সুভাষচন্দ্রের নারীভাবনা ও ঝাঁসির রাণী বাহিনী

সুভাষচন্দ্র বসুর ঝাঁসির রাণী বাহিনী গঠণের  পিছনে প্রধান শক্তি ছিল তাঁর ব্যক্তিগত দৃঢ় মতাদর্শ। সমাজের সব কাজের মতো স্বাধীনতা যুদ্ধেও যে মেয়েরা কেবল প্রেরণাদাত্রীর ভূমিকায় থাকবেন না, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তারাও পারবে নির্ভীক সৈনিক হতে, পারবে পুরুষের সহযোদ্ধা হতে, সক্রিয় যোদ্ধা হিসেবে সামনের সারিতে থেকে দুঃসাহসিক লড়াই করতে পারবে তারাও, সেই আদর্শ তিনি রূপায়ণ করেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ র মহিলা বাহিনী গঠনের মধ্য দিয়ে। একটি স্বতন্ত্র ব্রিগেড হিসেবে ঝাঁসী রাণী বাহিনী সারা বিশ্বেই অনন্য।
নারী সম্পর্কে তাঁর অন্যন্য চিন্তাধারার প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় 1921 সালে। সিভিল সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিলেত থেকে চিঠি লিখেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে। এই চিঠিতেই ভারতের কংগ্রেস পার্টির বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়েছিলেন। সেখানে ভারতীয় মুদ্রা, দেশীয় রাজ্য নিয়ে আলোচনার সঙ্গে ভোটাধিকারে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিয়েও যে কংগ্রেসের তখনও পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো নীতি ছিল না তা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায় ভারতের মন্ত্রী সভায় নারীর নেতৃত্ব দানের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নারী সমাজকে আহ্বান করে রাজনৈতিক সভায় তিনি দ্বারকানাথ  গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভারত ললনা’ নামক জনপ্রিয় বাংলা কবিতাটি আবৃত্তি করতেন :-
 
 ‘না জাগিলে সব ভারত-ললনা,
এ ভারত আর জাগে না জাগে না।
অতএব জাগো জাগো ভগিনী,
হও বীরজায়া,বীর-প্রসবিনী।
 শুনাও সন্তানে, শুনাও তখনি,
বীর -গুণগাথা বিক্রম- কাহিনী ।
স্তন্য দুগ্ধ যবে পিয়াও জননী।
বীর গর্বে তার নাচুক ধমনী।
তোরা না করিলে এ মহা সাধনা,
এ ভারত আর জাগে না জাগেনা।‘
 
1925 সালের জুন মাসে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ  প্রয়াত হলে তরুণ সুভাষ এসেছিলেন দেশবন্ধু জায়া মাতৃসমা বাসন্তী দেবীর কাছে (যাকে তিনি ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন)। আর্জি ছিল, তাঁকে এই দুঃসময়ে বাংলার কংগ্রেসী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে। বাসন্তী দেবীকে রাজী  করাতে সুভাষচন্দ্র সমকালীন কিছু দৃষ্টান্ত টানলেন। মিশরের ম্যাডাম জাগলুল পাশার (সাফিয়া খানুম) প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। যিনি ‘উম অল মিসরিয়ন’ বা ‘সব মিশরীয়ের মাতা’ নামে খ্যাত ছিলেন। চিনের আর একজন নেতৃ ‘সান ইয়াৎ সেন’(সু চিং লিং)এর উদাহরণও দেন। এরা দুজনেই  স্বামীর মৃত্যুর পর সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছিলেন। ইতিমধ্যে সুভাষ বাসন্তী দেবীর জয়গানও করেন—“আপনি কেবল চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী নন, আপনি বঙ্গমাতার অবতার।” তবু বাসন্তী দেবীকে রাজী করাতে পারেন নি সেদিন সুভাষ।
