জেন অস্টেনের এমা - দ্বিতীয় পর্ব

এমা

জেন অস্টেন

প্রথম অধ্যায়ের লিংক

দ্বিতীয় অধ্যায়

মিস্টার ওয়েস্টন হাইবারির আদি বাসিন্দা এবং এক উঁচু বংশের সন্তান ছিলেন। তাঁদের পরিবার দু’তিন প্রজন্ম ধরে সেখানকার ভদ্র সমৃদ্ধ পরিবারগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠছিল। তিনি যথাযথ বিদ্যাশিক্ষা পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু কম বয়সেই নিজের মতো বেঁচে থাকার স্বাধীনতা হাতে এসে যাওয়ার ফলে তিনি তাঁর অন্য ভাইদের মতো পারিবারিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবার দিকে যাননি, বরং একটি কর্মময় জীবন ও হাসিখুশি মনমেজাজ নিয়ে তিনি দেশের সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেন।

ক্যাপ্টেন ওয়েস্টনকে সবাই পছন্দ করতেন। ফলে যখন তাঁর সৈন্যজীবন তাঁকে বিখ্যাত ইয়র্কশায়ার পরিবারের মিস চার্চিলের কাছে পৌঁছে দিল, আর মিস চার্চিল তাঁর প্রেমে পড়লেন, তাতে কেউ বিস্মিত হননি – খালি মিস চার্চিলের ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী ছাড়া, যাঁরা আবার তাঁকে কখনো দেখেনই-নি। তাঁরা শুধু নিজেদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে গর্ববোধ করতেন, এবং এই সম্পর্কটা সেই গুরুত্বে চিড় ধরাতে পারে বলে আশংকা করতেন।

মিস চার্চিল অবশ্য প্রাপ্তবয়স্কা ছিলেন, নিজের সম্পত্তি নিজেই দক্ষতার সাথে দেখাশুনো করতেন। তবে তাঁর সম্পত্তির মধ্যে তাঁর পারিবারিক এস্টেটের কোনো ভাগ ছিল না। ওয়েস্টনকে বিয়ে করা থেকে পিছপা হবার কোনো ইচ্ছেই তাঁর ছিল না, এবং তিনি হলেনও না, মিস্টার ও মিসেস চার্চিলকে মর্মাহত করেই। ফলে তাঁরা বিয়ের পরে মিস চার্চিলকে পরিবারের ত্যাজ্যসন্তান বলে ঘোষণা করলেন। বিয়েটা কিন্তু খুব একটা সুবিধার হল না, কেউই সুখী হতে পারলেন না। মিসেস ওয়েস্টনের হয়তো আরও সুখী হওয়া উচিত ছিল, কারণ তিনি এমন একজন স্বামী পেয়েছিলেন, যাঁর হৃদয় উদার ও স্বভাব নরম। মিস্টার ওয়েস্টন মনে করতেন, তাঁকে ভালোবেসে তাঁর স্ত্রী যে ঔদার্য দেখিয়েছেন, তার বিনিময়ে কোনোকিছুই অদেয় নয়। কিন্তু মিস চার্চিলের স্বভাবে একধরনের বৈশিষ্ট্য থাকলেও নানা সমস্যাও ছিল। ভাই না চাইলেও নিজের বেছে নেওয়া পথে এগিয়ে যাওয়ার মতো মনের জোর তাঁর ছিল বটে, কিন্তু আবার ঠিক ততটাও জোর ছিল না যে মাঝে মাঝে তিনি তাঁর ভাইয়ের অযৌক্তিক রাগের কথা মনে করে অযৌক্তিক অনুতাপে ভুগবেন না, বা এবাড়ির তুলনায় পুরনো বাড়ির যশ-আহ্লাদের কথা মনে করে হতাশ বোধ করবেন না। তাঁরা যদিও আয়ের চেয়ে ব্যায় করতেন বেশি, তবু তাঁর এন্সকম্বের বাড়ির তুলনায় তা কিছুই ছিল না। এর জন্য তিনি তাঁর স্বামীকে ভালোবাসা বন্ধ করেননি বটে, কিন্তু একইসাথে ক্যাপ্টেন ওয়েস্টনের স্ত্রী আর এন্সকম্বের মিস চার্চিল হতে চাইছিলেন।

