না-শরীরী কাহন - নিকোলাই গোগোলের ‘ডেড সোলস' এর নাট্যরূপ - ৩

নাটকের চরিত্রাবলি :

–--------------------------------

   চিচিকভ

   জোতদার - চিচিকভের মক্কেল

   পেত্রুশকা - চিচিকভের চাকর

    রাজ্য মর্টগেজ ব্যাঙ্কের সেক্রেটারি

 প্রাদেশিক কর্তাব্যক্তিগণ:

–----------------------------------

   দূরস্থ প্রদেশের গভর্নর

   গভর্নরের চাকর

   গভর্নরের স্ত্রী

   গভর্নরের মেয়ে

   ইভান আন্দ্রিয়েভিচ, পোস্টমাস্টার

   ইভান গ্রিগোরেভিচ, বিচারালয় সমূহের প্রেসিডেন্ট

   আনা গ্রিগরিয়েভনা, গ্রিগোরেভিচের স্ত্রী

   শাশা, তার চাকর

   অ্যালেকসি ইভানোভিচ, পুলিশপ্রধান

   একজন সাধারণ পুলিশ কনসটেবল

   অ্যান্টিপেটার জাখারিয়েভিচ, পাবলিক প্রসিকিউটর

   অন্যান্য শহরবাসী :

–-----------------------------

   সোফিয়া ইভানোভনা, আনার বান্ধবী

    ফাদার কিরিল

    কোপিকিন

 জোতদারগণ:

–--------------------

   মানিলভ

   লিজানকা মানিলভা, মানিলভের স্ত্রী

   সবাকেভিচ

   প্লায়ুশকিন

   মাভরা, ওই হাউজকিপার

   প্রশকা, ওই চাকর

   নজদ্রেভ

   মিঝুয়েভ, ওই শ্যালক

   করোবোচকা

   ফেটিনিয়া, ওই মহিলার চাকর। 

                                প্রথম অঙ্ক : দ্বিতীয় দৃশ্য

                            –--------------------------------------

         পার্টি। রাজভবনের সুসজ্জিত কামরা। তাসের টেবিল। দূরে হার্পসিকর্ডের সুরেলা আওয়াজ। তাস খেলা চলছে।

     পুলিশপ্রধান - হরতন, প্রেসিডেন্ট - চিড়িতন, প্রসিকিউটর- ইস্কাবন। এভাবেই চলতে থাকে।

 বিচারালয় সমূহের প্রেসিডেন্ট : ( জোর আওয়াজে টেবিলে কার্ড রেখে) দূর হ, ট্যামবভ, চাষা কোথাকার!

 পুলিশপ্রধান : ( একইভাবে তাসের টেবিলে আওয়াজ তুলে) তুইও দূর হ, ঢলানি পুরুত- বউ কোথাকার!

 পাবলিক প্রসিকিউটর : ( তাস তুলে নিয়ে) রানি! পেয়েছি, অ্যালেকসি ইভানোভিচ। চুলের মুঠি ধরে টেনে এনেছি।

 চাকর: ( এগিয়ে এসে) হে মহানুভব,প্যাভেল ইভানোভিচ চিচিকভ।

 গভর্নর : আঃ, চিচিকভ। আপনাকে পেয়ে দারুণ খুশি হলাম।

 চিচিকভ : মহানুভবের শারীরিক কুশল তো?

 গভর্নর : না মশাই, মাজাটায় একটু ব্যথা বোধ হচ্ছে।

 চিচিকভ : ও কেটে যাবে স্যার। প্রভুর কৃপায় সেরে উঠবেন। শুধু ওদিকটায় নজর কম দিন।

 গভর্নর : ( চিচিকভকে বউয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে) কইগো একবার এদিকে এস ; পরিচয় করিয়ে দিই। ইনিই কলেজিয়েট কাউন্সিলর প্যাভেল ইভানোভিচ চিচিকভ। তোমাকে বলেছিলাম না? ( পরিচয়পর্ব চলতে থাকে) আর ইনি পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যান্টিপেটার জাখারোভিচ।… ইনি আমাদের জেলা বিচারালয় সমূহের প্রেসিডেন্ট, ইভান গ্রিগরোভিচ। আর ইনি পুলিশপ্রধান, অ্যালেকসি ইভানোভিচ।( চিচিকভের উদ্দেশে) আমাদের প্রাদেশিক সমাজ কেমন লাগছে আপনার?

