কল্লোল ও বুদ্ধদেব বসু

'কল্লোল' কাল


১৯২১ খ্রীষ্টাব্দের ৪ঠা জুন। চার বন্ধু মিলে তৈরী করল 'ফোর আর্টস ক্লাব'। এই চারজন হলেন– গোকুলচন্দ্র নাগ, দীনেশরঞ্জন দাশ, মণীন্দ্রলাল বসু ও সুনীতি দেবী। প্রত্যেকে একটি ক'রে গল্প দিয়ে প্রকাশ করে 'ঝড়ের দোলা' নামক একটি পত্রিকা। এই পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই 'ফোর আর্টস ক্লাব'-এর অস্তিত্ব মুছে যায়। আবার নতুন করে ভাবার সময় আসে। নতুন উদ্যমে উদ্যোগী হয়ে কাজে নেমে পড়ে গোকুল আর দীনেশ। গোকুলের ব্যাগে তখন দেড় টাকা আর দীনেশের ব্যাগে দু'টাকা। ছাপা হল হ্যান্ড বিল, আর হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ল চৈত্র সংক্রান্তিতে, জমজমাট মানুষের ভীড়ে। ১৩৩০-এর ১লা বৈশাখ কল্লোল ছাপা হল৷ ১০/২ পটুয়াটোলা লেনে ছিল দীনেশরঞ্জনের মেজদাদা বিভুরঞ্জনের দু'কামরার বাড়ি। সেখানে আট ফুট বাই দশ ফুট ছোট একটা ঘরে 'কল্লোল'-এর অফিস। দীনেশরঞ্জন দাশ ছিলেন এই পত্রিকার সম্পাদক। আর সহ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন গোকুলচন্দ্র নাগ। আস্তে আস্তে বাড়ল 'কল্লোল'- এর গ্রাহক সংখ্যা। এরইমধ্যে ১৩৩২ সালের ৮ই আশ্বিন মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে মারা গেলেন গোকুলচন্দ্র নাগ। 'কল্লোল'-এর অগ্রহায়ণ সংখ্যায় শোকসন্তপ্ত নজরুল কবিতা লিখলেন 'গোকুল নাগ'। আর একটি কবিতা বেমক্কা এসে পড়ল ঢাকা থেকে। কবিতার নাম 'যৌবন পথিক'। লেখক অচেনা-অপরিচিত। নাম 'শ্রী বুদ্ধদেব বসু'।

 

সমালোচনার কানাগলিতে প্রথম পরিচয়

"বুদ্ধদেবকে প্রথম দেখি কল্লোল আপিসে। ছোটখাট মানুষটি খুব সিগারেট খায় আর মুক্ত মনে হাসে। হাসে সংসারের বাইরে দাঁড়িয়ে, কোনো ছলাকলা, কোনো বিধি-বাধা নেই। তাই এক নিঃশ্বাসেই মিশে যেতে পারল 'কল্লোল'-এর সঙ্গে– এক কালস্রোতে। চোখে মুখে তার যে একটি সজ্জলতার ভাব সেটি তার অন্তরের পবিত্রতার ছায়া, অকপট স্ফটিকস্বচ্ছ্বতা।" (কল্লোলের যুগ, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত)

কলেজের প্রথম বর্ষের শেষে বুদ্ধদেব বসু এসেছিলেন 'কল্লোল'-এর অফিসে। তৎকালীন এই তরুণতম প্রতিনিধির একটি গল্প দিনকয়েক পর রাতারাতি শোরগোল পড়ে গেল। হায় হায় রব উঠল। তর্ক-বিতর্ক আর তীব্র সমালোচনায় ফেটে পড়ল সুশীল সমাজ।

