ভারতের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রাম : জরুরী কিছু প্রসঙ্গ

হতাশগ্রস্ত জনগণ এর এক বড় অংশ কেন স্বৈরতন্ত্রের, চূড়ান্ত আধিপত্যবাদ এবং বিভাজনের রাজনীতির দিকে ঝোঁকে ? ১৯৩৩ সালে উইলিয়াম রেখ – অস্ট্রিয়ার এক মনোবিজ্ঞানী ফ্যাসিবাদের গণ মনস্তত্ব নামে একটি বই প্রকাশ করেন। রেখ যেটা দেখাতে চেয়েছিলেন – তা হল  জার্মানিতে ব্যাপক সংখ্যক যুবা যৌবনের যৌন ইচ্ছা চাপা থাকার কারণে সেই নিষ্পেষিত শক্তি এক আধিপত্যকারী , দমনমূলক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে খুঁজতে চায়। তিনি রাশিয়ার বিপ্লবের পর যে উদারনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ হয়েছিল, তার তুলনায় জার্মানির তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল সমাজের কথা বলতে চেয়েছেন।

উইলিয়াম রেখকে পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়। আমরা রেখের সঙ্গে একমত নই যে তাকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, কারণ তিনি ফ্যাসিবাদের উত্থানের সামগ্রিক বিষয়কে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মনস্তত্বের জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোবিজ্ঞানের বিষয়টিকে অস্বীকার করা যায় না। কোনো মানুষই জন্ম থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আধিপত্যবাদী হয় না। জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত এক এক জনের উপর এক এক রকম প্রভাব ফেলে, কিন্তু পারিবারিক, সামাজিক, চাকুরী স্থলে আধিপত্যবাদ তার মানসিক তায় প্রভাব ফেলে এবং কিছু জিনিস কে তার স্বাভাবিক মনে হতে থাকে। অর্থনৈতিক , সামাজিক শোষণের দরুণ তৈরি হওয়া হতাশাকে সে একদিকে  ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র, শক্তিশালী নেতৃ্ত্বর’ ধারণার মধ্যে খুঁজে পেয়ে পরিতৃপ্ত হতে চায়, অন্যদিকে জাতিগত বা ধর্মীয় শোষণকে নিজ অস্তিত্বের তাগিদে প্রতিশোধ্মূলক সাধারণ আচরণ হিসাবে দেখতে চায়। এর বাইরেও জন সাধারণের একটা অংশ থাকে। কিন্ত বুর্জোয়া উদারনৈতিক ব্যবস্থা, যার গণতন্ত্র নিজেই খন্ডিত, খর্বিত - তার প্রতি অসন্তোষ বাড়তে থাকে আর বামপন্থী দলগুলির ব্যর্থতা ও বেইমানি আধিপত্যবাদী, উগ্র জাতয়্যতাবাদী, মৌলবাদী চিন্তার প্রতি সংখ্যাগুরু মানুষের আকর্ষণ আরো বাড়াতে থাকে। বিভিন্ন তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির পতনে বিকল্পের সন্ধান না পাওয়া মানুষ তাই এই ধরণের চিন্তার প্রতি আকৃ্ষ্ট হয়।

ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে এই প্রেক্ষাপটে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তা ধীরে ধীরে তার গণভিত্তি বাড়াতে সক্ষম হয়, তবে ধর্মীয় মৌলবাদের পাশাপাশি এবং তাকে ছাপিয়ে যে চিন্তা মানুষকে প্রভাবিত করে যে এক শক্তিশালী নেতা এবং দলের নেতৃত্বে ‘ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ট আসন লবে’। ভারতবর্ষের বৃহৎ পুঁজি – যা আবার বিশ্বায়নের যুগে অন্য দেশে বিনিয়োগ করেছে, তাদের কাছে এই ধরণের একনায়কত্ব আশীর্বাদ হিসাবে দেখা দিল, আর তাদের পেটোয়া মিডিয়া ও এই বিজে পি-এবং নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে ঢালাও প্রচার শুরু করল, যা জনমত তৈরিতে বিরাট ভূমিকা নিল।

এই সব পরিপ্রেক্ষিত দেখেই আর. এস. এস এবং তাদের পরিচালিত দল বিজেপি কে ফ্যাসিবাদী বলে চরিত্রায়ন করছি। এবার ফিরে দেখি তাদের ইতিহাসকে।

বি.জে.পি র আদর্শগত গুরু আর.এস.এস এর ইতিহাস দেখার আগে হিন্দু মহাসভার এবং মুসলিম লীগের ইতিহাস টা দেখে নেই। মুসলীম লীগ এবং হিন্দু মহাসভা প্রায় একই সময়-১৯০৬ সালে তৈরী হয়েছিল। মুসলীম লীগের আলিগড় মুসলীম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাহিত্য আন্দোলন এর মধ্য দি‍য়ে আবির্ভাব ঘটে এবং ঢাকাতে তার পত্তন হয়। অন্যদিকে হিন্দু মহাসভা ব্রিটিশ দ্বারা ঐক্যবদ্ধ বাংলার বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা তে – যেখানে হিন্দুরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ তার পত্তন হয়েছিল। ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ সরকার- মরলো মিণ্টো সংস্কার মারফত – যার একটি উদ্দেশ্য ছিল সীমিত সংখ্যক ভারতীয়দের ব্রিটিশ সরকারের অধীনে স্বশাসন মারফত পরাধীনতার ক্ষোভ – বিক্ষোভ কে প্রশমন করার চেষ্টা এবং আগা খানের মতো মুসলীম লীগের কিছু মুসলীম বুদ্ধিজীবীদের দাবীমত কিছু মুসলিম অধ্যুষিত নির্বাচনক্ষেত্র মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত করার মধ্যে দিয়ে হিন্দু- মুসলিম বিভাজনের তাস খেলা। সংস্কার ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের দাবী হলেও

