হেমন্ত বিকেল ও কিছু ধূসর পাতা

হেমন্ত বিকেল ও কয়েকটি ধূসর পাতা

শ্যামাশ্রী চৌধুরী

গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ির শব্দ শুনেছি। একটা আবছা ঘুমের মধ্যেই কেটে গেল গোটা রাত।মাঝে মাঝে মনে হল ট্রামের ঢং ঢং শব্দটা সর্পিল গতিতে এগিয়ে আসছে... একাত্তর বছর হল। একটা নিভে আসা দিন , রক্তে ভেজা ঘাস... কিছু ক্ষত সারে না কখনও।

'কয়েকটি আদিম সর্পিণী সহোদরার মতো

এই-যে ট্রামের লাইন ছড়িয়ে আছে

পায়ের তলে, সমস্ত শরীরের রক্তে এদের বিষাক্ত বিস্বাদ স্পর্শ

অনুভব ক'রে হাঁটছি আমি...'

সেই শেষবারের মতো হেঁটেছিলেন কলকাতার পথে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের

সামনের সেই ট্রাম লাইন...মনে রেখেছে কেউ ?

যিনি ট্রামকে বলেছেন, 'Philosopher's Car'

ডায়েরিতে বহুবছর আগে লিখেছেন...

- Trams miserably delay when one in need. Seem to be heavy books-- humourless

১৯৪৬, ৪৭ কালপর্বের দিনলিপি বা Literary Notes এর একজায়গায় জীবনানন্দ লিখছেন 

Even a few years ago, I wd think in terms of running breathlessly after money & amassing it...but now I think more in terms of retaining My youth & health & stopping time & old age, who, however, can never be stopped - It is running its swift irrevocable course -- very often I have to remember my age : 47/48 or 49? (D&R) and 20/21 years to 70 -- And I have to write some novels & many other things before that or preferably before 1 deadline of 60 D&R -- I find mother as I saw father blind,groping,shaking with palsy,incapacitated, unable to do anything & before reaching that stage one will have to finish 'everything' that may give one Tolstoy's or Goethe's satisfaction - But that grand achievement is not for me -

এই সময় তাঁর বয়স ৪৭ বা ৪৮ । কিছু বছর আগে পর্যন্ত টাকা পয়সা রোজগার ও জমানোর চিন্তা ছিল কিন্তু এখন বয়স, স্বাস্থ্য ধরে রাখার কথা ভাবছেন।সময় এবং বার্ধক্যকে যদি থামিয়ে রাখা যেত এমন কথাও মনে হচ্ছে... কিন্তু তা আর কোনভাবেই হবে না। বরং তা অতি দ্রুত অপরিবর্তনীয় গতিতে ছুটে চলেছে। সত্তরে পৌঁছাতে আর কুড়ি  কি একুশ বছর বাকি। তার আগেই বিশেষকরে পারলে ষাট বছরের সময়সীমার মধ্যেই  তাঁকে কিছু উপন্যাস এবং অন্য অনেককিছু লিখতে হবে । অসুস্থ ও অক্ষম হয়ে পড়া বৃদ্ধ পিতা মাতাকে দেখে তাঁর মনে হয়েছে ওই অবস্থায় পৌঁছানোর আগে সেই 'সবকিছু' শেষ করতে হবে যা তাঁকে টলস্টয় বা গ্যেটের মতো আত্মতৃপ্তি দেবে... কিন্তু তেমন মহৎ সিদ্ধি তাঁর জন্য নয় বলে মনে হয়েছে।

সাহিত্য জগতে তিনি সুপরিচিত ততদিনে। 'ঝরা পালক' (১৯২৭), 'ধূসর পান্ডুলিপি' (১৯৩৬),' বনলতা সেন' (১৯৪২) এবং 'মহাপৃথিবী' (১৯৪৪) প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়ে চলেছে। লিখে ফেলেছেন বেশ কিছু গল্প এবং উপন্যাস। যদিও সেগুলো তখনও অন্তরালে রয়েছে। বাবা সত্যানন্দ দাশ প্রয়াত হয়েছেন ১৯৪২ সালে। মা কলকাতায় ভাই আশোকানন্দের কাছে থাকেন। কখনও তাঁর কাছেও। রান্না করতে করতে যিনি কবিতা লিখতেন এক সময় সেই মাও বার্ধক্যগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।জরা ও ব্যাধির অনিবার্য গ্রাসে একদিন তিনিও সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন জেনে তার আগে মহান কোনো সৃষ্টি তিনি রেখে যেতে চান ।এ যেন মহাকাব্যের নায়কের সেই তীব্র আকাঙ্ক্ষা মনে করিয়ে দেয়...

