জুয়াড়ি : দস্তয়েভস্কির জীবনের একটি অধ্যায়

তিনি এক দ্বিখণ্ডিত সত্তার মানুষ। প্রাণশক্তিতে ভরপুর, ক্ষুরধার বুদ্ধি এবং বিরল প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটির জীবন ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিল দুই বিপরীত শক্তির কাছে। মন্দ-ভালো, পুণ্য-পাপ, আলো- অন্ধকার, শরণাগত- বিদ্রোহী এমনই সব বিপ্রতীপ সত্তার সংঘাতে পেন্ডুলামের মতো আমরণ দুলেছেন তিনি। জীবনযন্ত্রণার প্রচণ্ড দাহে নির্মমভাবে পুড়েছেন। জ্বলেছেন দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের আগুনে। সেই আগুনের আলোয় তাঁর সামনে উদ্ভাসিত হয়েছে মানবজীবনের গভীর ও নিগূঢ় রহস্য। প্রথম উপন্যাস লিখেই পৌঁছে গিয়েছিলেন খ্যাতির তুঙ্গে। অচিরেই সেই খ্যাতি ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। জীবনে নেমে এসেছে অভিশাপ। রাজদ্রোহের অপরাধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। মৃত্যুমঞ্চ থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে বেঁচে নির্বাসিত হয়েছেন সাইবেরিয়ার হিমশীতল মৃত্যুপুরীতে। দেহের ক্ষুধায় ব্যাকুল, হৃদয়ের পিপাসায় জর্জরিত এই মানুষই জুয়া খেলার নেশায় মেতে থেকেছেন দীর্ঘদিন। নিঃস্ব হয়ে ঋণে ডুবে গিয়েছেন আকন্ঠ। উনবিংশ শতকে পাশ্চাত্যকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে তাঁরই কীর্তি। তাঁকে বলা হয় পৃথিবীর লেখকদের লেখক। তিনি ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়েভস্কি।

১৮২১ সালের ১১ নভেম্বর মস্কোয় দস্তয়েভস্কির জন্ম। প্রবলভাবে অগোছালো, ছন্নছাড়া এক পরিবেশে তাঁর বেড়ে ওঠা। তাঁর ডাক্তার বাবা ছিলেন কৃপণ ও রক্ষণশীল। কৈশোরে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মাকে হারান দস্তয়েভস্কি। ১৮৩৭ সালে বাবার ইচ্ছেয় পিতাসবুর্গে এসেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। পরিবারের কঠোর অনুশাসনে বড় হওয়া দস্তয়েভস্কি মুখ ফুটে বলতে পারেন নি, তিনি ইঞ্জিনিয়ার হতে অনিচ্ছুক। অঙ্ক-জ্যামিতি-ড্রয়িং-ডিজাইন তাঁর ভালো লাগত না। মন পড়ে থাকত কবিতা অথবা নাটকে। সেই সময়ে একদিন ঘটনাচক্রে রাশিয়ান তরুণ রোম্যান্টিক কবি শিদলফস্কির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। মানুষটি দস্তয়েভস্কির উপর প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছিল।  দস্তয়েভস্কি বারবার তাঁর কাছে ছুটে গিয়েছেন।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ হবার আগেই দস্তয়েভস্কির বাবার মৃত্যু হয়। তার বোনের বিয়ে হয় চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তির সঙ্গে। বোনের স্বামী তখন তাদের বিষয় আশয় দেখাশোনা করত। প্রয়োজনের টাকা পাঠাত। সেই সময় বেহিসাবি দস্তয়েভস্কি জলের মতো টাকা খরচ করেছেন। পরে ১৮৪৩ সাল নাগাদ লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হয়ে ডর্মেটরি ছেড়ে ফ্ল্যাটে উঠে আসেন। কাজের ফাঁকে গোগ্রাসে পড়তে শুরু করেন ফরাসী সাহিত্য। রুশ সাহিত্যের পাঠক সংখ্যা তখন ক্রমবর্ধমান। নিত্য নতুন সাহিত্য পত্রিকা বের হয় রাশিয়ায়। শুধু মৌলিক নয়, অনুবাদ সাহিত্যের জন্য মানুষ স্বচ্ছন্দে পয়সা খরচ করে। ইয়োরোপের নাম করা লেখকদের লেখা অনুবাদ হয়। দস্তয়েভস্কি স্বপ্ন দেখেন রাতারাতি লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করার। তিনি ধনীও হতে চান। সেই স্বপ্ন নিয়ে প্রকাশনার ব্যবসায় নেমে পড়েন। অচিরেই স্বপ্নের দুনিয়া থেকে তাঁর পতন ঘটে বাস্তবের মাটিতে। তিনি মূলধন তো খোয়ানই, সঙ্গে ঋণের বোঝা ঘাড়ে তোলেন। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাইনাল পরীক্ষা বা চাকরিতে তাঁর মন বসে না। পশ্চিমী সাহিত্য অনুবাদে মন দিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দেন। বছর খানেক পরে অনুবাদ ছেড়ে মৌলিক রচনায় হাত দেন। লেখেন ‘অভাজন’। সেই লেখা বই হয়ে বের হয় ১৮৪৬ সালে। এই বই তাকে রাতারাতি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। চারিপাশে বন্ধু ও স্তাবকেরা ভিড় করে। পিতাসবুর্গে সমস্ত অভিজাত বাড়ির দরজা তাঁর জন্যে হাট হয়ে খুলে যায়। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে এমন খ্যাতিতে মাথা ঘুরে যায় তাঁর। জীবন হয় উশৃঙ্খল। এরপর প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রচুর নিন্দা হয় বইটির। হতাশা ও নৈরাশ্য গ্রাস করে দস্তয়েভস্কিকে।

