বিশ শতকের বাংলা চলচ্চিত্রে দেশীয় মিথ ও পুরাণের ব্যবহার

এক ঘুটঘুটে অন্ধকারের রাতে একজন মানুষ শর্টকাট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন জঙ্গলের রাস্তাখানা। সামান্য নেশা করে ফিরছিলেন, হঠাৎ তাঁর মনে হল জঙ্গলের বড় গাছটা যেন তাঁর পিছু পিছু তাঁকে তাড়া করে আসছে। ভয়ের চোটে বাকিপথটুকু দৌড়ে কোনওমতে গ্রামের চেনা রাস্তায় এসে ঢুকলেন। কেউ একজন তাঁর অবস্থা দেখে জানতে চায় ব্যাপারখানা কী। সাতপাঁচ না ভেবেই ভয় পাওয়া মানুষটি গড়গড় করে সব কথা বলে বসলেন, শুধু চেপে গেলেন তাঁর গাঁজা খাওয়ার কথাটুকু। গ্রামে কথা ছড়িয়ে পড়তে দেরী হয় না, পরদিনই গোটা গ্রাম জেনে গেল জঙ্গলের গাছে ভূত আছে। এরপর থেকে আরও অনেকেই সেই ভূতকে দেখতে শুরু করল। ছুটে পালাতে গিয়ে কেউ কোমর ভেঙেছে, কারওর বা হাত-পা মচকেছে। একটানা চোদ্দবছর ধরে এই কাণ্ড চলেছিল। এইভাবেই জন্ম নেয় এক একটা মিথ বা কিংবদন্তী। এই যে ঘটনাটির কথা বললাম, এইটি অধুনা জনপ্রিয় এক হিন্দি ওয়েবসিরিজ ‘পঞ্চায়েত’-এর একটি অংশ। এমনধারা গল্প গ্রামেগঞ্জে অজস্র মেলে। মানুষ আসলে গল্প ভালোবাসে। ছেলেবেলায় গল্পদাদুদের আসর এমনি এমনি জমে উঠত না। মানুষ গল্প শুনতে ভালোবাসে, গল্প করতে ভালোবাসে, বলতে ভালোবাসে। গল্প না পেলে সে গল্প বানিয়ে নেয়। সিনেমার প্রয়োজনখানা অনেকাংশে এই কারণেই গড়ে উঠেছিল। সে প্রয়োজন হল বিনোদন। সিনেমাকে ‘আর্ট’ হিসেবে দেখার চোখ তো ঢের পরে তৈরি হয়েছে। তার আগে পর্যন্ত পৌরাণিক কাহিনী, প্রচলিত মিথের আশ্রয়েই বাংলা চলচ্চিত্রের খুঁটিটুকু দাঁড়িয়ে ছিল।

লোকপুরাণ বা মিথ এবং লোককথা বা কিংবদন্তি লোকসমাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কেউ কেউ ভুল করে লোকপুরাণ ও লোককথা-কে একই জিনিস ভেবে বসেন। লোকপুরাণে লোককথার মতোই পরিবেশিত হয় একটি আখ্যান, কিন্তু লোকপুরাণের আবেদন মূলত ধর্মীয় এবং একধরণের বিস্ময়বোধের অস্তিত্ব সেখানে পাওয়া যায়। সৃষ্টিরহস্যভেদের চেষ্টাই লোকপুরাণ অর্থাৎ মিথগুলির উৎস। মানুষ পৃথিবীতে এল কেমন করে, পৃথিবীর সৃষ্টি হল কীভাবে, নদীতে কেন জোয়ার আসে, ভূমিকম্প হয় কেন, বড়ি দিলে আকাশ কেন মেঘলা হয়— এই ‘কেন’গুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য বিজ্ঞান এসেছে অনেকে পরে, তার অনেক আগেই মানুষ বানিয়ে ফেলেছে অজস্র গল্প। লোকপুরাণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে স্যার জি. এল. গোম বলেছেন, ‘Myth is the science of a pre-scientific age.’ লোকপুরাণ বা মিথ-কে তাই মানবজাতির শৈশবাবস্থা জিজ্ঞাসার প্রতিচ্ছবি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। মিথ আসলে রূপকের আড়ালে সমাজেরই কথা। মিথ বা লোকপুরাণে অলৌকিককতার প্রাধান্য, দেবচরিত্রের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে মিথের এই দেবতারা আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ। শিবায়নের শিব তাই চাষ করতে মাঠে নামেন, শিবের ঘরণী বাঙালি গৃহস্থবধূর মতোই রাঁধেন বাড়েন। আসলে মিথগুলি যাঁরা বানিয়েছেন, তাঁরা তো সকলেই সামাজিক মানুষ। নিজেদের চারপাশের মানুষজনের বাস্তব আচরণকে প্রত্যক্ষ করেই এই মিথ-রচয়িতারা তাঁদের দেবতা বা ঈশ্বরের ধারণাটি গড়ে তুলেছেন। For a myth commonly an explanation of something in the form of a story. What happens once upon a time, or what repeats itself from day to day. মিথ বা লোকপুরাণের সঙ্গে মিশে থাকে ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব ও সাহিত্যের বিভিন্ন উপাদান। আমাদের প্রধান চারটি মহাকাব্য রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড এবং ওডিসি-র সঙ্গে মিথ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দেশি বিদেশি মিথ নিয়ে সাহিত্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে অজস্র। মিথের নবরূপায়ণ ঘটেছে।

