রসেবশে রুশ : খাবারের কথা
- 06 November, 2024
- লেখক: সুকন্যা দত্ত
ভূতের রাজা গুপী বাঘার গান বাজনা শুনে বেজায় খুশী হয়ে তিন বর দিতে চাইলে সোল্লাসে “আমাদের যেন খাওয়া পরার কোনো ভাবনা না থাকে” আর্জি জানিয়ে গুপী বাঘা ভূতের রাজার কাছে বর চায়। ব্যাস, তার পর থেকে এর হাতে ওর হাতে মিলে তালি দিলেই চলে আসে থালা ভর্তি খাবার৷ ভোজ হোক বা দিন আনি দিন খাই, পেটের জ্বালা জুড়োনোর চাহিদা কার না আছে? কাজের পর পেট ভরে খাবার আর ঘুম হলেই দিলখুশ। পৃথিবীর রূপকথা, লোককথার পাতায় খাবার দাবার নিয়ে বর্ণনার শেষ নেই। রুশ গল্প বিশ্ব সাহিত্যে একটা বিরাট জায়গা করে নিয়েছে।
Alexander Afanasyeb ১৮৫৫ থেকে ১৮৬৩ সালের মধ্যে রাশিয়ার লোকগল্পগুলি সংগ্রহ করেন। সেই গল্প থেকে পাঠক হিম শীতল, রুক্ষ রাশিয়ার খানাপিনা চিনতে পারে অনায়াসেই। কোনো দেশের খাদ্যাভাস তার জলবায়ু র উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। রাশিয়ার উত্তরের তুন্দ্রা অংশ যেমন বরফ জমানো ঠান্ডা দক্ষিণ অংশের আবহাওয়া তুলনামূলক আরামদায়ক। সাইবেরিয়ার দিকে গ্রীষ্মের সময়সীমা সীমিত, বেশীরভাগ সময় বরফের পুরু আস্তরণে জমাট বেঁধে থাকে৷ কোথাও আবার আর্দ্র, গরমের ভাব বেশী৷ মাঝে মাঝে ঝড়বৃষ্টি লেগেই থাকে। এখানকার বায়োজেমস ও বাদামি পডসল মাটি গম, রাই, যব,ওট এবং বিভিন্ন ডাল চাষের জন্য উন্নত। রুটি রাশিয়ার মানুষদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে ধনী ব্যক্তিরা খায় ময়দার রুটি খেলেও এটি গরীবদের সামর্থ্যের বাইরে৷ একারণে জমিদার কাঙালের থেকে সোনার তাল নিয়ে পরিবর্তে এক পুদ (প্রায় ষোল সের) ময়দা ও আধূলি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে গরীবদের কপালে জোটে ভুষিযুক্ত আটা, ওট কিংবা রাই এর লালচে আটার দিয়ে তৈরি রুটি। “গোল রুটি” গল্পে হতদরিদ্র বুড়ো, বুড়ীকে ডেকে গোল রুটি বানিয়ে দেওয়ার আবদার করে। বুড়িও “ হাঁড়ি চেঁছে, ময়দার টিন ঝেড়ে, কোনোরকমে দু'মুঠো ময়দা বের করলো।“
গরীব ঘরে আনাচপাতির বড়ই অভাব। তবু স্বামীর কথায় ময়ান দিয়ে ঘি এ ভাজা গোল রুটি তৈরি করে বুড়ী। এই রুটি রাশিয়ার বিখ্যাত ‘Kolobok' বা হলুদ রঙা গোল রুটি রুশ গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রও বটে। সে নিজেই গড়গড়িয়ে চলে। খরগোশ, নেকড়ে, ভালুক কে গান শুনিয়ে ফাঁকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত শেয়ালের পেটে ঢুকে যায়। মজার ছড়া শোনা যায় রুটির মুখে।
“ ছোট্ট গোল রুটি
চলছি গুটিগুটি,
গমের ধামা চেঁছে,
ময়দার টিন মুছে,
ময়ান দিয়ে ঠেসে
ঘি দিয়ে ভেজে,
জুড়োতে দিলো যেই,
পালিয়ে এলাম সেই।“