এরপরই তাঁর জীবনে আসে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকবদল। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে দস্তয়েভস্কির জীবনে। রাশিয়ার জারতন্ত্র মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নকে শৃঙ্খলিত করে রেখেছিল। মাঝে মাঝেই সেখানকার মানুষের বুকের ভেতর মুক্তিপিপাসা জেগে উঠত। সঙ্গে সঙ্গে তা কঠোর হাতে দমন করতেন জার সম্রাট প্রথম নিকোলাই। তবুও ১৮৪৮এ ফরাসী বিপ্লবের সাফল্য নিকোলাইয়ের ঘুম ছুটিয়ে দিল। রুশ বুদ্ধিজীবীরা কেউ কেউ চায়ছিলেন একটা উদারপন্থী চিন্তাধারার প্রবর্তন হোক। দস্তয়েভস্কিও সেই দলে ভিড়েছিলেন। তিনি তর্কে যোগ দিতেন। গোপন ছাপখানা থেকে প্রচারপত্র ছাপিয়ে কৃষক-মজুর-বেকারদের মধ্যে বিলি করতেন। ফলে ১৮৪৯ এর এপ্রিল মাসে তিনি গ্রেফতার হলেন। আট মাস একটি নির্জন দুর্গে বন্দি থাকার পর তাঁর মৃত্যুদন্ডের আদেশ হল। ফায়ারিং স্কোয়াডের মঞ্চ থেকে বেঁচে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে গেলেন।

শাস্তির শেষ বছর দস্তয়েভস্কিকে পাঠানো হয়েছিল সেমিপালাতিনস্কে। সাইবেরিয়ার পদাতিক বাহিনীর সাধারণ সৈনিকের জীবন যাপন করতে পারতেন তখন। হাজারটা নিয়ম শৃঙ্খলা বা পরাধীনতা থাকলেও জেলের অমানুষিক যন্ত্রণা অনেকটা লাঘব হয়েছিল। সেই শহরেই একদিন ইয়াসেফ নামে একজন মদ্যপকে একটা নোংরা বস্তি থেকে তুলে বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে পরিচয় হল তার স্ত্রী মারিয়া ইসায়েভার সঙ্গে। যদিও এর আগে এক রমনী এসেছিল দস্তয়েভস্কির জীবনে তবুও তাঁর মনে হল মারিয়ার জন্যেই নিয়তি তাঁকে সেমিপালাতিনস্কে নিয়ে এসেছে। শুধু রূপ নয় মারিয়ার মধ্যে বিদ্যাও ছিল। শিল্প সাহিত্যের আলোচনায় সে অনায়াসে যোগ দিতে পারত। তার যুক্তির ধার অথবা মধুর কন্ঠস্বর সহজেই শ্রোতাদের মনে প্রভাব বিস্তার করত। মারিয়ার ভালোবাসার জন্যে দস্তয়েভস্কি অচিরেই পাগল হয়ে উঠলেন।