এবার আসা যাক কিংবদন্তির প্রসঙ্গে। কিংবদন্তিতে মিথ বা লোকপুরাণের আমেজ থাকতে পারে, কিন্তু কিংবদন্তিগুলোয় যে আখ্যান বর্ণিত হয়, তা নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনও একদিন ঘটেছিল বলে মানুষজন বিশ্বাস করেন। কিন্তু লোকপুরাণের ক্ষেত্রে এই যে ‘অমুক জায়গায় অমুক দিনে ব্যাপারটা ঘটেছিল’ এইভাবে জোর দিয়ে কেউ বলতে পারেন না, নিছক গল্পকথা হিসেবেই তার রসটুকু আস্বাদন করেন মাত্র। একটা উদাহরণ দিলে আরও স্পষ্ট বোঝা যাবে। মুর্শিদাবাদ জেলার ‘চিঁড়েভিজে’ গ্রামটার এমন নামের পেছনে রয়েছে একাধিক কাহিনি। সবচেয়ে জনপ্রিয় আখ্যানটি হল— বহুদিন আগে চিঁড়েভিজে গ্রামে ছিল একটা পুকুর, সে পুকুরের জলে ছিল অলৌকিক শক্তি। পুকুরের পাশেই আছে একটা বটগাছ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে এই পুকুরের জলে চিঁড়ে ভিজিয়ে খেয়ে যেতেন এবং তাতেই তাঁদের শরীরের যাবতীয় রোগ-ব্যাধি সেরে যেত। এই কিংবদন্তি থেকেই গ্রামের নাম হয়েছে ‘চিঁড়েভিজে’। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ইন্দিরা’ উপন্যাসে রয়েছে ‘ডাকাতে কালাদিঘি’র কিংবদন্তি। এক বড় দিঘী, যেখানে মানুষজন যায় না, ঘাটের ওপরে একখানিই মাত্র দোকান আছে, লোকে বলত দোকানদার আসলে ডাকাতদলেরই সাহায্যকারী। ইন্দিরা এখানে দস্যুদের হাতে পড়েছিল। ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘আনন্দমঠ’-এর কিংবদন্তি তো সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য। ‘কপালকুণ্ডলা’য় বঙ্কিমচন্দ্র কাঁথির সমুদ্রতীরে কাপালিকের আশ্রম, অধিকারীর কালীবাড়ির কথা বলেছেন। এখনও লোকে সেই জায়গাগুলি দেখিয়ে দেয়। উপন্যাসগুলি নিয়ে যখন চলচ্চিত্র বানানো শুরু হল, স্থানীয় মানুষের মনে গড়ে ওঠা এই কিংবদন্তিগুলিরই সাহায্য নিয়েছেন চিত্রপরিচালকেরা।

