মাঙ্গা-পুরাণ ও সাহিত্যে জাপান-যাপন

মাঙ্গা-পুরাণ ও সাহিত্যে জাপান-যাপন

১ - সাহিত্যে জাপান-যাপন

জুলাই মাসের শুরু তখন। কাজের চাপে বহুদিন কোথাও যাওয়া হয় না। অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর দিন তিনেকের ছুটি মঞ্জুর হতেই ঠিক করে ফেললাম, শিলিগুড়িতে দিদির বাড়ি যাওয়া যাক। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। টিকিট কেটে ট্রেনে চড়ে বসলাম। হাওড়া থেকে ট্রেন ছাড়ার কথা ভোর ৬ টায়। বর্ষার সকাল, তার উপর সোলো ট্রিপ। ট্রেনের চাকা গড়াতেই আয়েশ করে গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে একখানা বই খুলে বসলাম। তবে পড়া শুরুর আগে জানলার কাচ ফুঁড়ে উঁকি দেওয়া মেঘগম্ভীর আকাশ আর গাছপালাকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে একটা ছবি তুলেছিলাম। নিজের নয়। সেদিনের টাটকা আনন্দবাজার, আর তার উপর রাখা সেই বইয়ের ছবি। হোয়াটসঅ্যাপের স্ট্যাটাসে সেই ছবি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বই পড়া লাটে উঠল। কৌতূহলী বইপ্রেমীদের একের পর এক প্রশ্ন জমা হতে শুরু করল ইনবক্সে। কোন দেশি বই? লেখকের নাম তো আগে শুনিনি? কেমন লেখা? কোন জঁর? ইত্যাদি প্রভৃতি।

আমার ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের বন্ধুতালিকায় এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় যাঁরা বই পড়তে ভালবাসেন। শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু নামী থেকে অখ্যাত বই গুলে খাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিযোগী পাওয়া ভার। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বই সংক্রান্ত নানান তথ্য পেতে সেই সব বইমুখোদের শরণাপন্ন হতে আমি নিজেও দুবার ভাবি না। কিন্তু তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ওই বইটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ট্রেনযাত্রায় সেদিন যে বইটি পড়ছিলাম, তার নাম ‘দ্য টোকিও জোডিয়াক মার্ডারস’। লেখক সোজি শিমাদা জাপানের একজন সুপরিচিত রহস্য গল্প-উপন্যাস লেখক। শুধু এই বইটিই নয়, খেয়াল করে দেখেছি, সার্বিক ভাবে জাপানি সাহিত্যের সঙ্গেই আমার পরিচিত বেশিরভাগ বইপ্রেমীর আলাপ নেই। আমার নিজেরও ছিল কি? ছোটবেলায় অক্ষর পরিচয় হওয়ার পর থেকেই বাবা মা শিশুপাঠ্য বই থেকে শুরু করে নানা ঘরানার বই তুলে দিয়েছেন হাতে। বড় হওয়ার পর নিজে খুঁজেপেতে বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় সাহিত্য পড়েছি, অন্তত পড়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেসবের রসাস্বাদনের মাঝেও জাপানি সাহিত্যের বিপুল সম্ভার অধরাই থেকে গিয়েছিল। বস্তুত, বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে জাপান তথা এশিয়ার একটা বড় অংশের সাহিত্য বেশ খানিকটা উপেক্ষিত বললে অত্যুক্তি হবে না বোধহয়। যাঁরা দেশ বিদেশের সাহিত্যে ডুবে থাকেন, তাঁদের কাছে জাপানি সাহিত্যের পাঠ পরামর্শ চাইলে সবার আগে পাই হারুকি মুরাকামির নাম। সেই পরিসর আর একটু বাড়ালে কেন্জাবুরো ওই কিংবা ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা। এর বাইরে সমকালীন লেখক লেখিকারা সেদেশে জনপ্রিয়তা পেলেও তাঁর ছোঁয়াচ উপমহাদেশের এক বিরাট অংশের বইপোকাদের দুয়ার অবধি এসে পৌঁছয়নি। তার অন্যতম কারণ বলে আমার মনে হয়েছে সঠিক অনুবাদের অভাব। সেসব কথা থাক, নিজের কথায় ফিরি। ২০১৮-১৯ সাল নাগাদ এক বন্ধু মারফত জাপানের লেখাপত্রের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ হয়। আমি বরাবর রহস্য গল্পের ভক্ত। তাই শুরুটা করেছিলাম কেইগো হিগাশিনোর ‘দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স’ দিয়ে। একেই মূল লেখার ইংরেজি অনুবাদ, তার উপর মার্ডার মিস্ট্রি, ফলে এই বইতে ভাষার বাঁধুনি কিংবা সাহিত্যের চিরায়ত রস খুঁজতে গেলে ভুল হবে। কিন্তু আমায় স্তম্ভিত করে দিয়েছিল প্লট ট্যুইস্ট। প্রচলিত ‘হুডানিট’ না হওয়ায় এই গল্পে খুনি কে, তা পাঠক আগেভাগেই জেনে যাবেন। কিন্তু বইয়ের একেবারে শেষ অবধি মেলানো যায় না দেহ লোপাটের অঙ্ক।