ক্যাপ্টেন ওয়েস্টন, যাঁকে সকলে – বিশেষ করে চার্চিলরা – এই বিয়ের ফলে বিশেষ লাভবান বলে ধরে নিয়েছিলেন, এই ডামাডোলে শেষ অবধি তাঁর অবস্থাই হল সবচাইতে খারাপ। বিয়ের মাত্র তিন বছর পরে যখন তাঁর স্ত্রী মারা গেলেন, তিনি আগের চেয়েও বেশি গরীব হয়ে পড়লেন, উপরন্তু তাঁদের শিশুসন্তানের দায়িত্বও তাঁর উপর এসে পড়ল। তবে শিশুটির খরচ চালানোর ভার তাঁকে বেশিদিন বইতে হল না। শিশুটি হয়ে দাঁড়াল তাঁর ও চার্চিলদের মধ্যে এক সেতু। বিশেষ করে যেহেতু সে-ও তার মায়ের মতো দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ থাকত, চার্চিলদের মন তার প্রতি আরও নরম হয়ে উঠল। মিস্টার ও মিসেস চার্চিলের নিজেদের ছেলেপুলে বা ওই বয়সের অন্য কোনো কাছের মানুষের দায়িত্ব না থাকায়, বোন মারা যাওয়ার পরে ছোট্ট ফ্র্যাঙ্কের সমস্ত দায়িত্ব নিতে তাঁরা রাজি হয়ে গেলেন। বিপত্নীক পুরুষমানুষটির মনে যদি এ বিষয়ে আপত্তি জেগেও থাকে, সবদিক দেখে শিশুটিকে চার্চিলদের তত্ত্বাবধানে এবং তাঁদের সম্পত্তির ঘেরাটোপে নিয়ে যাওয়াই ঠিক হল। পড়ে রইলেন তিনি একা, বর্তমান দুরবস্থার যতটা পারা যায় উন্নতিসাধনের চেষ্টা করতে।

জীবনটাকে পুরোপুরি বদলে ফেলার প্রয়োজন ছিল। তাই মিস্টার ওয়েস্টন সৈন্যবাহিনীর কাজ ছেড়ে ব্যবসাবাণিজ্যে মন দিলেন। লন্ডনে যেহেতু তাঁর ভাইয়েদের অবস্থা ভালোই ছিল, নতুন পথ চলার শুরুটা তাঁর জন্য খুব কঠিন হল না। হাতে কাজ আসতে লাগল। হাইবারিতে তাঁর ছোট বাড়িটা তো ছিলই, আরাম করতে হলে সেখানে চলে যেতেন। কাজ-অকাজ মিলিয়ে আঠেরো-কুড়ি বছর ভালোভাবেই কেটে গেল। ততদিনে তিনি ব্যবসায় পটু হয়ে উঠেছেন, যার সুবাদে বহুদিনের শখ মিটিয়ে হাইবারির কাছে একটা ছোট এস্টেট কিনে ফেলেছেন। এবারে মিস টেলরের মতো বিষয়সম্পত্তির ঝামেলাহীন একজনকে বিয়েও করে ফেললেন। সব মিলিয়ে সামাজিকতা ও বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যময় নিজের পছন্দের একটা জীবন তিনি বেছে নিতে পেরেছেন।