১৯৩১এর আগে পর্যন্ত ছবি কথা বলত না, ছবি ছিল নির্বাক। বাংলায় সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক ছবি ‘বিল্বমঙ্গল’, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কর্নওয়ালিস থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছিল। হিন্দিতে এ সময়ে রুস্তমজি দোতিয়ালার উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’, ‘মহাভারত’, ‘নল দময়ন্তী’, ‘ধ্রুব’ যার সবকটিই কিন্তু পৌরাণিক কাহিনী। বাংলায় অবশ্য বিষয়বৈচিত্র্যে ঘাটতি পড়েনি। বঙ্কিমচন্দ্রের কাহিনিকে কেন্দ্র করে ‘বিষবৃক্ষ’ (১৯২২), ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ (১৯২৭), ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৯২৭), ‘যুগলাঙ্গুরীয়’ (১৯২৯), ‘রজনী’ (১৯২৯), ‘কপালকুণ্ডলা’ (১৯২৯), ‘ইন্দিরা’ (১৯২৯), ‘রাধারাণী’ (১৯৩০)-র মতো নির্বাক চলচ্চিত্রগুলি দর্শকের মন জয় করেছে। পিছিয়ে থাকেনি গিরিশচন্দ্র ঘোষের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ছবিগুলিও। গিরিশচন্দ্রের কাহিনী অবলম্বনে ‘প্রফুল্ল’ (১৯২৬), ‘ভ্রান্তি’ (১৯২৮)-র মতো ছবিগুলি ভালো ব্যবসা করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘গিরিবালা’ (১৯২৯), ‘দালিয়া’ (১৯৩০), ‘নৌকাডুবি’ (১৯৩২) ছবিগুলির জন্য দর্শকের অভাব কখনই হয়নি। এছাড়াও ছিলেন রমেশচন্দ্র দত্ত, সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারকনাথ গাঙ্গুলী, হরিপদ চট্টোপাধ্যায়দের মতো গল্পকারেরা, যাঁদের গল্প অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্রগুলি পাকাপাকিভাবে চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। এর বাইরে পৌরাণিক কাহিনী তো ছিলই, যার বাজারচাহিদা সে সময়ে ছিল তুঙ্গে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অরোরা সিনেমা কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চিত্র ‘রত্নাকর’ রসা থিয়েটারে মুক্তিলাভ করে। দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মিকীতে রূপান্তরের কাহিনীই সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে। রাধাকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলাকেন্দ্রিক আট রিলের নির্বাক চিত্র ‘যশোদানন্দন’ (১৯২২) ইন্দো-বৃটিশ ফিল্ম কোম্পানির হাত ধরে মুক্তি পেয়েছে। যশোদার পালিত পুত্র কৃষ্ণের ছেলেবেলাটিকে কেন্দ্র করে ছবিটির কাহিনী নির্মিত হয়েছে। বাৎসল্য রসই সেখানে মূল বিষয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে অহীন্দ্র চৌধুরীর পরিচালনায় মুক্তি পাচ্ছে কৃষ্ণসখা বা কৃষ্ণ সুদামা। পরিচালক কালীপ্রসাদ ঘোষের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, ১৯২৬ সালেই জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘জয়দেব’ চলচ্চিত্রে ‘স্টান্ট’ ব্যাপারটি আসে। রূপ-মঞ্চের চতুর্দশ বর্ষ, পৌষালী, পৌষ-মাঘ, ১৩৬১ সংখ্যায় জীবনস্মৃতিতে (১০) কালীপ্রসাদ ঘোষ লিখেছেন, ‘শ্রীযুক্ত জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত নির্বাক চিত্র জয়দেব তখন আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ‘জয়দেব’ সে যুগের অত্যন্ত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। থিয়েটারে সংগীতবহুল জয়দেব নাটককে কী করে নির্বাক চলচ্চিত্রে পরিণত করে সাফল্য লাভ করেছেন পরিচালক মশায়, সে সম্বন্ধে অত্যন্ত কৌতূহল নিয়ে চরিত্রটিকে বিশ্লেষণ করে দেখলাম। কিন্তু হঠাৎ যখন একটা গরুর মধ্যে থেকে শ্রীকৃষ্ণ বেরুলেন, আর সমস্ত দর্শক বিপুল আনন্দে করতালি দিয়ে উঠলেন— তখন তা দেখে আমি মনকে সমঝালাম যে, এই হচ্ছে আসলে নির্বাক চলচ্চিত্র লেখার আসল কায়দা। অর্থাৎ ধর্মমূলক বা ভক্তিমূলক বইয়ে আজগুবি সব স্টান্ট থাকা দরকার, নইলে দর্শক মেতে উঠবেন না।’ ভক্তিরসমিশ্রিত পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র দেখে দর্শক কাঁদছে, উলু দিচ্ছে, প্রণাম করছে— এ ছিল সে সময়ের পরিচিত দৃশ্য।

