সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ : চারুলতার নষ্টনীড়

'নষ্টনীড়' রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ পর্বের গল্পগুলি থেকে একেবারে আলাদা। তাঁর ছোটগল্পের সম্ভারে অন্যতম ঐশ্বর্যময় গল্প 'নষ্টনীড়'।  ১৩০৮  (১৯০১ খ্রীষ্টাব্দ) বঙ্গাব্দে বৈশাখ-অগ্রহায়ণ সংখ্যা ভারতী পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হওয়া গল্পটি লেখা হয়ে গিয়েছিল তার আগের বছরেই। 'নষ্টনীড়' গল্পটি থেকেই নারীপুরুষের মনের বিচিত্র অভিঘাত প্রকাশের মুন্সিয়ানাটাও যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।'নষ্টনীড়' গল্পে হৃদয়াবেগের চেয়ে মনোবিকলন,গতির চেয়ে বিবৃতি,চলমানতার চেয়ে বিশ্লেষণ বেশি। মানবমনের সূক্ষ্ম অনুভূতি আর সংবেদনশীল আচরণের ঘাতপ্রতিঘাতে গল্পটির কোথাও নিছক পরকীয়ার শিলমোহর পড়েনি।

বঙ্কিমচন্দ্র পরকীয়াকে তাঁর লেখায় নীতি আদর্শের তুলাদণ্ডে বসিয়ে সে যুগের সামাজিক সমর্থন চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নষ্টনীড় গল্পে এক গৃহবধুর নিঃসঙ্গতা, বন্ধুত্বের হাহাকার, সৃজনের বিকাশ, মনের পরিধিতে নিত্যনৈমিত্তিকতার মধ্যে বন্ধুত্ব-ভালবাসা-মান-অভিমান-দাম্পত্যের একঘেয়েমি ইত্যাদি বাহান্ন তাসের এক অভিনব ম্যাজিক দেখিয়ে সমকালকে আবিষ্ট করলেন। পরকীয়া আশ্রিত গল্প হয়েও কোথাও পাঠকের মনে কলুষতা স্পর্শ করল না। পাঠশেষে বরং চারুলতার সব হারানোর হাহাকারে পাঠকের মনও ভিজে ওঠে।

তেষট্টি বছর আগে লেখা 'নষ্টনীড়' গল্পটিকে চলচ্চিত্রায়িত করলেন কবিরই প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আশ্রমের কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্র সুকুমারপুত্র সত্যজিৎ রায়। ছবিটি প্রথম প্রদর্শিত হয়  ১৯৬৪ সালের ৭ই এপ্রিল। একসঙ্গে মুক্তি পায় কলকাতার শ্রী, প্রাচী এবং উত্তরা প্রেক্ষাগৃহে। সম্ভবত বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা এবং গল্পটির মর্মে লুকিয়ে থাকা আধুনিক জীবনের চাওয়া-পাওয়ার অন্তর্দ্বন্দ্বের নাটকটি সত্যজিৎকে অনুপ্রাণিত করেছিল গল্পটির চিত্ররূপ দেওয়ার জন্য। সত্যজিৎ রায়ের বিবেচনায় 'চারুলতা' তাঁর নির্মিত শ্রেষ্ঠ ছবি।

সত্যজিতের হাতে এসে নষ্টনীড় বদলাতে থাকে একটু একটু করে। সিনেমার প্রয়োজনে প্রথমেই বাদ দিতে হয় তার বিস্তার। ১১৭ মিনিটের ফিল্মটিতে মূল গল্পকে স্পষ্ট করে তোলার  জন্য, দর্শকের চোখে ঘটনাপ্রবাহকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য চলচ্চিত্রকারকে নিতে হয় বেশকিছু সিনেমাটিক কৌশল। যা প্রাণবন্ত, অসাধারণ করে তোলে চলচ্চিত্রের প্রতিটি মুহূর্তকে। আসলে সত্যজিতের মতে 'বিশ্বসাহিত্যের এমন অনেক ভালো গল্প আছে যা প্রায় তৈরি চিত্রনাট্যের সামিল, 'নষ্টনীড়' এই শ্রেণীর গল্প নয় নষ্টনীড়ে প্লট জিনিসটা গৌণ'।


