জেন অস্টেনের এমা - পঞ্চম পর্ব

প্রথম অধ্যায়ের লিংক

দ্বিতীয় অধ্যায়ের লিংক

তৃতীয় অধ্যায়ের লিংক

চতুর্থ অধ্যায়ের লিংক

পঞ্চম অধ্যায়

‘আমি আপনার কথা বলতে পারব না, মিসেস ওয়েস্টন,’ মিস্টার নাইটলি বললেন, ‘আমি কিন্তু এমা আর হ্যারিয়েট স্মিথের ঘনিষ্ঠতাকে সুনজরে দেখতে পারছি না।’

‘পারছেন না! কেন বলুন তো!’

‘আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, এতে ওদের কারোরই ভালো হবে না।’

‘আপনি তো আমায় অবাক করলেন! এমার সাথে মিশলে হ্যারিয়েটের ভালো হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এমাকে মনের নতুন নতুন খোরাকের জোগাড় দিয়ে হ্যারিয়েটও ওর উপকারই করছে – আমার তো তাই মনে হয়। বেশ লাগে ওদের দুটিকে দেখতে। আসলে আপনার-আমার ভাবার ধরনটা হয়তো খুবই আলাদা! তবু, সুনজরে না দেখা… না না মিস্টার নাইটলি, আমি আপনার সাথে মোটেই একমত নই। এ নিয়ে আপনার সাথে ঝগড়া করতেও রাজি আছি।’

‘আপনি হয়তো ভাবছেন মিস্টার ওয়েস্টন নেই বলে আমি গায়ে পড়ে আপনার সাথে ঝগড়া করতে এসেছি, যাতে যুদ্ধটা আপনাকে একাই লড়তে হয়, কেমন?’

‘মিস্টার ওয়েস্টন আমার কথাতেই সায় দেবেন। এবিষয়ে ওঁর মত আমারই মতো। আমরা কালই বলাবলি করছিলাম, এমার ভাগ্যটা ভালো বলতে হবে যে হাইবারিতে এমন একজন সঙ্গী খুঁজে পেয়েছে। দেখুন, আমি কিন্তু আপনার কথাটা ধর্তব্যের মধ্যে ধরছি না। আপনার হলো একা থাকার অভ্যেস, সঙ্গীর দরকার জিনিসটা আপনি বুঝতেই পারেন না। তাছাড়া, মেয়ে-মেয়ের বন্ধুত্ব যে কী, সে পুরুষদের পক্ষে বোঝাই হয়তো সম্ভব না। আমি আপনার আপত্তিটা বুঝতে পারছি। হ্যারিয়েট সাধারণ ঘরের মেয়ে, এমার সাথে মেশার যোগ্যতা হয়তো ওর ঠিক নেই। কিন্তু এমা তো ওর মনের পরিসর বাড়াতে সবরকম চেষ্টা করছে, যাতে ওর পড়াশুনো, ওর মানসিক জগত আরও বিস্তৃত হয়। ওরা শিগগিরই একসাথে নানা বইপত্র পড়বে, আপনি দেখে নেবেন?’

‘এমা এই পড়বে, এমা সেই পড়বে, এটা না আমি ওর বারো বছর বয়েস থেকে শুনে আসছি! ও কী কী পড়বে তার বেশ কয়েকটা তালিকা আমি নিজেই পড়ে ফেলেছি। চমৎকার তালিকা সেসব। খুবই সুচিন্তিত এবং গুছোনো – কখনো বর্ণানুক্রমে, কখনো আবার অন্য কোনো নিয়ম অনুযায়ী। ও যখন চোদ্দ বছরের, ওর বানানো বইয়ের একটা তালিকা পড়ে আমি এমনই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, বেশ কিছুটা সময় যত্ন করে সেটা রেখেও দিয়েছিলাম। আর এখন তো ওর পড়ার তালিকা নিশ্চয় আরোই চিত্তগ্রাহী হয়ে উঠেছে, কিন্তু ও সত্যি সময় দিয়ে সেই বইগুলো পুরোটা পড়ে উঠবে, এ ব্যাপারে আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি। ধৈর্য বা অধ্যবসায়ের প্রয়োজন, এমন কোনোকিছুতে ওর রুচি নেই। গভীরভাবে কিছু বোঝার ইচ্ছেও ওর নেই। মিস টেলরই যখন ফেল মেরে গেলেন, তখন হ্যারিয়েট স্মিথ কী করবে বলুন… আপনি নিজেই কোনোদিন ওকে যথেষ্ট পড়িয়ে উঠতে পারেননি। না না যাই বলুন, আপনি নিজে সেটা ভালো করেই জানেন।’