নির্বাক যুগ শেষ হয়ে এল সবাক চলচ্চিত্রের যুগ। বাংলাদেশে সবাক চিত্রের শুরুয়াত হয় ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মুন্নি বাঈয়ের ‘জয় জয় ভবানীপতি’ গানটির চিত্রায়ণের মাধ্যমে। ১৯৩১ সালে ম্যাডান থিয়েটারের প্রযোজনায় ও প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘প্রহ্লাদ’ ছবিটি। হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত এই চরিত্রটি নিয়ে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। হিরণ্যকশিপুর ভূমিকায় অহীন্দ্র চৌধুরী প্রভূত প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩২ সালে জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ক্রাউন চিত্রগৃহ থেকে মুক্তি পায় ‘বিষ্ণুমায়া’ ছবিটি। এখানেও বিষয় সেই পৌরাণিক কাহিনীই। কংসের ভূমিকায় ছিলেন অহীন্দ্র চৌধুরী। সাবিত্রী-সত্যবানের কাহিনীর জনপ্রিয়তার জেরে একইবছর দুটি ‘সাবিত্রী’ নামে চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ১৫ই এপ্রিল ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়া ফিল্ম ইনড্রাস্টিজের প্রযোজনা ও জ্যোতিষ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ক্রাউন চিত্রগৃহে মুক্তিলাভ করে ‘সাবিত্রী’। এ ছবিতে নামভূমিকায় ছিলেন রেণুকাদেবী, সত্যবানের ভূমিকায় শরৎ চট্টোপাধ্যায়, যমের ভূমিকায় শৈলেন চট্টোপাধ্যায়। সেবছরই ৪ নভেম্বর ইস্ট ইন্ডিয়া ফিল্মের প্রযোজনায় ও নরেশচন্দ্র মিত্রের পরিচালনায় মুক্তি পায় আরও একটি ‘সাবিত্রী’। এ ছবির নামভূমিকায় ছিলেন শান্তি গুপ্তা, সত্যবানের ভূমিকায় জীবন গঙ্গোপাধ্যায়, যমের ভূমিকায় বিজয়কার্তিক রায়। সাবিত্রী-সত্যবানের কাহিনী জনমানসে বহুযুগ ধরে বিরাজমান। হিন্দুসমাজে ‘পতিই পরম ধর্ম’ জাতীয় চিন্তাধারা সুপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। সাবিত্রী-সত্যবান তাই কিংবদন্তী দম্পতিতে পরিণত হয়েছেন। রাজকন্যা সাবিত্রী সত্যবান নামে একজন নির্বাসিত রাজকুমারকে বিয়ে করেছিলেন। ভবিষ্যতবাণী হয়েছিল সত্যবান স্বল্পায়ু হবেন। ভবিষ্যতবাণী ফলেও যায়। সত্যবান মারা গেলে সাবিত্রী তাঁর মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা, অসীম পতিভক্তি ও বুদ্ধিমত্তার জোরে মৃত্যুদেবতা যমের হাত থেকে সত্যবানকে ফিরিয়ে আনেন। সাবিত্রী এবং সত্যবানের গল্পটির প্রাচীনতম সংস্করণ পাওয়া যায় মহাভারতের বনপর্বে। যুধিষ্ঠির যখন মার্কণ্ডেয়র কাছে জানতে চান, এমন কোনও মহিলা আছেন কিনা যিনি পতিভক্তিতে দ্রৌপদীর সমতুল্য, তখন মার্কন্ডেয় এই গল্পটি বর্ণনা করে তাঁর উত্তরটি দেন। পুরাণের পতিব্রতা নারীদের নিয়ে তৈরি ছবিগুলির ব্যবসা যে কখনও মার খাবে না, তা ভালোমতোই বুঝেছিলেন সেযুগের চিত্রনির্মাতারা। তাই সাবিত্রী, বেহুলা, সীতাদের নিয়ে ছবি তৈরির হিড়িক বিশ শতক পেরিয়ে একবিংশ শতকেও এসে পৌঁছতে পেরেছিল। আজও গ্রামেগঞ্জে এই পৌরাণিক নারীদের কেন্দ্র করে যাত্রাপালা হতে দেখা যায়।  ১৯৩৩ সালের ২৬শে অক্টোবর নিউ থিয়েটার্স লিমিটেড প্রযোজিত ‘সীতা’ মুক্তিলাভ করে চিত্রা ও নিউ সিনেমায়। এই ‘সীতা’ ছবিটির কাহিনী যোগেশচন্দ্র চৌধুরীর নাটক ‘সীতা’ অবলম্বনে নির্মিত। ছবিটি পরিচালনা করেন শিশিরকুমার ভাদুড়ি। ৭ এপ্রিল, ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে রূপবাণী চিত্রগৃহে মুক্তিলাভ করে ‘ঋণমুক্তি’ বা ‘নরমেধ যজ্ঞ’। চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় তিনকড়ি চক্রবর্তী। পুরাণের কিছু অনুষঙ্গ এ চলচ্চিত্রটিতে রয়েছে। চিত্রনাট্যের দুর্বলতা সত্ত্বেও কাহিনীর আবেদন এবং যযাতির ভূমিকায় শরৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসালাভ করে। পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে আরও অজস্র চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ‘নরনারায়ণ’ (১৯৩৮), ‘দেবযানী’ (১৯৩৯), ‘রুক্মিণী’ (১৯৩৯), ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৯৩৯), ‘বামনাবতার’ (১৯৩৯), ‘শ্রীরাধা’ (১৯৪১), ‘কর্ণার্জুন’ (১৯৪২), ‘ভীষ্ম’ (১৯৪২) ইত্যাদি।

