না-শরীরী কাহন - নিকোলাই গোগোলের ‘ডেড সোলস' এর নাট্যরূপ - ৬
- 08 September, 2025
- লেখক: বিপ্লব বিশ্বাস
প্রথম অঙ্ক : ষষ্ঠ দৃশ্য
[ নজদ্রেভের বাড়ি। ঝকঝকে দিন। খাওয়াদাওয়া শেষের দিকে। দেওয়ালে অশ্বারোহীর তরবারি, দুটো রাইফেল আর জেনারেল সুভোরভের একটা বড়ো ছবি ঝোলানো। নজদ্রেভের পরনে ছোটো ডোরাকাটা এশিয়া- কোট ]
নজদ্রেভ : আরে ভায়া, এটা একটু চেখেই দেখো না। শ্যাম্পেনের মধ্যে বারগ্যান্ডি দেওয়া আছে। দারুণ লাগবে। মিষ্টি ক্রিমের মতো গলা দিয়ে নামবে( বলেই ঢালতে থাকে)
মিঝুয়েভ : ( আকণ্ঠ গেলা অবস্থায়) না, না, আমি চললাম।
নজদ্রেভ : উঁহু, এখনই যেতে দিলে তো…
মিঝুয়েভ : এভাবে আমাকে অপমান কোরো না বন্ধু। আমাকে যেতেই হবে।
নজদ্রেভ : যেতেই হবে? একদম বাজে কথা। ফালতু। এখন বলে আমরা তাস খেলব?
মিঝুয়েভ : না ভাই, খেললে তুমি একা খেলো,আমি চললাম। নাহলে বউ আমার নামে মামলা ঠুকে দেবে। আমাকে ঘরে যেতেই হবে আর গিয়েই ওকে মেলার বিষয়ে বলতে হবে।
নজদ্রেভ : ও, তোমার বউকে এ সব জানাতে হবে? আমি ভাবলাম, কী না কী রাজকাজ আছে ওর সঙ্গে…
মিঝুয়েভ : না বন্ধু, ওরকম বোলো না। বউ হিসেবে সে খুবই ভালো। বিশ্বাসী। ভক্তিশ্রদ্ধা করে। আমার সুখের জন্য নানান ছোটোখাটো কাজ নিয়েও ব্যস্ত থাকে রাতদিন। একটি সুন্দর টুপি বানিয়ে দিল, তাও মেলাতে হারিয়ে ফেললাম…বিশ্বাস করো, এটা মনে পড়লে কান্না পাচ্ছে।
চিচিকভ : ( শান্তভাবে, নজদ্রেভের প্রতি) ওকে যেতে দিন। কত ভালো দেখেছেন?
নজদ্রেভ : ( শান্তভাবে উত্তর করে) আপনি ঠিকই বলেছেন। এইসব ভাবপ্রবণ মানুষ দেখলে আমার ঘেন্না হয় মশাই (জোরে), ঠিকাছে, মরগে যা, ঘরে গিয়ে বউয়ের ইয়েতে নাক ঘষগা, যত্তসব, মেনিমুখোর দল!