                  রবীন্দ্রনাথের 'নষ্টনীড়' চলচ্চিত্রায়িত হয় 'চারুলতা' নামে। বোঝা যায় সত্যজিতের কাছে চারুলতাই মুখ্য। ছবিটি ইংরেজিভাষী বিশ্বে 'The Lonely wife' নামে পরিচিত।  চারুর নিঃসঙ্গ অবস্থান দিয়েই ছবিটি শুরু হয়। চারুর নিঃসঙ্গতার সঙ্গে সঙ্গে তার লেখাপড়া, হাতের কাজের দিকে ঝোঁক, তার অন্তর্নিহিত ছেলেমানুষি,( অমলের সঙ্গে তার মনের মিল দেখানোর জন্য যা খুব জরুরী) কাগজ নিয়ে মেতে থাকার ফলে স্ত্রীর প্রতি ভূপতির ঔদাসীন্য এবং চারুর সেটাকে মেনে নেওয়া, এসব কিছুই বলা হয়ে যায় প্রথম দিকেই। যেখানে চারুলতা জানালার খড়খড়ি তুলে রাস্তার ফেরিওয়ালা, বিভিন্ন পেশার নানা বয়সের লোকজন দেখে একমনে সেখানেই যেন তার একলা মনটিকে প্রত্যক্ষ করি আমরা। নির্জন দ্বিপ্রহর আপন দহন নিয়ে বইতে থাকে এই দৃশ্যের ওপর দিয়ে। এই দৃশ্যগুলি একটা সমাজ ও সময়কেও আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে। চারুর হাতে ধরা বাইনোকুলারটি দর্শকের মনে গেঁথে যায় প্রথম দৃশ্য থেকেই, যা পূর্ণ যুবতী নারীর অন্তর্নিহিত ছেলেমানুষিকে বেশ স্পষ্ট করে তোলে। প্রথম দৃশ্যের এই অংশের আবহে কোন শব্দ ব্যবহার করেননি পরিচালক। চারুর বাইনোকুলার, তার ঘর, লম্বা বারান্দা, দগ্ধ দুপুর, দ্বিপ্রাহরিক নৈঃশব্দ্য প্রথমেই চারুর যে নিঃসঙ্গ নীড়টি তৈরি করে সেখানেই চরিত্রগুলি ঘুরেফিরে আসে দৃশ্যের পর দৃশ্য জুড়ে।

চারুলতার প্রথম অংশ জুড়ে থাকে শুধু চারু, ভূপতি ও তাদের মধ্যবর্তী দাম্পত্যের দূরত্বের বারান্দা। সেখানেই এক কালবৈশাখীর ঝোড়ো বিকেলে প্রবেশ ঘটে অমলের। কিন্তু তার আগে ছবির প্রথম দৃশ্যের দুপুর ও দ্বিতীয় দৃশ্যের রাত মিলে চারু ভূপতির জীবনের একটি পুরো দিনের পরিচয় আমরা পাই চলচ্চিত্রে। মূল কাহিনীতে অনেক দিন, অনেক রাতের বিক্ষিপ্ত বিবরণ থাকলেও স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে কোন একটি সমগ্র দিনের বিবরণ পাইনা। সত্যজিৎ এ দৃশ্যের করেছেন অত্যন্ত সংগত প্রকাশ। তাঁর কথাতেই আমরা জানতে পারি তার মনোভাব, 'কাজের চাপে যে ব্যক্তি দিনের বেলা তার স্ত্রীকে অবহেলা করে, কাজের অবসরে তার স্ত্রীর প্রতি ব্যবহার কিরকম এটা জানবার একটা স্বাভাবিক আগ্রহ দর্শকদের হতে বাধ্য।' তাই এই নৈশদৃশ্যের অবতারণা। এই রাতের দৃশ্যই আমাদের সামনে আরও স্পষ্ট করে তোলে চারুর নিঃসঙ্গতা। সেই নিঃসঙ্গতায় ভূপতি কেবলই চারুর সঙ্গী খুঁজতে ব্যস্ত থাকে কিন্তু নিজে তার সঙ্গী হওয়ার কথা কখনোই ভাবতে পারেনা। চারুকে নিয়ে শোবার ঘরের দিকে যেতে যেতে ভূপতির শেষ কথা শোনা যায়, 'এক কাজ করব তোমার দাদাকে বলবো তোমার বৌদিকে সঙ্গে নিয়ে আসতে। তাহলে আর তোমার সঙ্গীর অভাব হবে না। কেমন?' ভূপতি বালিকা বধূ হিসেবে চারুকে পরম স্নেহ করেছে। কিন্তু সে যে বালিকা থেকে পূর্ণ যৌবনা হয়েছে, সেই যুবতীর প্রস্ফুটিত নারী মনটি তার চোখেই পড়েনি কখনো। কিন্তু ফুল তো আপনার জন্য ফোটে না, চারুর মনও তাই অন্য একটি মনকে আকর্ষণ করতে চেয়েছে প্রানপণে। ভূপতির মনের নাগাল সে পায়নি কখনোই।

 

