ইলিশ : বাঙালির পাতে ও সংস্কৃতিতে

ইলিশ নিয়ে লেখার শুরুতেই বাঙালির অতি প্রিয় ও বহুল চর্চিত এই মাছটিকে ঘিরে ঘটা দুটো চিত্তাকর্ষক ঘটনার কথা বলি।

১৯৭১ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলার এক গ্রামের বাড়ির ঘটনা।মুক্তিযুদ্ধে দেশ তখন উত্তাল।আর সে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ঢাকা শহর থেকে আসা আত্মীয় স্বজন।মুখার্জী বাড়িতে ভাদ্রের এক সকাল।

মুখুজ্জে বাবু:"কিরে কানাই,এতগুলি ইলশা আনছোস কিয়ের লিগা? 

কানাই: কত্তা,আইজকা ইলশার বাজার খারাপ।এক টাকায় দুইখান দিতাছে।

মুখুজ্জে বাবু: কস কি? আর কয়খান লইয়া আয় দেহি।

(কিছুক্ষণ পর কানাই ফিরে এল)

কানাই: কত্তা,এইবার একটাকায় তিনখান পাইসি।বাজারে খরিদ্দার নাই। ইয়াহিয়া গন্ডগোল লাগাইসে না, হ্যার লিগা জাউল্যারা মাছ বেইচ্যা তড়তড়ি ঘরে যাইব।

মুখুজ্জে বাবু: চল তো দেহি(দেখি),আমি একবার ঘুইরা আসি।

অবশেষে কর্তা বাজারে গেলেন এবং একটাকায় এক হালি মানে চারটে দরে ইলিশ কিনলেন।গিন্নিমার মাথায় বাজ পড়তে গিয়েও পড়ল না।প্রায় ডজনখানেক ইলিশ মাছের তিন চারটে ঘরে রাখার পর বাকিগুলো কানাইয়ের ঘরে, নৌকার মাঝি পইখ্যার ঘরে আরো কয়েকজন পাড়াপড়শির ঘরে পাঠানো হলো।সবাই মিলে রীতিমতো "ইলিশ উৎসব" হয়ে গেল।

 ২য় ঘটনার কুশীলব ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে ঢাকা শহরের এক দম্পতি।

বন্দ্যোপাধ্যায় বাবু: এবার পয়লা বৈশাখে কী মেনু?

বন্দ্যোপাধ্যায় গিন্নি: ইলিশ তো হবেই। আজ কালের মধ্যেই আনতে হবে।কেটে গুছিয়ে ডিপ ফ্রিজারে রেখে দেব।ওই দিন মঙ্গলশোভাযাত্রায় যেতে হবে।বাজার করার সময় হবে না।

 বন্দ্যোপাধ্যায় বাবু: বেশ,কাল সকালেই যাবো না হয়।

পরদিন সকালে তারা বাজারে গেলেন। ঢাকার সুবিখ্যাত পাইকারি বাজার।

বন্দ্যোপাধ্যায় বাবু বাজারের ভিতরে ঢুকলেন। 

বন্দ্যোপাধ্যায় বাবু: ইলিশ কত?

বিক্রেতা: স্যার,বিশ।

বন্দ্যোপাধ্যায় বাবু: বিশ মানে?

বিক্রেতা: স্যার, এক হালি ২০ হাজার।

( চারটে দেড় কেজি সাইজের ইলিশ)

ঘাম-টাম মুছে বাজারে বাইরে এসে তিনি আবার ইলিশের দাম করলেন। এবারে পাওয়া গেল পাঁচ হাজারে চারটি মাছ। তাই নিয়ে গুটিগুটি তিনি বাসার পথ ধরলেন।

১৯৭১ থেকে ২০১৫ মধ্যবর্তী সময়ে ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে প্রচুর পালাবদল ঘটে গেছে।নায়ক হয়েছেন খলনায়ক,দেশ হয়েছে বিদেশ, বাঙালি পেয়েছে নিজের দেশ।তবুও ঘর হয়েছে বাহির, বেড়েছে বাজারের আয়তন  আর পৃথিবীর ব্যপ্তি কমে তা হয়েছে গ্রাম, কমেনি ইলিশের জন্য বাঙালির উন্মাদনা। অতিবৃষ্টি -অনাবৃষ্টি কোনোকিছুই ইলিশকে বাজারের থলিবদ্ধ হওয়া থেকে আটকাতে পারে নি। তাই গল্পকথার মাছের রাজা ইলিশ সাধারণ মানুষের কাছে কল্পকথায় পরিণত হয়েছে। এক স্কুল মাস্টার বাজার থেকে ইলিশ কিনে থলেতে ভরে ট্রামে উঠেছেন। ব্যাগ থেকে উঁকি মারা ইলিশের লেজ দেখে উৎসুক বাঙালি দাম জিজ্ঞাসা করলেন। নিপাট ভদ্র মাস্টারমশাই সেদিন ভাবের ঘোরে দাম একটু কমিয়ে বললেন। ওমনি ট্রাম ফাঁকা করে ইলিশ কিনতে  লোক ছুটল। প্রমথনাথ বিশীর গল্পের এই চরিত্র মোটেই দৈনন্দিন জীবনে অচেনা নয়। 