গুগল করে জানতে পারি, বইটি প্রথম প্রকাশ পায় ২০০৫ সালে। জাপানের পাঠক মহলে সেটি বিপুল ভাবে সমাদৃত হলেও সুপাঠ্য ভাষান্তরের অভাবে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা দুনিয়ার পাঠক সমাজের কাছে তার হদিশ পৌঁছতে বেশ খানিক সময় লেগে গিয়েছে। এরপর আর দেরি করিনি। একে একে পড়ে ফেলি হিগাশিনোর ‘ম্যালিস’, ‘নিউকামার’, ‘স্যালভেশন অফ এ সেন্ট’। কোনওটাই আমার মতো থ্রিলারপ্রেমীকে হতাশ করেনি। জাপানি সাহিত্যে ডুব দেওয়ার সেই শুরু। ইতিমধ্যেই করোনা অতিমারী থাবা বসিয়েছে চতুর্দিকে। লকডাউনের নিরবিচ্ছিন্ন সময়কে কাজে লাগিয়ে একের পর এক খুঁজে খুঁজে পড়তে শুরু করলাম জাপানি লেখক লেখিকাদের বই, যাঁদের মধ্যে আছেন ইয়োকো ওগাওয়া (Yoko Ogawa), সায়াকা মুরাতা  (Sayaka Murata), ওসামু দাজাই (Osamu Dazai), ব্যানানা ইয়োশিমোতো (Banana Yoshimoto), কোবো আবে (Kobo Abe), নাৎসুও কিরিনো (Natsuo Kirino), ফুমিকো এনচি (Fumiko Enchi), কানায়ে মিনাতো (Kanae Minato),  সাতোশি ইয়াগিসাওয়া (Satoshi Yagisawa)। এছাড়া পড়েছিলাম ওতসুইচির (Otsuichi) ‘গথ’ এবং এদোগাওয়া র‍্যানপোর (Edogawa Ranpo) হরর-ধর্মী কিছু ছোট গল্প। পড়তে গিয়েই জানতে পারি, র‍্যানপোর আসল নাম তারো হিরাই। লেখক এডগার অ্যালান পো-র প্রবল ভক্ত তারো প্রিয় লেখকের নামের অংশ টুকরো করেই বানিয়ে নিয়েছিলেন নিজের ছদ্মনাম। জাপানের সমকালীন গোয়েন্দা গল্প কিংবা রহস্য-রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিকদের নাম ইদানিংকালে পাঠক জগতের অনেকের কাছেই ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠছে। তবে র‍্যানপোর নাম কজনই বা জানেন?

রহস্য-রোমাঞ্চ কাহিনির আগ্রহী পাঠিকা হওয়ায় জাপানি সাহিত্য বললেই আমার ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় সবার উপরে থাকবে হিগাশিনোর লেখা বই। তার অন্যতম কারণ হল, হিগাশিনোর গল্পে রহস্যের পর্দার আড়ালেই রয়েছে জটিল মনস্তত্ত্বের পরত। কখনও অপরাধীর সাইকোলজি নিয়ে নাড়াঘাঁটা করেছেন লেখক, তো কখনও দুঁদে গোয়েন্দা তথা অঙ্ক-শিক্ষকের ভাবনার গভীরে ডুব দিয়েছেন সমান দক্ষতায়। কোনও গল্পে উঠে এসেছে পুলিশ-প্রসিডিওরের খুঁটিনাটি। গোয়েন্দা গল্পের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ ‘খুনি কে’ ঘরানার খাঁচা থেকে বেরিয়ে তুখোড় সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হওয়ায় সমস্ত মালমশলা মজুত রয়েছে গল্পগুলিতে।