' Death closes all : but something ere the end,

Some work of noble note , may yet be done.'

মৃত্যু ভাবনা ইউলিসিসকে হতাশ না করলেও জীবনানন্দকে অনিবার্য মৃত্যুর বিষাদ স্পর্শ করে। যদিও এই সীমিত সময়টুকু তিনি কোন লেখায় নিয়োজিত করবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে ...

Would it be better for me (in view of my lack of 'experience' & lack of opportunity for gathering it profusely & deeply & also for my lack of jobless economic independence etc.) to give up 1 idea of writing epic novels like Tolstoy etc. or of trying to be overwhelmingly manysided like Goethe etc.& Concentrate on Poetry & criticism only (even to 1 exclusion of writing personal essays, short stories & other Prose attempts for 'money' & also for demonstrating that I am capable of good prose, a fact that people seem increasingly to disbelieved) ?

- Wordsworth,Keats,Milton, Shelley,Dante etc. were for Poetry only --

- But Goethe, Tolstoy & Shakespeare allure -

নিজের পরিস্থিতি বিবেচনায় টলস্টয়ের মতো মহাকাব্যিক উপন্যাস লেখার এবং গ্যেটের মতো পাঠককে অভিভূত করে ফেলার ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন দিকের সফল যাতায়াতের প্রচেষ্টা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। কেবলমাত্র কবিতা ও সাহিত্য সমালোচনায় মনোযোগ দেওয়ার ভাবনা আসছে। যদিও কিছু ব্যক্তিগত প্রবন্ধ, ছোটো গল্প এবং অন্যান্য গদ্য প্রচেষ্টা চলবে টাকার জন্য এবং এটাও দেখানোর জন্য যে তিনি ভালো গদ্য লিখতেও সক্ষম যেটা লোকজন ক্রমশ বেশি রকম অবিশ্বাস করছে বলে তাঁর মনে হয়েছে।

দেখা যায় ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রায় আশি নব্বুইটি ছোটো গল্প এবং প্রায় পনের - ষোলটি উপন্যাস লেখা হয়েছে আর তিনি সেই রসোত্তীর্ণ , কালোত্তীর্ণ লেখাটির অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও মাঝে মাঝে শুধু কবিতা নিয়েই থাকবেন কি না ভাবছেন। ওয়ার্ডসওয়ার্থ,কীটস্ , মিলটন, শেলী,দান্তে কেবল কাব্য নিয়েই ছিলেন। কিন্তু গ্যেটে, টলস্টয় এবং শেক্সপিয়ারের মতো লেখকদের বিভিন্নদিকে সফল বিচরণ তাঁকে প্রলুব্ধ করছে।

জীবনানন্দ দাশ তাঁর দিনলিপির নাম দিয়েছেন Literary Notes । তবে দিনলিপি বলতে সাধারণভাবে যেমন লেখার কথা আমাদের মনে হয় তা তেমন নয়। এই প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দাশের সমকালের বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়েরির পাতা উল্টে দেখা যাক।

১৯শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩, রবিবার

দুপুরে সুধীরদের বাড়ী নিমন্ত্রণ। Ripon College Magazine এর একটা কপি যাতে আমার বাল্যের পদ্যটা বেরিয়েছিল -- অনেককাল পরে পেলুম। সুধীরের স্ত্রী সম্পর্কে আমার বোন হয়-- এসে প্রণাম করলেন। বাসায় এসে আর কোথাও যাওয়া ঘটল না। বৃষ্টি ও ঝড়ে একটু বেরিয়ে ছিলাম - ভিজে বাড়ী ফিরলাম।

২০শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩, সোমবার

স্কুলে গেলাম - সেখান থেকে বঙ্গশ্রী আপিসে। রবি মৈত্রকে নিয়ে অনেক কথাবার্তা হোল। পার্ক সার্কাস হয়ে বাড়ী।

এবার দেখা যাক জীবনানন্দের দিনলিপির পাতা

২৭.৮.(৭).৩১

Rise with great 'nothing-matters'--

- S.C.Mahalanobis – Alert - Romesh Sen – Brahmos - B.youths--your father - How he wrote 1 letter - with dignity

--Deval : a lit.gruff...P.C.Ray has come from Bangalore

--Nirmal not got-- " He won't go to your place"...

--Busy noon - Typing applications, despatch, etc.-- no ease& pleasure of খেলা দেখা for me : many things gone out of life

- ঢ্যাঁড়শ sustaining me : 1 irony & beauty of it--


 

- Heat, little sleep at noon-- Tea shop once for all, can't spend more than 3 pice-- Poverty limiting & crushing 1 soul down-- Thinking of scrapping 1 newspaper

- Khukun's letter

- Taking a walk on foot to kill time & meet persons.