 চিচিকভ :প্রাদেশিক? হে মহানুভব, একে সামান্য প্রদেশ বলবেন না। বলুন, গোটা প্যারি শহর ; কিন্তু আমাকে বলুন, এ জেলায় আর কোনও বিশিষ্ট জোতদার আছেন কি? ওই ধরুন, এমন বড়ো কৃষক যার অধীনে অনেক ছোটো ছোটো চাষি আছে।

 গভর্নর : অবশ্যই আছে।

 চিচিকভ : তাহলে তেমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করতে চাই। অবশ্য যদি তেমন কোনও অসুবিধা না থাকে।

 গভর্নর : তা কেন মি. প্যাভেল ইভানোভিচ? মুখে বললেন, এটাই তো অনেক। এই যে… ( মানিলভ পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল, তাকে দেখিয়ে) এই যে, আলাপ করুন মাননীয় মানিলভ, মি.প্যাভেল ইভানোভিচ চিচিকভ।

 পুলিশপ্রধান: মহামান্য!

 পাবলিক প্রসিকিউটর: ( এগিয়ে) আপনার দান।

        (গভর্নর আবার তাসের টেবিলে এসে বসে। প্রাথমিক সৌজন্য বিনিময়ের পর চিচিকভ ও মানিলভ নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সাবলীল হয়।)

 মানিলভ: আমাদের এই ছোট্ট শহরটা কেমন লাগল আপনার,মি… মি…চিচিকভ?

 চিচিকভ : খুবই সুন্দর। বেশ সভ্য সমাজ আপনাদের।

 মানিলভ : আমাদের গভর্নরকে কেমন লাগল? আভিজাত্যের ক্ষেত্রে তিনিই শেষ কথা নন কি?

 চিচিকভ : পুরোপুরি সঠিক। তিনিই শেষ কথা। সৎগুণের সমন্বয় এর বাইরে আর হয়ই না।

 মানিলভ: এটাই অদ্ভুত। যে কোনও স্তরের মানুষকেই সাদর অভ্যর্থনায় এতটাই আপন করে নিতে পারেন… আশ্চর্য বিনয়ী ক্ষমতা ওঁর।

 চিচিকভ : একজন শহুরে মার্জিত রুচির মানুষ। দারুণ শিল্পীও বটে। টাকার ছোট্ট ব্যাগে ওঁর হাতের একটি সুচিকাজ দেখছিলাম। ওঃ, দারুণ! একমাত্র সুদক্ষ কোনও মহিলার হাতেই এমনটি সম্ভব।

 মানিলভ : কিন্তু আমি যদি আরও স্পষ্টভাবে জানতে চাই, আমাদের পুলিশের বড়োকত্তা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? উনিও খুব মজার লোক, তাই না?

 চিচিকভ : অসাধারণ সুন্দর মানুষ। আর বুদ্ধিমানও বটে। একজন বিশিষ্ট মানুষ বটে।

 মানিলভ : হু, মি. চিচিকভ। আমাদের গভর্নরের স্ত্রীকে কেমন লাগল?

 চিচিকভ : খুব ভালো। আমার চেনা গুটিকয় বিশিষ্ট মহিলাদের মধ্যে অন্যতমা উনি।

 মানিলভ : আর ওই বিচারালয়গুলির সভাপতি? আপনি কি মনে করেন না…

 চিচিকভ : ও, ইয়েস, ইয়েস…

 মানিলভ : পাবলিক প্রসিকিউটর?

