চিঠিপত্রের গোগল ও 'ডেড সোলস'
- 07 November, 2024
- লেখক: শ্যামাশ্রী চৌধুরী
গোগোলের অসংখ্য চিঠির মধ্যে এমন কয়েকটি চিঠি রয়েছে যা 'ডেড সোলস' নামক বিখ্যাত উপন্যাসটি লেখার সময়ে গোগল লিখেছিলেন। এখানে আমরা সেই চিঠিগুলির অনুবাদ, প্রয়োজনীয় টীকা ও ভাষ্য হাজির করতে চলেছি। বাংলায় এর আগে এই চিঠিগুলি প্রকাশিত হয় নি বলেই আমরা জানি। আশা রাখি রুশ সাহিত্যে বাস্তববাদী আখ্যানের জন্ম যে উপন্যাসটির হাত ধরে হয়েছিল, যা এক চিরায়ত সাহিত্যকীর্তি হিসেবে প্রকাশের প্রায় দু শতাব্দী পরেও বিশ্বের নানা কোণে নিয়মিত পঠিত ও চর্চিত হয়ে থাকে, তার চর্চায় এই চিঠিগুলি মূল্যবান দলিল হয়ে উঠবে।
...আমি 'ডেড সোলস' লিখতে শুরু করেছি। প্লটটা বিস্তৃত হয়ে বেশ বড়সড় একটা উপন্যাসের রূপ নিচ্ছে। আমার মনে হয় এটা অত্যন্ত মনোগ্রাহী হবে। কিন্তু তৃতীয় অধ্যায়ে এসে আমি এখন থমকে গেছি। ভালো একজন নিন্দুক খুঁজছি যার সঙ্গে মানুষ ঘনিষ্ঠ হতে পারে।এই উপন্যাসে আমি রাশিয়ার সবটা দেখাতে চাই -- অন্তত একদিক থেকে।
আমার একটা উপকার করুন। আমাকে একটা প্লট দিন। সেটা চিত্তাকর্ষক হল কি না হল তাতে কিছু এসে যায় না যতক্ষণ সেটা একেবারে খাঁটি রাশিয়ার কোনো আখ্যান হবে...
১৮৩৫ সালের ৭ ই অক্টোবর সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে তৎকালীন রাশিয়ার বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আলেকজান্ডার পুশকিনকে এই চিঠি লিখছেন উনিশ শতকের প্রথমার্ধে রাশিয়ার অন্যতম সাহিত্য স্রষ্টা নিকোলাই গোগোল। পুশকিন গোগোলের থেকে দশ বছরের বড় ছিলেন। গোগোলের লেখা যখন সবেমাত্র প্রকাশ হতে শুরু করেছে ততদিনে পুশকিন প্রতিষ্ঠিত খ্যাতিমান সাহিত্যিক। ১৮৩১ সাল নাগাদ তাঁর সঙ্গে গোগোলের দেখা হয়। অগ্রজ এই সাহিত্যিক কীভাবে উৎসাহিত করছেন গোগোলকে নানা প্লট দিয়ে তা নিয়ে পৃথকভাবে একটি আলোচনা করা যেতে পারে। গোগোলের লেখা ছোটগল্পের সংকলন ' Evenings on a Farm Near Dikanka' পড়ে পুশকিন তাঁর বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং পরবর্তীকালে গোগোলের লেখা অনেক ছোটোগল্প প্রকাশিত হয় তাঁর পত্রিকা ' The Contemporary ' তে। গোগোলের বিখ্যাত নাটক ' The Government Inspector ' এর ভাবনা পুশকিনের থেকে পাওয়া এবং পুশকিন পরে বলেছিলেন তিনি লিখলে এত ভালো হত না সেই নাটক।তাই যখন গোগোল 'ডেড সোলস' এর মতো বড়সড় পরিকল্পনা করছেন খুব স্বাভাবিকভাবেই এমন অগ্রজ সাহিত্যিকের কাছে তিনি আরো কিছু চমকপ্রদ কাহিনীর ভাবনা পেতে চাইছেন।আসলে 'ডেড সোলস' আদতে যে অনেক চমকপ্রদ কাহিনীর সমাবেশ হতে চলেছে তা তো স্রষ্টা জানতেনই।
গোগোলের এই চিঠিপত্র এবং অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় মোটামুটিভাবে ১৮৩৫ থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত লেখা হয়েছে 'ডেড সোলস'। পুশকিনকে লেখা এই চিঠিতেই প্রথম তিনি জানাচ্ছেন 'ডেড সোলস'লেখা চলছে। এই লেখা চলাকালীন গোগোল ঘুরছেন নানা দেশ। পুশকিনকে চিঠি লিখছেন সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে। প্রায় একবছর পরে ১২ই নভেম্বর, ১৮৩৬ সালের একটি চিঠি পাচ্ছি যেটা তিনি লিখেছেন জু.কফস্কিকে প্যারিস থেকে।
(২)
... গ্রীষ্মে স্পা এর চারপাশে ঘোরাঘুরি করে সুইজারল্যান্ডে এসেছি শরৎকাল দেখব বলে। তড়িঘড়ি কোনো একটা জায়গায় থিতু হয়ে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। তাই জেনেভার বাইরে একটা ছোট বাড়িতে থাকছিলাম। সেখানে আবার আমি মলিয়েঁ, শেক্সপিয়ার এবং ওয়াল্টার স্কট পড়তে শুরু করলাম। পড়তে পড়তে এমন ঠান্ডা পড়ল যে পড়ার সব ইচ্ছে উধাও হয়ে গেল। জেনেভার শীতকাল আর ঠান্ডা হাওয়া আমাকে প্রায় তাড়িয়েই যেন ভেবে(Vevey) তে নিয়ে এলো...
