মার্কিন নির্বাচন প্রসঙ্গে
- 16 November, 2020
- লেখক: সৌমিত্র বসু
মার্কিন দেশে ট্রাম্প সাহেব এক অসাধারণ কান্ড ঘটিয়েছেন , মার্কিনিরা কি করবেন , তাদের কি হবে , তাতে স্বার্থপরের মতো বলি , আমার কিস্সু এসে যায় না , কারণ মূলত দুটো , তাঁদের দেশে তাঁরাই নির্ধারক , আমাদের মন্তব্যের কোনো দাম নেই [জাতি-রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমনটাই আমাদের শিখিয়েছে ] -অর্থাৎ কি মন্তব্য করলাম সে দেশের ভোটাধিকার আমার নেই বলে আমাদের কোনো রাজনৈতিক মূল্য নেই , আমরা শুধু তাঁদের অভিজ্ঞতা গুলো থেকে আমাদের দেশের প্রয়োজনে কি শিক্ষা নিতে পারি, সেটা নিয়ে ভাবতে বা বিচারে বসতে পারি , এর বেশি কিছুই নয়. দ্বিতীয় কারণ মার্কিন দেশের শাসক শ্রেণী এবং শাসনব্যবস্থা যতই দুর্বল হয় আমাদের ক্ষেত্রে এবং সারা পৃথিবীর ক্ষেত্রে সেটাই মঙ্গলের কারণ,মার্কিন দেশের ওজুদ বা এক্সিস্টেন্স আমাদের কাছে একটা এক্সিস্টেনশিয়াল সংকট , যে ই ক্ষমতায় আসুক মার্কিন দেশ এই পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদ হিসেবেই কাজ করে যাবে। কারণ তাঁদের এক্সিস্টেন্স আবার সারা পৃথিবীকে শোষণ করেই চলে, এই না হলে তারা আবার মুখ থুবড়ে পড়বে , সুতরা ওরা সবল হলে তৃতীয় কেন পুরো বিশ্বেরই বিপদ।
যাই হোক ট্রাম্প ক্ষমতা না ছাড়বেন কিনা , তা ছাড়লে সে দেশের প্রতিষ্ঠান বা মানুষ কি করবেন , সেটা তাদের বিবেচ্য, আমাদের কোনো দায় নেই। ট্রাম্প কে ধন্যবাদ একটা দুর্দান্ত বিষয় কে আমাদের সামনে উন্মোচন করেছেন বলে - সেটা হলো "মহত্তম গণতন্ত্র" এর ভাঁওতাবাজি। যে অসাধারণ(?!) কাঠামো তাঁদের প্রতিষ্ঠাপিতারা [এই ভাষা তাই ওঁরা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন ] বানিয়েছেন , তা তুলনাহীন। গণতন্ত্র কে ক্ষমতার প্রাসাদে এক রিভলভিং দরজা দিয়ে ঢুকিয়েই বার করে দিয়েছেন। অথচ তার "সৌরভ" কে ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই প্রাসাদে - এটাই ওদের কাঠামোর "মহানতা"(!)।
জনপ্রিয় বা গণভোটের অনুপাত অনুযায়ী ওদের দেশে ইলেক্টোরাল ভোট বলে একটি প্রকরণ চালু আছে , অর্থাৎ যে রাজ্যে যত জনসংখ্যা সেই অনুপাতে সেই রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট , কিন্তু যে একজন প্রার্থী অন্যদের থেকে এক ভোট বেশি পেয়ে যাবেন তিনি সেই রাজ্যের সমস্ত ইলেক্টোরাল ভোট অর্জন করবেন। