গার্সিয়া মার্কেসের শেষ আখ্যান : 'মেমোরিজ অব মাই মেলাঙ্কোলিক হোরস' প্রসঙ্গে

গার্সিয়া মার্কেসের অধিকাংশ উপন্যাস একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। প্রথম উপন্যাস লিফ স্টর্ম এর শুরু থেকে শেষ অবধি পাই এক মৃতদেহর সামনে তিনজন মানুষের আত্মকথন ও স্মৃতিচারণ। পরবর্তী দুটি উপন্যাস নো ওয়ান রাইটস টু কর্নেল বা ইন ইভিল আওয়ারেও মৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। নো ওয়ান রাইটস টু কর্নেল এ শুরু থেকে শেষ অবধি কর্নেল ও তার স্ত্রী তাদের যুবক পুত্রের মৃত্যুর পর কতটা অসহায় আর দীন হয়ে পড়েছেন, সেই কথা রয়েছে। উপন্যাসের শেষে পুত্রের মৃত্যু যে রাষ্ট্রবিরোধী সংগ্রামের সূত্রে সেই সংগ্রামকে নিজের করে নিয়ে পুত্রের শহীদত্বকে সম্মান জানান কর্নেল। ইন ইভিল আওয়ার উপন্যাসের শুরুতেই ঘটে যায় এক মৃত্যুর ঘটনা ও তারপর তাকে ঘিরেই নির্মিত হয় বাকি আখ্যানটি। ক্রনিকেল অব এ ডেথ ফোরটোল্ড উপন্যাসটির নামে যেমন, তেমন বিন্যাসেও রয়েছে এক অনার কিলিং - সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে সংগঠিত একটি খুন। অটাম অব দ্য পেট্রিয়ার্ক উপন্যাসটি শুরু হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র স্বৈরশাসকের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে৷ জেনারেল ইন হিজ ল্যাবিরিন্থ উপন্যাসে লাতিন আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক, মুক্তিদাতা বা লিবারেটর সাইমন বলিভারকে গার্সিয়া মার্কেস বেছে নেন চরিত্র হিসেবে, কিন্তু উপন্যাসে তার বীরত্বব্যঞ্জক যুদ্ধকাহিনী নয়, জোর পড়ে অসুস্থ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলা মানুষটির জীবনের সাত বছরের অভিযাত্রার ওপর। অফ লাভ অ্যান্ড আদার ডেমনস উপন্যাসটিও গড়ে উঠেছে বারো বছরের নায়িকাকে কুকুর কামড়ানোর পর জলাতঙ্গ ও সম্ভাব্য মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে। শেষমেষ মেয়েটি অবশ্য ভুল হাতুড়ে চিকিৎসা ও প্রেমহীন দানবীয় ধর্মীয় অনুশাসনের নিগড়ে যন্ত্রণাদগ্ধ হয়ে জীবন থেকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। 

সেদিক থেকে দেখলে গার্সিয়া মার্কেসের শেষ উপন্যাস ‘আমার বিষণ্ণ বেশ্যাদের স্মৃতি’ (মেমোরিয়া দে মিস পুতাস ত্রিস্তেস/ মেমোরিজ অব মাই মেলাঙ্কোলি হোরস) সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের রচনা। এটিকে আমরা বলতে পারি এক জীবনতৃষ্ণার উপন্যাস। যৌবনে গার্সিয়া মার্কেস তাঁর লেখায় যতই মৃত্যুকে ঘিরে আখ্যান লিখুন, সাতাত্তরের বার্ধক্যে পৌঁছে লেখা নিজের এই শেষ উপন্যাসে জীবনকে উপভোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী করতে চাওয়া এক নব্বই বছরের সাংবাদিকের কথাই তিনি বলতে চাইলেন। 

এই সাংবাদিকের কোনও নাম এই আত্মকথনে নেই। নব্বই বছরের জন্মদিনে পৌঁছে তিনি ফোন করেন তার দীর্ঘদিনের পরিচিত রোসাকে। এই রোসা দেহ ব্যবসার মালকিন। এই সাংবাদিকের সারাজীবন কেটেছে অসংখ্য গণিকা সংসর্গ করে। সেই সূত্রে রোসার সঙ্গে তার বহু দশকের আলাপ। রোসা জানে কোন খরিদ্দার কী চায় আর সেই পছন্দ অনুযায়ী সে তাদের কাছে ঠিক ঠিক ধরনের গণিকাদের সরবরাহ করতে থাকে। 