শেষ পর্যন্ত চমৎকার শরৎকাল শুরু হয়েছিল ভেবে তে, গ্রীষ্মই বলা যায়। আমার ঘরটা উষ্ণ হয়ে উঠল এবং আমি 'ডেড সোলস' আবার শুরু করলাম যার সূচনা হয়েছিল পিটার্সবার্গে । ইতিপূর্বে শুরু হওয়া সবকিছু একটু নতুন করে নিলাম। সমস্ত পরিকল্পনাটা আগাগোড়া ভালোভাবে খতিয়ে দেখলাম এবং এখন আমি এটাকে শান্তভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছি সুনির্দিষ্ট কালপঞ্জির মতো। তখন থেকেই সুইজারল্যান্ড আমার কাছে বেশ মনোমত হয়েছে। এর ধূসর-বেগুনি-হালকা এবং গাঢ়- নীল-গোলাপী পাহাড় সমূহ নির্ভার ও বাতাস বহুল। এই কাজটা যেভাবে হওয়া উচিত যদি সেভাবেই করে উঠতে পারি তবে...কী বিপুল, কী মৌলিক বিষয়! কী বৈচিত্র্যের সমাহার ! রাশিয়ার সবটা ফুটে উঠবে এর মধ্যে ! এটাই হবে আমার প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ। এটা এমনই যা আমার নাম অক্ষয় করে রাখবে। প্রত্যেকদিন সকালে ব্রেকফাস্টের সঙ্গে আমি আমার মহাকাব্যিক কবিতায় তিনপাতা যোগ করি এবং আমার নিঃসঙ্গ দিনকে সমধুর করে তোলার জন্য যথেষ্ট হাসির খোরাক পাই। কিন্তু শেষমেষ ভেবেও ভীষণ ঠান্ডা হয়ে এলো। আমার ঘরে আর কিছুমাত্র উষ্ণতা ছিল না। এর থেকে ভালো কিছু পাচ্ছিলাম না। তখন আমি পিটার্সবার্গের কথা কল্পনা করছিলাম , আমাদের উষ্ণ ঘরগুলো ; তখন খুব স্পষ্টভাবে মনে পড়ছিল আপনার কথা -- ঠিক যেভাবে আপনি আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন যখন আমি আপনার কাছে গিয়েছিলাম। আপনি আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন আর আনন্দিত হয়েছিলেন আমার আসায়... এবং আমার মারাত্মক মন খারাপ করছিল , 'ডেড সোলস' আমাকে উৎসাহিত করতে পারছিল না। এমনকি এটাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিও আর আমার মধ্যে ছিল না। আমার ডাক্তার হাইপোকন্ড্রিয়ার (গুরুতর অসুস্থতার ভাবনায় উদ্বিগ্ন হওয়ার স্নায়বিক রোগ )লক্ষণ খুঁজে পেলেন যা অর্শরোগে ভোগার ফল ; এবং নিজেকে আনন্দে রাখার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তিনি যখন দেখলেন আমি যে অবস্থায় আছি তাতে আনন্দে থাকা সম্ভব নয় তখন আমাকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আমার ইচ্ছা ছিল শীতটা ইতালিতে কাটানোর। কিন্তু ইতালিতে তখন কলেরার প্রকোপ ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। রোগীকে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা একে পঙ্গপালের মতো ঢেকে ফেলেছে। ইতালিতে নিজেকে খুশিতে রাখার কোনো আশা না দেখে আমি প্যারিসে যাত্রা করলাম যেখানে যাওয়ার এতটুকু ইচ্ছে আমার ছিল না...