বেশ কিছুদিন হল মিস টেলর তাঁর পথ চলায় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছেন। তবে সে প্রভাব যৌবনের উপর যৌবন যেমন মাথায় চড়ে বসে তেমনটি নয় কিনা, তাই তাঁর র‍্যান্ডালস-এর সম্পত্তি কেনার আগে থিতু হয়ে না বসার সংকল্পকে তা নড়াতে পারেনি। র‍্যান্ডালস কবে বিক্রি হবে তার জন্য অনেকেই অপেক্ষা করে আছেন। কিন্তু তিনি তাঁর লক্ষ্যে শ্যেন চোখ রেখে এগিয়ে যেতে কসুর রাখেননি। তাঁর ভাগ্য বদলে গেছে, বাড়ি কিনেছেন, স্ত্রী লাভ করেছেন। তাঁর জন্য অস্তিত্বের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যা আগের চাইতে অনেক বেশি আনন্দদায়ক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি কোনোদিনই দুঃখী ছিলেন না – তাঁর স্বভাবই তাঁকে বারবার দুঃখের হাত থেকে বাঁচিয়েছে, এমনকি প্রথম বিয়ের সময়েও। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়েটি তাঁর কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, মহিলারা কত বিচক্ষণ এবং হাসিখুশি স্বভাবের হতে পারেন। তিনি বুঝেছেন, যেচে কাউকে নির্বাচন করার বদলে কারো দ্বারা নির্বাচিত হওয়া, সারাক্ষণ কৃতজ্ঞ বোধ করার চেয়ে অন্যের কৃতজ্ঞতা লাভ করা কতটা আরামের।

তাঁর নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করার স্বাধীনতা ছিল। তাঁর বিষয়সম্পত্তি ছিল একান্তই তাঁর নিজের। ফ্র্যাঙ্ক তো এমনিতেও তার মামার সম্পত্তির অধিকারী হিসেবেই বড় হচ্ছে। দত্তক হিসেবে তার স্বীকৃতি এতটাই যে, প্রাপ্তবয়স্ক হলে সে চার্চিল পদবী গ্রহণ করবে, তাও ঠিক হয়ে গেছে। তাই সে কোনোদিন তার বাবার সম্পত্তি চাইবে এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তার বাবার অন্তত এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। তার মামী দাপুটে মেয়েমানুষ এবং তিনি তাঁর স্বামীর উপর ছড়ি ঘুরিয়ে চলতেন বটে। কিন্তু তাই বলে তিনি স্বামীর সম্পত্তি ফ্র্যাঙ্ক পাবে এই নিয়ে আপত্তি তুলতে পারেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা মিস্টার ওয়েস্টনের স্বভাবেই ছিল না, বিশেষ করে ছেলেটির যখন অমন চমৎকার স্বভাব। তিনি প্রতি বছর ছেলেকে দেখতে লন্ডন যেতেন, দেখে খুবই গর্ববোধ করতেন, আর ফিরে এসে ছেলের বড় হয়ে ওঠার যেসব চমৎকার বর্ণনা শোনাতেন, তাতে হাইবারির সকলেও ফ্র্যাঙ্ককে নিয়ে একরকম গর্বিতই বোধ করত। তাকে সকলে একভাবে হাইবারির ছেলে বলেই মনে করত, ফলে তার বুদ্ধি আর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিষয়ে সকলেরই উৎসাহ ছিল।

মিস্টার ফ্র্যাঙ্ক চার্চিল ছিল হাইবারির গর্ব, তাই সবার মনে তাকে দেখার একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিল, যদিও উল্টোদিক থেকে এই উৎসাহের প্রতিদান কতটা দেওয়া হত তা বলা মুশকিল, কারণ ফ্র্যাঙ্ক কখনো হাইবারি আসেনি। তার বাবাকে দেখতে আসার কথা অনেকবার উঠেছে, কিন্তু হয়ে ওঠেনি।