সুভাষচন্দ্র বাসন্তী দেবীকে তাঁর স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব দিতে বলেছিলেন, তার পিছনে আরও একটি কারণ ছিল। বাংলায় কংগ্রেসের রাজনৈতিক ঐক্য তখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস করতেন, বাসন্তী দেবীই হতে পারেন কাঙ্ক্ষিত ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু গভীরতর কারণটি হল, ভারতীয় নারীর স্বাধীনতা সংগ্রামে শুধু অংশগ্রহণই নয়, নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গাতেও যাওয়া দরকার বলে মনে করতেন তিনি। তাই চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর শূন্যস্থান পূরণের জন্য পুরুষের জায়গায় একজন নারীকেই ভেবেছিলেন। অর্থাৎ তিনি ব্যক্তির জায়গায় ব্যক্তিকে আনতে চেয়েছিলেন।
1927 থেকে তিনি নিজের মেজদা এবং ঘনিষ্ঠতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা শরৎচন্দ্র বসুর স্ত্রী বিভাবতীদেবীকেও রাজনীতির কাজে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় স্বাধীনতার ইতিহাসে সরোজিনী নাইডু, প্রীতিলতা  ওয়াদেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাশ, মাতঙ্গিনী হাজরার মত অসংখ্য নারীর অবদান থাকা সত্ত্বেও তিনি মনে করতেন আরও বেশি সংখ্যক নারীর যোগদান ও নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করা দরকার। শুধুমাত্র গোপন খবর পাচার করা, বিপ্লবী দের গোপন আশ্রয় দেওয়া, অস্ত্র লুকিয়ে রাখাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না নারীর ভূমিকা।
1928 সালের জাতীয় কংগ্রেসের কলিকাতা অধিবেশনে পুরুষের সঙ্গে  নারীদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করিয়েছিলেন। অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলকাতার রাস্তায়  সুভাষচন্দ্রের পরিকল্পনায়, তাঁর অনুগামী অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষাপ্রাপ্ত শিক্ষিকা লতিকা ঘোষের নেতৃত্বে পুরুষের পাশাপাশি প্রায় তিনশো স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ করেছিল। সেদিন কলকাতাবাসী সবিস্ময়ে দেখেছিল পুরুষের পাশে নারীর দৃঢ় পদক্ষেপ। এই ভাবনারই চূড়ান্ত ফসল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আজ়াদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসির রানি রেজিমেন্ট। 
 সুভাষচন্দ্র বসু মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে অদম্য প্রাণশক্তি, অসীম সাহস, আর দুচোখ ভরা অনন্ত স্বপ্ন নিয়ে  1941সালের 16-17জানুয়ারি রাত 1.35মিনিটে ‘মহম্মদ জিয়াউদ্দিন’ এর বেশ ধারণ করে কলকাতার 38/2 এলগিন রোডের বাড়ি ছেড়েছিলেন ‘ওয়ান্ডার বি এল এ 7169’ নম্বরের গাড়িতে চেপে। পৌঁছালেন পেশোয়া হয়ে কাবুল। সেখান থেকে পৌঁছালেন ইউরোপ, উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে জার্মানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানো।
