ড্রাকুলা : ভ্যাম্পায়ার মিথ এবং নারীর অবস্থান

1897 সালে Bram Stoker নামের এক আইরিশ সাহেবের ড্রাকুলা  উপন্যাসটি যখন প্রকাশিত হল, তখন লেখক বা  প্রকাশক  কস্মিন কদাচিৎ  এও ভাবেননি এই  ড্রাকুলা চরিত্র আগামী এক শতাব্দী ধরে ভয় নির্ভর বিনোদনের জগতে শাহেনশাহ হয়ে থাকবে। ভয় নির্ভর বিনোদন? একি সোনার পাথরবাটি? আজ্ঞে হ্যাঁ। ঠিকই শুনছেন। মানুষ ভয় পেতে ভালবাসে। তবে যতক্ষণ সেটা তার নিজের নিরাপত্তা কে  বিঘ্নিত না করছে। আর এখানেই আছে আতঙ্কের সফল পণ্যায়নের চাবিকাঠি। তাই 1897 সালের Yorkshire এর Alice যে অমোঘ আকর্ষণে মোমবাতির  আলোয় ডুবে যায় রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের কাহিনীতে, সেই একই টানে ২০২৪ সালে কলকাতার ঋক বইমেলা থেকে তুলে নেয় Twilight সিরিজ।

এ প্রসঙ্গে একবার বিবিসি কে দেয়া সাক্ষাৎকারে (১৯৬৮) ড্রাকুলার চরিত্রের বিখ্যাত অভিনেতা স্যার ক্রিস্টোফার লী বলেছিলেন এই কাল্পনিক ভয়ের গল্প বা সিনেমাগুলি মানুষের অবচেতনে জমে থাকা অচেনা আতঙ্কের আকর কে একটা ইমোশনাল সেফটি ভাল্ব এর মতো করে বের করে দেয়।  অনেকটা গ্রীক ট্রাজেডির purgation থিওরির মত। একই সাথে তিনি এও যোগ করেন এই ধরনের বই বা সিনেমা বিকৃতকাম বা ভারসাম্যহীন সেই সব মানুষকে  তার প্রান্তিক অবস্থানটিও চিহ্নিত করে দেয়।  অর্থাৎ  এক ধরনের নৈতিক তর্জনী শাসনও বলা যেতে পারে।

অবশ্য গথিক সাহিত্যরীতির একটা ধারা এর আগে থেকেই চলে আসছিল। Mary Shelley এর Frankenstein  থেকে শুরু করে Horace Walpole এর Castle of Otranto,  M.G.Lewis এর The Monk, Wilkie Collins এর Woman in White ইত্যাদি মূলধারার সাহিত্যের পাশাপাশি একটা জায়গা করে নিচ্ছিল। কিন্তু ১৮৯৭ সালে ড্রাকুলার প্রকাশনা এবং ১৯৩১ সালে এই উপন্যাসের সফল চলচ্চিত্রায়ন আতঙ্কের ভাষা বদলে দিল। বেশ মজার বিষয় হলো ব্রাম  স্টোকার কিন্তু একদম একটি মৌলিক চরিত্র যে সৃষ্টি করেছিলেন তা কিন্তু নয়।  পূর্ব ইউরোপে প্রচলিত Nosferatu মিথ, ট্রানসেলভানিয়ার ওয়ালাচিয়ান রাজবংশের Vlad, the Impaler এর রক্তস্নাত ইতিহাস কাউন্টেস এলিজাবেথ  বেথানির রক্তলোলুপতার জনশ্রুতি মিশে গিয়েছিল ড্রাকুলার চরিত্র সৃজনে। তবে Bram Stoker যেভাবে এযাবৎ  প্রচলিত গথিকের সাথে যুক্ত নরকঙ্কাল বা বিকৃত শব দেহের অলৌকিককে এক অভিজাত, যৌন আবেদনময় সুপুরুষের  মোড়কে হাজির করলেন তা তার গল্পের অভিঘাতকে নিঃসন্দেহে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল। উপরন্তু অতিপ্রাকৃতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তিনি শুধুমাত্র Willing suspension of disbelief এর  উপর ভরসা করলেন না। Linear narrative এর পরিবর্তে নিয়ে এলেন এমন এক পত্র উপন্যাস যার মাঝে রইল ব্যক্তিগত ডায়েরির পাতা, খবরের কাগজের প্রতিবেদন এমনকি জাহাজের লগবুক। এর ফলে চরিত্র ও ঘটনা নিয়ে পাঠকের মনে এক কাল্পনিক প্রামাণ্যতা তৈরি হলো।