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়াতে তৃতীয় কোনো প্রার্থী কিছুতেই প্রেসিডেনশিয়াল ভোটে টিঁকতেই পারবেন না। রস পেরো'র মতো ক্ষমতাশালী এবং সম্পদশালী ব্যক্তি ও ফুটে গিয়েছিলেন , তার পরে আর কেউ সাহস করে নি। তাই এক প্রাক-নির্বাচনী খেলা হয় সেখানে নিজের দলের মধ্যেই বহু প্রার্থী সেই দলের সমর্থকদের ভোট সংগ্রহ করেন , যে জেতেন সে ই একমাত্র হয় ডেমোক্রাট নয় রিপাবলিকান প্রার্থী হতে পারেন , তারপর যখন নির্বাচন হয় তখন গণভোট কে ইলেক্টোরাল ভোট দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে নির্বাচনী খেলা শুরু হয়। অর্থাৎ গণভোটের ওখানেই শান্তি স্বস্তয়ন হয়ে গেলো , এই প্রক্রিয়া করানোর বাহ্যিক কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যে একটি রাজ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একজনকেই রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায় এবং তখন জন-লবজে বলা হতে থাকে অমুক রাজ্য ডেমোক্রেটিক এন্ড তসুক রাজ্য রিপাবলিকান। অর্থাৎ রাজ্যে রাজ্যে একটা বিভাজন তৈরী করে রাখা হয় , ওদের দেশে এই mock বা কৌতুকের সংস্কৃতি বজায় রাখা হয় , যেমন সে দেশের ক্রীড়াজগতেও বিভিন্ন রাজ্যের টীম থাকে , বিভিন্ন শহরের টীম থাকে এবং যে ব্যক্তি যে রাজ্যে বা শহরে থাকেন তাঁকে সেই শহর বা রাজ্যের টীম কে সমর্থন করতেই হবে , এর অন্যথা হলে লোকে হয় ঢিল মারবে নয় হেককর দেবে , অর্থাৎ মার্কিন দেশে গণতন্ত্র বিষয়টাকে বেঁধে মুচড়ে একেবারে দরকোচা মাড়িয়ে রেখে দেওয়ার সংস্কৃতি কে জনসংস্কিতি বা জনরীতি করা হয়েছে।
এই প্রকরণের গুহ্য উদ্দেশ্য গুলি অনুধাবন করা উচিত , (১) মার্কিন দেশটি অভিবাসী থেকে নিবাসী হওয়ার দেশ , সেখানে প্রত্যেকের ইতিহাস কোনো এক ভিন্ন দেশের থেকে একমাত্র সে দেশের মূলনিবাসী নেটিভ মার্কিন রা ছাড়া যাদের অপটিক সংখ্যা আতশ কাঁচ দিয়ে কতগুলো নির্দিষ্ট রাজ্যে পাওয়া যায়। এই স্বদেশী-হয়ে ওঠা বিদেশী রা সেই দেশে যেমন সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতির বহন করার মতো ইতিবাচক বিষয় টিকে সে দেশে এনেছে আবার সব সেই মার্কিনি ধাঁচের মধ্যে এক একক সংস্কৃতি তৈরী করেছে , তাদের নিজেদের মধ্যে জাতভিত্তিক না হলেও বর্ণভিত্তিক এক ধরণের "প্রাক্তনদেশীয় বিভাজন" এর ফারাক জিইয়েই রেখেছে , আর এই অর্থে তাঁরা নিজেদের দেশের মধ্যে যেমন এক বহুধা বিভক্তি এনেছে আবার এই সূত্র ধরে "প্রাক্তন দেশগুলোর" ওপরে তাঁদের সুক্ষ এক হেজেমনি বজায় রাখে , অর্থাৎ উদাহরণ স্বরূপ আমাদের NRIদের মাধ্যমে এক ধরণের সুক্ষ অতীব নয়া কায়দার সাংস্কৃতিক হেজেমনি বজায় রাখে , সাম্রাজ্যবাদের হাজারের একটা কৌশলের মধ্যে এই প্রকরণটিকে ভুলে গেলে আমাদের দেশের মানুষের বিপদ আছে। আজকের হেজেমনি সময় সুযোগ পেয়ে ডোমিনেন্স এ রূপান্তরিত হওয়ার বড়ো উদাহরণ আমরা সোমালিয়া তে দেখেছি , যেখানে সেই দেশের