‘সে যদি বলেন,’ মিসেস ওয়েস্টন হেসে বললেন, ‘তখন আমার মাঝে মাঝে সেরকম মনে হত বটে। কিন্তু যবে থেকে আমি আলাদা থাকতে শুরু করেছি, আমার আর মনেই পড়ে না যে আমি এমাকে কিছু একটা করতে বলেছি, আর ও সেটা অমান্য করেছে।’

‘তাহলে তো আপনার সুখস্মৃতিতে আঘাত হানাটা আমার উচিত হচ্ছে না,’ মিস্টার নাইটলি সহৃদয় ভাবে বললেন। তারপর কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললেন, ‘কিন্তু আমি – আমার স্মৃতি বিচ্ছেদভারে মধুর হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি। ফলে, আমি দেখতেও পাই, শুনতেও পাই, আর যা দেখি-শুনি তা আমার মনেও থাকে। এমার মূল সমস্যা হল, ওবাড়িতে ও-ই সবচাইতে বুদ্ধিমান। দশ বছর বয়েসে ও এমন সব প্রশ্নের টপাটপ উত্তর দিত, যা ওর সতেরো বছরের দিদির মাথাতেও আসত না। ও চিরকালই চটপটে, আত্মবিশ্বাসী, আর ইসাবেলা সে তুলনায় নড়বড়ে, দ্বিধাগ্রস্ত। বারো বছর বয়েস থেকে এমা ওবাড়ির গিন্নি। এক ওর মা-ই একমাত্র ওকে সামলাতে পারতেন। ও মায়ের গুণগুলো সব পেয়েছে, কিন্তু তাঁর ছত্রছায়ায় থেকে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখেনি।’

‘মিস্টার নাইটলি, আমি যদি ওবাড়ির কাজ ছেড়ে দিয়ে নতুন জায়গায় কাজ খুঁজতাম, আর সেজন্য যদি আপনার সুপারিশ চাইতাম, তাহলে বোধহয় আমার চাকরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকত না, তাই না? আপনি বোধহয় কোনোদিনই আমায় ও কাজের যোগ্য বলে মনে করতে পারেননি।’

‘না,’ মিস্টার নাইটলি হেসে ফেললেন, ‘আপনার জন্য এই বাড়িটাই ভালো। আপনার স্ত্রী হিসেবে যেমন ব্যুৎপত্তি, গভর্নেস হিসেবে তেমনই নয়। তবে আপনি যে সময়টা হার্টফিল্ডে ছিলেন, নিজেকে একজন যথার্থ স্ত্রী হিসেবে তৈরি করতে পেরেছেন। আপনি হয়তো এমাকে পড়াশুনোয় যথেষ্ট মন দেওয়াতে পারেননি, তবে উল্টে ওর থেকে আপনার যথেষ্ট শিক্ষালাভ হয়েছে, বিশেষ করে বৈবাহিক ক্ষেত্রে মেয়েমানুষের যেটা সবচাইতে বড় গুণ বলে মানা হয় – নিজের ইচ্ছে-ভালোলাগাগুলো চেপে রেখে পরের ফাইফরমায়েশ খাটা। সেদিক থেকে দেখলে, ওয়েস্টন যদি বউয়ের ব্যাপারে আমার সুপারিশ চাইত, আমি নিঃসন্দেহে মিস টেলরের গুণ গাইতাম।’

‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! তবে মিস্টার ওয়েস্টনের মতো একজন মানুষের ভালো বউ হওয়াটা মোটেই খাটুনির কাজ না।’