মিঝুয়েভ : না ভাই, অমনটা বোলো না। আমার গোটা জীবনটাই ওর কাছে বাঁধা পড়ে আছে। ও এত ভালো, নরম আর মিষ্টি… গেলেই জানতে চাইবে মেলায় কী কী দেখলাম।
নজদ্রেভ : ঠিকাছে, যাও। গুলগাপ্পি দিয়ে চালাওগে, যাও।
মিঝুয়েভ : না,না, তোমার কথামতো তা আমি করছি না।
নজদ্রেভ : তাহলে ফোটো, ছুট লাগাও। এই যে তোমার টুপি।
মিঝুয়েভ : ও যাকগে। ক্ষমা করো জামাইবাবু। থাকতে পারলাম না।
নজদ্রেভ : যাও বেরোও।
মিঝুয়েভ : থাকতে পারলে ভালো লাগত, কিন্তু হল না।
নজদ্রেভ : তুমি যমের দোরে যাও।
( মিঝুয়েভ ক্ষমা চাইতে চাইতে বেরিয়ে যায়)
নজদ্রেভ : ( জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে) কী বাজে লোক রে বাবা! যাচ্ছে দেখো, টলতে টলতে ঘরে ফিরছে। বউ নাকি ওর কাছ থেকে মেলার বিষয়ে খুঁটিনাটি সব শুনবে! ওর ঘোড়াটি কিন্তু খারাপ নয়। বেশ কিছুদিন থেকেই ওটার ওপর আমার নজর লেগে আছে। কিছুতেই রফায় আসছে না। আসলেই লোকটা স্ত্রৈণ। যাকগে আসুন, আমার সম্পত্তির বহর দেখাই। ওই যে বাউন্ডারি দেখছেন, ওর এপাশে সব আমার। আবার ওপাশেও ওই যে নীল!( সবুজ) জঙ্গলের এলাকা, তাও আমার… এমনকি জঙ্গলের অপর দিকে যা দেখছেন, সে সবও আমার… ( এই বলে তাসগোছা হাতে নিয়ে জাদুকরী দক্ষতায় তা ফেটাতে থাকে) যাহোক, সময় কাটানোর জন্য আমি তিনশো রুবল দিয়ে একটি ব্যাঙ্ক খুলতে চাই, বুঝলেন?
চিচিকভ : ও,হ্যাঁ। এ বিষয়টি আমি ভুলব না। তা আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ আছে।
নজদ্রেভ :কী?
চিচিকভ : তার আগে কথা দিতে হবে আপনি তা রাখবেন।
নজদ্রেভ : তা, আপনি যদি চান…
চিচিকভ : ভদ্রলোকের পাকা কথা।
নজদ্রেভ : পাক্কা।
চিচিকভ : তাহলে শুনুন। আপনার সম্ভবত বেশ কিছু… মানে…মৃত ভূমিদাস আছে? মানে যাদের নাম এখনও সরকারি শুমারি রিপোর্ট থেকে বাদ পড়েনি?
নজদ্রেভ : হ্যাঁ, তা আছে কিছু। কেন বলুন তো?
চিচিকভ : তাদেরকে আমার নামে করে দিন।
নজদ্রেভ :আপনার নামে? কেন?
চিচিকভ : আমার দরকার, তাই।
নজদ্রেভ : হুম…অন্যরকম গন্ধ পাচ্ছি যেন! এট্টু ঝেড়ে কাশুন তো। কী ব্যাপার?
চিচিকভ : গন্ধ আবার কী? এইরকম তুচ্ছ জিনিস থেকে কীসেরই বা গন্ধ পাবেন?
নজদ্রেভ : তাহলে ওদের চাইছেন কেন?
চিচিকভ : একরকম খেয়াল বলতে পারেন।
নজদ্রেভ : বাঃ, তবে খুলে না বলা অবধি কিন্তু…
চিচিকভ : দেখুন মশাই, এটা কিন্তু ঠিক না। আপনি কথা দিলেন অথচ এখন তার খেলাপ করছেন…
নজদ্রেভ :তা হতে পারে। তবে আপনি খুলে না বললে আমি কিছু করতে পারব না।
চিচিকভ : সমাজে কলকে পেতে আমার কিছু মৃত আত্মা চাই। আমার…
নজদ্রেভ : না, না। এ সব মিথ্যে, মিথ্যে কথা।
চিচিকভ : আচ্ছা বাবা, আচ্ছা। আরও সহজভাবে বলি - আমি বিয়ে করতে চাই। আপনাকে গোপনে বলছি, আমার যারা শ্বশুরবাড়ির লোকজন হবে তারা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তারা…
নজদ্রেভ : আপনি আবার মিথ্যে বলছেন, মিথ্যে।
( উভয়ের ওপর ঝোড়ো মেঘ নেমে আসে)
চিচিকভ : এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। কেন মিথ্যে বলতে যাব, বলুন তো?