মানুষগুলো মার্কিন সৈন্যদের আক্ষরিক অর্থে চামড়া তুলে দেওয়ার পরে পরেই সেই দেশের রাজপুত্র যখন রাজা হলো সে দেশটাকে মার্কিন এর কাছে বেচে দিলো কারণ সে নিজে একসময়ে মার্কিন দেশে "মেরিন বেরেট " নামক একটি আন্তর্জাতিক সরকারি গুণ্ডাবাহিনীর সদস্য ছিল। যাই হোক এই অভিবাসী মানুষগুলো মার্কিন প্রশাসনের সাম্রাজ্যবাদী ক্রিয়াকলাপের এক বড়ো সূত্র ঠিক যে ভাবে সৌদি আরব এখন মার্কিন উপনিবেশ , সে দেশে সমস্ত "বিকাশ" করে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে নিজেদের দেশে এই অভিবাসীদের মার্কিনিরা কয়েকটি বাছা বাছা তটবর্তী রাজ্য গুলোতে ঠেসে গুঁজে রেখেছে , সেখানে অনেক কেই তাঁরা নাগরিকত্ব দিয়েছে , সেই রাজ্যগুলোতে ডেমোক্রাট রা যেতে কিন্তু যতই অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ুক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সেই রাজ্যের অনুপাতিক হার একই থাকে , বাড়ে কমে না। ক্যালিফর্নিয়া তে বা টেক্সাস এ যতই মানুষের সংখ্যা নেভাদা বা আরকানস থেকে বাড়ুক না কেন তাদের প্রতিনিধিত্বের অনুপাত একই থাকবে অর্থাৎ প্রচুর পরিমানে অভিবাসী এলেও তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে না , গণতন্ত্রের একুশটা বাজিয়ে ওখানেই দেওয়া হলো। আবার কিছু রাজ্যে তারা বিশেষ রাজনৈতিক অভিবাসী দের জায়গা করে দিয়েছে যেমন ফ্লোরিডাতে তারা কুবা বিরোধী প্রাক্তন কুবানদের জায়গা করে দিয়েছে যাতে করে সেই প্রদেশটিতে কুবার আবহাওয়া পাবে এবং তাদের একমাত্র রাজনৈতিক কাজ হবে কি ভাবে তারা কুবার বিরুদ্ধে যতরকম চক্রান্ত পেন্টাগন বানাবে তার খেদমত করা। তাই ডেমোক্রাটদের তারা কমিউনিস্ট বলে [সে দেশে আবার এই তকমা টি একটা গালাগাল ] ব্রাত্য করে রাখবে ,উত্তর নিউ জার্সি তে মার্কিন প্রশাসন ভারতীয়দের এনে রাখে এবং এদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদের চাষ করানো হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মাধ্যমে , এরাই বিভিন্ন জায়গায় মোদিকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে বড়ো হৈচৈ বাঁধিয়েছিলো , এটাই কিন্তু মার্কিন দেশের "কস্মোপলিটেনিসম " , এই প্রকণের মধ্য দিয়ে তারা পৃথিবীতে দাদাগিরির একটা হাতিয়ার বানিয়েছে , ইউরোপ এরকম একটা প্রকরণ করতে গিয়ে বহু ঠেকে এখন কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে , বার্তানিয়া তো পুরো অভিবাসীদের একেবারে একাত্ম করে ফেলেছে , তাদের প্রশাসনিক দায়িত্বে এখন তাঁরাই সর্বত্র অধিষ্ঠিত কিন্তু তাঁদের এ ধরণের হেজেমনি থেকে ডোমিনেন্স এর ইরাদা অনেক স্তিমিত। যাই হোক মার্কিনদেশের এই সব গুহ্য প্রকরণ তাদের কাঠামোকে একেবারে বেঁধে রেখে দিয়েছে এবং তারা এমন ব্যবস্থা করেছে যে প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে কোনো হেরফের হওয়ার যো নেই , এটাকে অনেকটা মার্কিনি প্রকরণের অধিবিদ্যা বলা যেতে পারে কারণ এই প্রকরণ দেশের কাঠামোকে কখনো বদলাতে দেবে না।