আমার কন্ঠের জড়তা কেটে গিয়েছিলো – বেশ সহজ ভাবেই বললুম – তোমার মুখ কি দেখাবে না?
চাপা গলায় উত্তর এলো – তার দরকার নেই।
কিন্তু ইচ্ছা করচে যে!
তোমার ইচ্ছা মেটাবার জন্যই তো আমার সৃষ্টি। কিন্তু ঐটি বাদে।
কেন? লজ্জা?
লজ্জা কিসের? আমি তো তোমার কাছে আমার সমস্ত লজ্জা খুইয়ে দিয়েছি।
পরিচয় দিতে চাও না ?
না, পরিচয়ের আড়ালে এ-রহস্যটুকু ঘন হয়ে উঠুক।
আমার বিছানায় তো চাঁদের আলো এসে পড়েছিলো –
আমি জানালা বন্ধ করে দিয়েছি।
ও, কিন্তু আবার তো খুলে দেওয়া যায়।
তার আগে আমি ছুটে পালাবো।
যদি ধ’রে রাখি ?
পারবে না।
জোর?
জোর খাটবে না।
একটু হাসির আওয়াজ এলো। শীর্ণ নদীর জল যেন একটুখানি কূলের মাটি ছুঁয়ে গেলো।
তুমি যেটুকু পেয়েছো, তা নিয়ে কি তুমি তৃপ্ত নও?
যা চেয়ে নিইনি, অর্জন করিনি, দৈবাৎ আশাতীতরূপে পেয়ে গেছি, তা নিয়ে তো তৃপ্তি-অতৃপ্তির কথা ওঠে না।
তবু?
তোমার মুখ দেখতে পাওয়ার আশা কি একেবারেই বৃথা?
নারীর মুখ কি শুধু দেখবার জন্যেই?
(রজনী কেন উতলা, বুদ্ধদেব বসু)

প্রতিবাদে নামলেন সম্রাজ্ঞী শ্রেণীর মহিলারা। বক্তৃতা সভায় বললেন, আঁতুড়ঘরেই এমন লেখককে নুন দিয়ে মেরে ফেলা উচিৎ ছিল। নির্মলীকরণ নয়, প্রয়োজন নির্মূলীকরণের। 'কল্লোল'-এ প্রকাশিত এহেন অশ্লীল লেখার বিরোধিতা করে সজনীকান্ত দাস চিঠি দেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। নালিশ জানান 'কল্লোল' ও 'কালিকলম' পত্রিকার লেখকদের যথেচ্ছাচার সাহিত্যচর্চার বিরুদ্ধে।

রবীন্দ্রনাথ সেই দীর্ঘ চিঠির উত্তরে লেখেনঃ

কল্যাণীয়েসু

কঠিন আঘাতে একটা আঙুল সম্প্রতি পঙ্গু হওয়াতে লেখা সহজে সরছে না। ফলে বাকসংযম স্বতঃসিদ্ধ। আধুনিক সাহিত্য আমার চোখে পড়ে না। দৈবাৎ কখনো যেটুকু দেখি, দেখতে পাই, হঠাৎ কলমের আব্রু ঘুচে গেছে। আমি সেটাকে সুশ্রী বলি এমন ভুল করো না। কিন্তু করিনে তার সাহিত্যিক কারণ আছে, নৈতিক কারণ এ স্থলে গ্রাহ্য না হতেও পারে। আলোচনা করতে গেলে সাহিত্য ও আর্টের মূলতত্ত্ব নিয়ে পড়তে হবে। এখন মনটা ক্লান্ত, উদভ্রান্ত, পাপগ্রহের বক্রদৃষ্টির প্রভাব - তাই এখন বাগবাত্যার ধুলো দিগদিগন্তে ছড়াবার সখ একটুও নেই। সুসময় যদি আসে তখন আমার যা বলবার বলব।

ইতি,
২৫শে ফাল্গুন ১৩৩৩। শুভাকাঙ্খী শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।


আধুনিক সাহিত্য চোখে পড়েনা? প্রতি-আক্রমণ স্বরূপ রবীন্দ্রনাথের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে বছর আঠারোর বুদ্ধদেবও লিখে ফেলল একখান কেজো চিঠি। সাল ১৯২৬। প্রথমবারের এই সাহস, এই স্পর্ধাই যেন সমস্ত সামাজিক প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে বুদ্ধকে এগিয়ে যাবার দিশা দেখাল।

 


'যে আঁধার আলোর অধিক'


১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর বুদ্ধদেব বসু জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায়। জন্মের চব্বিশ ঘন্টা না পেরোতেই বুদ্ধদেবের মা, বিনয়কুমারী ধনুষ্টংকারে মারা যান। পত্নীবিয়োগের শোকে, বাবা ভূদেবচন্দ্র বসু বছরখানেকের জন্য 'পরিব্রজ্যা' গ্রহণ করলেন। অগত্যা শিশু-সময় বয়ে যেতে থাকল মাতামহ ও মাতামহীর আশ্রয়স্থলে। দাদামশাই ছিলেন বুদ্ধদেবের প্রথম শিক্ষক। তিনি অল্প বয়সে বুদ্ধদেবকে স্কুলে না পাঠিয়ে নিজেই পরম যত্নে পড়াতেন। অত্যন্ত অল্প বয়সে বুদ্ধদেব ইংরেজিতে রোজনামচা লেখা শুরু করেন মাতামহ, চিন্তাহরণ সিংহের নির্দেশে। বয়স তখন মাত্র সাত। এরপর একটু বড় হতেই শার্লক হোমস, শেক্সপীয়ার, ডিকেন্স, বার্ণাড শ পড়তে পড়তে ইংরেজি সাহিত্য যে কখন বুদ্ধদেবকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল...!

