হান কাং এর হিউম্যান অ্যাক্টস- বাংলা তরজমা - ৪

কফিনভর্তি দ্বিতীয় ট্রাকটা এসে দাঁড়াল জিম এর সামনে। প্রচণ্ড রোদে চোখটা আরও কুঁচকে তুমি কোনোমতে সামনের প্যাসেঞ্জার সিট থেকে জিন সু কে নেমে আসতে দেখলে। পায়ে পায়ে ও তোমার কাছে এগিয়ে এলো।

“আমরা ছ’টায় বন্ধ করে দেব। ততক্ষণে অবশ্যই বাড়ি চলে যাবি”

“ভিতরের – এই – লোকগুলোর দেখাশোনা কে করবে?” তুমি তোতলাচ্ছিলে।

“সৈন্যরা আজ রাতে আবার শহরে ঢুকবে। আত্মীয়স্বজন, শোকতপ্তদেরও ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছটার পরে এখানে যেন আর কেউই না থাকে।“

“কিন্তু ঐ সৈন্যগুলো এখানে আসতে যাবে কেন? এই মরা মানুষগুলো ওদের আর কী ক্ষতি করতে পারে?”

“ওদের হিসাবে যারা আহত হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছে, তারাও ‘বিশৃঙ্খল জনতা’, অতএব শেষ করে দিতে হবে। তোর কী মনে হয়, ওরা এই মৃতদেহগুলোর দিকে একবার তাকাবেও না, তাদের সাথে থাকা পরিবারের লোকদের এমনিই ছেড়ে দেবে?”

আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল জিন-সু, কিন্তু শেষ অবধি কথাটা গিলে নিল, তারপর গটগট করে জিমনাসিয়ামের ভিতরে ঢুকে গেল। ধরে নেওয়া যায়, শোকগ্রস্ত মানুষগুলোকেও ও এই একই কথা বলবে এখন। যেভাবে কোনো দামী সম্পত্তি আগলে রাখো, সেভাবেই লেজার খাতাটা বুকের মধ্যে চেপে ধরে তুমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়েছিলে – দায়িত্বের ভার নিতে কাঁধ দুটো শক্ত করে হাঁটছে যেন ও। তুমি চোখ কুঁচকে জিন-সু’র ভিজে চুল, ভিজে জামা, ভিজে জিনস দেখছিলে, আর একেকজন আত্মীয়ের চেহারার হালকা আভাস। ওঁরা মাথা নাড়ছিলেন, আপত্তি করছিলেন। একজন মহিলার কন্ঠস্বর গোঙানো কান্নার আওয়াজ থেকে বাড়তে বাড়তে ক্রমশঃ তীব্র হচ্ছিল।

“আমি কোত্থাও যাচ্ছি না। আমি এখানেই মরতে চাই - আমার সোনাটার পাশেই”

তুমি একদম দূরে শোয়ানো দেহগুলোর দিকে দেখছিলে, মাথা অবধি কাপড় দিয়ে ঢাকা। যাদের কেউ এখনো সনাক্ত করতে আসেনি। একদম কোনের লোকটার দিকে তুমি জোর করে তাকালে। প্রভিন্সিয়াল অফিসে যে মুহুর্তে প্রথম ওদের ওপর তোমার চোখ পড়েছিল, তোমার মনে হয়েছিল ওটা জিওং মী। শরীরটা তখনো পচতে শুরু করেনি বটে, কিন্তু তাতে এত ছুরির দাগ যে ঠিকভাবে চেনা মুশকিল। কিন্তু ওর মতই লাগছিল। আর ওই প্লিট দেওয়া স্কার্ট। হ্যাঁ, ওর মতই বটে। 

