লকডাউনের পর শিক্ষা – সঙ্কট ও মোকাবিলা

২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশের স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে কোভিডের প্রথম পর্বে। ২০২১’র গোড়ায় কিছুদিনের জন্য উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্কুল চালু হলেও কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে মাস দুয়েক পরেই আবার তা বন্ধ করে দিতে হয়। দ্বিতীয় ঢেউ থিতিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্যে ক্রমান্বয়ে স্কুলগুলি খুলতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে স্কুল খোলা নিয়ে সরকারের টালবাহানার প্রেক্ষিতে শিক্ষক সমাজ ও নাগরিক সমাজকে আন্দোলনে নামতে হয়। আন্দোলন তীব্র হবার পর চাপের মুখে স্কুল খোলে। কিন্তু কিছুদিন স্কুল চলার পর আবার গরমের জন্য নির্ধারিত ছুটিকে কার্যত তিনগুণ করে আবারো দেড়মাসের বেশি স্কুলগুলিকে বন্ধ করে রাখা হয়। শেষপর্যন্ত জুনের মাঝামাঝি থেকে আবার নিয়মিত স্কুল শুরু হয়। প্রাথমিক স্কুল লকডাউনে টানা ৫০০ দিনের বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল, গরমের সময় তা আবার দেড় মাস বন্ধ থাকে।

লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে স্কুল শিক্ষার যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তা প্রায় সবাই জানেন। এই ক্ষতি কতটা গভীর ও ব্যাপক তা জানার জন্য দরকার ছিল একটি ব্যাপক সমীক্ষার। কিছুদিন আগে অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিশেষজ্ঞ জঁ দ্রেজ-এর নেতৃত্বে এইরকম একটি সমীক্ষা হয়েছে। তার রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে।

অগস্ট ২০২১এ এই সমীক্ষাটি চালানো হয় ভারতের ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে। তারমধ্যে আছে আসাম, বিহার, চণ্ডীগড়, দিল্লী, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ।

রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ২৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী এই পর্বে নিয়মিত পড়াশুনো করেছে। ৩৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর পড়াশুনো চলেছে অনিয়মিতভাবে। আর ৩৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশুনোর সম্পূর্ণ বাইরে থেকেছে।

সমীক্ষকরা দেখেছেন ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী কয়েকটি শব্দও একটানা পড়তে পারছে না। অভিভাবকরাও জানিয়েছেন যে তাদের সন্তানদের অনেকেই এই সময় পড়া ও লেখার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে কবে আবার স্কুল খুলবে, তারা তাদের সন্তানদের আবার স্কুলে পাঠিয়ে পড়াশুনোর সুযোগ করে দিতে পারবেন। কারণ অনলাইন শিক্ষার সুযোগ তাদের সন্তানদের পক্ষে সেভাবে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এই সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে শহুরে এলাকায় ২৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের সুবিধে নিতে পেরেছে। গ্রামীণ এলাকায় পেরেছে মাত্র ৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। স্মার্টফোন না থাকাটা এর একটা কারণ কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। যে সমস্ত পরিবারের স্মার্টফোন আছে, শহুরে এলাকায় সেই সব ঘরের ছাত্রছাত্রীদের ৩১ শতাংশ নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করেছে। গ্রামীণ এলাকায় করেছে স্মার্টফোন থাকা পরিবারের মাত্র ১৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। এর কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে স্মার্টফোন মূলত পরিবারের রোজগেরে সদস্য সঙ্গে নিয়ে কাজে চলে যান, ফলে অনলাইন ক্লাসের সময় ছাত্রছাত্রীরা তা ব্যবহার করে উঠতে পারেনা। সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর নিজেদের স্মার্টফোন আছে। স্মার্টফোনের সমস্যা ছাড়াও অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে দুর্বল ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক কেনার ক্ষমতার অভাব। শহুরে এলাকার মাত্র ২৩ শতাংশ অভিভাবক মনে করেছেন তাদের সন্তানরা ঠিকমত অনলাইন ক্লাস করতে পেরেছে। গ্রামীণ এলাকায় এটা মাত্র ৮ শতাংশ।