চলচ্চিত্রের দ্বিতীয় দৃশ্যে এসেছে চারুর দাদা উমাপতি ও বৌদি মন্দা। মন্দা এসেছে চারুর নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে। "মন্দা মূঢ়, মন্দার আর যা কিছু গুণ থাক, কল্পনা ছিল না।" এসব তথ্য ইতস্তত ছড়িয়ে আছে নষ্টনীড়ে। মন্দাকে চারুর বিপরীত চরিত্র হিসেবে এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাই চারুর উপযুক্ত সঙ্গী হওয়া বা চারুর হৃদয়ের শূন্যতা পূরণ করা মন্দার সাধ্যাতীত, একথাই চলচ্চিত্রও আমাদের বলেছে। তাই চারুর মনের সুবাস কেবলই ধাক্কা খেয়ে বেরিয়েছে বাড়ির চার দেওয়ালের গায়ে। তাদের নিস্তরঙ্গ,শান্ত সৌম্য দাম্পত্যের দিনরাত্রি কেটেছে উচ্ছ্বাসহীন দৈনন্দিনতার বাঁধাধরা নিয়মে। যা চারুকে তৃপ্ত করতে পারেনি একদিনের জন্যও। এরপর চারু ও ভূপতির দাম্পত্যের শুনশান বারান্দায় এসেছে কালবৈশাখীর ঝড়। সেই ঝড় বহন করে এনেছে ভূপতির পিসতুতো ভাই অমল।

'নষ্টনীড়' গল্পে কিন্তু আমরা অমলের উল্লেখ পাই শুরু থেকেই। গল্পের প্রথম পরিচ্ছেদেই রয়েছে 'চারুলতা তাহাকে ধরিয়া পড়া করাইয়া লইত'। 'সামান্য পড়াইয়া অমলের দাবির অন্ত ছিল না। তাহা লইয়া চারুলতা মাঝে মাঝে কৃত্রিম কোপ ও বিদ্রোহ প্রকাশ  করিত, কিন্তু কোন একটা লোকের কোন কাজে আসা এবং স্নেহের উপদ্রব সহ্য করা তাহার পক্ষে অত্যাবশ্যক হইয়া উঠিয়াছিল'।

সত্যজিৎ অমলকে  সিনেমায় এনেছেন বেশ একটু   পরে। ছবির দৈর্ঘ্যের কথা মনে রেখে পরিচালককে অমল-চারুর সম্পর্কটিকে কম কথায় কম সময়ে যথাযথভাবে ব্যক্ত করতে হয়েছে। অমল ঝড়ের মধ্যে দিয়ে চারুর জীবনে আসে। এই ঝড় যেন তার অন্তর্ভুবনে ঝড়ের প্রতীক। অমল এসেই তার বৌঠানকে প্রণাম করে  বলে ,'বৌঠান আনন্দমঠ পড়েছ? আনন্দমঠ'? চারুর বঙ্কিমপ্রীতির উল্লেখ আমরা সিনেমার প্রথম দৃশ্যেই পেয়েছি, যখন সে একা একা পুরো বাড়ি ঘুরে বেরিয়ে বইয়ের আলমারিতে বঙ্কিম রচনাবলী খুঁজেছে। আর গুনগুন করে গান গেয়েছে। তখনই বৌঠান 'আনন্দমঠ পড়েছ'? এই একটি বাক্যই যেন অমল ও চারুর মনের তারটি যে একই সুরে বাঁধা দর্শকদের কাছে এই একটি ছোট্ট ইঙ্গিত রেখে গেছে। এখানেই চলচ্চিত্রকারের মুন্সিয়ানা।'নষ্টনীড়ে' যেকথা বিস্তৃতির আশ্রয়ে প্রকাশিত হয়েছে 'চারুলতা'য় তা সংহত সংযত এবং অবশ্যই সেলুলয়েডের ভাষায়।  কিন্তু গল্পের অন্তর্লীন বেদনা সঞ্জাত সুরটি দুটি ক্ষেত্রেই অমলিন।  এরপর ভূপতি অমলকে বলে তার কাগজের প্রুফ দেখে দিতে হবে। তাকে ভূপতি প্রেস দেখায়, এবং অমল চলে গেলে ভূপতি ও উমাপদ কাগজ নিয়ে আলোচনা করে। গল্পে আমরা জানতে পারি 'উমাপদ কাগজটির কার্যাধ্যক্ষ, চাঁদা আদায়, ছাপাখানা ও বাজারের দেনাশোধ, চাকরদের বেতন দেওয়া, সমস্তই ছিল উমাপদর ওপর। (নবম পরিচ্ছেদ) উমাপদর হাতে ভূপতির চাবি তুলে দেওয়ার দৃশ্যটি অত্যন্ত সার্থকভাবে একটিমাত্র ইঙ্গিতে এতগুলি কথা সহজেই আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে।