তারা সাধারণভাবে হিন্দু, মুসলিম নেতাদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করত। যাই হোক কিছু মুসলিম অধ্যুষিত নির্বাচনক্ষেত্র মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত রক্ষণশীল হিন্দু নেতাদের তাদের আধিপত্য খর্বের জায়গায় আরো কাছাকাছি আনল। লালা লাজপত রাই সহ এই নেতারা এক হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের দাবী জানানো শুরু করলেন। ১৯১৩ সালে মহম্মদ আলি জিন্নাহ মুসলীম লীগে জোগদান করেন এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি প্রাথমিক দিকে তুলনামূলকভাবে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা ক রেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরও কিছুদিন বাস্তব প রিস্থিতির চাপে হিন্দু, মুসলিম জনগ্ণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল- যা খিলাফত আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে পরিলক্ষিত হয়েছিল। কিন্তু তার পরবর্তীকালে বিশেষতঃ ১৯২২ সালের পর হিন্দু এবং মুসলিম রক্ষণসীল নেতাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছিল। সমাজের মধ্যেও ব্রিটিশ শাসনেরদরুণ সামাজিক, অর্থনৈতিক শোষণের দরুণ যে হতাশা তৈরী হচ্ছিল , তার অভিব্যক্তি যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে হচ্ছিল , তেমনি সুনির্দিষ্ট আদর্শগত চিন্তার অভাবে হিন্দু, মুসলিম সংঘর্ষ ও দাঙ্গা বাড়তে থাকে । এ প্রসংগে কার্ল মার্ক্সের সেই কথাটা মনে পড়ে যায় ‘ধর্ম হল মানুষের আফিম’ । যুগ যুগ ধরে ধর্মর প্রভাব মানুষের উপর কাজ করছে, সাধারণ মানুষ যা সামাজিক সংকটের দরুণ নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে, ধর্ম জাতি ইত্যাদি মারফত তা নিজের পরিচয়কে বেশী বেশী করে  সনাক্ত করে। ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃত্ব তাদের আধিপত্য বজায় ও রাষ্ট্রীয় শক্তি কাঠামোর অংশ হতে চাওয়ার জায়গা থেকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে আর সাধারণ মানুষরা তাদের অস্তিত্বের জায়গা থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যাই হোক , ১৯৩০ সালের পর থেকে মুসলিম লীগের নেতা মহম্মদ ইকবাল  ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষের ্মধ্যে  পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবী জানাতে থাকে। মনে রাখতে হবে তার আগে হিন্দু মহাসভা ও এই ধরণের দাবী তুলতে শুরু করেছে। জাতীয় কংগ্রেস তখন এই দ্বিজাতি তত্তের বিরোধিতা করেছিল এবং তাদের ধ্যাণ ধারণা ছিল এক ঐক্যবদ্ধ ভারত, কিন্তু তারা ভারতীয় জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করত, আর মতাদর্শের দিক থেকে পেটি বুর্জোয়া প্রবণতা ধারণ করত, ফলে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে তাদের অবস্থান কখনো কখনো দোদুল্যমান হয়ে পড়ত। এই বিভিন্ন কারণ বশতঃ – সামাজিক চাপ ও রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকার  দরুণ ঐক্যবদ্ধ ভারতের দ্বিজাতি তত্বের নাম করে ধর্মীয় বিভাজন ঘটে। ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় যেমন ছিল এক গর্বের বিষয়, তেমনি পার্টিশন ছিল এক অভিশাপ। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের এক অংশ এই দ্বি জাতি তত্ব মারফত বিভ্রান্ত হয়েছিলেন।স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণ বিশ্লেষণের অবকাশ এখানে নেই, আমরা আবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের উত্থানের বিষয়টিকে দেখি।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আর.এস.এস) এর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৫ সালে, নাগপুরে। হেগরেওয়াড় ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা । আর.এস.এস লিখিতভাবে স্বীকার না করলেও তাদের উপর হিন্দু মহাসভার মতাদর্শের প্রভাব ছিল।  হেগরেওয়াড় মনে করতেন ব্রিটিশরা বাইরে থেকে এসে ভারতবর্ষ্কে শাসন করতে পারছে, তার কারণ হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য নেই। হিন্দু যুবকদের তিনি সংগঠিত করার উদ্যাগ নিলেন, এমনকি অস্ত্র শিক্ষাও দেওয়া শুরু করলেন। আপাত কিছু জঙ্গী বক্তব্যর আড়ালে আসল উদ্দেশ্য ছিল হিন্দূ ধর্মকে ব্যক্তিগত ধর্ম চর্চার পরিসর থেকে বের করে, এমন কি, বিবেকানন্দ, রামকৃ্ষ্ণদেব ইত্যাদি মনীষীর শান্তিপূর্ণ প্রচারের বিপরীতে , সমাজের মধ্যে থেকে জঙ্গী আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের আধিপত্যকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা।