 চিচিকভ : আপনি কি সব সময় গ্রামেই থাকেন? 

 মানিলভ : বেশিরভাগ সময়ই। ক্বচিৎ কখনও শহরে আসি, এইসব সংস্কৃতিবান মানুষের উষ্ণ সান্নিধ্যে গা সেঁকে নিতে। অন্যথায় জানেন, পুরো এলাকা ঢুঁড়েও এমন সভ্য সোসাইটি আর একটিও পাবেন না। যদি থাকে, এই ধরুন একজন ( চিচিকভের দিকে তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে) যার সঙ্গে মধ্যেমাঝে সম্ভ্রম, সৌজন্যবোধ, ছোটোখাটো সুন্দর বিষয় যা জীবনকে উপযুক্ত করে তোলে - সে সব বিষয়ে দু দণ্ড কথা বলা যায়।

 চিচিকভ : আমি কিন্তু মশাই নির্জন প্রকৃতির কোলে বসে তার সুধারস পান করার চাইতে ভালো কিছু ভাবতেই পারি না।

 মানিলভ : মি. চিচিকভ, অধমের ঘরে একটিবার পা রেখে আমায় কৃতার্থ করবেন না?

 চিচিকভ : আমি এটি শুধু আমার আনন্দই মানব না, একটি পবিত্র বাধ্যতা বলেও মনে করব।

        এরপর চিচিকভ মানিলভের বাড়িতে এলে কে আগে ঢুকবে তা নিয়ে উভয়ের মধ্যে সহবতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায়- ‘আপনি আগে, না না, আপনি আগে’ করতে করতে দুজনেই এক সঙ্গে ঠেসাঠেসি করে ঢোকে। মানিলভের স্ত্রীর সঙ্গে চিচিকভের আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। তারপর :

 মানিলভের স্ত্রী : ( এগিয়ে এসে) ডার্লিং, এট্টু হাঁ করো তো, আমি এই কাসন্দি দেওয়া মাশরুমের বিচ্ছিরি পদটা ঠিক গিলতে পারছি না…

 মানিলভ: মি. চিচিকভ, এই আমার স্ত্রী লিজানকা। আর লিজানকা, ইনি প্যাভেল ইভানোভিচ চিচিকভ। আমাদের ভুলে যাবেন না প্লিজ। শহরের গেট থেকে মাত্র পনেরো মাইল। মানিলভকা এস্টেট। যাকে জিজ্ঞেস করবেন, দেখিয়ে দেবে ( মানিলভ স্ত্রীকে নিয়ে খাবারের দিকে এগোয়)।

 চিচিকভ : ( পকেট থেকে ডাইরিটা বের করে মানিলভ বিষয়ে তথ্য টুকতে থাকে) এস্টেটের নাম ‘মানিলভকা’... 

 সবাকেভিচ : ( হঠাৎই পিছন থেকে কর্কশ গলায় হেঁকে) এই যে, আমাকেও দেখুন।

        চিচিকভ চমকে পিছনে তাকায়।

 সবাকেভিচ: আমি সবাকেভিচ ( এগিয়ে এসে জোরসে চিচিকভের পা মাড়িয়ে দেয়)

 চিচিকভ : ( পায়ের ব্যথা গোপন করে সৌজন্যে নত হয় আর হাত বাড়িয়ে দেয়) আমি চিচিকভ। ও হ্যাঁ, বিচারালয়গুলির প্রেসিডেন্ট আজকেই আপনার কথা বলছিলেন ( বসে পড়ে) আশ্চর্য মানুষ মশাই।

 সবাকেভিচ : কে?