গোল রুটির কথা জার্মান ও নরওয়ের গল্পেও পাওয়া যায়। প্রাচীন স্লাভিক শব্দানুসারে ‘Klob' এর অর্থ গোল, প্যাঁচানো রুটি। ২০১১ সাল নাগাদ ইউক্রেন দাবি জানায়, ‘Kolo' শব্দের অর্থ গোল, আবার রাশিয়ার মতে, kolo হল মাখা ময়দা। রাশিয়ার রুটির বিরাট চাহিদার কারণে রুটিওয়ালার উল্লেখও পাওয়া যায়৷ এদেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবন রুটি ছাড়া অচল। তবে কেবল পেট ভরাতেই নয়, পবিত্র কাজেও এর বেশ গুরুত্ব আছে৷ “ সিভকা বুর্কা” গল্পের এক বৃদ্ধ মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা প্রকাশে তাঁর কবরে রুটি রাখার কথা বলেন। বৃদ্ধের মৃত্যুর পর তিন ছেলের রুটি দিতে কবরে যাওয়ার পালা আসে। প্রতিদিন বৃদ্ধ কবর থেকে উঠে এসে ছোটো ছেলের আনা রুটি খেয়ে শান্তি পান। রুটি রুশ দেশে বিশেষ অর্থবহ। উন্নতি ও সফলতার প্রতীক। রুশ “Khelesolnye” নামে আরেক ধরণের রুশি বেশ বিখ্যাত। শব্দটি ভাঙলে অর্থ পাওয়া যায় , ‘Khelb' বা রুটি এবং ‘Sol' হলো লবণ৷ ঘরে রুটি না থাকা বলতে খাদ্যের অভাব বোঝানো হয়। বৃদ্ধ পিতার বিদেহী আত্মার আর্শীবাদে ছোটো ছেলে পেয়ে যায় চেকনাই ঘোড়া। রাশিয়ায় মৃত্যুর পর পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে কালো রুটি আর ভদকা মদ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলিত৷ রুটির এত জনপ্রিয়তার কারণে এখানকার মানুষ রুটি তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন, ইংরেজিতে আমরা যাদের বলি Baker. ‘সীম বীচি’ গল্পে দেখা যায়, মোরগকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে মোরগ গিন্নীকে রুটিওয়ালার কাছে ছুটে যেতে হয়েছিলো। সহজেই বোঝা যায়, রাশিয়ায় রুটি বিক্রেতার অভাব ছিলো না। গম চাষের কথা জানা যায় “ সাত বছুরে” গল্প থেকে। গম চাষের জন্য বীজ বুনে ফসল কেটে মাড়াই করার কথা আছে সেখানে। তবে কেবল সেঁকা রুটিই যে খাওয়া হতো না নয়, শুকনো রুটি বা Rusk এর চল ছিলো রুশ দেশে। অভাবের তাড়নায় দরিদ্র মানুষদের শুকনো রুটি খেতে হতো। “যমরাজ আর সৈনিক” গল্পে রুশ সৈনিক রাজার কাজ থেকে অবসরের পর সামান্য শুকনো রুটি ছিলো সম্বল। “ Sookhar” বা শুকনো রুটি বেশ মজাদার। খাওয়ার পর উদ্বৃত্ত রুটি ছোটো টুকরো করে শুকিয়ে কম তাপে সেঁকে তৈরি হয়। কড়মড়ে রুটি গরীব সমাজে সহায়।
জাউ রাশিয়ার অন্যতম খাবার। “কুড়ুলের জাউ” গল্পে এক ক্লান্ত সৈনিক বৃদ্ধার কাছে খাবারের অনুরোধ করলে বৃদ্ধা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। বুদ্ধিমান সৈনিক শেষ অবধি খুদ, নুন আর ঘি দিয়ে জম্পেশ একটা জাউ বানিয়ে আয়েশ করে খায়। এই খুদ সম্ভবত ওটস৷ রাশিয়ার ‘Kasha বা জাউ এর চাহিদা বিস্তর। রাশিয়ার ওটস এর কাসা, ‘Tolokno' নামে পরিচিত। এই দেশের বিবাহ অনুষ্ঠানে নব দম্পতি একসাথে কাসা রাঁধার প্রচলন আছে। শোনা যায়, যুদ্ধে যাওয়ার