মণিহারা : নারীর পুঁজিরতির আখ্যান

সাল ১৮৯৬। রবীন্দ্রনাথ সেই সময় দার্জিলিঙে। সঙ্গী দিনেন্দ্রনাথ এবং রথীন্দ্রনাথ। সে সময় কোচবিহার রাজ পরিবারের রাজবধূ সুনীতি দেবী। তারই অনুরোধে দার্জিলিং এর পথে হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন এক অলৌকিক ছোট গল্প - 'মণিহারা'। পরবর্তীকালে প্রায় ১৯৩৬ সালে হেমন্তবালা দেবীকে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং একথা বলেছেন।

এই গল্পের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র মণিমালিকা যার লৌকিক থেকে অলৌকিক সত্তায় পরিবর্তনের মাধ্যমে ভৌতিক আবহ তৈরি হয়। উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য ভৌতিক ছোট গল্প যেমন ‘কঙ্কাল’, ‘নিশীথে’ বা ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ এ নারী চরিত্রের অতীন্দ্রিয় সত্তার উপরই বস্তুত অলৌকিকের নির্মাণ নির্ভর করেছে।

এই গল্পের প্রথম থেকেই বক্তা ও শ্রোতার  জটিল সম্পর্ক এক দ্বৈত আখ্যান তৈরি করে। তাই চরিত্রদের সম্পর্কে রচয়িতার point of vision সব ক্ষেত্রে মূল আখ্যানের উপর নির্ভর নয়। গল্পের দুই কথক এবং দুই শ্রোতা। প্রথম কথক, রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ - শ্রোতা পাঠক।  দ্বিতীয় কথক, গ্রামের স্কুল মাস্টার - শ্রোতা ফণিভূষণ। গল্পের প্রথমেই আমরা দেখি রাঁচি হতে সদ্য আসা এক ব্যক্তি (ফণিভূষণ) ভগ্নপ্রায় এক অট্টালিকার সামনে এক জীর্ণ বাঁধাঘাটে বসে আছেন।  সে সময় সেখানে উপস্থিত হন স্থানীয় এক স্কুল মাস্টার। যাকে দেখে ইংরেজ কবি কোলরিজের প্রাচীন নাবিকের কথা মনে হয়। রোমান্টিক কাব্যের এই অবিস্মরণীয় চরিত্রটির উল্লেখ করে গল্পের প্রাথমিক কথক সেই মুহূর্তেই যেন বাস্তবের সীমারেখাকে willing suspension of disbelief এর ফর্মুলায় পরাবাস্তবতার দিকে নিয়ে গেছেন।

স্কুল মাস্টারের কথন যত এগোয়, বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে পুরুষ আধিপত্যের দিকে তার পক্ষপাতিত্বের প্রতি লেশ মাত্র সন্দেহ থাকে না। নারী-পুরুষ রসায়নে পুরুষের প্রভুত্ব এবং নারীর আত্মসমর্পণই যে "স্বাভাবিক এবং সুনির্দিষ্ট" তার বক্তব্যে তা পরিষ্কার। এক্ষেত্রে নব্য বাবু ফণিভূষণের উদারনীতি সম্পর্কে তার sarcasm ও  যথেষ্ট দ্ব্যর্থহীন। বক্তার মতে মণিমালিকার হৃদয় পাওয়ার জন্য ফণিভূষণের নিদারুণ আকুতি, স্বর্ণালংকার দিয়ে তার মণিমালিকার হৃদয় সাম্রাজ্যের অধিশ্বর হওয়ার চেষ্টা , ফণিভূষণের পুরুষকারের দৌর্বল্য ছাড়া আর কিছু নয়।

এখানে গল্পের কথক বলছেন, "সাধারণত স্ত্রী জাতি কাঁচা আম, ঝাল লঙ্কা এবং কড়া স্বামীই ভালোবাসে। যে দুর্ভাগ্য পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হতে বঞ্চিত সে - যে  কুশ্রী অথবা নির্ধন তাহা নয়, সে নিতান্ত নিরীহ।" এ বিষয়ে তার দ্বিমত নেই যে নবযুগের শিক্ষামন্ত্রে পুরুষ তার বিধাতাদত্ত স্বভাবসিদ্ধ বর্বরতা হারিয়ে দাম্পত্য সম্বন্ধকে শিথিল করে ফেলেছে। কথকের ধারণা অনুযায়ী যেহেতু মণিমালিকা বিনা প্রচেষ্টায় বাজুবন্ধ  বিনা অশ্রু বর্ষণে ঢাকাই শাড়ি লাভ করত, সে ভালবাসার প্রতিদানের চেষ্টা রাখত না। মনে রাখতে হবে যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রতিভূ স্কুল মাস্টার এখানে যেভাবে মণিমালিকার চরিত্র বিশ্লেষণ করছেন, তা তার নিজের জীবনদর্শন, এটি রচয়িতার অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের নয়। রবীন্দ্রনাথ এখানে অতি সুকৌশলে গল্পের মাঝে গল্প তৈরি করে discourse বা বয়ানের দায়ভার চাপিয়ে দিয়েছেন স্কুল মাস্টারের ওপর। মনে রাখতে হবে গল্পটি রচিত হয়েছিল মহারাণী সুনীতি দেবীর অনুরোধে, যিনি ছিলেন ভারতের নারী জাগরণের প্রথম সারির মুখ। রবীন্দ্রনাথ তাই পিতৃতান্ত্রিক বক্তব্যের প্রধান দায়িত্ব চাপিয়েছেন স্কুল মাস্টার কথকের উপর।

