দুঃসহ দিনলিপি
- 07 September, 2024
- লেখক: শ্যামাশ্রী চৌধুরী
যখন গলায় দলা পাকিয়ে আছে কষ্ট তখন শব্দগুলো কান্না হয়ে ঝরে কি না জানি না, তবে লিখতে হয় যন্ত্রণার কথা...অ্যান ফ্রাঙ্ক, লেনা মুখিনা ডায়েরি লিখেছিলেন। লেখার সময় তাঁরা জানতেন না কি আছে সামনে। জীবন না মৃত্যু? যদিও মৃত্যুর দিকেই পাল্লা ভারি ছিল । তবুও তাঁরা বেঁচে রইলেন একটা অসহ্য সময়ের সাক্ষী হয়ে...
পৃথিবীতে জীবন আর মৃত্যু একমাত্র সত্য বলে জানতাম। এখন জানি 'সুবিচার' একমাত্র সত্য । তার দিকেই তাকিয়ে আছে গোটা পৃথিবী... জেগে আছি আমরা। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, প্রতিটি মুহূর্ত ৯ ই আগস্টের পর থেকে... আমাদের ঘুম চুরি হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চিন্ত বেষ্টনী। কোলের কাছে ঘুমন্ত মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর ঘুম আসেনা... প্রত্যেক সকাল অদ্ভুত অবসাদ নিয়ে আসে। আবার একটা দিন...গোটা সকাল, দুপুর, খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেলের লাইভ... ওদিকে পূবদিকের সাদা বাড়িটায় সকাল, সন্ধ্যায় রান্নাঘরে আওয়াজ হয়... হাসপাতালে যাওয়ার আগে মেয়ের খাবার, সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে মেয়ে যা ভালোবাসত... হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে যে ফোন আসত, 'মা, খাবার বেড়ে রাখো। আমি আসছি...'। মেয়ে আসবে না আর কোনওদিন। তবুও মা বানিয়ে রাখেন ধোঁয়া ওঠা খাবার। ক্রমশ জুড়িয়ে যায়, একটু একটু করে শীতল, হিমশীতল হয়ে ওঠে মৃত্যুর মতো। নির্মম, কঠিন, কঠোর, বিশ্বাসঘাতক হয়ে ওঠে স্বার্থান্ধ ক্ষমতালোভীর মতো। আমরা দাঁড়িয়ে থাকি আলো নিভিয়ে লজ্জায়, দুঃখে। মাথা তুলতে পারিনা, চোখ রাখতে পারি না বাবা, মায়ের চোখে। সমাজকে একজন চিকিৎসক দিয়েছিলেন তাঁরা । আমরা রাখতে পারিনি তাকে।
৯ তারিখের আগে কী করছিলাম মনে করতে খানিক সময় লাগে... পিছনের দিনগুলো ভাবলেই মনে হয় ' ও তো তখন ছিল...' । আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। প্রতিবেশী দেশ বলে শুধু নয়, বাংলাভাষী মানুষ বলে, আজও অনেকের শিকড়ের টান রয়ে গেছে ওদেশে বলে। ওদিকে আমাদের ঘরেই তখন অপরাধীরা শানিয়ে নিয়েছে হিংস্র থাবা, নখর ,শ্বদন্ত। প্রথমে খবর এলো অসুস্থতা, তারপর আত্মহত্যা... মানতে পারছিলাম না। পড়াশোনা আর চিকিৎসা যার জীবনব্রত সে এই সিদ্ধান্ত কখনওই নিতে পারে না। ক্রমশ জানতে পারলাম নিষ্ঠুর হত্যা আর নির্মম নির্যাতনের ঘটনা। আমাদের শান্ত নিরিবিলি পাড়াটা রাতারাতি এক ভয়ঙ্কর আঘাতে স্তব্ধ হয়ে গেল। দুপুর থেকেই সাংবাদিকদের আনাগোনা শুরু হয়েছিল। সন্ধ্যের পর থেকে আসতে লাগলো পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। বাড়তে লাগলো মানুষের ভিড়। একসময় জানতে পারলাম ওকে নিয়ে এসেছে। বাবা মা তখনও পৌঁছতে পারেননি। প্রত্যেকটা ঘটনায় বিস্ময়, ক্ষোভ জাগছিল। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে তখন তীব্র শোকের ছায়া এলাকায়। এত মানুষের ভিড় অথচ সবাই নির্বাক, স্থির। ঝড়ের আগে ঠিক যেমন ভয়ঙ্করভাবে থমকে থাকে প্রকৃতি। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল তখন। ঠিক এই থমথমে পরিস্থিতিতেই বাবা মা ফেরার পর দ্রুত শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। সেদিন রাত থেকেই বাড়ির চারপাশে পুলিশ পাহারা আর সাংবাদিকদের ভিড়। আসতে লাগলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, পুলিশ ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যাদের প্রত্যেকের কাছে শুধু বিচার চাইছিলাম আমরা সবাই। কিন্তু ঘটনাক্রম ক্রমশ কিছু অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছিল। শোকের আকস্মিকতা খানিক সয়ে গেলেই একে একে মনে জাগছিল অসংখ্য প্রশ্ন। উত্তরহীন সেই প্রশ্নগুলো নিয়ে তার আপনজনদের সঙ্গে ছটফট করছিলাম আমরা। পাঁচদিনের মাথায় তদন্তের দায়িত্ব লালবাজার হোমিসাইড বিভাগ থেকে চলে গেল সিবিআইয়ের হাতে। এই ঘটনাক্রম সকলেই জানেন। আপাতত এই একমাসে প্রতিটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তাকিয়ে আছেন নিষ্পলক। লক্ষ্য রাখছেন ছোট বড় প্রতিটি খবরে।
এর মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল, আন্দোলন শুরু হল। 'ভিক্টিম ব্লেমিং' এর বিরুদ্ধে গবেষক রিমঝিম সিংহ, শতাব্দী দাশ প্রমুখ সমাজকর্মীরা ডাক দিলেন 'রাত দখলের'। 'Reclaim the Night' নাম দিয়ে সেই ডাক নগর,শহর, মফস্বল পার হয়ে পৌঁছে গেল প্রত্যন্ত গ্রামে। দীর্ঘদিনের ধিকিধিকি জ্বলা ক্ষোভের আগুন স্বতঃস্ফূর্ত গণ আন্দোলনে ফেটে পড়ল। হাজার হাজার মানুষ সেই ১৪ ই আগস্টের রাতে এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দিল। মেয়েদের রাতের দখল নেওয়া পাশ্চাত্যের নারীদের অধিকার অর্জনের লড়াইয়ের একটি অংশ হয়ে উঠেছিল সত্তরের দশকে। ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে মেয়েদের এই রাত দখলের দাবি উঠেছিল। ব্যাঙ্গালোরের নারী নির্যাতনের ঘটনায় ২০১৭ তে 'Take Back Night' এর দাবিতে দেশের অনেক শহরেই মিছিল করে মেয়েরা। এবার আর জি করে চিকিৎসক পড়ুয়ার নৃশংস হত্যা ও নির্যাতনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের শতাধিক জায়গায় রাত দখল করে মেয়েরা। বিভিন্ন রাজ্য এমনকি পৃথিবীর নানা দেশেও মানুষ বিচার চেয়ে পথে নামেন। শত শত মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে থাকেন। ভয় যেমন সংক্রমিত হয়, সাহসও তেমনি। সারাজীবন সংসারের বাইরের জগতটা নিয়ে ভাবেননি যাঁরা সেই মানুষেরাও মোমবাতি জ্বালিয়ে, প্ল্যাকার্ড নিয়ে, জাতীয় পতাকা নিয়ে পথে নেমেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক জনগণের এমন প্রতিবাদে, প্রতিরোধে সামিল হওয়ার ঘটনা মনে করতে পারেননা কেউ। মানুষ জাগছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও টেলিভিশনের পর্দায় আটকে প্রায় সমাজ বিচ্ছিন্ন একাকী হয়ে পড়া মানুষেরা যখন একজোট হয়ে পাড়ার মোড়ে মেয়েটির স্মৃতিতে মোমবাতি জ্বালান, প্রদীপ জ্বালান, বাদ যায় যায়না শঙ্খ বাজানো থেকে মন্দিরে, পুজোর আসনে বিচার চেয়ে মানত রাখা নিরীশ্বরবাদী চোখের কোণও ভিজে যায় তখন। ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের একাধিক মিছিলে দলীয় রাজনীতির রঙ ছাড়াই গর্জে ওঠে প্রতিবাদ - 'We Want Justice', 'We Demand Justice', 'We Deserve Justice'। বৃষ্টি মাথায়, রোদে পুড়ে, নির্ঘুম জ্বালা করা চোখে মানুষ কেবলই 'বিচার' চাইছে। তার জন্য তৈরি হচ্ছে লড়াইয়ের নতুন নতুন ফর্ম। আশ্চর্য সব সংহতি ও সঙ্ঘবদ্ধতার আলো জ্বলে উঠছে। চির যুযুধান দুই ফুটবল দলের সমর্থকরা হাতে হাত রেখে দাবি করল বিচার। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এশিয়া প্যাসিফিক যোগা প্রতিযোগিতায় জোড়া পদক জিতে বঙ্গকন্যা সুস্মিতা দেবনাথ তা উৎসর্গ করলেন তিলোত্তমাকে।
গান গেয়ে, পথে পথে ছবি এঁকে, মিছিলে মিছিলে শহর ভরিয়ে, মানববন্ধনের প্রাচীর তুলে, নিয়ন বাতি নিভিয়ে প্রদীপ, মোমবাতি মশাল জ্বালিয়ে, ব্যস্ত জনপদে হঠাৎ থেমে গিয়ে স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করে মানুষ জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা প্রবলভাবে বেঁচে আছেন। কী অসম্ভব সহনশীল হয়ে উঠেছেন তাঁরা। নিত্যদিনের এই আন্দোলনে আটকে আছে গাড়ি অথচ মানুষ বিরক্ত হচ্ছেন না, চিৎকার করছেন না। ভিড়ে ঠাসা বাসের যাত্রী বা মাথায় বোঝা নিয়ে হাঁটা খেটে খাওয়া মানুষটি সবাই আজ 'বিচার' চাইছেন।কী ভীষণ 'অদলীয় রাজনৈতিক' দাবি তাদের। দলীয় রাজনীতি যা পারেনি আজ স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীন গণ আন্দোলন তার কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। তারা সমাজ বদলের ডাক দিচ্ছে। যে সমাজে নিরাপত্তা থাকবে। ভয়হীনভাবে বেড়ে উঠবে আমাদের ভাবীকাল। আগাগোড়া পুরুষতান্ত্রিক মোড়কে ঢাকা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শুধু নারী নয় , প্রান্তিক লিঙ্গ, ট্রান্স ও কুইয়ার মানুষেরাও বিচারের দাবিতে সমান সরব হয়ে চাইছেন এক সাবালক সমাজ গড়তে। কেননা এই ঘটনায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের চরম অব্যবস্থা ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারী নির্যাতন ও যৌন হেনস্থার বিষয়টিও। একেবারে পারিবারিক স্তর থেকে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে এই আন্দোলনের এক অংশ। একটা মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল কতখানি ভঙ্গুর এই সভ্য সমাজের সাজিয়ে তোলা আকাশচুম্বী উন্নয়ন।
চিরকালের শান্ত, পড়ুয়া মেয়েটা কীভাবে যে এত শক্তি ছড়িয়ে গেল, সাহস দিয়ে গেল ভাবতে পারিনা। এই তো সেদিন বসন্ত উৎসবে বিহুর গান গাইল। উচ্চমাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট, ডাক্তারিতে চান্স পেল। ছোটখাটো আনন্দ উদযাপন হল।
বলতাম, ' তুই কার্ডিওলজিস্ট হ। বয়স বাড়লেই হৃদয় আক্রান্ত হবে...'। তখন কে জানত ওর এই যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু আমাদের হৃদয়ে আজীবনের ক্ষত রেখে যাবে ! সমাজ ও রাষ্ট্রের গভীর অসুখের সংক্রমণে হারিয়ে গেল সম্ভাবনাময় এক চিকিৎসক...