‘মনসামঙ্গল’ কাব্যের চাঁদ সদাগর চরিত্রটি যুগে যুগে সর্বসাধারণের মনোযোগ পেয়ে এসেছে। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১৭ই মার্চ শ্রীভারতলক্ষ্মী পিকচার্সের প্রযোজনায় ও প্রফুল্ল রায়ের পরিচালনায় ‘চাঁদ সদাগর’ ছবিটি ক্রাউন সিনেমায় মুক্তি পায়। চাঁদসদাগরের ভূমিকায় অহীন্দ্র চৌধুরী, নেতা ধোপানির চরিত্রে নীহারবালা দেবী, বেহুলার চরিত্রে শেফালিকা দেবী, সনকার চরিত্রে পদ্মাবতী দেবী প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। চলচ্চিত্র এমন এক মাধ্যম, যা কম সময়ে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছয়। সাহিত্য হিসেবে মনসামঙ্গলের গ্রহণযোগ্যতা লোকসমাজে বরাবরই ছিল। নতুন করে চলচ্চিত্রে চেনা চরিত্রদের পেয়ে আরও বেশি করে কাহিনীর সঙ্গে মানুষ নিজেকে একাত্মবোধ করতে শুরু করে। সর্পাঘাতে মৃত মানুষকে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু চলচ্চিত্রের আবেদন আরও বেশি জোরালো। মনসামঙ্গল পুথির পাতায় পড়ে যতজন মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন, রূপোলী পর্দায় দেখে তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষ বিশ্বাস করে বসলেন সাপের কামড়ে মৃত মানুষ লখিন্দরের মতোই অলৌকিকভাবে বেঁচে উঠতে পারে। ১৯৯৬ সালেও তাই তৈরি হয় ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’-র মতো মানুষকে ভুলপথে চালিত করার ছবি। অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত এই ছবিটিতে অভিনয় করেছেন রঞ্জিত মল্লিক, চুমকি চৌধুরী, টোটা রায়চৌধুরী প্রমুখ। ছবির কাহিনী হল, সাপুড়ে তারক গলুইয়ের স্ত্রী প্রতিবার মৃতশিশুর জন্ম দেন। তাই তারক গলুই হাসপাতাল থেকে এক মায়ের সদ্যোজাত যমজ শিশুর একটি চুরি করে আনে। পথে পুলিশ রঞ্জিত মল্লিক তাকে ধরেও ছেড়ে দেন। তারক গলুইয়ের অভূতপূর্ব যুক্তি, যার বাচ্চা সে চুরি করেছে তার তো দুটি সন্তান হয়েছে অথচ তারক গলুইয়ের একটিও সন্তান হয়নি এবং প্রতিবারের মতো এইবারও যদি তারক গলুইয়ের স্ত্রী শোনে যে তার শিশুটি মারা গেছে, সেও মারা যাবে। পুলিশ রঞ্জিত মল্লিকেরও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মনে হয় চুরি যাওয়া শিশুটি বাগদিপাড়ার বস্তিতেই ভালো থাকবে! তারক গলুইয়ের স্ত্রী কিন্তু বাঁচেননি। তবু তারক গলুই শিশুটি ফেরত দিতে নারাজ। কারণ পাড়ায় একটি কিংবদন্তী ছড়িয়ে পড়েছে, তারক গলুইয়ের স্ত্রী সতীলক্ষ্মী ছিল তাই সে মারা যাওয়ার আগে স্বামীর ‘আটকুঁড়ো’ নাম ঘুচিয়ে গেছে। যমজ বাচ্চাদুটি বড় হতে লাগল। তারক গলুইয়ের কাছে থাকা শিশু খুশি বাবার সাথে সাথে ঘুরে সাপ ধরা শিখছে। অন্যদিকে স্বচ্ছল পরিবারে মানুষ হচ্ছে খুশির যমজ বোন হাসি। তারক গলুই সাপের কামড়ে মারা গেলে তার পাড়ার লোকজন পরামর্শ দেয়, ‘তোদের বংশে বাবা তারকনাথের অভিশাপ আছে। তারকেশ্বরে নিয়ে যা, বাবার দয়া হলে ওই কালকেউটেকে দিয়ে বিষ তুলিয়ে দেবে’। মৃতদেহ নিয়ে খুশি তারকেশ্বরে যায় বাবাকে বাঁচাতে, বলাই বাহুল্য সে ব্যর্থ হয়। কিছুবছর পর হাসি খুশি