যারা অনলাইন ক্লাস নিয়মিত বা মাঝেমাঝে করতে পেরেছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি ছাত্রছাত্রী সমীক্ষকদের জানিয়েছে যে তারা অনলাইন ক্লাস ভালোভাবে অনুসরণ করে পড়া বুঝে নিতে সক্ষম হয়নি। আর যারা অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি, তাদের অধিকাংশও নিজেরা বইপত্র খুলে এই পর্বে তেমন পড়াশুনো করেনি। যে সমস্ত পরিবার আর্থিকভাবে খানিকটা সক্ষম এবং সন্তানদের জন্য উপযুক্ত গৃহশিক্ষক বা শিক্ষিকার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, সেই সমস্ত পরিবারের সন্তানরাই এই পর্বে খানিকটা নিয়মিত ও ভালোভাবে পড়াশুনো করতে পেরেছে বলে সমীক্ষকরা জেনেছেন। দূরদর্শন ও টিভি চ্যানেল ভিত্তিক শিক্ষার প্রকল্প যে সব জায়গায় নেওয়া হয়েছিল, দেখা গেছে সেগুলি মোটের ওপর ব্যর্থই হয়েছে। শহুরে এলাকায় ৮ শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ১ শতাংশ টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষাদান কর্মসূচিতে প্রবেশ করেছে।

সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে যে শিক্ষক শিক্ষিকারা অনেক জায়গাতেই আন্তরিকভাবে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। স্কুলের বাইরে ছোট ছোট ক্লাস নেওয়া বা আকর্ষণীয় হতে পারে এমনভাবে ভিডিও তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। কেউ কেউ ছাত্রছাত্রীদের নেটপ্যাক নিজেরা ভরে দিয়েছেন, কেউ কেউ দিয়েছেন স্মার্টফোনও। কিন্তু যে বিশাল শিক্ষাসঙ্কট এই সময়ে তৈরি হয়েছে এই ধরনের আন্তরিক প্রচেষ্টাও সেভাবে তার কোনও সমাধান করতে পারেনি।

আর্থিক সঙ্কটের কারণে এইসময় অনেক অভিভাবক অভিভাবিকাই তাদের সন্তানদের বেসরকারী স্কুল থেকে সরকারি স্কুলে সরিয়ে নিয়ে এসেছেন। সমীক্ষকরা যাদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়েছেন, তাদের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা প্রায় ২৬ শতাংশ পরিবারে ঘটেছে — যা এক উল্লেখযোগ্য বদল।

মিড-ডে-মিল এইসময় সরবরাহ করা হয়নি। তার বদলে যে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে তা ছাত্রছাত্রী পিছু মাসের বরাদ্দের চেয়ে অনেকটাই কম থেকেছে অধিকাংশ জায়গায়। তবে সরকারি স্কুলে পড়ে এমন শিক্ষার্থীবৃন্দের অভিভাবকদের ৮০ শতাংশই জানিয়েছেন যে তারা এই পর্বে স্কুল থেকে কিছু পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী নিয়মিতভাবে পেয়েছেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ভাঁড়ার একেবারেই পূর্ণ হয়নি।

সমীক্ষা রিপোর্ট আমাদের জানাচ্ছে যে গ্রামীণ ভারতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ৪২ শতাংশ একটি শব্দও পড়তে পারেনি। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ভারতে ৭৭ শতাংশ আর শহর এলাকায় ৬৫ শতাংশ মাতৃভাষায় বড় বড় হরফে সহজ লেখার একটি অক্ষরও পড়তে সক্ষম হয়নি। তারা গতবছর লকডাউনের সময় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু সেভাবে কোনওদিন স্কুলেই যায়নি। এবার তারাই উঠে যাবে তৃতীয় শ্রেণিতে।
উচ্চ প্রাথমিক স্তরের ছবিটাও একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি ভালোভাবে রিডিং পড়তে সক্ষম নয়। শহর, গ্রাম সর্বত্রই পরিসংখ্যানটা একইরকম হতাশাজনক। লকডাউন শুরু হবার আগেও পরিস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক ছিলনা। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। ছাত্রছাত্রীরা যেটুকু যা শিখেছিল, তাও অনেকটাই ভুলে গেছে। অভিভাবকেরা জানিয়েছেন যে ছাত্রছাত্রীদের লিখন ও পঠন দক্ষতা এই লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে মারাত্মকভাবে কমেছে।

