
ঘোরপ্যাঁচে প্রাণগোবিন্দ - শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বত্রিশতম আখ্যান
- 07 July, 2025
- লেখক: মনীষা নস্কর
জীবন বড্ড দামী। হঠাৎ হঠাৎ জীবনটার ওপর ভীষণরকম খাপ্পা হয়ে উঠে যারা নিজেকে নিকেশ করে ফেলতে চায়, তাদের মতো গবেট আর দুটি নেই। শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজে এর আগেও অনেক ভারী ভারী গুরুগম্ভীর জীবনদর্শনের পাঠ মজার মোড়কে খুঁজে পাওয়া গেছে। ৩২ নম্বর অদ্ভুতুড়েতে পাওয়া গেল সুইসাইডাল টেন্ডেন্সির বিপক্ষে এক অসাধারণ পেপ টক।
গল্প খুবই সাদামাটা। আলগোছে একটা এলেবেলে রহস্য তৈরির চেষ্টা হয়েছে। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর প্রাণগোবিন্দবাবু। রিটায়ার করে গ্রামে এসে থাকছেন। আলেভোলা মানুষ। নিজের পড়াশুনোর বাইরে জগৎটাকে তেমন করে লক্ষ্যই করেন না। ভারী অন্যমনস্ক মানুষ। ভোলাবাবুকে তপনবাবু বলে ভুল করেন, স্নান করতে বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে ঠাকুরঘরে ঢুকে সাবান খুঁজে না পেয়ে চোঁচামেচি করেন, ধুতি পরতে গিয়ে কতদিন গিন্নির শাড়ি দিব্যি কাছাকোঁচা দিয়ে পরে বেরিয়ে গিয়ে কেলেঙ্কারি করেছেন। গিন্নিটি রাশভারি, একাই সারাটাজীবন সংসারটাকে সামলে নিয়েছেন। এই প্রাণগোবিন্দবাবুর জীবনেই হঠাৎ ঘনিয়ে এল রহস্য। সেই সঙ্গে ঘরে বাইরে চূড়ান্ত অপমান।
হয়েছে কি, সে দিন সক্কাল সক্কাল প্রভঞ্জন সূত্রধর এসে হাজির প্রাণগোবিন্দবাবুর বাড়ি। প্রভঞ্জন সূত্রধর হল এককালের ডাকাত গোকুল বিশ্বাসের খাস লোক। এতাল বেতাল অনেক কথা বলে তিনি সটান পঞ্চাশহাজার টাকা বাড়িয়ে ধরলেন প্রাণগোবিন্দবাবুর দিকে। আগের দিন রাতে নাকি কেউ গোকুল বিশ্বাসের আদরের গরু গৌরীকে কিডন্যাপ করেছে এবং গোকুল বিশ্বাসকে বলে গেছে সকাল সকাল পঞ্চাশহাজার টাকা মুক্তিপণ হিসেবে পৌঁছে দিতে হবে প্রাণগোবিন্দবাবুর বাড়ি। প্রাণগোবিন্দবাবু দেখলেন তাঁর গোয়ালে সত্যি সত্যিই গৌরী মজুত আছে। টাকা ধরিয়ে দিয়ে গৌরীকে নিয়ে প্রভঞ্জন সূত্রধর বিদেয় হল।
গ্রামেগঞ্জে সবাই সবার হাঁড়ির খবর রাখে। রিটায়ার্ড প্রফেসর আসলে একজন গরুচোর, সেই কথাটি সক্কলে জেনে ফেলল। ঘরে প্রাণগোবিন্দবাবুর স্ত্রী বিস্তর বকাঝকা করলেন। নিমেষের মধ্যে খবর ছড়িয়ে গেছে হাটে বাজারে। সক্কলে ঠেস দিয়ে কথা শোনাচ্ছে আচ্ছা রকম। কেউ বলছেন অত টাকা যখন কামিয়েই ফেলেছেন প্রাণগোবিন্দবাবু, এইবার স্যাকরার কাছে বউয়ের জন্য গয়না গড়াতে দিন। মাছওলা বলছে, ‘কর্তা, পাঁচশো টাকা কিলোর দেড় কিলো বাগদা চিংড়ি আজ আপনার জন্যই আলাদা করে রেখে দিয়েছি! আর কার ট্যাঁকের এত জোর আছে যে, ওই কুলীন মাছ কিনবে?’