- Botha - Business : 'malacca cane' , ' ছাতার ডাঁট' ,House mortgage etc...Brokerage -- Life 1 (Great Indian) etc.

- Usha - In fury - Representing glorifying British & Bombay concern & resenting Hazaribagh & proposal papers.

পাঠককে এই দিনলিপির অন্তরে পৌঁছাতে সাধনা করতে হয়। তাঁকে নিবিড় পাঠাভ্যাসে আত্মস্থ করার প্রয়াস নিলে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় এই রহস্যলোকের আবরণ। তবুও সবটুকুকে ভেদ করা যায় না। তাছাড়া জীবনানন্দ দাশের দিনলিপির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা জানেন সেখানে অনেক নামের সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ ছাড়াও the এই শব্দটির বদলে অনেকক্ষেত্রেই 1 লিখেছেন। অসংখ্য ড্যাশের ব্যবহার এবং অসম্পূর্ণ বাক্য ও খানিকটা টেলিগ্রামের ধাঁচে এইসব দিনলিপি লেখা হয়েছে। অনুমান করা যেতে পারে যে কিছু আড়াল তৈরি এবং সময় সংক্ষেপ করার জন্য তিনি সম্ভবত এ জাতীয় শৈলী গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া তিনি যে নিজেই লিখেছেন...

'সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে...

ভিক্টোরিয়ান যুগের লেখক টমাস হার্ডি তাঁর দিনলিপির নাম দিয়েছিলেন Literary Notebooks। জীবনানন্দের Literary Notes হয়ত এই নামের দ্বারা প্রভাবিত। টমাস হার্ডির লেখা নানা গল্প, উপন্যাস ও কবিতার উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁর দিনলিপির পাতায়। দিনলিপি লেখা খাতাগুলোর উপরে Literary Notes লেখা থাকলেও ভিতরে বেশ কিছু শিরোনাম রয়েছে যেমন ১৯২৫ সালের 'লিটারারি নোটস' এ লেখা Memoirs Summer (1925) July । আবার ১৯২৯ এর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দিনলিপির শিরোনাম Themes ।১৩৬ লাইনের পর একটি অংশ General (First outlined on papers) নামে এবং তার কিছু পরে Addenda নামে চিহ্নিত।এর পরে আবার দুটি অংশ General নামে চিহ্নিত । যদিও ভাবনার বিশেষ কোনো ফারাক হয়নি। কেবল Themes অংশে বিভিন্ন সাহিত্যের উল্লেখ আছে। তিনি একজন অসাধারণ পাঠক ছিলেন। বিশ্ব সাহিত্যের সেরা লেখকদের ভাবনার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। প্রচুর পত্র পত্রিকা ও বই তিনি কিনতেন এবং পড়তেন। তাঁর উপন্যাসের নায়কদের বই পড়তে এবং তা নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। 'প্রেতিনীর রূপকথা'য় সুকুমার মেসে যাচ্ছে। বাক্সে অনেক বই নিয়েছে।তার মধ্যে নিয়েছে টমাস মানের 'বাডেনব্রুক্স'। মাকে বলছে ...

- 'বইখানা প্রথম পড়েছিলাম বছর খানেক আগে-- সেই তেতলার দক্ষিণ দিকে ঘরটায় বসে, অঘ্রাণ মাস, ভারি মিষ্টি শীত ছিল তখন দেশে। হলুদ ধান আর শীত ভাল লেগেছে বেশি না বইখানা - আজও বুঝে উঠতে পারি না'।

'বিলাস' গল্পের শান্তিশেখর খবরের কাগজ পড়ে। জমা রয়েছে অনেক বই। তার মনে হয় আয়ু ফুরিয়ে আসছে । কবে আর এত বই পড়বে।গল্পটি ১৯৪৬ সালে লেখা। এই সময় বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে কোলকাতায় চলে আসেন। সঙ্গে বই ও পান্ডুলিপি ভরা ট্রাঙ্ক। আর ফিরে যাননি। দেশভাগের পর গিয়েছিলেন কিছু প্রয়োজনে কিন্তু বসবাস করার জন্য নয়। বরিশালের নদী,গাছ, মাটি, ক্ষেত, উদার আকাশ রয়ে গেল তাঁর স্মৃতিতে। কলকাতার নাগরিক ব্যস্ত জীবন তাঁকে অসংখ্য মানুষকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ভীড় দিয়েছে একান্ত আড়াল। তাঁর দেখা বিভিন্ন নারী পুরুষ গল্প উপন্যাসের চরিত্র হয়ে আসে। কখনও মুচি, কখনও পানওয়ালি, কুষ্ঠ রোগী, ভিখারিরা।

... Howrah Station এর থেকে খানিকটা দূরে একটা চায়ের দোকান (without any roof) & how one have 1 grand opportunity of observing infinite varieties of human life from a corner there -- one is allowed to continue occupying seat for hours...