ছবিতে যে চারু ও অমলের বন্ধুত্বের ব্যাপারে ভূপতি অনুঘটকের কাজ করেছে এটা রবীন্দ্রনাথও তাঁর গল্পে দেখিয়েছেন। যদিও গল্পের প্রথম পরিচ্ছেদে চারুলতা 'তাহাকে (অমলকে) ধরিয়া পড়া করিয়া লইত' তবুও তৃতীয় পরিচ্ছেদে ভূপতির অনুরোধ অমলকে ' অমল আমাকে এই কাগজের হাঙ্গামা থাকতে হয় চারু বেচারা বড় একলা পড়েছে কোন কাজ কর্ম নেই মাঝে মাঝে আমার এই লেখবার ঘরে উঁকি মেরে চলে যায় কি করবো বলো তুমি অমল ওকে একটু পড়াশোনায় নিযুক্ত রাখতে পারলে ভালো হয় মাঝে মাঝে চারুকে যদি ইংরেজি কাব্য থেকে তর্জমা করে শোনাও তাহলে ওর উপকার হয়, ভালো লাগে চারুর সাহিত্যে রুচি আছে। উত্তরে অমল বলে, "বৌঠান যদি আরো একটু পড়াশুনো করেন তাহলে আমার বিশ্বাস উনি বেশ ভালো  লিখতে পারবেন"। কিন্তু ভূপতির এই অনুরোধে অমল যে খুব খুশি এমন মনে হয় না।  ছবিতেও ভূপতির অনুরোধে অমলকে তাই বলতে শুনি, 'দাদা আমি নিজে সাহিত্যচর্চা করব, না তোমার বউকে করাবো' ?

 এই সাহিত্যচর্চার সূত্র ধরেই অমল ও চারুর কাছাকাছি আসা। অমল ও চারুর দৃশ্যগুলি ঘরের মধ্যে বা বারান্দায় খানিকটা দৃশ্যায়িত হয়েছে, খানিকটা বাগানে। ঘর ও বারান্দার দৃশ্যে অমল ও চারুর সঙ্গে মন্দাও আছে। কিন্তু বাগানে কেবল চারু আর অমল। এই বাগানেই তারা প্রাণ খুলে কথা বলেছে, খুনসুটি করেছে। বাগান সাজানোর পরিকল্পনা করেছে দুজনে মিলে। চারু ময়ূর আঁকা মাদুর বিছিয়ে দিয়েছে মাটিতে, অমলের নাম লেখা খাতা এনে দিয়েছে তার লেখার জন্য। তবে সঙ্গে একটি শর্তও সে আরোপ করেছে, তা হল এ লেখা কোথাও ছাপাতে পারবে না অমল। এ খাতা কেবল তাদের দুজনের। কিন্তু অমল এ শর্ত লঙ্ঘন করে। সে তার লেখা ছাপানোর লোভ সামলাতে পারেনা। 'সরোরুহ' পত্রিকায় সে লেখা পাঠায় এবং তা ছাপা হয়। তারপর থেকে "অমল তাহার লেখা ছাপাইতে আরম্ভ করিল। প্রশংসা পাইল। মাঝে মাঝে ভক্তের চিঠিও আসিতে লাগিল। অমল সেগুলি তাহার বৌঠানকে দেখাইত। অমল মাঝেমাঝে নাম স্বাক্ষরবিহীন রমণীর চিঠিও পাইতে লাগিল। তাহা লইয়া চারু তাহাকে ঠাট্টা করিত কিন্তু সুখ পাইত না।" ঠিক এভাবেই মন্দাকে  নিয়েও চারু সুখ পায়নি।