এতদিন ধরে গড়ে তোলা একজন সৎ শিক্ষকের ইমেজ ধূলিসাৎ হতে মিনিটখানেকও লাগল না। অপমানে, ক্ষোভে, ঘেন্নায় প্রাণগোবিন্দবাবু সুইসাইড করবেন বলে ঠিক করে ফেললেন। গলায় দড়ি দেবার জন্য দড়ি কিনতে গেছেন, দোকানদার হেসে বলল, ‘একটু বেশি করেই নিয়ে যান না! অনেক গোরু বাঁধতে হবে তো?’ শীর্ষেন্দু যেমন করে ঘটনাটা বলেছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহত্ব তেমন স্পষ্ট নয়। এ লেখা আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীর পাতাতেই প্রথমবার বেরিয়েছিল। হয়তো খুদে পাঠকদের কথা ভেবেই একটু বেশিরকম হালকা চালেই লিখেছিলেন।
প্রাণগোবিন্দবাবু দড়ি হাতে পৌঁছে গেছেন ময়নার জঙ্গলে। সহজে ওঠা যায় এমন একখানা গাছও খুঁজে বের করেছেন। কসরত করে উঠেও পড়লেন গাছে। সুন্দর করে ফাঁস বেঁধে ঝুলে পড়তে যাবেন, এমন সময় খুকখুক করে হেসে কেউ বলে উঠল— “ হয়নি হে, হয়নি। ও কি একটা ফাঁস হল বাপু? ঝুলতে গেলেই যে ফসকো গেরো আলগা হয়ে যাবে।”
প্রাণগোবিন্দ শিউরে উঠে চারদিকে তাকাতে লাগলেন। দর্শনশাস্ত্রে ভূত বা ভগবানের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না। তিনিও মানেন না; কিন্তু না মানলেও ভয় করেন। শব্দটা উপর দিক থেকেই আসছে মনে হল। প্রাণগোবিন্দ খুব ঠাহর করে দেখলেন। ডালপালার ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় দেখতে পেলেন, আরও আট-দশ ফুট উপরে গাছের ডালে একজন বুড়ো মানুষ বসে-বসে তাঁকে জুলজুল করে দেখছে। প্রাণগোবিন্দ ভয়ে মূর্ছাই যাচ্ছিলেন, কিন্তু পড়ে যাবেন বলে ভয়ে সেটা সামলে নিলেন। তবে শরীরে রীতিমতো হিমশীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে, হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপছে।
কোনওক্রমে কাঁপা গলায় তিনি বললেন, আ-আপনি কে? ভূ-ভূত নাকি?
লোকটা বলল, তা ভূতও বলতে পারে। এক হিসেবে ভূত ছাড়া আর কী? ভূতপূর্ব তো বটেই। তবে এখনও মরিনি, এটুকুই যা তফাত।
মরেননি! তা হলে কি আপনি জ্যান্ত মানুষ?
লোকটা মাথা নেড়ে বলল, জ্যান্তই কি আর বলা যায়! তবে আধমরা বলতে পার!
ঘাবড়ে গেলেও প্রাণগোবিন্দর মনে হচ্ছিল, লোকটা পাগলটাগল হলেও ভূতটুত নয় বোধ হয়। গলাটা এখনও কাঁপছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এখানে কী করছেন?
বসে-বসে তোমার কীর্তি দেখছি। তুমি তো নিতান্তই আনাড়ি দেখছি হে। একটা সোজা গাছে উঠতে তিনবার হাত-পা হড়কে পড়ে যাচ্ছিলো! তারপর ফাঁসের দড়িটা যা বাঁধলে, দেখে হেসে বাঁচি না। ওই ফাঁস গলায় দিয়ে ঝুলবে তো! ঝুললেই গেরো খুলে সোজা নীচে গিয়ে পড়বে ধপাস করে। তাতে অক্কা পেতেও পার, আবার না-ও পেতে পার।
প্রাণগোবিন্দ এবার একটু ধাতস্থ হলেন। নাঃ, লোকটা আর যাই হাকে, প্রেতাত্মাটাত্মা নয়। তিনি গলাখাঁকারি দিয়ে বললেন, আহা, এসব কি আর কখনও করেছি নাকি মশাই? অভ্যেস করতে করতে শিখে যাব।
লোকটা একটু খিঁচিয়ে উঠে বলল, আর শিখেছ! শিখে-পড়ে আটঘাট বেঁধে তবে এসব কাজে নামতে হয়। হুট বললেই কি মরা যায় নাকি? দিনক্ষণ দেখতে হয়। তারপর নিজের শ্রাদ্ধশান্তি সব আগাম সেরে নিতে হয়। তারপর শুভদিন দেখে স্নানটান করে ভাল-মন্দ বেশ পেটপুরে খেয়ে পান চিবোতে-চিবোতে পট্টবস্ত্র পরে এসে শান্তিমনে হাসতে-হাসতে তবে মরে সুখ। বুঝলে?