দুজনেই বড় হয়েছে। হাসির প্রেমিককে সাপে কামড়ালে খুশি বীণ বাজিয়ে কামড়ে যাওয়া সাপটিকে ডেকে আনে এবং সেই সাপ এসে বিষ ফেরত নিয়ে যায় ও মৃত মানুষটি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। পুরো সিনেমা জুড়ে অজস্র অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর উপাদান রয়েছে— সাপে চোর তাড়াচ্ছে, সাপ অত্যাচারী সৎ মা’কে ঢিট করছে। কিন্তু এই যে ছোবল মেরে যাওয়ার পরে সাপ এসে বিষ তুলবে— এই কিংবদন্তিটি অত্যন্ত সাংঘাতিক। এ ধরনের ভ্রান্ত অপপ্রচার সরল সাদাসিধে মানুষজনের কতখানি ক্ষতি করে, তার ইয়ত্তা নেই। ছবির শুরুতেই পরিচালক বিধিবদ্ধ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সেরেছেন— ‘আমার এ কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক নয়, শুধুমাত্র দর্শকদের মনোরঞ্জনের কথা ভেবেই এ ছবি করা, দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রচার করার জন্য এ ছবি নয়’। কিন্তু এ বিজ্ঞপ্তি ক’জন মানুষ পড়েন? আজও মানুষজন হাসপাতালের ডাক্তারের চেয়ে ওঝার ঝাড়ফুঁকে বেশি আস্থা রাখেন। এই মৃত্যুগুলির দায় কি একটু হলেও বর্তায় না নিছক মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে নির্মিত ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’-র মতো চলচ্চিত্রগুলির ওপর? ২০২১ সালের ২০ জুলাই হিন্দুস্তান টাইমসের পোর্টালে প্রকাশিত খবরের হেডলাইন—‘হাসপাতাল থেকে বন্ডে ছাড়িয়ে ওঝার কাছে ঝাড়ফুক! ‌মৃত্যু সাপে কাটা বালিকার।’ ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর TV9 বাংলা ডিজিটালের পোর্টালে প্রকাশিত খবরের হেডলাইন— ‘সাপের কামড়ে মৃত্যু, বেঁচে ওঠার আশায় ১৫ ঘণ্টা জলে ডুবিয়ে রাখা হল মৃতের দেহ’। সাপের ছোবলে মৃত্যু হলে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পরিবার পিছু ১ লক্ষ টাকা করে দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। তবু মৃত্যুর কমতি নেই। কারণ, এখনও পর্যন্ত মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসেনি। ভুয়ো কিংবদন্তী, অন্ধবিশ্বাসের জেরে গুণিন, ওঝাদের কাছে গিয়ে সময়নষ্ট করেন রোগীর পরিবারের মানুষজন— এমনটাই মনে করছেন সাংবাদিক মেহবুব কাদের চৌধুরী। ২০১৬, ১৬ সেপ্টেম্বর  আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন পোর্টালে ‘সাপে কাটা নিয়ে প্রচার নেই, ক্ষতিপূরণে দায় সারছে রাজ্য’ শিরোনামে তাঁর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদনে স্পষ্টতই উল্লেখ আছে, মানুষের অজ্ঞতা, কুসংস্কার ঘোচেনি। আজতক বাংলা পোর্টালে ২০২১, ২৬ জুন প্রকাশিত হয় গোসাবার পূজা মৃধা-র খবরটি। বছরদশেকের পূজা মৃধাকে সাপে কামড়াতে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে গিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওঝার কাছে। এরপর মৃতদেহটি কলার ভেলায় করে স্থানীয় সারসা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে অকালে চলে যেতে হয়েছে কালিয়াগঞ্জের বছর বারোর পুষ্পা বর্মনকেও।