মূল গল্পে চারু-অমল-মন্দাকে জড়িয়ে যে দ্বন্দ্ব তার সারাংশ হল এই, 'একজন আশ্রিত অন্য আশ্রিতকে প্রসন্ন চোখে দেখেনা 'কিন্তু সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পরে "মন্দা  যখন দেখিল যে অমল চারিদিক হইতে শ্রদ্ধা পাইতেছে তখন সেও অমলের উচ্চ মস্তকের দিকে চোখ তুলিয়া চাহিল। অমলের তরুণ মুখে তার গৌরবের সর্বোজ্জ্বল দীপ্তি মন্দার চক্ষে মোহ আনিল- অমলকে নূতন করিয়া দেখিল।...এর ফলে মন্দাকে তফাতে রাখা কঠিন হইল।" মন্দা আর কেবলমাত্র কচুরি সিঙাড়া বানিয়ে, পান সেজে অমলের মন পেতে চায় না, সাহিত্যে উৎসাহের ভান করতে শুরু করে। চারুর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই না ভেবে অমল মন্দার সঙ্গেও ভাব জমায়, চারু এতে ক্ষুব্ধ হলে সেই ক্ষোভের কারণও সে বুঝতে পারে না। এইখানে আমরা দেখি ভালোবাসার ক্ষেত্রটিতে বৌঠানের চেয়ে অমল অনেক বেশি অপরিণত। চারুর প্রেম অনেক বেশি পরিণত। তার মান-অভিমানের সূক্ষ্ম তন্ত্রীগুলিই সেকথা  বুঝিয়ে দেয়। সেই তারের মর্মমূলে অমল সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি। মন্দার তুলনায় চারু যে কত বুদ্ধিমতী সেকথা প্রমাণের জন্য চারু লেখে। সে লেখা সাহিত্যগুণে অমলের লেখাকে ছাপিয়ে যায়, তা সেকালের বিখ্যাত পত্রিকা 'বিশ্ববন্ধু'তে প্রকাশিত হয়। (এ ঘটনায় চারুর অভিমানী ভালোবাসা উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।)

'নষ্টনীড়' গল্পে আমরা দেখি চারুর লেখা সম্পর্কে গল্পকারের উক্তি খানিকটা এইরকম, "খানিকটা অগ্রসর হইতেই তাহার লেখা সহজেই সরল এবং পল্লিগ্রামের ভাষা-ভঙ্গি-আভাসে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল"। ছাপানোর পর এক সমালোচক অমলের লেখার তুলনা এনে চারুলতা দাসীর লেখার বেশি প্রশংসা করেন। চারু তাতে খুশি হলেও পরক্ষণেই অমল দুঃখ পেতে পারে ভেবে তার মন কষ্টে ভরে যায়।  কিন্তু অমল ভুল বোঝে, সে ভাবে 'আমাকে গালি দিয়া চারুর লেখাকে প্রশংসা করিয়াছে বলিয়া আনন্দে চারুর আর চৈতন্য নাই'। এ ভাবনাতেও আমরা অমলের অপরিণত মনের সাক্ষাৎই পাই। মনে হয় সে যেন চারুর মনটিকে বুঝতে পারেনি সেভাবে। অমল চলে যায় মন্দার কাছে। এতে চারুর অভিমান বেড়ে যায়। সে ভূপতির কাছে গিয়ে বলে, 'কিছুদিন থেকে মন্দার ব্যবহার আমার ভালো লাগছে না, ওকে এখানে রাখতে আমার আর সাহস হয় না।'

সত্যজিৎ তাঁর চলচ্চিত্রে চারুর এই মান-অভিমানের রেখাগুলিকে ফুটিয়ে তুলেছেন অত্যন্ত সার্থকভাবে। তবে অমল ও চারুর এই মান-অভিমানের দৃশ্য সিনেমায় এসেছে অনেকটাই অন্যভাবে। পরিচালক সত্যজিতের কথা থেকেই আমরা জানতে পারি "এই ঘটনাবলির মধ্যে দিয়ে অমলের চরিত্রের যে-রূপটি আমরা  পাই, তা একাধারে অপরিণত অস্থির বা vacillating ও দুর্বল। মন্দাকে তাড়াবার অনুরোধে চারু-চরিত্রও বেশ খর্ব ও স্থূল হয়ে যায় বলে আমি মনে করি। সাহিত্যের কাহিনীকারের স্বাভাবিক সুযোগ গুলি গ্রহণ করে ভাষার প্রসাদগুনে রবীন্দ্রনাথ এই ঘটনাবলির মধ্যেও যে suspension of disbelief সৃষ্টি করতে পেরেছেন, তা চলচ্চিত্রকারের সাধ্যের অতীত। চলচ্চিত্রের প্রত্যক্ষতাই ঘটনাবলিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াত, ফলে অমল-চারুর মান-অভিমান ও ভুল বোঝাবুঝির মাত্রা ন্যাকামির সামিল হয়ে দাঁড়াত।" অথচ এটাও অস্বীকার করা চলে না যে কাহিনীর প্রথমে এই ছেলেমানুষি-মান-অভিমানের পালা ছিল একটা অপরিহার্য অঙ্গ। পরিসমাপ্তির অমোঘ ট্রাজেডি যেন এই ছেলেমানুষির পটভূমিকায় খোলে ভালো। এই দিকটা মনে রেখে এবং তার সঙ্গে আধুনিক চিন্তাভাবনার বোদ্ধা দর্শকের কথা মনে রেখেও কাহিনীর এই অংশের ঘটনাবলিতে কিছু রদবদল করা হয়েছিল।