এছাড়া ভালো লেগেছিল ইয়োকো ওয়াওয়ার রিভেঞ্জ। এটি মূলত ১১টি ছোটগল্পের সংকলন, যার প্রতিটি গল্পই পরস্পরের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে সংযুক্ত। প্রত্যেকটি গল্পই ‘ডার্ক’। বইয়ের নামের প্রতি যদিও লেখিকা সুবিচার করেননি তেমন, কারণ ‘রিভেঞ্জ’-এর কোনও গল্পই সেই অর্থে প্রতিশোধের কাহিনি নয়। গল্পগুলি শুরু হয় বেশ সাধারণ ভাবেই। কিন্তু আপাত নিরীহ যেই গল্পই আচম্বিতে ‘ডার্কনেস’-এ ঝাঁপ দেয়। প্রথম গল্পটির কথাই ধরা যাক। ‘আফটারনুন অ্যাট দ্য বেকারি’ গল্পের শুরু হয় রবিবারের এক সুন্দর বিকেলে। এক মহিলা তাঁর ছেলের জন্মদিনের কেক কিনবেন বলে একটি বেকারিতে ঢোকেন। সপ্তাহান্তের বিকেল হওয়া সত্ত্বেও সেদিন বেশ অস্বস্তিকর ফাঁকা সেই কেক শপ। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য এক ক্রেতা আসেন। মহিলার সঙ্গে খুচরো কথোপকথনের মধ্যেই তিনি জানতে পারেন তাঁর ছেলের জন্মদিনের কথা। কৌতূহলবশত জানতে চান বার্থডে বয়ের বয়স কত। মহিলা ভাবলেশহীন মুখে উত্তর দেন, “ছয়। ওর বয়স সব সময় ৬ বছরই থাকবে। ও মারা গিয়েছে।”

তারপর নিজে থেকেই জানান, ১২ বছর আগে খেলতে খেলতে একটি একটি পরিত্যক্ত ফ্রিজের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল ছেলে। ৩ দিন খোঁজাখুঁজির পর সেই বন্ধ ফ্রিজ থেকে তার দেহ উদ্ধার করা হয়। “ওকে যখন দেখি, আমি বুঝতেই পারিনি ও আর নেই। আমি ভেবেছিলাম তিনদিন গায়েব থাকার পর লজ্জায় ও আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।” হাসিখুশি গল্প ঠিক এভাবেই বিনা প্রস্তুতিতে ডুব দেয় মনের গহীনের অন্ধকারের রাজ্যে।

রিভেঞ্জে প্রতিশোধ নেই। তবে প্রতিশোধের গল্প পড়তে চাইলে পড়া যায় কানায়ে মিনাতোর ‘কনফেশন’। এক হাইস্কুল শিক্ষিকার ৪ বছরের ছোট্ট মেয়ে খুন হয়ে যায়। খুনির সন্ধান পেতে বেশি দূর পাতা ওল্টাতে হবে না, অল্প সময়েই জানা যায় স্কুলেরই দুই ছাত্র এই ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটিয়েছে। হত্যার মোটিভও স্পষ্ট হয়ে যায় কিছুক্ষণেই। তারপর গল্প এগোতে থাকে সন্তানহারা মায়ের তাঁর মেয়ের খুনিদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টাকে ঘিরে। গল্পে তেমন জটিলতা নেই, কিন্তু মুখ্য চরিত্রগুলির মনস্তত্ত্ব এতটাই খুঁটিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন মিনাতো যে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব হয় না। বইতে পাঠকের সাইকোলজি নিয়েও খেলেছেন লেখিকা। পড়তে গিয়ে যে মুহুর্তে ভাববেন এ তো সেই একই প্রেডিক্টেবল গল্প, মুহুর্তের মধ্যে অপ্রত্যাশিত মোচড়ে পুরো চিত্রটাই বদলে যাবে। ন্যারেশনের কেকের উপর চেরি হল অভাবনীয় পদ্ধতিতে নেওয়া প্রতিশোধ, বা বলা ভালো শাস্তি। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়তে চাইলে কনফেশন পড়তে পারেন, ঠকবেন না।

