
ঋত্বিকের তিতাস
- 07 September, 2025
- লেখক: অয়ন সেন
তিতাস একটি নদীর নাম
‘তিতাসের বুকে তেমন কোনো ইতিহাস নাই। সে শুধু একটা নদী।’ – অদ্বৈত মল্লবর্মণ
অমিয়ভূষণ মজুমদার ঋত্বিকের পুত্র ঋতবানকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘তোমার পিতাকে আগে মাইকেলের সঙ্গে তুলনা দিয়েছিলাম। আবার একটু পিছিয়ে সপ্তদশ শতকে দোম আন্তোনিও রোজারিওর সঙ্গে তুলনা করছি। কেন তা করছি তা তোমার তোমার জানা দরকার। দোম আন্তোনিও সপ্তদশ শতকে বাংলা গদ্য ও অভিধান লিখে বাংলাভাষার পথিকৃৎ, যেমন উনবিংশ শতকে মধুসূদন আধুনিক কাব্য লিখে, যেমন তোমার বাবা সিনেমায় বিংশ শতকে। আবার আগের দুজন দোম আন্তোনিও ও মাইকেল দত্ত খৃস্টান আবার তোমার বাবা কমিউনিস্ট। কিন্তু তিনজনেরই বৈশিষ্ট্য বাঙালীপনায়।’
১৯৫৬ সালে প্রকাশিত অদ্বৈত মল্লবর্মনের উপন্যাস অবলম্বনে ঋত্বিক ঘটকের সপ্তম কাহিনীচিত্র ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ২৭ জুলাই, ১৯৭৩ মুক্তি পায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কিছু সিনেমা হলে। উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ১৯৩০। উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদ ছবিতে দৃশ্যায়িত হয় নি, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ‘প্রবাসখন্ড’ থেকে ছবির কাহিনী শুরু, যা অনেকটা সময় জুড়ে, তিনটি প্রজন্মে বিস্তৃত। কাহিনীর ফাঁকে লেখকের অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট। যদিও সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে করা ছবি যখন সেখানে বাঙালি জাতি তার আত্মপরিচয় খুঁজে পেয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের পর, তবু দেশভাগ পরবর্তী মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশা ছায়া ফেলে যায় ছবিতে নদীকেন্দ্রীক জনজীবনের সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে, আধুনিকতার গ্রাসে নিজস্ব সংস্কৃতির বিলীন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। ঋত্বিকের নিজের ভাষায়, ‘উপন্যাসটা আমার নিজের ধারণায় এপিক-ধর্মী, এ ছবিতে প্রথম এই ঢং-টা ধরার চেষ্টা করেছি।’ তাই উপন্যাসের ধরণে ছবি শুরুর নামলিপিতেই লেখা হয়, ‘এই চিত্র শাশ্বত বাংলার আবহমান সূত্রের ধারক বাংলার খেটে খাওয়া অখ্যাত জনের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।’ সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশেই করা ছবিটি সম্পাদনা করার আগেই অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে আসতে হয় ঋত্বিক ঘটককে। ১১ মার্চ, ১৯৯১ প্রথমবার ভারতে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিটি করার আগে ঋত্বিকের সমস্ত ছবিতে বারে বারে ফিরে এসেছে মানুষের ছিন্নমূল হওয়ার যন্ত্রণাদীর্ণ জীবনগাথা, মানুষের সম্পর্কের জটিলতা ও ভাঙন। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে সেখান থেকে সরে এসে একটি জনপদে বহমান জীবনকে পর্দায় প্রতিফলিত করলেন ঋত্বিক, কোনো বিশেষ চরিত্রেই সীমাবদ্ধ না থেকে এপিকধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোযোগী তিনি। আইজেনস্টাইনীয় ধারায় ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কতিপয় ব্যক্তিবিশেষের পরিবর্তে জনগোষ্ঠীর ভূমিকায় মনোনিবেশ করেন তিনি এই প্রথম, আর সেই জনগোষ্ঠীর ভিত্তিস্বরূপ উঠে এল মালো নামক নিম্নবর্গের মানুষদের কথা, সমাজের নীচের তলায় পড়ে থাকা অন্ত্যজ দরিদ্র মানুষদের জীবনযাত্রা, তাদের সংগ্রামপ্রেমবিরহের মাধ্যমে বৃহত্তর নদীমাতৃক সভ্যতার ইতিহাস তথা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস। সমগ্র ছবি জুড়ে চক্রবৎ পরিবর্তনে বিধৃত সমৃদ্ধি - লোকজ স্ত্রী-আচার মাঘমন্ডলের ব্রত দিয়ে ছবির শুরু, অবক্ষয় - মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তিতাসের চর খুঁড়ে জল ব্যর্থ প্রচেষ্টায় ছবির শেষ, আশাবাদ – ধান-ভরা জমিতে নবজীবনের গান।
কীভাবে এক নদীকেন্দ্রীক মাছ-মারা সম্প্রদায় নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের জীবিকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, মহাজন-জমিদারদের থেকে চড়া চক্রবৃদ্ধি সুদে টাকা ধার নিয়ে ক্রমশ কৃষিজীবীতে পরিণত হয়, অদ্বৈত মল্লবর্মণ তা তুলে ধরেছিলেন তাঁর লেখায়,(নিম্নবর্গের মানুষদের উপর জমিদারমহাজনদের অত্যাচার তাদের মুসলিম লীগের সমর্থক করে তোলে এবং দেশভাগের সময় তাদের মধ্যে বেশীরভাগ মানুষ মুসলিম লীগকে সমর্থন করে।) লেখক স্বয়ং ওই সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় বিষাদের সুরও হয়তো বাজতে থাকে কোথাও। যদিও ছবিটি মালোদের সঙ্গে জমিদার শ্রেণীর উৎপাদন-সম্পর্ক থেকে দূরে সরে গল্পের উপরি-কাঠামোয় আবদ্ধ, ব্যক্তির ট্রাজেডিই সেখানে মুখ্য, তবু মনে হয় ঋত্বিক ইঙ্গিত করতে চান যে নিম্নবর্গের মানুষদের প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীন ভূমিকাও হয়তো দায়ী তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য। উপন্যাসের শেষে পাই, ‘চরে আর একটিও ধানগাছ নাই।... শূন্য ভিটাগুলিতে গাছগাছড়া হইয়া আছে। তাতে বাতাস লাগিয়া সোঁ সোঁ শব্দ হয়। এখানে পড়িয়া যারা মরিয়াছে, সেই শব্দে তারাই বুঝি বা নিঃশ্বাস ফেলে।’ স্পষ্টতই এক ধ্বংস ও আশাহীনতার চিত্র এঁকেছিলেন লেখক, কিন্তু দৃশ্যায়ণের সময় ঋত্বিক চলে গেলেন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে, ছবির শেষ দৃশ্যে নদীর বুকে জেগে-ওঠা চড়ায় ভেঁপু বাজাতে থাকা এক শিশু যেন নতুন যুগের আবাহন নির্দেশ করে ভাঙনের কাল পিছনে ফেলে, কালের এই প্রবহমানতাই ছবি জুড়ে বিদ্যমান। নদী তথা সভ্যতা ফুরিয়ে গেলেও নবজীবনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতে পারে না, সংস্কৃতির রূপান্তরের মাধ্যমে তা বেঁচে থাকে, এই আশা শুধু তিতাসে নয়, ঋত্বিকের অন্যান্য ছবিতেও নিহিত আছে।
ইউরোপীয় নয়াবাস্তববাদের বিপরীতে যে বিশেষণ তাঁর ছবির অনুষঙ্গে সমালোচকরা অবধারিতভাবে ব্যবহার করে থাকেন, তা হল ‘মেলোড্রামা’। ‘তিতাস’ ছবিটিতেও ভাবাবেগের উচ্ছ্বাস ও আকস্মিক যোগাযোগের উদাহরণ রয়েছে যা মেলোড্রামা বলে চিহ্নিত হয়েছিল পাশ্চাত্য নান্দনিক চেতনায় দীক্ষিত দর্শকের কাছে, যদিও বাংলার লোকজ সংস্কৃতিতে, সমাজ বাস্তবতায় অর্থনৈতিক খন্ডচিত্রে সর্বোপরি সোঁদামাটির গন্ধ-মাখা তিতাসের মেঘ-বৃষ্টি-প্রকৃতিতে এই উচ্ছ্বাস ও আকস্মিকতার উপস্থিতি বহমান জীবনেরই অঙ্গ বলে মনে হয়।
