
বানু মুস্তাকের প্রতিবাদী কলম ও বুকার পুরস্কার
- 07 June, 2025
- লেখক: শতাব্দী দাশ
বানু মুস্তাকের মাথায় স্বীকৃতির পালক এই প্রথম নয়৷ তিনি আগেই ১৯৯৯-এ কর্নাটক সাহিত্য অকাদেমির পুরস্কার পেয়েছিলেন। অনুবাদেও তাঁর বই পুরস্কৃত হয়েছে আগে৷ ‘হাসিনা অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ ২০২৪ সালে পেন ইংলিশ অনুবাদ পুরস্কার পায়। দীপা ভাস্তি সেক্ষেত্রেও অনুবাদক ছিলেন। দীপা ও বানুর অক্ষয় ভগিনিত্বের বন্ধন আরেকবার স্বীকৃতি পেল ২০২৫ সালে। বানুর বারোটা ছোট গল্পের সংকলন ‘হৃদয় দীপ’-এর ইংরেজি অনুবাদ, দীপা ভাস্তি কৃত, ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কারের জন্য আগেই শর্টলিস্টেড হয়েছিল। এবার পুরস্কারটি উঠল তাঁদের চার হাতে। অথচ, একটি সংবাদপত্রে বানু মুস্তাকের আলোচ্য বইটি নিয়ে লেখার পর, অনেকেই আমাকে বললেন, ‘কি আশ্চর্য! অথচ এঁর লেখা আমরা পড়িনি!’ নারী সাহিত্যিকদের পাঠকভাগ্য মন্দ ঠিকই, কিন্তু বানুর ততটাও নয়। তিনি কন্নড় ভাষার সমাদৃত লেখকই ছিলেন। এখানেই আমাদের বহুভাষিক দেশে ইংরেজি ভাষা ও অনুবাদের গুরুত্ব৷ ইংরেজি উত্তর-ঔপনিবেশিক সময়ে ‘লিংক ল্যাঙ্গুয়েজ।’ ঔপনিবেশিক ভাষাকে আমরা যথেচ্ছ ব্যবহার করছি শুধু অন্য দেশের সাহিত্যকে জানতে নয়, বরং নিজেরই দেশের অন্য ভাষার মানুষকে জানতে, মানুষের কাছে পৌঁছতে৷ সাহিত্য সম্পর্কে উৎসুক হলে ভারতের মতো দেশে ইংরেজি অনুবাদ সাহিত্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকাও তাই জরুরি।
এর আগে ইংরেজি ভাষাতেই লেখেন এরকম ভারতীয় হিসেবে সলমন রুশদি, অরুন্ধতী রায়, কিরণ দেশাই এবং অরবিন্দ আদিগা ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার কিন্তু দেওয়া হয় ইংরেজি অনুবাদ সাহিত্যে৷ বিশ্বের যে কোনো ভাষার সাহিত্যই ইংরেজিতে অনূদিত হলে তা সে পুরস্কার পেতে পারে৷ সম্প্রতিই দেশভাগ নিয়ে হিন্দি ভাষায় লেখা গীতাঞ্জলী শ্রী-র ‘রেত সমাধি’-র ডেইজি রকওয়েল-কৃত অনুবাদ ‘টুম্ব অফ স্টোন’ বুকার পেয়েছে।