আগে সৈনিকরা কাসা দিয়ে ভোজন সারতো। এ কারণে জাউ সৈনিকদের এত প্রিয়। জাউ মূলত লেই বা গলা খাবার। কেবল ঝাল নয় মিষ্টি কাসাও এদেশে বিখ্যাত। “শেয়াল আর সারস” গল্পে সারসকে নিমন্ত্রণ করে শেয়াল সুজির পায়েস রান্না করে। রুশ দেশে এটি “ Mannaya Kasha ”। সুজি আর দুধে তৈরি খাবারটি প্রচন্ড শীতে দ্রুত শরীর গরম করতে সহায়তা করে। এমনকি “ রাজহাঁস ও ছোটো মেয়ে” গল্পের ছোটো মেয়েটি প্রথমে দুধের নদী ও সুজির পাড় থেকে দুধ দিয়ে সুজি খাওয়ার কথায় মনে হয় এখানে মান্নায়া কাসার কথাই বলা হয়েছে।
রুশ গল্পে এসেছে বিভিন্ন দানাশস্যের কথা। “সীম বীচি” গল্পে সীমের বীজ গলায় আটকে যায় এক মোরোগের। অন্যদিকে “মটরগড়গড়ি” গল্পে মটর এর প্রসঙ্গ আসায় বোঝা যায়, এ জাতীয় শস্যের ফলন হয় রাশিয়ার মাটিতে।
রাশিয়ার উপকথায় বহুবার শালগমের প্রসঙ্গ এসেছে। “ কেঠো পা ভালুক” গল্পে এক বৃদ্ধ দম্পতি শালগমের চাষ করে । আর ভালুক এসে সেসব লন্ডভন্ড করে রাখে। শরৎকাল যে শালগম তোলার সময় সে কথাও গল্পে উল্লেখ আছে। চাষীরা শহরে শালগম বিক্রি করে মোটা টাকা পায় । দেশের সৈনিকদের কাছেও শালগম এতটাই প্রিয় যে পঁচিশ বছর রাজার জন্য কাজ করার পরও পঁচিশটা শালগম পুরস্কার না মেলায় আক্ষেপ করে সে। সাইবেরিয়া, স্কেন্ডিনেভিয়ার অঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চাষ হয় শালগমের। আলু, গাজরের সাথে শালগম দিয়ে রাঁধা হয় ‘ Okroshka’ স্যুপ৷ “ Shchi” রান্নায় শালগমের ব্যবহার হয় এই দেশে।
“ গপ্পী – বৌ” গল্পে সরু চাকলির কথা অজানা নয়। বউকে জব্দ করতে ঘরে ফিরে এসে চাষী বলে,
“ উনুন জ্বেলে বেশ কিছু সরু চাকলি বানাও তো, তাতিয়ানা!”
এই চাকলি মূলত রাশিয়ার ব্লিনি বা প্যানকেক। রাশিয়ায় প্রাচীন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ফেব্রুয়ারী মাসের শেষে বা মার্চের শুরুতে শীতের বিদায় বেলায় প্যানকেক সপ্তাহ পালিত হয়, যাকে বলা হয় Maslenitsa দিবস। ব্লিনি তৈরি হয় Buckwheat বা কুট্টু আটা দিয়ে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। সরু চাকলি রাশিয়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তৈরি হয়। “ বরফ- বুড়ো” গল্পে দেখা যায়, সৎ মেয়েকে প্রচন্ড ঠান্ডায় জঙ্গলে রেখে দিয়ে আসার পর মৃত ভেবে শ্রাদ্বানুষ্ঠানে সরু চাকলি ভাজে তার সৎ মা ।
রাশিয়ার নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। সমুদ্র, হ্রদ, জলাশয়গুলোতে মাছের যোগান প্রচুর। মিঠা জলে সার্ডিন, হেরিং, স্যালমন, ইয়েল ট্রাউট ছাড়াও কৃষ্ণ সাগরেও মাছের মেলে অজস্র। “ শেয়াল আর নেকড়ে” গল্পে দেখা যায় বুড়ো স্লেজ গাড়ী করে মাছ ধরতে যাবে। এই মাছ খাওয়ার জন্য জন্য শেয়াল আর নেকড়ের ভিতর লড়াই লেগে যায়। এমনকি সোনার ডিঙি চড়ে রূপোর দাঁড় বেয়ে সরোবরে মাছ ধরতে যাওয়ার কথাও অজানা নয়। রাশিয়ার বিখ্যাত কয়েকটি মাছের পদ হলো, ‘ Ukha', ‘Coulibiac', ‘ Solyanka' ইত্যাদি ।