‘দেখুন, সত্যি বলতে কী এরা কেউ আপনার কদর করতে পারে না। আপনি এদের দশজনের দশরকম স্বভাব মানিয়ে নিয়ে চলেন, উল্টে আপনার জন্য এদের কিছুই করতে হয় না। তা’বলে আমরা হাল ছাড়ব না! হয়তো দেখা গেল, সুখের আধিক্য একদিন ওয়েস্টনের মুখ মেরে দিল! কিম্বা যদি ওর ছেলে কানভাঙানি দেয় তো…’

‘না না না, তেমন হবে না। না মিস্টার নাইটলি, ওদিক থেকে চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না।’

‘নেই তো বটেই, আমি নিতান্তই যদির কথা বলছি। আমার তো আর এমার মতো আন্দাজ মিলিয়ে দেওয়া বা ভবিষ্যৎবাণী করার প্রতিভা নেই। আমি মনেপ্রাণে প্রার্থনা করি, ছেলেটি ধনে চার্চিল ও মনে ওয়েস্টন হোক। কিন্তু ওই হ্যারিয়েট স্মিথ – ওকে নিয়ে যে কী বলি আর কী না বলি! ওর চাইতে খারাপ সঙ্গী এমার বুঝি আর কেউ হতে পারত না। মেয়েটি কিচ্ছু জানে না, মনে করে এমা সর্বজ্ঞানী। ফলে ওর ব্যবহারটা হয়ে দাঁড়ায় চাটুকারিতার নামান্তর। ও নিজে সেটা বোঝেও না, ফলে অবস্থাটা আরোই লজ্জাজনক হয়ে ওঠে। এদিকে ওর জানাবোঝার অভাবটা এমার কাছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। এরকম একজনের সান্নিধ্যে এমা কী শিখবে? মেয়েটির অসামর্থ্যই যে এমার চোখে মেয়েটির গুণ! বাকি রইল হ্যারিয়েটের কথা। আমি তো বলব, ওরও এই সম্পর্কটা থেকে কিছু শেখার জায়গা নেই। হার্টফিল্ড ওকে ওর স্বাভাবিক বন্ধু-পরিজনদের সামনে নাক উঁচু করে ঘুরতে শেখাবে মাত্র। ওর জন্ম, ওর বেঁচে থাকা ওকে এতদিন যে মানুষগুলির সান্নিধ্যে এনেছে, ও এখন তাদের নিয়ে লজ্জাবোধ করতে শুরু করবে। আমি যেটুকু বুঝি, এমার শিক্ষা কাউকে মনের জোর বা অবস্থার সাথে মানিয়ে চলার মতো কান্ডজ্ঞানের জোগান দেয় না, দেয় শুধু খানিকটা উপর-উপর পালিশ।’

‘হয় আমার এমার উপর আপনার চেয়ে বেশি বিশ্বাস আছে, নয় আমি আপাত ভাবে ওর ভালো থাকা নিয়েই বেশি চিন্তিত, কারণ আমি ওদের এই বন্ধুত্বের ভিতর কোনো মালিন্য দেখতে পাচ্ছি না। আপনি খেয়াল করেছেন, কাল রাতে ওকে কী অপূর্ব দেখাচ্ছিল!’

‘বেশ, আপনি তাহলে ওর মনের বদলে ওর রূপ নিয়েই কথা বলতে চান, কেমন? তা এই নিয়ে অন্তত আমি কোনো তর্ক তুলতে যাব না। এমাকে দেখতে ভালো।’

‘ভালো! অসাধারণ বলুন! এমার মুখ, গড়ন – সব মিলিয়ে এর চাইতে নিখুঁত সুন্দরী আপনি আর কোথাও দেখেছেন?’

‘সেভাবে হয়তো বলা মুশকিল… আমার দেখার মধ্যে এমন সর্বাঙ্গসুন্দরী আর কাউকে তো মনে পড়ছে না। তবে কী জানেন আমি একজন পুরনো পারিবারিক বন্ধু মাত্র – পক্ষপাতদোষী।’