অন্য দিকে মারিয়ার মন দস্তয়েভস্কির জন্যে সমব্যথায় ভরে উঠেছিল। তার অনুভূতি ছিল একজন লাঞ্ছিতের প্রতি সহানুভূতি। অবশ্য পরের দিকে তার সামান্য মিষ্টি কথা, কটাক্ষ অথবা তুচ্ছ কোনও সমবেদনায় দস্তয়েভস্কির চোখে ফুটে ওঠা সুখে তার একটা তৃপ্তি হত। ক্রমে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হল।  সাত বছরের শিশু সন্তানের ভার, সংসারে আর্থিক অনটন এবং নিঃসঙ্গতা সবকিছুতেই মারিয়ার সঙ্গী হয়ে উঠলেন দস্তয়েভস্কি। মারিয়াও তাঁকে একঘেয়েমির পাকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিল। তবে দস্তয়েভস্কি নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করলেও মারিয়া ছিল দ্বিধাগ্রস্ত। তার অন্যতম কারণ, সে যা কিছু করেছিল তার পেছনে ছিল তার স্বামীর প্রতি অভিমান ও অসন্তোষ। উপরন্তু সে চতুর। স্বামীসুখ না থাকলেও তাকে সে ছাড়তে চায় নি। দস্তয়েভস্কি যে একজন পুরাতন কয়েদী, তাঁর প্রতিপত্তি বা সম্মানহীনতার কথা মারিয়া ভোলে নি। ‘অভাজন’ পড়ার পরও তাঁর সাহিত্যিক সাফল্য সম্পর্কেও আশা ছিল না মারিয়ার মনে। কেবলমাত্র মনের গুরুভার লাঘব করার জন্য তার দস্তয়েভস্কিকে প্রয়োজন হয়েছিল।

মারিয়ার আর্থিক সুরাহার জন্য বন্ধু ভ্রাঙ্গেলের কাছে সুপারিশ করে তার স্বামীর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন দস্তয়েভস্কি। সেই চাকরির সূত্রে মারিয়া চলে গেল দূরে। অন্য শহরে। দস্তয়েভস্কির কাছে সেমিপালাতিনস্ক হয়ে গেল মরুভূমি। আবার লিখতে চাইলেন তিনি। কিন্তু মাথার উপর সেন্সরশিপের খাঁড়া ঝুলছে। সেই সময়ে ‘মৃত্যুপুরীর স্মৃতি’ একটু একটু করে রোজনামচার মতো লিখতে শুরু করেন। মারিয়াকে চিঠি লেখেন সাবধানে। মনের আকুলতা চেপে রাখেন পাছে সে চিঠি ইয়াসেফ দেখে নেয়। তবে আবেগেকে বেশিদিন চেপে রাখা সম্ভব হয় না তাঁর পক্ষে। এক মুহূর্তের জন্যে তাঁর স্বস্তি নেই, আনন্দ নেই।

এমন সময় মারিয়ার চিঠি বয়ে আনে তার স্বামীর মৃত্যু সংবাদ। সেটা ১৮৫৫ সাল। মারিয়ার বিপদ আন্দাজ করে দস্তয়েভস্কি টাকা পাঠিয়ে দিলেন। আবার মনে মনে যেন নিশ্চিন্তও হলেন। কিছুদিন বাদে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন মারিয়ার কাছে। সুখের গৃহকোণ, পারিবারিক জীবনের আরাম তাঁর কাছে একান্ত প্রার্থনার বস্তু। তাছাড়া পিতাসবুর্গের রাজনৈতিক আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানেই ফিরতে চান তিনি।

মারিয়া দস্তয়েভস্কির প্রস্তাবে সাড়া দিল না। দস্তয়েভস্কির ‘ভদ্রলোকের মর্যাদা’ হারিয়ে গিয়েছে সাইবেরিয়ার জেলে যাওয়ার সময়ই। তার উপর তিনি নজরবন্দি। পিতাসবুর্গে ফিরে গেলেও তাঁর ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত এ কথা ভুলে গেল না মারিয়া। একজন যুবক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াল সে। দস্তয়েভস্কিকে জানাল তাকেই বিয়ে করবে। তবুও দীর্ঘ টানাপড়েনের শেষে মারিয়ার সঙ্গে দস্তয়েভস্কির বিয়ে হয়। মারিয়ার ছেলে পাশাকে একটি বোর্ডিং স্কুলে ভরতি করে দেন দস্তয়েভস্কি। ফিরে আসেন পিতাসবুর্গে।

সময়টা ১৮৫৯ এর ডিসেম্বর মাস। ততদিনে রাশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে হেরে গিয়েছে রাশিয়া। প্রথম নিকোলাইয়ের রাজত্ব শেষ হয়েছে। পরিবর্তন ঘটেছে সামাজিক ভাবাদর্শেও। পিতাসবুর্গের মাটিতে পা রেখেই দস্তয়েভস্কি অনুভব করলেন ‘অভাজনে’র লেখক অথবা নির্বাসিত বিপ্লবীকে কেউ মনে রাখে নি। তিনি স্থির করলেন এমন অখ্যাত অবজ্ঞাত হয়ে তিনি থাকবেন না। রাশিয়ার মন জয় করবেনই।