 'কে বলে বাঙালিদের মধ্যে একতার অভাব! তবে তেমন উপলক্ষ্য তো চাই।'  তবে ইলিশের প্রসঙ্গ আসলে যে বাঙালি এক একথা অনস্বীকার্য।

"রূপোর পাতে মারে ঘা

পানির বুকে ফেললে পা"

  ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগের সাধারণ নির্বাচনে ভোটের ছড়ায় লেখা হয়েছে,

"ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা

বুয়াল(বোয়াল) মাছের দাঁড়ি

ইয়াহিয়া খান ভিক্ষা করে

শেখ মুজিবের বাড়ি"

 ইলিশ মাছের কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার এমন আকাশকুসুম কল্পনা বাঙালির একান্ত নিজস্ব। কিন্তু এই বাঙালিই আবার মগ খানসামা দিয়ে যত্ন করে কাঁটা ছাড়া 'স্মোকড হিলসা" রান্না করে ইংরেজ প্রভুকে খুশী করছে। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর রান্নার বইয়ের ধুম্রপক্ক ইলিশ এই পদের তুতো ভাই বা বোন।একেই পেটের দায়ে দেশ ছেড়ে জলা জংলায়, সাপখোপের দেশে কাজ করতে এসে তারা নাজেহাল, বহুদিন পাতে জোটেনি হেরিং কিম্বা স্যামন। তাই বেকড হিলসাতেই তারা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতেন।

"রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরেজলের উজ্জ্বল শষ্য, রাশি-রাশি ইলিশের শব,নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়।

তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে

ইলিশ ভাজার গন্ধ; কেরানীর গিন্নির ভাঁড়ার

সরস সর্ষের ঝাঁজে।এলো বর্ষা,ইলিশ -উৎসব।" - বুদ্ধদেব বসু

বাঙালির জীবনে ঔপনিবেশিক শাসন,দেশভাগ আর বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এসব প্রশ্নে গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা দিয়ে যত জল বয়ে গেছে,তার প্রভাব নদীর ইলিশে পড়ে নি এমন দাবী করা মুশকিল।কোম্পানির শাসনামল থেকে টানা দুশো বছর কোম্পানির তেল  গঙ্গার ইলিশের গায়ে লেগেছে।তাই গঙ্গার ইলিশের তেলের অত স্বাদ আর খ্যাতি।এমনটাই দাবি করেছিলেন কমলকুমার মজুমদার।খোদ কলকাতায় সন্ধের মুখে সদ্য ধরা গঙ্গার ইলিশ জেলেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরি করে বিক্রি করতেন।

 "কষ্টিপাথর"নাটকে রামলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বাবু নবীনের সংলাপে গঙ্গার ইলিশের রূপ বর্ণনা করেছেন।

 ‘রাজপুত্তুর মশাই রাজপুত্তুর। কী যে গড়ন যেন ননীর চাপ থেকে কেটে তুলেছে। দিব্বি দোহরা, একটু পাশ থেকে গোলাপীর আভা মাচ্চে।’

এই নাটকের মঞ্চায়ন সফল করতে দারুণ এক চমক ছিল।নাটকের বিজ্ঞাপনে লেখা থাকত,

‘অভিনয় দেখিতে আসিবার সময় গৃহিণীকে বিশেষ করিয়া বলিয়া আসিবেন যেন শেষ রাত্রে উনানে আগুন দিয়া তৈল প্রস্তুত রাখেন। অভিনয় দেখিবার পর, বাড়ি গিয়া গরম গরম ইলিশ মাছ ভাজা খাইয়া মন ও রসনায় তৃপ্তি সাধন করিবেন।’ এবং বাস্তবিকই নাটক শেষে দর্শকের হাতে আস্ত ইলিশ দেয়া হতো।

‘ইলিশ পুরাণ’ গ্রন্থের লেখক দিগেন বর্মন ইলিশ নিয়ে নাটকের নকশার জন্য লেখা রসরাজ অমৃতলাল বসুর  একটি ছড়া উদ্ধৃত করেছেন।