প্যারিস ততটাও খারাপ নয় যতটা আমি ভেবেছিলাম ; এবং আমার জন্য ওখানে সবথেকে ভালো যেটা ছিল সেটা হল পায়ে হেঁটে বেড়ানোর অসংখ্য জায়গা --- কেবল টুইলরিস গার্ডেনস এবং এলসিস্ ফিল্ডস সারাদিন হেঁটে বেড়ানোর জন্য যথেষ্ট। এদিকে নজর না দিয়ে আমি ভালো পরিমাণ শারীরিক কসরত করতে লাগলাম যেটা এখন আমার ভীষণ প্রয়োজন। এখানে ঈশ্বরের পরিত্রাণের হাত আমার উপরেও বিস্তৃত হল এবং তিনি অলৌকিক কান্ড ঘটালেন। তিনি সূর্যের আলোয় আমাকে উনুনসহ একটি উষ্ণ অ্যাপার্টমেন্ট দেখিয়ে দিলেন এবং পরম ভাগ্যবান আমি আবারও সুখী হলাম। 'ডেড সোলস' দারুণভাবে এগোতে লাগলো ,ভেবে(Vevey)র থেকেও বেশি ঝরঝরেভাবে ও দ্রুততায় ; এবং আমার মনে হতে লাগলো আমি ঠিক যেন রাশিয়াতেই আছি। আমার সামনে রয়েছে সব লোকজন, আমাদের জমির মালিকরা, সরকারি কর্মচারীরা, আমাদের অফিসাররা, আমাদের কৃষক, আমাদের কুঁড়ে ঘর, এককথায় পুরো রক্ষণশীল রাশিয়াটাই। এমনকি এই ভাবনাটা আমাকে মজা দেয় যখন ভাবি যে 'ডেড সোলস' আমি প্যারিসে বসে লিখছি । আরেকটি বিশাল কাজ করা হচ্ছে। এটার কথা ভাবলেই এক বিশুদ্ধ কম্পন আমার ভেতরে বয়ে যায়। এর থেকে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারি...আমি ঈশ্বরিক মুহূর্তের সাক্ষী হব... কিন্তু... এখন আমি 'ডেড সোলস' এ সম্পূর্ণ ডুবে আছি। আমার এই বিশালায়তন মহান সৃষ্টি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। তবুও নতুন শ্রেণীরা এবং সব ধরনের বহু মানুষেরা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, কিন্তু আমি কী করব! আমার দেশবাসীর সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়াটা আমার ভাগ্য। ধৈর্য ! অদৃশ্য কেউ একজন শক্তিশালী লাঠি দিয়ে আমার আগেই লেখে। আমি জানি আমার মৃত্যুর পর আমার নাম আমার থেকে বেশি সৌভাগ্যবান হবে আর আমার এই একই দেশবাসীর উত্তরাধিকারীরা হয়ত অশ্রুসিক্ত চোখে আমার পক্ষেই সওয়াল করে মিটমাট করবে...
আপনি কি এমন কোনো ঝামেলার কথা কল্পনা করতে পারেন যেটা কোনো মৃত ভূমিদাস কিনতে যাওয়ার ফলে ঘটতে পারে। সেটা আমার জন্য একটা দারুণ ব্যাপার হবে কারণ আপনার কল্পনা যেটা নিশ্চিতভাবে দেখবে সেটা আমার কল্পনায় আসবে না। পুশকিনকে এই ব্যপারটা জানাবেন। তিনিও হয়ত তাঁর মতো কিছু খুঁজে পাবেন। আমি চাই সব দিক থেকে ভয়াবহভাবে প্রচুর জিনিস দিয়ে প্লটটা ঠেসে দিতে। আমার মধ্যে এমন অনেক কিছুই আছে যা আমি কোন ক্রমেই আগে ভাবিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি নতুন আরও অনেক কিছু আমাকে বলতে পারেন কেননা প্রতিটা মস্তিষ্কের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা আছে। কাউকে বলবেন না 'ডেড সোলস' কী নিয়ে লেখা। সকলের কাছে নামটা রটিয়ে দিতে পারেন। কেবলমাত্র তিনজন -- পুশকিন, প্লেটনেভ এবং আপনি প্রকৃত বিষয়টা জানবেন...