ওসামু দাজাইয়ের ‘স্কুলগার্ল’ও বেশ ভালো লেগেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে এক স্কুলছাত্রীর গল্প, যার বিশেষত্ব হল, এটি একটি মাত্র দিনের ঘটনাপ্রবাহ। সকালে ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত পিতৃহারা এক টিনেজারের নিত্যকার কাজের দিনলিপি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে বয়সন্ধি পেরোনো এক কিশোরীর মানসিক উথালপাতাল ফুটিয়ে তোলা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।

যে বইটির কথা উল্লেখ না করলেই নয়, সেটি হল ‘গথ’। আদ্যোপান্ত ডার্ক থিমের ছটি ছোটগল্প রয়েছে বইটিতে। স্কুলপড়ুয়া দুজন কিশোর-কিশোরীর অত্যন্ত ডিস্টার্বিং এক হবিকে ঘিরে বোনা হয়েছে গল্পগুলি। দুই বন্ধু মিলে কিছু হাড়হিম অপরাধের তদন্তে নামে যার মধ্যে রয়েছে সিরিয়াল কিলিং, পথকুকুরদের রস্যজনক অন্তর্ধান, আত্মহত্যা, কবর খোঁড়ার নেশার মতো ঘটনা। রহস্য সমাধান কিংবা ভিক্টিমদের সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে নয়,  স্রেফ ‘নেশা’ থেকেই সেই তদন্ত শুরু করে তারা, যাতে আরও কাছ থেকে খুঁটিয়ে অপরাধ সংঘটিত হতে দেখার সুযোগ মেলে। ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধ ঘটতে দেখেও তারা বাধা দেয় না। অল্প বয়সি দুটি ছেলেমেয়ের সহমর্মিতাহীন মনের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা আঁধারের গল্পই ওথে তুলে এনেছেন ওতসুইচি। সেই আঁধারের তীব্রতা এতটাই যে পড়তে গিয়ে কখনও শিউরে উঠতে হয়,  তো কখনও ঘৃণায় মুখ বিকৃত হয়ে যায়। ‘গোর’ জঁর যাঁরা অপছন্দ করেন, তাঁদের কিংবা দুর্বলচিত্ত পাঠক-পাঠিকাদের জন্য এই বই নয়।

 

২ – মাঙ্গা পুরাণ

এসব পড়তে পড়তেই পরিচয় হয় মাঙ্গার সঙ্গে। এই নামটি পাঠকদের অনেকের কাছেই সুবিদিত। তবে যাঁদের এই শব্দটির সঙ্গে আলাপ নেই, তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাই, মাঙ্গা হল এক ধরনের কমিক বুক, বা বলা ভালো গ্রাফিক নভেল। ছবি আর গল্প সম্বলিত এই বইয়ের সঙ্গে যদিও সাধারণ কমিক বুকের কিছু মূলগত তফাত আছে। আমার মতো যে সব ছাপোষা বাঙালি পাঠক পাঠিকা কমিক্স বলতে ‘হাঁদা ভোদা’ কিংবা ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ বোঝেন, তাঁদের জন্য বলে রাখি, জাপানের এই গ্রাফিক নভেল এসবের থেকে অনেকটাই আলাদা। মূল তফাত বোধহয় হাস্যরসের জায়গায়। মাঙ্গা হল জাপানি সাহিত্যের এমন একটি ধারা যা বহিরঙ্গে আদ্যোপান্ত হাসির উপাদানে ঠাসা হালকা চালের গল্পের বইয়ের মতো দেখতে হলেও আদতে রীতিমতো সিরিয়াস সাহিত্য। সাদা কালো আঁকা আর তার দোসর গল্পের মধ্যে থাকে টিনেজ রোম্যান্স, প্রেম, যৌনতা, রহস্য, রোমাঞ্চ, অ্যাকশন কিংবা অ্যাডভেঞ্চারের ঠাসবুনোট। মোট কথা, সিরিয়াস সাহিত্যের মতোই যে কোনও ঘরানায়, যে কোনও আঙ্গিকে লেখা হতে পারে মাঙ্গার গল্প। মাঙ্গা শব্দটি এসেছে দু’টি আলাদা জাপানি শব্দ ‘মাং’ এবং ‘গা’ থেকে। ‘মাং’ শব্দের অর্থ তাৎক্ষণিক বা চটজলদি এবং ‘গা’ শব্দের অর্থ ছবি। প্রথাগত কমিক বুকের সঙ্গে মাঙ্গার অন্যতম তফাত হল ছবির রং নির্বাচনে। বাজার চলতি কমিক বুকে সাধারণত রঙিন ছবিরই দেখা মেলে। তবে মাঙ্গার ছবি আঁকা হয় মূলত সাদা এবং কালো কালির আঁচড়ে। রঙিন মাঙ্গাও বাজারে মেলে বটে, তবে সেসব নিছকই ‘স্পেশ্যাল এডিশন’।