‘পাড়াতে কড়াতে কেহ মাছ ভাজে রাতে।

রন্ধনে আনন্দ বাড়ে গন্ধে মন মাতে।

লাউপাতা সাথে ভাতে সর্ষেবাটা মাখা।

সেই বোঝে মজা তার যার আছে চাখা।"

 সেই বিগত দিনের হারিয়ে যাওয়া কলকাতাবাসী যারা ইলিশ খেয়ে বলতে পারতেন মাছটি কোন ঘাটে ধরা হয়েছে তাদের জন্য ঘোর দু:খপ্রকাশ করেছেন 'মাছ ও বাঙালি' গ্রন্থের লেখক রাধাপ্রসাদ গুপ্ত।তিনি লিখেছেন বাঙালি "মৎস্যান্ধ এমনি অন্ধ,অচেতনে সচেতন মানে।" সর্ষে-পোস্ত আর দই দিয়ে ভাপানো ইলিশ যদি কলকাতার অবদান হয় ইলিশ নিয়ে আচারসর্বস্বতায় বাঙালের মৌরসিপাট্টা। ইলিশ পুজোর প্রথা র‍্যডক্লিফ লাইনের এপারে দেশভাগের আগে প্রচলিত ছিল।সারা পুববাংলা জুড়ে  শাক্ত -শৈব যেসব পরিবারে দুর্গাপূজা,কালীপূজা প্রচলিত ছিল তাদের দেবীর ভোগের আবশ্যক পদ ছিল ইলিশের ব্যঞ্জন।খুলনা,যশোর অঞ্চলের ব্রাক্ষ্মণ বাড়ির কোজাগরী লক্ষ্ণীপূজার অন্নভোগে ইলিশ মাছ থাকত। ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর জেলায় দুর্গাপুজোর দশমীতে মরশুমের শেষ ইলিশ খেয়ে তাকে বিদায় জানানোর পর সরস্বতীপূজার দিনে জোড়া ইলিশ মাছ ধানদুব্বো দিয়ে তেল হলুদ ছুঁয়ে বরণ করা হয়। এই মাছ রান্নার প্রণালীও আলাদা।ভালো করে ধুয়ে কেটে নিয়ে মাছের আঁশ মাটিতে পুঁতে রেখে শুধুমাত্র আদাবাটা, কাঁচালঙ্কা, বেগুন দিয়ে  রান্না করে এই মাছ খেয়ে বছরভর ইলিশ খাওয়া শুরু হয়।

চেতন-অচেতন, ঈশ্বরের সাকার -নিরাকার অস্তিত্ব নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বাঙালি সাধক শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস ইলিশের রূপকে ঈশ্বরের মাহাত্ম্য  ব্যাখ্যা করেছেন। গঙ্গার দশ হাত গভীরে ঘুরে বেড়ানো ইলিশে মুগ্ধ ছিলেন তার শিষ্য। পূর্ববঙ্গ ভ্রমণকালে পদ্মা নদী থেকে ধরা তাজা ইলিশ রান্না করে  খেয়েই ক্ষান্ত হননি স্বামী বিবেকানন্দ ; ইলিশের মাথার ছ্যাঁচড়া রাঁধার পুঁইডাঁটা যার বাগান থেকে তুলে এনেছিলেন তাকেও মন্ত্রদীক্ষা দিয়ে দুদিন তার বাড়িতে থেকে কলকাতায় ফিরেছিলেন। আমিষ খাওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করা সন্ন্যাসী জীবনের শেষ দিনেও গঙ্গার  ইলিশের ভাজা, ঝোল, অম্বল তারিয়ে তারিয়ে খেয়েছিলেন। প্রিয় শিষ্য 'বাঙাল' নামে খ্যাত শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেছেন, " তোরা নূতন ইলিশ পেলে নাকি পূজা করিস, কি দিয়ে পূজা করতে হয় কর'....... একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে, ঘটিবাটিগুলো ছেড়েছি কষ্টে।'

 

ইলিশের উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় সর্বানন্দের ‘টীকাসর্বস্ব’ গ্রন্থে। ‘ইল্লিষ’ নামে উল্লেখিত এই মাছের উল্লেখ মনসামঙ্গলেও পাওয়া যায়। বেহুলা-লখিন্দরের বিয়েতে বেহুলার বাবা পাত্রপক্ষকে যে  ১৮ পদের ভাজা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন তার মধ্যে ভাজা ইলিশ ছিল অন্যতম। নারায়ণদেব ও জানকীনাথের পদ্মাপুরাণে ইলিশের আরেকটি  পদ পাওয়া যায়। তারকা তার নন্দাই লক্ষীন্দরের জন্য সরষের শাক দিয়ে ইলিশের মাথা রান্না করেন।