নজদ্রেভ : কেননা আমি জানি ; আমি আপনার সম্পর্কে সব জানি। আপনি অপরাধপ্রবণ মানুষ, পুরোপুরি, এক্কেবারে মাথা থেকে পা অবধি। আপনাকে বন্ধু হিসেবেই বলছি, আমি যদি বিচারক হতাম, কাছের কোনও গাছের ডালে আপনাকে ঝুলিয়ে দিতাম। যদি না পারতাম…কিছু মনে করবেন না। এটা আমি সততার সঙ্গেই পরিষ্কার বলছি। এক বন্ধু যেমন অপর বন্ধুকে বলে।
( দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ)
চিচিকভ : আচ্ছা বাবা, ওদের যদি আমাকে দিতে না চান, তবে অন্য কোথাও বেচে দিন।
নজদ্রেভ : বেচে দেব? আমি কিন্তু জানি চিচিকভ, বাজি রেখে বলতে পারি, ওগুলোর জন্য আপনি আমাকে খুব বেশি দেবেন না। দেবেন?
চিচিকভ : ঠিকাছে, আপনি তো ভালোমানুষ? ওগুলি আপনার কাছে কী - হীরে না অন্য কিছু?
নজদ্রেভ : তাহলে শুনুন, আমি যে অর্থপিশাচ নই তার প্রমাণ দিতে ওদের আমি এমনিই আপনাকে দিয়ে দেব। শুধু আমার একটা না- সুন্নতি ঘোড়া আছে, সেটা আপনাকে কিনতে হবে। তাহলেই ওই মৃত আত্মাদের আপনি নিখরচায় পেয়ে যাবেন।
চিচিকভ : কিন্তু আপনার ওই ঘোড়া নিয়ে আমি কী করব?
নজদ্রেভ : সে কী কথা? দেখুন মশাই, ওই ঘোড়া আমি দশ হাজারে কিনেছি ; আপনাকে চার হাজারেই দিয়ে দেব।
চিচিকভ : রক্ষে করুন ভাই, ও ঘোড়ায় আমার কাজ নেই।
নজদ্রেভ : ঠিকাছে, ঠিকাছে। তাহলে আমার ওই লাল- বাদামি মাদি ঘোড়াটিই কিনুন।
চিচিকভ : ওই ঘুড়ীটাকেও আমার দরকার নেই।
নজদ্রেভ : এই ঘুড়ী আর ওই ধুলোট ঘোড়াটি, দুটো মিলে মাত্র দু হাজার দেবেন। নিন।
চিচিকভ : কিন্তু আমার আদৌ কোনও ঘোড়ার দরকার নেই।
নজদ্রেভ : আপনি কিনে সামনের মেলায় বেচে দেবান। তিনগুণ দাম পাবেন মশাই।
চিচিকভ : সে কাজ তো আপনি করলেই ভালো হয় যেহেতু আপনি নিশ্চিত যে তিন গুণ বেশি দাম পাওয়া যাবে। তাই না
নজদ্রেভ ::কিন্তু লাভটি আপনি পান, এটাই চেয়েছিলাম।
চিচিকভ : এ ভাবনার জন্য আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার কিন্তু কোনও ঘোড়ার দরকার নেই।
নজদ্রেভ : ঠিকাছে। তাহলে কয়েকটি কুকুর কিনুন। দারুণ একটি মাদি কুকুর আছে মশাই ; দেখলে আপনার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠবে। কুল- বংশে পাক্কা রাশিয়ান নেকড়ে, লম্বা লম্বা গোঁফ, গলার লোম বেশ লম্বা, খাঁচাটি একেবারে ব্যারেলের মতো, পায়ের থাবায় যেন ভেলভেট বসানো, হাঁটলে বা ছুটলে মাটিতে এতটুকু আঁচড় লাগবে না।
চিচিকভ : তা এ জাতীয় লম্বা গুঁফো কুকুর নিয়েই বা আমি করবটা কী? আমি তো আর শিকারি নই।
নজদ্রেভ : কুকুর নেবেন না? তাহলে আমার এই মজবুত ব্যারেল অরগানটাই নিন।
চিচিকভ : ওই রাস্তার বাজনা? কেন? আমি কি জার্মান ভিখিরি নাকি যে ওটা ঘাড়ে ফেলে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে বেড়াব?