বানু মুস্তাক, ‘আন্তর্জাতিক বুকার’ বা অনুবাদ-সাহিত্যে বুকার-জয়ী দ্বিতীয় ভারতীয় নারী, গত ২০শে মে, ২০২৫ তারিখে পুরস্কার গ্রহণকালে বলেছেন, ‘কোনো গল্পই আঞ্চলিক নয়।’ বলেছেন, তাঁর গাঁয়ের বটগাছের তলায় যে গল্পের শুরু, তা ছায়াবিস্তার করেছে বহুদূর। অনুবাদক দীপা ভাস্তিও খানিক সেকথাই লিখেছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত বইটির শেষে। সংখ্যালঘু বানুর আখ্যানগুলি অনুবাদ করতে গিয়ে সংখ্যাগুরুর সুপ্ত অভিমান চোরাগোপ্তা ছড়িয়ে যাবে না তো অনুবাদকর্মে? ভাস্তির এই সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে, ভাস্তি জানান, বানু নিজেই বলেছিলেন: তিনি নির্দিষ্ট সমাজের মেয়েদের কথা লিখতে চেয়েছেন, এমন নয়। নিজ সমাজে যা দেখেছেন, তাকেই স্বাভাবিক ভাবে ধারণ করেছে তাঁর লেখনী। কিন্তু তিনি মনে করেন, নানা দেশের, নানা ধর্মের, বর্ণের মেয়ের ব্যথার মধ্যে একরকম সাম্য আছে। সেই সাযুজ্যই বিশ্বজনীন ভগিনিত্ব রচনা করে৷ হয়ত যন্ত্রণার উৎসগুলি বহিরঙ্গে নানারকম, কিন্তু ভিতরের ক্ষত একই। প্রতিরোধের ভাষাও এক। ব্যথার সম্প্রীতির এই আশ্বাসটুকু সম্বল করে কন্নড় ভাষায় বারোটি গল্পের সংকলন ‘হৃদয় দীপ’,অনুবাদে ‘হার্ট ল্যাম্প,’ পাঠ করতে পারেন বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের নারী, বা অন্যতর লিঙ্গযৌনতার মানুষ, এমনকি সহমর্মী পুরুষও।
বানুর পুরস্কারপ্রাপ্তি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তা কন্নড় সাহিত্যের প্রথম বুকার প্রাপ্তি তো বটেই৷ তার উপর, অনেকেই মনে করেন, সমাজকর্মী শিল্পী হতে পারেন না। তাঁরা যা লেখেন, সবই প্রোপাগ্যান্ডা। শিল্পীর শুধু শিল্পেই, শৈলিতেই বিভোর থাকা বাঞ্ছনীয়। সে ধারণাতেও সজোরে আঘাত করেছে এই স্বীকৃতি। বানু সমাজকর্মী, সাংবাদিক ও আইনজীবী। সমাজকর্মী যখন আখ্যান-লেখক, তখন প্রায়শ দেখা যায়, তাঁর শৈলিতে ঘোরপ্যাঁচ নেই, নেই বাহারি নিরীক্ষা৷ বানুর ভাষাও তেমনই সপাট, তীব্র। কিন্তু ছাল-ছাড়ানো যে জীবন তিনি দেখেছেন, তাকে শৈল্পিক নানা মশলাপাতিতে রেঁধে, বাস্তবতার ঝাঁঝ কমিয়ে, পরিবেশন করলে, আসলে বিষয়ের প্রতি সঠিক বিচার হয় না। আর কে না জানে, বিষয় আর শৈলির বিবাহেই শিল্পের জয়!