"রোহিতের মুন্ড দিয়া রান্ধে মুলাশাক

সরিষার শাক রান্ধে ইলিশার শিরে"

এছাড়াও ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের "অন্নদামঙ্গল" কাব্যেও ইলিশের উল্লেখ মেলে।

মনসামঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্ত  দক্ষিণ সাগর কলা দিয়ে রান্না করা ইলিশের ঝোলের কথা লিখেছেন।

 "ইলিশ মৎস্য করিল ফালা ফালা,

তাহা দিয়া রান্ধে ব্যঞ্জন, দক্ষিণ সাগর কলা"

মনসার-মাস শ্রাবণে চাঁদ সদাগরের ভৃত্য দুই ভাই জালু ও মালু নদীতে মনসার স্তুতি করে যার ফলশ্রুতিতে  জাল ভরে ওঠে অগণ্য মাছে,

 ‘ইলশা ধরিল কাতলাগুটি’ 

তবে সেই মধ্যযুগ থেকেই ইলিশ রাজকীয় গরিমায় মহীয়ান।নদী-নালা পূর্ণ পুর্ববঙ্গের ইলিশ রান্নায় কচু,কাঁচাকলা,ঝিঙা,চালকুমড়ো  বেগুন ইত্যাদি সব্জির ব্যবহার সেই যুগ থেকেই বহুল প্রচলিত ছিল।বিজয়া দশমীতে  পিঁড়িতে বা  কুলায় ইলিশ মাছ রেখে এয়োস্ত্রীরা গান ধরেন

‘...ইলিশ মাছ কাইন্দা বলে,

 আমরা লো বড় সতী।

আমাগোরে খাইতে হইলে,

আনো কচুর লতি।

সেই সাথে ছিল পেয়াঁজ-রসুন-কাঁচামরিচে ইলিশের সালুন বা ছালুন রান্নার একান্ত নিজস্ব প্রণালী যা ইলিশের নৌকার মাঝিদের সূত্রে মধ্যবিত্ত সমাজেও ক্রমশ প্রসারিত হয়।বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ মিসির আলির কাহিনীতে 'ইস্ত্রি ইলিশ' নামে অভিনব এক পাকপ্রণালীর কথা বলেছেন।

ইলিশ মাছে সর্ষে বাটা, কাঁচালঙ্কা আর নুন দিয়ে লাউপাতায় মুড়ে গরম ইস্ত্রির নিচে বসিয়ে দিতে হবে। এভাবেই চলবে রান্না। কিছুক্ষণ পর মাছ উলটে আবার ইস্ত্রি চাপা। তবে কতক্ষণ এই ইস্ত্রি চাপা দিতে হবে তা বলা নেই।

অভিজিৎ সেনের "পদ্মার ইলিশ" গল্পের সুদাস বলছে, "ইলশা মাছের আবার রেসিপি কী l যেমন তেমন কইরা রাইন্ধা থুইলেই হইল, স্যাও অমৃত l একটু সাদা সইশ্যা বাটা মাইখ্যা কলার পাতায় মুইড়য়া বগলের নীচে পাঁচ মিনিট রাইখ্যা দেন l ব্যাস, হইল আপনার একখান প্রিপারেশন "।

ইলিশ মাছের হাংরাসের প্রণালী বাতলেছেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লিখেছেন পদ্মার তীরে মাঝিরা মাছ ধুয়ে কেটে নুন-হলুদ-মশলা মাখিয়ে কলাপাতায় মুড়ে নদীর চরে বালি চাপা দিয়ে রাখেন। সূর্যের তাপে বালি গরম হয়ে ভাপে রান্না করা এই পদের নাম হাংরাস। প্রায় হাংরাসের কাছাকছি একটু পদের কথা লিখেছেন সিন্ধ্রি সাহিত্যিক গীতা সিমোজ। তার ঠাকুমা বনভোজনের দিনে অল্প পরিশ্রমে প্রায় বিনা প্রস্তুতিতে এই পদটি রান্না করতেন। মাছওয়ালার কাছ থেকে কেনা হত তাজা মাছ। সেই মাছের পেছন দিক চিরে পরিষ্কার করে ঢেলে দিতেন অল্প পরিমাণে দেশী মদ। তারপর কলাপাতায় চাটনি মাখিয়ে তার মধ্যে মাছটাকে রেখে ভালো করে মুড়ে নদীপারের বালির নিচে গর্ত করে আবার বালিচাপা দিয়ে রান্না হতো যে পদ দীর্ঘক্ষণ অল্প তাপে রান্নার কারণে তার কাঁটা নরম হয়ে যেত। তাই সহজে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করা যেত।