বাল্যকালে প্রভুচরণ গুহঠাকুরতা'র সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ ছিল আধুনিক কবি বুদ্ধদেবের। সেই সূত্রে পাশ্চাত্য জগৎ ছিল তার কাছে একবুক খোলা মাঠের মতো। দেশ-বিদেশের বহু পত্রিকা আসত বুদ্ধদেবের বাড়িতে৷ এভাবেই এক অবকাশ যাপনের দিন নিঃসঙ্গতার মুহূর্তে, বুদ্ধদেব লিখে ফেললেন জীবনের প্রথম কবিতা। দাদামশাইকে উৎসর্গ করলেন ইংরেজি ভাষায় লেখা তাঁর সেই প্রথম কবিতা। এই সূচনা আর সমাপ্তিতে পরিণত হলনা। পথ চলা অবিরাম ও অন্তহীন। বুদ্ধদেবের কলমে–

"...আমি কবিতাকে আর ছাড়তে পারলাম না, অথবা কবিতাই আর
নিস্তার দিল না আমাকে- কিন্তু এরপর থেকে যা-কিছু-লিখি সবই বাংলায়।"


আধুনিক বাংলা কাব্য-আন্দোলনের পুরোধা বুদ্ধদেব বসুর প্রথম সাহিত্য-জীবন শুরু হয়েছিল কবিতার হাত ধরে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে বুদ্ধদেব লিখেছিলেন 'মর্মবাণী' (১৯২৩-২৪) কাব্যগ্রন্থ। যদিও এই কাব্যগ্রন্থ ছিল রবীন্দ্রকাব্যের ধারার অনুরণন। এরপর কিশোর বয়সে কবি লিখলেন 'বন্দীর বন্দনা' (১৯৩০)। এই প্রথম নিজস্ব সৃষ্টিশীলতার উচ্ছ্বাস, স্বতন্ত্রতার প্রকাশকে বুদ্ধদেব মনে মনে অনুভব করলেন।

দিলীপকুমার রায়ের হাত থেকে রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধদেবের ছ'টি কবিতা পেয়ে সেসময় লিখেছিলেন–

যে লেখা কয়টি দেখলুম তার সমস্তগুলি নিয়ে মনে হল এ যেন একটি দ্বীপ।
এই দ্বীপের বিশেষ একটি আবহাওয়া, ফল, ফুল, ধ্বনি ও বর্ণ। এর সরল
উর্বরতার বিশেষ একটি সীমার মধ্যে একজাতীয় বেদনার উপনিবেশ।
দ্বীপটি সুন্দর, কিন্তু নিভৃত। হয়তো ক্রমে দেখা যাবে দ্বীপপুঞ্জ, হয়তো
প্রকাশ পাবে উদার বিচিত্র মহাদ্বীপে 'তমালতালী- বনরাজিনীলা' তটরেখা।

 


২০২ রাসবিহারী এভিনিউ


আশুতোষ মুখার্জী রোডের আবাসনে মামার বাড়িতে আসে ঢাকা থেকে এক তরুণী। উলটো দিকে রমেশ মিত্র রোডের ডেরা। সেখান থেকে বছর পঁচিশের এক যুবক সেই ফ্ল্যাটে এলেন একদিন। তারপর থেকে প্রায় রোজদিন। শ্রান্তঘন দুপুরে এই মৃদু দেখা ধীরে ধীরে যেন অভ্যাস হয়ে গেল! কিছুদিন পর ঢাকা থেকে এল তরুণীর মা-বাবা। মামাদের সাথে গোপনে কথাবার্তা চলে। ছেলেটির আসা বন্ধ হয়। একে একে বেলা যায়৷ হঠাৎ একদিন বিয়ের প্রস্তাব ট্যাঁকে করে হাজির হয় পঁচিশ বছরের চালচুলোহীন যুবক৷ দূরের আকাশে তখন মেঘ উড়ছে। চারপাশটা ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া, বিগত কয়েকদিনের ভ্যাপসা আবহাওয়া যেন শুধরে দিচ্ছে! মেয়েটির বাবা বলেন, "আমার কোনো অমত নেই। যার আত্মপ্রত্যয় আছে, তার সব আছে।"