কন্নড় কথকতার ঐতিহ্য ধমনীতে বহন করার ফলে, তাঁর কথনে এসেছে পা-ছড়িয়ে বসে গল্প বলার ঢং। অনুবাদকও সে ধরন বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। যেমন, ঠিক যেভাবে বানু লিখেছেন ‘ছোট ছোট’, সেভাবেই অনুবাদক লিখেছেন ‘স্মল স্মল’, যা ইংরেজিতে অপ্রচলিত। এলেন সিক্সু বলেছিলেন, মেয়েদের তথাকথিত ‘মেয়েলি গল্প’ বলার ভাষা ও ধরনও অন্য হবে। এই কি সেই ধরন? তার উপর, মাথায় রাখতে হবে, বানু কথা বলেন ‘দখিনি’ ভাষায়। উর্দু যেমন উত্তর ভারতে হিন্দু-মুসলমান সাংস্কৃতিক সমন্বয়ে উদ্ভূত ভাষা, দক্ষিণে তেমনই ‘দখিনি।’ আবার, পড়াশোনা আর দপ্তরি কাজকর্ম তাঁকে করতে হয়েছে কন্নড়ে৷ তদুপরি তাঁর লেখায় যখন তখন ঢুকে পড়ে আরবি শব্দ, লব্জ, ছড়াও। কখনও তিনি কোরাণের উদাহরণ টানেন, কখনও রামায়ণ মহাভারতের। তাঁর টেক্সট নিজেই তাই বহুভাষিক, বহুসাংস্কৃতিক হয়ে ওঠে। আবার, গীতাঞ্জলি শ্রী, যিনি ভারতীয় নারী হিসেবে প্রথমবার অনুবাদ সাহিত্যে বুকার পেয়েছিলেন, তাঁর উপন্যাসের নায়িকা ছিল উত্তরের, দিল্লির। কিন্তু ভারতবর্ষ নামক বহুমাত্রিকতার পরিধি যে আসলে বিন্ধ্য পেরিয়ে বহুদূর বিস্তৃত, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান দিয়ে যে তার নাগাল পাওয়া যায় না, সে কথা সোচ্চারে ঘোষণা করে বানু মুস্তাক কৃত মানবীদের ছোট-ছোট ভাঙাগড়ার আখ্যানগুলি। উত্তর ভারতীয় হেজিমনির বিপ্রতীপে অন্য ভারতবর্ষকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর আখ্যান হয়ে ওঠে একখণ্ড ভারতবর্ষ, যেমন ভারত শুধু নারীর চোখেই দেখা দেয়।
প্রথম গল্পের নামই যেমন ‘শায়েস্তা মহলের পাথর।’ অচিরেই নামকরণের চোরাগোপ্তা ব্যঙ্গ মনে করিয়ে দেয় তাজমহলকে। শায়েস্তার বরের প্রেমস্তুতিময় বাক্যজাল আর শায়েস্তা মারা যাওয়ার পর চটজলদি পুনর্বিবাহ ইঙ্গিত দেয়, পুরুষালি কাব্যময় প্রেমে আর বাস্তবে যোজন ফারাক— ঠিক যেভাবে হয়ত তাজমহলও প্রেমের নয়, প্রদর্শনমুখিতার নিদর্শন। ঐতিহ্যময় যত প্রেমজ কাব্য, চিত্র, স্থাপত্যের কঙ্কাল— তাদের হেলায় গুঁড়িয়ে দেন লেখক। দ্বিতীয় আর তৃতীয় গল্প, যথাক্রমে ‘অগ্নিবর্ষা’ ও ‘কালো গোখরো’, ধর্মগ্রন্থ থেকে ধার করেছে অশুভর রূপকদের৷ দুই গল্পেই দুই পুরুষ মুত্তাওয়ালি (ওয়াকফ্ প্রধান) ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে/ দের বঞ্চিত করে। নারীর সম্পদে উত্তরাধিকারের প্রশ্নটি আসে ‘অগ্নিবর্ষা’ গল্পে। সবচেয়ে তীব্রভাবে নাড়া দেয় ‘কালো গোখরো’ গল্পটি। সে আখ্যান শুরুই হয় মুত্তাওয়ালির বউয়ের সন্তাননিরোধক