নয়া INDIA জোট প্রসঙ্গে

INDIA  এই মুহূর্তে ইন্ডিয়া বা ভারতের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় বস্তু। হটাৎ এক রাতের মধ্যে ভারতের রাজনীতি "এক দেশ, এক নেতা, এক ভাষা, এক ধর্ম, এক দলের "একত্ব"বাদী ঢক্কানিনাদের বদলে একধাক্কায় জোট ভিত্তিক প্রতিযোগিতার রাজনীতিতে পরিবর্তিত হয়ে গেলো।  রাজনীতিতে বহুত্ববাদ হুড়মুড়িয়ে সামনে এসে হাজির হলো।  এরই সঙ্গে শুধু এক ব্যক্তির "নেতৃত্ব" হাওয়ায় ফুস করে উবে গেলো।  এটাই বোধহয়  INDIA  জোটের প্রাথমিক সাফল্য, এই জোটবদ্ধ থাকার প্রবণতা একেবারে বাস্তবিক অর্থে দেশে একমাত্র রাজনৈতিক ট্রেন্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলো।  আজ তাই পক্ষে বিপক্ষে জোট গড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর রইলো না।  "একচ্ছত্র নায়কের রাজনীতির" ধারা হটাৎ এতো তাড়াতাড়ি উবে যাবে তা কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভাবতে পেরেছিল!  যারা এতদিন এক নেতা দিয়ে মিশ্র সংস্কৃতির রাজনীতি পরিচালনার কথা বলতো তারা এখন জোটের সংখ্যাধিক্যের রাজনীতির প্রতিযোগিতায় নামতে (বা উন্নীত হতে) বাধ্য হলো। এই বাধ্যবাধকতাই জনগণের সম্মিলিত  এবং সার্বজনিক ধারণার মাপক হয়ে দাঁড়ালো। অর্থাৎ প্রাথমিক পরীক্ষায় ভারতের জনগণ "এক" থেকে "অনেক" এর দিকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়েই গেলেন।  জাতীয় বিকাশ যে মানুষের উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তি বা inclusivity র সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি শুধু নয় বরং রন্ধ্রে রন্ধ্রে সম্পৃক্ত তা পরিষ্কার করে দিলেন ভারতের সচেতন জনগণ। এই জনগণ "সাধারণ মানুষ।

যাই হোক ভারতের চলমান ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হচ্ছে আজকের এই "জোটের" ধারণা। এর potent force হয়ে ওঠার বাস্তব চিত্রটা। আমরা সবাই যাকে  সম্যক ভাবে অনুধাবন করতে শিখলাম। 

এবার প্রশ্ন হলো এই "জোটবদ্ধ" হবার বিরোধী চিন্তা নিয়ে বা সমালোচনাগুলো নিয়ে।  এই সমালোচনার একটা দিকে যেমন আছেন "এক"পন্থী বা ফ্যাসিবাদীরা, অপর দিকে আছেন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর "মহান" এবং পুত-পবিত্র "আগ মার্কা বিপ্লবীগণ"।  এটাও জনচেতনার এক চমৎকার বাস্তবতা। "সাধারণ" ভারতীয়রা দেখিয়ে দিলো যে কীভাবে, কোন প্রেক্ষিতে কিছু "মহান আগ মার্কা বিপ্লবী" আর "মহান কতিপয় বুদ্ধিজীবী" ফ্যাসিবাদের ক্রীড়নক হতে হতে তাদের চিন্তাকমান্ডো  হয়ে দাঁড়ায়; কী ভাবে প্রেক্ষিতের এক অদ্ভুত মোচড়ে উগ্র বিপ্লবীরা আর ফ্যাসিবাদীরা পরস্পরের জিগরি দোস্ত হয়ে পড়ে।  তাদের একটাই কথা।  এই জোটগুলোর "বিশ্বাসযোগ্যতা" কোথায়! জোটের মধ্যে শক্তিগুলোর টিঁকে থাকার এবং এক সাথে চলার গ্যারান্টী কোথায়! এদের মধ্যেকার উপাদানগুলো কি কাল বা পরশু দল বদল বা শিবির বদল করবে না?  তখন "মানুষ" বা "জনগণ" বা ভোটারদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না? 