যুবকের নাম বুদ্ধদেব বসু। টুকটাক লেখালিখি করে। আর, যুবতী রানু সোম ওরফে প্রতিভা বসু। প্রতিভা সুগায়িকা। বিয়ের দিনে খবর এল, বুদ্ধদেব মাস্টারির চাকরি পেয়েছে। তিরতির করে গড়ে উঠল একফালি সংসার।

বালিগঞ্জ প্রেস থেকে হেঁটে হেঁটে ট্রামলাইনের দিকে ফিরছেন নতুন দম্পতি। হঠাৎ প্রতিভার নজরে পড়ল 'টু লেট'। ২০২, রাসবিহারী এভিনিউ। নতুন দম্পতির প্রয়োজন নতুন ঘর৷ লাল মেঝের বাড়িতে শুরু হল যাপন। দুই মেয়ে, দয়মন্তী ও মীনাক্ষী। ছেলে শুদ্ধশীল। এদের মধ্যে বছর বারোর মীনাক্ষী হয়ে উঠেছিল বাবার সর্বকর্মের সঙ্গী। দিনের শুরুতে কাজ অনুযায়ী বাবার লেখার টেবিল সাজানোর দায়িত্ব ছিল তার। এছাড়া, পত্রিকা খামে ভরা, ঠিকানা লেখা, ডাকটিকিট লাগানো, এমনকি পান্ডুলিপি লেখা– সমস্তটাই করত মিমি (মীনাক্ষী)। এরজন্য মিমিকে বাবা, মায়ের সাথে বহু আলোচনার পর মাইনে দিত মাসে দু'টাকা। এভাবে লতাপাতা ছড়িয়ে ক্রমশ আকাশের দিকে উঠে গেল একটা বেনামি গাছ। দীর্ঘদিনের সকলের সম্মিলিত লালনে-পালনে তৈরি হল 'কবিতাভবন'।

 

'যাদবপুরকে এত ভালোবেসেছিলাম...'


বুদ্ধদেব ছিলেন প্রকৃত শিক্ষক। পড়ানোর মধ্যে দিয়ে একাকীত্বের উপাসক বুদ্ধদেব যেন তৃপ্ত হত! কিন্তু কোনওরকম আপোষ করা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ। বুদ্ধদেবকে সবচেয়ে বাজে ক্লাসগুলি পড়াতে দেওয়া হত। পাশাপাশি, তাঁকে কলেজের নতুন শাখা দিনাজপুরে পাঠানোর বিপুল চেষ্টা শুরু হল। বুদ্ধদেব শিক্ষকতার চাকরিতে আগুপিছু না ভেবে ইস্তফা দিলেন।

এরপর, তদানীন্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হুমায়ুন কবিরের  সহযোগিতায় বুদ্ধদেব ‘ইউনেস্কো’র বয়স্ক শিক্ষণ-প্রকল্পে ছ’মাসের একটা কাজ পেলেন। বুদ্ধদেব চললেন আমেরিকায়, পিটার্সবার্গের পেনসিলভানিয়ার ‘কলেজ ফর উইমেন’-এ এক বছরের অধ্যাপনার কাজে। কিন্তু কলেজ, পড়ুয়াদের মান ও শহর, অধ্যাপক বুদ্ধদেবের দুটোই ভীষণ অপছন্দ। এইসময় সাক্ষাৎ হল প্রিয় কবি এজ়রা পাউন্ডের সঙ্গে। যদিও এই সাক্ষাৎ বুদ্ধদেবের কাছে তেমন বিশেষ কিছুই হল না। তবে মন্দের ভালো, একইসময় তাঁর এক গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু লাভ হল, হেনরি মিলার। ছ’মাস পরে কলেজে পড়ানো ছেড়ে দিয়ে আবার নতুন কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল বুদ্ধদেব।