‘আরল্যান্ডো ম্যাজাটো’ ছদ্মনামে ইউরোপের নানা জায়গা ঘুরে জার্মানে নির্বাসিত ও প্রবাসী ভারতীয়দের বিশেষ করে ছাত্রদের নিয়ে একটি ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সোসাইটি’ গঠণ করেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলোনের পক্ষে স্বাধীন ভাবে বেতার প্রচারের ব্যবস্থা করেন, যার নাম দেন ‘আজাদ হিন্দ রেডিও’। ভারতের বাইরে জার্মানে এক বছরের প্রচেষ্টায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভারতীয়  অফিসার ও সৈন্য নিয়ে গঠণ করেছিলেন ‘আজাদ হিন্দ বাহিনী’। এই সময় খুঁজে পেয়েছিলেন এ সি এন নাম্বিয়ার, আবিদ হাসান, এন জি স্বামী, এন জি গানপুলে, কে এম ভাট, এম আর ব্যাস, পি বি শর্মা, প্রমোদ সেনগুপ্ত, জে কে ব্যানার্জি, এ এম সুলতান, হাবিবুর রহমান আর গিরিজা মুখার্জিকে। এঁরা সবাই সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে স্বাধীন ভারতের লক্ষ্যে, আন্দোলনে যোগ দিলেন। 1941 সালের 7ই ডিসেম্বর জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ সেনাদের পরাজয় হয়েছিল 1942 সালের 15ই ফেব্রুয়ারি। সিঙ্গাপুর পতনের পর তিনি ‘আরল্যান্ডো ম্যাজাটো’ ছদ্মনাম ছেড়ে দিলেন। ভারতবাসী আজাদ হিন্দ রেডিওতে শুনল তাঁর কণ্ঠ স্বর, “আমি সুভাষচন্দ্র বসু বলছি”। ঘোষণা করলেন, “সিঙ্গাপুর পতনের অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মৃত্যু ঘন্টা, ভারতে তাদের অন্যায় শাসনের ইতি, ভারতের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা। ভারতের মুক্তির পথেই এশিয়া এবং সমগ্র বিশ্ব এগিয়ে যাবে মানবতার মুক্তির বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে”। 
তখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সারা বিশ্ব উত্তাল। 1943 সালের 9ই ফেব্রুয়ারি ভোরে সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর  সদ্যজাত কন্যা ও স্ত্রীকে রেখে ইউরোপ  থেকে পুর্ব এশিয়ায় এসেছিলেন দুঃসাহসিক ডুবোজাহাজে যাত্রা করে। আবিদ হাসান সাফ্রানিকে সঙ্গে নিয়ে জার্মান সাবমেরিন ইউ 180 তে চেপেছিলেন সেদিন। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ডুবোজাহাজে যাত্রা করে 28শে এপ্রিল জাপান সাবমেরিন ওঠেন। স্ববং দ্বীপের বন্দরে পৌছালেন 6ই মে। পরে 1943 সালের 2রা জুলাই দুপুর বারোটার দিকে একটি দুই ইঞ্জিনের জাপানি বিমানে সিঙ্গাপুরে পৌঁছালেন সুভাষচন্দ্র বসু।
  1942 সালে 17ই ফেব্রুয়ারি (জাপানি বাহিনীর কাছে ব্রিটিশের পরাজয়ের দুদিন পর) সিঙ্গাপুরে ইন্ডিয়ান ন্যশনাল আর্মি নির্মানের প্রথম সূচনা হয়েছিল। সিঙ্গাপুরের পতনের পর ব্রিটিশ বাহিনীর ভারতীয় সৈন্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, ব্রিটিশ কমান্ডিং অফিসার তাদের জাপানিদের কাছে সমর্পণ করে দিয়েছিল। 17ই ফেব্রুয়ারি সর্ব স্তরের ভারতীয় সৈন্যরা সিঙ্গাপুর ফায়ার পার্কে এসে হাজির হয়েছিল। জাপানের আর্মি কমান্ডার ফুজিয়ারা তাদের ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগ দিতে বলে। এবং যুদ্ধবন্দি নয়, বন্ধু হিসেবে দেখবে বলে আশ্বস্ত করলে, সেইদিন প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার সৈন্য আই এন এ তে যোগ দেয়েছিল । 