দাদা মিখাইল, সিগার ও সিগারেট তৈরির ব্যবসায় বেশ উন্নতি করেছে তখন। ‘ভ্রেমিয়া’ (সময়) নামে পিতাসবুর্গ থেকে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতে লাগল মিখাইল। দস্তয়েভস্কিই হল পত্রিকার সর্বেসর্বা। কাজেই সরকারের শ্যেন দৃষ্টি থাকল কাগজটির উপর। ‘ভ্রেমিয়া’তে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল ‘অপমানিত ও লাঞ্ছিত’। মারিয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে যে সুখের হয় নি। সেই কাহিনি ফুটে উঠেছে কাহিনিতে।  

বিয়ের পর থেকেই মারিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়। তখন পত্রিকার সূত্রেই মেয়েদের সঙ্গে যথেচ্ছ মেলামেশা করতে লাগলেন দস্তয়েভস্কি। তাঁর অভিজ্ঞতার খনি এতে পরিপূর্ণ হয়েছিল। মারিয়ার সঙ্গে প্রেম থেকে বিয়ে পর্ব পর্যন্ত তাঁর উপলব্ধি তাকে এক পরম সত্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। যৌনতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা যন্ত্রণাকে তিনি নিজের জীবন দিয়ে জেনেছিলেন।  ভালোবাসার সঙ্গে কষ্টের যে নিবিড় বন্ধন তা মর্মে মর্মে বুঝেছিলেন। তাই তাঁর লেখাগুলিও দ্বন্দ্বে ও জটিলতায় ভরা।

সেই সময় পলিনা নামে একটি তরুণীর সঙ্গে দস্তয়েভস্কি সম্পর্কে লিপ্ত হন। অন্যদিকে তাঁর সংসারে আর্থিক টানাটানি চলে। মারিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। ‘মৃত্যুপুরীর স্মৃতি’ বই আকারে ছাপা হতেই প্রকাশকের কাছে আড়াই হাজার রুবল পেয়ে ইয়োরোপ বেড়াতে চলে যান দস্তয়েভস্কি। পলিনার সঙ্গে সম্পর্কেও তখন হাজার জটিলতা। পলিনাকে ভুলতেই নাকি তিনি ইয়োরোপ যান। অথচ পলিনা ভেবেছিল তাকে সঙ্গে নিয়েই যাবেন দস্তয়েভস্কি। মারিয়া ভেবেছিল অনেক দিন পর সে অর্থের মুখ দেখবে। কিন্তু দস্তয়েভস্কি একা একা ইয়োরোপে গেলেন। কারও কারও মতে, একসঙ্গে একগোছা টাকা পেয়ে তাঁর কলেজ জীবন থেকে লালিত জুয়ার নেশা চরিতার্থ করতে তিনি চেপে বসেছিলেন রাশিয়া থেকে জার্মানির রাজধানী পর্যন্ত পাতা রেলে। সাধ মিটিয়ে জুয়া খেলবেন বলে টাকা নিয়ে কারও সামনে দাঁড়ান নি। যে দাদা সর্বস্ব পণ করে কাগজ দাঁড় করিয়েছিল তাঁর সামনে না, মারিয়ার সামনেও না। জার্মানিতে পৌঁছে হোটেলে ব্যাগ রেখে সোজা চলে গিয়েছিলেন রুলেত টেবিলে। দেড় মাসের মধ্যেই সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরে এসেছিলেন। তার বিবরণ তিনি লিখেছেন ‘শীতের দিনে বসে গ্রীস্মের স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে।

জার্মানি থেকে ফেরার সময় নানা জায়গা ঘুরে গিয়েছিলেন লন্ডন। সেখানে নির্বাসিত রুশ-বিপ্লবী হেরজেনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আট দিন পর গিয়েছিলেন পারী। সেখান থেকে জেনিভা ও ইতালির তুরিন হয়ে আপন দেশে। সংক্ষিপ্ত এই ভ্রমণে তার অভিজ্ঞতা ও চিন্তার জগত সমৃদ্ধ হয়েছিল যার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলিতে।