 চিচিকভ : ওই প্রেসিডেন্ট সাহেব।

 সবাকেভিচ : প্রথম দর্শনে সেরকমই মনে হয় অবশ্য। একজন ফ্রিম্যাসন ( প্রাচীন ফ্রি এবং ম্যাসন নামে এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সদস্য) হওয়া ছাড়া এ বিশ্ব সবচেয়ে নিরেট বোকাপাঁঠা যাকে জন্ম দিতে পেরেছে সে এই লোকটা।

 চিচিকভ : ( হতবাক হয়ে) ও হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন! এমন কোনও মানুষ তো পৃথিবীতে অবশ্যই জন্মায়নি যার কোনও দোষত্রুটি নেই। কিন্তু গভর্নর সাহেবকে দেখুন। অদ্ভুত বিশেষ এক মানুষ, তাই না?

 সবাকেভিচ : একটা বর্বর।  ভিসিগথ।

 চিচিকভ : ভিসিগথ! বলছেন কী মশাই?

 সবাকেভিচ : ঠিকই বলছি। ও এই জেলার নাম্বার ওয়ান ঠগ। জোচ্চোর।

 চিচিকভ : লে হালুয়া! গভর্নর? আমি তো এটা ভাবতেই পারছি না। পরন্তু দেখে মনে হয়, দারুণ ভদ্র, সভ্য এক বিশিষ্ট মানুষ।

 সবাকেভিচ : ভদ্র?সভ্য? এক নম্বরের লুচ্চা। জানেন, এক কোপেকের জন্য ও আপনার গলাটি নির্দ্বিধায় কেটে ফেলতে পারে? আমি এদের সব্বাইকে খুব ভালো চিনি। জোচ্চোরের দল সব। গোটা শহরেই তাই। সব এক একটা জুডাস। জিশুর বিশ্বাসঘাতক। তবে হ্যাঁ, একজন আছে বটে…ওই পাবলিক প্রসিকিউটর…

        ( সবাকেভিচের পিছন থেকে বেরিয়ে আসেন প্রসিকিউটর সাহেব)

 সবাকেভিচ :... যিনি সত্যিই এক সুন্দর ভদ্র মানুষ…

        ( এ কথায় প্রসিকিউটর মৃদু হাসেন)

 সবাকেভিচ : কিন্তু সত্যি বলতে কি, এ লোকটাও শুয়ার কা আওলাদ। নচ্ছার।

         ( প্রসিকিউটর অন্তর্হিত হয়)

 সবাকেভিচ : যা হোক, আমার ওখানে আসুন। নেমন্তন্ন রইল( নত হয়ে)। জোচ্চোরের দল সব…( গজগজ করতে করতে চলে যায়)।

 গভর্নর : ( আবার চিচিকভকে পাকড়াও করে) মান্যবর প্যাভেল ইভানোভিচ, আমাদের একটা বিবাদের মীমাংসা করে দিন তো? আপনারই সে ক্ষমতা আছে। বলুন তো, নারীপ্রেম বেশিদিন টেকে কি টেকে না?

 চিচিকভ : ঠিকাছে, এ ব্যাপারে গ্রিক দার্শনিক ডায়োজিনেস বলেছেন…

 চাকর: হে মহানুভব, মি. নজদ্রেভ এসেছেন।

 গভর্নর : ( গম্ভীরমুখে) ওই…

      ( নজদ্রেভ ঢোকে, তেমন মার্জিত নয়। একটা মাটন চপের খানিকটা কামড়েছে। পিছনে শ্যালক মিঝুয়েভ, সেও মাতাল।)

নজদ্রেভ : হ্যাল্লো, সব কেমন? ইয়োর একসেলেনসি! ওয়াও…ওয়াও…ওয়াও…এই যে বুড়ো বিচারক… হ্যালো পুলিশকত্তা? ( গভর্নরের প্রতি) আমার শ্যালক মিঝুয়েভ। আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন, হে মহানুভব, বাজারের মেলা থেকে জোর গাড়ি ছুটিয়ে সোজা আপনার এখানে।