টীকা -
ভ্যাসিলি আন্দ্রেভিচ জু.কফস্কি উপরিউক্ত তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ। তাঁর জন্ম ১৭৮৩ সালে। গোগোলের থেকে তিনি প্রায় ছাব্বিশ বছরের বড়। তবে তাঁরা একই বছরে প্রয়াত হন। রাশিয়ার রোমান্টিক কবিদের মধ্যে অন্যতম। রাশিয়ান সাহিত্যে তিনিই রোমান্টিক ভাবধারার অনুপ্রবেশ ঘটান। অনুবাদক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। ফেরদৌসি,হোমার থেকে শুরু করে গ্যেটে,বায়রন প্রমুখ বিখ্যাত প্রবীণ ও নবীন লেখকদের সেরা সৃষ্টিগুলি অনুবাদের মাধ্যমে রাশিয়ার পাঠকের সামনে তুলে ধরার অন্যতম কৃতিত্বের দাবিদার ছিলেন তিনি। রাজপরিবারে শিক্ষকতা করেছেন বহুদিন। পুশকিন, গোগোলের মতো প্রতিভাবান অনুজ সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন জু.কফস্কি। এই চিঠি পড়লেই বোঝা যায় তিনি গোগোলের কাছে কতখানি ভরসা ও আশ্বাসের স্থল ছিলেন। তবে চিঠির শেষে 'ডেড সোলস' এর বিষয়ে প্রকৃত তথ্য যে তিনজনকে জানানোর কথা লিখেছেন তাঁদের মধ্যে পুশকিন অন্যতম। দুর্ভাগ্যবশত 'ডেড সোলস' প্রকাশিত হওয়ার আগে পুশকিনের অকালমৃত্যু ঘটে।
৩
১৮৪০ সালের ২৮ শে ডিসেম্বর গোগোল রোম থেকে চিঠি লিখছেন আকসাকভকে। তিনিও রাশিয়ার একজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক। জন্ম ১৭৯১ সালে।বয়সে প্রবীণ এই সাহিত্যিকের সঙ্গে গোগোলের দেখা হয় ১৮৩২ সালে। আকসাকভ গোগোলের মধ্যে সেই খাঁটি রাশিয়ান সৃজনশীল প্রতিভার দীপ্তি খুঁজে পেলেন যা পুশকিন বা অন্য কারো মধ্যে পাননি। তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের এক অদ্ভুত রসায়ন তৈরি হল। গোগোলের উৎসাহেই তাঁর লেখায় এক ধরনের বাস্তবতার ছবি ফুটে উঠতে থাকে। রাশিয়ার আরেক লেখক তুর্গেনিভ যিনি ঘটনাচক্রে গোগোলের ছাত্র ছিলেন তিনিও আকসাকভের লেখার প্রশংসা করেছেন। গোগোল আকসাকভের লেখার সঙ্গে নিজের লেখার তুলনা করে একটি মজাদার মন্তব্য করেন, " আপনার পাখি ও মাছেরা আমার নারী পুরুষদের থেকে বেশি জীবন্ত।"
এহেন প্রিয়জনকে জীবনের বিশেষ ক্রান্তিলগ্নে চিঠি লিখবেন এমনটাই তো স্বাভাবিক। এবার পড়ে দেখা যাক কী লিখছেন তিনি।
আমার ফিরে আসাকে আশা দিতে পারে অন্য একটি পরিস্থিতি -- আমার কাজ। এখন আমি শেষবারের সংশোধনের জন্য 'ডেড সোলস'এর প্রথম খণ্ড প্রস্তুত করছি।আমি বদল করছি, ঘষামাজা করছি এবং অনেক কিছু সম্পূর্ণ নতুনভাবে করছি এবং আমার মনে হচ্ছে আমার উপস্থিতি ছাড়া এর প্রকাশ সম্ভব নয়। একইসঙ্গে এর পরবর্তী অংশটিও আমার মনের মধ্যে আরও বিশ্লেষিত হচ্ছে স্পষ্টভাবে এবং অপরূপময়তায় এবং আমি দেখছি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা বিশালায়তন হতে চলেছে যদি কেবলমাত্র আমার দুর্বল শক্তি পেরে ওঠে তবেই। অন্তত অল্প সংখ্যক মানুষও জানে একটা আপাত তুচ্ছ প্লট যার প্রথম কয়েকটি সহজ,সরল, নিষ্পাপ, পরিশীলিত অধ্যায় আপনি ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছেন ,তা কী ভীষণ শক্তিশালী ভাবনা এবং গভীর বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমার অসুস্থতা অনেকটা সময় কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু এখন, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমার ভীষণ প্রয়োজনীয় সেই তরতাজা ভাবটা আমি কখনও কখনও অনুভব করছি। এর জন্য অংশত কৃতিত্ব আমি দেব শীতল পানীয় জলকে ডাক্তারের উপদেশে সম্প্রতি এটা আমি খেতে শুরু করেছি। ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করুন। তিনি মনে করেন এই শীতল চিকিৎসায় আমার উপকার হওয়া উচিত।রোমের বাতাস এখন চমৎকার, পরিষ্কার। কিন্তু গ্রীষ্মকাল ( ইতিমধ্যে যার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে), আমি নিশ্চিতভাবেই গ্রীষ্মকালটা রাস্তায় কাটাব। দমবন্ধকরা ভিয়েনায় দীর্ঘকাল কাটিয়ে আমি নিজেই নিজেকে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আমার কিইবা করার ছিল? স্বীকার করছি তখন আমার কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না। সব কিছু আমায় স্বল্প বাজেটেই সারতে হত। ইস্ , প্রত্যেক গরমে আমি যদি বহুদূর যাওয়ার সুযোগ পেতাম! রাস্তাটা আমার জন্য আশ্চর্যরকম স্বাস্থ্যকর ... কিন্তু চলুন শুরুতে ফিরে যাই। প্রথমদিকে আপনার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার এই যাত্রার গুরুত্ব আমি বুঝিনি। আমার জন্য এটা অনেকটাই । হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি রাশিয়ার জন্য আমার ভালোবাসার অনুভূতি কী প্রবল। অনেককিছু যা আগে আমার কাছে জঘন্য ও অসহ্য ছিল সেটা এখন এর তুচ্ছতা এবং তাৎপর্যহীনতায় ডুব দিয়েছে মনে হয়। এবং শান্ত ও অবিচলিত আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে আমিই তাদের এতখানি বুকে আগলে রেখেছি....
৪
এবারের চিঠিটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই চিঠিতেই রয়েছে 'ডেড সোলস' প্রকাশিত হওয়ার আগের নানা বিতর্ক ও টানাপোড়েনে লেখকের বিধ্বস্ত হওয়ার কথা। তৎকালীন রাশিয়ার সাহিত্য জগতে সেন্সরশিপের ভূমিকা এবং ক্ষমতার আস্ফালন। গোগোল এই চিঠি লিখছেন তাঁর বিশেষ পরিচিত এবং বিশ্বাসভাজন পি. এ. প্লেটনেভকে। পুশকিন এবং জু.কফস্কি ছাড়া তিনিই আর একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি যিনি জানতেন 'ডেড সোলস' এর প্রকৃত বিষয়বস্তু কী।
শরীরে ও মনে বিধ্বস্ত হয়ে আপনাকে চিঠি লিখছি। এখন পিটার্সবার্গে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। জানি এটা আমার প্রয়োজন, তা সত্ত্বেও আমি যেতে পারছি না। অসুস্থতা কখনও আমাকে এবারের মতো এত বিশ্রীভাবে ঘায়েল করতে পারেনি। এখন এর আক্রমণ কিছু অদ্ভুত আকার নিয়েছে... কিন্তু এসব ভুলে যান। আমি এখন অবশ্যই সেন্সরশিপ নিয়ে কথা বলব, অসুস্থতা নিয়ে নয়। এই আঘাতটা কোনোমতেই আমার কাছে অপ্রত্যাশিত নয় -- গোটা পান্ডুলিপিটাই নিষিদ্ধ হয়েছে। প্রথমে আমি এটা সেন্সর স্নেগরিভকে দিয়েছিলাম। তিনি অন্যদের তুলনায় কিছুটা বিচক্ষণ।যদি কোনো অনুচ্ছেদ তাঁর মনে সন্দেহ জাগায় তিনি আমাকে সরাসরি জানাবেন এবং আমিও তখন এটা পিটার্সবার্গে পাঠিয়ে দেব। দুদিনের মধ্যে আন্তরিকভাবে তিনি জানালেন এই পান্ডুলিপিকে সর্বোতভাবে এর উদ্দেশ্য এবং পাঠকের উপর এর প্রভাবের সাপেক্ষে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে একটা তুচ্ছ জায়গা ছাড়া -- দুটো কি তিনটে নামের পরিবর্তন ( আমি তক্ষুনি রাজি হয়ে গিয়েছিলাম এবং বদলেও দিয়েছিলাম) -- এমন কিছু ছিল না যাতে কঠোরতম সেন্সরশিপের সন্দেহ জাগাতে পারে।