"ইলিশ খলিশ্চৈব ভেটকি মদগুর এব চ

রোহিতো মৎস্যরাজেন্দ্র পঞ্চমৎস্যা নিরামিষা:"

ইলিশ, খলিসা, ভেটকি, মাগুর, রুই এই পাঁচটি মাছকে নিরামিষ হিসেবে নিদান দেয়া সত্ত্বেও বাঙালি বিধবার মাছ খাওয়া সামাজিক স্বীকৃতি পায় নি। ভাদু আর টুসু ব্রতের গানেও ভাদুকে বলা হয়েছে সে রাঢ়বাংলার মেয়ে তাই পোস্ত খাবে; ইলিশ নিয়ে তাকে লালায়িত হতে বারণ করা হচ্ছে।

"ওরে ভাইরে ভাই রাঢ়ের ইলিশ পিরিত নাই,

ভাদ্র মাসে ভাদু খাবে ইলিশ গঙ্গায় পদ্মায়

এম্নিতে রোজই পুস্তু খায়

বাঁকুড়া পুরুল্যায়"(ভাদু গান)

"অ টুসু ইলিশ ইলিশ করিস না,

ইলিশ লিয়ে তুর লালসা মানায় না,

গঙ্গা পদ্মায় যেমন ইলিশ মিলে

রাঢ়েরা খুশি পুস্তু পেলে"..(টুসু গান)

 ইলিশ মাছ কীভাবে রান্না হবে লোকগানে তেমন সন্ধান পেলে। 

 "ইলিশ মাছে কাটে বউ

ধার নাই বটি দিয়া।

ইলিশ মাছ রান্ধে বউ

কচু বেগুন দিয়া।

ইলিশ মাছ রান্ধে বউ

সরষা কলা দিয়া

ভাজা ইলিশ খায়ানি বউ

দোষ দেয় বিড়াল ছ্যাইচয়া।

ইলিশ মাছ রান্ধে বউ

ঝিঙা চালকুমড়া দিয়া

ইলিশ মাছ উইঠ্যা বলে

খলিসারে ভাই

তুমি থাকো খালে বিলে

আমি পদ্মায় যাই

ইলিশ মাছ রান্ধে বউ

উনান বরণ কইরা"

সমাজের একেবারে নীচুতলায় থাকা জেলে বৌ, মাঝি বৌদের মুখের এই গানে উঠে এসেছে ঘরকন্নার গোপন কথা। ইলিশের মতো মহার্ঘ্য, লোভনীয় মাছ সবাইকে রেঁধে, বেড়ে খাইয়ে নিজের জন্য কাঁটা আর মুড়ো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাই লোভে পড়ে ভাজা ইলিশ খেয়ে নিয়ে বৌটি বিড়ালের দোষ দেয়।

"পদ্মা নদীর মাঝি" উপন্যাসের কাহিনী জুড়ে ইলিশের গন্ধ পাওয়া যায়। বেশি মাছ ধরার পরে জেলেরা খুশি হয় না। কারণ তাতে বাজার দর কমে যাবে। বাড়তি একটু টাকা হাতে আসার লোভে চুরি করে ইলিশ বিক্রিও দেখা যায়। ইলিশের দামে এখনো পাইকারি ব্যবসাদারদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হয়। বাড়তি লাভের আশ্য ছোট মাছ বেশি ধরার কারণে বড় মাছ ক্রমশ বাঙালি মধ্যবিত্তের আয়ত্বের বাইরে যাচ্ছে। ওদিকে জালে ধরা পরা বড় মাছের সিংহভাগ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইলিশ মাছের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তার সহজলভ্যতা ও রান্নার সরল প্রক্রিয়া। কোনো মশলা ছাড়া শুধুমাত্র হলুদ-লবণ-কাঁচালঙ্কার ইলিশের ঝোল যে কোনো নবাবী খানার সাথে স্বাদে টক্কর দিতে পারে।