‘আপনি কি ওর চোখদুটি দেখেছিলেন? সত্যিকারের বাদামি চোখ একেই বলে – কী উজ্জ্বল! চোখ-নাক-কান-ঠোঁট-মুখভঙ্গি সমস্ত নিখুঁত, আর গায়ের রং কী! স্বাস্থ্য ফেটে পড়ছে। লম্বা না বেঁটে না মোটা না রোগা না, ঠিক যেমনটি হওয়া উচিত তেমনই। আর স্বাস্থ্যের রং শুধু ওর গায়ে না, ওর চারপাশটাকেই রাঙিয়ে দেয়। ওর হাবভাব, ওর তাকানো, সবেতেই তার ছোপ লেগে থাকে। আমার মনে হয়, ও হল প্রাপ্তবয়স্ক সৌন্দর্যের পরাকাষ্ঠা। রূপসী মাত্র নয়, ও রূপ বস্তুটিকেই যেন আত্মগত করে নিয়েছে, তাই না?’

‘বেশ বেশ, এমার চেহারা নিয়ে খুঁত ধরবার নাহয় কোনো জায়গা নেই,’ মিস্টার নাইটলি বললেন। ‘আপনি যা যা বললেন, সবই আমি শুনলাম। আমারও ওকে দেখতে ভালো লাগে। আর আমি তো এটাও বলব যে, রূপ নিয়ে ওর কোনো গুমোর নেই। ওকে যতটা ভালো দেখতে, তার তুলনায় রূপ নিয়ে ওর তেমন কোনো মাথাব্যথা আছে বলে তো মনে হয় না। ওর আসল অহঙ্কারের জায়গাটা অন্য। মিসেস ওয়েস্টন, যাই বলুন, আমি হ্যারিয়েটকে কিছুতেই পছন্দ করতে পারছি না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওদের দু’জনেরই ক্ষতি হচ্ছে।’

‘মিস্টার নাইটলি, আপনিও যাই বলুন, আমার একেবারেই মনে হয় না এতে ওদের কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে। এমার হাজার দোষ সত্ত্বেও ও মানুষ হিসেবে চমৎকার। বাপসোহাগী মেয়ে হিসেবে বলুন, বোন হিসেবে বলুন, বন্ধু হিসেবে বলুন, ওর মতো কাউকে পাবেন কোথায়! না না, ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়, ও কখনো কারো ক্ষতি করবে না। এমন কোনো ভুল ও করবে না, যার কুফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। ওর একটা ভুল হলে ও একশ’টা ঠিক কাজ করে তাকে সামাল দেবে।’

‘বেশ, আমিও তাহলে আর আপনার সময় নষ্ট করব না। এমা আপাতত দেবী হয়েই থাকুক। আমিও আমার মনের ভাবটা ক্রিসমাসের সময় জন আর ইসাবেলা এখানে আসা অবধি লুকিয়েই রাখব। জন এমাকে ততটাই ভালোবাসে, যা সেই ভালোবাসাকে অন্ধ করে তোলে না। আর ইসাবেলা সবসময় জনের কথাতেই সায় মেলায়, শুধু ওদের সন্তানদের ব্যাপারে ছাড়া। ওর মনে হয় জন বুঝি বাচ্চাদের ব্যাপারে যথেষ্ট দুশ্চিন্তা করে ওঠে না… যাই হোক, ওরা নিশ্চয় আমায় কথাটা ধরতে পারবে।’

‘আমি জানি, আপনারা সকলেই এমাকে এতটাই ভালোবাসেন যে, ওর ব্যাপারে আপনারা কখনোই অন্যায্য বা অযাচিত ভাবে কঠোর কিছু করবেন না। কিন্তু মিস্টার নাইটলি, আমায় যদি একটু বলার সুযোগ দেন (আপনি তো জানেন, আমি এক অর্থে ওর মায়ের জায়গা নিয়েই ছিলাম), আমার কিন্তু সত্যিই মনে হয় না হ্যারিয়েট স্মিথকে নিয়ে আলাপ আলোচনা করে লাভ কিছু হবে। ধরে নিলাম সত্যিই ওদের বন্ধুত্বের ফলে একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দেখুন, এমা ওর বাবা ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহি করার কোনো প্রয়োজন বোধ করে না। আর ওর বাবা ওদের বন্ধুত্বকে সম্পূর্ণ অনুমোদন করেন। ফলে, ওর নিজের যদি ভালো লাগে, ও কখনোই অবস্থাটা বদলাতে রাজি হবে না। আমি এতদিন ওদের বাড়িতে কাজ করেছি, আশা করি আমার দিক থেকে এইটুকু উপদেশ আপনাকে বিরক্ত করবে না।’