 গভর্নর : তা আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

 নজদ্রেভ : হে মহানুভব, পরিচয় করিয়ে দিই, আমার শ্যালক মিঝুয়েভ।

 গভর্নর : খুব খুশি হলাম আপনাদের পেয়ে ( শক্তভাবে নত হয়ে সরে গেল)।

 নজদ্রেভ : ভদ্রমহোদয়গণ, আপনারা আমাকে বাহবা দিন। আমি এটি করতে পেরেছি - শেষ কোপেকটুকুও খুইয়ে এসেছি। শেষ কড়িটুকুও দিয়ে এসেছি যা আগে কখনও করিনি। জুয়ার টেবিলে বসলাম, দু বয়াম পোমেড জিতলাম ; তারপরই আমার চার চারটি সেরা ঘোড়া হারালাম এবং বিশ্বাস করুন, আর যা কিছু আমার ছিল সব হারালাম। এই দেখুন, ঘড়ি নেই। এমনকি ঘড়ির দামী চেনটাও নেই। ভদ্রমহোদয়গণ, এই আমার শ্যালক মিঝুয়েভ।

 পুলিশকর্তা : ঘড়ির চেন! তুমি তো তোমার অর্ধেক জুলফিই হারিয়ে বসে আছ হে? 

 নজদ্রেভ : অর্ধেক! 

 গভর্নর : এঁর সঙ্গে আলাপ করুন। ইনি প্যাভেল ইভানোভিচ চিচিকভ।

 নজদ্রেভ : বাঃ, বাঃ। আমাদের এই পবিত্র চত্বরে আপনি কীভাবে? আসুন ভাই, আসুন। গলায় লেগে যান। আসুন, আপনাকে একটি চুমু খাই। কী নাম বললেন?

 গভর্নর :প্যাভেল ইভানোভিচ চিচিকভ।

 নজদ্রেভ : ভালো, খুব ভালো। তা আপনি কোথায় কোথায় ঘুরলেন ভাই? আমি তো বাজার- মেলা থেকে সোজা এখানে। যাহোক, আমাকে একটি চুমু দিন ভাই ; খুব সুন্দর মানুষ আপনি। আরে! আপনার সঙ্গে তো আলাপ করানোই হয়নি - আমার শ্যালক মিঝুয়েভ। আজ সকালেই আমরা আপনার কথা বলছিলাম।

 চিচিকভ : আমার কথা? 

 নজদ্রেভ : একটু দাঁড়ান। আমি ওকে বললাম, আজ রাতে যদি চিচিকভের ওখানেই যাই।

      ( বিচারালয়ের সভাপতি হেসে ওঠেন। বিরক্তিতে হাত নাড়েন ও কেটে পড়েন)

 নজদ্রেভ : কী খারাপ লাগছে ভাই, আপনি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারলেন না।

 চিচিকভ : আমি?

 নজদ্রেভ : হ্যাঁ, আপনি চিচিকভ। আসতে আপনার কী এমনই বা খরচ হত? দারুণ জমকালো মেলা, বুঝলেন ভাই! ওঃ, প্রাণ খুলে ঘুরলাম মশাই। সঙ্গে জম্পেশ শ্যাম্পেন। বিশ্বাস করবেন মশাই, লাঞ্চে আমি একাই সতেরো বোতল শ্যাম্পেন মেরে দিলাম।

 মিঝুয়েভ : না, না, তা তো নয়? তুমি তো সতেরো বোতল খাওনি। না।

 নজদ্রেভ : আমি হলফ করে বলতে পারি সতেরো বোতলই খেয়েছি।

 মিঝুয়েভ : তা তুমি যা খুশি বলতে পারো, কিন্তু আমি জানি, তুমি দশ বোতলও খাওনি।

 নজদ্রেভ : চ্যালেঞ্জ। বেট। বাজি। এখনই সতেরো বোতল খাব। তোমার কাঁধের রাইফেলটা বাজি রাখো।

