ভারতের ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইতে স্তালিন ট্রটস্কি বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক

মার্ক্সবাদী বা মার্ক্সবাদ এর ধ্বজাধারী  সমর্থকজনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে বিভিন্ন প্রেক্ষিতে, এমন কি সংকটের সন্ধিক্ষণে বা বিভিন্ন অছিলায় স্তালিন-ট্রটস্কি বিতর্ক একেবারে পুরোনো রূপে এনে হাজির করা হয়। সোভিয়েত বিপ্লবের প্রারম্ভিক সময় থেকে চয়ের দশক পর্যন্ত সেই সময়কার প্রেক্ষিত থেকে ছিন্ন করে পরবর্তী সময়গুলোতে প্রেক্ষিতনিরপেক্ষ ভাবে সব কটি বিতর্ক বর্তমানে টেনে নিয়ে এসে বিভাজনের সমস্ত উপাচার বানিয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে চিরবিভক্ত রেখে দেওয়ার কৌশল কে আর সাদা চোখে দেখা যায় না।  পুঁজিবাদের সেবা করবার যাবতীয় ছিলা অছিলা কে হাতিয়ার করে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে জনবিচ্ছিন্ন রাখার সমস্ত প্রচেষ্টা কিন্তু দক্ষিণপন্থী দলগুলো চালিয়েই যায় আড়াল থেকে। গণতন্ত্রের প্রশ্ন একটা সহজ ধুয়ো যা নাকি কমিউনিস্টদের মধ্যেই চলে।  সময়ের সাথে সাথে , প্রেক্ষিতের বদলে যে কোনো পুরোনো কাঠামো গুলো যে ভেঙে বহুধাবিভক্ত হবে , তা সে যে পন্থাই  হোক না কেন, এই সহজ সত্য কে উল্লেখের বাইরে রেখে 'কমিউনিস্ট শিবির বিভক্ত' এই অলীক সত্য কে বেশ ঢক্কা নিনাদে প্রচারও  করা হয়।

স্তালিন গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং নরখাদক, ত্রতস্কি ইতিহাসের ট্রাজিক নায়ক আর চে গেভারা সুধী এক রোমান্টিক তারকা, চাচা হো এক জাতীয়তাবাদী অবতার, চেয়ারম্যান মাও এক রাক্ষস - এই ধরণের চিহ্নিত করণ কিন্তু কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যেই ওঠানো হয়, অথচ বিশ্বে বৃহৎ গণহত্যাগুলো এবং যুদ্ধগুলো যে গণতন্ত্রের কপোত উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র "নেতারাই " করে থাকে সে সত্যকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার সমস্ত প্রচেষ্টা করে চলেছে কমিউনিস্ট নামধারী বেশ কিছু শক্তি। পৃথিবীতে চিহ্নিত  ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো যত না গণহত্যা করেছে তার  থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি যে শান্তির দূত বলে পরিচিত "উদার গণতন্ত্রের" ধ্বজাধারীরাই করে চলেছে সেটা কিন্তু বিবাদমান কমিউনিস্ট পার্টিগুলো এবং ব্যক্তিবর্গ ক্রমশঃ বেশি বেশি করে উল্লেখ করে চলে। এই উল্লেখ গুলোকে দেখিয়েই মতাদর্শগতভাবে "উদারপন্থীরা" কল্কে জোগাড় করে।  দক্ষিণপন্থীরা যে আরো কতভাবে বিভক্ত সেই সহজ সত্যটিকে কিন্তু কমিউনিস্ট রা দেখাতেই যেন ভুলে যায়।  ফল খুব সহজ - মানুষের মধ্যে একমাত্র বিকল্প হিসেবে দক্ষিণপন্থার বিভিন্ন ধারাই প্রতিষ্ঠা পায় ,প্রতিষ্ঠা দেয় নিজেদের পায়ে কুড়ুল মেরে কমুনিস্টরাই।   গণতন্ত্র যে কোনো একক সংজ্ঞার বিষয়বস্তু নয়, তার বহুতর কাঠামোগত রূপগুলো যে সবগুলোই অগণতান্ত্রিক এবং ভাঁওতা দেওয়ার জন্যে তৈরী, সেই বিতর্কে না গিয়ে বুর্জুয়া প্রতিনিধিত্বমূলক কাঠামোকেই মানুষের গণতন্ত্র হিসেবে দেখা এবং দেখানো কম্যুনিস্টরা গুলিয়ে ফেলে স্তালিন নরখাদক কিনা বা মাও কতটা নীরোর মতো এই বিতর্কে কম্যুনিস্টরা জড়িয়ে পরে বুর্জুয়া শোষণব্যবস্থার ওকালতি করে থাকেন।  আর খুব সুচতুরভাবে তথাকথিত শান্তির প্রতীক দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রগুলো বিনা ওজর আপত্তিতে তাদের গণহত্যা চালিয়ে যায়। 