মহাত্মা গান্ধীর এবং জাতীয় কংগ্রেসের হিন্দু-মুসলিম ঐক্যর এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে আর.এস.এস জন্মলগ্ন থেকেই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এই মতাদর্শ, কিছু আপাতভাবে হিন্দু দের মধ্যে সমাজ সেবা মূলক কাজ এবং দাঙ্গা সংগঠিত করা, তার মধ্যে দিয়ে তারা শাখাগুলির বিকাশ ঘটাতে থাকে। হিন্দু মহাসভার অনুকরণে তারা মনে করত ব্রিটিশ দের বিরূদ্ধে লড়াই এর থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল হিন্দুদের আধিপত্য বিস্তার এবং মুসলমান, খৃষ্টান এই ধর্মের লোকেরা বহিরাগত বলে তাদের শ্ত্রু বলে চিহ্ণিত করল। তাদের মতাদর্শ অনুযায়ী তারা গান্ধী নেতৃ্ত্বাধীন অসহযোগ আন্দোলন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে এবং সেই পর্বে ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষক হিসাবেও কাজ করে। এর পাশাপাশি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তারা হিটলার এবং নাজীদের প্রশ্নংসা করে।  তারা নিজেদের হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে দেখাতে চাইলেও তাদের তাত্ত্বিক নেতা গোলওয়ালকর তার লেখায় বর্ণাশ্রম এবং ম নুসংহিতার ভূয়সী প্রশংসাই করেছেন।  সেই মতাদর্শ অনুযায়ী আর.এস.এস ছিল উচ্চবর্ণ হিন্দুদের সংগঠন। তৎকালীন ভারতবর্ষে জাত পাত গত শোষণ ছিল ভয়ংকর। হিন্দু ধর্মের এই বহু বিবিধ চরিত্রকে ধারণ করতে গেলে তাকে তার আধিপত্যবাদী চিন্তার থেকে বেরিয়ে আসতে হত, যা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই আধিপত্যবাদী চিন্তার প্রভাব পড়েছিল তাদের মহিলাদের প্রতি চিন্তাতেও । গোল ওয়ালকর তার ‘একগুচ্ছ চিন্তাধারা’ গ্রন্থের ‘মাতৃত্বের আহ্বান’ অধ্যায়ে পরিষ্কার লিখছেন যে ‘ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য মেনেই হিন্দু মহিলাদের আধুনিক হওয়া অনুচিত। যে সমস্ত মহিলারা স্বাধীনতা এবং আধুনিক যুগে সমানাধিকার ভোগ করতে চায়, তাদের মধ্যে সদ্গুণ খুবই কম আর তারা মনে করে আধুনিকতার অর্থ নিজেদের শরীর উন্মোচন করা’।

এই দৃষ্টি ভঙ্গী তে খুব অবাক হবার কিছু নেই । নাজী শাসনের মতো ই তারা মনে করত যে মহিলা দের ভুমিকা মুলত ঘরের কাজে – মা এবং স্ত্রীর ভুমিকায়। বস্তুতঃ যে কোনো উগ্র ধর্মীয় মৌ্লবাদী শক্তি সমাজের আধিপত্যবাদী স ম্পর্ককে কিছু পরিমাণে বজায় রাখতে চায়। আর পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যতো যুগ যুগ ধরে চলে আসা। তৎকালীন ভারতবর্ষের মতো পিছিয়ে থাকা সমাজে মহিলাদের ভূমিকা ইওরোপের তুলনায় আরো বেশি পিছিয়ে। হিটলার, মুসোলিনীর ঐতিহ্য মেনেই তারা কমিউনিস্টদের শ্ত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছিল, কারণ তারা জান ত যে একমাত্র শ্রেণীগত ঐক্য ই মানুষকে উগ্র ধর্মীয় চিন্তার থেকে মুক্ত করতে পারে। স্বাধীনতার পরেও তারা ভারতবর্ষের সংবিধানকে স্বীকার করে নি, কারণ তা সরকারী ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে এবং সেইজায়গা থেকে তারা তিন রঙের জাতীয় পতাকা কেও মর্যাদা দেয় না। গান্ধী হত্যাকারী গডসে তাদের সদস্য হবার কারণে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, পরবর্তীকালে তারা আবার প্রকাশ্যে কাজ করা শুরু করে। আর.এস.এস সরাসরি ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতো না- তাদের হয়ে সেই কাজ শুরু করল তাদের প্রকাশ্য সংগঠন ভারতীয় জনসংঘ। ভারতীয় জনসংঘ ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর.এস.এস এর রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মতাদর্শ ছিল উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী। আর অর্থনৈতিক জায়গা থেকে তারা কংগ্রেসের সমালোচক ছিল কারণ কংগ্রেস পরিচালিত অর্থনীতি নাকি সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের, আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতবর্ষের যে কোনো রকম সম্পর্ক রাখারই তারা বিরোধী ছিল।

রাজনীতির মূলস্রোতে থাকার জন্য তারা জাতপাতগত প্রশ্নে ‘নিচুজাতের লোকেরাও মানুষ’- এই ধরণের কথা বললেও মনুসংহিতা এবং গোলওয়ালকরের প্রতি তাদের আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। হিন্দু ধর্মের মধ্যে জাতপাতগত তীব্র শোষণ, এবং বহু জাতি, বর্ণ,ধর্ম সম্মিলিত ভারতবর্ষ তাদের কাছে হিন্দুধর্মের সব মানুষকে এক জাতীয়তাবাদী উগ্র হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শে ঐক্যবদ্ধ করার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তা সত্বেও ১৯৬৭ সালে লোকসভা নির্বাচনে তারা ৩৫ টি আসন পায় (৯.৪১ শতাংশ ভোট) । উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তার পাশাপাশি ভারতীয় বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি কংগ্রেস –ই এর সুবিধাবাদী রাজনীতি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছিল। তাদের সময়ে অর্থনীতির চরিত্র ভারী শিল্পকে রাষ্ট্রায়ত্তকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের পুঁজি বিকাশের পথকে প্রশস্ত করা এবং কিছু পরিমাণে কাজ সৃষ্টি করা- এক কথায় কেইনসীয় রাজনীতি। সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতপাত গত সংরক্ষণের কথা থাকার দরুণ বুর্জোয়া গণতন্ত্রের খুব হাল্কা বিকাশ ঘটলেও জাতপাতগত এবং ধর্মীয় শোষণ নির্মুল করতে ভারতীয় বুর্জোয়ারা এবং কংগ্রেস – আই কোনোদিনই আগ্রহী ছিলো না। আম্বেদকর সঠিকভাবে কংগ্রেস কে উচ্চবর্ণ হিন্দুদের দল হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে শিখ গণহত্যার মধ্যে দিয়ে সাধারণ জনমানসে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছিল। ইন্দিরা গান্ধীর সময় আইন করে সরকারীভাবে সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটালেও তা বহুল পরিমাণে বর্তমান ছিল। শ্রমিক কৃ্ষকদের লড়াই যখনই দানা বেঁধেছে পুঁজিপতি জমিদার দের পক্ষ নিয়ে কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এমন কি পুলিশ দিয়ে ধর্মঘট ভেঙ্গে দিয়েছে। এই জনবিরোধী চরিত্রকে প্রকট করে ক মিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক-কৃষক দের মধ্যে তাদের গণভিত্তি কিছু পরিমাণে প্রতিষ্ঠা করতে স্কষ্ম হয়েছিল। ১৯৬৭ নির্বাচনে সি.পি.আই এবং  সি.পি.আই.এম মিলিতভাবে ৪২ আসন পেয়েছিল। তা সত্তেও কংগ্রেস – আই দীর্ঘদিন ধরে জিততে পেরেছিল, তার কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে জনগণের এক বড়ো অংশের উপর মতাদর্শগত আধিপত্য, কেইনসীয় অর্থনীতির মাধ্যমে কিছু চাকুরী তৈরী, বহুধাবিভক্ত ভারতবর্ষে কিছু আপাত ভারসাম্যমূলক কথা এবং কাজ ইত্যাদি। তবে বুর্জোয়া গ্ণতন্ত্র যে খন্ডিত, খর্বিত তা তাদের শাসনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়, কিন্তু তা যে স্বৈরতন্ত্র র ভূমিকাতে উত্তীর্ণ হতে পারে তার প্রমাণ ছিল জরুরী অবস্থা।

ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে এই পর্ব স্থায়ী হয় ২১ মাস- ১৯৭৫ – ১৯৭৭। ভারতীয় সংবিধানের ৩৫২ নং অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে ইন্দিরা গান্ধী নিজের হাতে সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ত করেনয়। যে কোনো রকম বিরোধী পক্ষকে নির্মমভাবে দমন করা হয়। সদ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া এবং ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাক সৈ্ন্যবাহিনী কে পরাস্ত করা – এর মধ্যে দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী যে প্রতিপত্তিঅর্জন করেছিলেন তাকে এইভাবে কাজে লাগান। বামপন্থী দলের নেতা কর্মীরা তো বটেই , জন সং ঘের কিছু নেতাও গ্রেপ্তার হন । সংঘ পরিবার এবং মুসলিম লীগ কে নিষিদ্ধ করা হয়- তা কোনো আদর্শগত জায়গা থেকে নয়- বরং বিরোধী পক্ষকে দমন করার জায়গা থেকে। সঞ্জয় গান্ধী পরিচালিত ‘বল্পূর্বক নাশবন্দী’ সভ্যতার এক অন্যতম লজ্জা ছিল। এটা ভাবলেভুল হবে যে এই স্বৈরতন্ত্র ইন্দিরা গান্ধী শুধু নিজের ক্ষমতার জায়গা থেকে কায়েম ক রেছিলেন। বাস্তবতঃ ভারতীয় অর্থনীতি তখন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে- শাসক দল কংগ্রেসের কাছে অবশ্য জনগ্ণের সংকটের থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শাসক শ্রেণীর লাভের সংকট- এই স্বৈরতন্ত্র কায়েমের মধ্যে দিয়ে সমাজের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্বকে চাপা দিয়ে, শ্রমিক , কৃ্ষকদের প্রতিরোধকে দমন করে শাসক শ্রেণীর মুনাফা সুনিশ্চিত করা- এই ছিল লক্ষ্য। তবে অনেকে একে ফ্যাসিবাদ বললেও তা ফ্যাসিবাদী ছিল না। তা স্বৈরতন্ত্রর মাধ্যমে ছিল এক পুলিশ রাষ্ট্র- উপর থেকে চাপানো ব্যবস্থা। ফ্যাসিবাদও একনায়কত্ব কায়েম করে-এটা ঠিক, তবে এর সাথে নিচুতলাকে মতাদর্শগত সংগঠিত করে তার এই ব্যবস্থার জন্য- যা আজকের ভারতবর্ষে দেখা যাচ্ছে। স্বৈরতন্ত্রের উচিত শিক্ষা কংগ্রেস পেয়েছিল ১৯৭৭ এর নির্বাচনে – যখন জনতা দলের কাছে পর্যুদস্ত হয় তারা। তার আগে অবশ্য ভারতীয় জনসংঘের নেতৃত্ব জনতা দলের সাথে মিশে যায় এবং নতুন সরকারে  অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদবানী মন্ত্রী হন। কিন্তু সংঘ পরিবার তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে। ১৯৫১-১৯৭৭ এই পর্বে ভারতীয় জন সংঘকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। সংঘ পরিবারকে  উগ্র হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বলা যেতে পারে।  জন সংঘকে ফ্যাসিবাদী তখনো এই কারণে বলছি না কারণ তখনো সংগঠিত প্রতিবিপ্লবী মতাদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ বাহিনী  মারফত  ধর্মীয় হিংসা, গ্ণহত্যা সংগঠিত করার বিষ্য টি সামনে আসেনি, কিন্তু তার বীজ সংঘ পরিবারের মতাদর্শে র মধ্যে নীহিত ছিল। ১৯৭৭ সালে নির্বাচিত জনতা দলের চরিত্র ছিল বুর্জোইয়া গণতান্ত্রিক-  জনসংঘ ছাড়াও সেখানে ছিল জনতা মোর্চা, ফার্ণাণ্ডেজের সোস্যালিস্ট পার্টি, এবং অন্যান্যরা। নেতৃত্বে জয়প্রকাশ নারায়ণ । জনতা দলের অসম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ কর্মসূচীর কারণে জন সঙ্ঘ পরবরতীকালে বিছিন্ন হয়ে ভারতীয় জনতা দল তৈ্রী করে। এতটা ইতিহাস বালার কারণ এই যে ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচন এটা দেখিয়ে দিয়েছিল যে সমাজের মধ্যে রক্ষণশীল চিন্তার প্রভাব দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এ প্রসংগে যে কথা বলার তা হল সংখ্যাগুরু মৌ্লবাদী শক্তি মানেই যে সে ফ্যাসিবাদী হয়ে উথবে তা নাও হতে পারে, কিন্তু সম্ভাবনা থেকে যায়। আর সংখ্যালঘু মৌ্লবাদ, তা বিপজ্জনক, কিন্তু তার পক্ষে ক্ষমতায় গিয়ে ফ্যাসিবাদী কার্যক্রম রূপায়ন করা শক্ত।