প্রাণগোবিন্দর মনে পড়ল, সকাল থেকে তিনি কিছুই খাননি। পেট চুঁই চুঁই করছে। তেষ্টায় বুক পর্যন্ত শুকিয়ে আছে। মরার উত্তেজনায় এসব শারীরিক বোধ লোপাট হয়েছিল। এবার একটু ভাবিত হয়ে বললেন, বোধ হয় আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনি তো বেশ জ্ঞানী লোক।
আরে, সেই জন্যই তো সারাদিন গাছে উঠে বসে থাকি। গাছে উঠলে জ্ঞান বাড়ে, বুঝেছ?”
‘হেমলক সোসাইটি’ কথা মনে পড়ে? ২০১২ সাল নাগাদ সিনেমাটি রিলিজ করেছিল। সুইসাইড বিরোধী অসাধারণ একটা জীবনদর্শনের খোঁজ দিয়েছিল ছবিটি। তার বহু আগে নব্বইয়ের দশকে শীর্ষেন্দু খানিক একই কায়দায় লিখে ফেলেছিলেন প্রায় সেই কথাগুলিই।
গল্পের এই লোকটি নিজেই নাকি একদিন সুইসাইড করতে এসেছিল এই জঙ্গলে। সে হল বাদাম ঘোষ।
“এই তোমার মতোই একদিন বারো বছর আগে গলায় দড়ি দিতে এই গাছে এসে উঠে বসেছিলুম। আটঘাট বেঁধেই এসেছিলুম। দিনক্ষণ দেখে, গয়ায় গিয়ে নিজের শ্রাদ্ধ-পিণ্ডদান সব সেরে এসে, একদিন স্নান করে ইলিশ মাছ আর কচ্ছপের মাংস দিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে, পান মুখে দিয়ে, নতুন ধুতি আর গেঞ্জি পরে, দুর্গানাম স্মরণ করতে-করতে এসে গাছে উঠে মজবুত করে দড়ি বেঁধে মহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছিলুম। ঠিক তখনই, কী বলব রে ভাই, আকাশ থেকে যেন আমার মাথায় জ্ঞানের বৃষ্টি পড়তে লাগল।
কত নতুন-নতুন ভাবনা-চিন্তা আসতে লাগল। তার লেখাজোখা নেই। মনটা যেন উড়ে-উড়ে বেড়াতে লাগল। ভারী ফুর্তির ভাব। পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নিয়ে বুকটাও যেন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিজেই বোঝালুম, তুই তো নিজেকে সৃষ্টি করিসনি। এখন যদি গলায় দড়ি দিস, তা হলে যে তোকে সৃষ্টি করেছে, তার সঙ্গে বেইমানি করা হবে না? বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না? তাকে কি ব্যথা দেওয়া হবে না? আর তাকেই যদি ব্যথা দিস, তা হলে মরেই রেহাই পাবি ভেবেছিস? যখন তোকে শিয়াল-শকুন ছিঁড়ে খাবে, তখন হাড়ে-হাড়ে টের পাবি রে পাপিষ্ঠ!
প্রাণগোবিন্দ মুগ্ধ হয়ে মাথা নোড়ে-নেড়ে বললেন, বাঃ, বাঃ, এ তো খুব ভাল কথা। তা তোমার পুঁথি-পুস্তকে আছে এসব কথা?
আজ্ঞে না, নেই। তারপর কী হ'ল?
কী বলব রে ভাই, সারাজীবন যেসব কথা একবারের জন্যও মাথায় আসেনি, সেসব কথা দিব্যি আকাশ-বাতাস থেকে এসে শাঁ-শাঁ করে নাক, কান, মুখ দিয়ে ঢুকে মগজে সেঁধোতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মাথাটা যেন জ্ঞানে একেবারে টুইটম্বর হয়ে উঠল। মরা তো হলই না, বরং মাথাভর্তি জ্ঞান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলুম! সেই থেকে ঠিক করলুম, সারাদিন গাছে উঠে বসে থাকব। যতদিন বাঁচি, রোজ যত পারি জ্ঞান আহরণ করে যাব।
আপনি কি গাছেই থাকেন?