নজদ্রেভ : না মশাই, জার্মানদের যা টেনে বেড়াতে দেখেন এ জিনিস তেমনটা নয়। এটা আসলি অরগান। খাঁটি মেহগনি কাঠের মাল। ( চিচিকভকে টেনে অরগানটির কাছে নিয়ে যায় ও পুরনো বিখ্যাত একটা গান ধরে ‘মার্লবরো যুদ্ধে গেছিল…’। (এমন সময় দূরে ঝড়ের আওয়াজ শোনা যায়)...দেখলেন তো কেমন? এই ব্যারেল অরগান আর মরা আত্মা সব আপনাকে দিয়ে দেব যদি আপনি আপনার ঘোড়ার গাড়িটা আর নগদ তিনশো রুবল আমাকে দেন। ব্যস, আর কিছু নয়।
চিচিকভ ::কিন্তু গাড়ি ছাড়া আমি যাব কী করে?
নজদ্রেভ : আপনাকে আর একটা দিচ্ছি। আসুন আমার গাড়ি -ঘরে, দেখে নেবেন। সামান্য রঙের কাজ করে নিলেই এই খোলা গাড়িটা দারুণ হবে!
চিচিকভ : না।
নজদ্রেভ : কিন্তু এগুলি আপনি চাইছেন না কেন, বলুন তো?
চিচিকভ : দরকার নেই তাই।
নজদ্রেভ : আপনি না… কী যে বলি! আপনাকে স্বাগত জানালাম, ভাবলাম, বন্ধুর মতো এক সঙ্গে কাজকাম করব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আপনি তো সেই বান্দা নন। আপনি খুব হাত- পিছলানো, দু- মুখো লোক মশাই। দু-তেলে।
চিচিকভ :কিন্তু বোকা তো নই! আচ্ছা বলুন তো যে জিনিসে আমার কোনও প্রয়োজন নেই তা নেব কেন?
নজদ্রেভ : দেখুন, আপনি অযথা সময় নষ্ট করছেন। এবারে আপনাকে ঠিকঠাক বুঝতে পেরেছি। যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও খারাপ আপনি। ঠিকাছে শুনুন। এখন তাসের খেলা হবে। এক তাসের ওপর আমার সব মৃত আত্মাদের বাজি ধরব। এবং ওই ব্যারেল অরগানটিও।
চিচিকভ : তার মানে আমরা সব কিছু এখন ঝুঁকির ওপর ছেড়ে দিচ্ছি, তাই তো?
নজদ্রেভ : কী বলছেন? ঝুঁকি? সে কথা কে বলেছে? এটা ভাগ্য, আর তা যদি আপনার ওপর সদয় হয়, আপনি সব পেয়ে যাবেন।( সে তাস নিয়ে তৈরি হয়) আপনি খেলবেন না?
