গার্সিয়া মার্কেসের প্রথম উপন্যাস লিফ স্টর্ম প্রসঙ্গে

গার্সিয়া মার্কেসের প্রথম উপন্যাস লিফ স্টর্ম এক আগন্তুকের গল্প। সে মাকন্দো নামের এক জনপদে আসে, সেখানেই থেকে যায় বাকি জীবনটা। এই আগন্তুক সম্ভবত ছিলেন এক চিকিৎসক, যদিও সে সম্পর্কে কিছু সন্দেহর কথা রয়েছে আখ্যানে। আখ্যানকার কুয়াশাচ্ছন্নই রেখে দিয়েছেন বিষয়টিকে। তবে এই আগন্তুক যে দীর্ঘদিন ধরে সমস্ত গ্রামবাসীর ঘৃণার পাত্র হয়ে ছিলেন তার মূল কারণ ছিল চিকিৎসক পরিচয়ে মাকন্দোতে বাস করেও এক বিশেষ সঙ্কট মুহূর্তে কয়েকজন আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে তার গররাজি হওয়া। এমনকী সেদিন মানুষের কাতর আর্তির সামনে তিনি নিজের বন্ধ দরজাটি পর্যন্ত উন্মুক্ত করেন নি। এই ঘটনায় তার প্রতি বিবমিষা এতদূর ছড়িয়েছিল যে মাকন্দোর সমস্ত অধিবাসীরা চেয়েছিল এই আগন্তুকের মৃত্যুর পর যেন সৎকার না হয়, তার মৃত শরীর যেন পচে গলে যায়। আগন্তুক মাকন্দোতে এসে যার ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল তাকে অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি তার সৎকারের ব্যবস্থা করবেন।

আখ্যানটি শুরু হয় সেই আগন্তুক চিকিৎসকের মৃত্যুর পর। প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য কয়েকটি বাড়ি পেরিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আসেন আগন্তুকের বাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন কর্নেলের মেয়ে ইসাবেল ও ইসাবেলের দশ বছরের পুত্র। বাড়িতে থেকে যান কর্নেলের দ্বিতীয় স্ত্রী আদেলৈদা। গোটা আখ্যানে কর্নেল বা আগন্তুক চিকিৎসকের কোনও নাম বলা হয় নি। নাম বলা নেই দশ বছরের ছেলেটিরও।

প্রথম উপন্যাসেই গার্সিয়া মার্কেজ ন্যারেটিভ টেকনিক নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। সর্বজ্ঞ ও সর্বগ কথকের বদলে চরিত্ররাই আখ্যান বর্ণনা করেছে। তবে একক কোনও একটি চরিত্র নয়। অনামা কর্নেল, মেয়ে ইসাবেল ও কর্নেলের দশ বছর বয়স্ক নাতি – সকলে মিলেই আখ্যানের বিভিন্ন পর্ব পাঠককে জানিয়েছে। এর ফলে তিনটি আলাদা স্বর ও দৃষ্টিভঙ্গীর জন্ম হয়েছে উপন্যাসে। দশ বছরের ছোট ছেলেটি শায়িত মৃতদেহের সামনে এসে বিমূঢ় হয়ে পড়ে। এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির বাইরে যেতে চায় সে। ভাবতে থাকে এই দমবন্ধ করা দিনটির বিপ্রতীপে এই সময় অন্য দিনগুলিতে বন্ধুদের সঙ্গে বিচরণের রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলির কথা।

