গার্সিয়া মার্কেস ও তাঁর 'জেনারেল ইন হিজ ল্যাবিরিনথ'

গার্সিয়া মার্কেস একটিই ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন। 'জেনারেল ইন হিজ ল্যাবিরিনথ' নামের এই আখ্যানটি তিনি লেখেন লাতিন আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক সাইমন বলিভারকে কেন্দ্র করে। সাইমন বলিভারের শেষ জীবন, বিশেষ করে শেষ সাত মাসের ঘটনাবলী এই উপন্যাসের মূল ভিত্তি। উপন্যাসটি লেখার আগে দু বছর সাইমন বলিভারের জীবন ও সমকালীন সময়ের নানা দিক নিয়ে গার্সিয়া মার্কেস ব্যাপক গবেষণা করেন। ভূগোলবিদ, ইতিহাসবিদ সহ নানা বিশেষজ্ঞদের একটি দলও এই আখ্যান লেখার বিষয়ে তাঁকে নানা তথ্য বিশ্লেষণ দিয়ে সাহায্য করেন।

সাইমন বলিভারকে লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে ডাকা হয় লিবারেটর বা মুক্তিদাতা বলে। পঞ্চদশ শতকের একদম শেষে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সেই ভূখণ্ডে পা রাখার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন এলাকা একের পর এক দুই ইউরোপীয় শক্তি স্পেন ও পর্তুগালের দখলে আসতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই উপমহাদেশে শাসন চালায়। একে শোষণ করে। আফ্রিকা থেকে কাজকর্ম চালানোর জন্য নিয়ে আসে প্রচুর দাস। লাতিন আমেরিকার নিজস্ব অতীতের সঙ্গে ইউরোপ আর আফ্রিকার নানা প্রভাব মিশে তৈরি হয় নতুন সংস্কৃতি।

অষ্টাদশ শতকের দুটো বড় ঘটনা গোটা পৃথিবীর নানা জায়গার মতো লাতিন আমেরিকাতেও প্রবল প্রভাব ফেলে। একটি ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, যেখানে উত্তর আমেরিকা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাকে ছুঁড়ে ফেলে স্বাধীনতা অর্জন করে। অপরটি ছিল ফরাসী বিপ্লব। শতাব্দীর একদম শেষ পর্বে ঘটা ফরাসী বিপ্লব ও তারপর নেপোলিয়নের শাসনকালের প্রভাব সমগ্র ইউরোপ ও স্পেনের মাধ্যমে লাতিন আমেরিকায় পড়েছিল প্রবলভাবে। ১৮০৮ সালে স্পেনের দুই শাসক সম্রাট চতুর্থ চার্লস ও সম্রাট সপ্তম ফার্দিনান্দকে নেপোলিয়ন অপসারণ করেন ও সেই জায়গায় নিজের ভাইকে বসান। কিন্তু স্পেনের মানুষ এটা মানতে পারে নি। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয় এবং দেশজুড়ে অসংখ্য ছোট ছোট স্থানীয় সরকার বা জুন্টা তৈরি হয়। ১৮১০ সাল নাগাদ ছোট জুন্টাগুলি মিলিত হয়ে কেন্দ্রীয় জুন্টা তৈরিরও চেষ্টা করে। তবে উপনিবেশের অনেকগুলি জুন্টা এই কেন্দ্রীয় জুন্টায় যোগ দেয় নি। তারা ভেবেছিল তারা স্পেনের জুন্টাগুলির সমান অধিকার পাবে না। নেপোলিয়নের উত্থানের আগে থেকেই ক্রেয়ল বা উপনিবেশে জন্মানো স্পেনীয়দের সঙ্গে পেনিনসুলারিয়ান বা স্পেনে জন্মানো স্পেনীয়দের দ্বন্দ্ব চলছিল। ১৮১৪ সালে স্পেনের সম্রাট হিসেবে প্রত্যাবর্তন ঘটে সম্রাট সপ্তম ফার্দিনান্দের। স্পেনের উপনিবেশগুলিতে অবস্থিত জুন্টাগুলি এই সময়ে নিজেদের সায়ত্ত শাসন অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করে ও পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে নিজেদের মুক্তির লড়াই শুরু করে। ১৮২৫ সালের মধ্যেই অনেকগুলো লড়াইতে জিতে তারা লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ ভূভাগকে স্বাধীন করতে সফল হয়। এই লড়াইতে যে দুজন মানুষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তাঁরা হলেন সাইমন বলিভার (১৭৮৩ – ১৮৩০) ও হোসে সান মার্তি (১৭৭৮ – ১৮৫০)। সাইমন বলিভার লাতিন আমেরিকার উত্তরভাগের দেশগুলি - ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া ও বলিভিয়াকে মুক্ত করার বিষয়ে প্রধান ভূমিকা নেন। অন্যদিকে হোসে সান মার্তি ছিলেন লাতিন আমেরিকার দক্ষিণ অংশ, বিশেষত আর্জেন্টিনা ও চিলিকে মুক্ত করার প্রধান কারিগর। ১৮২২ সালে এই দুই মহানায়ক একটি বৈঠক করেন গোয়াকুইলে, যার বিষয় ছিল পেরুর স্বাধীনতা ও শাসন পদ্ধতি। পেরুর কিছু অংশকে হোসে মার্তি মুক্ত করেছিলেন, অবশিষ্টাংশ মুক্ত করায় নেতৃত্ব দেন সাইমন বলিভার।

