দস্তয়েভস্কি ও তাঁর আখ্যান 'বঞ্চিত লাঞ্ছিত'

গোগোলের ভাবশিষ্য ফিয়োদর দস্তয়েভস্কিকে (১৮২১-১৮৮১)  রুশ সাহিত্যের নীলকণ্ঠ বলা হয়। জীবন-সমুদ্র মন্থনজাত বিষ নিজে পান করে  বিশ্ববাসীকে অকাতরে দান করে গেছেন অমৃত। অপরিসীম দুঃখকষ্ট, জ্বালাযন্ত্রণার অতল গহ্বরে ডুব দিয়ে তিনি তুলে এনেছেন কথাসাহিত্যের মণিমাণিক্য। হয়ে উঠেছেন ধ্বস্ত মানুষের দীর্ণ জীবনের রূপকার।


       অসংখ্য ট্রাজিক পরিণতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে  দস্তয়েভস্কি'র  জীবন। পিতা মিখাইল আন্দ্রেইয়েভিচ ছিলেন পেশায় একজন চিকিৎসক। প্রথম জীবনে তিনি পৌর দাতব্য চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা করতেন। পরবর্তীকালে নিজের চেষ্টায় একটি ছোটখাটো জমিদারির মালিক হন। তবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোপন স্বভাবের মানুষ। মা ছিলেন  ধর্মভীরু এবং কোমল প্রকৃতির। স্বামীর ভয়ংকর ঈর্ষাকাতর এবং সন্দেহবাতিক মানসিকতার জন্য প্রচন্ড কষ্টভোগ করে মাত্র তেত্তিরিশ বছর বয়সে মারা যান। ফিয়োদরের বয়স তখন মাত্র পনের বছর। মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নিদারুণ নির্যাতন এবং অত্যাচারের মধ্যে তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়। পিতার মদ্যপান এবং ব্যভিচারী জীবন ফিয়োদরকে আরো চরম দুর্দশার মধ্যে ফেলে দেয়। অনেকে মনে করেন "কারমাজ.ভের ভাইয়েরা"উপন্যাসের ভ্রষ্টাচারী জমিদারের চরিত্রটি বাবা মিখাইল আন্দ্রেইয়েভিচের ছায়া অবলম্বনে রচিত। মাত্র আঠারো বছর বয়স নিজের চোখের সামনে পিতাকে খুন হতে দেখেন ভূমিদাসদের হাতে। অকথ্য অত্যচারের প্রতিশোধ নিতেই ভূমিদাসরা মিখাইল আন্দ্রেইয়েভিচকে তাঁরই জমিদারিতে নৃশংসভাবে খুন করে। অনেকের অনুমান এই ভয়ংকর মানসিক অভিঘাতের ফলেই তিনি মারাত্মক মূর্ছারোগের শিকার হয়ে ছিলেন। যৌবনের শুরু থেকে শুরু হয় চরম অর্থ কষ্ট। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে বাবার ইচ্ছাতেই পেতের্বুর্গে (সেন্ট পিটার্সবার্গে) সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তাঁকে ভয়ংকর আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়তে হয়। শৈশব এবং যৌবনের নিদারুণ অভিজ্ঞতা সারা জীবন তাঁকে লেখার রসদ জুগিয়ে গেছে।

                   পড়াশোনা শেষ করে সরকারি অফিসে নকশা শিল্পীর কাজে যোগ দিলেও তাঁর মনে পড়ে থাকে সাহিত্য চর্চার অঙ্গনে। ফলে এক বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি পুরোপুরো সাহিত্যচর্চা মনোযোগ দেন। এই সময়ের মানসিক অবস্থার কথা লিখতে গিয়ে তিনি এক জায়গায় বলেছেন -

" নিজকে কবি বলে মনে হত, ইঞ্জিনিয়ার বলে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।"

১৮৪৫ থেকে ১৮৪৯ এই পাঁচ বছরে তিনি ছোটোবড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প - উপন্যাস লিখে ফেলেন।

উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে  - ১৮৪৬ এ প্রকাশিত পুওর ফোক (অভাজন) ও ডাবল। ১৮৪৭ এ প্রকাশিত ল্যান্ডলেডি। গল্পের মধ্যে রয়েছে মিস্টার প্রোখারচিন (১৮৪৬), নভেল ইন নাইন লেটারস (১৮৪৭), অ্যানাদার্স ম্যানস ওয়াইফ (১৮৪৮), এ জেলাস হাসবেন্ড (১৮৪৮), এ উইক হার্ট (১৮৪৮), পোলজুনকফ (১৮৪৮), অ্যান অনেস্ট থিফ (১৮৪৮), এ ক্রিস্টমাস ট্রি অ্যান্ড এ ওয়েডিং (১৮৪৮), হোয়াইট নাইটস (১৮৪৮), এ লিটল হিরো (১৮৪৯)।

সামাজিক বাস্তবতা এবং মনোবিকলেনর বিভিন্ন স্তরকে অত্যন্ত সাবলীলতায় উপস্থিত করে তিনি পাঠক ও বুদ্ধিজীবী মহলে অল্প সময়ে পরিচিতি লাভ করেন। বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এই সময় থেকে তিনি ফরাসি ও ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। বিপ্লবী গণতন্ত্রী সমালোচক বেলেন্ স্কির সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে আলাপ হয় রাজধানীর রাজনৈতিক বিপ্লবীদের সঙ্গে। ১৮৪৮ সালের কোনো একটা সময় থেকে তিনি বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী পেত্রাশেভস্কির প্রগতিশীল পাঠচক্রে যাতায়াত শুরু করেন। পরে পেত্রাশেভ্ স্কির জনৈক সহযোগী পরিচালিত গোপন বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করে নিষিদ্ধ সাহিত্য ছাপিয়ে মানুষের কাছে  পৌঁছে দেওয়ার কাজে উৎসাহিত হয়ে পড়েন। এক বছর এই কাজ করার পর ১৮৪৯ সালের এপ্রিল মাসে পেত্রাশেভ্ স্কির পাঠচক্রের অন্য ২১ জন সদস্যের সঙ্গে দস্তয়েভস্কি গ্রেপ্তার হন। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে তাঁকে পিটার - পল কারাদুর্গের নির্জন ঘরে আট মাস বন্দি করে রাখা হয়। বিচারে  অন্যদের সাথে তাঁকেও প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হয়। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর। হাড়কাঁপানো শীতের ভোরে  দস্তয়েভস্কিকে বধ্যভূতিতে উপস্থিত করা হয়। কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্ত্র পাঠ করিয়ে তাঁকে বন্দুকের সামনে দাঁড় করানো হয়। জীবন- মৃত্যুর  মাঝখানে মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধান। এই সময় জার প্রথম নিকোলাইয়ের দূত ঘোড়া ছুটিয়ে হাজির হয় ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে। জারের নির্দেশে সমস্ত বুদ্ধিজীবী রাজদ্রোহীদের মৃত্যুদন্ড রদ করে  সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়। দস্তয়েভস্কিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাইবেরিয়ার বন্দি শিবিরে। সেইদিন সন্ধ্যায় দাদা মিখাইলকে লেখা চিঠিতে তিনি লেখেন -

" আমি হতাশ হইনি, ভেঙে পড়িনি। জীবন সর্বত্রই জীবন, বাইরের নয়, আমাদের নিজেদের ভিতরের জীবন। আমার আশেপাশে মানুষজন থাকবে, মানুষের মাঝখানে মানুষ হয়ে থাকা, যত বড়ো সংকটই দেখা দিক না কেন, চিরকাল মানুষ হয়ে থাকা, হতাশ না হওয়া, ভেঙে না -পড়া -- এই হল জীবন, এ-ই হল জীবনের লক্ষ্য।" পরবর্তী কালে  সমস্ত লেখায় তাঁর এই জীবন অভিজ্ঞতা গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। চার বছর নির্বাসন দন্ড ভোগ করার পর ১৮৫৪ সালে দস্তয়েভস্কিকে পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক সৈনিকের চাকরিতে। ১৮৫৭ সালে তিনি ইসায়েভাকে বিয়ে করেন। ১৮৫৯ সালে তাঁর সৈনিক জীবন শেষ হয়। আবার তিনি সেন্ট পিটার্স বুর্গে পাকাপাকিভাবে বসবাসের অনুমতি পান।