তবে এই উপন্যাস আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে গেল শুধুমাত্র  ড্রাকুলার চরিত্রের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষনের জন্য নয়, ব্রাম স্টোকার সরাসরি উপন্যাসের পাতায় তুলে আনলেন সমসাময়িক এক বৈপ্লবিক নারীবাদী চেতনা - The New Woman ভাবধারা। উপন্যাসের গল্প শুধু খ্রিস্টীয় ভগবান শয়তানের দ্বন্দ্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। উপন্যাসের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র মিনা হারকার তার সাবলীল পেশাযোগ্যতায় এবং লুসি ওয়েস্টেনরা  তার নিসংকোচ যৌন স্বাধীনতার চিন্তায় fin de siecle র নারীর ক্ষমতায়ন ও যৌনতা নিয়ে পুরুষ উদ্বেগকে প্রকট করল। 1894 সালে  সারা গ্র্যান্ড এর The New Aspect of Women Question এ উঠে আসা New Woman icon ইতিমধ্যেই এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা দিয়েছে।

ড্রাকুলা উপন্যাস ঊনবিংশ শতকের এই চিন্তাধারার প্রতি পুরুষপ্রধান সমাজের এক রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়া হয়ে রইল না, বরং এ উপন্যাস যে ড্রাকুলা prototype এর জন্ম দিল তা একশো বছর পরেও নারী-পুরুষ সম্পর্কের রসায়নে নারীর যৌন স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের সূচক হয়ে থাকলো। তাই স্টেফানি মেয়র তার Twilight সিরিজের মূলদ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করেন বেলা সোয়ানের ভ্যাম্পায়ারত্ব পাওয়া বা না পাওয়াকে নিয়ে - একবিংশ শতাব্দীর এই উপন্যাসে ভ্যাম্পায়ারত্ব যখন মর্মন্তুদ পরিণতি নয় বরং ক্ষমতায়নের উৎস।

তবে অতীন্দ্রিয়, অলৌকিককে সমাজগ্রাহ্য তত্ত্বের মধ্যে টেনে আনার কঠিন কাজটা কিন্তু  ব্রাম স্ট্রোকার করেই দিয়েছিলেন। গল্পের শুরুতেই আমরা পাই জোনাথান হারকারের জার্নাল, যেখানে দেখা যায় সলিসিটর ফার্মের কাজ নিয়ে কাউন্ট ড্রাকুলার আমন্ত্রণে জোনাথান পাড়ি দিয়েছে সুদূর ট্রানসিলভেনিয়াতে। তার যাত্রাপথে পূর্ব ইউরোপের ভিনদেশী সংস্কৃতি প্রথমেই অজানা ও অচেনাকে গ্রহণ করার দরজাটা খুলে দেয়। তার সহযাত্রীরা ইভ অফ সেন্টজর্জ এর রাতের প্রচলিত কুসংস্কারে আচ্ছন্ন এবং বারংবার তাকে তার গন্তব্য থেকে বিরত করার চেষ্টা চালাতে থাকে। রহস্যময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রাচীন একদুর্গে কাউন্ট ড্রাকুলার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎকার ও একাধিক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা  বিচলিত করে তোলে জোনাথানকে।