নিতান্ত ছেলেবেলাতেই বলিভার বাবা মা কে হারিয়েছিলেন ও তারপর আত্মীয়দের কাছে বড় হতে থাকেন। পারিবারিক সূত্রে তিনি ছিলেন প্রচুর সম্পত্তির মালিক। তাঁর সম্পদের এক বড় অংশই তিনি লাতিন আমেরিকার স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে যখন ভেনেজুয়েলার বিভিন্ন জুন্টা স্বাধীনতার লড়াই শুরু করে সাইমন বলিভার তখন ছিলেন এক তরুণ সামরিক অফিসার। ১৮১১ সালের মধ্যেই ভেনেজুয়েলার দশটি প্রদেশের মধ্যে সাতটি প্রদেশ স্বাধীন হয়ে যায় এবং তারা রাজধানী কারাকাসে যৌথভাবে সরকার গঠন করে। তবে পরের বছরেই স্পেনের শাসকেরা আবার ভেনেজুয়েলার ওপর তাদের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। বলিভার এইসময় কলম্বিয়ার কার্তাজেনায় পালিয়ে যান। কার্তাজেনাতে বসেই তিনি লেখেন কার্তাজেনার ম্যানিফেস্টো। এখানে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পানামা ও ভেনেজুয়েলাকে ঐক্যবদ্ধভাবে স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানানো হয়। ১৮১৩ সালে বলিভার এক সেনাবাহিনীর নেতা হিসেবে ভেনেজুয়েলায় আক্রমণ চালান ও অনেকগুলো যুদ্ধে জিতে ভেনেজুয়েলার অনেক অংশকে মুক্ত করেন। গঠিত হয় দ্বিতীয় স্বাধীন সরকার। তবে এই সরকারও বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। ১৮১৪ সালে স্পেনের শাসকেরা আবারও ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন। বলিভার আবার ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বাধ্য হন। এবার তিনি চলে যান জামাইকাতে। সেখানে তাকে হত্যার চেষ্টা করে স্পেনীয়রা। এরপর তিনি চলে আসেন হাইতিতে। হাইতিতে তখন এক সফল দাস বিদ্রোহ হয়েছে। ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন আলেকজান্দ্রা পেঁতি। নতুন শাসকের সঙ্গে বলিভারের বোঝাপড়া হয়। ১৮১৭ তে আবার ভেনেজুয়েলাতে ফেরেন বলিভার এবং এক নতুন সেনাবাহিনী গঠন করেন। সবাই ভেবেছিল বলিভার বোধহয় ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে অভিযান চালাবেন। কিন্তু বলিভার তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে আন্দিজ পেরিয়ে চলে যান নিউ গ্রানাদায়। ১৮১৯ ও ১৮২০ তে অনেকগুলো যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে তিনি তৎকালীন নিউ গ্রানাদা বা বর্তমান কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও পানামাকে মুক্ত করেন। ভেনেজুয়েলা ও এইসব এলাকা নিয়ে গ্রান্ড কলম্বিয়া তৈরি হয় এবং তার রাষ্ট্রপ্রধান হন সাইমন বলিভার। বলিভারের বিশ্বস্ত অনুচর আন্তোনিও হোসে সুক্রের সেনাপতিত্বে পেরু ও বলিভিয়াও স্পেনীয় শাসন থেকে মুক্ত হয়। বলিভিয়াও গ্রান্ড কলম্বিয়ার মধ্যে আসে ও বিভিন্ন দেশের এক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। সাইমন বলিভার ১৯৩০ অবধি এই ইউনিয়নের প্রধান ছিলেন। কিন্তু ভেনেজুয়েলা ও ইকুয়েডর ১৯৩০ সালেই এই ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায়। স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষভুক্ত মানুষেরা বলিভারের যুক্তরাষ্ট্রীয় স্বপ্নের বিরুদ্ধে দাঁড়ান ও লাতিন আমেরিকা তথা গ্র্যান্ড কলম্বিয়ার নানা জায়গায় বলিভারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। এই প্রেক্ষাপটেই বলিভার স্থির করেন তিনি শুধু রাষ্ট্রপ্রধানের পদই যে ছাড়বেন তা নয়, রাজনীতি থেকেও বিদায় নেবেন। এমনকী লাতিন আমেরিকার মাটি ছেড়ে ইউরোপের কোথাও চলে যাবার সংকল্পও তিনি গ্রহণ করেন। এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে পড়তে পারে আর্জেন্টিনার মুক্তিযুদ্ধের নায়ক হোসে সান মার্তির কথা। ১৮২২ সালে তিনিও রাজনীতি থেকে সরে যান ও লাতিন আমেরিকা ছেড়ে চিরতরে চলে যান ইউরোপে।