আরও একটা মজাদার তফাত আছে। জাপানি মাঙ্গা পড়তে হয় বইয়ের ডানদিক থেকে বাঁদিকে। অর্থাৎ খাঁটি মাঙ্গা পড়তে গেলে শুরু করতে হবে পাতার উপরের ডানদিক থেকে, যা শেষ হবে পাতার নীচে বাঁদিকে গিয়ে। জনপ্রিয়তার নিরিখে বিশ্বসাহিত্যের বাজারে মাঙ্গা যেভাবে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে তাতে আসল মাঙ্গার স্বাদ এনে দিতে গ্রাফিক নভেলগুলি ইংরেজি সহ অন্য ভাষায় অনুবাদ করার সময়েও ইদানীংকালে প্রকাশকরা অনেকে সময়েই ডানদিক থেকে মাঙ্গা পড়ার মূল ধারাটি অনূদিত সাহিত্যেও অক্ষুন্ন রাখছেন।

দ্বাদশ শতকে হোকুসাই নামে একজন জাপানি শিল্পীর হাত ধরে মাঙ্গার উত্পত্তি বলে মনে করা হয়। মাঙ্গা নামটিও তাঁরই দেওয়া বলে দাবি করেন সাহিত্যপ্রেমীদের অনেকে। উডব্লক প্রিন্টের মাধ্যমে সেই সময় মাঙ্গার ছবি আঁকা হত। তবে মাঙ্গা সিরিয়াস সাহিত্য হিসেবে জন্রপ্রিয়তা পায় আরও বেশ খানিকটা পরে, সপ্তদশ শতকে। মাঙ্গা নামটিও জনমানসে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করে সেই সময় থেকেই। জাপান তথা সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম মাঙ্গা হিসেবে ধরা হয় ‘চোজু জিনবুত্সু গিগা’কে (Scrolls of Frolicking Animals)। বাঁদর, ব্যাং, খরগোশ সহ বিভিন্ন প্রাণীর মজাদার, ব্যাঙ্গাত্মক এবং বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথনের গল্পের সঙ্গে সাদাকালো রেখাচিত্রের মিশেলে তৈরি সেই মাঙ্গার স্রষ্টা ছিলেন একাধিক শিল্পী। স্পিচ বাবলের মধ্যে লেখা কথোপকথন এবং আড়ম্বরহীন ছবির সেই স্টাইল পরবর্তীকালে গ্রাফিক নভেল রচনার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় হয়ে ওঠে। 

জাপানি পাঠক পাঠিকাদের মধ্যে মাঙ্গার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। সচিত্র গল্প এবং বিষয়বস্তুর বৈচিত্রই মাঙ্গার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। জটিল অথচ মনোগ্রাহী স্টোরিলাইন, গল্পের চরিত্রদের মধ্যে ইমোশনাল ডেভলপমেন্ট, তাদের জীবনের ওঠাপড়া পাঠকদের আঠার মতো আটকে রাখে বইয়ের পাতায়। আর গল্পের জঁর যদি অ্যাডভেঞ্চার হয় তাহলে তো কথাই নেই! তবে মাঙ্গার  শ্রেণি বিভাগ করা হয় প্রাথমিক ভাবে জঁরের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং ‘টার্গেট অডিয়েন্স’-এর বয়সের উপর ভিত্তি করে। পাঠক পাঠিকাদের বয়সের নিরিখে রচিত মাঙ্গাকে মূলত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. শোনেন - ১৩-১৯ বছর বয়সি কিশোররা এই মাঙ্গার পাঠক। এই ধরনের গ্রাফিক নভেলগুলিতে প্রাধান্য পায় বন্ধুত্ব, প্রেম, অ্যাকশনের কাহিনি। ড্রাগন বল, নারুতো, মাই হিরো অ্যাকাডেমিয়া ইত্যাদি মাঙ্গা এই  শ্রেণিভুক্ত।