যাই হোক বি.জে.পি শুরুতে পার্লামেণ্টে নগণ্য শক্তি থাকলেও তার আত্মবিশ্বাসের কারণ ছিল সংঘ পরিবারের শাখাগুলির বিকাশ, বিশেষতঃ উত্তর ভারতে । সঙঘবদ্ধ উগ্র হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্ব হিন্দু প রিষদ ও বজরং দল গঠন করা হয় যাদের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল অযোধ্যা, কাশী, ম্থুরা তে মুসলমান উপাসনাস্থলে মন্দিরের নির্মাণ , কমিউনিস্টদের উৎখাত করা এবং ভারতবর্ষ কে মুসলিম জনসংখ্যা এবং খৃষ্টান রূপান্তর এর থেকে রক্ষা করা। তাদের ঘোষণা মতোই তারা বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় আক্রমণ চালাতে থাকে এবং বি.জে.পি এর রাজনীতির অন্যত্ম মুল স্তম্ভ ছিল এই উগ্রতা- উগ্র হিন্দু মৌলবাদী শক্তি থেকে তা ফ্যাসিবাদী শক্তিতে পরিণত হয়। এই  বিশ্ব হিন্দু প রিষদ ও বজরং দল এর মূল গ্ণভিত্তি ছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুবক যাদের এক বড়ো অংশ উৎপাদন থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে লুম্পেন মনোভাবাপন্ন। ১৯৯২ সালে উত্তর প্রদেশে  অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধবংসের মধ্যে দিয়ে এই উন্মত্ত ফ্যাসিস্ট আন্দোলন বড়ো আঘাত হানে। রাজ্যে তখন বি.জে.পি সরকার হলেও কেন্দ্রে ন রসীমা রাও নেতৃ্তবাধীন কংগ্রেস সরকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। রাজীব গান্ধী রাম্মন্দিরের শিলান্যাস করার মধ্যে দিয়ে হিন্দু মৌলবাদী চাপের কাছে নতিস্বীকার করে। তার আগের শাহ বানু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় অগ্রাহ্য করে কংগ্রেস মুসলিম মৌলবাদী র কাছে নতজানু হয়েছে। দুই তরফের মৌল্বাদীদের হাতে রেখে এক টা ভারসাম্য ব্জায় রাখার চেষ্টা এবং শেষ বিচারে সংখ্যাগুরু ধর্মীয় ম্নোভাবের কাছে নতিস্বীকার- এভাবেই কংগ্রেস স্মাল দেবার চেষ্টা করত। কিন্তু উগ্র হিন্দুত্বের সামনে তার এই কৌশল ব্যর্থ হতে লাগল। শিখরা ১৯৮৪ সালে শিখ গ্ণহত্যা – যাতে কিছু আর এস এস এর সদস্য যুক্ত ছিল , তার ফলে কংগেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। মুস লিম রাও উত্তর প্রদেশে আঞ্চলিক দল গুলির উপর বেশী ভরসা করতে লাগল। সর্বোপরি নয়া উদারনীতি অর্থনীতি যা ভারতীয় পঁুজিপতি এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এর স্বার্থে পঁুজিবাদী বিশ্বয়নের স্বভাবিক ফ্ল হিসাবে এসেছিল, তা শ্রমিক – কৃষকের উপর আক্রমণ আরো বেশী তীব্র করল। বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস সরকার গুলি আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করেছিল। জাতপাতের প্রশ্নেও তা নিম্ন বর্গের দাবী দাওয়া নিয়ে সদর্থক ভুমিকা নিতে পারে নি, যা আঞ্চলিক দল গুলিকে আরো শক্তিশালী করে। বামপন্থীদের মুল শক্তি সিপিআই আর সিপিআইম সংসদীয় ক্ষমতার মোহে নিমজ্জিত থাকায় আর পশ্চিম বঙ্গের মত রাজ্যে তাদের সরকার ছিটেফোঁটে সংস্কার করলেও বিভিন্ন সময়ে তাদের জনবিরোধী কার্জক্রম সামনে এসেছে। ফলে যথার্থ বিরোধী পক্ষের শুণ্যতা পূরণ করল এক চুড়ান্ত আধিপ্ত্যবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তি। এক সময়ে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ গড়ে তুলে আর এস এস , বি জে পি নয়া উদারনীতিবাদের বিরূদ্ধে এক দেশীয় সনাতনী হিন্দু প্রতিরোধের রূপ দিতে চেয়েছিল। আর ক্ষ্মতায় এসে শুধু নয়, ২০১৪ সালের আগে থেকেি তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে নয়া উদারনীতিবাদকে গ্রহণ করে আর আজ নয়া উদারনীতিবাদী একনায়কত্ব কংগেসএর থেকেো সজেওরে প্রয়োগ করছে । আর উগ্র হিন্দুতব্বাদী মতাদর্শগত জনভিত্তি দেবার জন্য তার হাতিয়ার ধারাবাহিক প্রচার, আর এস এস শাখাগুলিকে সুসংগঠিত করা, ধর্মীয়  সংঘর্ষএবং গ্ণহত্যা সংগঠিত করা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০০২ সালে গুজ্ রাটের  গোধ রায় ট্রেনে আগুনে পুড়ে ৫ ক রসেবকদের মৃত্যুর অজুহাতে মুসলিমদের উপর সংগঠিত গ্ণহত্যা চালানো, যাতে গ্ণহত্যার পাশাপাশি মুসলিম মহিলাদের গ্ণধর্ষণও করা হয়েছিল, ২০০৮ সালে এক পুরোহিত কে হতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে র কান্ধামালে  খৃষ্টান বাসস্থান গুলিকে  ধবংস করা, এবং গ্ণহত্যা চালানো।