তা একরকম তাই বলতে পার। সকালে চাট্টি পান্তা খেয়ে সোজা এসে গাছে উঠে পড়ি। সঙ্গে চিঁড়ে, মুড়ি, জল সব নিয়ে আসি। এখানে একখানা মাচানের মতো করে নিয়েছি। দিব্যি থাকি। এখানেই দিবানিদ্রা সেরে নিই।”
লোকটির মাথায় কিঞ্চিৎ ছিটের আবির্ভাব হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সুইসাইডের মতো ভয়ানক কাজটি তো সে করেনি। প্রাণগোবিন্দবাবুকেও করতে দেয়নি। অদ্ভুতুড়ে সিরিজে ছিটিয়াল মানুষজনের ছড়াছড়ি, কিন্তু ময়নার জঙ্গলের এই লোকটির আলাদা করে একটা হ্যাটস অফ প্রাপ্য।
এরপর এই লোকটিই প্রাণগোবিন্দবাবুর কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব নেয়। যে কথাগুলো প্রাণগোবিন্দবাবু কাউকে বলতে পারছিলেন না, মনের মধ্যে গুমরে মরছিলেন, লোকটির সাথে একটি একটি করে সব কথা শেয়ার করে নিলেন। চেপে রাখা দুঃখ ভাগ করে নিলে যন্ত্রণা অনেক কম যায়। প্রাণগোবিন্দবাবুর দুঃখের ভারটা যেই কমল, তিনি বাস্তববুদ্ধি দিয়ে ব্যাপারটা তলিয়ে ভাবতে বসলেন। কেন কেউ গরু চুরির দোষ চাপালো তাঁর ওপর? তাঁর সুনাম নষ্ট করে কার কী লাভ?
লোকটি অনেক খবরাখবরও রাখে। সে গোকুল বিশ্বাসকে ভালোমতো চেনে। সাফ সাফ জানিয়ে দিল, ‘চরণডাঙার গোকুল বিশ্বাসের নামে গোটা পরগনা কাঁপে। এক সময় দিনে দুপুরে মানুষের গলা নামিয়ে দিত। রামদা চালাত বনবন করে। লাঠি, সড়কি, তলোয়ারে পাকা হাত। বন্দুকের টিপ ছিল অব্যর্থ। গোকুল ডাকাতের মাথার দাম এক সময় লাখ টাকায় উঠেছিল। তবে সেসব এখন ছেড়েছুড়ে দিয়ে কাজকারবারে মন দিয়েছে। ধান-চালের কল, গুড়ের কারখানা, তেলকল কত কী ফেঁদে বসেছে। তার ডাকাতির স্যাঙাতরাই এখন তার কর্মচারী। গোকুলকে যদি চটিয়ে থাকে, তা হলে আর তোমার মারার ভাবনা নেই। কষ্ট করে গাছ বেয়ে, দড়ি খাটিয়ে, ফাঁস লটকে মরতে যাবে কোন দুঃখে? হাসতে-হাসতে বাড়ি চলে যাও। গোকুল বিশ্বাসই তোমার সব ব্যবস্থা করে দেবে। ভাল করে কিছু টের পাওয়ার আগেই দেখবে দাঁত ছিরকুটে মরে পড়ে আছো। তাতে একটা সুবিধেও হবে হে। আত্মঘাতী হলে নাকি খুব পাপ হয়। খুন হলে সেই পাপের হাত থেকেও বেঁচে যাবে।’
লোকটার দেওয়া মুড়ি-গুড় খেয়ে প্রাণগোবিন্দবাবু ঠান্ডা মাথায় আরও ভাবলেন। বিপদ যদি আসে, তবে হয়তো তাঁর পরিবারও রেহাই পাবে না। গোকুলের চরেরা নিশ্চয়ই টাকা ফেরত নিতে এসে গরু কিডন্যাপিংয়ের বদলাও নিয়ে যাবে। তাঁর দুটি ফুটফুটে নাতি নাতনি আসবে বাড়িতে, হয়তো বা তাদের ওপরেই চড়াও হবে গোকুলের দল।
“দাড়ি-গোঁফের ফাঁক দিয়ে একটু বিচক্ষণ হাসি হেসে লোকটা বলল, মরা যে তোমার বরাতে নেই, তা তোমার রকম দেখেই আঁচ করেছিলুম। আমি বলি কী, মরার আগে একটু ভাল করে বেঁচে উঠলে তবে মরার একটা মানে হয়। আধমরাদের তো বাঁচা-মরার মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। কী বলো হে?
অতি যথার্থ কথা। আপনি জ্ঞানী লোক।
গাছে ওঠা অভ্যেস করো, তুমিও জ্ঞানী হবে। তা যা বলছিলাম, যথার্থ মরতে হলে আগে যথার্থ বেঁচে ওঠা চাই। আধমরা ভাবটা ঝেড়ে ফেলে এবার একটু বেঁচে ওঠে তো বাপু!”