মূল চরিত্র বাসন্তী শিশুকাল থেকে কিশোর ও সুবলের সান্নিধ্যে বড় হয়ে ওঠে গোকর্ণঘাট গ্রামে। ছবিতে সময় বইতে থাকে নদীর মতোই, ঘটনাক্রমে অন্য একটি গ্রামে দোলের দিন একটি মেয়ের সাথে কিশোরের যখন বিবাহ হয়, সে তখন পরিণত যুবক। নিম্নবিত্ত মানুষের বাসরে শারীরিক নৈকট্যের দৃশ্যায়ণে সঙ্গীতের পরিবর্তে শ্বাসাঘাতের শব্দের প্রাবল্য ব্যবহার করেন ঋত্বিক, অর্থাৎ অনাড়ম্বর জীবন, তবু আবেগটুকুই সম্বল। নিজের গ্রামে নৌকা করে ফেরার সময় কিশোরদের নৌকায় ডাকাতি হয় রাতের অন্ধকারে, নববধূর শোকে মানসিক আঘাতে কিশোর উন্মাদ হয়ে যায়। অন্যদিকে গোকর্ণঘাটে বাসন্তী বিবাহের পরই বিধবা হয়। নানা গঞ্জনা সয়ে দিন কাটে তার। দশ বছর পর অনন্তর মা অনন্তকে নিয়ে ফেরে কিশোরের গ্রামে, বাসন্তী কাছে টেনে নেয় তাদের। আর এক দোলের দিন কিশোরের পূর্বস্মৃতি ফিরে আসে, পাগলের সাথে দোল খেলার দৃশ্য যেন রাধাকৃষ্ণের দোল খেলার সাথে তুলনীয় হয়ে ওঠে। উন্মাদ কিশোর সহসা কোলে তুলে নেয় অনন্তর মা’কে, অচৈতন্য হয়ে পড়ে সে, সতীকে কাঁধে নিয়ে শিবের গমনের চিত্রকল্প তৈরী হয় যেন তিতাসের পাড়ে। অনন্তর মা’কে ‘বউ’ বলে চেনার মুহূর্তে কিশোর মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে। মৃত্যু হয় অনন্তর মা’র-ও। তিতাসের জলে পড়ে থাকা দেহ বিসর্জনের প্রতিমার অনুষঙ্গ তৈরী করে, অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে ভেসে যায় তিতাসের পাড়। মায়ের মৃত্যুর পর অনন্ত মাকে ভগবতীরূপে দেখে, মাদার আর্কেটাইপ সহ নানা প্রতীক বিভিন্ন রূপে ফিরে ফিরে আসে ঋত্বিকের ছবিতে, দেখি বাসন্তী অনন্তকে মাতৃস্নেহে পালন করে। আবার নৌকায় ঠাঁই-না-পাওয়া নিঃসঙ্গ অনন্ত যখন সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে থাকে দূরে-যেতে থাকা নৌকার দিকে, এক বিচ্ছিন্ন কচুরিপানা নদীর ঢেউয়ে ভেসে আসে ছবির ফ্রেমে।
বেবী ইসলামের ক্যামেরায় ফ্রেমের সামান্য অংশে থাকে মানুষ, বাকিটা জুড়ে থাকে অসীম অনন্ত প্রকৃতি, কখনও বা সাদা আকাশের প্রেক্ষাপটে ছবির পর্দা জুড়ে থাকে বিশাল নৌকা যার অগ্রভাগ যেন পর্দা ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসতে চায় দর্শকদের দিকে! ঋত্বিক যেন বুঝিয়ে দিতে চান এই নৌকাই মালোদের জীবনের প্রধান অবলম্বন। অশ্বক্ষুরাকৃতি চর, নদীর জলে চিকচিক করে সূর্যালোক – ঢেউয়ে কাঁপে, অসীম শূন্যতার বুকে একটিমাত্র নৌকা, পর্দাজুড়ে থাকে তালি-দেওয়া কাপড়ের পাল – শতছিন্ন তবু গতিময় - যেন জীবন শত প্রতিবন্ধকতাতেও বহমান, পরমুহূর্তেই মুষলধারায় বৃষ্টিতে তীরে-বাঁধা নৌকা খানতিন-চার, কাদামাটিতে অঝোরে বৃষ্টি, কখনও বৃষ্টির মধ্যেও নদীতে চরে বেড়ায় হাঁস।