I wish I could go there--

চায়ের দোকানটিতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে দেয়। ওখানের একটি কোণ থেকে মানুষের জীবনের অন্তহীন বৈচিত্র্য দেখার চমৎকার সুযোগ রয়েছে। জীবনানন্দের মনে হয় তিনি যদি ওখানে যেতে পারতেন! জীবনের প্রথম পর্বে আমরা তাঁকে খুঁজে পাই কলকাতার প্রেসিডেন্সি মেসে। বরিশালের বাড়িতে স্ত্রী ও কন্যাকে রেখে দিনের পর দিন সেখানে আছেন।চাকরি নেই। কখনও গৃহশিক্ষকতা করছেন। কখনও তাও নয়।শহর কলকাতার পথে হাঁটছেন।দেখছেন জীবন। খুঁজে চলেছেন তাঁর লেখার রসদ। তিনি লিখছেন...

There are many other places,corners,streets, lanes, blinds, houses, factories, footpaths and insides in Cal where one ought to go & spend attentive hours for experiences in novels etc. I lack of money for which I have to do routine job & I lack of health & youth frustrate me -

কলকাতা শহরের পথ ঘাট, অলি গলি‌, বাড়ি ঘর, কল কারখানা ফুটপাত সর্বত্র ছড়িয়ে আছে লেখার উপাদান। উপন্যাস ইত্যাদি লেখার জন্য এইসব জায়গায় গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো উচিত কিন্তু সেটা সব সময় তিনি করতে পারেন না। টাকার অভাবে জীবনানন্দকে রুটিন মাফিক কাজ করতে হয় এবং স্বাস্থ্য ও যৌবনের ঘাটতি তাঁকে হতাশ করে।

রাতে ঘুমানোর আগে জীবনের নানা ব্যর্থতা তাঁকে কুড়ে কুড়ে খায়। ভাবনাগুলো দিনলিপিতে ক্রমিক নং দিয়ে সাজিয়ে রাখেন…

(1) Barisal home & B M College wh can never again be thought of...1 hell days of College and students ;

(2) Swaraj job : an equal hell in another colour;

(3) Lansdowne Rd : a terrible suffocating prison;

(4) Family : it brought here 1 suffocating prison & other all-round frustrations wd be inflicted on them too without relieving me in any way ;

(5) Mother : who is dying;

(6) Brother : who seems now to be suffering enough & enough & now a sort of Fool's Paradise with wife seems to be in the offing :

(7) Manju : who is dead to duty & Khuki's peculiar favours ;

(8) Frustrations in Lit ,Love , Herodias' daughters, বনলতা সেন, Imaginary women ,Bus women & life) impel me to invoke God (I who did not pay 1 anna coin to 1 beggar I had no ½ anna & killed bad days without mercy), envisage শ্রীকৃষ্ণ (1 strange tremendous attempts) hit out some realistic plans, or die (before death making good provision for my family & mss wh however seem to be impossible in 1 final analysis -- so I determine to commit suicide by drowning myself & 1 other 3 in 1 ocean...how I wd pull them all mightly towards 1 great waves,how each of them in his or her individual way wd protest vehemently & how my physical force & 1 great sense of frustration wd triumph over everything else --- Ranju,Manju,Labanya : D & R.

I can't do it before publishing some other books & dealing soundly with all my mss -

বরিশালের বাড়ি আর বি এম কলেজের চাকরির কথা আর ভাবতে পারা যায় না। কলেজের দিনগুলো নরকের সঙ্গে তুলনীয়। ছাত্রদের স্মৃতিও সুখের নয়। পড়ানোর কাজে তিনি তৃপ্ত ছিলেন না। খুব জনপ্রিয় শিক্ষক তিনি কখনও হয়ে উঠতে পারেননি। তবে জীবনের শেষদিকে হাওড়া গার্লস কলেজে তিনি কিছুটা খুশি ছিলেন বলে জানা যায়। রুটিন বাঁধা কাজ করার ইচ্ছে না থাকলেও জীবনের প্রয়োজনে তা করতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছিলেন।