রাজশেখর বসুর ছোটগল্প ‘বিরিঞ্চিবাবা’ অবলম্বনে  ১৯৬৫ সালে নির্মিত ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ চলচ্চিত্রটি মানুষের অন্ধবিশ্বাসগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় তৈরি এই ছবিটিতে একটি ধার্মিক হিন্দু পরিবার একজন ভণ্ড, প্রতারক বিরিঞ্চি বাবার শিকার হয়।

পরশপাথর, যার ছোঁয়া পেলে যেকোনও ধাতু সোনায় পরিণত হয়— এই মিথটিকে ঘিরে গোটা পৃথিবী জুড়ে অজস্র গল্প, উপকথা রয়েছে। রাজশেখর বসু এই মিথ অবলম্বনেই লেখেন ‘পরশপাথর’ নামে ছোটগল্পটি এবং ১৯৫৮ সালে সত্যজিৎ রায় সেই গল্প অবলম্বনেই তৈরি করেন ‘পরশপাথর’ ছবিটি। একজন মধ্যবিত্ত কেরানি একদিন একটি পরশপাথর কুড়িয়ে পান এবং তার পরেই তাঁর জীবনের গতিপথ আমূল বদলে যায়।

চরণামৃত খেয়ে যেকোনও অসুখ সেরে যায়— এই মিথটি আজও ভীষণভাবে প্রচলিত আমাদের সমাজে। ১৯৯০ সালে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে (মতান্তরে, ইবসেনের নাটক অ্যান এনিমি অফ দ্য পিপল অবলম্বনে) সত্যজিৎ রায় তৈরি করেন ‘গণশত্রু’ চলচ্চিত্রটি। এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, ডক্টর অশোক গুপ্ত চরণামৃতকে ঘিরে গড়ে ওঠা মিথটিকে ভাঙার চেষ্টা করলে তাঁর জীবন কীভাবে দুর্বিষহ করে তোলে কুসংস্কারগ্রস্ত মানুষজনেরা। ছবির শুরুতেই ডাক্তারের নিজের ভাই-কে বলতে শোনা যায়, ‘মন্দিরে যাবার সাতদিনের মধ্যেই স্পন্ডিলাইটিস সেরে গেল।’ চণ্ডীপুরের মধ্যে অবস্থিত ভুবনপল্লী এলাকার ত্রিপুরেশ্বরের মন্দিরে বিলি করা চরণামৃতর জলে রোগের জীবাণু থিকথিক করছে। সেই জল খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন বহু মানুষ, প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যাদের, তাদের মৃত্যুও ঘটছে। মন্দিরের জলের পাইপলাইনে ফাটল ধরে নর্দমার জল তাতে মিশেছে। ডাক্তার অশোক গুপ্ত মন্দির বন্ধ রেখে জলের পাইপলাইন সারানোর কথা বললে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, মন্দির কর্তৃপক্ষ, মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানের পদে আসীন ডাক্তারের ভাই সকলেই বিরূদ্ধমত পোষণ করেন। মন্দির বন্ধ রাখলে পর্যটন ব্যবসার ক্ষতি, মন্দিরের আয়ের পথ বন্ধ এবং স্বয়ং দেবতার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ— অতএব, চরণামৃত খেয়ে মানুষ মরছে, মরুক। মন্দির বন্ধ হবে না। মন্দির কর্তৃপক্ষ ভার্গবের যুক্তি, ‘চরণামৃতে গঙ্গাজল, বেলপাতা, তুলসীপাতা থাকে। তুলসীপাতা-গঙ্গাজলে জলের সব দোষ কেটে যায়।’ ডাক্তারের স্ত্রীও স্বীকার করেন, তিনিও এই মিথটি শুনেছেন ছোটবেলায় তাঁর বাবার কাছে। বাস্তবে চরণামৃত খেয়ে অসুস্থ হওয়ার নজির নেহাত কম নেই। ২০২০, ২৮ জুন জি ২৪ ঘন্টা নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, জগৎবল্লভপুর থানার মধ্য মাজু গ্রামে বিপত্তারিণী পুজোর প্রসাদ ও চরণামৃত খেয়ে অসুস্থ হন শিশুসহ প্রায় একশোজন। পাঞ্জাবের সুলতানপুর লোধির কালিনদীতে ডুব দিয়ে আলোকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন গুরুনানক, এমন একটি কিংবদন্তি ওই অঞ্চলে প্রচলিত। ২০২২, ২২ জুলাই দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বাংলা ডেস্কে একটি খবর প্রকাশিত হয়— কালিনদীর জল খেয়ে পবিত্রতার প্রমাণ দিতে গিয়ে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই নদীটিতে আশেপাশের আশিটি গ্রাম, ছোটবড় নানা শহরের দূষিত বর্জ্য, কারখানার বিষাক্ত তরল মিশে তার জলকে বিষে পরিণত করেছিল।