ইতিমধ্যে, হুমায়ুনের মধ্যস্থতায় ত্রিগুণা সেন প্রস্তাব করলেন, বুদ্ধদেব যেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব নেন। কিন্তু তাতে বুদ্ধদেবের আগ্রহের লেশমাত্র নেই। শেষমেশ ১৯৫৬ সালের ১ অগস্ট বুদ্ধদেব তুলানামূলক সাহিত্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক বুদ্ধদেব ছিলেন ক্লাসে বেশ কড়া, সঙ্গে স্নেহপ্রবণ। পড়ুয়াদের প্রতি নজর ছিল সন্তানসম। নিজের খরচে চোখের ডাক্তার দেখানো, কোনও ছাত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফি’ ভরা, সবই করেন তিনি।

কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা চালিয়ে যাওয়া বেশিদিন সম্ভবপর হলনা বুদ্ধদেবের কাছে। এক শ্রেণির মানুষের ‘কাঁকড়া-স্বভাবের’ কারণে প্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকেও ১৯৬৩ সালে ইস্তফা দিতে হল তাঁকে। তবে এরপরেও বুদ্ধদেব পড়িয়েছেন আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও যাদবপুরের প্রতি টান থেকে গেছে বরাবর। মায়াময়, সুখময় সময়ের স্মৃতি-যাপনের তীরে বারেবারে আক্ষেপের সুরে অভিমান প্রকাশ করেছেন পরবর্তী কালের বিশিষ্ট সাহিত্যিক-সমালোচক-অনুবাদক, বুদ্ধদেব বসু।

 

ছোটগল্পে প্রেমের বিচিত্রিতা


কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর ছোটগল্পের বিষয়বস্তু কেবলমাত্র প্রেম-নির্ভর বলে দাগিয়ে দেওয়া বোধহয় ঠিক হবেনা। বিভিন্ন গল্প বিভিন্ন পর্যায় প্রেমে আচ্ছন্ন। গল্পের পটচিত্রে পরতে পরতে প্রেম বৈচিত্র‍্যময়। কল্লোল যুগের অন্যান্য লেখকরা ছিলেন অতিরিক্ত রোমান্টিক। যখনই তারা নিজেদের লেখায় নারীরূপের বর্ণনা দিয়েছেন, মনে হয়নি সেই নারী কোনও মানবী। মনে হয়েছে দেবী। যা কখনোই বাস্তবিক নয়। বাস্তবের সাথে এই বিস্তর ফারাক ঘুচিয়ে দেয় বুদ্ধদেব বসুর গল্পের চরিত্ররা। 'রজনী হল উতলা' গল্পের কাহিনী গভীর থেকে আরও গভীরে এগিয়ে গেছে আধো ছায়া আধো আঁধারের মিশ্রণের মধ্য দিয়ে। বুদ্ধদেব বসু'র 'রজনী কেন উতলা' গল্পটিতে গল্পকথক গল্পটি বলছেন নিজের স্ত্রী নীলিমাকে। বলছেন থেমে থেমে। গল্পে রয়েছে কবিতার ছাপ, অস্থির-অস্পষ্ট-অসংলগ্ন কিছু ভাবনা।

"আমি মুখ ফিরিয়ে ওর চোখের দিকে চাইলুম- আশ্চর্য! ওর চোখে কোনো রঙ আমি আজ অবধি ঠিক করতে পারলুম না। ও যেন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়, কখনো সন্ধ্যার এই ছায়াটুকুর জন্য ধূসর, কখনো ওই সুদূর তারকার মতো সবুজ, কখনো ওই নদীর জলের মতো কালো, কখনো দিগন্তরেখার অপরূপ ভঙ্গিমার মতো নীল"।

গল্পের শেষে আছে অসমাপ্তির বাস্তব ও কল্পনার অভূতপূর্ব সমন্বয়।

অপর্ণা, অশোক আর কথক– এই তিনটি চরত্রের মধ্যে থাকা প্রেম ও বাস্তবের দ্বন্দ্বকে ফোকাসে রেখে বুদ্ধদেব বসু লিখলেন 'আবছায়া'। "হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে/ মন বাড়িয়ে ছুঁই।" ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব এই গল্পের মূল বিষয়বস্তু। অতি সাধারণ ঘটনার সংযোগে তৈরি। সময়টা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়। বঙ্গভঙ্গ হচ্ছে, বঙ্গভঙ্গ রদ হচ্ছে। সময় এগিয়ে চলেছে 'পঞ্চাশের মন্বন্তর' ও দেশভাগের দিকে। এইসময় সমাজের মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটছে। তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গল্পের কথক একজন মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি হওয়ায় প্রথমের মধ্যবিত্তের চোখে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেখতে পাই। সেখানে দেখা যায়, বিস্তৃত আয়তনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বলিয়ে মাস্টারমশাইরা প্রধান কান্ডারি। দু'শো জন ছাত্র আর ছয়জন মাত্র ছাত্রী। এদের মধ্যে একজন অপর্ণা। এই গল্পের নায়িকা। অশোককে কখনোসখনো খলনায়ক মনে হলেও, গল্প এগোতে থাকলে বোঝা যায় অশোক না থাকলেও অপর্ণা কথকের প্রস্তাবে রাজি হত না। ব্যক্তি ও বাস্তবের দ্বন্দ্ব দিয়ে তৈরি এই গল্পের প্লটে গতিময়তা কিছুটা ভিন্ন স্বাদ জোগায়।