1942সালের জুনের শেষে জাপানে বসবাসকারী ভারতীয় বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগের(প্রবাসী ভারতীয় সমাজের বিশাল সংখ্যক সদস্যের  জাতীয়তাবাদী সংগঠণ) ব্যাঙ্কক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। 1912তে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর বোমা ছুঁড়েছিলেন এই রাসবিহারী বসু, লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়েছিলেন। তিনি 1915 সালে থেকে জাপানে রাজনৈতিক আশ্রিত। 1942 সালের মাঝামাঝি ইন্দো-জাপানি সম্পর্কে অনাস্থা স্পষ্ট হলে আই এন এ র কর্নধার মোহন সিংহ ডিসেম্বরে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ভেঙে দেন। পরের কয়েক সপ্তাহের চেষ্টায় আবার ফিরিয়ে আনেন অনেককে। বেশির ভাগই রয়ে যায়। তৈরি হয় দ্বিতীয় আই এন এ। তখন তাদের কাছে একটাই ভরসা সুভাষচন্দ্র আসছেন আই এন এ র হাল ধরতে। সুভাষচন্দ্র 2রা জুলাই সিঙ্গাপুর এলেন। এয়ারপোর্টে আই এন এ ‘গার্ড অব অনার’ দিল তাঁকে। 1943সালের 3রা জুলাই ইন্ডিয়ান লিগের প্রতিনিধিরা ক্যাথে থিয়েটারে জড়ো হলে সবার সামনে রাসবিহারী বসু আই এন এ এর দায়িত্ব তুলে দিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে। তিনি যেন এরকমই একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন! তাঁর পূর্ব কল্পিত চিন্তাধারা রূপায়ণের যজ্ঞ শুরু করলেন। নতুন করে সাজালেন সৈন্যবাহিনীকে। 5ই জুলাই নিজেই সামরিক পোশাক পরে দাঁড়ালেন সৈন্যদের আগে।
সুভাষচন্দ্র সাবমেরিন যাত্রা পথে একটি বক্তৃতা লিখিয়েছিলেন আবিদ হাসানকে দিয়ে। 1943 সালের 9ই জুলাই সিঙ্গাপুরের একটি সভায় ষাট হাজার ভারতীয়ের সমাবেশে ঝাঁঝালো বক্তৃতা শোনান-তাঁর ভাষায়  ‘I want total mobilization and nothing less, for this is a total war … . I also want a unit of brave Indian women who will wield the sword which the brave Rani of Jhansi wielded in India’s First war of Independence.’ (Speech at Singapore, 9th July, 1943)। বক্তৃতা শুনে অনুপ্রাণিত হলেন ঝাঁসির রাণী বাহিনীর প্রথম সদস্য লক্ষ্মী স্বামীনাথন। সুভাষচন্দ্র বসু শোনালেন সেই ঐতিহাসিক কাহিনী, 1857সালে মহাবিদ্রোহে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ঝাঁসি রাণী ঘোড়ার পিঠেই প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন। প্রসঙ্গ টানলেন ফ্রান্সের জোন অফ আর্কেরও। সুভাষচন্দ্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত মহিলা সৈন্য বাহিনী গঠণ করার উদ্দেশ্যে ‘ঝাঁসির রাণী বাহিনী’ গঠনের ডাক দিলেন। লক্ষ্মী স্বামীনাথন তখন সিঙ্গাপুরে সদ্য ডাক্তারি পড়া শেষ করেছেন।  লক্ষ্মী  মাদ্রাজের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর পিতা মাদ্রাজের বিখ্যাত আইনজীবী এবং মাতা জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। লক্ষ্মী সিঙ্গাপুরে ডাক্তারি পড়ার পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লিগে’। প্রাণশক্তিতে চঞ্চল, সাহসীকতায় উজ্জ্বল, দেশপ্রেমে ভরপুর লক্ষ্মী তাঁর বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার আগে শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। সুভাষচন্দ্র বসু লক্ষ্মীর মধ্যে দেখতে পেলেন তাঁর ক্যাপ্টেনকে, লক্ষ্মী খুঁজে পেলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরুকে। চাকরি ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন দেশোদ্ধারের কাজে, আইএনএ-(ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি)র মহিলা বাহিনী গড়তে। তিন