কিন্তু ওরকম স্কার্ট তো অনেকেই পড়ে, তাই না? তুমি ঠিক জানো যে তুমি ওরকম একটা স্কার্ট পরেই ওকে বেরোতে দেখেছিলে রবিবার? ওর চুল কি সত্যিই অতটা ছোট ছিল? ঐ ববকাট দেখে তো মনে হচ্ছে এ একজন মিডল স্কুলের ছাত্রী, তাই না? আর তাছাড়া জিওং-মি তো সারাক্ষণ অভাবের সংসারে এটা ওটা বাঁচাতে ব্যস্ত থাকে, ও কেন এখন এমনকি গরমকাল আসারও আগে অত খরচা করে পেডিকিওর করাতে যাবে? তবে এও তো সত্যি যে তুমি ওর খালি পায়ের দিকে কখনো তাকাওইনি আগে। জিওং মি-র হাঁটুর কাছে ওই ঘন নীলচে রঙের একটা বীনের দানার মত মাপের দাগটা ছিল কি না তা একমাত্র জিওং ডে ই বলতে পারত। জিওং ডে’র জানা দরকার, নিশ্চিত করেই জানা দরকার যে ওখানে শুয়ে থাকা ওই মেয়েটা ওর বোন না।

আবার ওদিকে জিওং মি’রও তো ওর ভাইকে খুঁজে পাওয়াটা দরকার। এখানে তোমার জায়গায় ও থাকলে ও এতক্ষণে শহরের প্রতিটা হাসপাতালে টহল লাগাত, যতক্ষণ না ওর ভাইকে খুঁজে পাচ্ছে, তারপর ঠিক যখন ওর জ্ঞানটা ফিরছে, সেই সময়েই ওর সামনে গিয়ে হাজির হত। যেমন গত ফেব্রুয়ারীতে ও জিওং মি-র ওপর চেঁচাচ্ছিল যে লিবারাল আর্টস স্কুলে যাবার আগে ও বরং মরে যাবে, বরং মিডল স্কুলে থার্ড ইয়ার শেষ করেই ও কোনো ভোকেশনাল কোর্সে ভর্তি হয়ে যাবে, যাতে ব্যবসা করার জন্য তৈরী হয়ে নিতে পারে, এসব বলতে বলতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিল। তারপর সেদিনই যখন ওর দিদি ওকে একটা কমিক স্টোর থেকে খুঁজে বার করে কান ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে আসছিল, ওর মুখটা ভুতের মত সাদা দেখাচ্ছিল। এরকম একটা রোগা প্যাংলা মেয়ে জিওং ডে কে এভাবে কান ধরে নিয়ে আসছে দেখে তোমার মা আর মেজদার হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছিল প্রায়। এমনকি তোমার বাবার মত গম্ভীর শান্ত মানুষও হাসি চাপতে পারছিলেন না – মাঝে মাঝে গলা খাঁকারি দিচ্ছিলেন। দুই ভাইবোন নিজেদের ছোট্ট ঘরটায় ঢুকে যাবার পরেও প্রায় মাঝরাত অবধি ওদের ঝগড়ার চাপা আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। তারপর একসময়ে কোনো একজন গলা নরম করে অন্যজনকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করল, তাতে অন্যজন আবার চিৎকার করে উঠে সম্ভবতঃ টেবিলটাই উলটে ফেলে দিল। ইতিমধ্যে ঘুমে তোমার চোখ জড়িয়ে আসছিল, কে কাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে আর কে কাকে ধমকাচ্ছে, কখন হাসছে কিংবা দীর্ঘশ্বাস ফেলছে, সেসব বুঝতে বুঝতেই কখন যেন তুমি ঘুমের অতলে চলে গেলে।

আর এখন তুমি জিমন্যাসিয়ামের দরজার কাছে টেবিলটায় বসে আছ।

লেজার খাতাটা তোমার বাঁদিকে টেবিলের ওপর খোলা, তুমি সেখান থেকে নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানার কলামগুলো খুঁটিয়ে দেখছ, এ ফোর কাগজে সেগুলো বড় বড় অক্ষরে তুলে নেবার আগে সব ঠিকঠাক তোলা হয়েছে কি না মিলিয়ে নিচ্ছ। জিন-সু বলেছে যদি আজ রাতেই সব নাগরিক যোদ্ধারা মরেও যায়, তবু যেভাবেই হোক সব মৃতদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতেই হবে। এগুলো লিখে কফিনে আটকানোর কাজে তোমাকে সাহায্য করার মত কেউ নেই। ছটার মধ্যে সব করে ফেলতে হলে খুব তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে।