আবার, 'আমরা তিনজন' গল্পে আমরা দেখি, অন্তরাকে ভালোবাসে বিকাশ, অসিত ও হিমাংশু। যেকোনো রঙের শাড়িতেই অন্তরাকে এই তিনজনের ভালো লাগে। একদিন কাকতালীয়ভাবে তিনজনেই একসাথে বলে বসে, "ওর মুখ অনেকটা মোনালিসার মতো"। সদ্য স্কুল পাশ করা এই তিনটি ছেলের মনে প্রেমের বীজ পুঁতে দিয়েছিল স্বয়ং অন্তরা। তবে তার বিয়ে হয় সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত এক পাত্রের সাথে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় মেয়েটির। এমন সহজ-স্বাভাবিক কাহিনী নিয়ে এমন বয়ঃসন্ধির গল্প আজও বাংলা সাহিত্যে বিরল!

বুদ্ধদেবের গল্পে প্রতিবার তাই মিলেমিশে একাকার হয়েছে, প্রেম ও মনস্তত্ত্ব। এই দুই যে পরস্পরের পরিপূরক, তা পাঠকদের ভাবতে শিখিয়েছেন বুদ্ধদেব বসু। 'রজনী কেন উতলা', 'রেখাচিত্র', 'আমরা তিনজন', 'অভিনয় নয়', 'এমিলিয়ার প্রেম', 'জয়জয়ন্তী', 'প্রেমপত্র' 'তুলসীগন্ধ' – এই সমস্ত গল্পে প্রেমজ সম্পর্কের সমীকরণ ভিন্ন। চরিত্র স্বতন্ত্র, স্বতঃস্ফূর্ত। গল্প প্রবাহের ধারা বাস্তবের সাথে তাল মেলানো৷ কিছুক্ষেত্রে কাব্যময়। অথচ, কী অপরূপ বৈচিত্র‍্য!

 

চরিত্র চিত্রণে দক্ষ ঔপন্যাসিক 'বুদ্ধদেব বসু'


কল্লোল পত্রিকাকে অবলম্বন করে যারা নতুন ঢঙে সাহিত্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব বুদ্ধদেব বসু। নতুন যুগের আবেগকে কাজে লাগিয়ে বুদ্ধদেব উপন্যাস লেখা শুরু করেন। বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসগুলিকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব (১৯২৮-১৯৪৪ খ্রীষ্টাব্দ) ও দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৫-১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দ)। এই দুই পর্বের মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়৷ প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে চরিত্রগুলির স্বাভাবিক জীবনযাপন ও স্বভাব-চিন্তনে পরিবর্তন দেখা যায়।

বুদ্ধদেবের উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণিতে এদের ফেলা যায়। বিশুদ্ধ প্রেমের উপন্যাস; যেদিন ফুটলো কমল, আমার বন্ধু, পারিবারিক, অকর্মণ্য। দাম্পত্য জীবন ও বিবাহোত্তর প্রেমের উপন্যাস; লাল মেঘ, কালো হাওয়া, চৌরঙ্গী। আত্মমুখী স্বপ্নাবিষ্ট রোমান্টিক উপন্যাস; সাড়া, বাড়িবদল, সূর্যমুখী, পরস্পর, এলোমেলো, রডোডেনড্রন গুচ্ছ। চেতনামূলক উপন্যাস; হাওয়া বদল, নির্জন স্বাক্ষর। মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস; অদর্শনা, বাসর ঘর। প্রেমের উপন্যাস; তিথিডোর, বিশাখা, মনের মতো মেয়ে।