বরিশাল থেকে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় চলে এসে তিনি 'স্বরাজ' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন কিছুদিন।সেই স্মৃতি সুখকর নয়। সেই কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আবারও কর্মহীন জীবন। গৃহশিক্ষকতা করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছিলেন।ল্যান্স ডাউন রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন । সেই জায়গাটিকে ভয়াবহরকম দমবন্ধ করা কারাগারের মতো মনে হয়। একসময় কলকাতার মেসে একা একা বেকার জীবন কাটিয়েছেন। চাকরির চেষ্টা করেছেন, কখনও করেননি। স্ত্রী,কন্যা তখন বরিশালে ছিল। এখন পারিবারিক দায়িত্ব বেড়েছে এবং পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হতাশা। চোখের সামনে পরিবারকে কষ্ট পেতে দেখছেন। পরিবার তাঁর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মা, ভাই, মঞ্জু, বোন সুচরিতা সকলের জন্যই তাঁর যন্ত্রণা বাড়ছে। দিনলিপির পাতায় কাউকে ছাড়েন না তিনি। এই তাঁর মুক্তির জায়গা, যেন লাশকাটা টেবিল যেখানে তিনি প্রতিটি মানুষকে এবং সম্পর্কগুলিকে কাটা ছেঁড়া করেন।ক্ষত বিক্ষত করেন নিজেকেও।

" দুটো জিনিস এ জীবনে আর হবে না - অনেক দামী দরকারি বই বুলেটিন কিনে এ- ঘরে ফেলে রেখেছে সে ; আরো ঢের বড় বইয়ের জগৎ বাইরে পড়ে রয়েছে - কিন্তু এ-সব না প'ড়েই মরে যেতে হবে তাকে। তাছাড়া নারীকে না- ভালোবেসেই চ'লে যেতে হবে। কোথায় বা সেই নারী? তাকে শান্তিশেখর যে একেবারেই দেখেনি,তা নয়।

ফুটপাতে লোকের ভিড়ে ট্রামে-বাসে উৎসব বাড়িতে বা মেঘে... রোদে... মোটরের পাদানি গলির সিঁড়ি সময়ের স্তর বেয়ে উঠছে - নামছে - আবছায়ার ভেতর হারিয়ে যাচ্ছে; তাকে দেখেছে শান্তিশেখর। সে বহু নারী; তার ও তার যাচকের মাঝখানে কেমন একটা বিশদ পাথর রেখে দিয়েছে সময় ; খুব দামী পাথর, খুব সম্ভব বজ্রমণি ; মণির সূচিমুখ ঠেকে বর্ণালীর মতো পুরুষের চোখে মুখে অন্তরাত্মার ভেতর ভেঙে - ভেঙে পড়েছে সে তাই-- দূর নীলিমায় গিয়ে শ্বেত-সূর্যের মতো একাকী হয়েছে তবুও।'

এইসব ভাবতে ভাবতে শান্তিশেখরের ঘুম এসে যায়। জীবনানন্দ জেগে থাকেন। সাহিত্য, প্রেম সবেতেই হতাশা গ্রাস করেছে তাঁকে। কাঙ্ক্ষিত নারীকে পাননি। কল্পনার নারীদের কথা ভাবেন,ভাবেন বাসের মহিলাদের কথা আর জীবনের কথা। নানাবিধ ব্যর্থতা ও নৈরাশ্য তাঁকে ঈশ্বরকে ডাকতে বাধ্য করছে। তিনি কখনও ভিখারিকে এক আনা দেননি। তাঁর কাছে আধ আনাও ছিল না এবং খারাপদিন পার করেছেন ঈশ্বরের দয়া দাক্ষিণ্য ছাড়াই। এখন হঠাৎ করে শ্রীকৃষ্ণকে মনশ্চক্ষে দেখছেন যেটাকে তাঁর ভীষণ আশ্চর্যজনক প্রচেষ্টা মনে হচ্ছে। বাস্তবসম্মত কোনো সমাধানের পথ না পেলে মৃত্যুর কথা ভাবছেন।তবে তার আগে পরিবারের জন্য কিছু সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে দিতে চান আর যখন তা করা অসম্ভব বুঝতে পারছেন তখন সপরিবারে আত্মহত্যার কথা ভাবছেন। মহাসাগরে সবাইকে ডুবিয়ে মারবেন ভাবছেন। রঞ্জু, মঞ্জু , লাবণ্য তাঁরা সকলেই বাঁচার আপ্রাণ করবেন কিন্তু তাঁর দৈহিক বল ও গভীর হতাশা সবার সব প্রচেষ্টাকে হারিয়ে জয়ী হবে। দিনলিপির নানা জায়গায় জীবনানন্দ আত্মহত্যার কথা লেখেন তাই ১৪ ই অক্টোবরের সেই ট্রাম দুর্ঘটনায় কীভাবে যেন আত্মহত্যার তত্ত্ব জড়িয়ে যায়।