কর্নেলের মেয়ে ইসাবেলের কথনে অতীতের নানা ঘটনা ও স্মৃতি উঠে এসেছে। কর্নেলের স্মৃতিচারণার মধ্যে যদি আগন্তুক চিকিৎসকের আগমনের প্রথম দিককার কথাগুলি বেশি করে এসে থাকে তবে ইসাবেলের বর্ণনায় এসেছে তার কয়েক বছর পরের দিনগুলির কথা। এর একটা বাস্তব কারণ হল সেই আগন্তুক চিকিৎসক যখন মাকোন্দোতে প্রথম আসেন তখন ইসাবেল নেহাৎই কোলের শিশু। জন্মের পরেই তার মা মারা যাওয়ায় কর্নেল তখন বিয়ে করেছেন ইসাবেলের সৎ মা আদেলৈদাকে। কর্নেলের স্মৃতিচারণা থেকে পাঠক জানতে পারেন পালিকা মা আদেলৈদার কোলে শুয়ে যখন ইসাবেল খাচ্ছে, সেই সময়েই আদেলৈদার গৃহসহায়িকা মেমে কর্ণেলকে খবর দেয় এক আগন্তুক এসেছেন। ক্রমশ কর্নেল জানতে পারেন আগন্তুক গৃহযুদ্ধে তাদের সেনাপতি কর্নেল অরলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার থেকে একটি চিঠি নিয়ে এসেছেন। সেই চিঠিতে কী লেখা ছিল তা অবশ্য পাঠককে কর্ণেল জানান নি।

মোট তিরিশ বছরের আখ্যান লিফ স্টর্মে আছে। ১৯২৮ সালে এসে কাহিনীকালের সমাপ্তি। এই সময়ে দাঁড়িয়ে চরিত্রপাত্রদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসছে পুরনো কথা। সে কথার শুরু তিরিশ বছর আগে যখন ইসাবেলের মা তথা কর্নেলের প্রথম স্ত্রী ইসাবেলের জন্ম দিয়ে সদ্য মারা গেছেন। সেটা ১৮৯৮ সাল। অনতি পরেই আগন্তুক চিকিৎসকের মাকন্দোতে অকস্মাৎ আগমন। একইদিনে এসেছিলেন মাকন্দোর পুরনো এক বাসিন্দা, তবে এবার পাদ্রীর নতুন পরিচয়ে। সেই পাদ্রীর আগমনের জন্য গোটা জনপদ প্রধান রাস্তায় অপেক্ষা করছিল। কিন্তু পাদ্রী এলেন ভেতরের রাস্তা দিয়ে আর মূল সড়ক দিয়ে আগমন ঘটল সেই আগন্তুক চিকিৎসকের।

প্রথম কয়েক বছর আগন্তুক কর্নেলের বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু তার আশ্চর্য আচার আচরণ কর্নেলের স্ত্রী আদেলৈদাকে বিরক্ত করত। ফলে তাকে কর্নেলের বাড়ি ছেড়ে কাছের এক বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়।

এই ঘটনাটি যখন আগন্তুক আসার কয়েক বছর পর ঘটছে তখন ইসাবেল বেশ খানিকটা বড় হয়ে গেছে। হঠাৎই তারা একদিন জানতে পারে তাদের গৃহ সহায়িকা মেমে আগন্তুক চিকিৎসকের রক্ষিতা হয়ে তার বাড়িতে থাকতে শুরু করেছে। আগন্তুকের ছিল প্রচুর জমানো টাকা। সেই টাকার সাহায্যেই মেমে নানা ঘর গেরস্থালির পসরায় সাজানো একটি দোকান খোলে। কয়েক বছর পর দেখা যায় দোকানটির ঝাঁপ আর খুলছে না। জানা যায় মেমে কোথায় জানি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। এলাকায় গুঞ্জন ওঠে ডাক্তার মেমেকে খুন করে বাড়ির সামনের বাগানে পুঁতে দিয়েছে। ডাক্তার নাকী মনে করতেন মেমের মাধ্যমে এলাকাবাসী ডাক্তারের খাবারে বিষ মিশিয়ে দেবে আর এই সন্দেহ থেকেই নাকী চিকিৎসক মেমেকে খুন করেছেন। এসব জল্পনার কোনও প্রমাণ অবশ্য মেলেনি। একটি বিষয় লক্ষ করার মতো। আগন্তুক চিকিৎসকের সঙ্গে এলাকাবাসীর তেমন মেলামেশা কথাবার্তা না হলেও তার সম্ভাব্য আচার আচরণ, এমনকী চরিত্র সম্পর্কেও কল্পনানির্ভর এক অবয়ব তারা তৈরি করে নিয়েছিল।