বুদ্ধদেব বসুর প্রথম উপন্যাস 'সাড়া' (১৯২৮)।  মাত্র কুড়ি বছর বয়সে লেখা এই উপন্যাস সমাজে সত্যিকারের সাড়া ফেলে দেয়। অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয় লেখক৷ এখানে মূলতঃ 'প্রথাগত সামাজিক বিয়ের তুলনায় যৌবন তরঙ্গে উদ্বেলিত নরনারীর সম্পর্কের চিত্র অঙ্কন করেছেন।'

'রডোডেনড্রন গুচ্ছ' উপন্যাসে চরিত্রগুলি একে অপরকে গল্প বলে। পরস্পরকে ভালোবাসে৷ প্রত্যেকটা চরিত্রই স্বাধীন। বাস্তব জ্ঞানহীন মৃণালিণী ভালোবাসে সন্ন্যাসীকে। অন্যদিকে নীলিমাকে ভালোবাসে কবি পুরন্দর সেন। গল্পের শেষে বিবাহের দৃশ্য নেই৷ আছে পুরুষ অপেক্ষা নারী চরিত্রের সাবলীলতা।

'ধূসর গোধূলি' উপন্যাসে অপর্ণা ও কল্যাণকুমারের প্রেমের শুরু থেকে নীলকন্ঠের নজর থাকলেও শেষ অবধি কোনও সুরাহা হয়নি। এই উপন্যাসে কল্যাণকুমার এক অনন্য চরিত্র।

'লাল মেঘ' উপন্যাসে সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের দ্বন্দ্ব সুস্পষ্ট। অবিনাশ সন্ধ্যামণির সাথে সুখী হতে পারেনি। গোটা বিশ্বসংসারে সে একান্ত অসহায়। বুদ্ধদেব লিখেছেনঃ "নিজেকে নিজের বাহিরে ছড়িয়ে দিতে পারেনি। আর তাই অন্যের সংস্পর্শে একটু অস্বস্তি ভাব তার কাটেনি এখনও।"

'তিথিডোর' উপন্যাসটি রচিত হয় ১৯৪৯ সালে। কলকাতার মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল বাঙালি পরিবারের গল্প। স্বাতী এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাকে ঘিরে গল্প। অত্যন্ত সংযমী চরিত্র। ঘরোয়া উপন্যাসের জগতে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলা চলে।

বুদ্ধদেবের উপন্যাসের সংলাপ ছিল ছকভাঙা। উপন্যাসের নায়ক-নায়িকাদের অধিকাংশই ছিল কবি-সাহিত্যিক। কল্লোলীয় ভাবধারার প্রদর্শক৷ শব্দ-বর্ণ-অর্থের ভারসাম্য ছিল যথার্থ। লেখনীর রূপরীতিতে আভা পড়েছিল পাশ্চাত্য লেখকদের৷ ভার্জিনিয়া উলফ, ম্যাসম্যানের প্রভাব বিশেষভাবে দেখা যায়। গল্পে মধ্যবিত্ত মানুষের ক্ষমতা লাভের পর চরিত্রের পরিবর্তনের দিকটিও বুদ্ধদেব সামনে এনেছেন। এছাড়া, প্রেম ও কামনা ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত থেকে বিভিন্ন প্লটে। কিছুক্ষেত্রে দেখা গেছে উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্র অন্তঃসারশূন্য। বলা বাহুল্য, বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসের চরিত্ররা প্রেমকেই বড় করে দেখেছে, সমাজকে নয়। বাস্তবমুখী জীবন চেতনায় একে একে  উল্টোস্রোতে হেঁটেছে। এমনকি, রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করতে গিয়েও শিল্পচেতনায় আঘাত আসেনি। মনুষ্যত্বের সার্বিক প্রকাশকে বারংবার নয়া নয়া মোড়কে, উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্যে তুলে ধরেছেন বুদ্ধদেব বসু।

 