'বেল জার' উপন্যাসে এস্থার বারবার আত্মহত্যার কথা ভাবে। কীভাবে বাথটবে শুয়ে হাতের শিরা কেটে ফেলা যায় আর কীভাবে উষ্ণ জলে রক্ত মিশে যাবে তার বর্ণনা পাঠককে অস্থির করে তোলে। আর সিলভিয়া প্লাথ মাত্র তিরিশ বছর বয়সে ঘুমন্ত সন্তানদের জন্য খাবার ও অতিরিক্ত কম্বল গুছিয়ে রেখে ওভেন জ্বালিয়ে নেন। ভালোবাসার মানুষ তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন প্রেমিকার কাছে । প্রকাশক ছাপতে রাজি হননি তাঁর উপন্যাস। এগুলোই হয়ত কারণ আবার কারণ নয়।

ভার্জিনিয়া উলফ স্বামীকে চিঠি লিখে রেখে বেরিয়ে পড়লেন একদিন। পকেটে নুড়ি পাথর ভরতে ভরতে এগিয়ে গেলেন নদীর কাছে। তিনি আর লড়তে পারছিলেন না মনের অসুখের সঙ্গে। তার সঙ্গে তো ছিলই সৃষ্টির অতৃপ্তি। তবুও এমন অনেক যন্ত্রণা সহ্য করে মানুষ বেঁচে থাকে।কেউ কেউ পারে না। আবার তেমন কোনো কারণ ছাড়াই মানুষ মৃত্যুকে কাছে ডেকে নেয়। 'আট বছর আগের একদিন' কবিতায় জীবনানন্দ তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন...

"জানি- তবু জানি

নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু -গৃহ -নয় সবখানি;

অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-

আরো এক বিপন্ন বিস্ময়

আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে

খেলা করে ;

আমাদের ক্লান্ত করে,

ক্লান্ত -- ক্লান্ত করে;

লাসকাটা ঘরে

সেই ক্লান্তি নাই ;

তাই

লাসকাটা ঘরে

চিৎ হ'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।" -

না। এমন কোনো কারণ কিংবা অকারণ কিছুই জীবনানন্দ দাশকে ট্রামের সামনে নিয়ে যায়নি। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি নানা কারণে অন্যমনস্ক ছিলেন। বিশেষত যাকে তিনি সাবলেট রেখেছিলেন হাজার চেষ্টা করেও তাকে সরাতে পারছিলেন না।

২১.৯. ৫৪ এবং তারপর তাঁর দিনের কর্মসূচির মধ্যে ওই উপভাড়াটেনিকে তুলে দেওয়ার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ ঠিক করছেন -

সুরুচি মজুমদার নামের মহিলাকে বুঝিয়ে উঠে যেতে বলা, পরিচিত ব্যক্তিদের মারফত পুলিশকে বলে তাদের সাহায্যে তুলে দেওয়া,থানায় গিয়ে ডায়েরি করে পুলিশকে টেনে আনা, পাড়ার ছেলেদের দিয়ে ভয় দেখিয়ে মহিলাকে তুলে দেওয়া, নিজেই কোন একটা ফ্ল্যাটে স'রে যাওয়া ইত্যাদি ভাবনার কথা লিখছেন। যদিও এই ব্যাপারে বিশেষ লাভ কিছু হয়নি।

কোথাও একটুকরো জমি কেনার কথা ভাবছেন। আত্মজীবনী লেখার পরিকল্পনা করছেন। রঞ্জুকে কলকাতা ও আশেপাশের দর্শনীয় জায়গাগুলো দেখাবেন ভাবছেন, বইগুলো গুছিয়ে রাখার জন্য র‍্যাক বা আলমারি কেনার কথা ভাবছেন, বই রোদে দেবেন এবং বিভিন্ন লাইব্রেরির মেম্বারশিপ নেবেন বলে লিখছেন। ১৩ ই অক্টোবর রেডিওতে কবি সম্মেলনের প্রোগ্রামের চিঠি পেয়েছেন।

অক্টোবরের ২ তারিখে আয় ব্যয়ের হিসাব লিখছেন। রেডিওর প্রোগ্রামে যে কবিতা পড়বেন সেটা বেছে রাখবেন বলছেন এছাড়া চিঠি লেখার কথা রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষের যাপনচিত্রের খসড়া মাত্র। এগুলিতে কোথাও এমন কিছু ইঙ্গিত নেই যে আত্মহত্যার তত্ত্বটিকে জোরালোভাবে পেশ করা যায়।