পলিনা দস্তয়েভস্কির বুদ্ধির দীপ্তির সামনে নতজানু ছিল। কিন্তু দস্তয়েভস্কির দেহের ক্ষুধা এবং যৌন বিকৃতি তাকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। ১৮৬৩ সালে পলিনা চলে গিয়েছিল পারী। তারপরই ‘ভ্রেমিয়া’ পড়েছিল রাজরোষে। তার প্রকাশ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। সেই সময় মারিয়াও অসুস্থ। তাও পত্রিকার অফিস বন্ধ করে কয়েক মাস বাদে বইয়ের সিকিউরিটি বাবদ টাকা জোগাড় করে পারী রওনা দিয়েছিলেন দস্তয়েভস্কি। গিয়ে জেনেছিলেন পলিনার কাছে বয়সে দ্বিগুণ অসুস্থ একজন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল লজ্জার। পলিনা সেখানে একজন ডাক্তারীর ছাত্রের প্রেমে পড়েছে।

পিতাসবুর্গে ফিরে এলেন দস্তয়েভস্কি। দেখলেন এর মধ্যে মারিয়ার ছেলে পাশা লায়েক হয়ে উঠেছে। কিভাবে সৎ বাবার টাকা আত্মসাৎ করতে হয়, ভোগ বিলাসে জীবন কাটাতে হয় এসবে পটু হয়ে উঠেছে। ১৮৬৪সালে মারিয়া মারা যায়। দস্তয়েভস্কির জীবনে নেমে আসে শূন্যতা। তিনি স্থির করেন রাশিয়া থেকে দূরে চলে যাবনে। মাস খানেক যেতে তাঁর মনের ভার হালকা হয়। তখনই আবার আঘাত নেমে আসে।   দাদা মিখাইল মারা যায়। দাদার স্ত্রী, চার সন্তান ছাড়াও তাঁর একজন রক্ষিতা ও তাঁর ছেলের ভার নিতে হয় দস্তয়েভস্কিকে। দাদার যাবতীয় ঋণের বোঝাও চাপে তাঁর মাথায়। তেরো বছর ধরে সেই ঋণ শোধ করেছিলেন দস্তয়েভস্কি। চাইলে হয়ত দায় এড়াতে পারতেন কিন্তু বিবেকের তাড়নায় তা পারলেন না।

‘এপোখা’ নামের পত্রিকাটি নিয়ে তখন কাজ করে চলেছেন। এমন সময় তাঁর নিজের শরীর অসুস্থ হল। মৃগী তো ছিলই তার সঙ্গে যোগ হল অর্শ ও আমাশা। ‘এপোখা’র অচলাবস্থা, আর্থিক দৈন্য, পাওনাদারদের হুমকি এবং অসুস্থতা থেকে তিনি মুক্তি পেতে চাইছিলেন। আবার পালাতে চায়ছিলেন ইয়োরোপে। তাঁর ধারণা ছিল ইয়োরোপে গেলে তার মৃগীর প্রকোপ কমবে। তাছাড়া ছিল জুয়া খেলার নেশা। নতুন নতুন মানুষ ও আনকোরা অভিজ্ঞতা অর্জনের লোভও ছিল। কিন্তু ইয়োরোপে যাবার মতো অর্থ তাঁর কাছে ছিল না। সেই অর্থের সুরাহা করতে রাজী হলেছিল এক ধনী প্রকাশক। স্তেলফস্কি। ১৮৬৫এর জুলাইয়ে তিন হাজার রুবল দিয়েছিলেন দস্তয়েভস্কিকে। স্ট্যাম্প পেপারে লিখিয়ে নিয়েছিলেন ১৮৬৬ র পয়লা নভেম্বরের মধ্যে নতুন উপন্যাস লিখে দিতে হবে। অন্যথায় অতীতে যত লেখা তিনি লিখেছেন বা ভবিষ্যতে যা লিখবেন সমস্ত লেখার আইন সম্মত প্রকাশক হবেন স্তেলফস্কি এবং সেই বাবদ আর কোনও রয়্যালটি দস্তয়েভস্কি পাবেন না। দস্তয়েভস্কি খুশিতে লাফালেও তাঁর বন্ধুরা শর্ত শুনে শিউরে উঠেছিল। গোটা ভবিষ্যৎ বন্ধক দিয়ে দস্তয়েভস্কি ট্রেনে চেপে বসেছিলেন। সেই সময় যা কিছু ঘটেছিল তারই মধ্যে ছিল ‘পাপ ও শাস্তি’র প্লট।