অপারেশন করার ইচ্ছাপ্রকাশ দিয়ে। ওদিকে, একাধিক কন্যাসন্তানের জননী আশরফ পরিত্যক্ত হয়েছে তার বরের দ্বারা। মসজিদে সে এসেছে বিচার চাইতে। কিন্তু তার শওহরের সঙ্গে মুত্তাওয়ালির আগেই বোঝাপড়া হয়ে গেছে। মসজিদে এমন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মেয়েদের ঢোকা মানা। কিন্তু বানু বর্ণনা দেন: ‘রাতে যখন বরেরা ঘুমিয়ে পড়েছে বা টিভি দেখছে, বউরা তখন গৃহকাজের ফাঁকে দেওয়ালের টিকটিকির মতো মসজিদের প্রাচীরে গোড়ালি উঁচু করে উঁকি দিচ্ছে, কান পাতছে।’ সবাই জানতে চায়, আশরফ আর তার মেয়েদের কী হবে? অশুভ সেই সরিসৃপদের ভয়ে মুত্তাওয়ালি সরাসরি ঘাড়ধাক্কা দিতে পারছেন না আশরফকে। নীরব ভগিনিত্বের প্রতিরোধ তাঁর দোর্দণ্ডপ্রতাপকে প্রতিহত করছে। হঠাৎ বরের ধাক্কায় আশরফের কোলের কন্যাশিশুটি মারা যায় হাত থেকে পড়ে। পাড়ার মেয়েরা তখনও চিৎকৃত প্রতিবাদ করতে পারে না৷ কিন্তু পরদিন থেকে তাদের চোখের ঘৃণা, ব্যাঙ্গ, বিদ্রুপ মুত্তাওয়ালির মাথা হেঁট করে দেয়। আর সপাট চড়টি খায় সে নিজের বাড়িতে। তার সন্তানদের মা কোলের শিশুদের নামিয়ে রেখে মুখের উপর বলে, ‘বাচ্চাদের দেখাশোনা করো বাড়ি বসে। চললাম আমি মায়ের সঙ্গে অপারেশন করাতে।’
‘হৃদয়ের সাধ’ গল্পে বিধবা মা ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর বৌমার চক্ষুশূল। সংসারের শান্তি ফেরাতে ছেলে মায়ের পুনর্বিবাহ দেয়। নারীর পুনর্বিবাহও তার মর্জিতে নয়, ঘটে দুই পুরুষের বোঝাপড়ায়। ‘লাল লুঙ্গি'-তে গরিব আর বড়লোকের ‘সুন্নতের’ তফাত দেখান বানু। ‘হৃদয় দীপ’ গল্পটির নামে বইয়ের নাম। সে গল্পে মেয়েটির জন্মঘর এখন পর হয়েছে। সে মেয়েকে দাদারা বহুগামী স্বামীর বাড়িতে ফেরত রেখে আসে। সেই মেয়ে যখন গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেশলাই জ্বালাতে যাচ্ছে, তখন মনে পড়া অস্বাভাবিক নয় যে, বানুর নিজের দাম্পত্য সুখের হলেও, শুরুর দিকে শ্বশুরবাড়িতে বোরকা পরতে বাধ্য করায় তিনিও গায়ে আগুন লাগাতে গিয়েছিলেন। ‘শায়েস্তামহল..’ থেকে ‘হৃদয় দীপ’, সব গল্পেই দেখা যায়, জ্যেষ্ঠা মেয়েরা মায়ের সহচরী, সমমর্মী, ভগিনী যেন। অগ্রজা কন্যা মায়ের মতোই দাসীও বটে। রক্ষণশীল পিতৃতান্ত্রিক গার্হস্থ্যেও ভগিনিত্বের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন বানু। আর-এক সমকালীন কন্নড় লেখক সারা আবুবকর-ও বানুর মতোই লেখেন মুসলমান মেয়েদের অধিকারের কথা।