সাইমন বলিভারের চমকপ্রদ সব সমর অভিযানের কথা বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে লাতিন আমেরিকাকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবার কথা গার্সিয়া মার্কেস তাঁর আখ্যানে সরাসরি আনেন নি। স্মৃতিপটে সে সব কখনো কখনো এলেও তিনি বেছে নিয়েছেন জীবনের শেষ পর্বে এসে দাঁড়ানো অসুস্থ, ভগ্ন স্বাস্থ্য ও ক্লান্ত বিষণ্ণ মনের এক সেনাপতিকে। ১৮৩০ সালের ৮ মে শুরু হয় এই আখ্যানের কাহিনী। জেনারেল বলিভার কলম্বিয়ার বোগাতো ছেড়ে ম্যাগদালেনা নদীপথে চলেছেন বন্দর শহর কার্তাজেনার দিকে। সেখান থেকে জাহাজে করে তিনি চলে যেতে চান ইউরোপের কোথাও। চলে যেতে চান যে লাতিন আমেরিকাকে তিনি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত করেছেন বহু যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে, সেই লাতিন আমেরিকার মাটি ও তার জনগণকে ছেড়ে। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার দেশের মানুষের অনেকেই আর তাকে চাইছে না। বলিভার বিরোধী বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গায়। একটি বড় যুক্তরাষ্ট্রের বদলে আলাদা আলাদা জাতি রাষ্ট্র গড়ার মতটি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে, যাতে তিনি একেবারেই সম্মত ছিলেন না। বলিভার আগেও গুপ্তঘাতকের মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু লাতিন আমেরিকার মুক্তিদাতা হিসেবে ঘোষিত হবার পর যখন গুপ্তঘাতকের আঘাত তার দিকে উদ্যত হল, তিনি বিষণ্ণ হলেন। ভগ্নমনোরথ হয়ে গ্রান্ড কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে তাই তিনি যেতে চাইলেন অন্য জীবনের দিকে। তাই নিয়েও অনেক কটাক্ষ সইতে হল তাকে। কেউ কেউ বলল তিনি আসলে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে চান না। চলে যাবার কথা রটিয়ে দিয়ে তিনি দেখতে চান সবাই তাঁকে থেকে যেতে, নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করছে। বহু যুদ্ধের বিজয়ী বীর তখন অবসন্ন। মাত্র ছেচল্লিশেই যেন বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। অবশ্য লাতিন আমেরিকা ছেড়ে চলে যাওয়া শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় না তাঁর পক্ষে। অসুস্থ অবস্থায় এখানেই শেষ শয্যা নিতে হয় তাঁকে।