আবার পিতাসবুর্গে ফিরে আসতেই তাঁর দাদার দুই সংসার তাকে অর্থের জন্যে চেপে ধরেছিল। পিতাসবুর্গ থেকে মস্কোয় চলে গিয়েছিলেন তিনি। মারিয়ার মৃত্যুর পর দুবছর কেটে গিয়েছে। তাঁর জীবনে প্রেমের জোয়ার শান্ত হয়েছে। ধর্ষকাম, মর্ষকাম অথবা শিশুকাম জাতীয় বিকৃতি থেকে যেন মুক্তি পেয়েছেন। আবার সংসার করার সাধ জেগেছে তাঁর মনে। এমন সময় তাঁর কাছে এক বন্ধু চিঠি আসে। তাঁকে মনে করানো হয় তাঁর সৃষ্টির সব মুনাফা যে একজন অসৎ প্রকাশক আত্মসাৎ করে নেবে।

‘পাপ ও শাস্তি’ র আইডিয়া তখন তাঁকে এমন আছন্ন করে রেখেছে যে আর কোনও প্লট তিনি গুছিয়ে আনতে পারছেন না। তখন তিন বন্ধু প্রস্তাব দেয়, একটি প্লট ভাবতে। তারপর সেই কাহিনিকে তিন ভাগ করে নিয়ে তিন বন্ধু লিখে দেবে। দস্তয়েভস্কি নাম সই করে দেবে। সে প্রস্তাব ফলপ্রসূ না হতে মাইকফ নামের এক বন্ধু বললেন ডিক্টেশন দিতে। শর্টহ্যান্ডে নোট নিয়ে অন্য কেউ লেখার কাজ করে দিক।

ঠিক সেই সময় সংসার চালানোর প্রবল তাড়নায় স্টেনোগ্রাফারের কাজ নিয়েছিলেন আন্না গ্রিগোরেভনা সনিৎকিনা নামে কুড়ি বছরের এক তরুণী। অত্যন্ত সাধারণ চেহারার মেয়েটি দস্তয়েভস্কির কাছে আসে ১৮৬৬ সালের ৪ঠা অক্টোবর। সে ছিল দস্তয়েভস্কির অন্ধ ভক্ত। দস্তয়েভস্কির লেখা পড়তে বসলে আন্নার দিনরাতের হিসেব থাকত না। দস্তয়েভস্কির সান্নিধ্যে আসার প্রবল বাসনা থাকলেও প্রচন্ড অস্থির দস্তয়েভস্কিকে দেখে আন্নার মনে হয়েছিল, এর সঙ্গে কেউ কাজ করতে পারবে না। প্রথম সাক্ষাতে তেমন কোনও কাজের কথা না বলেই তাঁকে পরবর্তী সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়।

স্টেনো দিয়ে লেখানো দস্তয়েভস্কির জীবনে প্রথম তার উপর হাতে গোনা কয়েকদিনের মধ্যে উপন্যাস লিখে শেষ করতে হবে। জুয়াড়ি দস্তয়েভস্কি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, তিনি হারবেন না। তাঁর ভবিষ্যৎ কিছুতেই স্তেলফস্কিকে কিনে নিতে দেবেন না।

সেই দিনই পরবর্তী সাক্ষাৎকারে আন্না দেখল, সেই দুশ্চিন্তা জর্জর মানুষটির অন্য রকম রূপ। তখনও কাহিনি মনের মধ্যে ঠিক ভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেন নি তাই গল্প করতে বসলেন আন্নার সঙ্গে। তার সম্পর্কে জানাতে চাইলেন। আবার নিজের কথাও বললেন। আন্না লক্ষ করল সাইবেরিয়ার স্মৃতির কথাগুলো হুবহু ‘মৃত্যুপুরীর স্মৃতি’র সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে হঠাত দস্তয়েভস্কি বলে উঠলেন, ডিক্টেশন নাও।