এই মর্মান্তিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা যে ভয়ঙ্কর সর্বনাশের হদিস দিয়ে গেল তার ইঙ্গিত কি পাইনি আমরা বহুদিন ধরে? রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের আবহেই দীর্ঘদিন ধরে ঘুণ ধরে গেছে শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ জীবনের সকল জরুরি পরিষেবায়। আমাদের আহার্য, পানীয় এবং শ্বাস প্রশ্বাস সর্বত্রই বিষ। বিষ আমাদের মস্তিষ্কেও জারিত হয়ে চলেছে। তাই এমন ভয়ঙ্কর ঘটনাকেও ফিকে করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলে। অপর ঘটনার উদাহরণ টেনে এই নৃশংসতাকে লঘু করার চেষ্টা চলে। অথচ শরতের আকাশে কী স্বচ্ছ রোদ ! কী আশ্চর্য আলো হয়ে ফুটে আছে আমাদের সকল শক্তি ও সদিচ্ছার ছবি। সেই আলোয় আমি কেবল দুটি চোখ দেখতে পাই বহু নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি জড়িয়ে থাকা চোখ, ছত্রিশ ঘন্টা ডিউটি করা চোখ, একজোড়া স্বপ্ন ভরা চোখ। তারা ভরা আকাশেও ওরা ফুটে থাকে, ওরা কথা বলে।
ঠিক Sweet Bean Paste এ Tokue কে যেমন চাঁদ ফিসফিস করে বলেছিল...
I wanted you to see me.
That's why I shine like this.
তখন থেকে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন ,' If I were not here, this full moon would not be here. Neither would the trees. Or the wind . If my view of the world disappears, then everything that I see disappears too. '
ওর দেখার জগৎ, ওর অনুভবের পৃথিবী সব চলে গেল ওর সঙ্গে...
আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী ? কেন আমরা বাঁচি তবে?
Tokue খুব সুন্দর করে Sentaroকে বুঝিয়েছেন..." We were born in order to see and listen to the world.'
আর সেই পৃথিবী যদি প্রতিবাদে প্রতিরোধে মুখর হয়ে ওঠে তবে তো তার অনুরণন প্রতিটি সজীব প্রাণের সঞ্চারিত হয়ে উঠবে...
সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এই অদলীয় রাজনৈতিক জাগরণ কেবল সঠিক বিচার চাইছে। তার মধ্যে দিয়েই যেন তৃপ্ত হবে অসংখ্য ন্যায়বিচার না পাওয়া বঞ্চিত মানব আত্মা...এই লেখা যখন চলছে সারা রাত জেগে জুনিয়র ডক্টররা বসে আছেন বি. বি. গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। মেরুদণ্ড ও গোলাপ নিয়ে তারা ডেপুটেশন দিতে যাবেন লালবাজারে... ব্যারিকেডে আটকে আছেন তাঁরা। গোটা এলাকার মানুষ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সকল মানবিক পরিষেবা নিয়ে। যে বিশুদ্ধ ক্রোধ ও কান্না এই গণ আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে তা জানে শাসক মাত্রেই স্বৈরাচারী ও অন্ধ। তাই সহনাগরিকের বাড়ানো হাতগুলোই শক্ত মুঠিতে বদলে যাচ্ছে নিমেষে।ঠিক এমন একটা সংহতি, ঐক্যের স্বপ্ন কি দেখতে জানত এই কালবেলা?
- তিলোত্তমা তার অধরা স্বপ্নগুলোকে এভাবেই বুঝি ছড়িয়ে দিয়ে গেল ইথার তরঙ্গে...তার ঢেউ ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের। বুকে অবিরাম বেজে চলেছে দ্রিমি দ্রিমি রব...আমরা ঘুমোই না... ব্যথার সঙ্গে, ক্রোধের সঙ্গে রাত্রি যাপন করি...
"...and the sea, the sea,
suspended
aroma,
chorus of rich, resonant salt,
and meanwhile,
We men,
Touch the water,
Struggling and hoping,
We touch the sea
Hoping.
And the waves tell the firm coast;
"Everything will be fulfilled"