সিনেমায় মান-অভিমানের পালাটি শুরু হয় এভাবে খানিকটা দাদার প্ররোচনাতেই অমল চারুকে সঙ্গ দিচ্ছে এটা জেনে চারু প্রথম ক্ষুব্ধ হয় বাগানে, তাদের নিভৃত আলাপচারিতার সময়ে। এখানেই চারুর অভিমানের শুরু। অমল এই অভিমানের সুযোগ নিয়ে চারুর কাছ থেকে কাগজে লেখা পাঠানোর অনুমতি আদায় করে নেয়। অমল ঘরে চারুকে না পেয়ে মন্দার কাছে যায়, তাকে বলে 'বলতো কোন কাগজে লেখা পাঠাই?' অমল চলে গেলে চারু মন্দাকে সামান্য অজুহাতে ধমক দেয়, সে অভিমানবশেই তার লেখা 'বিশ্ববন্ধু'তে পাঠায়, লেখা প্রকাশিত হলে অমলকে তা দেখিয়ে পরমুহুর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার  লেখা যে 'সরোরুহে'র থেকেও বড় কাগজে বেরিয়েছে এ তো অমলের অপমান। এতেই তার নারীমন ব্যথিত হয়ে ওঠে। লেখায় যে সে অমলকে ছাপিয়ে গেছে এ ভাবনা তাকে ব্যথা দেয়, এ ঘটনায় চারুর অন্তরে অভিমানী ভালোবাসা উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। সে অমলের বুকের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে অশ্রুসজল কন্ঠে কেবলই বলতে থাকে, 'আমি আর কোনদিন লিখবোনা ঠাকুরপো', বৌঠানের অশ্রুতে অমলের পোশাক ভিজে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই হতচকিত হয়ে পড়ে। এই প্রথম দুজনেই বুঝতে পারে তাদের অজান্তেই সম্পর্ক বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরিয়ে বাঁক নিয়েছে অন্য কোন পথে।

রবীন্দ্রনাথের গল্পে কিন্তু এই ধারণা অমলের মনে আসে উমাপদর বিশ্বাসঘাতকতার পর। দেনার দায়ে ডুবে থাকা ভূপতি নিজের ভার কিছুটা হালকা করার জন্য অমলকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, এর আগেও অবশ্য অমলকে সে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু অমল তা উড়িয়ে দেয়। কিন্তু এবার অমল রাজি হয়ে যায়। উমাপদর বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনার পরে অমল ভূপতির ক্লিষ্ট চেহারা দেখে তার কারণ চারুকে জিজ্ঞাসা করে। চারু বলে, 'কই তা তো কিছুই বুঝতে পারলুম না, অন্য কাগজে বোধ হয় গাল দিয়ে থাকবে'। এইখানে চারুর অসংবেদনশীলতা হঠাৎ করেই যেন অমলের চোখ খুলে দেয়।

"অমল একবার তীব্র দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চারুর মুখের দিকে চাহিল, কি বুঝিল কি ভাবিল জানিনা, চকিত হইয়া উঠিয়া পড়িল। পর্বতপথে চলিতে চলিতে হঠাৎ একসময় মেঘের কুয়াশা কাটিবামাত্র পথিক যেন  চমকিয়া দেখিল, সে সহস্র হস্ত গভীর গহ্বরের মধ্যে পা বাড়াইতে যাইতেছিল। অমল সন্ধান দ্বারা তাহার (ভূপতির) দুর্গতির কথা জানিতে পারিয়াছিল। তাহার পর সে চারুর কথা ভাবিল, নিজের কথা ভাবিল, কর্ণমূল লোহিত হইয়া উঠিল। সবেগে বলিল, চুলোয় যাক আকাশের চাঁদ আর অমাবস্যার আলো আমি ব্যারিস্টার হয়ে এসে দাদাকে যদি সাহায্য করতে পারি তবেই আমি পুরুষ মানুষ।"