মেমে যেমন একদিন অকস্মাৎ হারিয়ে যায় তেমনি ঘটনা ঘটে ইসাবেলের স্বামী মার্টিনের ক্ষেত্রেও। মার্টিন হঠাৎই একদিন এসে হাজির হয়েছিল মাকন্দোতে। ইসাবেলের বদলে তার বাবা কর্নেলের সঙ্গেই মার্টিনের বেশি আলাপ আলোচনা হত। তিনিই সম্ভবত তাকে নিজের জামাই হিসেবে চয়ন করেন। অনেকদিন ধরেই চলছিল ইসাবেলের বিয়ের পোশাক তৈরির কাজ। বিয়ের পর বছর দুয়েকের দাম্পত্য কাটে ইসাবেল আর মার্টিনের। এক পুত্র সন্তানের জন্মও হয়। তারপর একদিন যুদ্ধে যোগ দিতে পাড়ি দেয় মার্টিন। এরপর তার আর কোনও খোঁজ খবর পাওয়া যায় নি। ইসাবেল তার সৎ মার সাহায্যে বড় করতে থাকেন পুত্র সন্তানকে।

গার্সিয়া মার্কেসের কালজয়ী উপন্যাস ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড’ এর সূত্রে মাকন্দোর কথা, কলম্বিয়ার গৃহযুদ্ধের কথা, সেই গৃহযুদ্ধের অন্যতম নায়ক অরলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার কথা বিশ্ববাসী জানেন। এই কল্পস্থান ও চরিত্রটির কথা মার্কেস তাঁর এই প্রথম উপন্যাসেই নিয়ে এসেছিলেন।  অরলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার অবশ্য উল্লেখমাত্রই রয়েছে লিফ স্টর্ম এ, আর ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড’এর অন্যতম প্রধান চরিত্র তিনি।

‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড’ এর অন্যতম প্রধান থিম যে সলিচিউড বা নিঃসঙ্গতা তা লিফ স্টর্মের মধ্যেও ছড়িয়ে রয়েছে। আগন্তুক চিকিৎসক সমাজ পরিত্যক্ত হয়ে যে চরম নিঃসঙ্গতার মধ্যে একাকী দীর্ঘদিন কাটাতে বাধ্য হন, শেষপর্যন্ত সেই নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণাই তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।

মৃত্যু উপন্যাসের আরেকটি প্রধান থিম। একদিকে রয়েছে আগন্তুক চিকিৎসকের মৃত্যু। অন্যদিকে মাকন্দো শহরটির পুরনো চেহারাটির মৃত্যু এবং সেই পুরনো শহরের স্মৃতিকাতরতাও এই উপন্যাসে ছড়িয়ে আছে। কলা চাষের সূত্রে পরিযায়ীদের আসার ঝড় আর তারপর কলা কোম্পানীর চলে যাবার পরে তাদের বিদায় পুরনো শহরটাকে একেবারে শেষ করে দেয়। এও এক ধরনের মৃত্যু। এক জনপদের নিজস্বতার অবসান।