২. শোজো - এর পড়ুয়া মূলত ১৩-১৯ বছর বয়সি কিশোরীরা। রোম্যান্স, ড্রামা, বয়সন্ধি জনিত শারীরবৃত্তীয় এবং মানসিক পরিবর্তন ও টানাপড়েন এই ধরনের মাঙ্গার মূল উপজীব্য। প্রচ্ছদে গোলাপি রংয়ের আধিক্য দেখলে সহজেই শোজো মাঙ্গা চেনা যায়। সেলর মুন, ফ্রুট বাস্কেট, স্কিপ বিট, সে আই লাভ ইউ অত্যন্ত জনপ্রিয় শোজো।

৩. সেইনেন - প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা এই মাঙ্গার টার্গেট অডিয়েন্স। অ্যাকশন, ভায়োলেন্স, প্রেম, যৌনতায় ভরপুর এই মাঙ্গা জাপান ও বহির্বিশ্বের সাবালক পাঠকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। সেইনেন মাঙ্গার মধ্যে বিখ্যাত হল আকিরা, ভ্যাগাবন্ড, মনস্টার, ব্লেম, বারসার্ক।

৪. জোসেই - ১৮ বছরের ঊর্দ্ধের পাঠিকাদের জন্যই মূলত লেখা হয় জোসেই। শোজোর মতোই রোম্যান্স এবং ড্রামার পাশাপাশি এই  শ্রেণির মাঙ্গায় প্রাধান্য পায় যৌনতাও। তবে শোজোর মতো প্রচ্ছদ দেখে এই মাঙ্গা শনাক্ত করা কঠিন। লাভলেস, মিডনাইট সেক্রেটারি, প্যারাডাইস কিস, কার্নিভাল জোসেই মাঙ্গার মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত।

৫. কোদোমোমুকে - ৪ থেকে ১২ বছরের শিশুদের পাঠ্য এই মাঙ্গার বিষয়বস্তু আবর্তিত হয় পশুপাখি এবং রূপকথার গল্প, অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনিকে কেন্দ্র করে। পোকেমন মাঙ্গা কোদোমোমুকে ঘরানার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত।

যদিও এমন কোনও নিয়ম বা বাধা নেই যে কোনও একটি নির্দিষ্ট বয়সের জন্য জন্য রচিত মাঙ্গা অন্যরা পড়তে পারবেন না। বরং এমন অনেক মাঙ্গা রয়েছে যা সব বয়সের মানুষের জন্যই সমান উপভোগ্য।

 

মাঙ্গা এবং যৌনতা

সেইনেন এবং জোসেই মাঙ্গার অন্যতম উপজীব্য হল যৌনতা। শুধুমাত্র নারী-পুরুষের বিষমকাম নয়, সমলিঙ্গ প্রেম এবং যৌনতাও নানা আঙ্গিকে ধরা দিয়েছে মাঙ্গায়। বস্তুত, মাঙ্গার গল্প বহুক্ষেত্রেই অতিযৌনতার দোষে দুষ্ট বলে অভিযোগ করে থাকেন পাঠকরা। উঠেছে নারী শরীরকে পণ্যায়নের অভিযোগও। শুধু বিষয়বস্তুই নয়, ছবিগুলির ছত্রে ছত্রেও তার প্রমাণ মেলে। লাস্যময়ী ক্ষীণকটি সুস্তনী তরুণী, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাঁদের দেখা মেলে শর্ট স্কার্ট এবং বাটন খোলা শার্টে। গল্প অনুযায়ী সেসব চরিত্র সাবালিকা হলেও কার্যক্ষেত্রে ছবি দেখে স্কুলপড়ুয়া নাবালিকা বলে ভ্রম হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শোনা যায়, প্রাথমিক ভাবে মাঙ্গার টার্গেট অডিয়েন্স ছিলেন প্রধানত ২৫-৩০ বহরের যুবকরা। তাই তাঁদের মনোরঞ্জনেই শুরু হয়েছিল এই ট্রেন্ড। তবে পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা, বিশেষত গৃহবধূদের যৌন চাহিদা,  ফ্যান্টাসি ট্যাবু-হীন ভাবে উঠে এসেছে মাঙ্গায়। ভাই-বোনের মধ্যে যৌন সম্পর্ক, অজাচার, ধর্ষণের মতো অপরাধের আধারেও বোনা হয়েছে গল্প। সেই নিরিখে দেখলে সাহিত্যের অন্যান্য ধারাগুলির তুলনায় বেশ আগেভাগেই সাবালক হয়েছে মাঙ্গা।