ধর্মকে এক বিকৃত উগ্র রূপ দিয়ে ধারাবাহিক মিথ্যা ও অর্ধ সত্য প্রচারের মধ্যে দিয়ে তা মুস লিম দের এক কাল্পনিক শ্ত্রু হিসাবে হাজির করল এবং হতাশগ্রস্ত জন গ্ণ তা অনেকাংশে বিশ্বাস করতে শুরু করল। তবে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভাবে জিতে আসারা কারণ ছিল পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের সময় জনবিরোধী অর্থনীতি ও কার্যক্রম এবং লাগামছাড়া দূর্নীতির দরুণ কংগ্রেসের উপর মানুষের আস্থা তলানিতে চলে যাওয়া। ২০১৪ থেকে ১০১৯ এই পর্বে গো হত্যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় মু স লিম ও দলিত দের উপ র উন্মত্ত এক অংশের মানূহ আক্রমণ করেছিল- যা সব জায়গায় বিজেপি ও তার বাহিনী সংগঠিত না করলেও তা তাদের ঘৃণার মতাদর্শের- ই ফল ছিল। এই পর্বে তাদের নইয়া উদারনয়তিক একনায়কত্বর – আম্বানি, আদানি দের অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, শ্রম আইন সংস্কার ইত্যাদি প্রশ্নে গ্ণ আন্দোলন গড়ে উঠলেও, ফুল ওয়ামার ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে স ন্ত্রাসবাদের বিরূদ্ধে ল ড়াইয়ের নাম করে কর্পোরেট মিডিয়া মোদী কে জনমানসে এক অসম শক্তিধর মহামানবের রূপ দেওয়া, প্রচুর প রিমাণে অর্থ বিতরণ করে এবং সর্বোপরি শক্তিশালী বিরোধী পক্ষের অভাবে ‘বিজেপি এক মাত্র দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে’ এই ধারণা জনমানসে তীব্র হয়, যার দরুণ ২০১৯ সালে তারা বিপুল্ভাবে নির্বাচনে জেতে।আর এই জয় তাদের জন বিরোধী চেহারা এবং ফ্যাসিস্ট স্বৈরতান্ত্রিক চেহারাকে আরো সামনে নিয়ে আসে। জরূরী অবস্থার কায়দায় এবং আরো বেশী করে বিচারব্যবস্থাকে, সিবিআই কে তাদের মনোনীত লোক দিয়ে কুক্ষিগত করে – পেটোয়া বিচার ব্যবস্থার মারফত বাবরি মসজিদ ধবংশ আইনী ছাড়প্ত্র পেয়ে যায় এবং সেই স্থলে রাম ম ন্দির তৈ্রী ও হয়। এক সময় যে ধর্মীয় বিশ্বাস উত্তর প্রদেশের অযোধ্যাতে সীমাবধ ছিল, তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

বস্তুতঃ সংবিধানের আপাতঃ ধর্ম নিরপেক্ষ চেহারা,জাত পাত গত সংরক্ষণের অথিকার  প্রত্যেক টি বিজেপি সরকার খুব পরিকল্পিতভাবে এক অখন্ড হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ধবংস করার প্রয়াস চালাচ্ছে। কংগ্রেস আমলে যে এন আর সি প্রক্রিয়া সুরু হয়ে ছিল, তাকে সংশোধন করেআরো দৃঢ়্ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর । কংগ্রেস আম লের শাসনের সঙ্গে তার একটা পার্থক্য যে কোনো প্রতিবাদ দানা বাধলেই তাকে জাতীয়তাবাদ বিরোধী(অ্যাণ্টি ন্যাশনাল) আখ্যা দেওয়া ও এন.এস. এ প্রয়োগ করা । মুসলিম তো বটেই, দিল্লি রায়ট-বস্তুতঃ সংগঠিত সন্ত্রাস ও বামপন্থী নেতা দের মিথ্যা মামলায় জড়ানো, ভীমা কোরেগঁাও উপলক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের অ্যাণ্টি ন্যাশনাল মাওবাদী, সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া, এন আই কে কাজে লাগিয়ে সারা দেশ জুড়ে এক উগ্র জাতীয়তাবাদী হিস্টিরিয়া গঠন তার ফ্যাসিবাদী প্রবণতাকেই সুস্পষ্ট করে। আর ভারতীয় বুর্জোয়ারা এই প্রবণতাকে সানন্দে গ্রহণ করেছে। আম্বানি, আদানি, টাটা এরা কিছুটা বেশি স্নেহধন্য হলেও

করোনা পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে শ্রম আইনের ব্যাপক সংস্কার, ন্যা কৃ্ষি বিলের মধ্যে দিয়ে কর্পোরেট পুঁজির বিশাল মুনাফার সম্ভাবনা এ সব  তাদের উল্লসিত করেছে। তবে  ভারতবর্ষের রাষ্ট্রকাঠামো এখনো দাঁড়িয়ে আছে ব্যাপকভাবে খর্বিত পার্লামেন্টারী গ্ণতন্ত্রের উপর যার আপাত বহুতব্বাদী সংস্কৃতি প্রতিস্থাপিত হচ্ছে একমুখী ফ্যাসিস্ট সংস্কৃতি দ্বারা , গ্ণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে দুড়ান্তভাবে । মনে রাখতে হবে জ্রুরী অবস্থা ২১ মাস ই স্থায়ী হয়েছিল, পরবর্তীকালের কংগ্রেস শাসন অন্ততঃ জ্ররুরী অবস্থার পথে হাঁটেনি, আর এই  অঘোষীত জ্ররুরী শাসন চলবে তার ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ মারফত আধিপত্য বিস্তার করে, যতক্ষণ না তাকে সমূলে উপড়ে ফেলা যায়।