চিচিকভ : না।
নজদ্রেভ : আপনি তো আচ্ছা ধুর মশাই! একেবারেই মেনিমুখো। আপনি জানেন যে আমার সব মৃত আত্মাদের আমি মুফতে আপনাকে দিতে চাচ্ছি। আর আপনি এইটুকু ঝুঁকি নিতে পারবেন না? তিনটি রাজত্ব দিতে চাইলেও তো আপনি নিতে পারবেন না ( চিৎকার করে) পরফাইরি, নিচে ঘোড়াশালে গিয়ে বল এই বেজম্মার ঘোড়াকে যে কোনও ওট না দেওয়া হয়, ওরা শুকনো খড়ই চিবোক। আপনার সঙ্গে কী কুক্ষণেই যে দেখা হয়েছিল!।
চিচিকভ : ( রাগান্বিত) পেত্রুশকা, গাড়ি রেডি কর ( টুপিটা পরে নেয়)।
নজদ্রেভ : না, থামুন। শুনুন, শুনুন। আমরা চেকার খেলব। আপনি জিতলে সব আত্মা নিয়ে যাবেন। এটা তাস নয়। ঝুঁকির ওপর সব ছেড়ে দিচ্ছি না। তাস খেলা কী? পুরো জালিয়াতি আর অসততা। আর এ খেলায় লাগে দক্ষতা, পুরোপুরি। আর আপনাকে এটাও বলে দিই, এ খেলাটা আমি জানি না বললেই চলে।
চিচিকভ :( স্বগত) হুম, কথা হল, খেলাটি এক সময় খারাপ খেলতাম না। আর এ খেলায় কোনও জাল- জোচ্চুরি) করা যায় বলে তো জানা নেই। (জোরে) ঠিকাছে, এটি তাহলে এক হাত হয়েই যাক।
নজদ্রেভ : মৃত আত্মাসব একশো রুবল লাগবে।
চিচিকভ : পঞ্চাশই যথেষ্ট।
নজদ্রেভ: পঞ্চাশ রুবল একটা রেট হল? আমি আমার একটি মাঝারি কুকুরছানা কিংবা আপনার ঘড়ির চেনটা সোনার করে দেবার বাজি রাখলাম।
চিচিকভ : সেটা আপনার ব্যাপার।
নজদ্রেভ : শুরুতে কটি বল আমাকে দেবেন।
চিচিকভ : কেন? আপনার ওপর এমন বোঝা চাপাব কেন?
নজদ্রেভ : অন্তত প্রথম দুটো চাল তো আমাকে চালতে দেবেন?
চিচিকভ : না, দেব না। আমি খেলায় ততটা পাকা নই, মশাই।
( তারা খেলা শুরু করে)
নজদ্রেভ : জানি, আপনি কেমন দুর্বল খেলোয়াড় তা আমাদের জানা আছে। ( চাল দেয়)
চিচিকভ : কদ্দিন আগে খেলেছি এ সব( চাল দেয়)।
নজদ্রেভ : সে তো বুঝতেই পারছি( চাল দেয়)।
চিচিকভ : কবে যে শেষ হাতে নিয়েছি - আরে! এটা কী হল? ওটা জায়গায় রাখুন।
নজদ্রেভ : কোনটা?
চিচিকভ : ওই গুটিটা… বাঃ, আবার আর একটা… থামুন( উঠে পড়ে), না, না মশাই, আপনার সঙ্গে খেলা যাবে না। এভাবে খেলা অসম্ভব। এক সঙ্গে তিন তিনটি গুটি!
নজদ্রেভ : তিনটে বলছেন কেন? একটা চাল তো ভুল হয়ে গেছে। সরি, ওটা ফিরিয়ে দিচ্ছি।
চিচিকভ : আর ওইটা এল কোত্থেকে?
নজদ্রেভ : কোনটা?
চিচিকভ : ওই যে ওইটা। যার কোনও অস্তিত্বই ছিল না, সে রাজা হয়ে বসবে?
নজদ্রেভ : ননা,এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে, যেন আপনি কিছুই মনে করতে পারছেন না?
চিচিকভ : খুব মনে করতে পারছি। আপনিই ওটাকে তুলে দিয়েছেন। ওখানে। আসলে এই খোপটাই ওর জায়গা। এখানে।
নজদ্রেভ : কীভাবে? ওই খোপটা?ওহে বন্ধু, আপনি দেখছি কল্পনায় অনেক কিছুই ভেবে নিতে পারেন?