সাহিত্য যেমন সমসাময়িক সমাজের দর্পণ, চলচ্চিত্র মাধ্যমও সেই কাজটি কিয়দাংশে করে থাকে। প্রচলিত মিথ, কুসংস্কারের যেমন সাহিত্যের আঙিনায় অবাধ প্রবেশ, চলচ্চিত্রেও তাই।  চলচ্চিত্র মনোরঞ্জনের পাশাপাশি সমাজের মানুষকে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজও করে। কোন বার্তাটি গ্রহণযোগ্য, কোনটি নয় তা বিচারের দায়িত্ব জনসাধারণের ওপরেই বর্তায়। কিন্তু মুশকিল হল, সেই গুরুদায়িত্বখানা পালনের যোগ্যতা সকলের থাকে না। কে ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’ দেখে অনুপ্রাণিত হবেন, কে-ই বা ‘গণশত্রু’ দেখে অনুপ্রাণিত হবেন, তা আগে থেকে নির্ধারণ করা অসম্ভব। সমাজের একটি বৃহত্তর অংশের মানুষ মনে করেন চলচ্চিত্রে যা দেখানো হয়, সবটুকুই নির্জলা সত্যি। তাঁরা বিশ্বাস করতে ভালোবাসেন, একাহাতে একজন হিরো গোটা একখানা গুণ্ডার পল্টন সাবাড় করে ফেলছেন। তাঁরা পছন্দের অভিনেতাদের চুলের ছাঁট নকল করেন, কথা বলার কায়দা রপ্ত করেন, তাঁদের দেখাদেখি পোশাকআশাক কেনেন। এঁদের মধ্যে কেউ যদি পর্দায় দেখেন তাঁর প্রিয় অভিনেত্রী বীণ বাজিয়ে সাপ ডেকে এনে বিষ তুলিয়ে মৃত মানুষকে বাঁচাচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবেই ঘটনাটি দর্শকের মনে রেখাপাত করবে। তাই কোন মিথটি, কোন কিংবদন্তিটি চলচ্চিত্রে কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে চলচ্চিত্রনির্মাতাদেরও খানিক সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন থাকে বৈকি।

 

তথ্যসূত্রঃ

১) ‘বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাস’, কালীশ মুখোপাধ্যায়, পত্রভারতী, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩, চতুর্থ মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০২০ [ISBN 978-81-8374-154-5]

২) https://www.itihasadda.in/bengali-film/

৩) https://bangla.hindustantimes.com/bengal/districts/minor-bitten-by-snake-father-take-the-bond-from-the-hospital-then-get-her-to-the-priest-girl-died-31626768910535.html

৪) https://tv9bangla.com/west-bengal/birbhum/youth-died-by-snake-bite-villagers-put-him-underwater-for-15-hours-hoping-he-will-be-alive-au64-654744.html

৫) https://www.anandabazar.com/west-bengal/no-awareness-program-about-snake-bite-govt-gives-only-compensate-1.478810

৬) https://bangla.aajtak.in/west-bengal/story/gosaba-minor-girl-died-snake-bite-parents-visited-exorcist-instead-doctor-284255-2021-06-26

৭) https://www.uttarbangasambad.com/a-teenage-girl-was-bitten-to-death-by-ojhas-miracle/

৮) https://zeenews.india.com/bengali/state/100-villagers-sick-after-taking-prasad-in-howrah_323072.html

৯) https://bengali.indianexpress.com/explained/explained-the-kali-bein-and-its-significance-for-sikhs-472666/

১০) ‘লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ’, সম্পাদকঃ দুলাল চৌধুরী, পল্লব সেনগুপ্ত, পুস্তক বিপণী, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ২০০৪, দ্বিতীয় সংযোজন ২০১৩ [ISBN : 978-93-82663-10-2]