জাস্টিস ফর আর্জিকর থেকে জেন্ডার জাস্টিস আন্দোলন : কিছু জরুরী কথা

ভোটের বোতাম টেপার বাইরে গণতন্ত্রে জনতার আর কোনও ভূমিকা নেই, এমনটা যখন ভেবে ফেলে শাসক বা বিরোধী, যে কোনও রাজনৈতিক দল, তখন একটা সফল গণআন্দোলনই পারে তাঁদের ধরে ঝাঁকিয়ে দিতে, ঔদ্ধত্যের রথ থামিয়ে দিতে। আশাতীত ভাবে সফল ‘নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গের রাত দখল’ আসলে তেমনই একটা আন্দোলনের রূপ নিল।

এই আন্দোলনের শুরুতে সমাজমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমে তোলা একটা আহ্বান রাখা হয়েছিল। প্রকাশিত হয়েছিল একটা লেখা। সেটা প্রথমে রাখা থাক।

"ধর্ষণ হোক বা যৌননিগ্রহ, তা ঘটার পর দায় ও দোষ নেবে কে? মেয়েরাই? ‘রাতের বেলা বেরনো উচিত হয়নি’ হল দায় চাপানোর একটি ধরন মাত্র৷ এই প্রবণতার আরও প্রকারভেদ আছে। আরও নানা কারণে নারী ধর্ষিত হয়– এরকম কথা, আমাদের দেশের মতো, সাতের দশকের যুক্তরাষ্ট্রেও মনে করা হত। কেউ বলতেন, কারণটি পোশাক। কেউ বলতেন, নারীর চরিত্র। কেউ বলতেন, অকুস্থলে লোক চলাচল কম ছিল, অতএব…

নারী রাতে বেরবে না, ফাঁকা স্থানে যাবে না, নিজেকে ঢেকে রাখবে– পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এমন নানা বিধান দিত। তাই মেয়েরা বললেন: চলো রাত দখল করে দেখাই। শুরু হল ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট মুভমেন্ট।’ তাঁরা দল গড়লেন। ঘুরে বেড়ালেন মধ্যরাতের রাজপথে, গলিতে, বন্দরে। গান গাইলেন। চিৎকার করে স্লোগান আওড়ালেন। রাতের প্রেক্ষাপটে মেয়েমানুষ দেখতে যে চোখ অভ্যস্ত নয়, তাদের সুঅভ্যাস করাতে চাইছিলেন তাঁরা। বোঝাচ্ছিলেন, ‘আমার মর্জি, আমি বেরিয়েছি। তার মানে আমি ভোগ্য নই।’ এর পরে একটা দশক জুড়ে ধর্ষণ সংস্কৃতি (রেপ কালচার) এবং ধর্ষিতাকে দোষারোপের সংস্কৃতি (ভিক্টিম ব্লেমিং)-এর বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ ব্যানারের তলাতেই অনুষ্ঠিত হত।

আর জি কর মেডিকাল কলেজে একজন পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট ট্রেনি ডাক্তার ধর্ষিত হয়ে মারা গিয়েছেন। তিনি ‘অন কল ডিউটি’-তে ছিলেন। অর্থাৎ, সেসময় তাঁর কাজে আসার দায় কর্তৃপক্ষের। অবশ্য শোনা গিয়েছে, তিনি তার আগের ৩৬ ঘণ্টাও টানা ডিউটি করেছেন, যেটা আবার শ্রম-আইন বিরোধী হলেও, ডাক্তারি পড়ুয়ার জীবনের অঙ্গ। এ বিষয়ে যে কোনও ডাক্তারি পড়ুয়া বা ডাক্তারের থেকে খোঁজ নিলেই তা জানা যায়। সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়।

কিন্তু কোনওমতে রাতের খাবার খেয়ে, বাড়িতে ফোন সেরে, সেই মেয়ে অন-কল অবস্থায়, রোগীস্বার্থে সংযত ও প্রস্তুত অবস্থায়, সেমিনার রুমে পড়াশোনা করার ফাঁকে, ধর্ষিত হলেন, খুন হলেন। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে, শ্বাসরোধ করে, চোখ থেকে রক্ত বের করে, হত্যা হয়েছে। হত্যা করার আগে যৌন নির্যাতনও যে হয়েছে, তার ছাপ স্পষ্ট। আর তার পরে পরেই সোশাল মিডিয়ায় উঠে এল ছাত্রদের হাতে লেখা এক পোস্টার, যার বাংলা অর্থ হল:

‘অধ্যক্ষ বলেছেন, রাতে মেয়েটির একা থাকা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। অধ্যক্ষর লজ্জা হোক।’

এ কি সত্যি? যদি একথা তিনি বলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তিনি শুধু অধ্যক্ষ হিসেবে নয়, ডাক্তার হিসেবেও অযোগ্য। এহেন অসংবেদনশীলতা নিয়ে সেবাকার্য করা উচিত নয় তাঁর। এ যদি সত্যি হয়, তবে তিনি কি অব্যাহতি নেওয়ার কথা ভাববেন?