তোমার কানে গেল কেউ তোমার নাম ধরে ডাকছে।

তুমি তাকিয়ে দেখলে তোমার মা দুটো ট্রাকের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছেন। আরেকটু এগিয়ে আসার পরে বুঝলে যে এবারে আর মেজদা তোমার মায়ের সঙ্গে নেই। যখনই দোকানে বা কাজে যান, তোমার মায়ের পরণে থাকে ওই ধুসর জামা আর কালো ব্যাগি ট্রাউজার – যেন ওগুলো ওঁর ইউনিফর্ম। মা-কে যেমন দেখায় সবসময়ে তেমনই দেখাচ্ছিল, শুধু ওঁর পাট করে আঁচড়ানো চুলগুলো কিছুক্ষণ আগের বৃষ্টির ঝাপটায় একটু এলোমেলো হয়ে গেছিল।

ওঁকে দেখেই তুমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে ওর দিকে দৌড় দিয়েছিলে, কী করছ তা না বুঝেই – তারপর মাঝরাস্তায় হঠাৎ খেয়াল পড়তেই তুমি ঘুরে জিম এর নিরাপদ আশ্রয়ে পালাতে যাচ্ছিলে, তার আগেই মা তোমার হাতটা খামচে ধরলেন।

“বাড়ি চল” তুমি প্রাণপনে তোমার হাতটা ঝাঁকিয়ে ছাড়াবার চেষ্টা করছিলে। কিন্তু যেরকম শক্ত করে হাতটা তোমাকে ধরেছিল, রীতিমত ভয় পাইয়ে দেবার মত – যেন কেউ ডুবে যাবার আগে খড়কুটো আঁকড়ে ধরেছে। তুমি অন্য হাত দিয়ে ওঁর আঙুলগুলো ছাড়াচ্ছিলে এক এক করে। “সেনারা আবার আসছে। এখনই বাড়ি চল”।

অবশেষে তুমি ওর হাতটা কোনোমতে ছাড়িয়ে নিয়েই চট করে ঘরটার ভিতরে ঢুকে পড়লে। তোমার মা-ও পিছন পিছন আসতে চাইছিলেন, কিন্তু কফিনগুলি যার যার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য লাইন দেওয়া আত্মীয়দের ভীড়ে আটকে গেলেন।

তুমি এবার ঘুরে মা কে বললে, “আমরা এখানে ঠিক ছটায় বন্ধ করে দেব মা”।

বিরক্ত হয়ে তিনি এদিক ওদিক করে তোমার চোখে চোখ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, কিন্তু লাইনের এপার থেকে তুমি শুধু ওর কপালটুকু দেখতে পাচ্ছিলে। তার ভাঁজগুলো দেখে তোমার ছিঁচকাঁদুনে বাচ্চাগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।

এবারে তুমি আরেকটু চেঁচিয়েই বললে, “চিন্তা কোরো না মা, এখানে বন্ধ হলেই আমি সোজা ঘরে যাব, প্রমিস”

এতক্ষণে ওঁর কপালের ভাঁজগুলো একটু সোজা হল, “দেরী করিস না যেন। অন্ধকার হবার আগেই চলে আসবি – আমরা একসাথে ডিনার সারব”।

তোমার মা চলে যাবার পর এক ঘন্টাও হয়নি, তুমি দেখতে পেলে একজন বয়স্ক লোক তোমার দিকে এগিয়ে আসছেন। তুমি উঠে দাঁড়ালে। এতদূর থেকেও বোঝা যাচ্ছিল ওঁর এই বুড়োটে মার্কা খয়েরি জ্যাকটটা এক সময়ে যথেষ্ট সুসময়ের সাক্ষী থেকেছে। ওঁর কালচে নীল টুপির নীচ দিয়ে ধবধবে সাদা চুলের গুচ্ছ বেরিয়ে আছে আর উনি একটা লাঠিতে ভর দিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছেন। কাগজের টুকরোগুলো যাতে হাওয়ায় এদিক ওদিক ছড়িয়ে না যায় সেজন্য সেগুলোকে লেজার খাতাটার নীচে চাপা দিয়ে তুমি অঁর দিকে এগিয়ে এলে।

“আপনি কাকে খুঁজছেন, সার?”