সেই কবেই রবিঠাকুর বলে গিয়েছিলেন, “ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,/ আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।”
শীর্ষেন্দুর গল্প এগোয়। এইবার প্রাণগোবিন্দবাবুর দুই নাতি নাতনির কথা আসে। পিউ ও পিয়াল। তারা বাসে করে শহর থেকে নসিগঞ্জ গ্রামে দাদুর বাড়ি বেড়াতে আসছে। এই প্রথমবার দেখতে পাচ্ছি, অদ্ভুতুড়ে সিরিজের কচিকাঁচাদের মায়েরা আর হাউসওয়াইফ নন। পিউ পিয়ালের বাবা মা দুজনেই খুব ব্যস্ত ডাক্তার। তারা ভাইবোন মানুষ হচ্ছে আয়ার কাছে। এর আগের লেখা কোনও অদ্ভুতুড়েতে এমনটি দেখা যায়নি। ১৪ নম্বর অদ্ভুতুড়ে ‘বনি’তে অবশ্য বনির মা চাকরি করতেন, কিন্তু বনির জন্মের পর তিনি চাকরি ছেড়ে বনির দেখাশোনা করতেন। সময়টা এগিয়েছে। ১৯৯৫-৯৬ সাল এটা। পিউ পিয়ালের মতো অনেক খুদেই তখন মা’কে বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখছে। অভ্যস্ত হচ্ছে নতুন রকম পারিবারিক কাঠামোয়। স্রেফ বাবা চাকরি করবেন, ব্যবসা করবেন, বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকবেন আর মায়েরা থাকবেন ঘরে— এই গোটা ব্যাপারটাই তখন বদলে যেতে শুরু করেছিল। তবে মা ছাড়া ছোট বাচ্চারা কতটা ‘মানুষ’ হবে, তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তখনও উঠত, আজও ওঠে। গল্পেও একটু আঁচ রয়েছে তার—
“শহরে বাবুপাড়ায় তারা যে বাড়িতে থাকে, সেই বাড়িটা কেমন যেন গভীর আর রাগী চেহারার বাড়ি। ও বাড়ির হাওয়ায় মনখারাপের জীবাণু ঘুরে বেড়ায়। না হবেই বা কেন! তাদের মা-বাবা দু'জনেই ভারী ব্যস্ত ডাক্তার। সারাদিন তারা বাড়িতে থাকেনই না। যখন থাকেন, তখন দু'জনের মধ্যে কেবল রোগ আর ওষুধ নিয়ে কথা হয়! হাসিঠাট্টা, মজা কিছু নেই। নসিগঞ্জের বাড়িটা ঠিক উলটো। এ বাড়িটা যেন সব সময় হাসছে, খুশি আর আনন্দে ডগমগ করছে। খোলামেলা আর হাসিখুশি এ বাড়িটায় ঢুকলেই পিউ আর পিয়ালের মন ভাল হয়ে যায়। ঠিক যেন রূপকথার বাড়ি। এ বাড়িতে তার আনমনা ভুলো মনের দাদু আর ভারী নরম মনের ঠাকুরমা থাকেন। এ বাড়ির বাতাসে যেন মজা বিজবিজ করছে।”
বাসে একজন সুন্দর দেখতে ম্যাজিশিয়ান ওঠে। ম্যাজিক দেখানোর শেষে লোকটি সবাইকে কিছুমিছু লজেন্স দেয়, কিন্তু পিউ পিয়ালকে দেয় সুন্দর গন্ধওয়ালা দামী বড়সড় বিলিতি চকলেট বার। তারা বাইরের লোকের দেওয়া কোনও কিছু খায় না, পিয়াল ছোট বলে পিয়ালের চকলেট আয়া শান্তিমাসির কাছে থাকে। বছর আটেকের পিউ তার চেয়ে একটু বড়, তাই ওর ভাগের চকলেট ছিল ওর নিজের কাছেই। চকলেটের মোড়কটা তার অপরিচিত। পেছনের লেবেল দেখে বোঝা যায় ওটি বিদেশে তৈরি। চকলেটের ভেতরে রাখা ছিল ছোট্ট একটা চিরকুট। চিরকুটে লেখা— ‘'তোমাদের খুব বিপদ আসছে, সাবধান! বিক্রমজিৎকে মনে রেখো!' ব্যস, আর কিছু নেই।”
কে বিক্রমজিৎ, কীসের বিপদ কিছুই পিউ জানে না। সে শুধু বুঝেছে দাদু অনেকক্ষণ বাড়ি ফেরেননি, ঠাকুমা তাই বড্ড রেগে আছেন। গোটা বাড়িতেই আজ দুঃখ দুঃখ হাওয়া।
গল্পের আরেকজন উল্লেখযোগ্য চরিত্রকে এইবারে দেখা যায়। গোরাং দাস। সে ভিক্ষে করে বটে, তবে তার রকমসকম মোটেই ভিখিরি গোছের নয়। অনেকে বলে, সে স্পাই। কেউ বা বলে শিবের অবতার। কেউ আবার সন্দেহ করে সে বুঝি ডাকাতদলের ইনফর্মার। এ ধরনের চরিত্ররা অদ্ভুতুড়ে সিরিজে এর আগেও এসেছে। এরা বেশ চালাকচতুর হয়, অনেকরকম খবরাখবর রাখে।
পিউ তাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি ভিক্ষে করো কেন গোরাংদা? তোমাকে দেখে তো একটুও ভিখিরি বলে মনে হয় না!