সত্যজিৎ কিন্তু পূর্বোল্লিখিত ওই কান্নার দৃশ্যে চারু অমলের সম্পর্কের একটা বাঁক দেখিয়ে তারপর আসেন উমাপদর বিশ্বাসঘাতকতা প্রসঙ্গে। চারু-অমলের সম্পর্কের ওই বাঁকটি না থাকলে উমাপদর বিশ্বাসঘাতকতায় অমলের বোধোদয়ের প্রসঙ্গটি দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতো না। মূল গল্পে উমাপদ ধরা পড়েছে। কিন্তু যে উমাপদ ঠান্ডা মাথায় তলায় তলায় কাজ গুছিয়ে নিয়েছে, তাতে তার পলায়নই সত্যজিতের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। তাই ছবিতে দেখি মন্দাকে নিয়ে উমাপদ যথাসময়ে প্রস্থান করেছে। এতে ভূপতির ট্র্যাজেডির মাত্রা আরও তীব্র হয়েছে। সিনেমায় ভূপতি উমাপদর বিশ্বাসঘাতকতার কথা অমলকে বিস্তারিত ভাবে বলেছে। নষ্টনীড়ে এ ঘটনা নেই। গল্পে আছে 'খোঁজ নিয়ে অমল ব্যাপারটা জানিতে পারিয়াছে'। সত্যজিৎ সিনেমায় এ ঘটনা ঘটালেন কারণ এখানে ভূপতির উমাপদর উপর বিশ্বাস স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে অমলের ওপর বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার একটা চমৎকার সমান্তরাল রেখা (parallel) টানার সুযোগ আছে। চিত্রনাট্যকার এমন একটি সুবর্ণসুযোগ কেন হাতছাড়া করবেন? তাই ভূপতির সঙ্গে বাক্যালাপে অমল ভূপতির দুরবস্থার কথা বোঝে। সে উমাপদর পাশাপাশি নিজেকে বসিয়ে বিচার করে মনে মনে। তার মনে হয় সেও কি এই বিশ্বাসভঙ্গের একই অপরাধে অপরাধী নয়? এই ভাবনা তার পরিণত মনস্কতারই পরিচয় দেয়।গল্পের শুরুতে কিন্তু তা ছিলনা। আমরা সিনেমায় দেখি এর পরের দিনই সে ভূপতিকে চিঠি লিখে রেখে তার আশ্রয় ত্যাগ করে চলে যায়।

অমল চলে যাওয়ার পর আরও ছটি অধ্যায়ের শেষে ভূপতিকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ তার আসল ট্রাজেডিটি উপলব্ধি করিয়েছেন। এই ছটি অধ্যায় জুড়ে খবরের কাগজ উঠে যাওয়ায় হাতে দীর্ঘ অবসর পেয়ে ভূপতি কেবলই চারুর কাছে আসতে চেয়েছে। বাইরের জগতে ঘা খেয়ে হয়তো বা সে ঘরের শান্ত দাম্পত্যের আশ্রয়টিতে একটু বিশ্রাম নিতে চেয়েছে। সে অমলের মত সাহিত্য রচনা করে চারুর মন জয় করতে চেয়েছে। চারু ভূপতির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বললেও ভূপতির প্রেমালাপের প্রচেষ্টায় কোন মন্তব্য করে নি। তাই ক্রমে ক্রমে সে চেষ্টা ভূপতির ক্ষীণ হয়ে আসে। কার কাছে সে আশ্রয় নেবে? কার মন সে জয়  করবে এখন? চারু যে "আপনাকে আর খাড়া রাখিতে পারেনা। কাজকর্ম পড়িয়া থাকে, সকল বিষয়েই ভুল হয়, চাকর-বাকর চুরি করে, লোকে তাহার দীন ভাব লক্ষ্য করিয়া নানা প্রকার কানাকানি করিয়া থাকে। কিছুতেই তাহার চেতনমাত্র নাই, এমনি হইল হঠাৎ চারু চমকিয়া উঠিত, কথা কহিতে কহিতে কাঁদিবার জন্য উঠিয়া যাইতে হইত।অমলের নাম শুনিবামাত্র তাহার মুখ বিবর্ণ হইত। অবশেষে ভূপতিও সমস্ত দেখিল এবং যাহা মুহূর্তের জন্য ভাবে নাই তাহাও ভাবিল। সংসার একেবারে তাহার কাছে বৃদ্ধ শুষ্ক জীর্ণ হইয়া গেল।"   

সিনেমায় কিন্তু সত্যজিৎ অমল চলে যাওয়ার পরের ঘটনাকে একেবারেই বিস্তার দেননি। দেখিয়েছেন খুবই সংক্ষেপে। তিনি বলেছেন 'গল্পের এই অংশে ভূপতির যেখানে কাজ নিয়ে মেতে থাকার কোন প্রশ্নই ওঠেনা চারুর সঙ্গ দেবার জন্যই যখন সে ব্যস্ত এবং চারু তার আচরণে এতই প্রকট যে লোকে তার সম্বন্ধে কানাকানি করে সেখানে ভূপতির দীর্ঘকালব্যাপী এই ম্যারাথন কমপ্রিহেনশন  এর মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি কোথায়?'