শুধুমাত্র পঠন ও লিখনের দক্ষতাই যে এই পর্বে কমেছে তা নয়। সার্বিকভাবেই শিক্ষার্থীদের নানা মানসিক ও আচরণগত সমস্যা বেড়েছে। অভিভাবক অভিভাবিকাদের অনেকেই জানিয়েছেন যে এই সময় তাদের ছেলেমেয়েরা উচ্ছৃঙ্খল, অমনোযোগী, অলস, মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে অভিভাবক অভিভাবিকারা স্কুল খোলার পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন। শহরাঞ্চলের অভিভাবকদের মধ্যে ৬ শতাংশ স্কুল খোলা নিয়ে সংশয়ী বা বিরোধী হলেও গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকদের ৯৭ শতাংশই স্কুল খোলার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাচিত্র নিয়ে এই সময়ে লার্নিং টুগেদার নামে একটি রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্ট থেকেও দেখা যাচ্ছে জঁ দ্রেজদের সমীক্ষার মতোই এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে অতিমারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা আলোচনা প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের পূর্বকথা’তে অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেছেন যে এই দেড়বছরে অসংখ্য ছেলেমেয়ের লেখাপড়া যেভাবে ব্যাহত বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছে, স্কুল খোলার পরেও সেই সমস্যা চলে যাবেনা; বরং স্কুল খোলার পরেই সঙ্কটের চেহারাটা কত ব্যাপ্ত ও গভীর, সেটা ভালোভাবে বোঝা যাবে।

স্কুল খোলার পর দেখা গেছে সমস্যাটা সত্যিই ভয়াবহ। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের সময় নানা বিতর্কের প্রেক্ষিতে এটা কিছুটা বুঝেছেন বৃহত্তর জনসমাজ। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল, বিশেষ করে তা যদি বোর্ড বা কাউন্সিলের পরীক্ষা হয় তাহলে নানা কারণে সেখানে ফলাফলকে বাস্তবের চেয়ে বেশ খানিকটা সাজিয়ে গুছিয়ে প্রকাশের আয়োজন থাকে। সঙ্কটের ছবিটা মূলত আছে প্রতিদিন ক্লাসে পড়ান যে মাস্টারমশাই দিদিমণিরা, তাদের কাছে। সেই ছবিটা আতঙ্কের, দুঃখের, চিন্তার।

দেখা যাচ্ছে অসংখ্য স্কুলের ক্লাস নাইন টেনের ছেলেমেয়েদের অনেকে ভালোভাবে বাংলায় লেখা পাঠ্যপুস্তক রিডিং পড়তে পারছে না। কেউ কেউ একটি দুটি অক্ষর বা কয়েকটি শব্দ পড়েই আটকে যাচ্ছে। ভালোভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটি বুঝবার চেষ্টা করে দেখা যাচ্ছে যে লকডাউনের দীর্ঘ সময় বাড়িতে বই নিয়ে পড়তে বসা একেবারেই হয় নি এদের। পড়াশুনোর দীর্ঘ অনভ্যাস স্কুল খোলার পরও তারা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। আরেকটি সমস্যা যা সর্বত্রই কমবেশি দেখা যাচ্ছে সেটা হল মারাত্মক মোবাইল আসক্তি। বিভিন্ন গেম ও ছোট চটুল ভিডিও তাদের মানসিক স্থিতিকে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। মাদকের নেশার মতো সেগুলি তাদের টানছে। ছাত্রদের অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন যে তারা অনেক দিনই স্কুলে যেতে চায় না, বাড়িতে বসে গেম খেলা ও লুকিয়ে মোবাইলে নানা জিনিস দেখাতেই তাদের আগ্রহ। জোর করে স্কুলে পাঠালেও বাড়িতে পৌঁছে কোনওরকমে ব্যাগপত্র রেখেই তারা মোবাইল নিয়ে বসে পড়ছে। এই সময়ে স্কুলে মোবাইল আনা এবং লুকিয়ে স্কুলের মধ্যেই তা নানাভাবে ব্যবহারের প্রবণতাও ভীষণভাবে বেড়েছে। যেহেতু এই সমস্যাটা একজন দুজনের নয়, ব্যাপক – তাই এর সমাধান কীভাবে হবে তা নিয়ে সরকারের তরফে বিশেষ চিন্তাভাবনা দরকার।