মাথাটাথা চুলকে গোৱাং বলেছিল, কথাটা কী জানো দিদি, বললে হয়তো বিশ্বাস করবে না! ছেলেবেলা থেকেই আমার ভিখিরি হওয়ার শখ। স্কুলের পরীক্ষায় একবার রচনা এসেছিল 'বড় হইয়া তুমি কী হইতে চাও?' আমি খুব ফলাও করে লিখেছিলুম, 'বড় হইয়া আমি ভিখারি হইব।' তাতে অবশ্য মাস্টারমশাই গোল্লা দিয়েছিল।
এ মা! তুমি ভিখিরি হতে চাইলে কেন?
ভিখিরি হওয়ার যে অনেক সুবিধে দিদি। সারাদিন ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি ঘুরে বেড়ানো যায়। কাজকর্ম করতে হয় না। কারও হুকুম তামিল করতে হয় না। বিনা মেহনতে রোজগারপাতিও হয়।
আচ্ছা, লোকে যে বলে, তুমি নাকি স্পাই!
চোখ বড়-বড় করে গলা নামিয়ে গোরাং বলল, সেকথাও মিথ্যে নয় দিদি। আমি গুপ্তচরও বটে। অনেকের অনেক হাড়ির খবর আমার ঝুলিতে আছে।
ধেৎ! তোমাকে স্পাই বলে মনেই হয় না!
আহা, তুমি বুঝতে পারছ না। স্পাইকে স্পাই বলে চেনা গেলে সে আবার কীসের স্পাই? তাই আসল স্পাইকে কখনও স্পাই বলে মনেই হবে না তোমার!
কিন্তু তোমাকে যে ভিখিরি বলেও মনে হয় না গোরাংদা। তোমার জামাকাপড় কেমন পরিস্কার, চুল কেমন আঁচড়ানো, মনে হয় দাঁতও মাজো, খোঁড়াও নও, কানাও নও, নুলোও নও। তবে তুমি কেমন ভিখিরি?
আহা, ভিখিরি কি একরকম? কানা ভিখিরি, খোঁড়া ভিখিরি, ঘেয়ো ভিখিরি যেমন আছে, তেমনই গায়ক ভিখিরি, সাধু ভিখিরি, বাউল ভিখিড়ি, ফকির ভিখিরিও আছে। আবার চালাক ভিখিরি, বোকা ভিখিরি, আসল ভিখিরি, নকল ভিখিরি। ভিখিরির কি শেষ আছে? আমি তো একটা বই লিখব বলে ঠিক করে রেখেছি, ভিখারি, কাহাকে বলে ও কয় প্রকার'।
তুমি তা হলে কেমন ভিখিরি গোরাংদা?
গোরাং মাথা চুলকে বলেছিল, এই তো মুশকিলে ফেললে দিদি, নিজের মুখে কি আর নিজের কথা বলা যায়?”