    তবে শুধু দস্তয়েভস্কিই নয়, রুশ সাহিত্যে অসংখ্য প্রতিভাবান সাহিত্যিকের জীবনে নেমে এসেছে ট্রাজিক পরিণতি। বিখ্যাত রুশ কবি পুশকিন এবং ল্যেরমন্তভ দ্বন্দ্বযুদ্ধে অকালে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। কবি রিলেইয়েভকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হয়। বিপ্লবী ও চিন্তাবিদ চের্নিশ্যেভস্কিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দীর্ঘ কুড়ি বছর সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত করা হয়। নির্বাসন দন্ড ভোগ করতে হয়েছিল হের্ ৎসেন ও সাল্ তিকোভ্ শ্চেদ্রিনকেও। এছাড়াও সেই মধ্যযুগ থেকে সমকালের অসংখ্য কবি-সাহিত্যিককের ভাগ্যে জুটেছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও লাঞ্ছনা। সেদিক থেকে দেখলে দস্তয়েভস্কির ট্রাফিক জীবন কোনো ব্যতিক্রমী বিষয় নয়।


                   সামরিক জীবন থেকে ফিরে আসার পরে  দস্তয়েভস্কি নতুন উদ্যোমে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। ভাইয়ের সঙ্গে যৌথ  সম্পাদনায় প্রকাশ করেন "ভ্র্যেমিয়া" পত্রিকা।  পত্রিকার প্রথম সংখ্যায়   প্রকাশিত হয় " লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত" (১৮৬১)। এই উপন্যাসে সেন্ট পিটার্সবুর্গের বঞ্চিত- লাঞ্ছিত মানুষের বাস্তব জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে। নামকরণের মধ্যেই বিধৃত আছে সমগ্র উপন্যাসের বিষয়বস্তু।  প্রথম উপন্যাস "গরিব লোক" (১৮৪৫) - এ মানুষের আহত মর্যাদার প্রতি যে গভীর সহানুভূতি  জ্ঞাপন করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতার ফসল "লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত"। তবে আঙ্গিক ও পরিকল্পনার দিক থেকে এই উপন্যাস সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। উপন্যাসটি লেখা হয়েছে উত্তমপুরুষে। উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনাবলির সময়কাল ১৮৪৫ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত। আত্মজৈবনিকের আঙ্গিকে রচিত এই উপন্যাসে  কেন্দ্রীয় চরিত্র ইভান পেত্রোভিচ  একজন পেশাদার সাহিত্যিক। তিনি উপন্যাসে একই সাথে সমকালীন ঘটনায় অংশ নিচ্ছেন আবার অতীতের কথা স্মরণও করছেন। স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনা ঘটনার পাশাপাশি সমসময়ের ঘটনাও পাঠককে জানাচ্ছেন। আবার কখনও কখনও অতীতের সম্ভাব্য ঘটনাসমূহকে উপস্থিত করে নিজের মন্তব্যও জানিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে উপন্যাসে বর্ণিত আনুপূর্বিকতা ধাক্কা খাচ্ছে। প্রকরণের মধ্যে তৈরি হচ্ছে একটা জটিলতা। এই জটিল প্রকরণ দেখা রুশ সাহিত্যে প্রথম দেখা গিয়েছিল টলস্টয়ের "শৈশব" (১৮৫২) এবং "যৌবন" (১৮৫৪) এই দুটি গ্রন্থে। টলস্টয়ের রচনায় চরিত্রটি  সমসময়ের যে ঘটনার বর্ননা দিচ্ছে আর স্মৃতিচারণ করছে তার মধ্যে শিশুবয়স এবং বয়স্ক বয়সের ব্যবধান আছে। দস্তয়েভস্কি ক্ষেত্রে এই ব্যবধান মাত্র এক বছরের। ক্রিয়ার তীব্রতা, ঘটনার কেন্দ্রীভূতিকরণ এবং স্থান কালের প্রেক্ষিতে কালব্যবধানের হ্রস্বতা পরিপূরণ করা হয়েছে এই উপন্যাসে। ইভান পেত্রোভিচ একবার সক্রিয় চরিত্র হিসেবে গল্পে উপস্থিত হচ্ছেন,  গল্পকথক হিসেবে তাকে আবার অন্য ভূমিকায়ও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কেন্দ্রীয়  চরিত্রের এই দ্বৈততা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে তার পেশাদারি লেখক সত্তার জন্য। তাঁর মানবিক অনুভূতি এবং সাহিত্যিক অনুসন্ধিৎসা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এই উপন্যাসে। ভাগ্যপিড়ীত, লাঞ্ছিত মানুষের প্রতি বাড়িয়ে দেওয়া তাঁর সহানুভূতির হাত আসলে "ভ্রোমিয়া" পত্রিকায় ঘোষিত দস্তয়েভস্কি'র মানবতাবাদী কর্মসূচির দ্যোতক। এই চরিত্রের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে প্রিন্স ভালকোভ্স্কি। তার মুখ দিয়ে তিনি বলিয়ে নেন নির্লজ্জ নীতিবিগর্হিত এক মতবাদ। ভালকোভ্স্কি মনে করে যে সে সমাজের সকল মানুষের দন্ডমুন্ডের কর্তা। তার কথায় "আমি কিন্তু অনেক কালই হল শৃঙ্খল থেকে, এমনকি সমস্তরকম বাধ্যবাধকতা থেকে  নিজেকে মুক্ত করেছি। নৈতিক বাধ্যবাধকতা আমি তখনই স্বীকার করি, যখন দেখি তাতে আমার লাভ আছে।......জীবন এক ধরনের লেনদেন।" এইভাবে গোটা উপন্যাসে দেখা যায় নির্দোষ, লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত চরিত্রগুলির ভাগ্যে প্রভাব বিস্তার করছে খলনায়ক প্রিন্স ভালকোভ্স্কি। দুটো বিপরীত চরিত্রের উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে আসলে দস্তয়েভস্কি  ব্যক্তিমানুষের আত্মসর্বস্ব, স্বার্থগৃধ্নু মানসিকতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। বঞ্চিত মানুষরা তাদের উৎপীড়নের জন্য জন্য দায়ী মানুষের প্রতি আক্রোশবোধ করলেও তাদের মত অন্যান্য বঞ্চিত লাঞ্ছিতদের প্রতি ক্ষমাশীল। সমবেদনায় কোমল। দস্তয়েভস্কি বোঝাতে চাইছেন নারকীয় নির্যাতনও মানুষের মনের কোমল প্রবৃত্তিগুলিকে ধ্বংস করতে পারে না। যেমনটা বিজন ভট্টাচার্য "নবান্ন" নাটকের রাধিকা - কুঞ্জের মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছিলেন।