সুরসিক সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী তেমনটাই ভাবতেন। একবার এক পাঞ্জাবি অধ্যাপকের সাথে এ বিষয়ে গভীর তর্কে সাতদিন তাদের মধ্যে বাক্যালাপ বন্ধ ছিল। সেই অধ্যাপকের মতে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ খাবার বিরিয়ানি আর আলীসাহেবের মতে তা হলো সাদা ভাত আর ইলিশ। ইলিশের এমন এক পদের সন্ধান তিনি দিয়েছেন। গোটা ইলিশ মাছের পেটে মসলা পুরে কলাপাতায় মুড়ে তা আগুনে সেঁকে নিলে যে পদটি প্রস্তুত হয় তা এতোটাই স্বাস্থ্যকর যে তিন কিলোর গোটা ইলিশ খেলেও রোগ হবে না। সেই সাথে উনি আফসোস করেছেন যে বেহেশতী খাবারে ইলিশের নাম থাকায় মানুষ পাপ করে দোজখে যায়।

"পাগলা খাবি কি ঝাঁঝে মরে যাবি"

ইলিশের রান্নায় বারবার সর্ষের মতো ঝাঁঝালো মশলার কথা উঠে এলেও ইলিশ নিতান্তই গোবেচারা মাছ এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। দিল্লীর সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক চলেছেন গুজরাটের পথে বিদ্রোহ দমনের জন্য। সিন্ধু নদ বেয়ে চলমান তার নৌবহরে একদিন ঝাঁপিয়ে উঠল এক ঝাঁক রুপোলী মাছ। "পাগলা রাজা" এই মাছ কেটে রান্নার হুকুম দিলেন। আমীর-ওমরাহ কারো নির্দেশ তিনি শুনলেন না। শাস্ত্রে নিষিদ্ধ নয় যে মাছ তা তিনি সাবড়ে খেলেন। তার পরেই পেটের গন্ডগোলে তার মৃত্যু হলো। জিয়াউদ্দীন বারনি লিখেছেন একইসাথে হুজুর ও প্রজাকুল পরস্পরের কুপ্রভাব থেকে এভাবেই রক্ষা পেলেন।

"ওরে পাগল, মা কি তোর একার"

ইলিশের পেটে মশলা পুরে তা সেঁকে বা ভাপিয়ে রান্না করার প্রণালী সিন্ধ্রিদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। না,ইলিশ শুধু বাংলা বা বাঙালির নয়। বিহার, ওড়িশার পাশাপাশি আরব সাগর লাগোয়া গুজরাট, সিন্ধু নদ বিধৌত অঞ্চলেও তার রাজপাট সুপ্রাচীন। গুজরাটে মেয়ে ইলিশের নাম পাল্লা আর পুরুষ মাছের নাম মোদেন।

ইলিশ মাছের পেট ভালো করে চিরে পরিষ্কার করে তার ভেতরে টম্যাটো, পেঁয়াজ, তেঁতুল আর নানা মশলার পেস্ট ভরে দিয়ে রান্না করা "কোক পাল্লা " ইলিশ ভাপের মতোই প্রাচীন একটি পদ। ইলিশের মিষ্টি স্বাদ আর টম্যাটো -তেঁতুলের টক এই দুয়ের মিশেলেই যার স্বাদের রহস্য লুকানো। দেশভাগের ফলে ভারতের দুপ্রান্তের বাংলা আর সিন্ধু প্রদেশ ছেঁটে দেয়ার ফলে "রেলিশ' করে" ইলিশ খাওয়ার বর্ষার দিনগুলি হারিয়ে গেছে। শ্রদ্ধা সাহানি লিখেছেন দেশভাগ পূর্ব সময়ে সিন্ধুনদের তীরে বনভোজন বা বার্বিকিউ পার্টির অন্যতম আকর্ষণ ছিল তেঁতুলের চাটনি সিগরিতে সেঁকা ইলিশ বা পাল্লা। শিবরাত্রিতে ইলিশ খাওয়া রীতিমতো ধর্মীয় আচার ছিল। বাড়ির মেয়েরা সিন্ধুতে স্নান সেরে নদীর পারে উনুন জ্বালিয়ে ইলিশ রাঁধতেন। পরিবারের সবাই মিলে  সেই মাছ খাওয়ার আনন্দই ছিল আলাদা। আবার এদিকে বাঙালদেশ ছেড়ে আসা গঙ্গার ইলিশে সেই স্বাদ পেতেন না। একে একে তাই হারিয়ে গেছে লুকার বড়া, ইলিশের ডিমের টক বা ইলিশের মাথা দিয়ে রান্না করা হলুদ চচ্চড়ি।