আখ্যানের মধ্যে রহস্যের বেশ কিছু বীজ বপন করেছেন গার্সিয়া মার্কেস কিন্তু সেগুলোর কোনও মীমাংসা এখানে নেই। রহস্য এখানে গোয়েন্দা গল্পের আকারে আসে না, আসে জীবনের পরম অনিশ্চিতি ও ব্যক্তিমনের গহন দুর্জ্ঞেয়তায় সূত্র ধরে। কেন কর্নেলকে চিঠি লেখেন অরলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, কী লেখা ছিল সেই চিঠিতে, সেই চিঠি নিয়ে আসার ভার কেন আগন্তুক চিকিৎসকের ওপর পড়ল, চিঠি দিতে এসে কেন আমৃত্যু তিনি মাকন্দোতে থেকে গেলেন, তার আচরণ এত রহস্যজনক কেন, তিনি কি সত্যিই চিকিৎসক নাকি এটা এক ভুয়ো পরিচয় – এসব প্রশ্ন পাঠকের মনে উত্থাপিত হয়, কিন্তু তার কোনও জবার তিনি পান না। মার্টিন চরিত্রের আগমনের উদ্দেশ্য, কর্নেলের তাকে জামাই হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ, তার সঙ্গে ইসাবেলের সম্পর্কের রসায়ন, মার্টিনের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাবার রহস্য – এসব বিষয়েও পাঠকের কৌতূহলের কোনও নিবৃত্তি হয় না। গার্সিয়া মার্কেজ আখ্যানের সরল রৈখিক কোনও গতিপথ অবলম্বন করে পাঠককে এখানে গল্প শোনাতে বসেন নি। বর্তমান থেকে শুরু করে অতীতের নানা ঘটনার কথা এনেছেন। তবে সেই কথাগুলিও সময়রেখা ধরে পরপর বলা নয়। পরম্পরা ভেঙে এলোমেলো সময় বিন্যাসে সেগুলি হাজির হয়, পাঠক উপন্যাস পঠন সমাপ্তির পরই কেবল গোটা পরম্পরাটি নিজে সাজিয়ে নিতে পারেন। তবে রহস্যগুলি রহস্যই থেকে যায়।

লিফ স্টর্ম উপন্যাসে গার্সিয়া মার্কেসের পূর্বপুরুষের স্মৃতিকথার কিছু কিছু ছাপ পড়েছে বলে বলে তাঁর সমালোচক ও জীবনীকারদের অনেকে মন্তব্য করেছেন। সরল কোনও সমীকরণ না থাকলেও লিফ স্টর্মের বৃদ্ধ কর্নেলের সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেসের দাদু কর্নেল নিকোলাস রিকার্ডো মার্কেজ এবং ইসাবেলের সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেজের নিজের মা লুইসা সান্তিয়াগার কিছু কিছু সাদৃশ্য আছে। মার্টিনের মতো গার্সিয়া মার্কেজের বাবা গ্যাব্রিয়েল এলিগো গার্সিয়াও টেলিগ্রাফ অপারেটরের চাকরি নিয়ে তাদের শহরে এক আগন্তুকের মতো হঠাৎই এসেছিলেন। এমনকী লিফ স্টর্ম এর মাকন্দো শহরটির সঙ্গে তার দাদুর বাড়ি আরাকাতাকার অনেক মিল আছে বলেও মার্কেস বিশেষজ্ঞরা আমাদের জানিয়েছেন। কলা চাষের সূত্র ধরে সেখানেও আখ্যানের মাকন্দোর মতোই একসময় আগন্তুকদের ভিড় নেমে এসেছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য গার্সিয়া মার্কেজের ছেলেবেলার বাসস্থানও ছিল এই আরাকাতাকা শহর। সেখানে দাদু নিকোলাস মার্কেজ ও দিদিমা ডোনা ট্রাঙ্কুইলিনার সঙ্গে থাকতেন তিনি। ছেলেবেলায় তাঁদের মুখে শোনা গল্পগুলোই তাঁকে আখ্যানকার হতে সাহায্য করেছে বলে গার্সিয়া মার্কেজ পরে নানা জায়গায় বহুবার বলেছেন।

