ধীরে ধীরে পেকে উঠল, তা নিশ্চয়ই দেখানো হত। কিন্তু গল্পের এতসব কাণ্ড কারখানা, সবই ঘটে যাচ্ছে মোটে কয়েকটা দিনে। বাড়তি সময় একেবারেই নেই।
আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, পটল দাস। সে ছিঁচকে চোর। হুড়ুম করে সে চারনম্বর পরিচ্ছেদে এসে পড়ল আর শেষ অবধি টিকে রইল।
“লোকটাও অদ্ভুত। ভাঙা পাঁচিলটায় উঠে স্থির হয়ে বসে আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে সামনের দিকে কিছু দেখছে বোধহয়। হরির দিকে তার পিঠ।
লোকটার কাছে গিয়ে হরি হাতের লাঠিটা বাগিয়ে ধরে চাপা গলায় বলল, "একটু নড়েছ কি মাথা ফাটিয়ে দেব। চুপচাপ সুড়সুড় করে ভাল ছেলের মতো নেমে এসো।"
লোকটা খুব আস্তে ঘাড় ঘোরাল। তাকে খুবই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে মুখে আঙুল তুলে ফিসফিস করে বলল, "চুপ। শব্দ করলেই বিপদ।"
হরি লাঠিটা উঁচিয়ে বলল, "আবার চোখ রাঙানো হচ্ছে? একটু আগেই না তুমি আমার জানালায় উঁকি মেরেছিলে? চোর কোথাকার।"
লোকটাও খ্যাঁক করে উঠল, "ইঃ, জানালায় উঁকি মারলেই বুঝি চোর হয়ে যায় লোকে! বেশ কথা তো! উঁকি দিয়েছি তো কী হয়েছে, কোন্ মহাভারতটা অশুদ্ধ হয়েছে তাতে?"
হরি অবাক হয়ে বলল, "তাই বলে মাঝরাত্তিরে উঁকি দেবে?”
“ওঃ, খুব পাপ হয়েছে বুঝি? পাড়ায় নতুন কে লোক এল তাই দেখতে একটু উঁকি দিয়েছি, আর অমনি বাবা কী চিল-চ্যাঁচ্যানি! যেন ওঁর সর্বস্ব নিয়ে ভেগে পড়েছি। নেওয়ার তোমার আছেটাই বা কী হে ছোকরা? একটা টিনের তোরঙ্গ আর গুচ্ছের বইখাতা। ছ্যাঃ, ওসব ছোঁবে কোন্ চোরে?"
"তা হলে তুমি চোর নও?"
লোকটা এবার একটু নরম গলায় বলল, "চোর হতে যাব কোন্ দুঃখে? আমার প্যালারাম রেলে চাকরি পেয়ে গেছে না? এখন আর কে চুরি করে? বুড়ো বয়সে ওসব কি আর পোষায়? তবে যদি সত্যিই চুরি করার মতলব থাকত, তবে কি আর তোমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙত হে ছোকরা? এই পটল দাসের এলেম তো জানো না, তোমার তলা থেকে বালিশ বিছানা অবধি সরিয়ে ফেলতুম, তুমি টেরটিও পেতে না।"
এলেমদার চোরের দেখা অদ্ভুতুড়ে সিরিজে অনেকবার মিলেছে। কিন্তু পটল দাস প্রথম চোর, যে কিনা জুডো ক্যারাটে জানে! পটল দাসই তাকে একটু একটু করে শীতের দুপুরে কমলালেবুর খোসা ছাড়ানোর মতো করে রহস্যটার হদিশ দেয়। মোতিগঞ্জে বহুকাল আগে থাকতেন এক সাহেব। লোকের উপকার করতেন। দুষ্টু লোকদের শাসন করতেন। মোতিগঞ্জের মানুষেরা আদর করে পাগলা সাহেব বলতো তাঁকে। তাঁর গলায় ঝুলতো একখানি দামি ক্রস। মারা গিয়েছিলেন অদ্ভুতভাবে। আরও অদ্ভুত তাঁর অন্তিমক্রিয়ার গল্পটি। তাঁর চাকরবাকরেরা তাঁর হুকুম মতো তাঁকে কোনও গোপন জায়গায় ঘুম পাড়িয়ে দেয়, সঙ্গে দিয়ে দেয় তাঁর ক্রস। গুজব আছে, তিনি মারা যাননি। একমনে বাইবেল পড়ছেন কোনও গুপ্তঘরে বসে। আর যখন কেউ বিপদ আপদে পড়ে, সাদা ঘোড়ায় চেপে পাগলাসাহেব আসেন এবং বিপদে পড়া মানুষটিকে বাঁচান। পরে অবশ্য জানা গেল, পাগলা সাহেবের কিংবদন্তিটিকে বাঁচিয়ে রাখতে পটল দাস, গোপাল, গোপালের বাবার মতো শুভবোধসম্পন্ন কয়েকজন মানুষ পাগলা সাহেবের ছদ্মবেশে এই কাজগুলি করতেন।