মধ্যযুগে এবং বিশ্বযুদ্ধের যুগে ব্যাপক উৎপাদিকা শক্তিকে গণহত্যা দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার বাইরে রাখা যেত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ র শেষে ফ্যাসিবাদ কে সাময়িক ভাবে হলেও বিশ্ব ছাড়া করবার পরে বেশ কয়েক দশক গণহত্যাকে আর নিয়মিত স্বাভাবিক পৌনঃপৌনিক  ঘটনা হিসেবে সাজানো যাচ্ছিলো না।  সেটা যে স্তালিনের আর মাও এর নেতৃত্বে বা 'প্রশ্রয়ে' অর্জন করা গেলো সেই বিষয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ফ্যাসিবাদ বা পুঁজিবাদের চূড়ান্ত নিস্পেষণকারী রূপের ভার্সন এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো উচিত সেই দায়িত্ব কে সরিয়ে কমিউনিস্ট রা এক বিশেষ প্রেক্ষিতের বিতর্ক কে প্রেক্ষিতনিরপেক্ষ নৈতিকতায় দাঁড় করিয়ে দেবে সেটা মার্ক্সবাদী চিন্তকদের বোধগম্য ছিল না, আর "গণতন্ত্র" নামক এক গোলমোল গোল আলুকে খাড়া করে চরম অগণতান্ত্রিক শোষণ ব্যবস্থাকেই "একমাত্র বিকল্প" এবং সর্বশ্রেষ্ট প্রশাসন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলো কিন্তু বিবদমান কমিউনিস্ট শক্তিগুলোই।  বর্তমানে যেখানে যেখানে সামরিক যুদ্ধ নেই , সেই জায়গাগুলোতে "উন্নয়ন" আর নগরায়নের নামে , প্রযুক্তির সাহায্যে কর্মসংস্থানকে সংকুচিত করে একধরণের "শান্তিপূর্ণ" প্রয়োজনীয় সামাজিক শ্রমশক্তি সংকোচনের যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  বিশাল বিশাল প্রাকৃতিক "পরিবর্তন" বা ধ্বংস কে সামান্য কয়েকজন শ্রমিক লাগিয়ে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের  সাহায্যে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে দূর-নিয়ন্ত্রণের প্রকৌশল দিয়ে শ্রমিক সংকোচনের মাধ্যমে এক গণসংকোচন বা যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটাই নয়া-উদারনীতির অসামরিক যুদ্ধনীতি। শ্রমিক শ্রেণী যেখানে ক্রমসঙ্কোচনের চাপে  ক্রমশঃ  বিলীন হয়ে যাচ্ছে সেখানে কমিউনিস্ট বিকল্পের শক্তির সমন্বয়ী  ক্ষমতাও ক্রমহ্রাসমান তখন তাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের ক্ষমতাও বিলীন হতে থাকে।  এখানে প্রেক্ষিতনিরপেক্ষ কোনো কৌশল এক অধিবিদ্যা বৈকি , যা অনেকটা অপরিবর্তনীয় ধর্মীয় চিন্তার মতো। 