আর একটা পদক্ষেপের কথা আমরা ভাবতে পারি। জানি না এ উদ্যোগ আগে নেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু আমরা শুরু করতে পারি। আইনে ‘ক্রিমিনাল ডিফেমেশন’ বলে একটি ধারা হয়। পাড়ার জ্যাঠা থেকে শুরু করে বিশ্বজনীন মরাল মাসিমা– যে কোনও কারও দ্বারা ধর্ষিতার ভিক্টি‌ম ব্লেমিং দেখলেই আমরা সেই ধারায় মামলা করতে পারি। তাতে তারা কি শাস্তি পাবে? এখনই হয়তো পাবে না৷ আইনের ফাঁক গলে বেরবে। কিন্তু ভোগান্তি হবে। এরপর মুখ ফস্কে কিছু বলে ফেলার আগে ভাববে, যা বলছে তা বলার এক্তিয়ার আছে কি না।

ধরা যাক, কোনও মেয়ের যদি ‘ডিউটি’ না থাকে? যদি সে হাওয়া খেতে বেরয়? তাহলেও সে দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়। প্রাথমিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্তৃপক্ষ, যারা ক্যাম্পাসে বা হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেনি।

একইভাবে ধর্ষণের সময় ঘড়ির কাঁটা কোন সংখ্যার গায়ে লেগে ছিল, তার ওপর ভিত্তি করে কোনও মেয়েকে সোজাসুজি বা আকারে ইঙ্গিতে দায়ী করা যাবে না।

যদি মেয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পথে ধর্ষিত হয়, তাহলেও দায় তার নয়। যদি প্রেমিকই তাকে ধর্ষণ করে, তবু দায় তার নয়। যদি সে ডাক্তার হয়, দায় তার নয়। যদি সে শ্রমিক হয়, দায় তার নয়। যদি সে যৌনকর্মী হয়? তবুও তার অসম্মতিতে তার প্রতি যৌন নিগ্রহের দায় কোনওমতে তার নয়।

এইবার আরও কিছু কথা বলার থাকে। অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আগেও নানা দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন এবং সে অপরাধে ট্রান্সফারও হয়েছিল তাঁর। অনেকে বলছেন, তাঁর থেকে এই অসংবেদনা প্রত্যাশিত। বিনীতভাবে বলি, তিনি দুর্নীতিপরায়ণ হতে পারেন, কিন্তু তিনি যা বলেছেন, তা বলার জন্য দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার দরকার পড়ে না।

রাতে যৌন নিগ্রহ ঘটলে, অভিযোগ জানাতে গেলে, এখনও পুলিশ স্বয়ং একথা বলে। দায়িত্ব সহকারে জানাতে চাই যে, বক্তা হিসেবে মঞ্চ ভাগ করে নিতে গিয়ে, পুলিশের উচ্চপদস্থ এক নারী অফিসারের মুখ থেকেও এটা শুনেছি যে, ‘দায়িত্বশীল হোন। রাতে বেরবেন না। নির্ভয়া মনে আছে?’

তিনি কিন্তু কঠোর অফিসার হিসেবেই পরিচিত তাঁর এলাকায়। তিনি হয়তো দুর্নীতিপরায়ণ নন। তিনিও জানেন না, কতটা তিনি বলতে পারেন। সাবধান করতে চাইলেও, কীভাবে বড়জোর তা করতে পারেন। ‘রাতে বেরোলে সাবধানে বেরোবেন’ আর ‘রাতে বেরোবেন না। দায়িত্বশীল হোন।’ এ দু’টি কথার সার এক, অথচ ভঙ্গিতে অনেক তফাত। ২০১৩ সালে ভার্মা কমিশনের সুপারিশে ধর্ষণ আইন সংশোধন হয়েছিল ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর। তারপর শুনেছিলাম, পুলিশের বিস্তর ওয়ার্কশপ হয়েছিল, ধর্ষিতাকে কী বলা যাবে না, তার সঙ্গে কী আচরণ করা যাবে না, তার বদলে কী বলতে বা করতে হবে, এসব নিয়ে। সেসব কী মাঠে মারা গেল? সাইবার থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে, ‘ছবি কেন পাবলিক করেছিলেন?’– এই প্রশ্নটি শোনেননি কোন অভিযোগকারী?