তিনি অন্যদেরও এই একই কথা জানিয়েছিলেন। হঠাৎই কেউ একজন তাকে ঘাবড়ে দিয়েছিল এবং আমি দেখলাম তিনি পান্ডুলিপিটা কমিটির সামনে হাজির করলেন।কমিটি এটাকে এমনভাবে নিল যেন আগে থেকেই তারা প্রস্তুত ছিল এবং একটা কমেডির অভিনয় হল কেননা ব্যতিক্রম ছাড়া অভিযোগ সর্বোচ্চ স্তরের কমেডি। কার্যনির্বাহী সভাপতি গোলোখভাস্তভ নামটা শুনেই প্রাচীন রোমানের কন্ঠে চিৎকার করে উঠলেন :
-'ডেড সোলস '! না, আমি কখনও এটার অনুমোদন দেব না -- আত্মা অমর । মৃত আত্মা বলে কিছু হতে পারে না। লেখক অমরতার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন "
খানিকক্ষণের প্রচেষ্টায় বুদ্ধিমান সভাপতি বুঝলেন ,এটা সেই ভূমিদাসদের নিয়ে যাদের নাম এখনও ট্যাক্সের তালিকা থেকে বাদ যায়নি। যেইমাত্র তিনি এবং অন্য সেন্সররা বুঝলেন ''মৃত'' মানে মৃত ভূমিদাসেরা যাদের নাম ট্যাক্স প্রদানের তালিকা থেকে বাদ যায়নি আরো বেশি সমস্যা শুরু হল।
-"না" , চেয়ারম্যান চিৎকার করে উঠলেন এবং তার পরেই অর্ধেক সেন্সররা, " এটা একেবারেই অনুমোদন পাবে না, এমনকি পান্ডুলিপিতে যদি অন্য কিছু নাও থাকে কেবলমাত্র 'ট্যাক্স-চাপানো ভূমিদাস' কথাটাও মেনে নেওয়া হবে না। এর অর্থ দাঁড়ায় এটা ভূমিদাস প্রথার বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত, স্নেগরিভ যখন দেখলেন বিষয়টা হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে নিজেই সেন্সরদের আশ্বস্ত করে বললেন , তিনি পান্ডুলিপি পড়েছেন এবং সেখানে ভূমিদাসপ্রথার বিষয়ে সামান্যতম ইঙ্গিতও নেই। এমনকি এর মধ্যে ভূমিদাসদের সাধারণ চড় থাপ্পর মারার কথাও নেই অন্যান্য বহু গল্পে যা প্রায়ই শোনা যায়। এর বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা।
এর মূল বিষয়টাই হল বিক্রেতাদের মজাদার ভুল বোঝাবুঝি এবং ক্রেতার সূক্ষ প্রবঞ্চনা আর এই অদ্ভুত কেনাবেচা থেকে উদ্ভূত সাধারণ জগাখিচুড়ি । এর মধ্যে ছিল একদল চরিত্র, রাশিয়ার আভ্যন্তরীণ জীবনযাপন আর কিছু সাধারণ বাসিন্দা আর একঝাঁক দৃশ্য যেগুলো মোটেও কলঙ্কজনক নয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না।
"চিচিকভের উদ্যোগ" , ওরা সবাই চিৎকার করতে লাগলো, " এর মধ্যেই ফৌজদারি অপরাধের বিষয় রয়েছে।" " কিন্তু তা সত্ত্বেও, লেখক তাকে সমর্থন করেননি, " আমার সেন্সর বলেছিলেন। " হ্যাঁ তিনি সমর্থন করেননি। কিন্তু তিনি তাকে বাইরে প্রকাশ করে দিয়েছেন।অন্যরা তাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে মৃত ভূমিদাস কিনতে বেরবে। " এই হল সেইসব মতামত। ওগুলো এশিয়ান সেন্সরদের মতামত অর্থাৎ সেইসব বয়স্ক লোকেদের যারা তোষামোদ করে সুযোগ সুবিধা পেয়ে এখন ঘরে বসে আছে। এবার সদ্য বাইরে থেকে ফেরা নবীন ইউরোপীয়ান সেন্সরদের মতামত দেখুন।