ধর্ম মধ্যযুগে ছিল উৎপাদিকা শক্তিগুলোকে  নিয়ন্ত্রণ করার প্রকল্পে এক শক্তিক্ষয়ী যুদ্ধ।  আজ তথাকথিত আধুনিকতার নামে  যে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকশ্রেণীর ওপরে তাতে মানুষের সম্মিলিত শ্রমশক্তিকেই অপ্রয়োজনীয় বানিয়ে শ্রমিক বিলীন এর শান্তিপূর্ণ গণহত্যা কে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুবনায়নের মোড়কে আর প্রযুক্তির সাহায্যে।  এই প্রক্রিয়া যে গণহত্যার সবচেয়ে কার্যকরী রূপ তা কোনো ধর্মীয় কায়দা নয়, কিন্তু আধিবিদ্যক এক পদ্ধতি , যাকে  ধর্মনিরপেক্ষ প্রক্রিয়া বলে চালানো হচ্ছে , এটাই "উদারবাদী" শান্তিপূর্ণ যুদ্ধ মানবিকতার বিরুদ্ধে।  এই দৃষ্টিকোণ থেকেই স্তালিন-ত্রতস্কি বিতর্কের অসারতা কে অনুধাবন করা  দরকার, যেখানে 'গণ'ই নেই সেখানে গণতন্ত্রের আর কোনো সামাজিক রাজনৈতিক প্রয়োজনই  থাকবে না।  রাজনীতিহীনতা, সম্মিলনের প্রয়োজনীয়তা কে অপ্রয়োজনীয় করে তুলে ব্যক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা, বিষয়ের ওপর ব্যক্তি কে মান্যতা দিয়েই এই শান্তিপূর্ণ গণহত্যা এবং গণতন্ত্রের প্রয়োজন কেই অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টাটাই 'উদারনৈতিক' যুদ্ধ। ইতিমধ্যেই এর প্রত্যক্ষ প্রমান পাওয়া যাচ্ছে, পৃথিবীর সমস্ত "উন্নত(!?)" দেশগুলোতেই [চীন সহ ] ব্যক্তি বা পরিবার পিছু সন্তানের সংখ্যা কমে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।  এটাও একটা গণহত্যা বা প্রজন্ম হত্যা , এর সঙ্গে তো যুক্ত আছেই অরাজনৈতিকতার সামাজিক "নৈতিকতা" বা মরালিটি।  'শিক্ষা' মানে প্রযুক্তি , প্রকৌশল আর দূর-নিয়ন্ত্রিত অসচেতন প্রয়োগকৌশল, এরবাইরে কিছু নয় । সামাজিক দায়িত্ব এখন অচল-নৈতিকতা।  এই পুরোটাই যে একটা বিশ্বযুদ্ধ আর এই বিশ্বব্যাপী "শান্তিপূর্ণ অসামরিক যুদ্ধ " র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা আর কৌশল কিন্তু আমাদের শিখতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করার জনযুদ্ধের কৌশল থেকে শিক্ষা নিয়েই।  এখানেই "নরখাদক" স্তালিন-মাও  বা নিষ্ঠুর চে র বিরুদ্ধে ট্রটস্কিবাদের রাজনৈতিক যুদ্ধের অসারতা।  এই বিতর্ক কে উস্কে দিচ্ছে "উদারপন্থী" মার্কিন ঘাতক গণহত্যাকারী পেন্টাগন চিন্তক Timothy Snyder বা ট্রাম্প বা যুদ্ধবাজ শী জিন পিং, পুতিন আর "শান্তির দূত " বাইডেন, ত্রুদো , ঋষি সুনক দের যুদ্ধ পরিকল্পনা। কৌতুক আর পরিতাপের বিষয় আজ কাল প্রাক্তন কমিউনিস্ট কিছু ব্যক্তিত্ব গণতান্ত্রিকতার পতাকা নাচিয়ে কমিউনিস্ট বিকল্প কে নরখাদক হিসেবে চিহ্নিত করে , কখনো স্তালিন-মাও বনাম ট্রটস্কিবাদের  নামে পুত-পবিত্র দর্শনের ওকালতি করছে। 

এক অস্ট্রেলিয় কমরেড এর কাছে শুনলাম সে দেশে কিছু স্বঘোষিত ট্রটস্কিবাদী পৃথিবীতে যাবতীয় কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃত্বে সংগঠিত বিপ্লবে "যথেষ্ট ব্যাকরণ সম্মত " বিপ্লব না হওয়ার ধুয়ো তুলে সেগুলোকে অপরিণত এবং সেই কারণে "ভুল" বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করার রাজনৈতিক লাইন এনেছে।  এই প্রসঙ্গে জেরাল্ড গাউস এর "The tyranny of The Ideal " বা ["নিস্কলুষ এর নিষ্পেষণ"] লেখাটি দেখছিলাম , পুতিন আর শি জিন পিং কিন্তু একই চিন্তা কে একটু ঘুরিয়ে "নিস্কলুষ ফ্যাসিবাদের " কথা বলছে , আর আমাদের বোঝাচ্ছে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা একধরণের নৈরাজ্যের দর্শন, যাকে কার্যকরী ভাবে মোকাবেলা করা যাবে "শৃঙ্খলাপরায়ণ উন্নয়ন আর নগরায়ন " . বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প আর নগড়াইতো শৃঙ্খলাপরায়ণ সমাজব্যবস্থা মানুষ কে যতই রাজনৈতিক অসচেতন করুক না কেন রসেবশে রাখলেই আর রোষের দরকার পড়বে  না. এটাই আজকের নয়াউদারবাদী নব্য-সাম্রাজ্যবাদ যার দেশীয় রূপ হবে আভ্যন্তরীন "নির্ভেজাল ফ্যাসিবাদ" , হিন্দুত্বের ধর্মীয়-কর্পোরেট ভারতীয় ফ্যাসিবাদের সঙ্গে এর বহিরাঙ্গিক ফারাক থাকলেও সারবত্তায খুব কি ব্যাসকম ? 