কথা বলার মাঝেই তিনি মনে মনে কাহিনিকে গুছিয়ে নিয়েছিলেন।

শুরু হয় ‘জুয়াড়ি’। ‘জুয়াড়ি’ শিরোনামের ঠিক নিচেই লেখা ‘জনৈক যুবকের ডায়েরি থেকে’। এ যুবক আর কেউ নন, স্বয়ং দস্তয়েভস্কি- এমনটাই মনে করেছেন সমালোচকরা। প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নতুন উপন্যাস জমা দেওয়ার তাগিদ থেকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নিজেরই যাপিত জীবনের একটি অধ্যায়কে। উত্তম পুরুষে লেখা উপন্যাসটির সেই জুয়াড়ির মতো এক এক দিন সব হেরে পরনের কোটটিও খুলে দিয়ে আসতেন দস্তয়েভস্কি। বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি ভাড়া কিংবা খাবারের পয়সাও থাকত না তাঁর। আবার ‘রুলেতেনবুর্গে চরম লোকসানের আগের’ কথা মনে করে দৃঢ়তা ফিরে পেতেন তিনি। সে রকমই তাঁর উপন্যাসের জুয়ারি চরিত্রটি বলছে, ‘সব, সব কিছু হেরেছিলাম সেদিন...কুরসাল থেকে বেরিয়ে আসছি হঠাৎ ওয়েস্টকোটের পকেটে কী যেন হাতে ঠেকল- একটা গুলডেন তখনো আছে। ভাবলাম, তাহলে আজকের খাবারের মতো পয়সাটা আছে! কিন্তু একশ পা এগোনোর পরই মত বদলালাম। ফিরে এলাম আবার। ... সত্যি বিদেশ বিভুঁইয়ে, একেবারে একলা, স্বদেশ-স্বজন থেকে বহুদূরে, জানি না সেদিন কী খাব, তবু পকেটের শেষ গুলডেনটি বাজি ধরা- এক অদ্ভুত অনুভূতি। জিতলাম আমি, কুড়ি মিনিট পরে কুরসাল থেকে বেরিয়ে এলাম পকেটে ১৭০ গুলডেন নিয়ে।’ এরপর লেখক বলছেন, ‘শেষ গুলডেনটাও মাঝেমধ্যে কী ঘটাতে পারে দেখ! ধরো যদি তখন ঘাবড়ে যেতাম, বাজি ধরার সাহস না করতাম, তাহলে...।’

জুয়াড়ি গল্পটি বলা হয়েছে অ্যালেক্সি ইভানোভিচের দৃষ্টিকোণ থেকে। জার্মান হোটেলের স্যুটে বসবাসরত রাশিয়ান একটি পরিবারের গল্প। পরিবারের প্রধান জেনারেল তার ঋণ পরিশোধের জন্য সম্পত্তি বন্ধক রেখেছে। তার ধনী কাকিমার অসুস্থতার খবর পেয়ে সে কাকিমার মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করছে। টেলিগ্রামের পর টেলিগ্রাম  করেছে মস্কোয়। সম্পত্তি পেলেই সে ঋণ শোধ করে মাদমায়াজল  ব্লাঁশকে বিয়ে করবে। অ্যালেক্সি প্রেমে পড়ে সেই জেনেরেলের ভাইঝি পলিনার। পলিনার কথা মতো সে প্রথম জুয়ার আড্ডায় বাজি ধরে। আবার একদিন পলিনার নির্দেশে ব্যারন ও ব্যারনেসের মতো অভিজাত দম্পত্তিকে অপমান করতে গিয়ে ঝামেলায় জড়ায়। সেই ঝামেলার জন্যে জেনারালেরের বাচ্চাদের গৃহশিক্ষকের চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়।  এমন সময় জেনারেলের সেই বৃদ্ধা কাকিমা এসে হাজির হন, যার মৃত্যুর অপেক্ষায় জেনারেল দিন গুনছিল। আলেক্সিকে নিয়ে তিনি জুয়া খেলতে যান।

সর্বস্ব হারিয়ে বৃদ্ধা ফিরে যান রাশিয়ায়। তাকে বিদায় দিয়ে এসে অ্যালেক্সি দেখে পলিনা তার জন্যে অপেক্ষা করছে। পলিনা জানায় যে দ্যা গ্রিয়ের উপপত্নী। তার মুখের উপর পঞ্চাশ হাজার ফ্রাঁ ছুঁড়ে দিতে চায় সে। এই শুনে এলেক্সি ক্যাসিনোতে যায় এবং কয়েক ঘন্টায় দুই লক্ষ ফ্রাঁ জিতে আসে। টাকা নিতে অস্বীকার করে পলিনা। অথচ উচ্ছ্বসিত হয়ে বার বার অ্যালেক্সিকে বলে ‘তুমি আমায় ভালবাস!...’ কথার মাঝেই সে মিস্টার অ্যাস্টলির কথা তোলে। পরদিন সকালে পঞ্চাশ হাজার ফ্রাঁ নিজেই তুলে নেয়। টাকাটা অ্যালিক্সির মুখের উপর ছুঁড়ে মারে। তারপর চলে যায় অ্যাস্টলির কাছে।

জেনারেল তাঁর উত্তরাধিকার পাবে না জেনে মাদমায়াজল ব্লাঁশ প্যারিসে ফিরে যায় এবং যাওয়ার সময় আলেক্সিকে সঙ্গে যেতে প্ররোচিত করে। প্রায় এক মাস তারা একসঙ্গে থাকে। আলেক্সির পয়সা মাদমায়াজল ব্লাঁশ ব্যক্তিগত গাড়ি ঘোড়ার জন্য ব্যয় করে। নিজেকে আর্থিক ভাবে সুরক্ষিত করে সামাজিক স্বীকৃতির জন্যে শেষ পর্যন্ত সে বিয়ে করে জেনারেলকেই।