প্রথম চোটে তো বড়োই প্রণিধানযোগ্য যুক্তি মনে হয়, আর ঠিক এই শুদ্ধতার বাহানাতেই ফ্যাসিবাদী সাপ ঢুকে পরে ঘরের মধ্যে।  

আসা যাক বিশ্লেষণে বা তত্ত্বে। যে কোনো জোট মানেই তো বিশ্বাসযোগ্যতার সন্দেহ বা গ্যারান্টির বিপ্রতীপ অবস্থান।  "বিশ্বাসযোগ্যতা" বা গ্যারান্টি থাকলে সেটা জোট হবে কেন? পার্টি হবে।  কারণ জোট তো ক্ষণিকের কাঠামো! একটা অবৈজ্ঞানিক, অবিশ্লেষণমুখী, অধিবিদ্যা অনেকটা আধিদৈবিক যা নাকি প্রেক্ষিত বদলেও স্থির থাকে।  এই কল্পনা আর যাই হোক বাস্তবসম্মত হতে পারে না, ধর্মীয় বিশ্বাসের অপরিবর্তনীয় আদেশ হয়ে ওঠ। একটা মতাদর্শগত বা চিন্তার বা নীতিভিত্তিক প্রতিশ্রুতি ভিত্তিক সময় উত্তীর্ণ ঐক্য তো একটা পার্টির ভিত্তি।  পার্টি গড়ে ওঠে ঘোষিত, লিখিত নীতিমালার ওপরে দাঁড়িয়ে - যা প্রথমে মতাদর্শ, পরে দর্শনের এবং দৃষ্টিভঙ্গির ঐক্যের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকে।  জোট ঠিক তার বিপ্রতীপ। একটা বিশেষ পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় ভিন্ন মতাদর্শের শক্তিগুলো একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডার খন্ড প্রেক্ষিত এর খন্ড সময় এর মধ্যেই সে নিজের বাস্তবতা খুঁজে পায়, সেই প্রেক্ষিত বদলে গেলে সেই জোট অর্থহীন হয়ে পড়ে।  এটা  নিয়ে আবেগ বা মেদুর হওয়া  সবচেয়ে অবাস্তব এবং সেই জন্যেই অবৈজ্ঞানিক।  কোথায় যেন সব চিন্তা বিশ্লেষণ, সব অনুধাবন, সব অনুশীলন একটা দায়রায়  এসে থমকে দাঁড়ায় , আর এগোনোর কোনো তাগিদ থাকে না।  পরিবর্তনশীলতা একমাত্র মেদুরতাহীন নির্মোহভাবে  এগিয়ে চলার পথ.. 

জোট ছিল, আছে, থাকবে প্রেক্ষিতবদলে নিজের অপ্রয়োজনিত কারনে  ভেঙে পড়ার জন্যেই।  জোটের আবার গ্যারান্টী কি ? শুধু যে উদ্দেশ্য অর্জনের পরেই জপতে ভাঙতে পারে, তা নাও হতে পারে। জোট একটা ঝুঁকিগ্রহণ। সবসময়েই।  গঠনের মুহূর্ত থেকে সফল মঞ্জিলে পৌঁছনোর মধ্যে যে কোনো সময়েই তার ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই রিস্ক বা ঝুঁকিটাই একমাত্র সত্য এবং বাস্তব। তাই জোট টিঁকলো কিনা বা টিঁকবে কিনা এই প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর।  প্রয়োজনের সময়ে জোট বাঁধা এবং আবার পরের মুহূর্তেই তাকে ভেঙে নতুন প্রেক্ষিতকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসাটাই চিন্তনের যুদ্ধ।  ইতিহাসের বিজ্ঞাপণ দেখিয়ে অনেকেই উপজীব্য বস্তু বা বিষয়ের যথার্থতা হাজির করেন।  প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক উদাহরণ বা ঐতিহাসিক উপমার ন্যারাটিভ বা বয়ানের অন্তত একটা হলেও বিপ্রতীপ বা কাউন্টারন্যারাটিভ আছে।  সেটা দেখিয়ে কোনো ঐতিহাসিক অভিজ্ঞানকে একেবারে ফুৎকারে উড়িয়েও যেমন দেওয়া যায় না, তেমনি সেই উদাহরণ বা উপমা নিজের মতো সাজিয়ে তা দেখিয়ে বিশ্লেষণ কে স্বতঃসিদ্ধ বা এক্সিওমটিক প্রমাণও করা যায় না।  একেই বলে রাজনৈতিক কর্মকৌশলের কুশলতা  ও পরিপক্কতা  প্রেক্ষিত-স্বাধীনতা শুধুই ধর্মবিশ্বাসের মতন অবিজ্ঞান বা অপবিজ্ঞান।  

মোদ্দা কথা জোটের কোনো স্থিরতা হয় না।  জোটকে ক্ষণিক জেনেই জোটে যেতে হয় আবার ভাঙতেও হয়।  এটাই রাজনীতি! গতকালের শত্রু আজকে বন্ধু হতেই পারে ঠিক যেমন উল্টোটাও হয়। ভারতীয় বিপ্লবের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষকের এই শিক্ষা আমাদের পথ দেখাবে।