কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো কি আজও প্রাসঙ্গিক?

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর বিভিন্ন দিককে দেশকালের প্রেক্ষিতে দেখতে চেয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমন কিছু কথা বলেছেন যা আমাদের ভাবায়, আবার বিতর্কের দিকেও উশকে দেয়।

কমিউনিস্ট ইস্তাহারের উপর পার্থবাবুর সাম্প্রতিক লেখাটি আমরা রাখছি এইজন্য যে অসাধারণ লেখনশৈলী এবং গভীর ইতিহাসবোধের মিশ্রণে কতকগুলো এমন বিষয়কে তিনি সামনে এনেছেন, যা প্রকৃতই প্রণিধানযোগ্য। একটি ঐতিহাসিক দলিলকে আলোচনার পরিসরে যে ঐতিহাসিক শিক্ষাগুলি তিনি হাজির করলেন অনায়াস দক্ষতায়, তা বোধহয় তাঁর মতো সংবেদনশীল বিদগ্ধ মানুষের পক্ষেই সম্ভব। তাছাড়াও, সামগ্রিকভাবে লেখাটির এই অভিঘাতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের জায়গা নেই যে, একটি ইস্তাহারকে দৈববাণী হিসেবে নেওয়া অনুচিত।  

আবার অন্য এক দিক থেকে দেখলে, হয়ত বা এই ভবিতব্যকে এড়িয়ে যাওয়া সংখ্যাগুরু কমিউনিস্টের কাছে অসম্ভবের নামান্তর। ইস্তাহারটি ইউরোপের প্রেক্ষাপটে রচিত – ফলে এটিকে বুঝতে, সমর্থন/বিরোধিতা করতে হলে, যে রূপক ও উপমার (মেটাফর) আঙ্গিকে সেটি লেখা - তার অবলম্বনে অন্তর্বস্তুতে পৌঁছে যেতে, আঠেরো-উনিশ শতকের ইউরোপের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি সম্পর্কে যে ধারণা পাঠকের থাকতে হবে সেটি আমাদের কথা ছেড়েই দিন, সাধারণভাবে ইংরেজী দক্ষ ক’জন ইউরোপীয়ের কাছে তা আশা করা যায়? যায় না, এবং তা না যাওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত ও সমাজ পরিবর্তন কামী মানুষের কাছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম উদ্দীপনার উৎস হয়ে উঠেছে বারবার, সে প্রসঙ্গটি আলোচনায় অধরা থেকেছে।

পার্থবাবু ইস্তাহারে কৃষক প্রশ্নে মার্কস–এঙ্গেলস এর নেতিবাচক বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যা পাঠকের কাছে ইস্তাহারের সীমা ছাড়িয়ে সাধারণীকরণের পর্যায়ে বিবেচিত হওয়া সম্ভব অথচ অসমীচীন। কৃষক প্রশ্নে মার্কসের সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায় “লুই বোনপার্ট–এর আঠেরোই ব্রুমেয়ার” লেখায়। সেখানে কৃষক প্রশ্নে তাঁর নেতি কতটা জেনেরিক, কতটা কণ্ডিশনাল সে প্রশ্ন আলোচনার দাবী রাখে।  মার্কস যখন গুরুত্ত্ব দিয়ে রাশিয়াকে দেখেন, তখন কিন্তু রাশিয়ার প্রেক্ষিতে রাশিয়ান কৃষকদের সংগঠন অবশ্চিনা-কে ভিত্তি করেই সমাজতন্ত্র গঠনের সম্ভাবনাকে গুরুত্ত্ব দিয়ে আলোচনা করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে, কৃষকের প্রতি মার্কসের নেতিকে অবশ্যই সাধারণীকরণ করা চলে না। স্বাভাবিক কারণেই বিশ শতকের মাঝে তৃতীয় বিশ্বের কমিউনিস্টরা সেটা করেননি।

পার্থবাবু বলেছেন, ইস্তাহারে ঘোষিত শ্রমিক-শ্রেণীর আন্তর্জাতিকতা প্রথম আন্তর্জাতিক ভেঙ্গে পড়ার পর মিথ্যে হয়ে গেছে । সত্যি কথা। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক–এ কাউতস্কি এবং জার্মান সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের কমিউনিস্টদের সঙ্গে – লেনিনের বিতর্কগুলি সেই বাস্তবটারই প্রমাণ। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে লেনিনের নেতৃত্বে যারা মার্কসীয় আন্তর্জাতিকতার পতাকাটি আঁকড়ে ধরতে পেরেছিলেন, এই বিশ্বকে প্রথম সমাজতন্ত্রের স্বাদ দিতের পেরেছিলেন তাঁরাই।

আমরা কয়েকটি বিষয় তুললাম। পার্থবাবু ইস্তেহারের ঐতিহাসিক গুরুত্ত্বের কথা বলেছেন ইতিবাচক ভঙ্গিতে – যা আরও বিস্তারিত আলোচনার দাবী রাখে। প্রতর্কের এই কলমে আরও মত আসুক। আমাদের চেষ্টা থাকবে সেগুলি থেকে যথাযথ শিক্ষাটি নিয়ে নেওয়ার।

অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই প্রবন্ধটি নিয়ে আমরা আপনাদের মতামত, আলোচনা, বিতর্ক আহ্বান করছি।

অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই লেখাটি নিয়ে একটি অন্য দৃষ্টিকোণও এখানে রইলো। সেটি লিখেছেন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী নবকুমার বিশ্বাস।

 

অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
[লেখাটি পিডিএফ ফর্মাটে আছে। আপনারা ডাউনলোড করে নিয়ে সহজে পড়তে পারবেন।]

 

 

 

নবকুমার বিশ্বাসের লেখা।

[লেখাটি পিডিএফ ফর্মাটে আছে। আপনারা ডাউনলোড করে নিয়েও সহজে পড়তে পারবেন।]