রবীন্দ্র-বুদ্ধ বিতর্কের সত্য-মিথ্যা


'শনিবারের চিঠি'-তে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য ঘিরে পালটা চিঠি লিখেছিল বুদ্ধদেব বসু। তারপর থেকেই নানা পত্রিকা বিশ্বখ্যাত রবিঠাকুরের প্রতি উঠতি লেখকের দ্রোহের মনোভাব ব্যক্ত করতে উঠেপড়ে লাগল। অথচ, অন্যদিকে 'ফেভারিট অথারস'-এ বুদ্ধদেব তখনও রবীন্দ্রনাথের নামই লেখেন। বিয়ের পর স্ত্রী-কে সাথে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ নিতে যান সদ্য বিবাহিত বছর পঁচিশের যুবক। একইসময়, রবীন্দ্রনাথ সম্পাদিত ‘বাংলা কাব্য-পরিচয়’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বুদ্ধদেব। আবার ঘুরেফিরে দেখা যায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ উৎসর্গও করা হল রবীন্দ্রনাথকেই! দৈনিক পত্রিকায় বুদ্ধদেবের প্রবন্ধ, করিমগঞ্জের ‘পল্লীবাণী’তে বক্তব্য খানিকটা অন্যায়ভাবে উস্কে দিল রবীন্দ্র-বিরোধিতা। বুদ্ধদেবও অবশ্য সোচ্চারে জানাতে পারেন, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক আদর্শ বর্তমান সময়ে সার্থক নয়। পাশাপাশি, এও বললেন, ‘আমাদের মাতৃভাষাই তাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি।... চিরকালের বাঙালি লেখক এই অর্থে রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারী’। রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বক্তৃতা দেওয়া, অজস্র প্রবন্ধ লেখা, ‘কবিতা’ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা— রবীন্দ্র-অনুরাগেরই পরিচায়ক। বুদ্ধদেবের রবীন্দ্রনাথ কেবল বুদ্ধদেবের, অত্যন্ত নিজস্ব কিছু!

শেষের দিকে, ধীরে ধীরে যখন বার্ধক্য গ্রাস করছে রবীন্দ্রনাথকে, এমনসময় বুদ্ধদেব গেলেন দেখা করতে। দেখলেন দক্ষিণের ঢাকা বারান্দায় সাদা জামা গায়ে দিয়ে বসে আছেন কবি। পাশে থালায় সাজানো বেলফুল। এক ঘণ্টার উপরে কথা বললেন কবি। এই এক-একটি সাক্ষাতের সমাপ্তি আসলে প্রতিবারই এক-একটি সুস্বপ্নভঙ্গের মতো। মানুষটি চলে গেলেন ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে। 'তিথিডোর' উপন্যাসে লিখলেন শেষ দিনটার কথা। লিখলেন নিজের স্বরটুকু রেখে যেতে।

 

'যেতে নাহি দিব'


"যদি আমিও ম’রে থাকতে পারতুম—
যদি পারতুম একেবারে শূন্য হ’য়ে যেতে,
ডুবে যেতে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে–
তবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে ম’রে যেতে হ’তো না"

ভালবাসায় আঘাত ও বন্ধুবিচ্ছেদ-সহ নানা কারণে নিজেকে নিরবচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গতায় ডুবিয়ে রাখছিলেন বুদ্ধদেব নিজেই। চোখের সামনে অসুস্থ স্ত্রী। চিঠিপত্র আসে তখনও ঢাকা থেকে। কবির চোখে ছানি। হাতের লেখা জড়িয়ে গেল। একদিন ছাদের 'পরে চটির আওয়াজ থেমে গেল। নিষ্পলক চোখ দুটি চেয়ে রইল শূন্যের দিকে। ১৯৭৪ সাল। ১৮ মার্চের সন্ধ্যা। শৌচাগারের বাঁ পাশের দেওয়ালে বইয়ের তাকে হেলান দিয়ে আছেন বুদ্ধদেব। সেরিব্রাল অ্যাটাক। রাত তিনটের সময় তিনি চিরনিদ্রায় ডুবে গেলেন। থেকে গেল প্রতিভা, শুদ্ধশীল, অন্যান্যরা। পড়ে রইল লেখার টেবিলে কিছু অসমাপ্ত লেখা। রয়ে গেল বাংলা সাহিত্যের সমুদ্রে তার লেখা কয়েকটি উপন্যাস, গল্প, কবিতা। রয়ে গেল অনুবাদ। রয়ে গেল যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ। রয়ে গেল আমাদের মতো কতশত পাঠক! এইসব কিছুর মধ্যে থেকে গেলেন বুদ্ধদেব– 'সব পেয়েছির দেশে'।

 

তথ্যসূত্রঃ

(১) কল্লোলের কাল – জীবেন্দ্র সিংহ রায়
(২) কল্লোল যুগ – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
(৩) গল্প সংকলন – বুদ্ধদেব বসু
(৪) জীবনের জলছবি – প্রতিভা বসু
(৫) বুদ্ধদেব বসু ও সারস্বত গোষ্ঠী – মীনাক্ষী দত্ত
(৬) আনন্দবাজার পত্রিকা
(৭) বুদ্ধদেব বসু রচনাবলী