ছবির সংলাপে লোকজ উচ্চারণ বিষয়বস্তুর সঙ্গে ভাষার সম্বন্ধকে যেমন নিবিড় করেছে, পুরো ছবি জুড়ে অবিরাম জলের ছলাৎছল, বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে বাহাদুর হোসেন খাঁর আবহ সঙ্গীতও যেন সংলাপ হয়ে উঠেছে অনেক ক্ষেত্রে। মালোপাড়ার মাঝে গীত হয় কীর্তনের পদ, কখনও বা লীলাবালির মতো বহুল প্রচলিত বিয়ের গান, ভোর হয় ‘রাই জাগো রাই গানের সুরে’, চরম যন্ত্রণার মুহূর্তে সুরকার ফিরে যান সরোদের মূর্ছনায় বা বাঁশির সুরে, ধীরাজউদ্দীন ফকিরের কন্ঠে যেন ভাঙনের সুরের সঙ্গে একাকার হয়ে যায় পুরনো সমাজব্যবস্থার ভাঙন।
শহুরে উচ্চ বা মধ্যবিত্ত বৈঠকখানার থেকে দূরে, রাজনীতিসাহিত্যনাটকছায়াছবির জগত থেকে দূরেও যে বাঙালি জাতি আবহমানকাল ধরে বেঁচে আছে স্বকীয়তা নিয়ে, তিতাস তারই কথা বলে। প্রবহমান জলধারার পাশে কয়েক ঘর হা-ঘরে মানুষদের জীবন যা শহুরে পরিপাটি জীবনের থেকে অনেক দূরে, আঞ্চলিক তার ভাষা, এবড়ো-খেবড়ো তার দৃশ্যায়ণ, নদী নিজেই এখানে কথা বলে, তার প্রবহমানতায়, তার চড়া বুকে নিয়ে অন্তর্লীন বিষাদময় মন্দ গতিতে, ঘোর বর্ষায় উচ্ছলতায়, ঢেউয়ের ছন্দে। জীবনের অবিরাম পরিবর্তনের বাস্তবতায় এপিকধর্মী এই ছবি - যা ব্যাক্তিগতর সাথে সামাজিকও- বহুলাংশে বিয়োগান্তক, কিন্তু অদম্য। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘তিতাসের গল্পটা- অদ্বৈত মল্লবর্মণ যা বলার চেষ্টা করেছেন তা হচ্ছে: নদীর ধারে একটা জেলেদের সমাজ এবং সেই নদীটা আস্তে-আস্তে শুকোতে শুকোতে একদিন নিশ্চহ্ন হয়ে গেল। সেই সঙ্গে সেই সমাজটাও চুরমার হয়ে গেল। তার স্মৃতি বহন করছে শুধু একটি ব্যাপার- আশে-পাশের গ্রামের লোক এখনও বলে যে একানে তিতাস নামে একটা নদী ছিল। অদ্বৈতবাবু এখানে শেষ করা সত্ত্বেও আমি একটু টেনে ছেড়েছি। নদী আর নেই, কিন্তু ধানের ক্ষেত রয়েছে। আমার বক্তব্য হচ্ছে একটা সভ্যতা শেষ হয়ে-যাওয়াটাই শেষ নয়। তার মৃত্যুর মধ্যেই উপ্ত আছে নতুন সভ্যতার বীজ। এ ভাবেই মানবজীবনপ্রবাহ চলে। বাবা ও ছেলের সম্পর্কের মতো।’ অন্যত্র লিখছেন, ‘অদ্বৈতবাবুর পক্ষে যা স্বাভাবিক ছিল, তা-ই তিনি করেছেন, শেষ করেছেন একটা অবক্ষয়ের মধ্যে, সমস্ত কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমার রাজনৈতিক বক্তব্য, সেখানে আমি সম্পূর্ণ প্রাণের পক্ষে, নতুন জীবনের ইঙ্গিতে ছবি শেষ করেছি। একে Marxism বলা যায়, Humanism বলা যায়, রাজনীতি বলা যায়, আবার না-ও বলা যায়।’
কৈশোর ও প্রাম্ভিক যৌবন পূর্ব বাংলায় কাটানোর স্মৃতি ঋত্বিককে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তিতাসের চরে। যে সময় তিনি ছবিটি করেছিলেন, তার থেকেও প্রায় চল্লিশ বছর আগের পটভূমিতে তিতাসের কাহিনী প্রোথিত - যে সময়টা তাঁর ভীষণভাবে পরিচিত ছিল। ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে মিশে যেতেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে, বুঝতে চাইতেন তাদের নাড়ির স্পন্দন। কিছুটা স্বপ্নভঙ্গও হয়েছিল তাঁর, দেখেছিলেন মানুষের চিন্তাধারা পালটে গেছে, মন পালটে গেছে, পালটেছে মানুষের আত্মা, অতীতের সঙ্গে মানুষের নাড়ির যোগ একেবারে কেটে গেছে। রিপ ভ্যান উইঙ্কলের জীবনের মতো কোনো কিছুই আর আগের মতো নেই যে!
ছবি শেষ হয় একসময়, আমরাও বুঝতে পারি আমাদের পারিপার্শ্বিক জগতটাও বদলে যাচ্ছে এভাবেই, সমস্ত হা্হাকার ছাপিয়ে শুধু জেগে থাকে তিতাসের চর, সাদা বালি আর বহমান সময়।