তার বাবার দ্বিতীয় বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পরে এ কথাটা ওঠে যে, এবার হয়তো তার এখানে একবার আসা উচিত। এ বিষয়ে কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করেননি – না যখন মিসেস পেরি মিসেস ও মিস বেট্‌সের বাড়ির চায়ের আড্ডায় গেলেন, না যখন মিসেস ও মিস বেট্‌স মিসেস পেরির বাড়িতে চা খেতে গেলেন। সবার মতেই মিস্টার ফ্র্যাঙ্ক চার্চিলের এবার তাঁদের মধ্যে এসে দাঁড়ানো উচিত। আশার মাত্রা চড়ে গেল, যখন জানা গেল যে, ছেলেটি নাকি তার নতুন মা-কে চিঠিও লিখেছে। ক’দিন ধরে প্রতি সকালে হাইবারিতে যে যার সাথে দেখা করল, এই চর্চাই হতে থাকল যে, মিসেস ওয়েস্টন কেমন সুন্দর একটা চিঠি পেয়েছেন। ‘মিসেস ওয়েস্টনকে মিস্টার ফ্র্যাঙ্ক চার্চিল দারুণ একটা চিঠি লিখেছে, জানেন? শুনেছি, চিঠিটা নাকি ভীষণ সুন্দর। আমি মিস্টার উডহাউজের কাছ থেকে শুনলাম। উনি তো সেটা পড়েছেন! আর উনি নাকি জীবনে এত সুন্দর চিঠি পড়েননি!’

এইভাবে চিঠিটার দর বাড়তে থাকে। মিসেস ওয়েস্টনের মনে অবশ্যই এই কিশোরটির আসন উঁচু হয়ে ওঠে। ছেলেটির স্বভাব যে কত সুন্দর, তা চিঠিতে নতুন মা’র ব্যাপারে তার আগ্রহ থেকেই পরিষ্কার। যত জায়গা থেকে তিনি বিয়ে উপলক্ষ্যে অভিবাদন ও অভিনন্দন বার্তা পেয়েছেন, সেই তালিকায় এ চিঠিকে তিনি অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই জায়গা দিয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে, তিনি সত্যিই সৌভাগ্যবতী। জীবনকে তিনি যতখানি দেখেছেন, তাতে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না। দুঃখ শুধু এই যে, তাঁকে বন্ধুদের কাছ থেকে, বন্ধুত্বের কাছ থেকে আংশিক ভাবে হলেও দূরে সরে আসতে হয়েছে। সে বন্ধুরাও আবার তাঁর বিচ্ছেদে কাতর।

তিনি জানতেন, নিশ্চয়ই মাঝে মাঝে তাঁর অভাব তাঁর বন্ধুদের জীবনে অসুবিধার সৃষ্টি করছে। আর এমা একটুও কষ্ট পাচ্ছে, বা এক ঘন্টার জন্যেও তাঁর বিরহে শূন্যবোধ করছে, একথা মনে পড়লে তাঁর যন্ত্রণাই হত। কিন্তু তাঁর প্রিয় এমাও তো আর দুর্বল নয়, অবস্থাটাকে সামাল দেওয়ার ব্যাপারে সে অনেক মেয়ের চেয়ে বেশি যোগ্য। তার যুক্তিবোধ, কর্মক্ষমতা, উৎসাহ নিশ্চয় তাকে ছোটখাটো সমস্যা বা অভাববোধকে পার হয়ে যেতে সাহায্য করবে। আর হার্টফিল্ড থেকে র‍্যান্ডাল আর কতটাই বা রাস্তা, একা মেয়ের পক্ষে হেঁটে পার করার জন্যেও বেশি কিছু না। তাছাড়া মিস্টার ওয়েস্টনের যা স্বভাব আর অবস্থা, তাতে কিছুদিন পর থেকেই তাঁরা সপ্তাহের অর্ধেক সন্ধ্যেগুলো একসাথে কাটাতে পারবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।    