দার্শনিক ও সাহিত্য সমালোচক জর্জ লুকাচ্ তাঁর Narrate and Describe রচনাটিতে আখ্যান নির্মাণ এবং বর্ণনার মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য উল্লেখ করেছেন। আখ্যান নির্মাণের ক্ষেত্রে একটা dynamic totality থাকে যার মাধ্যমে পাঠক গল্পের মূল নাটককে অনুভব করতে থাকে। অপরদিকে বর্ণনা পাঠককে একটা নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়। কিন্তু মণিহারাতে গল্পের মধ্যে গল্প তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় গল্পের কথকও রচয়িতার হাতের একটি চরিত্র মাত্র। তাই যে  পাঠক আপাত ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে কথকের একতরফা বর্ণনা মেনে নিতে পারতো সেটাই তার মনে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। কারণ দ্বিতীয় গল্পের কথকের বর্ণনা মূল রচয়িতার আখ্যানেরই অংশ। এখানে একাধিক narrative এর নির্মাণ রবীন্দ্রনাথকে গল্পের প্রামাণ্যতা যাচাই এর দায় থেকে মুক্ত করেছে।

মণিমালিকা কি সত্যিই দাম্পত্য সম্পর্কে নির্লিপ্ত, শূন্য হৃদয় এক নারী? নাকি তার স্বেচ্ছানির্লিপ্ত মনোভাব বিবাহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এক অদ্ভুত প্রতিরোধ? তার হৃদয় কোনও পুরুষের প্রত্যাশা প্রার্থী নয়। তাই কি কথকের বর্ণনায় তার হৃদপিণ্ড বরফের পিণ্ড? নিঃসন্তান মণিমালিকা নিজেকে না স্ত্রী হিসেবে, না মা হিসেবে একাত্ম করতে পারে। তার সমস্ত ভালবাসা তার অলংকারগুলো। এগুলোই তার অন্তরের পুঁজি। ঊনবিংশ শতকে নারীকে যে পরিবারভিত্তিক ভূমিকাগুলিতে চিন্তা করা হতো, বা এখনও করা হয়, মণিমালিকা তার মাঝে এক প্রহেলিকা স্বরূপ।

"যে কাজ তাহার দ্বারা সাধ্য সে কাজই কেহ বেতন লইয়া যাবে ইহা সে সহিতে পারিত না। সে কাহার ও  জন্য চিন্তা করিত না, কাহাকেও ভালোবাসিত না। কেবল কাজ করিত এবং জমা করিত, এই জন্য তাহার রোগ, শোক, তাপ কিছুই ছিল না।" সাংসারিক ভূমিকাগুলোকে যে নারী নিজের অন্ত:স্থিত সত্তা  থেকে  নির্বাসন দিয়ে, এক অলংকার সর্বস্ব পুঁজিবাদী সত্তাকে আপন করে নেয়, তাকে গ্রামের স্কুল মাস্টারের আখ্যান বিচার করতে পারে না।

ফণিভূষণ যখন ব্যবসার ক্ষতি সামলাতে নিতান্ত দুর্বল ভাবে মণিমালিকার কাছে অলংকারগুলি চায়, মণিমালিকা অলংকারগুলো বাঁচাতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ওঠে। গয়নাগুলিকে নিয়ে গ্রাম সম্পর্কে তার ভাই মধুসূদনের সাহায্যে সে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দাম্পত্য বা স্বাভাবিক নীতিবোধ দুই নস্যাৎ সে করতে পারে শুধুমাত্র তার সখের পুঁজিটিকে বাঁচাতে। অবশেষে ঘনমেঘাচ্ছন্ন এক সকালে মধুসূদনের সাথে সে গৃহত্যাগ করে। পরকীয়া বা স্বামীর প্রতি তীব্র বিরাগ - কোনটাই কিন্তু তাকে এই কাজে প্রবৃত্ত করেনি।