“আমার ছেলে আর নাতনি” – ওঁর অনেকগুলো দাঁত না থাকার ফলে এমনিতেই জড়ানো উচ্চারণ আরও দুর্বোধ্য শোনাচ্ছিল।

“আমি হুয়াসুন থেকে আসছি – একটা টড়াক্টর আমাদের লিফট দিচ্ছিল। কিন্তু ওরা শহরের বাইরেই আমাদের নামিয়ে দিয়ে বলল শহরে নাকি ঢোকা নিষেধ। আমি অনেক ঘুরে পাহাড় টপকে একটা পথ খুঁজে পেলাম, যেটা সৈন্যরা পাহারা দিছে না। তাই কোনোমতে এসে পৌঁছাতে পেরেছি।“

নি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ওঁর মুখের কাছে ছড়িয়ে পড়াস চুলের ওপর ছিটে আসা থুতুর ফোঁটাগুলি ছাইএর মত লাগছিল। তোমার সামনের এই মানুষটা, সোজা রাস্তায় হেঁটে আসাই যাঁর কাছে ভীষণ কঠিন একটা কাজ, তিনি কী করে পাহাড় ডিঙিয়ে এলেন, তোমার মাথায় ঢুকছিল না।

“আমাদের ছোট ছেলে – ও বোবা – আসলে ছোটবেলায় একটা জ্বর হয়েছিল তো, তারপরে আর কখনো কথা বলতে পারেনি। কয়েকদিন আগে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া একজনের মুখে শুনলাম সৈন্যরা নাকি একটা বোবা লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে – সে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল।“

তুমি সেই বয়স্ক মানুষটার হাত ধরে ওঁকে ধাপগুলো উঠতে সাহায্য করছিলে।

“আমাদের বড় ছেলের মেয়ে জিওনাম এ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, ওখানে একটা ঘর ভাড়া করে থাকে। আমি কাল ওখানে গেছিলাম – কিন্তু ওরও কোনো খবর পেলাম না। ওর বাড়িওয়ালা আর পাড়াপ্রতিবেশীরা বলল, গত কয়েকদিন ধরেই ওকে কেউই নাকি দেখেনি।“

জিমের হলঘরটায় ঢুকে তুমি মাস্কটা পরে নিলে। শোকের পোষাক পরা কয়েকজন মহিলা জলের বোতল, খবরের কাগজ, আইস ব্যাগ আর কাপড়ে মোড়া পোর্ট্রেট ছবিগুলো একজায়গায় গুছিয়ে রাখছিলেন। কিছু কিছু পরিবার নিজেদের মধ্যে ইতঃস্তত আলোচনা করছিলেন যে কফিন বাড়িতে নিয়ে যাবেন নাকি এখানেই রেখে যাবেন।

এবারে বুড়ো মানুষটি তোমার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলেন, তোমার সাহায্য করার চেষ্টা অস্বীকার করে। উনি সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন, নাকের কাছে একটা কোঁচকানো কাপড় চেপে ধরে। খোলা মুখগুলো একে একে পরীক্ষা করছিলেন উনি আর ঘাড় নাড়ছিলেন। রবারের চাদরে ঢাকা জিমের মেঝেতে ওঁর হাতের লাঠিটা একটা ভোঁতা থুপ থুপ আওয়াজ তুলছিল।

“ওদিকের ঐ দেখগুলো কাদের? ওদের মুখ এরকম ঢাকা কেন?” কোনার মাথা অবধি চাদর টানা মৃতদেহগুলির দিকে দেখিয়ে জানতে চাইলেন উনি।