ঠিক এই দৃষ্টিকোনেই স্তালিন-ট্রটস্কির বিতর্ক কে দেখলেই বর্তমান প্রেক্ষিতে তার অসারতা কে বোঝা যায়।

এই বিতর্ক শুধু মাত্র উদারনৈতিকদের পোষিত নয়, সাম্রাজ্যবাদ এবং নয়াঔপনিবেশিকবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা  পোষিত, তাই দেখা যায় এই "বিতর্ক" কে জিইযে রাখতে সবচেয়ে উদগ্রীব মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু চিন্তক অধ্যাপক। এমন কি অন্য পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এর কদর ক্রমহ্রাসমান। এই মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পোষকতার পেছনে আছে টিম শ্নাইডারের এর মতো পেন্টাগন "চিন্তক" , মার্কিনের মিডিয়াগুলো , আর তৃতীয় বিশ্বের কিছু ধামাধরা সংবাদ মাধ্যম।  আমাদের দেশে আমরা যাকে "গোদি মাধ্যম " হিসেবে চিহ্নিত করি। আর আছে কিছু "চাড্ডি বুদ্ধিজীবি" , বা সাম্প্রতিক কালের কিছু "সদ্য বোধিপ্রাপ্ত " প্রাক্তন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীবৃন্দ।  যতই আজকের প্রেক্ষিতে এই অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক কে "সময়োপযোগী" র তকমা লাগিয়ে মান্যতা দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হবে , ততই ফ্যাসিবাদী শাসনের মান্যতা বা জাস্টিফিকেশন কে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হবে। যে কোনো বিতর্ককে প্রেক্ষিতনিরপেক্ষ ভাবে গনচর্চায় নিয়ে আনার প্রচেষ্টা চরম প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রকৌশল।  এখানেই যে কোনো সামরিক শক্তিক্ষয়ী যুদ্ধের থেকে উদারনৈতিক রাজনীতি অনেক বেশি ধীহত্যা বা memocide যা একের পর এক প্রজন্ম এবং zeitgeist  বা যুগবোধ কে পিষে মারে আর দেশের মানুষকে রাষ্ট্রক্ষমতার অবচেতন দাসে  পরিণত করে।  জর্মন চিন্তক রা দেখিয়েছেন যে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তী সময়ে  জর্মন সম্মিলিত প্রজ্ঞা কি ভাবে বিদূরিত হয়েছিল আর সেই ফাঁক দিয়েই ঢুকেছিলো ইহুদি গণনিধনের  ন্যায্যতা বা জাস্টিফিকেশন। 

আজ আমাদের দেশে আরএসএস এর হিন্দুত্ব প্রকল্প ঠিক এই কাজটিকেই ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় আছে।  আমাদের দেশে এই প্রকল্পের তিনটি  সহায়ক শক্তি আছে, এক দিকে দক্ষিনপন্থার মতাদর্শবিহীন উন্নয়নের রাজনীতি র প্রবক্তা আঞ্চলিক বা প্রদেশভিত্তিক দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলো, দ্বিতীয় হচ্ছে বামপন্থীদের মধ্যে টিকে থাকা প্রেক্ষিতহীন বিতর্কের প্রবক্তারা আর তিন হচ্ছে রাজনীতির নামে অরাজনীতির প্রবক্তা "বুদ্ধিজীবীকুল" যারা বিষয়ের ওপর ব্যক্তির গুরুত্ব কে স্থান করে দিচ্ছে।  মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ যুদ্ধ তাদের কাছে গুরুত্বহীন , ব্যাক্তিমাহাত্ম র আরাধনাই তাদের কাছে নিয়ামক শক্তি।  তাই আজ স্তালিন-ট্রটস্কি বিতর্ক। 

স্তালিনবাদ, মাওবাদ, ট্রটস্কিবাদ বলে পৃথিবীতে কিছু নেই, গালাগাল ছাড়া, কেউ কখনো ইতিবাচক অর্থে এগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে নি।  মার্ক্সবাদ , লেনিনবাদ  মার্কস বা লেনিন কথিত সুসমাচার বা গসপেল বা কথামৃত নয়. এই দুই মতবাদের মধ্যে ব্যক্তি উল্লেখ নেই। সংজ্ঞা মনঃপুত নাও হতে পারে কারো কাছে , কিন্তু ব্যক্তি-উল্লেখিত মতবাদের সংজ্ঞায় বিষয়কেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে , ব্যক্তিমাহাত্ম নয়। এখানেই বোধের ফারাক ব্যক্তি-নামাঙ্কিত প্রেক্ষিতহীন বিতর্কের সঙ্গে "বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব বিশ্লেষণের " প্রয়োগনীতির " বা মেথডলজির।  মেথডোলজির বা প্রয়োগবিজ্ঞানের প্রকরণই মার্ক্সবাদ কোনো বাঁধা স্থান-কাল নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা বা সিস্টেম বা কাঠামো নয়।

[এটি অন্যস্বরের বিতর্কের পাতা। উদ্দেশ্য মত বিনিময়। চিন্তা বিনিময়। এখানে প্রকাশিত বক্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। তার সঙ্গে অন্যস্বরের সম্পাদকমণ্ডলীর বা পত্রিকার কোনও সম্পর্ক নেই।]