কাউন্ট ড্রাকুলার নিশাচর অভ্যাস, জনমানবহীন প্রাসাদে নিজের একপ্রকার বন্দীত্ব তার মনে যে সন্দেহের সূত্রপাত করে তা যে অমূলক নয় তা সে বুঝতে পারে যখন ড্রাকুলার তিন আবেদনময়ী সঙ্গিনীর সাথে তার দেখা হয়। প্রথাগত সমালোচনায় ড্রাকুলার এই তিন সঙ্গিনীকে নব নারীবাদের (New Woman) ক্ষয়ীষ্ণু, অবাধ যৌনাচারের বিকৃত রূপ  হিসাবেই দেখা হয়। খুব আশ্চর্যজনক ভাবে জোনাথন যখন মধ্যযুগীয়, নিষ্ক্রিয় অপেক্ষমানা নারীদের নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখছে সেই সময়ে আবির্ভাব হয় তাদের চরম বৈপরীত্যে থাকা লাস্যময়ী ভ্যাম্পায়ার নারীদের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এটা আশ্চর্যের বিষয় জোনাথানের স্বপ্নে কিন্তু শর্টহ্যান্ড এবং স্টেনোগ্রাফি জানা, তার জন্য অপেক্ষারত মিনা ম্যুরের দেখা মেলে না। তাহলে কি পেশাগতভাবে সক্ষম নারী ভিক্টোরিয়ান যুগের পুরুষের স্বপনচারিনী হতে পারেনি? এই ভ্যাম্পায়ার নারীদের প্রতি জোনাথানের বিবমিষা স্বাধীন যৌনাচারী নারীর প্রতি তীব্র পুরুষ শ্লেষ নিয়ে আসে। কিন্তু এখানে আরও একটা প্রশ্ন জাগে। এই ভ্যাম্পায়ার নারীরা কি সত্যিই স্বাধীন? কারণ উপন্যাসের পাতা থেকেই বোঝা যায় তারা নিজেদের খাদ্য সংগ্রহে অসমর্থ্য। কাউন্ট ড্রাকুলাকেই ভার নিতে হয় তাদের রক্ত তৃষ্ণা মেটাবার। এইখানে বিকৃত যৌনাচারী, প্রান্তস্থিত এই নারীরা ভিক্টোরিয়ান গৃহস্থবলয়ের মধ্যে থাকা নারীদের মতোই নিজেদের পুরুষ অভিভাবক (কাউন্ট) কে নিজেদের পোষক মনে করে। এরা কি তাহলে সত্যিই প্রান্তস্থিত নাকি কেন্দ্রীয় ? এইখানে নারীস্বাধীনতাকে ঘিরে পুরুষ অবস্থানের একটা আত্মবিরোধিতা চোখে পড়ে-- যেটা বহু আলোচিত লুসি ওয়েস্টার্নার চিঠিতেও উঠে আসে।

এরপর ড্রাকুলার প্রাসাদ থেকে জোনাথানের পালিয়ে বেঁচে ফেরা গথিক সাহিত্যের আতঙ্ক-রোমাঞ্চের ফর্মুলা মেনেই হয়। কিন্তু ফর্মুলা ভাঙতে থাকে তখন, যখন সুদূর ট্রানসালভানিয়ার পরিবর্তে ঘটনার স্থান-কাল -পাত্র হয়ে ওঠে ভিক্টোরিয়ান সমাজের একেবারে কেন্দ্রে থাকা সমুদ্র-বন্দর শহরের এক সাধারন গৃহস্থ পরিবার এবং ডঃ সেওয়ার্ড এর মানসিক হাসপাতাল। ড্রাকুলাকে যদি এক যৌন সম্ভাবনাময়  শক্তির দ্যোতক হিসেবে আমরা দেখি তবে ঝড়ের রাতে মৃত ক্যাপ্টেনকে নিয়ে ডিমেটর জাহাজের হুইটবি তে আগমন ভিক্টোরিয়া নীতিস্বাভাবিকতার আকাশে এক  অশনি সংকেত নিয়ে আসে। এই প্রসঙ্গে লক্ষণীয় ড্রাকুলার সাথে চুম্বকীয় বা পোষক -  পীড়ক সম্পর্কের জন্য বেছে নেওয়া হয় সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থাকা সদস্যদের, কীটভূক মানসিক ভারসাম্যহীন রেনফিল্ড এবং নব নারীবাদের দুই প্রতিভূ আত্মনির্ভর, পেশাসক্ষম মিনা ম্যুরে এবং সাবলীল, স্বাধীন যৌনাকাঙ্ক্ষী লুসি ওয়েস্টেনরাকে।

লুসি এবং মিনার নির্ভেজাল বন্ধুত্ব তাদের স্বাভাবিক কথোপকথনের এক অবাধ অবকাশ দেয়। এই চিঠি থেকেই উঠে আসে একাধিক পুরুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু লুসি ওয়েস্টেনরা। ডক্টর সেওয়ার্ড, কুইন্সি মরিস এবং আর্থার হোমউডের এর কাছ থেকে বিবাহ প্রস্তাব পাওয়ার পরে লুসির নিঃসংকোচ আক্ষেপ তার প্রাণবন্ত যৌনতাকেই মূর্ত করে:

" Why can't they let a girl marry three men or as many as want her and save all this trouble?"