গোরাং দাস পিউয়ের পাওয়া চিরকুটটা দেখল। শান্তমুখে শুনল বাসের অচেনা ম্যাজিশিয়ানের কথাও।
এ গল্প যেন টুকরো টুকরো জিগ স পাজলের মতো। একসাথে অনেকগুলো ঘটনা ইতিউতি ঘটে চলেছে।
গোরাং পিউয়ের থেকে গল্পের মোড় ঘুরে গিয়ে পড়ে বটুকবাবুর বাড়ি। সে বাড়ি নাকি ভারী রহস্যজনক। ভেতরে কী হয়, কেউ জানে না। বটুকবাবু একলাটি মাছ ধরেন বাড়ির পুকুরে, মাছ ধরে ছেড়েও দেন আবার জলে। পোষা কুকুরটি ডাকে না, কিন্তু ভয়ানক হিংস্র ও দারুণ ট্রেনড। পাড়ার ডাকাবুকো ছেলে টক্কেশ্বর মাছ চুরি করতে এসে দেখে গেছে বটুকবাবু তাঁর কুকুরকে অদ্ভুত একটি ট্রেনিং দেন। একটি ছোট বাচ্চা মেয়ের ম্যানিকুইন রেখে কুকুরকে সিগন্যাল দেন তার গলার নলি ছিঁড়ে ফেলার। টক্কেশ্বর কথাগুলো বলে গোরাং দাসকে। গোরাং বোঝে, কিছু একটা বিপদ ঘনিয়ে আসছে।
এরপর প্রাণগোবিন্দবাবুর বাড়িতে আসে তাঁরই হাতে চিঠি। প্রাণগোবিন্দবাবু যে বাংলা লিখতে পারেন না, চিঠির লেখক সেইটি জানতো না। চিঠিতে লেখা ছিল, তিনি নাকি আরও মোটা টাকা আদায় করতে যাচ্ছেন, ফিরবেন না। বাড়ির লোক প্রথমে ধরেই নিল, বাবু গরু চুরি করতে যাচ্ছেন। কিন্তু চিঠি যে দিতে এসেছিল, সে বলল প্রাণগোবিন্দবাবু বীরপুরের দিকে যাচ্ছেন।
এবার ছাদে পিউয়ের কাছে উড়ে এল ঘুড়ি। ঘুড়িতে লেখা, বীরপুরের মেলায় গেলেই তার দাদুকে ফেরত পাবে। চকলেটের চিরকুট, চিঠি, ঘুড়ি— সব হাতের লেখাই এক ছাঁদের!
ওদিকে গোকুল বিশ্বাসের দলও বসে নেই। আর যাই হোক, তারা বোধবুদ্ধিশূন্য ক্রিমিনাল নয়। তারা নিজেদের মতো তদন্ত করে ঠিকই বুঝে ফেলেছে, বটুকবাবুই লোক লাগিয়ে গরু চুরি করিয়ে প্রাণগোবিন্দবাবুর ওপর গরুচোরের বদনাম দিয়েছেন। কিন্তু কেন?
প্রাণগোবিন্দবাবুও নিজের কাজ করে চলেছেন। বাদাম ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন গোকুল বিশ্বাসের বাড়ি। তবে এইখানে এসে গল্প যেন একটু অগোছালো। পড়ে মনে হয়, হয়তো বেশ কিছু অংশ ছেঁটে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন, প্রাণগোবিন্দবাবু এসেছেন গোকুল বিশ্বাসের কাছে, অতিশয় আত্মবিশ্বাসী হয়ে একটা নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিয়েছেন যা শুনে গোকুল বিশ্বাস তাঁকে সাহায্য করতে রাজী হয়ে গেছেন। অথচ সেই ভাষণটি গল্পে মিসিং। মজার ভাষণ লেখার সুযোগ পেলে তো শীর্ষেন্দু সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়েন না। তবে কি এই ভাষণটি আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীতে স্থান সংকুলানের কারণে ছাঁটাই হয়েছিল?
রবিঠাকুরের কবিতার ছোট্ট একটুকরো রেফারেন্স তো ছিলই। সেই যে ‘আধমরাদের বাঁচা’! আছে সুকুমার রায়ের আবোলতাবোলের রেফারেন্স-ও। প্রাণগোবিন্দবাবু খুশি হয়ে ফিরছেন গোকুল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে। দেখা হয়েছে গোরাং দাসের সাথে।
প্রাণগোবিন্দ গোরাং দাসের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ওরে গোরাং, আমি আর সেই আগের কর্তাবাবু নেই রে। নিজেকে আমি নিজেই চিনতে পারছি না।
গোরাং মাথা চুলকোতে-চুলকোতে বলল, তা হলে যে ভারী মুশকিল হবে কর্তবাবু! বড্ড ভজঘট লেগে যাবে যে! আপনাকে যারা এতকাল মাপজোপ করে একটা আঁচ করে রেখেছিল, তাদের সব হিসেবনিকেশ উলটে যাবে না তো!
সেসব জানি না রে গোরাং। শুধু বলতে ইচ্ছে করছে 'আজকে আমার মনের মাঝে ধাইধপাধপ তবলা বাজে।'
এই লাইনটি সুকুমার রায়ের আবোলতাবোলের দু’নম্বর ছড়ায় ছিল— ‘ছুটলে কথা থামায় কে? আজকে ঠেকায় আমায় কে?