নব্বই বছরের জন্মদিনে পৌঁছে সাংবাদিকের আকুতি তৈরি হয় এক কুমারী মেয়ের সঙ্গে রাত কাটানোর ও সেই অনুযায়ী সে রোজার কাছে এই দাবি পেশ করে। রোসা কিছু সময় চেয়ে নিয়ে জানায় সে পরে ফোন করে খবর দেবে। মাঝের সময়টুকু বৃদ্ধ সাংবাদিকের কাছে প্রতীক্ষার উচাটনে৷ অবশ্য রোসার থেকে সবুজ সংকেত আসে ও সাংবাদিক পরিচিত বণিতা গৃহে যান। 

সাংবাদিক যখন চোদ্দ বছরের মেয়েটির ঘরে ঢোকেন সে তখন ঘুমিয়ে পড়েছে৷ এর কারণ হতে পারে পোশাক কারখানায় দিনের বেলা কাজ করা করা মেয়েটির প্রবল পরিশ্রম বা প্রথম যৌন মিলনের জন্য তাকে উপযুক্ত করে তুলতে চেয়ে রোসার দেওয়া ওষুধের প্রতিক্রিয়া৷ মেয়েটির এক বন্ধু এমনই এক যৌনক্রিয়ার পর রক্তপাতে মারা যাওয়ায় মেয়েটি এ বিষয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে আছে। 

বৃদ্ধ সাংবাদিক ঘরে ঢোকেন। কিন্তু ঘুমন্ত নগ্ন মেয়েটিকে ডাকেন না৷ ভোরবেলা মোরগ ডাকার পর সে ঘর ছেড়ে যখন চলে আসেন তখনো মেয়েটি ঘুমোচ্ছে একইভাবে। পরের রাতে আবার তিনি যান মেয়েটির ঘরে এবং একই ঘটনা পুনরাবৃত্ত হয়। এরপর প্রতি রাতেই তিনি যেতে থাকেন ও ঘুমন্ত মেয়েটিকে না ডেকে তার পাশেই শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। রোসা তাকে জানায় সে মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছে৷ মেয়েটিকে বিয়ে করে নিলে তার খরচ খরচা কমে যাবে। 

প্রেমের সঙ্গে জড়িত থাকা স্নেহ, সন্দেহের ঈর্ষা ও ক্ষতির আশঙ্কা - সবই দেখা দেয় বৃদ্ধ সাংবাদিকের মধ্যে। তিনি মেয়েটিকে আদর করে ডাকেন দেলগাদিনা বলে, ঘুমের মধ্যে তাকে গান শোনাতে থাকেন। একদিন মেয়েটির কানে গলায় দামি অলঙ্কার দেখে সেগুলি অন্য কোনও ধনী খদ্দেরের উপহার ভেবে ক্ষোভে পাগল হয়ে যান ও এই ধারণা সত্যি নয় জেনে শান্ত হন।

তার মেয়েটিকে উপহার দেওয়া সাইকেলটির মতো একটি সাইকেল চাপা কিশোরী মেয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে শুনে তিনি আশঙ্কায় শিউরে ওঠেন এবং হাসপাতালে ছুটে যান। 

প্রেমের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞান যে বিরহ যন্ত্রণা তাতেও তিনি আক্রান্ত হন। একটি মৃত্যুর সূত্র ধরে যখন বণিতাবাসটি বন্ধ হয়ে যায় ও রোসাকে কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনে থাকতে বাইরে চলে যেতে হয়, তখন মেয়েটির বিরহ যন্ত্রণা তাকে অহরহ বিদ্ধ করতে থাকে। কয়েকমাস পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি মেয়েটিকে ফিরে পেয়ে নিশ্চিন্ত হন। 

এই উপন্যাসে আত্মকথনের সূত্রেই সাংবাদিকের পেশা ও নেশা সম্পর্কে আমরা অনেক কথা জেনে যাই। স্প্যানিশ ও লাতিন ভাষা ও ব্যাকরণে কৃতবিদ্য হলেও সেই সব সূত্রে আয়ের উপায় সামান্যই। মূলত সংবাদপত্রের পাতায় সাপ্তাহিক কলাম লিখেই সাংবাদিকের রোজগার হয়। এছাড়া তার রয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তার সম্পত্তি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন এই সাংবাদিকটি। বাবা সরকারি নোতারি ছিলেন আর মা ছিলেন বিখ্যাত সুরকার মোজার্টের ইন্টারপ্রেটার। শিক্ষিত ও মার্জিত পরিবারে বেশ স্বচ্ছলতার মধ্যেই তিনি বড় হতে থাকেন। বাবার চেয়ে মায়ের কথাই সাংবাদিকের স্মৃতিতে বেশি করে এসেছে। মা ছিলেন অতীব সুন্দরী আর উচ্চশিক্ষিতা। এক বিরাট ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল তার। স্নাতক ডিগ্রিতে খুব ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এই অনামা সাংবাদিকটি। কিন্তু উদ্দাম বেপরোয়া জীবন কাটানোর জন্য বড় কিছু হয়ে ওঠা সম্ভব হয় নি তার পক্ষে। পারিবারিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বা শিক্ষাকে খুব একটা কাজে লাগাতে পারেন নি। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিও সেভাবে রক্ষা করতে পারেন নি। তার অনেকটাই বেচে দিয়েছেন তিনি। খরচ করেছেন তার নেশা বারবণিতা সংসর্গের পেছনে৷ বছর পঞ্চাশ বয়েস হবার মধ্যেই পাঁচশো চোদ্দজন বারবণিতার সঙ্গে সংসর্গ করেছিলেন তিনি এবং সেই সংখ্যাটা ক্রমেই বেড়ে গিয়েছে। পরে তিনি আর এর হিসাবও রাখেন নি। 