তুমি দোনোমনো করছিলে, প্রতিবারের মতই এই প্রশ্নটা আসবে এই ভয়ে তোমার ঠোঁটগুলো কাঁপছিল। ওই রক্ত আর অন্য নানারকমের তরলের দাগ লাগা সাদা কাপড়ের ঢাকনাগুলো আবার সরে যাবে, সেই লম্বালম্বি কাটা মুখ, কিংবা ব্লাউজের ভিতর পচে যেতে থাকা স্তন আবার তোমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে, এই অপেক্ষায় ছিলে তুমি। রাত্তিরে বেসমেন্টের ক্যাফেটেরিয়ার চেয়ারে বসে কোনোমতে ঘন্টাদুয়েক ঘুমাতে পারলে তার মধ্যেই তোমার চোখে ভেসে উঠতে থাকে ঐসব ভয়ানক দৃশ্য। তোমার শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে, যেন কোনো অদৃশ্য বেয়নেট তোমার মুখে, বুকে ওভাবেই ফালাফালা করে দিচ্ছে।

তুমি ওঁকে ওই কোনা অবধি নিয়ে গেলে, তোমার প্রতিটা মাংসপেশীর প্রতিবাদের সঙ্গে লড়াই করে, কেউ যেন তোমাকে বিরাট চুম্বক দিয়ে পিছন দিকে টেনে ধরছে, সেই পরিচিত অনুভূতিকে উপেক্ষা করে। যেন সেই বিকর্ষণকে হারাতেই তুমি সামনের দিকে ঝুঁকে জোর করে হাঁটছিলে। ঝুঁকে পড়ে চাদরটা সরানোর সময়ে তোমার চোখ মোমবাতির নিভু-নিভু নীল শিখাটার দিকে স্থির দৃষ্টি রেখেছিল।

আত্মারা তাদের দেহের আশেপাশে কতক্ষণ ঘোরাঘুরি করে? ওরা কি কোনো পাখীর মতই ডানা ঝাপটে উড়ে চলে যায়? সেজন্যই কি মোমবাতির শিখাগুলো ওভাবে কাঁপতে থাকে?

ইশ, যদি তোমার চোখের দৃষ্টিটা আরেকটু খারাপ হত, যাতে কাছের সবকিছুই আবছা মতন দেখতে পেতে। কিন্তু এখন যা দেখতে যাচ্ছ তুমি, সেখানে আবছা কিছুর কোনো ব্যাপারই নেই। না, তুমি কাপড়টা টেনে নামানোর সময়ে, কিংবা আবার সেটাকে টেনে তোলবার সময়েও কখনোই নিজের চোখ বন্ধ রাখতে পারো না। তুমি নিজের ঠোঁটগুলো এত জোরে কামড়ে আছ যে সেখানে রক্তের রেখা দেখা যাচ্ছে, আর তুমি ভাবছ, পালিয়ে গেলেই হত । জিওং ডে না হয়ে এই মেয়েটাও যদি তোমার পায়ের কাছে ওভাবে গড়িয়ে পড়ত, তুমি তাও পালিয়েই যেতে। যদি তোমার দাদাদের কেউ, তোমার মা কিংবা বাবা হত, তাহলেও তুমি পালিয়েই যেতে।

তুমি বয়স্ক মানুষটার দিকে ঘুরে তাকালে। এই মেয়েটাই ওঁর নাতনি কি না তা জানতে চাইলে না তুমি। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে ছিলে, যখন উনি ধাতস্থ হবেন, নিজেই কিছু বলবেন বলে। কোনো ক্ষমা নেই।  তুমি ওঁর চোখের দিকে দেখছিলে, উনি সামনের দৃশ্য দেখে এমনভাবে চোখটা কোঁচকাচ্ছিলেন, যেন এর থেকে সাঙ্ঘাতিক দৃশ্য দুনিয়ায় আর কিছু হতে পারে না। কোনো ক্ষমা নেই অন্ততঃ আমার জন্য তো নয়ই । 

(প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত।)