লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল : আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট ভারতীয় নির্বাচনী ফলাফলকে “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদির অপ্রত্যাশিত প্রত্যাখ্যান” বলে বর্ণনা করেছে। মন্তব্য করেছে, “কয়েক দশকের প্রধান ভারতীয় রাজনীতিবিদের অপরাজেয়তার ফানুস ফেটে গেছে, হিন্দু জাতীয়তাবাদি পার্টির পক্ষে সমর্থন হ্রাস পেয়েছে”। আরো বলেছে, ওই ফল “তেইশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনো কোনো নির্বাচনে, রাজ্যে বা কেন্দ্রে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ না হওয়া এবং একজন ধারাবাহিক বিজয়ী ও জনপ্রিয় বলশালী মানুষ হিসেবে চরিত্রায়িত  একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদের বিরল ব্যর্থতা। অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করেছিলেন যে তিনি অনায়াসে পরাস্ত করবেন ভারতের দুর্বল করে দেওয়া ও আর্থিক ভাবে দুর্বল বিরোধী দলগুলিকে, যাদের কারুর কারুর ব্যাঙ্ক একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এবং তাঁদের নেতাদের নির্বাচনের সময়ে জেলে পুরে দেওয়া হয়েছে।“  

আরেকটি মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ভারতের নির্বাচনকে নিয়ে শীর্ষনাম দিয়েছে, “ভারতের নির্বাচনী ফলাফল মোদির ব্যর্থতার ইঙ্গিত দিচ্ছে”; বলেছে, নরেন্দ্র মোদির অপরাজেয় তকমার জ্যোতির্চ্ছটা চুরমার হয়ে গিয়েছে....মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি অযোধ্যার লোকসভা আসন হারাতে চলেছে। যেটি ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ জুড়ে বিপুল নির্বাচনী ব্যর্থতার অংশ, যেখানে প্রাথমিক ফল ইঙ্গিত দিয়েছে যে বিজেপি গত ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৩০টি কম আসনে জিততে চলেছে। “ভারতীয় নির্বাচকরা অবশেষে জাগ্রত হযেছে”- নিউইয়র্ক টাইমসের একটি নিবন্ধে লেখা হয়েছে। আরেকটিতে বলা হয়েছে, “মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা শুরু হবে” কারণ জোট রাজনীতি ফিরে এসেছে।

পাকিস্তানের প্রচার মাধ্যম ডন  “ভারতের ভোটগণনা দেখাচ্ছে যে, মোদি জোট আশ্চর্যজনক কম গরিষ্ঠতা নিয়ে জিতছে” শীর্ষক সংবাদে বলেছে, “বিজেপি অযোধ্যাতে পরাজিত হয়েছে যেখানে রাম মন্দিরের উদ্বোধন করা হয়েছে; রাহুল গান্ধি বলেছেন ভোটাররা বিজেপিকে শাস্তি দিয়েছে”।

ব্রিটিশ দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমস একটি নিবন্ধের শীর্ষে লিখেছে, “ভারতীয় নির্বাচন নরেন্দ্র মোদির ‘অপরাজেয়তার আলোকচ্ছটা’ অপসারিত করে দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্রটি বলেছে, “এই ফল জোট রাজনীতির প্রত্যাবর্তন ঘটাবে। মোদি সরকারের এক দশকের  কাজের উপরে গণভোট হিসেবে চিহ্নিত এই নির্বাচনে ও  মোদির ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভরশীল প্রচারের উপর নির্ভর করে মোদির জয় নিশ্চিত এমনটা বহু ভারতীয়র প্রত্যাশা ছিল”।

বিবিসির ভাষ্যে “ফলাফল শ্রীযুক্ত মোদির উপরে ব্যক্তিগত ধাক্কা, যিনি কখনো গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী  কখনো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবসময় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছেন, এবং দেশের রাজনীতিকে আধিপত্য করেছেন। জোটের পতনের পূর্বতন ভবিষ্যদ্বাণীকে নাকচ করে, এবং এক্সিট পোল ও ওপিনিয়ন পোলের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতায় এই রায়   কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের বিষ্ময়কর পুনরুজ্জীবন ঘোষনা করছে”।

ওই প্রতিবেদন আরো বলেছে, সমর্থকেরা বলেন যে উনি শক্ত, দক্ষ নেতা যিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করেন। সমালোচকরা বলেন যে, উনি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিরোধী মতকে ধ্বংস করেছেন, এবং ভারতের মুসলমান সংখ্যালঘু ওনার শাসনে শঙ্কিত অনুভব করছে।“

নির্বাচন চলাকালীন বিবিসি লিখেছিল, “নরেন্দ্র মোদির ভারত: জনপ্রিয়তা ও মেরুকরণের এক দশক”।

হংকঙের সাউথ চায়না মর্ণিং পোস্ট বলেছে, “মোদি জয়ের দাবি করছেন কিন্তু বিরোধীরা শক্তিশালী হয়ে ওঠায় ক্ষমতায় থাকার জন্য তাঁর বিজেপির জোটের দরকার পড়ছে”, সঙ্গে যুক্ত করেছে, “নরেন্দ্র মোদি ভারতের সাধারণ নির্বাচনে জয়ের দাবি করেছেন, যদিও বুধবারের সকালের সরকারি ফল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় জনতা পার্টি নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার থেকে কম আসন পেয়েছে এবং জোটের মাধ্যমে ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য ছোট ছোট আঞ্চলিক দলের সমর্থনের প্রয়োজন পড়ছে”। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজেপি তাদের শক্ত ঘাটি উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানায় জমি হারিয়েছে এবং রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রে অপ্রত্যাশিত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

কাতারের আল জাজিরার শীর্ষনাম, “ মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি বৃহৎ ধাক্কায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা হারিয়েছে”। ওই সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কথায়, “মোদি এবং তাঁর সহযোগীরা সম্ভবত ভারতের পরবর্তী সরকার গড়তে সক্ষম হবে- কিন্তু ২৭২ আসনের জন্য তাদের আঁকড়ে ধরতে হবে সহযোগীদের।“ “সংসদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। বিল পাশ করাতে বহু সমঝোতা করতে হবে। আগে প্রভূত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার সময়ে তিনি সমঝোতা করেননি। তিনি নিজেকে কোন ধরণের আপোষহীন ভীষণ সবল ব্যক্তি হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন।“-সংবাদপত্রটি বলেছে।  

সিএনএন-এর লাইভের ব্যানারে লেখা হয়েছে, “মোদি ভারতীয় নির্বাচনে জয়ের ঘোষণা করেছেন যখন বিজেপি আকষ্মিক ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে। একটি বিশ্লেষণে লেখা হযেছে, “বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নির্বাচকরা মোদির হিন্দু প্রথম দেশের জনমোহিনী দৃষ্টিকোণকে আংশিক ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন”।

নিউজউইক অযোধ্যায় মোদির আসন হারানোকে “মোদির বাড়ির উঠোনে চমকপ্রদ পরাজয়” বলে উল্লেখ করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসোসিয়েটেড প্রেসের কথায়, “ ভারতের জনপ্রিয় কিন্তু মেরুকরণ সৃষ্টিকারী প্রধানমন্ত্রী তার এক দশকের শাসনকে বাড়াতে চলেছে।