ভিক্টোরিয়ান সমাজের নীতি পুলিশের তোয়াক্কা না করে লুসির এই উক্তির জন্যই কি তাকে সহজলভ্য করা হয়---  নৈশঅভিসারের মাধ্যমে তাকে শিকার হতে হয় ড্রাকুলার রক্তপিপাসার। সে নিজে পরিণত হয় রক্তলোলুপ ভ্যাম্পায়ারে। ক্রিস্টোফার লী কি  আতঙ্কেরএই নৈতিক শাসনের কথাই বলেছিলেন?

প্রচলিত সমালোচনায় লুসিকে আপাতভাবে স্বাধীন-যৌনাচারী মনে করা হলেও ড্রাকুলার ভ্যাম্পায়ার সঙ্গিনীদের মতো সেও কিন্তু পরনির্ভর। প্রথমত সে যেভাবে অন্য দুই পানিপ্রার্থী কে থেকে ছেড়ে বেছে নেয় বিত্তশালী আর্থার হোমউড কে, তাতে ভিক্টোরিয়ান বিবাহ পরিসরের অর্থের ভূমিকা সম্পর্কে সে যে ওয়াকিবহাল নয় তা মনে করার কারণ নেই। দ্বিতীয়ত ভ্যাম্পায়ার হওয়ার পরেও তার পরিত্রাতা হয়ে আসে তার পুরুষ বন্ধুরা। অর্থাৎ এখানে এক damsel in distress এর এক carricature রূপ আমরা দেখতে পাই। রক্তশূন্য অবস্থায় বাঁচার জন্য তার যেমন পুরুষ সঙ্গীদের রক্ত লাগে তেমনি মৃত্যুর পর উদ্ধারের জন্য পুরুষ সঙ্গীদের সক্রিয় সহযোগিতাও লাগে। অর্থাৎ ভ্যাম্পায়ার নারীদের মতই তার অবস্থান কেন্দ্রে নয়, প্রান্তে। বলা যেতে পারে লুসি এবং তিন ভ্যাম্পায়ার নারী এক পরনির্ভর, নেতিবাচক New Woman মডেল  যাদের স্বাধীন যৌনাকাঙ্খা আত্মশক্তি দেয়নি।

এর ঠিক বিপরীত মেরুতে দেখতে পাই মিনা ম্যুরেকে - আত্মনির্ভর, পেশাগত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। জোনাথনের চিঠি পেয়ে তার কাছে যাওয়া জোনাথানকে বিবাহ ও বিবাহ পরবর্তী ক্ষেত্রে তার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, তথ্য লিপিবদ্ধকরণের দক্ষতা সব মিলিয়ে সে New Woman এর ইতিবাচক মডেল। সারা গ্র্যান্ড এর বিখ্যাত উক্তিকে সে মূর্ত করে তোলে : "the new woman is a little above the man and it was her duty to bring him up to her standard"( Grand, 1894:271).

এহেন মিনা ম্যুরে যখন তার প্রখর ব্যক্তিত্বের দাবিতে অন্যান্য চরিত্রকে ছাপিয়ে উঠে আসে -- আসে ড্রাকুলার সংস্পর্শে, তাকে প্রতিরক্ষা দেবার জন্য  আবির্ভাব হয় পুরুষ নায়কদের যাদের সর্বাগ্রে থাকেন ভ্যান হেলসিং। পেশাগতভাবে সক্ষম, আত্মবিশ্বাসী এবং স্বাধীন যৌনাচারী এই তিনের একত্রিত সমাবেশ স্টোকার তার নব নারীবাদের ধারণার মধ্যে রাখতে পারেননি। তাই ড্রাকুলার রক্ত দূষিত মিনা কে উদ্ধারের জন্য আমরা আবার পুরুষ নায়ক ও প্রতিনায়কের চেনা দ্বন্দ্বের মধ্যে উপন্যাসকে চলে যেতে দেখি।

সারা গ্রান্ড নিজেই যৌন শুদ্ধতা এবং যৌনস্বাধীনতা এ দুটির মধ্যে বিভাজন রেখা সম্পর্কে মন্তব্য করেন: "of old if a woman ventured to be at all unconventional, man was allowed to slander her with the imputation that she must be abandoned and he really believed it because with him Liberty meant licence."