দিনের মধ্যে লক্ষ্মী একটি ২০ জন তরুণীর ইউনিট তৈরি করে রাইফেল নিয়ে একটি সভায় সুভাষচন্দ্রকে ‘গার্ড অব অনার’ দিলেন। মেয়েরা সাদা শাড়িকে ইউনিফর্ম করে পরেছিল সেদিন। গোটা ব্যাপারটা আইএনএ-র  সকলের যে খুব ভাল লেগেছিল তা নয়। প্রথম দিকে নারী বাহিনীর ভাবনা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ছিল জাপানিরা। এদের প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র শস্ত্র জোগান দিতে অস্বীকার করেছিল জাপান। ভেবেছিল অর্থের অপচয় করা হবে। কিন্তু সিঙ্গাপুরের ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগের প্রধান আট্টাবর ইয়েলাপ্পা জাপানি আপত্তির বাধা টপকে, ঝাঁসির রাণী বাহিনীর জন্য ব্যারাক ও অস্ত্র শস্ত্র জোগাড় করেছিলেন। 
সুভাষচন্দ্র বসু ও লক্ষ্মী স্বামীনাথনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মালয়(মালেশিয়া) ও বর্মার(মায়ানমার) প্রায় হাজার খানেক তরুণী যোগ দিয়েছিল এই বাহিনীতে। এছাড়াও দু’শো জন যোগ দিয়েছিল সেবিকার কাজে। শারীরিক ভাবে দুর্বল এমন মেয়েদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রান্না বান্না ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজের।  ঝাঁসি রাণী বাহিনীর কমান্ডার বা সর্বাধিনায়িকা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন। কিছু দিনের মধ্যেই তাদের জন্য জোগাড় করা হয়েছিল মিলিটারি ইউনিফর্ম, শুরু হয়েছিল কঠোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ঝাঁসির রাণী বাহিনী ছিল সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত মহিলা সৈন্য বাহিনী।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে গঠিত এই বাহিনীর জন্ম লগ্নে সুভাষচন্দ্র ঘোষণা করেছিলেন, মেয়েদের সংগ্রাম শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে নয়, এ সংগ্রাম সর্বপ্রকার অসাম্য, শোষণ এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে – নারীপুরুষের সমান অধিকার স্বতঃসিদ্ধ, এই সত্য প্রমাণ করার জন্য। সংগ্রাম সার্থক করতে মেয়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণ যে কতখানি অপরিহার্য তা তিনি বলেছিলেন ঝাঁসি রেজিমেন্টের সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধনী ভাষণে : ‘Today while we are facing the gravest hour in our history I have confidence that Indian womanhood will not fail to rise to the occasion. If for the independence of Jhansi India produced a Laxmi
Bai, today for the independence of whole India, India shall produce thousands of Ranis of Jhansi,’ (22nd October, 1943). 
কুয়ালালামপুরে সুভাষচন্দ্র বসু বক্তৃতা দিতে আসবেন জেনে  অষ্টাদশী জানকী থেবার বক্তৃতা শোনার জন্যে কুয়ালালামপুরে সভায় সাইকেল চেপে পৌঁছেছিলেন। অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠের আবেগ ভরা বক্তৃতা শুনে। সভার শেষে দেখেছিলেন, অসংখ্য লোক সুভাষচন্দ্র বসুকে অর্থ সাহায্য করছেন, মহিলারা তাদের শেষ সম্বল গায়ের গয়না পর্যন্ত খুলে দিচ্ছেন দেখে তিনিও নিজের হীরের কানের দুল ও গলার চেন খুলে নেতাজিকে দিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় সাংবাদিক