মাংসের কথা আসতেই রুশ গল্পে একটা লম্বা তালিকা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ‘কেঠো পা ভালুক’ গল্পে দেখা যায় ‘ভাল্লুকের ঠ্যাং কুড়ুলের ঘায়ে কেটে দিতেই সেটাই হলো সে রাতের খাবার। কাটা পা নিয়ে বুড়ো বলে ,
“ এই নে বৌ, রান্না করিস”
বুড়ীও ছাল ছাড়িয়ে সিদ্ধ করে রান্না শুরু করে । কখনও ফসলের পরিবর্তে গৃহপালিত পশু পাখীর মাংস খায় অঞ্চলবাসী। “ শীতের বাসা” গল্পে দেখা যায় এই বুড়ো বুড়ী বাড়ীতে ষাঁড়, ভেড়া, হাঁস, শূকর ও মোরগ পোষে । তারা সিদ্ধান্ত নেয় পরবের দিনে সেগুলো জবাই করে খাবে। তাই সহজেই বোঝা যায়, এসব মাংস রাশিয়ায় জনপ্রিয়। “ যমরাজ আর সৈনিক “ গল্পে সৈনিক তিনটে হাঁস মেরে সরাইখানায় ভাজতে বলে । সুস্বাদু হাঁসের মাংস এখানকার মানুষ বেশ চেটেপুটে খায়৷ রাশিয়ার ভল্গা নদীর বদ্বীপ অংশে, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের লবনাক্ত জলের জলাভূমি, দক্ষিণের কৃষ্ণ সাগরে, পূবের বৈকাল হ্রদের পাশ্ববর্তী সেলেঙ্গা নদীর বদ্বীপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর সুদূর খবারভস্ক অঞ্চল হাঁস শিকারের জন্য বিখ্যাত। “ব্যাঙ রাজকুমারী” গল্পে যাদুকরী ভাসিলিসা মরালীর মাংসে কামড় দিয়ে হাড়গুলো রেখে দেওয়ার কথাও পাওয়া যায় । কেবল হাঁস নয়, ষাঁড়, গরুর মাংস খাওয়ার কথাও রুশ উপকথায় আমরা পাই। “হাভরোশেচকা” গল্পে যাদু গরুকে জবাই করার কথা জানা যায়। আবার খরগোসের মাংস সেসময় খাওয়া হতো। সে কারণে “ ব্যাঙ রাজকুমারী” র রাজপুত্র খরগোস মারার জন্য ধনুক তোলে । ভেড়ার মাংসের কথা যেমন “ আলদার কোসে আর শিগাই বাই” গল্পে আছে, তেমন “পবনদেব” গল্পে অগ্নিপক্ক হরিণের মাংসের কথাও জানা যায় “।
রাশিয়ার রান্নাঘরে একটা বিশেষ জায়গা হলো মাশরুমের। “সিভকা – বুর্কা” গল্পের এক বুড়োর দুই ছেলে। বড় ছেলে চাষবাস করে আর ছোটো ছেলে ব্যাঙের ছাতা তুলতে যায় বনে। এই ব্যাঙের ছাতাই সম্ভবত মাশরুম। রাশিয়ার Caga শব্দ থেকে Changa শব্দটি এসেছে যার অর্থ মাশরুম। একসময় দেশের তরুনদল জঙ্গলে মাশরুম তুলতে যেতো। এমনকি বিষাক্ত মাশরুমও তারা সনাক্ত করতে পটু ছিলো।
শীত প্রধান দেশে সুরা বা মদ প্রচলিত। অসম্ভব ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে সরাব বা মদ না হলে চলে না। রাস্তায় রাস্তায় শুঁড়ি খানা, সরাইখানায় মদ পাওয়া যায় প্রচুর। “ যমরাজ ও আর সৈনিক” গল্পে সৈনিক এর খাওয়ার বিবরণ থেকে জানা যায়,
“ ভাজা হাঁসটা আর এক বোতল মদ নিয়ে সৈনিকটি খেতে বসল। এক এক ঢোক মদ তারপর এক এক কামড় মাংস, মন্দ আর কী!”