তাঁর এই জীবন যাপনের কথা গোপনও কিছু নয়। এই নিয়ে মধুর পরিহাসও করেন তার সহকর্মীরা। মহিলা সহকর্মীরা তাঁকে নব্বই বছরের জন্মদিনে উপহার দেন কয়েকটি চুম্বনচিহ্ন আঁকা অন্তর্বাস। সেগুলো তিনি পরার পর তারা সেগুলি খুলে নিতে চান বলেও যৌন ইঙ্গিৎ করেন। এই সাংবাদিকের বিয়ে ঠিক হয়েছিল এক খ্যাতনামা মহিলার সঙ্গে। কিন্তু বণিতা সংশ্লেষের অভ্যাসে আসক্ত থাকায় এই বিয়ে হয় নি আর তিনিও জানিয়েছেন উন্মুক্ত যৌনতার দিগন্ত ছেড়ে দাম্পত্যের কোটরে ঢোকার আগ্রহই তিনি পান নি। সাংবাদিক তার স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন যে তিনি যাদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করেছেন, তাদের সবাইকেই উপযুক্ত অর্থ প্রদান করেছেন। অনেকে যৌন সংসর্গের পর অর্থ নিতে না চাইলেও তিনি জোর করে তা দিয়েছেন। একমাত্র তার বাড়ির পরিচারিকা দামিয়ানার সঙ্গে যঊন সম্পর্ক করলেও দামিয়ানা তার জন্য কিছুতেই টাকা নিতে চায় নি। তিনি দামিয়ানার সঙ্গে অবশ্য যৌন সম্পর্ক চালিয়ে গেছেন আর এর বিনিময়ে নিজেই একটা হিসেব করে তার মাস মাহিনা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাসে একবার যৌন সম্পর্কের পারিশ্রমিক সেখানে নিজেই হিসেব করে তিনি তা যোগ করে দেন।

এই আখ্যানে স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি যৌন সঙ্গীর স্মৃতিচারণ নেই। এক তো উপন্যাসের একরৈখিক সরল গতির সঙ্গে তা মানানসই ছিল না। দ্বিতীয়ত এই সমস্ত সংসর্গগুলো তার স্মৃতিপটে অত দাগও কাটে নি, যা তিনি রোমন্থনযোগ্য মনে করেছেন। অবশ্য নেহাৎ কিশোর বয়সে অতর্কিতে প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার পরিস্থিতিটি ছায়াছবির মতোই সাংবাদিক বর্ণনা করেছেন। যখন তার বয়েস মাত্র বারো বছর সে সময়েই এই অভিজ্ঞতাটি হয় তার। সেদিন তার পরনে ছিল স্কুলের হাফ প্যান্ট আর জুতো। যেসব নারীরা সারা রাত বাইরে তাদের দেহ ফেরি করত তারা পরদিন সকাল এগারোটা নাগাদ ফিরত। প্রচণ্ড গরমে আদুর গায়েই তারপর সারত ঘরের কাজকর্ম। ঐ সময়েই এক নগ্ন মহিলা পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর তাকে নগ্ন করে ধর্ষণ করে। এরপর থেকে যৌনতার টানে চিরদিনের মতো বাধা পড়ে যান তিনি। এই যৌনতার সূত্রেই অন্তত একবার বিয়ের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল হিমেনা ওর্তিসের সঙ্গে। হয়ে গিয়েছিল বিয়ের আগের আংটি বদলও। কিন্তু সাংবাদিকটি বুঝতে পারেন দাম্পত্য তার জন্য নয়। তাই বিয়ের আগের রাতটি অস্থিরতায় জেগে কাটিয়ে অবশেষে তিনি সরে আসেন বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে।