সিন্ধ্রি ইলিশের অনন্য স্বাদের প্রসঙ্গে প্রচলিত আছে জিন্দাপীর ঝুলেলালের মাহাত্মের কথা।আরবসাগর থেকে আসা কালচে মাছ সিন্ধুনদের পশ্চিম পারের সুক্কুরের কাছে  জিন্দাপীরের মাজারের কাছে এসেই চকচকে রুপোলি হয়ে যায়। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের পূজিত ঝুলেলালের  প্রতিকৃতিতে তিনি বসে আছেন পদ্ম আর ইলিশ মাছের ওপরে, সাদা দাড়িতে শোভিত বৃদ্ধ পীরের চোখে মুখে অপার প্রশান্তি। স্থানীয় ধীবর সম্প্রদায়ের গভীর বিশ্বাস ইলিশ মাছ তার মাজার থেকে কখনো উলটো বাগে যায় না। আর নদীর ওই নির্দিষ্ট স্থানের মাছ সবচেয়ে সুস্বাদু। সিন্ধুর স্রোত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তারা ঝুলেলালের কাছে কৃতজ্ঞ এবং তাকে দরিয়ানাথ বা সমুদ্রের দেবতা হিসেবে পূজা করে -

‘জেলেরা ইলিশ মারে মারুক,

কাছে এসে দরদাম পাড়ুক

এক হালি দুশো বিশ বলে

দরদাম তবুও তো চলে’-

-শক্তি চট্টোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসুর  কবিতা ‘নদীর স্বপ্ন’তে  দাদা ভাই ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে নৌকায় করে কিছুক্ষণ ঘুড়ে বেড়াবে। সেই সময় তারা কী কী দেখছে তা কবি লিখছেন।

‘ওটা কী? জেলের নৌকা? তাই তো!

জাল টেনে তোলা দায়,

রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ-

ইশ, চোখে ঝলসায়!

ইলিশ কিনলে?- আঃ, বেশ, বেশ,

তুমি খুব ভালো, মাঝি।

উনুন ধরাও, ছোকানু দেখাক

রান্নার কারসাজি।

পইঠায় বসে ধোঁয়া-ওঠা ভাত,

টাটকা ইলিশ-ভাজা-

ছোকানু রে, তুই আকাশের রানী,

আমি পদ্মার রাজা।’

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পদ্মা নদীর মাঝি" ইলিশ শিকারি মানুষের জীবনের যে ছবি আঁকে তা ইলিশ-ধরা নদীর জলের মতোই ধূসর, আঁশটে এক অভিজ্ঞতা। নৌকার খোল জুড়ে জমা হওয়া সাদা মৃত ইলিশের হাতেই কুবিরের মতো জেলেদের ভবিষ্যৎ। ‘মিঠেজল: রূপালী ইলিশ/ পাথর কালো জেলে’ নামের ধারাবাহিকে আব্দুল জব্বার এমনি আরেক ইলিশ-ধরা রাতের কথা লিখেছেন, "আকাশ-ভাঙা বর্ষণমুখর গহিন রাতে ষাঁড়াষাঁড়ির বান-ডাকা ফেনা ওগরানো নদীতে ইলিশের জাল ফেলে উদ্দাম চিৎকারে গান জুড়েছে কলিমদ্দি মাঝি। তার সঙ্গী দুজন দাঁড়ি কানাই আর ইয়ার আলী নাচ জুড়েছে হাত তুলে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে….' ইলিশের প্রসঙ্গে ফেরিঘাটের কথা না হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সকরিগলি, গোয়ালন্দ ঘাট লাগোয়া ভাতের হোটেলের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ইলিশ। ঘাট থেকে সদ্য ধরা মাছের টানেই শহুরে বাবুরা বেড়ার হোটেলে বা পরবর্তীতে ফেরির রেস্টুরেন্টে ভাত খেতেন। সকরিগলির ঘাটের ইলিশ সে সময়  উত্তরবঙ্গে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের লন্ডন ঘাটে এখনো আছে লঞ্চ লাগোয়া ইলিশের নৌকা থেকে কেনা তাজা মাছ হোটেলে কাটিয়ে ভেজে নেয়ার ব্যবস্থা। ভাটিপুত্র মিহির সেনগুপ্তের "সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম" এ ধরা আছে বরিশালের পথে রূপসা নদীর জেটিঘাটে মোকছেদের চালাঘরের হোটেলের কথা।

"নদীর পারের হোটেল।তায় আবার এ দেশ ইলিশকুমারীর বাপের বাড়ি,নদী থেকে উঠে সোজা কড়াইয়ে।দেশটা অবশ্য আমার আর গিন্নিরও বাপের বাড়ি…

বড় কাঁধ উঁচু পরাতের মধ্যে রাঙা টুকটকে ঝোলে ডুবসাঁতার কাটছেন রাজকন্যে।"