 মিঝুয়েভ : আমি কোনও বাজি রাখব না।

 নজদ্রেভ : তা রাখবে কেন? ভয় আছে না? টুপিটার মতো রাইফেলটাও যদি খোয়া যায়! ( চিচিকভের প্রতি) ওহে বন্ধু চিচিকভ, তুমি আসছ না কেন?  আসলে তুমি একটা রুগ্ন শূকরছানা। শূকরীর চাইতেও অধম তুমি। এস, আমাদের চুম্বন দাও। তোমাকে আমি ভালোবাসি। তুমি কত সুন্দর! ( মিঝুয়েভের প্রতি) দেখো মিঝুয়েভ, ভাগ্য কীভাবে আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছে! মোটের ওপর আমি চিচিকভের কাছে যা, সেও আমার কাছে তাই। ও কোত্থেকে এখানে এসে পড়েছে, ঈশ্বর জানেন। আর আমি তো এখানে একাই। ভাবো! ( চিচিকভকে) কালকে কী করছেন?

 চিচিকভ : গাঁয়ে মহামান্য মানিলভের ঘর যাব। পরে আরও কারও।

 নজদ্রেভ : ‘ আরও কেউ’ মানে? ছাড়ুন তো। নরকের কীট সব। ওর ওখানে যেতে হবে না। আমার ওখানে আসুন।

 চিচিকভ : না, তা হয় না। আমার ওখানে জরুরি কাজ আছে।

 নজদ্রেভ : বাজি ধরে বলতে পারি, আপনি মিথ্যে বলছেন। অযথা কে-ই বা বাজি ধরতে চায় বলুন? আমাদের শুধু বলুন, এই ‘ আরও কেউ’ কে? তার কি কোনও নাম নেই?

 চিচিকভ : হ্যাঁ আছে। তিনি মান্যবর সবাকেভিচ।

 নজদ্রেভ : কে?

 চিচিকভ : সবাকেভিচ।

        ( নজদ্রেভ অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে)

 চিচিকভ : এত হাসির কী হল?

 নজদ্রেভ : ( জোর আওয়াজে) ওয়ে, ওয়ে, দয়া করুন ভাই ; আমাকে ধরুন। নইলে ফেটে দু টুকরো হয়ে যাব।

 চিচিকভ : এতে এত হাসির কিচ্ছু নেই। তাকে কথা দিয়েছি যাব, আর যেতে পারলে নিজেকে ধন্য মানব, খুশি হব।

 নজদ্রেভ : ঠিকাছে যান। তবে সেখানে গেলে বুঝবেন, এতটা খুশি হবার কিছুই নেই। আপনি একটা পাগল, ভাবছেন যে ওখানে গেলে সুন্দর তাসের গোছা কিংবা তরতাজা একটি বোতল পাবেন যার মধ্যে দুষ্টু ইচ্ছে দাঁত বিছিয়ে হাসছে - তাহলে সে গুড়ে বালি। তারচে ওসব ছাড়ুন, গোল্লায় যাক সবাকেভিচ, আমার সঙ্গে চলুন, এখনই। এখান থেকে মাত্র পাঁচ মাইল ( নজদ্রেভ চিচিকভকে আঁকড়ে ধরে টানতে থাকে)।

 চিচিকভ : ছাড়ুন, ভাই, ছাড়ুন। আমাকে যেতে দিন। কাল বাদ পরশু আপনার ওখানে যাব, এতই যদি ইচ্ছে আপনার।

 নজদ্রেভ : ঠিকাছে বন্ধু, শুনে ভালো লাগল। মনে হচ্ছে, এর জন্যই আপনাকে এট্টা চুমু খাই। শুধু এর জন্যেই ( এই বলে চিচিকভকে চুমু খায়) থ্রি চিয়ার্স ফর চিচিকভ। চলো।