আসলে সে দেশের মানুষের কাছে মদ না হলে ভোজটা ঠিক জমে না। “জমিদারের সাথে কাঙালের ভোজন” গল্পেও কাঙালের আপ্যায়নের জন্য মদ আনা হয়। “ অভাব “ গল্পে গরীব চাষী ঘরের জিনিসপত্র একে একে বিক্রি করে ফেলে মদ খাওয়ার জন্য। “ যাদুকরী ভাসিলিসার কথা” গল্পে দেখা যায়, সওদাগর একটা ষাঁড় মেরে “এক গামলা ভর্তি মধুর সরবৎ করে রাখল।“ রাশিয়ায় মধুর চাহিদা প্রচুর৷ ভাল্লুক অবধি মৌচাক ভেঙে মধু পান করে। এদেশে মধুর মদ “Medovukha” নামে পরিচিত। অন্যদিকে, গরম মধুর সরবতের নাম Sbiten. এই সরবৎ খুব সুগন্ধি ও মশলাদার। “ তীরন্দাজ ও জার্কিন খাঁ” গল্পে দেখা যায়, সৈনিকরা পেয়ালা, পিরিচে মিষ্টি মধুর সরাব খেতে বসে। “ আলদার কোসে আর শিগাই বাই” গল্পে যখন গরীব আলদার কোসে ধনী শিগাই বাই এর বাড়ী রওনা হয় তখন প্রতিবেশীরা হাসাহাসি করে বলে,
“ পেট ভরে খানা দেবে পুরুষ্টু ভেড়ার মাংস, পিনা দেবে সব সেরা আইরান”।
মাংসের সাথে মদ বা আইরান বোধহয় চাইই চাই। আইরান হল টোকো দুধ বা Prostokvasha. এছাড়া “kefir” ও এদেশের একজাতীয় গাঁজানো দুধের পানীয়।
শীতের দেশে আপেলের ফলন প্রচুর৷ বিভিন্ন গল্পে আপেল গাছের কথা বারে বারে এসেছে। “ রাজহাঁস আর ছোট মেয়ে” গল্পে মেয়েটি আপেল গাছকে প্রশ্ন করে,
“ আপেল গাছ, আপেল গাছ, বলো না, হাঁসের দল কো্ন দিকে উড়ে গেছে?”
এছাড়া রুশের মাটিতে স্ট্রবেরী, র্যাস্পবেরি, চেরী, প্লাম, গুজবেরীর ফলন হয় প্রচুর পরিমাণে।
স্বল্প পরিসরে রুশদেশের উপকথার খাদ্যতালিকা ব্যাখ্যা প্রায় অসম্ভব। এত বৃহৎ একটি দেশে বিচিত্র ধরণের আহারের সন্ধান মেলে। “ শেষ হয়ে হইলো না শেষ” এর মতো রসনাকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র। রূপকথা, লোককথা কেবল কল্পনা নয়, বাস্তবের মাটির প্রলেপ এতে আছে। আছে রক্ত মাংসে গড়া মানুষের জীবনযাপনের কথা। তাই ভোজন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ওঠানামার সাথে গল্পগুলির অভ্যন্তরে লেগে থাকা ব্যঞ্জন জিভের ভিতর দিয়ে হৃদয়ে প্রবেশ করুক, এই আমাদের কামনা।
তথ্যসূত্র-
১) রুশ দেশের উপকথা- অনুবাদ – সুপ্রিয়া ঘোষ, সম্পাদনা – ননী ভৌমিক। সংস্করণ – ১৯৮২
২) মণির পাহাড়- সোভিয়েত দেশের নানা জাতির রূপকথা – রাদুগা প্রকাশন, মস্কো, দ্বিতীয় সংস্করণ, অনুবাদ – ননী ভৌমিক, সুপ্রিয়া ঘোষ, সম্পাদনা- অরুণ সোম।