১৯৬৩ সালে নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাতৃভূমি ছেড়ে আসা লেখক ১৯৮৬ সালে  সেই মোকাম ধরে অলীক সিদ্ধিগঞ্জের টানে ফিরে গেছেন।পরম আদরে মোকছেদ তার স্ত্রী আর কন্যাদের মাছের মুড়ো খাওয়ায়।

"আর দুইখান কইরে ইলিশ খাতি হবে।না,না,না কোনো বাত শোনবো না"।

সময়ের সাথে পালটে যাওয়া পারাপারের কিস্যা, পৃথিবীর বয়স বাড়ে।নদী খাত পাল্টানোর কারণে গোয়ালন্দে ইলিশ আগের মতো ধরা পড়ে না। এখন ইলিশ মানে মাওয়া ঘাট। ফুড ট্যুরিজমের যুগে কাঁটাবিহীন লেজ ভর্তা আর ইলিশ ভাজার তেলে ভাজা বেগুন নতুন প্রজন্মের অন্যতম আকর্ষণ। শুধুমাত্র হারিয়ে গেছে মাঝিদের থেকে দরদাম করে ইলিশ কেনার স্মৃতি। জেলেদের কাছ থেকে সরাসরি মাছ কিনে নেয়া আড়তদারদের হাতেই এখন বাজারের নিয়ন্ত্রণ।

"ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি

  ইলিশ মাছের ডিম|

  ইলশে গুঁড়ি          ইলশে গুঁড়ি

  দিনের বেলায় হিম|

ইলিশের অন্যতম আকর্ষণ তার ডিম। যদিও ডিমওয়ালা মাছের স্বাদ ঠিক খোলতাই হয় না তবু তার ডিমের সমাদর প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা যায়। ইলিশ মাছের ডিম বিজয়া দশমীতে ভাজা খাওয়ার জন্য আগে থেকে ডিম রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। নোনা ইলিশের ডিম আগে থেকে জলে ভিজিয়ে পেয়াঁজ-লঙ্কা-হলুদ-তেতুঁল দিয়ে রান্না করা সালুন ফরাসীদেশের ক্যাভিয়েরের মতোই ধ্রুপদী পদ। সিন্ধ্রি ইলিশের ডিমের পকোড়া দিয়ে প্রায় অনুরূপ যে "আনি সেয়াল" তৈরী হয় তা সিন্ধ্রি হেঁসেলের একটি বিশিষ্ট পদ। এরকমই আরেকটি হারিয়ে যাওয়া পদ হলো লুকার বড়া বা ইলিশ মাছের যকৃত ভাজা।

আমার মায়ের রান্না করা দুটি ইলিশের পদের কথা লিখে এই কথাযাপন শেষ করি। প্রথমটি নারকেলের দুধে ইলিশ। নারকেল কুরিয়ে তার রস নিংড়ে নিয়ে, কাঁচালঙ্কা, নুন হলুদ দিয়ে  ঝোল ফুটিয়ে তাতে ভাজা ইলিশের টুকরো দিয়ে আরেকটু ফুটিয়ে নিলেই রান্না শেষ। দ্বিতীয়টি আনারস ইলিশ।আনারস কেটে,তার ' চোখ' উপড়ে নিয়ে ক্বাথ বের করে নিতে হবে। সর্ষে ফোড়ণে সেই ক্বাথে নুন-হলুদ-ধনে বাটা,কাঁচালঙ্কা  দিয়ে কষিয়ে নামানোর আগে ভাজা মাছ দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে রান্নার শেষে ভাজা শুকনো লঙ্কা ভেঙে ঝোলে ছড়িয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। যে কোন রেসিপিই আসলে স্বরলিপির মতো ঠিকঠাক গাইতে বা রাঁধতে জানলেই তা রসোত্তীর্ণ হয়। নয়তো লাল গানে নীল সুরের মতো হাকুচ একটা পদার্থ তৈরী হয়।

ইলিশ বাঙালির বর্ষার এক আবেগ।তার স্বাদ গ্রহণে,চিন্তনে, নিদিধ্যাসনে ভাবনা চিন্তা আউলানোর সম্ভাবনা আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল। ঠিক তেমনটাই একবার ঘটিয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্ধু নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে পেট পুরে ইলিশ খেয়ে মহানন্দে উলটো দিকের ট্রামে চেপে বসেছিলেন। ইলিশ নিয়ে লিখতে বসে খানিক সে দশা আমারো হলো কিনা তা স্থির করার ভার পাঠকের ওপরেই রইল।