অমল চলে যাওয়ার পর ভূপতির চারুর কাছে আসার চেষ্টার ঘটনাটিকে রূপ দেওয়ার জন্যই তিনি স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে গেছেন সমুদ্রতটে। সেখানে উভয়ের কথোপকথনে আপাতদৃষ্টিতে যেন মনে হয় চারু ভুলতে পেরেছে অমলকে। এই দৃশ্যে অমলের কোন উল্লেখ নেই। মূল কাহিনীর মতই এখানেও চারু কখনোই কথাবার্তায় ভূপতির প্রতি রূঢ় ভাব প্রকাশ করেনি। ছবির  এ দৃশ্যেও ভূপতির কাগজ বার করার প্রস্তাবকে চারু উৎসাহই দিয়েছে। কিন্তু কলকাতায় তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল সেই অব্যর্থ চিঠিটি। ভূপতি অমলের লেখা চিঠি চারুর হাতে তুলে দেয় নিতান্ত সহজভাবেই। এরপর ভূপতি ঘর থেকে চলে গেলে চারুর হৃদয়ের জমানো বেদনা কান্নার দমকে দমকে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। ভূপতি একটু দূর থেকে শোনে ক্রন্দনরত চারুর বিলাপ,'ঠাকুরপো তুমি কেন চলে গেলে? ঠাকুরপো আমি কি অপরাধ করেছিলাম যে তুমি আমায় না বলে চলে গেলে।'

'নষ্টনীড়' গল্পেও এ কান্না আমরা শুনেছি। "চারু উপুড় হইয়া পড়িয়া বালিশের উপর মুখ রাখিয়া বারবার করিয়া বলিত অমল, অমল, অমল। সিক্ত চক্ষু মুদ্রিত করিয়া বলিত, অমল তুমি রাগ করিয়া গেলে কেন, আমি তো কোন দোষ করি নাই, তুমি যদি ভালো মুখে বিদায় লইয়া যাইতে তাহা হইলে বোধহয় আমি এ দুঃখ পাইতাম না।" এরপর সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত ভূপতিকে আমরা চলচ্চিত্রে দেখতে পাই চলন্ত ঘোড়ার গাড়িতে একা। তার  ভিজে চোখে ক্রমান্বয়ে অবিশ্বাস, বেদনা, হতাশা এবং সবশেষে চারুর প্রতি অনুকম্পার ভাব ফুটে ওঠে।'নষ্টনীড়' গল্পের শেষে চারুকে পরিত্যাগ করে মহীশূর যাত্রা করেছে ভূপতি। ভূপতির মত দায়িত্বশীল একটি চরিত্রের পক্ষে স্ত্রীকে একা ফেলে মহীশূর চলে যাওয়া চলচ্চিত্রকারের পক্ষে সঙ্গত বলে মনের হয়নি। তাই দুজনের মধ্যের দূরত্বকে তিনি অন্যভাবে চিত্রায়িত করেন। সিনেমায় ভূপতি বাড়ি ফিরে আসে। চারু দরজা খুলে ডাকে, 'এসো'। ভূপতি ইতস্তত করে, বুঝতে পারেনা কি করবে চারু আবার বলে, 'এসো', বলে হাত বাড়ায়। ভূপতিও হাত বাড়ায়। কিন্তু হাতে হাত মিলতে পারে না। যেহেতু দুজনেই এখন দুজনের সবটুকুই জানে তাই তাদের ব্যবধানও দূরতিক্রম্য। এ দৃশ্যে তাই হাতে হাত মেলে না। পরিচালক একটি অসামান্য ফ্রিজ শট নেন এখানে, যা দর্শকের মনে চিরকালের জন্য ফ্রেমবন্দী হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এ দুটি হাত মিলবে কি? এর উত্তর অজানা।

চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ বলেছেন "আজকের মত ঘর ভেঙে গেছে, বিশ্বাস ভেঙে গেছে, ছেলেমানুষি কল্পনার জগৎ থেকে রূঢ় বাস্তবের জগতে নেমে এসেছে দুজনেই। এটাই বড় কথা। এটাই নষ্টনীড়ের থিম। আমার মতে চারুলতায় এ থিম অটুট রয়েছে।" আমাদেরও তাইই মনে হয়। রবীন্দ্রনাথের 'নষ্টনীড়' সত্যজিতের 'চারুলতা' হিসেবে হয়তো বেশি আধুনিক হয়েছে কিন্তু আন্তর্ধর্মে তেমন কোনো রদবদল হয়নি। সাহিত্যের ভাষা সেলুলয়েডে যথাযথভাবে চিত্রায়িত হয়েছে সত্যজিতের স্বকীয়তা গরিমায়।