যৌনতার মধ্যেই মূলত নারীকে চিনতে অভ্যস্ত এই সাংবাদিক নব্বই বছরের জন্মদিনের রাত থেকে সম্ভবত প্রথমবারের জন্য প্রেমের মধ্যে দিয়ে নারীকে চিনতে শুরু করলেন। নব্বই বছরের জন্মদিনের পর থেকে অনেক রাত পাশাপাশি কাটিয়ে একানব্বইয়ের জন্মদিনের রাতটিও যখন সেই কিশোরীর সঙ্গে কাটাচ্ছেন তিনি, মেয়েটির প্রতি তার প্রেমে তখনো কোনও ভাটা পড়ে নি। আবেগের নতুন জোয়ারে বরং তিনি তখন আরো মাতোয়ারা। তবে এই পর্বেও মেয়েটির শরীরে তিনি ডুবে যান নি। সারা জীবন যৌনতায় মেতে থাকা সাংবাদিকের বার্ধক্য বা যৌন শিথিলতা এর কারণ নয়। নতুন করে আসা এক প্রেম, যা যৌনতার বাইরে দাঁড়িয়ে নিজেকে চিনতে শিখেছে ততদিনে, তাই এক নতুন জীবন দিয়েছে বৃদ্ধ সাংবাদিককে। বয়েস শরীরের হয় না, মনের - এই পরিচিত কথাটি এখানে এক বীজমন্ত্র হিসেবে এসেছে। একানব্বইয়ের জন্মদিনে পৌঁছেও নবজাগ্রত এই প্রেমকে ঘিরেই শতায়ু হবার আকাঙ্ক্ষায় মগ্ন থাকেন সেই প্রবীণ সাংবাদিকটি। তবে নি:সঙ্গতার হতাশায় নয়, এই মেয়েটির সঙ্গেই সেই সময়টিতে লগ্ন থাকতে চেয়েছেন তিনি।

গার্সিয়া মার্কেসের অনেক উপন্যাসই বেশ কয়েক বছর আগের ব্যক্তিগত কোনও স্মৃতি বা চিন্তাসূত্র থেকে তৈরি হয়। মাঝে হয়ত অনেকদিন তা চাপা পড়ে থাকে। তারপর কোনও একসময় তা স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আখ্যানের চেহারা নেয়। বহু আগে পরিবারের চৌহদ্দিতে ঘটা একটি ঘটনা থেকে অনেক দশক পরে নির্মিত হয় ক্রনিক্যাল অব এ ডেথ ফোরটোল্ড উপন্যাসটি। বহু বছর আগে সাংবাদিকতার শুরুর দিনগুলিতে দেখা একটি ঘটনা ও বাল্যে ঠাকুমার মুখে শোনা এক কাহিনী মিলে মিশে কয়েক দশক পরে লেখা হয় অফ লাভ অ্যান্ড আদার ডেমনস উপন্যাসটি। মেমোরিজ অব মাই মেলাঙ্কলি হোরস প্রসঙ্গে সরাসরি উল্লেখযোগ্য এমন কোনও সূত্র নেই। তবে গার্সিয়া মার্কেস এই উপন্যাস লেখার কয়েক বছর আগে জানিয়েছিলেন জাপানী লেখক ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার লেখা একটি উপন্যাস ‘দ্য হাউজ অব স্লিপিং বিউটিজ’ ফিরে পড়ার কথা’। বইটি তিন বছর আগেও একবার তিনি পড়েছিলেন, মুগ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় এই পাঠে ছিল এক বিশেষ অনুসন্ধিৎসা। তিনি জানতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধবৃদ্ধাদের যৌন আচরণ কেমন হয় সেই বিষয়ে। সেই উত্তর তিনি পুনঃপাঠের সময় পান নি। তিনি দেখেছিলেন কাওয়াবাতার উপন্যাসটিতে জাপানী ধরনের যে সব বর্ণনা আছে, তা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের যৌন সংস্কৃতির ধরন থেকে একেবারেই আলাদা। গার্সিয়া মার্কেস কেন তখন এই অনুসন্ধান চালিয়েছেন তার নিশ্চিত কারণ আমাদের জানা নেই। কিন্তু মেমোরিজ অব মাই মেলাঙ্কলি হোরস পড়ার পর মনে হয় এই অনুসন্ধিৎসার সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেসের শেষতম আখ্যানের কোনও সম্পর্ক রয়েছে। হয়ত সেই অনুসন্ধানের দিনগুলি থেকেই এই আখ্যানের নির্মাণ পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। অনেকদিন মনের মধ্যে জারিত থাকা এক বিষয় বাস্তব নির্মিতি পেল গার্সিয়া মার্কেসের জাদু কলমে।