মার্কিন দেশে কিন্তু আবার সমস্ত প্রশাসনিক এমনকি বিচারবিভাগীয় প্রধানদের গণভোটে নির্বাচন করা হয় , তাদের অবশ্য আইনপ্রণয়নকারী সংস্থার upper বা lower হাউস এ কোনো প্রতিফলন নেই, এই হাউস গুলোতে রিপাব্লিকানরা নির্বাচিত হবেন সেটা ঠিক করে এই দুই প্রধান পার্টির নেতৃত্ব , . অদ্ভুত দেখুন এখনো কিন্তু মার্কিন দেশের পুরো গণনা শেষই হয় নি , কবে হবে ওরাও জানে না , কোথায় গিয়ে যাত্রা থমকে দাঁড়িয়েছে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা কারো নেই , এবং মানুষের দিকে থেকেও সেটা জানার খুব যে একটা ইচ্ছে আছে সেরকম কোনো চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না , ভেতরে ভেতরে সবাই চায় কিন্তু এদের প্রয়োনীয়তা র বহিঃপ্রকাশ নেই , আর ঠিক এই ফাঁক দিয়েই খালের গোসাপের মতো ঢুকে পড়েছে ট্রাম্প সাহেবের হার-না-মানার কারসাজি গুলোর।
ট্রাম্প কে ধ্যনবাদ দেওয়া উচিত যে সে মার্কিন "গণতন্ত্রের" এই ফল্ট-লাইন গুলো আমাদের চোখে ধরিয়ে দিয়েছে , মহত্তম গণতন্ত্র যে কতটা ভাঁওতাবাজি সেটা কিন্তু ট্রাম্প ই সামনে এনে হাজির করলো। ট্রাম্প "শ্বেত প্রাসাদ " না ছাড়ান এলান করে দিয়েছেন , তাই সমস্ত পৃথিবীর প্রায় যাবতীয় নেতারা খুব ধিক ধিক করে চলেছেন , চীন আর রুশিয়া পাঁচিলে বসে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছে আর মার্কিনিদের এবং মার্কিন পদ্ধতি প্রকরণের খিল্লি ওড়াচ্ছে, বদমাইসরা যখন কাজিয়া করে তখন নিপীড়িত মানুষজনের মজা লাগে , এই রকম ধরণের অন্তর্কলহ ই পুঁজিবাদী দুনিয়ার মূল বাধকতার প্রকরণ , এর থেকে পুঁজিবাদ কখনই মুক্ত হতে পারবে না , পুঁজিবাদীরা সিস্টেমকে বাঁচাতে গিয়ে একে অপরকে সাহায্য করে না , করে উঠতে পারে না , শুধু তীব্র বিদ্রোহের মুখে এককাট্টা হতে বাধ্য হয় , তাই তারা সমাজতন্ত্রর নামেই ভয় পায় । বিভিন্ন ধরণের এবং বিভিন্ন রঙের সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নামতে বাধ্য , আর এটাই পৃথিবীর মানুষকে অনেকটাই বাঁচিয়ে রাখে , এদের মধ্যেকার বিবাদ কে বাড়িয়ে দিতে পাড়ার কথাই লেনিন বলতেন।