ছবি তোলায় পরের দিন সংবাদপত্রে ছবি দেখে বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। তামিল ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে জানকী থেবার সমস্যায় পড়েন। জানকী দেবীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে লক্ষ্মী স্বামীনাথন এসে সমস্যার সমাধান করেন। এরপর জানকী তাঁর সৎ বোন পাপাতি আর কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে ‘ঝাঁসির রানি বাহিনী’তে যোগ দিয়েছিল। এর পর একে একে যোগ দিয়েছিলে রেঙ্গুনের বিশ্বভারতী একাডেমীর শিক্ষিকা মনাবতী আর্য, উচ্চবিত্ত পরিবারের দুই কন্যা মায়া ও অরুণা গাঙ্গুলী, মালয়ের দুই কিশোরী শামিতা ও অঞ্জলি ভৌমিক, সত্যবতী প্রমুখ।
এশিয়ার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবনার প্রসার আগে থেকেই ছিল। তাঁরা ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লিগ তৈরি করেছিলেন। তার উপরে ১৯৪২-এ বর্মা (এখন মায়ানমার), মালয় (এখন মালয়েশিয়া) আর সিঙ্গাপুরে জাপানের কাছে হেরে যাওয়ার পর  ব্রিটিশ সেনাকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হচ্ছিল না আর। তাই শিক্ষিত, সচ্ছল পরিবার থেকেও বহু তরুণী এসেছিল। তবে বেশির ভাগ এসেছিল মালয়ের রাবার বাগানের শ্রমিকদের ঘর থেকে। যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতিতে খাদ্য ও নিরাপত্তা সঙ্কট দেখা দিয়েছিল অন্য দেশের মত মালয় বর্মাতেও। খানিকটা পেটের টানে আর অধিকটা নিরাপত্তার টানে এখানকার মেয়েরা এসেছিল ঝাঁসির রাণী বাহিনীতে যোগ দিতে। সুভাষচন্দ্র নামটি ছিল তাদের কাছে নিরাপত্তার আর এক নাম। রাণী বাহিনীর শিবিরে প্রবেশ করার জন্য রোজ আলাদা সঙ্কেত ও আলাদা প্রহরীর ব্যবহার করা হয়েছিল। বাহিনীর মেয়েরা পালা করে প্রহরীর কাজ করত। একবার মমতা নামের অস্থায়ী নৈশ্য প্রহরিনীর কাছে  স্বয়ং নেতাজি সঙ্কেত বলতে না পারায় রাণী বাহিনীর শিবিরে প্রবেশ করতে পারেননি। এতটাই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল রাণী বাহিনী শিবিরে।
কঠোর পরিশ্রম আর অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে পূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিল ঝাঁসির রাণী বাহিনী। মেয়েদের থাকা-খাওয়া, ইউনিফর্ম, প্রশিক্ষণ— পুরো খরচটাই বহন করতেন প্রবাসী ভারতীয়রা। ১৯৪৩-এর ২২ অক্টোবর সিঙ্গাপুর ক্যাম্পের উদ্বোধন করেছিলেন নেতাজি। সবাইকে একটা করে তোশক, বালিশ আর কম্বল দেওয়া হয়েছিল । তাদের জন্য ছিল সরু কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি শোবার জায়গা। তারা খাবার খেতো টিনের থালায়। শৌচাগার পরিষ্কার করত নিজেরাই। দেশের জন্য নারী সৌন্দর্যকে  বিসর্জন দিয়ে ঘাড় পর্যন্ত চুল কেটে রেখেছিল। বিবাহিতারা শুধু মঙ্গল সূত্র ছাড়া আর কোনো গয়না পড়ত না। পুরুষের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল তাঁরা। সেনা ব্যারাকে দিন শুরু হত ভোর ছ’টায়। প্রথমেই পতাকা উত্তোলন করা হত, তারপরে ৪৫ মিনিট ধরে ব্যায়াম করান হত। সাড়ে সাতটায় টিফিন বিরতি, তার পর আবার দু’ঘণ্টা প্যারেড করান হত। পরের দু’ঘণ্টা স্নানাদির জন্য বাদ রেখে, দুপুরের খাওয়ার পর এক ঘণ্টার বিশ্রাম, তার