'গ্রাম ও শহরের গল্প' এ শচীকে সোমেন বলে, '' জীবন যদি একটুও নিরর্থক হত তাহলে ষাট টাকার কাজের জন্য আর্জি করবার মত হৃদয় কার বুকের ভেতর থাকত? Suicide list এ দশ বছর আগেই খতম হয়ে যেতাম। ... তোমার স্বামীর চাকরি যদি আজ যায় তা'লে ব্যাঙ্কের হাজার হাজার টাকা সত্ত্বেও তাকে কোন রসাতল থেকে তলিয়ে বের করতে পারা যাবে না। কিন্তু আমার চাকরি দশ বছর ধরে প্রতি মুহূর্তেই খসে যাচ্ছে -- আমার কোন স্ত্রী নেই -- কোন ঘর নেই -- কিন্তু তবুও এ সবের অতিরিক্ত কিছু আছে বলেই জোর পাচ্ছি।''

কিছুদিন ধরে জীবনানন্দের শরীর ভালো ছিল না। ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়েছিল। এছাড়া চোখ ও দাঁতের কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন।১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের চার তারিখে সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে চিঠিতে লিখছেন -

'আপনার চিঠি যথাসময়ে পেয়েছি। শারদীয় 'পূর্বাশা'-র জন্য এই সঙ্গে একটি কবিতা পাঠালাম। ভালো করে প্রুফ দেখা দরকার। আমাকে পাঠিয়ে দেবেন।

আশা করি ভালো আছেন। অনেকদিন থেকে আমার শরীর বিশেষ অসুস্থ। শুভাকাঙ্ক্ষা ও প্রীতি নমস্কার জানাচ্ছি।'

আর একটি চিঠিতে কবি বিশ্ব বন্দ্যোপাধ্যায়কে অক্টোবরের ১০ তারিখে লিখেছেন -

'আপনি ১৫ ই অক্টোবরের পরে যে কোনদিন বিকেলের (৪.৩০/৫.৩০ /৬টার) মধ্যে আমার এখানে এলে খুব আনন্দিত হব। কবে আসবেন সেটা আগে জানালে (কার্ড লিখে) আমাকে নিশ্চয়ই পাবেন। আপনার সঙ্গে কাব্য সাহিত্য ও নানা বিষয় সম্পর্কে কথা বলার সুযোগ পেলে খুব ভালো লাগবে। এবারের ছুটিতে কোথাও যাওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না। আশা করি ভালো আছেন। ভালোবাসা জানাচ্ছি।'

১৯৫৪ সালের ওই একই দিনে সুরজিৎ দাশগুপ্তকে লিখছেন -

'তোমার চিঠি ও প্রবন্ধ যথাসময়ে পেয়েছিলাম। শরীর মোটেই ভালো নয়; নানা ব্যাপারে অত্যন্ত বিব্রত; তোমার চিঠির উত্তর দিতে দেরী হয়ে গেল তাই। কিছু মনে কোরো না। তুমি ১৭ ই অক্টোবরের পর কোনো একদিন বিকেলে আমার এখানে এলে চিঠি ও প্রবন্ধ সম্পর্কে কথাবার্তা হতে পারে। আশা করি ভালো আছ...'

কবিতার প্রুফ দেখবেন। পরিচিতিদের সঙ্গে দেখা করবেন ১৫ই বা ১৭ই অক্টোবরের জন্য এমন বিবিধ বিষয় পরিকল্পনা করে রাখছেন। অথচ ১৪ই অক্টোবর সান্ধ্য ভ্রমণ সেরে বাড়িতে ফেরা হল না। ট্রাম দুর্ঘটনার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে।

‘একটি জাহাজ ছেড়ে গেল।

হলো নিরুদ্বেল ও

মনের জেটির কাঠ নেই আর ওঠা-নামা মাল।

যাত্রীর যন্ত্রণা গোলমাল গেছে সমস্ত সকাল

এখন সবাই মোহনায়,

সমুদ্রের লোনা হাওয়া মেখে ঘামে কেউ-কেউ,

কেউ শিস দিয়ে গান গায়।

সে হয়তো গোনে কত ঢেউ

পার হয়ে এল এই লোহা-ঘেরা কাঠ

হয়তো-বা ভাবে এতক্ষণে জেটি চৌকাঠের মতো চৌকো ফাঁকা

কিংবা তার ফাঁকের কপাট

সমস্ত মালের স্মৃতি নিয়ে পিঠ-বাঁকা

সে-যে নিজ বোঝা, কথা-গান নিয়ে দিগন্তে উধাও

যাবার আবেগে বুঝি ভুলে গেছে তা-ও

শুধু মনে আছে থেমে থাকা—

দুদিনের কাঠ-শ্যাওলার ছোঁয়াটুকু

জেটির মাটিতে গাঁথা মুখ,

লোহার আড়ালে গায়ে সবুজের গন্ধে জোড়া পাখা’