" আপনি যাই বলুন চিচিকভ যে দাম দেয়( সেন্সরদের মধ্যে একজন, একেবারে নামই বলছি ক্রাইলভ), আড়াই রুবল যেটা সে একজন ভূমিদাসের জন্য দেয় তাতে সে ক্ষুব্ধ হয়। মানবিক অনুভূতি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। যদিও এই দাম কেবলমাত্র কাগজে লেখা ওই নামের জন্য দেওয়া হয়েছে ; কিন্তু যাই হোক, এই নাম একটা আত্মা, মানুষের আত্মা, একদিন পৃথিবীতে এর অস্তিত্ব ছিল। এটা ফ্রান্স, ইংল্যান্ড অথবা অন্য কোথাও অনুমোদন পাবে না। এরপর আর কোনো বিদেশি আমাদের দেশে আসবে না।"
এগুলোই মূল বক্তব্য যার ভিত্তিতে পান্ডুলিপির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। ছোটো খাটো কিছু মন্তব্য আপনাকে আর বলিনি। যেমন এক জায়গায় বলা হল একজন জমিদার মস্কোতে তার বাড়ি রুচিসম্মতভাবে সাজাতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনল। " কেন এটা নয় যে এমনকি জার মস্কোতে একটা প্রাসাদ বানাচ্ছে ! " একজন সেন্সর বলল(কাচেনভস্কি)।
এই নিয়ে সেন্সরদের মধ্যে অভিনব সব কথোপকথন শুরু হয়েছিল। তারপর আরও এমন সব মন্তব্য ছিল যেগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে আমার লজ্জা করছে। যাইহোক শেষমেষ পান্ডুলিপিটা নিষিদ্ধ করে সব থামল, যদিও কমিটি কেবলমাত্র তিন চারটি অনুচ্ছেদ পড়েছে। আপনার জন্য পুরো গল্পটাই রইল।এটা প্রায় অবিশ্বাস্য, এবং তাছাড়া আমার কাছে এটা সন্দেহজনক। কেউ ভাবতে পারবে না মানুষের মধ্যে এই ধরনের নির্বুদ্ধিতা থাকে। সেন্সররা এতখানি নির্বোধ হতে পারেন না। আমার মনে হয় কেউ আমার বিপক্ষে আছে। যাইহোক বিষয়টা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এই কমেডি, ছলা কলা দেখে আমার মাথা ধরে গেছে। আপনি তো জানেন আমার গোটা অস্তিত্ব এবং সব কিছুই এই কবিতার মধ্যে নিহিত। অবস্থা যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে তাতে আমার শেষ রুটির টুকরোটাও হাত ছাড়া হয়ে যাবে। সাত বছর নিঃস্বার্থ পরিশ্রম করে যা আমি অর্জন করেছি তার সব শেষ হয়ে যাবে ; গোটা পৃথিবী আর তার সকল সুযোগ সুবিধা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছি। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অন্য আর কিছু তো করতে পারি না। আমার এই ক্রমবর্ধমান অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা এবং অসুস্থতা যে কাজটা আমি শুরু করেছি সেটা নিয়ে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না।
আমার খুব বেশি উজ্জ্বল মুহূর্ত নেই কিন্তু এখন আমার হাতগুলোকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত মনে হয়। এমনকি আমি মনে করতে পারিনা আপনাকে কী লিখেছি। আমার মনে হয় আপনি আমার হাতের লেখা একেবারেই পড়তে পারবেন না। এখানে রয়েছে কোনটা অবশ্যই করা হবে। এখন আপনি নিশ্চিত ক্ষমতাশালীদের একজোট করে চেষ্টা করবেন এবং জারের কাছে এই পান্ডুলিপি পৌঁছে দেবেন। আমি আলেকজান্দ্রা অসিপভবনা স্মিরনোভাকে এই বিষয়ে লিখেছি। আমি তাঁকে ডাচেসের সঙ্গে কথা বলে সেইমতো কাজ এগোতে বলেছি অথবা অন্য কোনো উপায়ে, এটা আপনার কাজ, আপনারা এই বিষয়ে একসঙ্গে আলোচনা করেছেন। A.O. (আলেকজান্দ্রা অসিপভবনা) কে বলবেন আমার চিঠিটা পড়ে আপনাকে শোনাতে। প্রিন্স ওডোয়েফস্কির কাছে আমার পান্ডুলিপি আছে। এটা একসঙ্গে পড়ুন,তিন বা