‘কম্বল’-এর মতো এক জড় বস্তু নারীর ঈপ্সার দ্যোতক হয়ে উঠেছিল ইসমত চুঘতাইয়ের ‘লিহাফ’ গল্পে। বানুর ‘এক টুকরো স্বর্গ’ গল্পে বৃদ্ধা বি-দাদির ঈপ্সাটি ঠিক যৌন নয়, ‘লিহাফের’ মতো। কিন্তু তা-ও এক জড়বস্তুর সঙ্গে সম্পৃক্ত। জীর্ণ একটা ‘জা-নামাজ’ (নামাজ পড়ার মাদুর) নষ্ট হওয়ায় তিনি মূহ্যমান৷ বালিকাবেলায় তাঁর স্বামীর মৃত্যুর ঘটেছিল যৌনমিলনেরও আগে। কিন্তু সে পুরুষ দুষ্টুমি করে এক সন্ধেয় জুঁই ফুল ছড়িয়ে দিয়েছিল নবোঢ়ার জা-নামাজ-এ, তার নামাজ পড়ার কালে৷ সেই জুঁইয়ের সুবাসই তাঁর জন্নত। আবার ‘কাফন’ গল্পে নারীর সব অপ্রাপ্তি পুঞ্জীভূত হয়ে একটি স্বপ্নবস্তুর দিকে ধায়: তার ‘কাফন’টি যেন হয় মক্কা থেকে আনা, জমজমের পানিতে স্নাত।
‘উঁচু হিলের জুতো’ আখ্যানে পুরুষটির ফ্যান্টাসিতে কল্পনারীর হিলজুতো পায়ের ছন্দোময় চলন। তাই সে তার রুগ্ন গর্ভবতী স্ত্রীর পায়ে বেঢপ হিল জুতে দেয়। সে জুতো যখন ছিঁড়ে ফেলে মেয়ে, তখন ‘যেন উল্কারা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দিকদিগন্তে’, লেখক বলেন৷ ব্যক্তির মুক্তিও কি এক মহাজাগতিক আশ্চর্য ঘটনা নয়?
‘আরবি শিক্ষক ও গোবি মাঞ্চুরি’-তে উকিল বানুর ছায়া পড়ে আইনজীবী মেয়েটির চরিত্রে। ধর্মগ্রন্থে পণ্ডিত আরবি শিক্ষকের চরিত্রটি খানিক কমিক, খানিক নিষ্ঠুর। প্রথম সেই ‘শায়েস্তা মহলের’ গল্পে বলা হয়েছিল ‘আমাদের শেখানো হয়, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান আর পৃথিবীতে স্বামী তাঁরই প্রতিভূ।’ আরবি শিক্ষক, বানুর অন্যান্য গল্পের পুরুষদের মতোই, ‘ঈশ্বরের প্রতিনিধি'-সুলভ নয়, তা হয়ে ওঠার অক্ষম প্রচেষ্টা—কখনও হাস্যকর, কখনও করুণ প্রচেষ্টা। শেষ গল্পটির নামই ‘একবার নারী হোয়ো, হে ঈশ্বর!’ সেই একই আকুতি, ‘বনমালী, তুমি পরজনমে হোয়ো রাধা।’
বিংশ শতকের সত্তর আর আশির দশকে বান্দায়া সাহিত্য আন্দোলন থেকে উঠে আসা আখ্যানকার বানু। সেসময়ে উচ্চবর্ণ, উচ্চশ্রেণির পুরুষ লেখকদের একবগগা বিষয় আর সংস্কৃত-ঘেঁষা ভাষায় রচনার বিপ্রতীপে জেগে উঠেছিলেন নারী লেখকেরা, দলিত লেখকেরা, মুসলমান লেখকেরা৷ তাদেরই একজন বানু মুস্তাক। বানু একদিকে মেয়েদের মসজিদে যাওয়ার অধিকার নিয়ে সরব হয়েছেন আর ফতোয়া পেয়েছেন, হিন্দু মেয়েদের শবরীমালা আন্দোলনের বহু আগে, ২০০০ সালে। অন্যদিকে ‘লঙ্কেশ পত্রিকে'-র মতো হিন্দুত্ববাদ বিরোধী পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। লিঙ্গগত আর ধর্মগত— দ্বিবিধ প্রান্তিকতায় জারিত হয়েছে বানুর স্বর। যন্ত্রণার সলতে পাকিয়ে, অশ্রুর তেলে, ব্যথার প্রদীপ জ্বালতে পারে এমনই স্বর৷ তারই আলোয় প্রান্তিকের প্রতিরোধের পথচলা।