মন্ত্রী, পুলিশ, অধ্যক্ষ নিজের দায় ঝেড়ে ফেলতে সাধারণত সেই ভাষায় কথা বলেন, যে ভাষা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। তাই আমাদের অন্তরেও অধ্যক্ষসাহেব লুকিয়ে আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। ডাক্তারের খুনী-ধর্ষকের সঠিক শনাক্তকরণ ও বিচার চাই। সেই সঙ্গে বোধোদয়ও চাই। শুধু ধর্ষক আর অধ্যক্ষের অপরায়ন করে যেন আমরাও না দায় ঝেড়ে ফেলি।

মধ্যরাত শাসন করার কথা উঠলে প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ কবির মগজেও চার যুবক ভিড় করে। মেয়েরা কবে দখল নেবে মধ্যরাতের? অফিস করে আসুন, কাজ সেরে আসুন। আসুন রাত হাঁটি। রাত দেখি। রাত বাঁচি। দুয়েকদিন আপনার পুরুষসঙ্গী পড়াক সন্তানকে। রাঁধুক বাড়ুক। আপনি সংঘবদ্ধ হোন ও রাতের অধিকার নিন। টেক ব্যাক দ্য নাইট। রাতের কলকাতা, রাতের দিল্লি, রাতের মুম্বই– রাত সুন্দর। কিংবা রাত ভয়ানক, কিন্তু আসুন, তাকে সুন্দর বানাই।"

এরপর এল ১৪ অগস্টের সেই ঐতিহাসিক রাত। শুরু হল এক সাড়া জাগানো অভূতপূর্ব গণ আন্দোলন।

গণআন্দোলনের চরিত্রই হল, তার ‘হোতা’ হয় না কোনও মহামানব। ব্যক্তি, সংগঠন বা পার্টি যদি তার কৃতিত্ব দাবি করে, তবে তাদের চিনে নিতে হয় সুযোগসন্ধানী হিসাবে। যাঁরা রাত জাগার ডাক দিয়েছেন, তাঁদেরও ব্যাটন তুলে দিতে হয় জনগণের হাতে। আহ্বায়কদের কাজ, গণআন্দোলনের এই চরিত্র বজায় রাখা ও মানুষের ক্ষোভকে সঠিক দিশায় চালিত করা মাত্র। বেশির ভাগ জায়গায় এই বোঝাপড়া বজায় রাখা গিয়েছিল বলেই স্বাধীনতার ভোর এক সঙ্গে দেখল সারা পশ্চিমবঙ্গ, সারা ভারত, তথা প্রবাসী ভারতীয় মেয়ে ও প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌন গোষ্ঠীর মানুষ। নিজেকে ধরেই বলছি, এ-হেন কাকিমা-মাসিমাদের পথে নামার রাত আহ্বায়করা নিজেরাও কখনও দেখেছেন কি? এ আমাদের জন্যও এক অনন্য অভিজ্ঞতা, শিক্ষা।

অভিজাত মেয়েদের আন্দোলন হিসাবে একে কখনও ভাবা হয়নি বলেই, সর্বপ্রথম ফোন গিয়েছিল গিগকর্মীদের কাছে। বাড়ির বিভিন্ন কাজে লোক পাঠায়, এমন এক পরিষেবা প্রদানকারী অনলাইন সংস্থার কর্মী-মেয়েরা আসতে চেয়েছিলেন ক্লায়েন্টের বাড়িতে যৌন-নির্যাতনের কথা বলতে। অশোকনগরে এসেছিলেন মিড-ডে মিল কর্মীরা। আকাদেমিতে আশাকর্মীরা শুধু আসেননি, তাঁদের মধ্যে এক জন প্রতিনিধি সভা-পরিচালনার দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। এক সঙ্গে পথে নেমেছিলেন শান্ত গৃহবধূ ও বিদ্রোহী নারীবাদী। তাঁরা পথে, কর্মক্ষত্রে এমনকি গৃহেও নারীর সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কিত। কী আশ্চর্য, যে মা-মাসিরা পিতৃতান্ত্রিক মস্তিষ্কপ্রক্ষালনের ফলে এত দিন হয়তো নিজেরাও ধর্ষণের জন্য দায়ী করতেন ধর্ষিতার পোশাক, বাইরে বেরোনোর সময় ও তারই নানা আচরণকে, তাঁদেরও সঙ্গে পেলাম! মনে হয়, এই প্রথম বার ভারতে একটি আন্দোলন শুধু ধর্ষণের ঘটনার নিরিখে বিচার ও শাস্তি দাবি করল না, বরং নির্যাতনের জন্য নির্যাতিতাকেই দায়ী করার বিরুদ্ধে স্পষ্ট রুখে দাঁড়াল নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌন গোষ্ঠী। ‘রাতে মেয়ে কেন একলা?’— যে কথা নাকি অধ্যক্ষ বলেছিলেন, সে রকম কথা প্রায়শই কি শোনা যায় না পাড়ার রকে, খাবার টেবিলে? ভিক্টিম-ব্লেমিং আমাদেরই সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল। সেই সংস্কৃতির উত্তরাধিকার রাত দখলের আন্দোলন সজোরে ছুড়ে ফেলল আঁস্তাকুড়ে।