চিচিকভ : না বন্ধু, আমি নই। আপনারই কল্পনাশক্তি বেশি মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে সে খাপ খুলে লাভ নেই।
নজদ্রেভ : কী বলছেন? একটু খুলে বলুন তো? আমাকে কি আপনি ঠগ বলতে চাইছেন?
চিচিকভ : না, আমি তেমন কিছুই বলতে চাইছি না আবার আপনার সঙ্গে এই মুহূর্তে খেলতেও চাইছি না। ( সব গুটিগুলো এক জায়গায় এনে জড়ো করল)
নজদ্রেভ : না, এই অবস্থায় আপনি খেলা ছেড়ে উঠতে পারেন না। সবে তো শুরু হয়েছে। শেষ করতেই হবে। আপনি বোর্ড উলটে দিলেন, ঠিকাছে। আমার সব চাল মনে আছে ( আবার সব সাজানো শুরু করে)
চিচিকভ : না মশাই, আমি আর আপনার সঙ্গে খেলছি না।
নজদ্রেভ : তাহলে আপনি বলছেন, খেলবেন না? ( চিচিকভের গা ঘেঁষে) সোজাসুজি বলুন তো মশাই?
চিচিকভ : আমি মানী লোকের সঙ্গে সৎভাবে খেলতে চাই। সেটি এখানে হচ্ছে না।
নজদ্রেভ :আপনি পারছেন না, তাই তো? খল কোথাকার! বদমাশ! হার দেখে পালাতে চাইছ না? খেলতে তোমাকে হবেই। খেলতে তুমি বাধ্য। ( চিৎকার করে ডাকে) ফায়ার। চিঙ্কো। শেরকাই। উল্ফ…( ভয়ংকর কুকুরের ডাক সব এগিয়ে আসে) দে কামড়ে। ঝাঁপিয়ে পড়। পরফাইরি… পাভলুশকা… দে দে, আচ্ছা করে..
( ওরা সব চিচিকভের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চাকরেরা গদা হাতে তেড়ে আসে। পেত্রুশকা প্রভুকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। চিচিকভ লুকোতে চেষ্টা করে)
নজদ্রেভ : পরফাইরি, এগিয়ে যা, ওইটাকে হটিয়ে দে। ভয় পাস না তোরা। দে ধোলাই আচ্ছা করে
( শিস, চিৎকার, কুকুরের ডাক। বজ্রনির্ঘোষ। এরই ফাঁকে পেত্রুশকার সাহায্যে চিচিকভ সদর্পে পালিয়ে যায়)
প্রথম অঙ্ক : অন্তর্বর্তীকালীন বিরতি( Interlude)
—-----------------------------------------------------------------------
[ রাস্তা। রাত্রিকাল। ঝোড়ো হাওয়ায় মৃদু আলোর ঝলক। বজ্রপাত। ঝড়। বৃষ্টি। এই আঁধারি পথে পেত্রুশকা আর চিচিকভ গাড়ি চালিয়ে এগোয় ]
চিচিকভ : কোনদিকে যাচ্ছ? রাস্তা কই? ( ঘোড়াগাড়িটা এপাশ ওপাশ দোল খায়)
পেত্রুশকা : আমি ছেড়ে দিচ্ছি। রাস্তা কোনদিকে?
চিচিকভ : তুমি মাতাল হয়ে গেছ!
পেত্রুশকা : ভগবানের ইচ্ছা প্রভু।( বাজ পড়ে। মারাত্মক ঝাঁকুনি)
চিচিকভ : কী করছ? উলটে দিয়ে মারবে নাকি?
পেত্রুশকা : না প্রভু, না। মানুষকে উলটে দেওয়াটা কি ভালো? আমি সেটা জানি। আমি আপনাকে কখনোই ওলটাব না, প্রভু।
( গাড়ি উলটে যায়। চিৎকার। কাদায় মাখামাখি। বজ্রপাত)