রয়েছে ফ্যান সার্ভিস এবং পর্নোগ্রাফি যোগও। নীল ছবির দুনিয়ায় রীতিমতো জনপ্রিয় ‘হেন্তাই’-এর উৎপত্তি এবং বিকাশে ভূমিকা রয়েছে মাঙ্গার। এছাড়া পাঠক পাঠিকাদের চাহিদার ভিত্তিতে মুদ্রিত এমন অনেক মাঙ্গা রয়েছে যেগুলি গল্পের বাহুল্যবর্জিত এবং যৌনতাকেন্দ্রিক। এই সমস্ত মাঙ্গারও বিপুল বাজার রয়েছে। বিকৃত কাম, বিশেষত সামুদ্রিক প্রাণীদের সঙ্গে যৌনতা, এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও লঘু চালে পরিবেশিত হয় সেসব গল্পে।

গল্পের পাশাপাশি মাঙ্গার অবিচ্ছেদ্য অংশ হল ছবি। সাদা-কালো ছবিতে ছোট স্ট্রোকের তুলনায় প্রাধান্য পায় কালির পরিছন্ন এবং লম্বা আঁচড়। ছবিতে নাটকীয়তা আনতে ব্যবহার করা হয় ধূসর বর্ণের নানান শেড। মার্কিন কমিকসের তুলনায় জাপানি গ্রাফিক নভেলের ছবি অনেকটাই কম ‘রিয়ালিস্টিক’। বরং সহজ সরল রেখার মাধ্যমে ঘটনার ঘনঘটা ফুটিয়ে তুলতে চরিত্রগুলির ‘ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন’ মুখ্য ভূমিকা নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই মৌখিক অভিব্যক্তি আক্ষরিক অর্থেই অতিরঞ্জিত হলেও তা গল্পপাঠে ব্যাঘাত তো ঘটায় না-ই, উল্টে এই ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন মাঙ্গার স্বকীয় ঘরানা তৈরিতে অপরিহার্য। মাঙ্গা-শিল্পীদের বলা হয় মাঙ্গাকা। প্রত্যেক মাঙ্গাকার নিজস্বতার ছোঁয়াতেই পরিপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে গল্পগুলি। তবে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়, তা হল ছবিতে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে প্রায় প্রত্যেক চরিত্রের চোখের আকার অস্বাভাবিক রকমের বড়। মাঙ্গায় এই ট্রেন্ড প্রথম এনেছিলেন অ্যাস্ট্রোবয়ের স্রষ্টা ওসামু তেজুকা। তেজুকা  নিজে ওয়াল্ট ডিজনির অ্যানিমেশনের প্রবল ভক্ত ছিলেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাম্বি তাঁর অন্যতম পছন্দের ছবি ছিল, যা ৮০ বারেরও বেশি দেখেছিলেন তিনি। ডিজনির চরিত্রগুলির বৃহদাকৃতি, অভিব্যক্তিপূর্ণ সেই চোখই মাঙ্গার ছবি আঁকার সময় তেজুকার চোখে ভাসত। তিনি ছিলেন সমকালীন মাঙ্গা আঁকিয়েদের পথিকৃৎ, পরবর্তীতে অন্যান্য মাঙ্গাকারাও তাঁর অনুকরণে মাঙ্গা-চিত্রণ শুরু করেন। অচিরেই তা ‘ট্রেন্ড’ হয়ে ওঠে।