অ্যালেক্সি বেঁচে থাকার জন্যে আবার জুয়া খেলতে শুরু করে। অনেকদিন পর একদিন হ্যামবার্গের একটি পার্কে বেঞ্চে তার সঙ্গে দেখা হয় অ্যাস্টলির। তার কাছেই অ্যালেক্সি জানতে পারে পলিনা সুইজারল্যান্ডে আছে এবং সে আসলে অ্যালেক্সিকেই ভালোবাসে।

মারিয়া বা পলিনা দুজনের সঙ্গেই বিচ্ছেদ ভাগ্য মেনে নিতে হয়েছিল দস্তয়েভস্কিকে। হয়ত সেই কারণেই ‘জুয়াড়ি’ উপন্যাসের শেষে দেখা যায় অ্যালেক্সি আরেকটা পুনর্জন্ম চাইছে। চাইছে আরেকটা পুনরুত্থান। ভাবছেন, ‘আরেকবার দেখিয়ে দিতে হবে ওদের...পলিনা দেখুক যে আমি এখনো মানুষ হয়ে ফিরতে পারি।’

উনত্রিশে অক্টোবর উপন্যাস শেষ হয়। ডিক্টেশন দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ক্লান্তি কাটাবার জন্যে আন্নার সঙ্গে দস্তয়েভস্কি গল্প করেছেন। সে গল্প তাঁর নিজের জীবনেরই কথা। এভাবেই তাঁর সব কথা আন্নার শোনা হয়ে গিয়েছিল। কেবল পলিনার কথাটুকু বাদ দিয়ে। সেই অকথিত বৃত্তান্তই যে তিনি বিবৃত করছেন উপন্যাসের আকারে সেকথা আন্নার কাছে চাপা থাকে নি। তেমনি চাপা থাকে নি সেই সময়ে দস্তয়েভস্কির আর্থিক অনটনের কথাও। তার সামনেই রুপোর চামচ বিক্রি করেছেন, চাইনিজ ভাস বন্ধক দিয়েছেন।

উপন্যাসটি শেষ হতে যখন আর অল্পই বাকি তখন দস্তয়েভস্কি আন্নাকে একদিন জিজ্ঞেস করলেন, এরপর ইয়োরোপে গিয়ে জুয়া খেলব নাকি আবার বিয়ে করে সংসার করব?

আন্না বলল, বিবাগি হওয়া অথবা জুয়াখেলা মোটেও কোনও কাজের কথা নয়।

৩০শে অক্টোবর পাণ্ডুলিপি নিয়ে হাজির হল আন্না। পরদিন পান্ডুলিপির সংশোধন করে তার পরদিন দস্তয়েভস্কি গেলেন স্তেলফস্কির অফিসে। প্রকাশককে তিনি বুঝিয়ে দিতে চান দস্তয়েভস্কিকে সারাজীবনের মতো কিনে নেওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু স্তেলফস্কি ছিলেন অন্য ধাতুতে তৈরি। এক সপ্তাহ আগে থেকেই তিনি পিতাসবুর্গ থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

মোটা ওভারকোটটা দস্তয়েভস্কি বন্ধক দিয়েছিলেন আগেই। তাই তুষারপাতের মধ্যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হেঁটে পৌঁছলেন স্তেলফস্কির অফিসে। জানতে পারলেন স্তেলফস্কি নেই। কোনও কর্মচারী পাণ্ডুলিপি রেখে রসিদ লিখে দিতে রাজী হল না। রাগে অন্ধ হয়ে পাগল কুকুরের মতো রাস্তা ধরে দিক্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটলেন। শেষে এক জায়গায় থামতে হল। রাস্তা দুইভাগ হয়ে গিয়েছে। সামনে থানা দেখে ঢুকে পড়লেন। পুলিশ পাণ্ডুলিপি রেখে রসিদ লিখে দিল। ভরসা দিল তারা দরকারে সাক্ষ্য দেবে।

পরে স্টেনোগ্রাফার আন্নাকে বিয়ে করেন দস্তয়েভস্কি। দস্তয়েভস্কির জীবনে আন্নার অবদান বিশাল। দেনার প্রচণ্ড বড় গর্ত থেকে স্বামীকে উঠিয়ে আনতে আন্না সমর্থ হয়েছিল। তার জন্যেই দস্তয়েভস্কি রুলেট নামক জুয়া থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিতে পেরেছিলেন।