ত্রিকোণ প্রেমের গল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও এই ছোট গল্পে তা হলো না। স্কুল মাস্টারের মতন কথক বা গল্পকাররা নারী কে যে মাপকাঠিগুলিতে বর্ণনা করতে অভ্যস্ত প্রত্যেকটিকেই সে বিকল করে দিল। পুরুষ সম্পর্কে তার সম্পূর্ণ  নির্মোহ অবস্থান এবং তার নিজের স্বর্ণালংকার নিয়ে চূড়ান্ত মোহগ্রস্থতা তাকে একটি বিশেষ বৃত্তের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দেয়। তার স্বামী উদ্যোগপতি, উদারপন্থী সমাজের প্রতিভূ। উৎপাদন এবং পুঁজির মূল ক্ষেত্রে  ভারতীয় গৃহস্থনারী তখনো প্রবেশাধিকার পায়নি। তার একমাত্র নিজস্ব ধন তার অলংকার। নারীর এই পুঁজিসর্বস্বতাকে যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করার সাহিত্যিক মাপকাঠি কথকের ছিল না। তাই কথকের কাছে এ এক মানসিক বিকার মাত্র - অসুস্থ মনের পরিচয়। এক্ষেত্রে মনে হতেই পারে রবীন্দ্রনাথকে নিজের অজান্তেই এই অনন্য সাধারণ মানবীটিকে স্ত্রীর পত্রর মৃণাল বা ল্যাবরেটরির সোহিনী পূর্বসূরী করে রাখতে চেয়েছিলেন? মণিমালিকা তার আপন বৃত্তে এতটাই আত্মস্থ যে, সেখানে মধুসূদনকেও সে ভরসা করতে পারে না। গৃহত্যাগের পূর্ব রাতে একটি একটি করে সমস্ত অলংকার সে পরে নেয়। তাকে না মেরে তার অলংকার কেউ ছুঁতে পারবে না।

এরপর ছোট গল্পের স্বাভাবিক ইঙ্গিৎময়তায় যখন ফণিভূষণ ব্যবসা সামলে বিজয়ীর মতো ফিরে আসে, সে দেখে ঘর শূন্য। মণিমালিকার কাছে স্বাভাবিক দাম্পত্য প্রণয়ের প্রত্যাশী ফণিভূষণ নির্মমভাবে আহত হয় মনে মনে।

মণিমালিকার খোঁজে তল্লাশি চলে। তার বাপের বাড়িতেও তার খোঁজ পাওয়া যায় না । মণিমালিকা ও মধুসূদন উভয়ই নিরুদ্দেশ। গল্পের পাঠকদের কাছে তার পরিণতি সহজেই অনুমেয়। এই সময় থেকেই অসুখী দাম্পত্য, বিশ্বাসভঙ্গতার গল্পে অতিপ্রাকৃতের ছায়া পড়তে থাকে।

এরপর ছোটগল্পের স্বল্প পরিসরে তিনটি রাতের শিহরণ জাগানো বর্ণনা চলে আসে। সেদিন জন্মাষ্টমী, গ্রামে চলছে যাত্রাপালা। অবিশ্রান্ত বর্ষণ, ভেকের ডাক, মৃত্যুসম অন্ধকার রাত জীবন মরণের সীমানাকে মুছে দেবার উপক্রম করে। মণিমালিকার ব্যবহৃত প্রতিটি সামগ্রী, তার শূন্যতাকে প্রকট করে তুলেছে, ফণিভূষণের স্নায়ু এক অসম্ভব আসন্নতায় প্রত্যাশী হয়ে ওঠে। একা ঘরে  ফণিভূষণ যখন বসে আছে, মধ্যরাতে ঘাটের উপর দিয়ে একটি শব্দ ক্রমশ উঠে আসতে থাকে। আকুল হৃদয় ফণিভূষণ ছুটে গিয়ে দেখে নিস্তব্ধ রাত। সে ঘুমের মধ্যে ছুটে এসেছে। পরের দিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। এবার শব্দ এসে থামে শয়নকক্ষের দরজা অবধি। ফণিভূষণ ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। আকুল স্বর ডেকে ওঠে "মণি"। তৃতীয় রাতে সে বাড়িতে একা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। একই রকম ভাবে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় এবার শব্দ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। ফণিভূষণ চোখে মেলে দেখে চাঁদের আলোয় তার চৌকির সামনে এক কঙ্কাল দাঁড়িয়েতার আট আঙুলে আংটি, করতলে রতন চক্র, প্রকোষ্ঠে বালা, বাহুতে বাজুবন্ধ, গলায় কন্ঠী, মাথায় সিঁথি, তার আপাদমস্তকে, অস্থিতে, অস্থিতে এক একটি আভরণ সোনায় হীরায় ঝকঝক করিতেছে। এই অপার্থিব দৃশ্য তাকে মূঢ়বৎ করে দেয়। সম্মোহিত জীবের মতো কঙ্কালের হাতছানিতে সে তার পিছন পিছন চলে নেমে যায় ঘাটের সিঁড়িতে, জলস্পর্শ করা মাত্র তার তন্দ্রা চলে যায়। কিন্তু বারংবার শিউরে উঠে স্থলিত পদে স্রোতের মাঝে সে তলিয়ে যায়।