তবে শেষপর্যন্ত লিফ স্টর্ম কোনও আত্মজৈবনিক রচনা নয়। এইসব উপাদান ব্যবহার করলেও শেষপর্যন্ত এর মূল বয়ানটি পারিবারিক জীবনকথার সঙ্গে মেলে না। প্রেক্ষাপট মাকন্দো বা উপন্যাসের চরিত্ররা মূলত কাল্পনিক। তবে কাল্পনিক কাহিনী হলেও লিফ স্টর্ম এর আখ্যান তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে প্রেক্ষাপট হিসেবে ব্যবহার করেছে। এগুটি হল - কলম্বিয়ার গৃহযুদ্ধ, কলা কোম্পানি বা ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির কলম্বিয়াতে আসা, এই সূত্রে মাকন্দোর মতো আখ্যাত জনপদে বিপুল সংখ্যক মানুষের পরিযায়ী হিসেবে আগমন যার সূত্র ধরে স্পেনীয় ভাষায় লিফ স্টর্ম এর নাম ‘লা হোজারাস্কা’ এবং কলা কোম্পানির কলম্বিয়াকে ছিবড়ে করে চলে যাওয়া।

লিফ স্টর্ম প্রসঙ্গে যে দুই আখ্যানকারের প্রভাবের কথা গার্সিয়া মার্কেজ নিজেই বলেছেন তাঁরা হলেন উইলিয়ম ফকনার ও আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। পরবর্তীকালে লেখা ‘গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ মিটস আর্নেস্ট হেমিংওয়ে’ নামক রচনায় মার্কেস জানিয়েছেন যে বিষয়বস্তুর দিক থেকে ফকনার তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন, তবে লেখার কলাকৌশল শেখার ব্যাপারে তাঁকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে পাঠের অভিজ্ঞতা। লিফ স্টর্ম উপন্যাসে এক সমাজ পরিত্যক্ত মানুষের মৃত্যু পরবর্তী সৎকার নিয়ে সমস্যার মতোই ফকনারের ‘অ্যাজ আই লে ডাউন’ উপন্যাসেও অ্যাডি ব্রানডেনের সৎকার নিয়ে সমস্যা তৈরির এক বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। লিফ স্টর্ম উপন্যাসে কর্ণেল আগন্তুক চিকিৎসককে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তাঁর সৎকারের দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। আর ফকনারের অ্যাজ আই লে ডাউন উপন্যাসে অ্যাডি ব্রানডেনকে মৃত্যুকালে তাঁর স্বামী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে অ্যাডিকে তার জন্মভূমি মিসিসিপির জেফারসনে সমাধিস্থ করবেন। কিন্তু বিধ্বংসী আগুন ও বন্যা এই প্রতিশ্রুতি পালনে সঙ্কট তৈরি করে। শেষপর্যন্ত অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে অ্যাডিকে সমাধিস্থ করা সম্ভব হয় তাঁর শেষ ইচ্ছানুসারেই। লিফ স্টর্ম উপন্যাসেও চিকিৎসকের সৎকারে মাকন্দোর অধিবাসীদের ঘৃণা অসন্তোষ ও আপত্তি মেয়রের মধ্যে দিয়ে অভিব্যক্ত হয়ে সমস্যা তৈরি করে। তাদের ইচ্ছে ছিল মৃতদেহটি জীবিত ব্যক্তির কৃতকর্মের ফল ভোগ করে পচে গলে যাক। শেষপর্যন্ত অবশ্য সমস্যা মেটে, চিকিৎসকের শবদেহ ঘর থেকে সৎকারের জন্য বাইরে আসে। লাতিন আমেরিকার আর এক বিখ্যাত কথাকার মারিও ভার্গাস ইয়োসা লিফ স্টর্মের আলোচনা প্রসঙ্গে এই থিমগত মিলের কথা ছাড়াও ফকনারের ‘অ্যাজ আই লে ডাউন’এর চেতনাপ্রবাহরীতির সঙ্গে লিফ স্টর্ম এর চেতনাপ্রবাহধর্মী ন্যারেটিভের মিলের কথা বলেছেন।