কিন্তু মোতিগঞ্জের বিপদ অন্যত্র। বেশকিছু দুষ্টু লোক এসে হাজির হয়েছে এলাকায়। তারা খুঁজে চলেছে পাগলা সাহেবের কবর। উদ্দেশ্য, সাহেবের ক্রসখানা হাতানো। ওর দাম এখন লাখ লাখ টাকা। এমন খুচখাচ আর্টিফ্যাক্টের লোভে দুষ্টুলোকের হানা দেওয়া— ন’টা অদ্ভুতুড়ে পড়ার পরে এই প্লটটি বেশ চেনা হয়ে এসেছে। কোনও গল্পে কবচ নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। কোথাও গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ঘড়ি। কোথাও বা রয়েছে আংটি। প্লটে নতুনত্ব না থাক, গল্পের স্বাদ এতটুকু টসকায়নি। জায়গামতো কমিক রিলিফ ঠিকই মজুত আছে। আর ভূতও আছে! আজ্ঞে হ্যাঁ! পাগলা সাহেবের ভূত সত্যিই ছিলেন একটা গুপ্তঘরে, একমনে বাইবেল পড়ছিলেন। সব দুষ্টু লোকগুলোকে তিনি হাপিশ করে দিয়েছেন।
গল্পের ছলে হালকা উপদেশ দেওয়ার স্বভাবটি শীর্ষেন্দুর মজ্জাগত। হরি পড়াশোনায় ফেলুরাম ছিল। মোতিগঞ্জে রহস্যের গন্ধ পেয়ে তার মাথা গেছে খুলে। গুপ্তধনের ছড়াটা একবার শুনেই মুখস্থ করে ফেলেছে।
“হরি বিড়বিড় করে ছড়াটা নির্ভুল আওড়াল, "হেঁটেও নয়, ছুটেও নয়, সাপের মতো। দূরেও নয়, কাছেও নয়, গভীর কত। আলোও নয়, অমাও নয়, যায় যে দেখা। আজও নয়, কালও নয়, ভাগ্যে লেখা।"
"বাঃ, একবার শুনেই তোমার মুখস্থ হয়ে গেছে দেখছি! দুখিরামবাবু চিঠিতে জানিয়েছিলেন, তুমি খুব ডাল-হেডেড ছেলে বলে তোমার বাবার ধারণা, কিন্তু তা তো নয়। স্মৃতি এবং গ্রহণক্ষমতা খুব অদ্ভুত জিনিস। মন যেটা চায় সেটা সহজেই শেখা যায়। পড়ার জন্য পড়লে সহজে শেখা যায় না, আবার জানার আগ্রহ নিয়ে পড়লে, টপ করে শেখা হয়ে যায়। তোমার ব্রেন মোটেই খারাপ নয়। শুধু দরকার একটু আগ্রহ।"
এ-কথায় হরি লজ্জায় হেঁটমুণ্ডু হল।”
সেই যে বয়েসে আমি ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস নিয়ে হাবুডুবু খেতাম, বেঞ্জিন রিংয়ের খটোমটো ইক্যুয়েশন দুর্বোধ্য লাগতো, ওই বয়েসে এই কথাগুলো ভারী ভালো লেগেছিল। ছোটদের সমস্যাগুলো তো বড়রা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন, তাঁদের জীবনে নাকি অনেএএক বড় বড় সব সমস্যা। কিন্তু ক্লাস সিক্সের খুদের যদি সুদকষা অঙ্ক না মেলে, তার মাথায় যে গোটা আকাশখানা ভেঙে পড়ে, সে খবর তো বড়রা রাখেন না। তখন যদি বড়দের সমাজের কেউ মিষ্টি করে এমন উপদেশ টুপদেশ দেয়, তা যেন অনেকটা কচিমনের ক্ষতগুলোয় আদর করে বোরোলিন লাগিয়ে দেওয়ার সমান। অদ্ভুতুড়ে সিরিজের টার্গেট অডিয়েন্স এই কচিমনগুলোই। ‘পাগলা সাহেবের কবর’ যে সেই মনগুলোকে ছুঁতে পেরেছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।