আজকে আমার মনের মাঝে ধাঁই ধপাধপ্ তবলা বাজে’
গোরাং দাস, বাদাম ঘোষ আর প্রাণগোবিন্দবাবু কথা বলতে থাকেন। রহস্যের জট খানিক খোলে। বাইশ বছর আগে বটুক সামন্ত নামে প্রাণগোবিন্দবাবুর এক বেয়াদব ছাত্র ছিল। অত্যন্ত রগচটা, মারমুখো ছেলে ছিল বটুক। দুমদাম রেগে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মারপিট করত। একবার সে তার এক ক্লাসমেটকে সামান্য কারণে এমন মেরেছিল যে, ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। প্রাণগোবিন্দবাবু তখন কলেজের প্রিন্সিপাল, বাধ্য হয়ে তাকে কলেজ থেকে তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাতে রেগে গিয়ে সে রাত্রিবেলা কলেজ বিল্ডিংয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে তাকে রাস্টিকেট করতে হয়। এই সেই বটুক সামন্ত! সেও নাকি ম্যাজিক দেখাত।
বীরপুরে মেলা বসেছে। পিউরা সবাই প্রাণগোবিন্দবাবুকে খুঁজতে মেলায় ঢুকে পড়েছে। মেলায় হাজির রয়েছে বটুক ম্যাজিশিয়ান, সঙ্গে সেই দুর্ধর্ষ কুকুর। এতবছর বাদে সে প্রতিশোধ নিতে চায় প্রাণগোবিন্দবাবুর ওপর। গল্পের চরিত্রদের নিয়ে এই এক মুশকিল। চটজলদি হাতেগরম প্রতিশোধ কেউ নিতে চায় না। বাইশটা বছর অপেক্ষা করল বটুক। কলেজ থেকে রাস্টিকেট হবার অপমানের জ্বলুনি সে মেটাতে চায় প্রিন্সিপালের নামে গরুচুরির অপবাদ দিয়ে। তাতেও তার শান্তি নেই। বুড়ো মানুষটার আটবছরের নাতনিটাকে সে কুকুর দিয়ে খাওয়াতে চায়। বিদেশি চকলেটের গন্ধ কুকুর চেনে। বাসে দেওয়া চকলেটের গন্ধ পিউয়ের হাতে তখনও লেগে ছিল। প্ল্যানমতো কুকুর লেলিয়ে দেয় সে পিউয়ের ওপর। টক্কেশ্বর তক্কে তক্কে ছিল। বটুকের বাড়ি মাছচুরি করতে গিয়ে সে চিনে ফেলেছিল কোন শিস শুনলে কুকুর অ্যাটাক করতে দৌড়ায় আর কোন শিস শুনলে সে ফেরত চলে যায়। টক্কেশ্বরের ফেরত যাবার শিস শুনে কুকুর আর কামড়ায় না পিউকে।
“পিউ দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, দাদু, বিক্রমজিৎ কি খারাপ লোক? আমার যে তাকে খুব ভাল লাগে! কী সুন্দর ম্যাজিক দেখায়!
হ্যাঁ দিদিভাই। তার গুণও অনেক। ওই বুদ্ধি কাজে লাগালে সে অনেক ভাল কাজও করতে পারত। কিন্তু অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। বাপ-ঠাকুরদার অঢেল পয়সা পেয়ে সে কর্মবিমুখ হয়ে গিয়েছিল, আর তার প্রচণ্ড রাগও ছিল তার বড় শত্রু।
ঠিক এই সময় তাঁবুর পরদা সরিয়ে দরোগাবাবু এসে ঢুকলেন। প্রাণগোবিন্দবাবুকে প্রণাম করে বললেন, সরি মামাবাবু, কুকুরটাকে গুলি করে মারতে হয়েছে। কিছু করার ছিল না। বটুককে অ্যারেস্ট করার সময় কুকুরটা ভীষণ ভায়োলেন্ট হয়ে ওঠে। কুকুরটাকে মারতেই বটুকবাবু কোলাপস করেন।
প্রাণগোবিন্দ বললেন, খুবই দুঃখের কথা, কুকুরটাকে সে খুবই ভালবাসত, যেমন ওই গোকুল বিশ্বাস তার গোরুটাকে ভালবাসে, যেমন আমি আমার এই নাতনিটাকে ভালবাসি। এসব ভালবাসার গল্পের সঙ্গে যখন ঘৃণা-বিদ্বেষ এসে মিশে যায়, তখনই হয় বিপত্তি। নইলে ভালবাসার মতো এমন শুদ্ধ জিনিস আর কী আছে বলো!”
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ এমন মন কেমন করা কথাগুলোর জন্যই বড় বেশি মায়াবী। এ গল্পে যদিও সেই অর্থে কোনও ‘অদ্ভুতুড়ে’ কারবার ছিল না, ভূতও এবার গরহাজির ছিল, ছোটখাটো একটা রহস্যগল্প হিসেবেই সিরিজে ঢুকে পড়েছে। আর ওই যে.. মজার মোড়কে সিরিয়াস কথাগুলো বলে দেওয়া, এ জিনিসের তুলনা নেই।