আমরা রাত্রিব্যাপী প্রতিবাদ সভা ভেবেছিলাম, যাতে মাঝরাতে মেয়েদের বাড়ি ফেরার পথে অসুবিধা না হয়। সে দিন সারা রাত খোলা ছিল মহিলা শৌচালয়, যা থেকে উঠে এসেছে নতুন দাবি: কেন রাত দশটায় শহর জুড়ে নারী শৌচালয় বন্ধ হয়ে যায়? কেন মোড়ে মোড়ে নেই ট্রান্স মানুষের শৌচালয়? ট্রান্স মানুষ তমোঘ্নর মৃত্যুপরবর্তী হেনস্থা (মৃতদেহকে আবৃত না রাখা ইত্যাদি) নিয়েও উঠল নানা অভিযোগ।

এ আন্দোলনে কোনও দলীয় ব্যানারের প্রয়োজন হল না। কোনও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারও এখানে ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু দলীয় রাজনীতির সঙ্গে এই আন্দোলনের সম্পর্ক বা সমীকরণটি বলে রাখা বিশেষ ভাবে দরকার। আহ্বায়করা যখন অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের ফোন ধরেছেন, তখন দেখেছেন, প্রতিটা ফোন যে প্রথম প্রশ্নটি করে, তা হল, ‘আপনারা কোনও রাজনৈতিক দল নন তো?’ কেউ বলতে পারেন, এ সাধারণ মানুষের ভীরুতা যে, তাঁরা দলীয় হিসাবে চিহ্নিত হতে চান না। ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, যে মানুষ রাজপথে ঢল নামাতে পারেন, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচশো জায়গায় রাতভর সমাবেশ সংগঠিত করতে পারেন পুলিশের ভয় জয় করে, তাঁদের ভীরু ভাবা মূঢ়তা। দলের মিছিলে যাওয়ার তাঁদের অনাগ্রহকে বিতৃষ্ণা হিসাবে দেখছি। একে অ-রাজনীতি বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মনে হয়, এ বিতৃষ্ণাও রাজনৈতিক। দলীয় রাজনীতির স্বার্থানুসন্ধান ও দুর্নীতি সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল বলেই সাধারণ মানুষ দলীয় পতাকা বর্জন করলেন। এটাই তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ মেয়ে ও প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌন গোষ্ঠী সরাসরি কথোপকথন শুরু করেছে রাষ্ট্রের সঙ্গে। সুস্পষ্ট ভাবে দাবি পেশ করছে: কেন দেবে না সব লিঙ্গের জন্য রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো, সুলভ শৌচালয়, কর্মক্ষেত্রে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা? কেন যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানানোর ‘অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি’ একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে?

এই এত প্রশ্নকে ‘অরাজনৈতিক’ বলা হলে, রাজনীতি কী? শুধু ক্ষমতার খেয়োখেয়ি? ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’ দেখাল, প্রবল ভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনও অ-দলীয় হতে পারে। আহ্বায়করা যখন রাজনৈতিক নেতাদের মঞ্চে উঠতে দেন না, তখন তাঁরা স্রেফ সাধারণ মানুষের চাহিদার বাস্তবায়ন ঘটান। সাধারণ মানুষই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের কাঁধে চেপে কাউকে রাজনৈতিক আখের গোছাতে দেবেন না তাঁরা। বর্তমান শাসনহীনতার বিরুদ্ধে সংগঠিত মিছিল থেকেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, মনুবাদী পিতৃতান্ত্রিক বিজেপিকে এই আন্দোলনের সুবিধা তুলতে দেওয়া হবে না। মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে সিপিএম যুগের বানতলা আর তৃণমূল যুগের কামদুনি, একই সঙ্গে। ঢালধারী র‌্যাফকে প্রতিহত করছে সাধারণ মেয়ে, ট্রান্স আর ক্যুয়ার মানুষের দল।

কোজাগরী আর শুধু প্রতীকী আছে কি? এ যদি চেতনার জাগরণ না হত, জাগরণ তবে কী?

(প্রচ্ছদ হিসেবে আমরা যে ছবিটি ব্যবহার করেছি তার একটি অংশ তৌসিফ হকের আঁকা। আমরা ইন্টারনেট থেকে প্রচ্ছদ ছবিগুলি সংগ্রহ করেছি।)