পর দু’ঘণ্টা ক্লাসরুমে পড়াশোনা। আবার দু’ঘণ্টা প্রশিক্ষণ - বেয়নেট ড্রিল, রুট মার্চ, রাইফেল-মেশিনগান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। সাড়ে ছ’টায় পতাকা নামান হত। সন্ধ্যায় ভারতীয় ইতিহাসে নারীর বীরত্বের কাহিনী পড়ান হত। রবিবার ছুটির দিনে মেয়েদের বাড়ি যাবার স্বাধীনতাও দিয়েছিলেন নেতাজি । ছুটির দিনে সঙ্গীত চর্চাও করান হত। ‘কদম কদম বাঢ়ায়ে যা’ -রণসঙ্গীত শেখানো হয়েছিল-যা তাদের মনোবলে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিত। আই এন এ এর মত তাদেরও স্লোগান ছিল-‘জয় হিন্দ, জয়তু নেতাজি।’
সুভাষচন্দ্রের  পরিকল্পনা ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ বর্মা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করলে মেয়েদের দেশের মাটিতে যুদ্ধ করতে পাঠাবেন। মেয়েরা মরণপণ যুদ্ধ করছেন দেখলে দেশবাসী স্থির থাকতে পারবে না। সুভাষের আশা ছিল, মেয়েদের রণাঙ্গনে দেখলে ব্রিটিশ বাহিনীর দেশীয় সেনারাও অস্ত্র ত্যাগ করবে।
1943 সালের 21শে অক্টোবর আজাদ হিন্দু সরকার গঠন করলেন বিশ্বের আটটি দেশের সমর্থন নিয়ে। ভারতকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। পাঠিয়েদিচ্ছেন তাঁর নব গঠিত, নব উদ্যমে ফুটন্ত, অদম্য সাহসী, সুপ্রশিক্ষিত  দেশপ্রেমে আত্মত্যাগী আজাদ হিন্দু বাহিনীকে। জাপানি সৈন্য ও আজাদ হিন্দ বাহিনী মিলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেয়েছিল। এই যুদ্ধে  পাঠানোর জন্য  আশি জন মেয়ের একটি দলও বেছে রেখেছিলেন সুভাষচন্দ্র। শহিদ হওয়াই ছিল যাঁদের জীবনের মূলমন্ত্র। মানবতী, রসম্মার মতো মেয়েরা ছিল সে তালিকায়। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া ছিল তাঁদেরও স্বপ্ন। আইএনএ-র ‘সিক্রেট সার্ভিস’এ ঝাঁসির রাণী বাহিনীর কয়েক জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। মমতা-প্রতিমা-মায়া-শান্তিদের কাছে সেটা ছিল বিরাট সম্মানের। 
৪ জানুয়ারি ১৯৪৪ আইএনএ-র সদর দফতর সিঙ্গাপুর থেকে রেঙ্গুনে সরে এলে কিছু  দিনের মধ্যে লক্ষ্মী স্বামীনাথন  চলে আসেন। প্রশিক্ষণ শেষ হলেই সিঙ্গাপুর থেকে রেজিমেন্টের বাকিদেরও নিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয় । জাপ-আইএনএ যৌথ বাহিনী তখন ইম্ফল জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। ১৮ মার্চ আইএনএ ‘দিল্লি চলো’ রব তুলে ভারতে মাটিতে  পা রাখেন। লক্ষ্মী বিশেষ কাজে সিঙ্গাপুরে গেলে তাঁর অনুপস্থিতিতে রেঙ্গুন থেকে মানবতী পাণ্ডের নেতৃত্বে ২০ জন মেয়ে মেমিও রওনা হয়ে যায়। ভারতের কোহিমা থেকে বর্মার মেমিও-র দূরত্ব ৩০০ মাইলের মতো। যুদ্ধ যেহেতু ভারতের মাটি ছুঁয়েছে, ঘাঁটি হিসেবে মেমিও-র গুরুত্ব বেড়ে যায় । লক্ষ্মীও তত দিনে রেঙ্গুন থেকে মেয়েদের আরও একটা দলকে মেমিও নিয়ে আসেন। তারা সেখানে আহত আই এন এ সেনাদের শুশ্রুষা করতে দিবারাত্রি কর্তব্য পালন করতে থাকে।