লাতিন আমেরিকার মহান সমর নায়কের জীবনের শেষ সাত মাস নিয়ে লাতিন আমেরিকার সেরা কথাকার গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাসটি আখ্যান না সময়ের ধারাবিবরণী তাই নিয়ে বিতর্ক আছে। একে কেউ কেউ ঐতিহাসিক উপন্যাস বলেন। কিন্তু এর প্রধান চরিত্রগুলিই শুধু নয়, প্রায় সমস্ত চরিত্রই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। এখানে যে ঘটনাবলী রয়েছে তাও ইতিহাসের বাস্তব সত্য। নানা দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে সেই ইতিহাস খুঁড়ে আনা হয়েছে। গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাসে যে কল্পনাদীপ্তি দেখতে পাঠক অভ্যস্ত, এখানে আখানকার তা থেকে সরে থেকেছেন। তিনি যেন দিনলিপির নির্মোহ ভাষ্যকার। গার্সিয়া মার্কেসে মুগ্ধ পাঠকদের অনেকের কাছেই এই উপন্যাসটি তাই অচেনা লেগেছে।

উপন্যাসটির, যদি একে শেষ পর্যন্ত উপন্যাস বলেই ধরে নিই আমরা, আটটি অধ্যায়ের একেকটি এক এক বন্দর শহরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। প্রতিটি বন্দরেই সাইমন বলিভার তাঁর ফেলে আসা অতীতের কোনও না কোনও মানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। এই সূত্রে সেই সব চরিত্ররা উপন্যাসের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। তবে মাগদালেনা নদীটি যেন নিজেই এক চরিত্র হয়ে উঠেছে। উপন্যাসের শেষে নদীটি সম্পর্কে তাঁর নিজের স্মৃতির প্রসঙ্গ এনেছেন গার্সিয়া মার্কেস। কলম্বিয়া তাঁর মাতৃভূমি। ছাত্রজীবন থেকে অনেকবার এই নদীপথে তিনি যাতায়াত করেছেন। সেই সূত্রে এই নদী ও তার ধারের বন্দরগুলি তিনি খুব ভালোভাবে চেনেন। সাইমন বলিভারের শেষ যাত্রাপথটিকে পুনঃনির্মাণ করা তাই তাঁর পক্ষে সহজতর হয়েছে।

১৯৮৯ সালে এই উপন্যাস প্রকাশের দু বছর আগে যখন এটি লেখার কাজ শুরু করেছিলেন গার্সিয়া মার্কেস, তখন সোভিয়েত দুনিয়ার শেষ পর্বর ঘটনাগুলি নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে প্রবল আলোড়ন। পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত ঘেঁষা দেশগুলি, যারা ওয়ারশ চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল, তখন জমানা বদলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সোভিয়েতের বিভিন্ন দেশগুলোও কেন্দ্রীয় শাসন ছেড়ে আলাদা হবার পথে। এইরকম একটা সময়ে জেনারল বলিভারের প্রবল অনিচ্ছাতেও তাঁর নিজের হাতে স্বাধীন করা দেশগুলির বিকেন্দ্রীকরণের ঝোঁক ও তাতে জেনারেল বলিভারের হতাশা ও বিষণ্ণতার গল্প যখন শোনান গার্সিয়া মার্কেস, তখন তা আলাদা তাৎপর্যে মণ্ডিত হয়ে যায়। সমকালীন রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে অষ্টাদশ শতকের লাতিন আমেরিকার নিজস্ব ইতিহাসকে মেশানোর কাজটা উপন্যাসের মধ্যে তিনি না করলেও সমকালীন পাঠকের মানসপটে তা ভেসে উঠতে বাধ্য। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকা প্রসঙ্গে, তার ঋণ গ্রস্থতা প্রসঙ্গে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাকে দমন করতে চাওয়া ও নানা উপায়ে শোষণের প্রসঙ্গে এই আখ্যানে সাইমন বলিভারকে যা যা আমরা বলতে শুনি, সে সবও শুধু সমকালীন বাস্তবতা নয়। পরবর্তী দুশো বছরের ইতিহাস সেই সব আশঙ্কার প্রত্যক্ষদর্শী। কল্পনার যে জাদু গার্সিয়া মার্কেজের উপন্যাসগুলিকে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে যায়, 'জেনারেল ইন হিজ ল্যাবিরিনথ' এ তার অভাব থাকলেও দেশ কাল ইতিহাস রাজনীতি বোধের নিরিখে এই উপন্যাসটি বিশিষ্ট হয়ে ওঠে।