মিসেস ওয়েস্টনের মনে বর্তমান অবস্থা বিষয়ে গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ ছিল, কিন্তু অনুশোচনার পরিমাণ ছিল সামান্যই। আর ছিল সন্তুষ্টি – শুধু সন্তুষ্টি কেন – খুশি আর আনন্দ, যা তাঁর প্রাপ্য এবং পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তা তিনি পেয়েছেন। এমা তার বাবাকে ভালই চিনত। তবু সে মাঝে মাঝে বিস্মিত বোধ করতে শুরু করেছিল এই ভেবে যে, যখন তারা মিসেস ওয়েস্টনকে গার্হস্থ্যের আরামের মাঝে বসিয়ে রেখে এসেছিল, বা যখন সন্ধ্যেবেলা তাঁর চমৎকার স্বভাবের নবপরিণীত স্বামীর সাথে নিজের গাড়িতে চড়ে নিজের বাড়ি চলে যেতে দেখেছিল, তখনো কীভাবে তার বাবা মিসেস ওয়েস্টনকে ‘বেচারি মিস টেলর’ হিসেবে দেখতে পারেন। অথচ যতবার বিদায় নেওয়ার পালা এসেছে, মিস্টার উডহাউজ একবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে ছাড়েননি, ‘আহা বেচারি মিস টেলর! সে এখানে থাকতে পারলে কতই না খুশি হত!’

মিস টেলরকে উদ্ধার করার কোনো উপায় ছিল না। তাকে বেচারি মনে করার হাত থেকেও নিস্তার ছিল না, তবু পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে মিস্টার উডহাউজের মনের অবস্থার খানিকটা উন্নতি হল। প্রতিবেশীদের শুভেচ্ছাজ্ঞাপন বন্ধ হল, এমন দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে অভিনন্দন বার্তা আসাও বন্ধ হল। আর বিয়ের কেকটা, যা তাঁকে বারবার বিমর্ষ করে তুলছিল, পুরোটাই খাওয়া হয়ে গেল। তাঁর নিজের পেটে ভারী খাবারদাবার সহ্য হত না। আর তিনি একথা বিশ্বাসই করতেন না যে, অন্যদের হজমশক্তি তাঁর চেয়ে ভালো হতে পারে। যা তাঁর সহ্য হত না, তা তিনি বাকি সকলের শরীরের জন্যই অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করতেন; অতএব প্রথমে তিনি বিয়েতে কেক না আনাতে চেষ্টা করেছিলেন। তাতে যখন কাজ হল না, তখন সবাইকে সেটা খাওয়া থেকে বিরত করার চেষ্টা করছিলেন। এবিষয়ে তিনি ওষুধের দোকানের কম্পাউন্ডার মিস্টার পেরির সাথেও পরামর্শ করেছিলেন। মিস্টার পেরি একজন বুদ্ধিমান ভদ্রলোক, যাঁর ঘন ঘন যাতায়াত মিস্টার উডহাউজের জীবনে বিশেষ আরামের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মিস্টার পেরিকে চাপে পড়ে স্বীকার করতেই হয়েছিল (ইচ্ছের বিরুদ্ধে) যে, বিয়ের কেকটা অনেকেরই হয়তো সহ্য হবে না, যদি না খুব কম পরিমাণে খাওয়া হয়। এমন এক বিশিষ্টজনের সহমত লাভ করে মিস্টার উডহাউজ ভেবেছিলেন নববিবাহিত দম্পতির সমস্ত অতিথিকেই এবিষয়ে রাজি করিয়ে ফেলতে পারবেন। তবুও কেক খাওয়া হল। আর যতক্ষণ না সে কেক শেষ হল, ততক্ষণ তাঁর চঞ্চল স্নায়ু তাঁকে এতটুকু বিশ্রাম দিল না।

হাইবারিতে অবশ্য এক আশ্চর্য গুজব রটেছিল যে, অনুষ্ঠানের পরে পেরি-বাড়ির ছোট্ট ছেলেপুলেদের প্রত্যেকের হাতে মিসেস ওয়েস্টনের বিয়ের কেকের টুকরো দেখা গেছিল, কিন্তু মিস্টার উডহাউজ সেকথা কখনো বিশ্বাস করবেন না।