এতো সব কথা বলার অর্থ একটা ভীত কে বানানো। এবার আসি কিছু অপ্রকাশ্য কিছু বিষয়ে। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প অর্থাৎ অতি-দক্ষিনপন্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে , সারা আমেরিকা তে ১৫৫ মিলিয়ন ভোটের মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের থেকে মাত্র ৪ মিলিয়ন ভোট কম , ওদিকে ডেমোক্রাটরাও সর্বকালীন রেকর্ড করেছে, অর্থাৎ মার্কিন দেশটা একেবারে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেছে , শুধু তাই নয় , জয়ের বা সিটের সংখ্যার নিরিখে মধ্য আমেরিকার রাজ্য গুলো রিপাব্লিকানদের আর তটবর্তী রাজ্যগুলো সব ডেমোক্র্যাটদের দখলে গেছে , শিক্ষিত মানুষগুলো , অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় [ওরা বলে স্কুল ] শহরগুলোর মানুষরা ডেমোক্রাটদের ভোট দিয়েছে আর মধ্য আমেরিকার কৃষি উৎপাদনের জায়গা গুলো সব রিপাব্লিকানদের। গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক বিচারে এটা মোটেই সুখকর কোনো বিষয় নয়। মোটামোটি আরো খোলসা করে বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরর স্বেতাঙ্গরা রিপাবলিকান আর অন্যেরা ডেমোক্র্যাটদের শিবিরে ঢুকে গেছেন। একটা দেশের সার্বভৌমত্বের নিরিখে এটা মোটেই আনন্দের বা স্বস্তির বিষয় নয়। ডেমোক্র্যাটরা বহু চেষ্টা করেও এর থেকে আর কিছু করে উঠতে পারছে না। "কিন্তু কেন? " এই প্রশ্ন যে ডেমোক্রাট বা পন্ডিতদের কাছে একেবারেই অধরা বা অজানা তা মোটেই নয়, তবে জেনেও খুব একটা কিছু করার যে নেই সেটা প্রকাশ্য আর সেটাই সাম্রাজ্যবাদের বেঁচে থাকার ঘুপচি।
ট্রাম্পের "america first " স্লোগানে শ্বেতাঙ্গ রা বিশ্বাস করছেন , করার কারণ অসঙ্গত নয়. কারণ নিজের দেশে হার ভাঙা পরিশ্রম করতে হবে আর অভিবাসীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হবে সেটা কোনো দেশের দীর্ঘদিনের নিবাসীরা সহ্য করে না , মইগ্রান্ট দের সঙ্গে নিবাসীদের দ্বন্দ্ব একটা স্বাভাবিক প্রবণতা যেখানে জাতি-রাষ্ট্র ব্যবস্থা কে মেনে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন দেশের স্বেতাঙ্গরা যারা অনেকদিন আগেই এ দেশে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল প্রায় পুরো নেটিভ মার্কিনিদের নিকেশ করে তারা মনে করে দেশটা শুধুই তাদের আর অভিবাসীরা তাদের চাকর। ভালো খারাপ এর বিচার এই সব চিন্তায় চলে না , কোনো মরাল দিয়ে যুক্তি দিয়ে এই সব সমস্যা হয় না , চলন্ত ট্রেন এ রিসার্ভ কামরায় যারা কোনো রকমে গুঁতিয়ে উঠে পরে তারাই পরের স্টেশন গুলোথেকে ওই একই ভাবে উঠতে চেষ্টা করা লোকেদের সবচেয়ে আগে গিয়ে বাধা দেয়। দ্বিতীয় বড়ো কারণ ট্রাম্প কয়েকটি বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্নে এই আমেরিকা ফার্স্ট এর তত্ত্ব কে করে দেখিয়েছে , একটু