গনেশ এভিন্যুর ফ্ল্যাটে সঞ্জয় ভট্টাচার্য একা। জীবনানন্দ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি মেঝেতে মাদুর পেতে বসে বা শুয়ে থাকেন। সেদিন রাত দশটা সাড়ে দশটা নাগাদ এই কবিতাটি লেখেন। হঠাৎ তাঁর মনে হয়েছিল,' মর্ত্ত্যের বন্দর থেকে একটি জাহাজ শান্তিপারাবারে চলে গেল।'

কয়েকদিন পর এক রাতে হঠাৎই জেগে উঠে জীবনানন্দ জানতে চেয়েছিলেন,

" আমার কী হয়েছে ?

জ্বর, গায়ে ব্যথা শুনে বলেছিলেন ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ দিতে। এমনকি কলকাতায় একটি বাসা খুঁজে দেওয়ার কথা যাকে বলেছিলেন তাঁকে দেখতে পেয়ে জানতে চান,"বাসার কথা যে বলেছিলুম, তার তো কিছু করলেন না।"

তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন 'বনলতা সেন' এর পাণ্ডুলিপির রং দেখতে দেখতে। জেগেও উঠেছিলেন কয়েকবার। চিনতেও পারতেন। সামান্য কথা বলেছেন। ভাঙা পাঁজর, বুকের ভেতরে জমে থাকা রক্ত, জানুর ভাঙা হাড়, ডায়াবেটিসের প্রকোপ, থেঁতলে যাওয়া ডান ফুসফুস আর বসে যাওয়া বাঁ ফুসফুস বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় রসদ আর জোগাতে পারল না। সকলের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বন্দর ছেড়ে জাহাজ ভেসে গেল অনন্ত সমুদ্র যাত্রায়। ২২ শে অক্টোবর রাত সাড়ে এগারোটা ...

তাঁর দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগে ১১ ও ১২ ই অক্টোবর দুদিন সন্ধ্যায় তিনি অশোকানন্দের ত্রিকোণ পার্কের বাড়িতে গিয়ে জানতে চান দেশপ্রিয় পার্কের কাছে ট্রামের নিচে পড়ে কেউ আহত হয়েছেন কি না। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুর কয়েকদিন আগে অরণ্য ঘেরা ধারাগিরি পাহাড়ে একটি খাটিয়ায় আপাদমস্তক নতুন কাপড় ঢাকা মৃতদেহের মুখের কাপড়টি সরিয়ে নিজেকে দেখতে পান আর সঙ্গীদের বলেন..."আমায় বোধহয় চলে যেতে হবে শিগগির ।"

এই লৌকিক জীবনের কিনারে তিরতিরিয়ে বয়ে চলেছে এক রহস্যলোক। কখনও তাদের সীমারেখা মুছে যায়।সেই ইশারা পৌঁছায় কতিপয় মানুষের কাছে...

'কিছু শীত কিছু বায়ু আবছা কিছু আলোর আঘাতে

ক্ষয় পেয়ে চারিদিকে শূন্যের হাতে

নীল নিখিলের কেন্দ্রভার

দান করে অন্তর্হিত হয়ে যেতে হয়?

শূন্য তবু অন্তহীন শূন্যময়তার রূপ বুঝি ;

ইতিহাস অবিরল শূন্যের গ্রাস ; -

যদি না মানব এসে তিন ফুট জাগতিক কাহিনীতে হৃদয়ের নীলাভ আকাশ

বিছিয়ে অসীম করে রেখে দিয়ে যায় :

অপ্রেমের থেকে প্রেমে গ্লানি থেকে আলোকের মহাজিজ্ঞাসায়।'
---

তথ্য ঋণ

১.আলেখ্য জীবনানন্দ: ভূমেন্দ্র গুহ

২. দিনলিপি: জীবনানন্দ দাশ: প্রতিক্ষণ

৩.পত্রালাপ : জীবনানন্দ দাশ: সম্পাদনা, ভূমিকা,টীকা : প্রভাত কুমার দাস

৪.দিনলিপির বিভূতিভূষণ - সম্পাদনা ও টীকা : চণ্ডিকাপ্রসাদ ঘোষাল