সাধারণত সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় মাঙ্গা। সমগ্র গল্প শেষ হওয়ার পর পেপারব্যাক কিংবা হার্ডকভার বই আকারে বাজারে আসে তা। সবচেয়ে জনপ্রিয় মাঙ্গাগুলির মধ্যে রয়েছে উজুমাকি, নারুতো, অ্যাস্ট্রোবয়, ড্রাগন বল, স্ল্যাম ডাঙ্ক, ডেমন স্লেয়ার, কিংডম প্রভৃতি, যেগুলি এযাবৎ অন্তত ১০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সব্বাইকে পিছনে ফেলে ‘ফার্স্ট’ হয়েছে এইচিরো ওদার ‘ওয়ান পিস’। সারা পৃথিবীতে ৪৭০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে এই বইটি। জলদস্যুদের গল্প সম্বলিত ফ্যান্টাসি-অ্যাডভেঞ্চার জঁরের এই মাঙ্গাটির ৯৬টি খণ্ড (ভল্যুম) রয়েছে এবং এখনও নিয়মিত তা প্রকাশিত হয়ে চলেছে। জাপানে শুধুমাত্র তরুণ প্রজন্ম নয়, বরং প্রবীণ পাঠক পাঠিকাদের মধ্যেও এই গাফিক নভেলের গগনচুম্বী চাহিদা রয়েছে। তা এতটাই যে জাপানি সংস্কৃতি তো বটেই, দেশটির অর্থনৈতিক বিকাশে সক্রিয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মাঙ্গার। দেশটিতে নাগরিক পিছু প্রতি বছরে গড়ে ১৯টি মাঙ্গা বিক্রি হয়। ২০২৩ সালে মুদ্রিত এবং ডিজিট্যাল মাঙ্গা মিলিয়ে প্রায় ৬৯৩ বিলিয়ন ইয়েনের ব্যবসা করেছে জাপান, ভারতীয় অর্থে যার মূল্য প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। ভারত তো বটেই, জাপানের সীমানা ছাড়িয়ে ফ্রান্স, জার্মানি সহ ইউরোপের দেশগুলিতে, এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যবসার নিরিখে মাঙ্গার লক্ষ্মীলাভের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। ফ্রান্সের কমিক বই বাজারের ৪০ শতাংশ জুড়ে দাপিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে মাঙ্গা। জার্মানির ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটাই এক লাফে ৭০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে।

প্রাথমিক ভাবে মাঙ্গাকাদের বেশিরভাগই ছিলেন পুরুষ। তবে ষাটের দশক থেকে  মহিলারাও এই কাজে যোগ দিতে শুরু করেন। বর্তমানে মাঙ্গা শুধুমাত্র সাহিত্য কিংবা বিনোদন জগতের ঘেরাটোপে আটকে নেই, বরং স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতেও পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে এই গ্রাফিক নভেল। কিয়োটোর সেইকা বিশ্ববিদ্যালয় হল জাপানের প্রথম এবং একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শুধুমাত্র মাঙ্গা বিষয়ক পেশাদার কোর্স করানোর জন্য সুনির্দিষ্ট ফ্যাকাল্টি রয়েছে। এছাড়াও আছে ভোকেশনাল কোর্স এবং ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যার মাধ্যমে উৎসাহী ছাত্রছাত্রীরা পেশাদার মাঙ্গা-শিল্পীদের কাছ থেকে হাতে-কলমে এই ব্যাপারে শিক্ষালাভের সুযোগ পায়। গল্প বোনা, ছবি আঁকার পদ্ধতি শেখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থায় কাজের সুলুকসন্ধানও মেলে তাঁদের কাছে। সার্বিক ভাবে জাপানে একটি পৃথক এবং বিপুল লাভজনক ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠেছে মাঙ্গা।

জাপান তর্কাতীত ভাবে এশিয়ার উন্নত দেশগুলির তালিকায় প্রথম সারির একেবারে উপরের দিকেই থাকবে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিজ্ঞানমনস্কতাকে জাপান যেমন দেশজ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে, জাপানি সাহিত্যকর্মের সঙ্গে যৎসামান্য পরিচয়েই মনে হয়েছে, এই দিকটিও প্রথমটির সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। জাপানী সাহিত্য চর্চার যে কী সুবিশাল পরিসর রয়েছে, তা পড়তে শুরু না করলে বোঝানো মুশকিল। সাধারণ ফিকশন হোক, কিংবা মাঙ্গা দুই ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে বিশ্ব সাহিত্যের তাবড় খেলোয়াড়কে বলে বলে গোল দিতে পারে জাপানি সাহিত্য।