                            একদিকে  লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত মানুষের মানবিকতা  এবং কষ্ট সহিষ্ণুতা অন্যদিকে ধনী ও অভিজাতদের স্বার্থপরতা ও নিষ্ঠুরতার ছবি এঁকে  দস্তয়েভস্কি সমাজ জীবনে চলমান সংঘাত এবং বিরোধকে তুলে ধরেছেন অনন্য মুন্সিয়ানায়। এই উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন একজন মানুষ নিজের ব্যক্তিত্ব রক্ষা করতে না পেরে,নিজের মতো হয়ে উঠতে না পেরে কিভাবে শেষমেশ  কঠিনতায়, অসামাজিকতায় অথবা মস্তিষ্ক বিকৃতিতে পৌঁছে যায়। এই শ্রেণির মানুষ শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে নিজের মানব প্রকৃতিকে দমন করতে করতে মানুষ্যেতর প্রাণীতে পর্যবসিত হয়।মনুষ্যত্বের এই চরম অবমাননা দস্তয়েভস্কি খুব কাছ থেকে দেখেছেন।


        "লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত"কে লেখকের সামাজিক উপন্যাসে  প্রত্যাবর্তন হিসেবে ধরা হয়। বস্তুনিষ্ঠ সামাজিক উপন্যাস রচনার সমস্ত রসদ মজুত থাকা স্বত্তেও উপন্যাসের কাহিনি অতিনাটকীয়তা আক্রান্ত হয়েছে। ভালকোভ্স্কির ছেলে আলিয়োশা  পিতার আজ্ঞা শিরোধার্য করে তার প্রেমিকা নাতাশাকে ছেড়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে ধনী পরিবারের কন্যা কাতিয়ারকে বিয়ে করে । উপন্যাসের অন্য একটি দুর্বল দিক হল ভালকোভ্স্কির মতো একজন নৃশংস ও স্বার্থপর মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে ঔপন্যাসিক সমাজ বাস্তবতাকে উপেক্ষা করেছেন। ফলে উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় সমাজ থেকে সরে গিয়ে সাধারণ নরনারীর প্রেমকাহিনীতে পর্যবসিত হয়েছে। এই সামান্য দুর্বলতাটুকু বাদ দিলে "লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত" হয়ে উঠেছে অত্যাচার, উৎপীড়ন ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের জোরালো হাতিয়ার যা সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রতিধ্বনিও বলা চলে।