উপন্যাসের শেষ কয়েকটি অধ্যায়ে দুটি ইঙ্গিৎবহ ঘটনা ঘটে। এক, ভ্যান হেলসিং মিনাকে বারংবার সম্মোহন করতে থাকেন। যে নারীকে এতক্ষণ আমরা সাবলীল আত্মশক্তির আধার হিসেবে দেখেছিলাম হঠাৎ তার মনের চেতন অবচেতনে পুরুষ নায়কের অবাধ আনাগোনা শুরু হয়। কারণ একটাই ড্রাকুলার গতিবিধি জানা। দুই, মিনা নিজেই জোনাথনকে অনুরোধ করে তাকে সব কথা না জানানোর।  অর্থাৎ জ্ঞান যেখানে শক্তির সমার্থক, সেই অবস্থান থেকে সে নিজেই সরে আসে, এখানেও কারণ ড্রাকুলা যাতে তার মারফত ভ্যান হেলসিং এর কার্যপ্রণালী জানতে না পারে। অর্থাৎ ড্রাকুলা হচ্ছে সেই ভয়ংকর যার নিরিখে মিনার চরিত্রকে মাপসই হতে হয় Duchess of Malfi র "figure cast in alabaster" এর মতই। এইখানে আমরা পেয়ে যাই ভিক্টোরিয়ান মূল্যবোধের চরম অস্বস্তির স্থানটি। আত্মনির্ভর মিনা যদি ড্রাকুলার সংস্পর্শে স্বাধীন যৌনাচারী হয়ে উঠতো তাকে কোন স্থানে রাখা হবে…

1992 সালে এই উপন্যাসের এক বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রায়ন করেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। সেখানে ড্রাকুলা এক ভয়ঙ্কর রক্তপিশাচ  শুধু নয়, ভাগ্যবিড়ম্বিত এক প্রেমিক। এইখানে বিবাহিত মিনার ড্রাকুলার প্রতি এক অবধারিত আকর্ষণ দেখা যায়। কিন্তু তারও প্রেক্ষাপটে থাকে তার গত জন্মের কাউন্টের বিবাহিত স্ত্রী হওয়ার ইতিহাস। জোনাথানকে ছেড়ে মিনা মৃত্যুপথযাত্রী ড্রাকুলার হাত ধরে পূর্বজন্মের বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকেই স্বীকৃতি দেয় ।

অর্থাৎ ড্রাকুলা মিথ যুগে যুগে এমন এক অচেনা ভয়কে অনাবৃত করে যা নারীর অবস্থানের মাপকাঠি কেও চিহ্নিত করে। তাই একশো বছর পরে স্টেফানি মেয়্যর যখন দেখান বেলা সোয়ান স্বেচ্ছায় ভ্যাম্পায়ারত্ব বেছে নিচ্ছে, ওয়ারউলফ এবং ভ্যাম্পায়ার এর মধ্যে মানসিক সখ্য এবং ভালোবাসার প্রভেদ বুঝে সঙ্গী নির্বাচন করছে বা মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সংকর প্রজাতির মাতৃত্ব কে বহন করছে, তখন বোঝা যায়  New Woman কে একশ কেন হয়তো হাজার বছর হাঁটতে হবে পৃথিবীর পথে Vampire এর সাথে তার সম্পর্কের প্রকৃত রসায়ন জানার জন্য।

 

আকর

1.Dracula, Bram Stoker 1897 (Kindle Edition)

2. Rethinking the woman in Dracula, Jordan Kistler

3.The New Aspect of the Woman Question, Sarah Grand.(1894)