এরপরে গল্পের কথক শ্রোতা ফণিভূষণকে জিজ্ঞাসা করে গল্পটির বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে। উত্তরে শ্রোতা বলে স্থূল প্রাকৃতিক জগতে উপন্যাসের ন্যায় কাল্পনিক উড়ানের জায়গা নেই। দ্বিতীয়ত সেই ফণিভূষণ সাহা। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আরও জানায় তার স্ত্রীর নাম নৃত্যকালী। ফণিভূষণ হিসেবে তার আত্মপরিচয় এবং তার স্ত্রীর নামের নিতান্ত গদ্যময়তা মুহূর্তের মধ্যে এই  কথকের গদ্য নির্মাণের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দেয়। কারণ গল্পের নায়িকা মণিমালিকা তার স্বভাবের সাথে পাঠকের কল্পনায় একীভূত হয়ে গেছে তার নামের মাধ্যমেও। তাই মুহূর্তের এযাবৎ বলে চলা অতিপ্রাকৃতও প্রশ্নের মধ্যে চলে আসে। স্কুল মাস্টার কথক কি মণিমালিকার ভয়ানক পরিণতি, তার কঙ্কাল হয়ে বীভৎস রূপ এবং অবশেষে ফণিভূষণকেই তার অন্তিম ধন হিসেবে মৃত্যুর মাধ্যমে পাওয়ার চেষ্টা কে বিশেষ উদ্দেশ্যে কল্পনা করেছেন? গৃহত্যাগিনী যে নারী শুধুমাত্র তার পুঁজিকে নিয়ে বাঁচতে চায় তাকে মৃত্যুর পরেও শুধুমাত্র দাম্পত্য সম্পর্কের নিরাপদ বৃত্তে ফেরানোর জন্যই কি কথকের অলৌকিক কল্পনা?

রবীন্দ্রনাথের ক্ষুরধার  কৌশল অলৌকিককে উপস্থাপন করে কিন্তু তার বিশ্বাসযোগ্যতার দায়িত্ব চাপিয়ে দেন পাঠকের ওপর। সত্যজিৎ রায় যখন তিন কন্যায় এই গল্পের চলচ্চিত্রায়ণ করেন তিনি একটা narrative shift নিয়ে আসেন। সেখানে স্কুল মাস্টার ভূতের গল্প শোনায় ফণিভূষণকে - যে নিজে ভূত। এখানে চলচ্চিত্রকার নিজেই অলৌকিকত্ব প্রমাণের দায়িত্ব নিয়ে নেন। কিন্তু একই সঙ্গে ঘাটে পড়ে থাকা গাঁজার কলকের close shot অলৌকিককে ধুমায়িত মস্তিষ্কের কল্পনার ইঙ্গিৎবহ। তবে সত্যজিতের স্কুল মাস্টারের গল্পে মণিমালিকা তার স্বামীর জন্য ফেরেনা, ফিরে তার স্বামীর প্রতিশ্রুতি মতো একটি অলংকারের আকর্ষণে। এই সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন সত্যজিতের মণিমালিকাক সমকালীন এক দুরূহ পুঁজিসর্বস্ব নারীতে পরিণত করে - যে নারী তার সর্বস্ব পণ করে তার পুঁজিকে বাঁচানোর জন্য, যে নারী সংসারকে হেলায় হারায় তার পুঁজির স্বার্থে, যে নারী মৃত্যুলোক থেকে কঙ্কাল হয়ে ফিরে আসে সেই পুঁজির আকর্ষণে।

একথা বলাই যায়, মনিহারা গল্প পাঠকের কাছেও এক অসাধারণ পাঠ প্রক্রিয়া তুলে ধরে - যেখানে রচয়িতা এবং গল্পকথকের সুনির্দিষ্ট পার্থক্য এক sub text তৈরি করে এবং এই সাবটেক্সটের কেন্দ্রে  থাকে মণিমালিকা যে বিশ্বাস - অবিশ্বাস, দাম্পত্য, অলংকার সর্বস্বতা, জীবন মৃত্যুর প্রতিটি দ্বৈত ধারণার (binary) পাঠকের প্রত্যাশাকে প্রতিমুহূর্তে এক চূড়ান্ত দোলাচলের মধ্যে রাখে।