লকডাউনের পর আর্থিক সঙ্কটে গরীব পরিবারগুলি জেরবার। অনেক ছাত্রছাত্রীই তাদের অভিভাবককে হারিয়েছে বা অনেকের অভিভাবক অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। সংসার খরচ জোগাড়ের জন্য স্কুলে আসা বন্ধ করে ছাত্রছাত্রীদের অনেককে কাজে নামতে হয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রীই আবার পরিবারের আর্থিক সঙ্কটে বাবা মাকে তাদের কাজে সাহায্য করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদেরও স্কুলে আসা অনিয়মিত হয়ে গেছে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে আছে। আর্থিক সঙ্কট বাড়ায় অনেকের মাও কাজে বেরোচ্ছেন। মায়ের অনুপস্থিতিতে বাড়ির সাংসারিক কাজ সামলানোর জন্য মূলত ছাত্রীরা স্কুলে আসা কমাতে বাধ্য হচ্ছে। খাতায় কলমে ড্রপ আউট যতটা বেড়েছে তার চেয়েও অনেকগুণ বেড়েছে স্কুলে নামটুকু লিখিয়ে রেখে সম্পূর্ণ বা দীর্ঘ অনুপস্থিতি।

চলতি কাঠামো অনুসরণ করে চলে, কেবলমাত্র শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই বিপুল সমস্যার মোকাবিলা সম্ভব নয়। বিশেষ ধরনের সঙ্কটের মোকাবিলার জন্য দরকার বিশেষ পরিকল্পনা অনুসারে বিশেষ ধরনের কর্মসূচি আর তা রূপায়ণের বিশেষ ধরনের নানামাত্রিক উদ্যোগ। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন এবং পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই লড়াই চালাতে হবে। কাজটা করতে হবে একটা ‘মিশন মোড’এ — নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দায়িত্ব নিয়ে। এবং সেজন্য দরকারি হল ‘স্কুলের পাশাপাশি সমাজের অংশগ্রহণ’ (কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যালংসাইড ফর্মাল স্কুলিং)।

স্কুল খোলার পর সঙ্কটের ব্যাপক ও গভীর ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ যে অপরিহার্য, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। সরকার, শিক্ষক সমাজ বা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বৃহত্তর নাগরিক সমাজ, শিক্ষানুরাগী মহল, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থাকে সঙ্কট মোকাবিলার কাজে যুক্ত করা দরকার। সর্বাগ্রে দরকার সংশ্লিষ্ট সব মহল থেকে মতামত গ্রহণ করে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্তব্যকর্ম ও পথচলার রূপরেখাকে এলাকাগত পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচার করে সুনির্দিষ্ট করা। পথ চলতে চলতে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক অভিভাবিকা, শিক্ষক সমাজ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের থেকে নিয়মিত ফিডব্যাক গ্রহণ করা, নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে কিছু সময় অন্তর অন্তর পরিস্থিতির সমীক্ষা করানো দরকার ও প্রয়োজন পড়লে পথচলার রূপরেখাকে সেই অনুযায়ী কম বেশি অদল বদল করে নেওয়াও দরকার। সঙ্কট যথেষ্ট বড়। তাই তার মোকাবিলার জন্য ব্যাপক, গভীর, সৃজনশীল ও আন্তরিক নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া বিশেষভাবেই প্রয়োজন।