 অগস্ট মাসে ইম্ফল আর কোহিমায় আইএনএ বড় রকম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ব্রিটিশরা মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ করতে থাকে। কাতারে কাতারে সেনা আহত, অসুস্থ অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। মেমিও হাসপাতালে ঝাসির রাণী বাহিনীর মেয়েরা ঝাঁপিয়ে পড়ে নার্সিং-এর কাজে। সেপ্টেম্বরে নেতাজি মান্দালয়ে জরুরি মিটিং ডাকলেন। ভারতের মাটিতে তাদের যুদ্ধে পাঠানো যে তখনকার মতো সম্ভব নয়, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। লক্ষ্মীকে নির্দেশ দিলেন, প্রশিক্ষিত নার্সদের রেখে মেয়েদের যেন রেঙ্গুনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট। হয় মেয়েরা যুদ্ধে শহিদ হবে, নয় নিরাপদে বাড়ি ফিরবে। মাঝামাঝি কিছু নয়। নারীর সম্মান রক্ষার প্রতি তাঁর দৃষ্টি ছিল সজাগ। তাই মেয়েদের নিরাপদ ভাবে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বিমানে ওঠেননি তিনি। 
যুদ্ধকালীন পরিবেশে বিদেশে গঠিত ঝাঁসি বাহিনীর কার্যকলাপ ইতিহাসে অজ্ঞাত একটি অধ্যায়, যেটুকু ধারণা সমসাময়িক জনমানসে ছিল তা আজ সম্পূর্ণ বিস্মৃত। বাহিনীর সর্বাধিনায়িকা লক্ষ্মী স্বামীনাথন, দ্বিতীয় পদাধিকারী জানকী থেবার  নহপ্পন এবং আরো কয়েকজন সদস্যের স্মৃতিচারণ ও পরবর্তী কিছু গবেষণা, বিশেষ করে ঐতিহাসিক Joyce Lebra-র প্রামাণ্য গ্রন্থে এই বাহিনীর সম্পর্কে যা আলোচনা করা হয় তা হল -  ঝাঁসি রাণী বাহিনী দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে গঠিত এক নারী সেনাবাহিনী, সশস্ত্র, পূর্ণ সামরিক শিক্ষাপ্রাপ্ত, যার সর্বাধিনায়ক একজন নারী এবং সদস্যেরা সকলেই নারী। 
এই বাহিনীর সদস্যরা  পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নারী যাঁরা মাতৃভূমি ভারতবর্ষ কখনো দর্শন করেন নি। সুভাষচন্দ্রের মন্ত্রশিষ্য এই মেয়েদের দৃঢ়সংকল্প ছিল সম্মুখ সমরে প্রবল পরাক্রান্ত শত্র‍ুর মোকাবিলা করে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন করা। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এ ধরনের বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তারপরেও বহু দিন কোথাও গঠিত হয়নি। পৃথিবী ব্যাপী মেয়েদের ইতিহাসে তাই ঝাঁসি বাহিনী এক অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। ভারতবর্ষের নারী স্বাধীনতার আন্দোলনে রয়েছে ঝাঁসি রাণী বাহিনীর অসাধারণ অবদান। ভারতবর্ষে নারী স্বাধীনতার জন্য  যে সংগ্রাম তা শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যই সীমাবদ্ধ থাকে নি। রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে  নারীর লড়াই চলেছে লিঙ্গবৈষম্য দূর করে সমাজের সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার অর্জনের উদ্দেশে। মেয়েদের এই আন্দোলন প্রকৃত অর্থে  নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার ইতিহাস, মেয়েদের পুরোপুরি মানুষ হয়ে ওঠার প্রয়াসের ইতিহাস। এর  আগে এবং পরে পৃথিবীর ইতিহাসেও আর কোনো নেতৃত্বকে নারীর জন্য এতবড় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি।  
  
তথ্যসূত্র:
1) দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু ও ভারতের মুক্তি সংগ্রাম  -সুগত বসু
2) সমগ্র রচনাবলী-সুভাষচন্দ্র বসু 
3) স্বাধীনতার যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজ-শিশির কুমার বসু।
4) কদম কদম বাঢ়ায়ে যা -আনন্দ বাজার পত্রিকা-5ই মার্চ 2017 
5)এমিলিয়ে ও সুভাষ-কৃষ্ণা বসু।