‘সে চিন্তা করবেন না!’ মিস্টার নাইটলি হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘আপনার উপদেশ আমি মাথা পেতে নিলাম, উপদেশটা ভালোও বটে। আর সাধারণ ভাবে আপনার উপদেশগুলির যা গতি হয়, এটার ক্ষেত্রে তেমন হবে না, কারণ এটা আমি সত্যিই পালন করব।’

‘মিসেস জন নাইটলির স্বভাব দুশ্চিন্তা করা। বোনের ব্যাপারে এসব শুনলে উনি অযথা বিচলিত হবেন।’

‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি কোনো গোলমাল পাকাব না। আমার বাঁকাচোরা চিন্তাগুলো আমি নিজের কাছেই রাখব। আসলে দেখুন, এমার ব্যাপারে আমার একটা কৌতূহল আছে। ওর তুলনায় ইসাবেলাকে আমার কখনো ততটা নিজের বোনের মতো মনে হয়নি। ওকে নিয়ে আমার তত কৌতূহলও নেই। কিন্তু এমার ব্যাপারে আমার মাথায় একটা দুশ্চিন্তা, একটা কৌতূহল কাজ করে। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আগ্রহী।’

‘আমিও,’ মিসেস ওয়েস্টন বললেন, ‘খুবই আগ্রহী।’

‘এমা সবসময় বলে চলে, ও বিয়ে করবে না। এ বয়েসে এ কথাগুলোর কোনো মানে নেই। কিন্তু আমি এটাও জানি না, আজ অবধি ও এমন কোনো পুরুষের সান্নিধ্যে এসেছে কিনা, যাকে ওর ভালো লেগেছে। তেমন তেমন লোক হলে, ও যদি তাকে ভালোবেসে ফেলে, সেটা ওর জন্য ভালোই হবে। আমি দেখতে চাই, এমা প্রেমে পড়লে কী হয়, আর প্রেমের সাথে সাথে ওর মনে যদি কিছু সংশয় জন্ম নেয়, তারই বা ফল কেমন হয়। সংশয়ে পড়লে ওর উপকারই হবে। কিন্তু ও মেশেই বা কার সাথে। বাড়ি থেকে তো তেমন বেরোয়ই না।’

‘আপাতত ওর মত বদলানোর সম্ভাবনা তো কিছু দেখছি না,’ মিসেস ওয়েস্টন বললেন, ‘ও হার্টফিল্ডে থাকতে ভালোবাসে। আর ধরুন ও যদি কারো প্রেমে পড়েও, বেচারা মিস্টার উডহাউজের কী হবে সেকথা ভেবে আমি ঠিক বিষয়টাকে পুরোপুরি ভালো চোখে দেখতে পারছি না। না না, এমার এখনই বিয়ে দিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। তবে আমি আপনার কথাটা ছোট করে দেখছি, এমনও ভাববেন না…’

কথা বলতে বলতে মিসেস ওয়েস্টন তাঁর নিজের আর মিস্টার ওয়েস্টনের মনের চিন্তাগুলোকে যথাসম্ভব লুকোবার চেষ্টা করছিলেন। র‍্যান্ডাল্‌সে এমার ভবিষ্যৎ নিয়ে লোকের মনে নানান আশাআকাঙ্খা রয়েছে, সেগুলো এখনই ফাঁস করে দেওয়াটা ঠিক হবে না। ফলে মিস্টার নাইটলি যখন আস্তে আস্তে ‘তাহলে ওয়েস্টন কী বলছে, এবছর বৃষ্টি কবে নাগাদ আসবে,’ জাতীয় কথাবার্তায় ঢুকে গেলেন, মিসেস ওয়েস্টন হাঁফ ছেড়ে ভাবলেন, হার্টফিল্ড নিয়ে তাঁর চর্চা করার উদ্যম তাহলে আপাতত প্রশমিত হয়েছে।   

………………………………

১ মূল ইংরিজিতে – হ্যাজেল।