ঘুরিয়ে কিন্তু মানুষ সেটা বিশ্বাস করেছে কারণ ডেমোক্র্যাটরা একেবারেই কোনো রকম নতুন কিছু করে নি কখনোই। ট্রাম্পের আমলে কোনো যুদ্ধ হয় নি , প্রত্যেকটি ডেমোক্রাট প্রেসিডেন্ট এর আমলে মার্কিন রা নিত্য নতুন যুদ্ধ বাঁধিয়েছে , ট্রাম্পের আমলে মার্কিন বিভিন্ন দেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে কারণ এই সৈন্যদের মধ্যে স্বেতাঙ্গরাই বেশি এবং তারা গ্রামাঞ্চলগুলোতেই বেশি থাকে , তারা সাধারণত সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে বেসামরিক কাজের অভীপ্সায়। ট্রাম্পের সময়ে সৈন্যদের মৃতদেহ বাগে মুড়ে দেশে ফায়ার আসে নি [ওরা তাকে বডি ব্যাগ বলে ] , মার্কিন কৃষিজীবী মানুষের কাছে এর গুতুত্ব অপরিসীম , এর জীবনের থেকে বড়ো কি ই বা হতে পারে ? ট্রাম্প কিন্তু আমাদের দেশের সরকারের মতো সৈন্যবাহিনীর বেতন দেওয়াতে দেরি করে না , এবং তাদের স্বাস্থ বা শিক্ষা র খরচ নিয়ে কখনো কার্পণ্য করে না। এটা আর একটা বড়ো দিক। ট্রাম্প মিগ্রান্টদের ওপর ভীষণ খাপ্পা ,ইমিগ্র্যান্টদের মানুষ মনে করে না , সেটা সে বলেওছে বার বার , এটা শ্বেতাঙ্গ নিবাসীদের মানসিক স্বস্তি দিয়েছে , ট্রাম্প H1 ভিসা [অভিবাসী ভিসা] কে সংকুচিত করেছে , সেটাও শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী এর কাছে বড়ো পাওনা। তারা কিন্তু ট্রাম্পের মধ্যে আমেরিকা ফার্স্ট দেখতে পারছে white america first চশমার মধ্যে দিয়ে। তারা খোলাখুলি বলছে যে এর থেকে ভালো প্রেসিডেন্ট তারা কোনো দিন পায় নি। ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গদের হাতে অস্ত্র রাখবার সমস্ত প্রকল্প কে খুলে দিয়েছিলো , ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ দের ওপর পুলিশি অত্যাচারকে চালু রেখেছে সেটা শ্বেতাঙ্গদের উপরি পাওনা , স্বেতাঙ্গদের অপরাধে ট্রাম্প অনেক নরম অথচ কৃষ্ণাঙ্গদের সোজা সুজি গুলি করে দিয়েছে পুলিশ , এতে সমাজ একেবারে দু ভাগে বিভক্ত হয়েছে , বর্ণবৈষম্য কিন্তু বিভাজন আর ঘৃণার ওপরেই বেঁচে থাকে। শেষের বিষয় গুলো চরম প্রতিক্রিয়াশীল হলেও কতগুলো বিষয় কিন্তু আমাদের ভাববে এবং ভাবায়। প্রথমত: শহরের মানুষ সমস্ত দেশেই এবং মার্কিন দেশে আরো বেশি বেশি করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে নিচু চোখে দেখে , অথচ এই গ্রামাঞ্চলের মানুষরাই কিন্তু উৎপাদন করে শহরের মানুষ গুলোকে বাঁচিয়ে রাখে , ইঞ্জিরি-ভাষার দেশগুলোতে এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর , গ্রামের এই মানুষগুলো শহরে এসে এক সামগ্রিক তাচ্ছিল্যের সম্মুখীন হয় , সেটা গ্রামের মানুষের সহ্য হবে কেন ? তাদের তখন মনে হয় " আমি আছি বলেই তুই আছিস , অথচ আমাকে অপমান? " , ভুলে গেলে চলবে না যে কম সে কম দুধ আর গম এর উৎপাদন মার্কিন দেশে প্রচুর এবং তারা আবার বাইরেও পাঠায়। এখন এখানেই আরো একটা দদ্ভুত বিষয় লুকিয়ে আছে , ট্রাম্পের সময়ে আমেরিকার গম যুদ্ধের প্রয়োজনে বিদেশ কয়রাটির জন্যে বিশেষ যায় নি , সে দেশেই বিক্রি হয়েছে যার জন্যে নিত্য প্রয়োজনীয় নিত্য consumption বা ভক্ষণের জিনিসের দাম একেবারে স্থীর ছিল। এগুলো গ্রামাঞ্চলের বা মধ্য আমেরিকার মানুষের জন্যে অনেক সুখবর। শহরে যেমন মানুষের গৃহহীনতা বেড়েছে , গ্রামে বা মধ্য আমেরিকাতে তার ছাপ নেই। মধ্য আমেরিকা তে "গৃহহীন , কর্মহীন শ্বেতাঙ্গ ভিখিরি কষ্ট করে খুঁজতে হবে , শহরে প্রচুর , সেখানে অনেক শহুরে শ্বেতাঙ্গ ও গৃহহীন, কর্মহীন বা সহায়সম্বলহীন। এই বিষয় গুলোকে "গণতান্ত্রিক অধিকার , মানবাধিকার , বা রামধনু ইত্যাদি গাল ভরা মরালিটি দিয়ে ঢাকা দেওয়া সহজ নয়. . উৎপাদন এ একটা বড়ো প্রশ্ন সেটা সংকটকালে মার্কিন দেশেও জোরদার হয়ে দেখা দিচ্ছে , এই ফল্ট-লাইন এর ফাঁকেই ট্রাম্পের জনসমর্থন বেড়ে যাওয়া।
সর্বমোট সুন্দর সুন্দর লব্জ দিয়ে যে রোমান্টিক "বাস্তবতা " তাতে এক দিন না একদিন কঠিন বাস্তব ঘুরে এসে ফোঁস করবেই , এবার তাই করেছে , আর সেই ফোঁস টা আসে যখন ব্যবস্থা এবং দেশ সংকটের মধ্যে দিয়ে যায়। এই বিষয় কে "শ্রেণীসংগ্রামের" মোড়কে ঢেকে বাজারে বেশি দিন চালানো যায় না , লোকে ওপরের মোড়ক টা খুলতে জানে। মার্কিন দেশে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন হয়েছে কিন্তু প্রতিদিনকার জীবন চর্যার বিষয় গুলো নিয়ে লাগাতার গণআন্দোলন হয় নি যেটা বেনেজুয়ালা বা বলিভিয়া বা চিলে তে হলো। ফল্ট লাইন কে ঢাকতে কিন্তু উৎপাদন এবং মানুষের ডেভলপমেন্ট [গ্রোথ নয় -তাই সেই অর্থে বিকাশ বলা গেলো না ] এর প্রশ্নে দাবিগুলোকে নিয়েই এগোতে হবে প্রগতিশীলদের , সেখানে চাকরি , বাস্তু শিক্ষা আর স্বাস্থ নিয়ে লড়াইয়ে নামতেই হবে। বাইডেন সাহেব covid এর হাসপাতালের সংখ্যা আর মাস্ক নিয়ে একটা বড়ো হৈ চৈ বাঁধলেন , কিন্তু বিনে পয়সায় স্বাস্থ র দাবিটা অধরাই রেখে দিলেন , এটা খুব অচিরেই ঘুরে ছোবল মারবেই। ওবামা-কেয়ার কোনো কাজের নয়, প্রয়োজন বীণে পয়সায় স্বাস্থ্য শিক্ষা বাসস্থান আর একেবারে ন্যূনতম খাদ্যের গ্যারান্টি , মানুষের হাতে পয়সা না এলে কোনো "বিকাশ" ই কাজে লাগবে না।
ট্রাম্প সরে যাবেন না অভ্যুথান ঘটাবেন তাতে আমাদের কি ? ও দেশের ব্যবস্থা যত দুর্বল হবে , বিশ্বের মানুষের ততই মঙ্গল তবে উৎপাদিকা শক্তির সশকতায়ন একটা বিশ্বব্যাপী বা বৈশ্যিক দাবি।