চারজন। তার থেকে বেশি নয়। এই ঘটনাটার কোনো প্রচার দরকার নেই। যারা আমাকে সত্যিই ভালোবাসে তারা জানুক। আপনার বন্ধুত্বের উপর, আপনার আত্মার উপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে। আমরা আর বৃথা বাক্যব্যয় করব না। আপনাকে গভীর আলিঙ্গন জানাই , ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন ! যদি পান্ডুলিপিটা অনুমোদন পায় এবং নিয়ম রক্ষার জন্য যদি কোনো সেন্সরের কাছে পাঠানোর দরকার হয় তবে আমার মনে হয় অচকিনকে দিয়ে সই করিয়ে নিলেই হয়। যাইহোক, যেটা ভালো মনে হয় করুন। আমার আর লেখার ক্ষমতা নেই।
টীকা -
সেন্সর স্নেগরিভ গোগোলের বিশেষ পরিচিত এবং গোগোল, পুশকিন, দস্তয়েভস্কির মতো সময়কালীন লেখকদের রচনার পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখা ও বিশ্লেষণে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল।গোগোল তাই 'ডেড সোলস' এর পান্ডুলিপি তাঁকে পড়তে দিয়েছিলেন।
চিঠিতে উল্লিখিত আলেকজান্দ্রা অসিপভবনা স্মিরনোভা ছিলেন রাণীর সহচরী। জু.কফস্কি, মিখাইল লারমনটভ প্রমুখ কবি সাহিত্যিক এবং অভিজাত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর বিশেষ সখ্য ছিল। অন্যান্য কবিদের মতো পুশকিনও তাঁকে কবিতা উৎসর্গ করেছিলেন। পুশকিনের সূত্রেই তাঁর সঙ্গে সমবয়সী গোগোলের আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। 'ডেড সোলস' প্রকাশের ব্যাপারে গোগোল যে তাঁর সহযোগিতা চাইছেন সেটা চিঠিতেই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখক বন্ধুদের সেন্সরশিপ সংক্রান্ত সমস্যা হলেই তিনি হয়ে উঠতেন ' Lady of Good Help'।
প্রিন্স ওডোয়েফস্কি ছিলেন রাশিয়ার লেখক, দার্শনিক, সঙ্গীত সমালোচক ও মানব প্রেমিক। পুশকিনের সঙ্গে 'The Contemporary ' র সম্পাদনা করেছেন যুগ্মভাবে। ১৮৩০ সাল নাগাদ তাঁর সঙ্গে গোগোলের বন্ধুত্ব হয়। দুজনেরই রাশিয়ার লোককথা, ইতিহাস এবং সামাজিক বিষয়গুলোয় আগ্রহ ছিল। একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। গোগোলের মানসিক টানাপোড়েনে তিনিও ছিলেন শান্তির আশ্রয়। 'ডেড সোলস' প্রকাশ সংক্রান্ত সংকটে তিনিও দাঁড়িয়েছিলেন গোগোলের পাশে।
পিটার অ্যালেক্স অ্যান্ড্রভিচ প্লেটনেভের জন্ম ১৭৯২ সালে। তিনি একজন রাশিয়ান কবি এবং সাহিত্য সমালোচক। তাঁর সঙ্গে পুশকিনের বন্ধুত্ব ছিল। পুশকিন তাঁর একটি উপন্যাস উৎসর্গ করেন প্লেটনেভকে । তিনি পুশকিনের মৃত্যুর পর তাঁর পত্রিকা 'The Contemporary' র দায়িত্ব নিয়েছিলেন বেশ কিছুদিন। গোগোলের প্রতি পুশকিন, জু.কফস্কি ও প্লেটনেভের বিশেষ স্নেহের দৃষ্টি ছিল। তাই জীবনের এক বিশেষ সংকট ও সৃজন মুহূর্তে এবং সৃষ্টিশীল বিষণ্ণতায় গোগোল বারবার ছুটে গিয়েছেন তাঁদের কাছে...
এখানে একটি বিষয় বলে রাখা দরকার গোগোল এই চিঠিগুলোতে 'ডেড সোলস' কে কখনও কখনও কবিতা, কখনও উপন্যাস বলেছেন। নানা ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে ১৮৪২ এর মে মাসে 'ডেড সোলস' প্রকাশিত হয় ' The Adventures of Chichikov' বা 'চিচিকভের অ্যাডভেঞ্চার' নামে। দ্বিতীয় সংস্করণে (১৮৪৬) গোগোল নাম বদলে 'ডেড সোলস' করেন।