ফ্যাসিবাদ বিরোধী একটি আলোচনাসভায় শ্রোতা হিসাবে গিয়ে একজন মুসলিম ভদ্রলোকের কিছু কথা বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি বলেছিলেন মোদী এবং বিজেপি কি রকম সেটা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে মুসলিমরা । তাঁর অনুযোগ ছিল বামপন্থীরা কেন অবিজেপি দলগুলির সাথে বছরের শুরু থেকে জোট তৈরী করে না, যাতে নির্বাচনে মানুষের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হয় । তঁার প্রথম বক্তব্যর সাথে সম্পূর্ণ একমত- ধারাবাহিক আক্রমণের দরুণ মুসলিম জনগ্ণ ভীত সন্ত্রস্ত বোধ করছে সাংঘাতিকভাবে । বিষয়টা এমনই যে একজন মুসলিম বিত্তবান লোক একজন ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক যার পরিচয় হচ্ছে হিন্দু – তার থেকে বেশী শঙ্কায়  ভোগেন। সেই জায়গা থেকেই মিম ইত্যাদি দলগুলি কিছু আসন পায়।  দ্বিতীয় কথাটি বেশ কিছু লোকের কথা যারা আন্তরিকভাবে চান বিজেপি ক্ষমতার থেকে উৎখাত হোক , এবং সেই জায়গা থেকে অবিজেপি দলগুলির একসাথে জোট বাঁধার কথা বলেন, যার চরিত্র হবে অনেকটাই স্থায়ী, যতক্ষণ না বিজেপির পতন ঘটছে। এই কথাগুলি আজকের পরিপ্রেক্ষিতে আরো বেশী করে উঠে এসেছে সম্প্রতি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বামপন্থী দল - বিশেষতঃ লিবারেশন এবং সামগ্রিক ভাবে জোটের ফল কিছুটা সমানে সমানে হবার কারণে, যদিও নির্বাচনে জিততে তারা পারেনি। বিহারে আর.জে.ডি এবং কংগ্রেস যারা দুজনেই বিহার শাস্ন করে এসেছেএকসময় এবং তাদের শাসন ছিল জনবিরোধী । কংগ্রেস তো আবার দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় ছিল এবং তাদের সম্পর্কে মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল, যা আগে আলোচনা করেছি। বিহারের পটভুমিকায়  আর.জে.ডি এবং কংগ্রেসের শাসন ছিল আঞ্চলিক বুর্জোয়া এবং এক সময়ের জমিদার ও ধনী কৃষকদের স্বার্থবাহী । তাদের সময়কালে কৃষক আন্দোলনের উপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে।  আর.জে.ডি জাতপাত গত রাজনীতি করে এবং ধারাবাহিক ভাবে বিজেপি বিরোধী হবার কারণে তার একটি নির্দিষ্ট জনসমর্থন আছে , যদিও তার শাসন পর্বকে ‘জঙ্গল রাজ’ বলে অভিহিত করা হয়। শুধু অতীত দেখলে এদের কারো সাথে জোট করা উচিত নয়। কিন্তু  বিজেপি, আর এস এস  এর প্রভাব প্রতিপত্তি  বাড়ার সাথে  আক্রমণ তীব্র হচ্ছে। এবং বিজেপিকে আর চার পাঁচটা রাজনৈ্তিক দল হিসাবা না  দেখে ফ্যাসিস্ট হিসাবে যখন চিহ্নিত করছি, তখন মতাদর্শের ক্ষেত্রে , লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তো বটেই এমনকি নির্বাচনী কৌশলগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন আছে। এই জায়গা থেকেই বিহারে এই জোট করা হয়ে ছিল, এবং বাস্তব পরিস্থিতির চাপে আর.জে.ডি বেশ কিছু জনমুখী দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয় যা জোটের নির্বাচনী ইস্তাহার থেকে পরিষ্কার ছিল এবং সেই ইস্তাহার নিয়েই বিহারের মানুষের কাছে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব হবার অন্যতম কারণ ছিল বামপন্থীদের বিশেষতঃ সি.পি.আই.এম.এল.লিবারেশন এর দীর্ঘমেয়াদী লড়াই এর ফলে তৈরী হওয়া গ্ণভিত্তি এবং তাকে ব্যবহার করে বিপরীত শ্রেণীর দল গুলির সঙ্গে কার্যকর দর কষাকষি করা। এর মাধ্যমে বিধানসভায় এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাম প্রতিনিধি থাকলে জন বিরোধী ইস্যু গুলি নিয়ে লড়াই করার এমন কি সরকারের সাম্প্রদায়িক কর্মসূচী, বিজেপি, আর এস এস , বজরং দলের ফ্যাসিস্ট আক্রমণ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার এক উল্লেখযোগ্য শক্তি থাকবে। অবিজেপি দলগুলি যতটা এই লড়াইয়ে থাকবে ততটা যৌথ কর্মসূচী থাকবে। বিধান সভার ভিতরে এমন কি লোকসভার ভিতরে ন্যুনতম কর্মসূচী পালনের জন্য স্থায়ী জোটের প্রয়োজন থাকে না। আর মূল লড়াইটা কিন্তু মাঠে-ময়দানে , কলে কারখানায় – যেখানে পঁুজিবাদী , নয়া উদারনৈ্তিক আক্রমণের বিরুদ্ধে নিচু তলার থেকে সংগঠিত হয় শ্রমিক, কৃষক,ছাত্র যুব।  উদাহরণস্বরূপ বিভিন্ন ট্রেড ইয়নিয়নগুলির ডাকা শিল্প ধর্মঘট বা সাম্প্রতিককালের নয়া কৃষি বিলের বিরুদ্ধে কৃষকদের লাগাতার সংগ্রাম-যা পাঞ্জাবের কৃষকরা শুরু করলেও ধীরে ধীরে সারা দেশেই তা প্রভাব ফেলেছে কম. বেশি। কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে নিয়ে আসা এই বিল প্রথম প্রস্তাবিত হয় কংগ্রেস আমলে, কিন্তু তারা তাকে প্রয়োগ করে না-কারণ এর বিরোধিতা তারা অনুভব করতে পারছিল। কিন্তু ২০১৯ এ বিপুল ভোটে জেতা বিজেপি সরকার তাদের স্বৈ্রতান্ত্রিক আচরণ এবং পুঁজির কাছে তাদের দায়বদ্ধতার দরুণ এই বিল তারা প্রয়োগ করবেই – সমস্ত কৃ্ষকদের বুঝিয়ে দিল। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে কৃ্ষকদের ধারাবাহিক অবস্থান, বেশ কিছু কৃ্ষকদের মৃত্যু তাদের অবস্থান বদল করতে পারেনি, এমন কি তাদের খালিস্তানী বলে অভিহিত করার মধ্যে তাদের চূড়ান্ত অমানবিক বিষয়টিও পরিষ্কার হয়। ভারতীয় বড় পুঁজিপ তিরা, বিশ্বায়নের মধ্যে দিয়ে যাদের গাঁটছড়া  সাম্রাজ্যবাদের সাথে বাঁধা , তারা এই ধরণের দৃঢ়, স্বৈরতান্ত্রিক দল এবং নেতৃ্ত্বের প্রয়োজন ছিল। কৃষক আন্দোলনে মূল নেতৃত্বদায়ী গ্ণসংগঠন হল ‘সর্বভারতীয় কৃষক সংঘর্ষ  সমন্বয় কমিটি’ যা তৈ্রী হয়েছে ২৫০ টি কৃ্ষক সংগঠন নিয়ে যার মধ্যে বামপন্থী দলের কৃ্ষক সংগঠন ও আছে। এর পাশাপাশি আছে নর্মদা  বাঁচাও আন্দোলনের বা অন্যান্য গ্ণতান্ত্রিক কৃষক সংগঠন, যারা কোনো ক্ষমতাশীন বুর্জোয়া দলের সাথে যুক্ত নয়।    পাঞ্জাবের আঞ্চলিক দল তাদের মত করে উপস্থিত থাকলেও আর অকালি দল  এন ডি এ ছেড়ে বেরিয়ে এলেও তা শুধুমাত্র তাদের সং গঠন ধরে রাখার জন্য। এক ই কথা কংগ্রেসের ক্ষেত্রে খাটে, কারণ এরা কর্পোরেট রাজের বিরূদ্ধে সং গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না। নয়া উদারনীতিক একনায়কক্তর বিরুদ্ধে সারা স মাজ জুড়ে লড়াই গড়ে তোলার অনিচ্ছা এই দল গুলির সঙ্গে স্থায়ী জোট করার পথে প্রতিবন্ধকতা। 

ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রশ্নে, স্ংবিধানের গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষার প্রশ্নে কংগ্রেসের মতো দল গুলি সরব। কিন্তু সেখানেও দেখা যায় মধ্যপ্রেদেশে কমলনাথ রামমন্দির গঠন কে সমর্থন করেছেন আর তার সময় কংগ্রেস গো হত্যা বন্ধে বিল এনেছে- বিজেপি কে রুখতে তা হল নরম হিন্দুত্বের লাইন, তবুও নির্বাচন একটি বড়ো লড়াই , আর সেই লড়াই এ ‘বিজেপি হটাও , দেশ বাঁচাও ‘ আওয়াজ তুলে বামপন্থী দের যুক্ত মোর্চা শক্তিশালী করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক দল ও গণসংগঠনগুলির মধ্যে বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। এই বিষয়টি খুব ভালোভাবে দলিত সংগঠন গুলি যারা ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অংশ হয়ে যায় নি , তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উন্নাও দলিত দের উপর আক্রমণ বা ভীমা কোরেগঁাও ঘটনা উপলক্ষ্যে দলিত অভ্যুত্থান দেখিয়ে দিয়েছে যে দলিতদের মুলতঃ নিচু অংশের  মধ্যে কি পরিমাণে হতাশা বর্তমান , এবং দলিতদের প্রশ্নটি শুধু জাতপাতগত ন্য ব্রঞ শ্রেণীগত ও বটে। তাই শ্রমিক-কৃ্ষক-ছাত্র-যুব ঐক্য এই চিরাচরিত স্লোগানের পাশাপাশি দলিত-মুসলিম-আদিবাসী গণজাগরণ ও ঐক্যর স্লোগান টি তুলতে হবে। বিহারের নির্বাচনী কৌশল একটা বিশেষ পরিস্থিতেতে , সেই কৌশল সর্বত্র প্রয়োগ করারা শক্তি বামপন্থীদের খুব কম  জায়গায় আছে আর যত্র, তত্র তা প্রয়োগ করতে গেলে তাতে লাভবান হবে দক্ষিণপন্থী দলগুলি।  

ফলে মুসলিম ভদ্রলোকের আবেগ কে সম্মান দিলেও তার স্থায়ী জোটের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করতে গেলে লড়াই এবং বামপন্থী-গ্ণতান্ত্রিক শক্তি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু সংগ্রামী রাজনীতির বিপরীতে শক্তি র ভারসাম্য বুঝে এই লাইন প্রয়োগ করারা রাস্তা খুলে রাখতে হবে।

যত্রতত্র জোট তৈরী করে নির্বাচন সর্বস্ব লাইন দেখা গেছে সংসদীয় বামপন্থী দল সিপি আইএম এর মধ্যে। সিপিআই, আর আস পি, ফরোয়ার্ড ব্লক এক ই পথের শরিক। সিপি আইএম এর সংস্কারবাদী রাজনীতি ১৯৬৭ এর পুর্বেই প্রকাশ পেয়েছে এবং ১৯৭৭ এ তারা বিভিন্নন রাজ্যেঅকংগ্রেসী দলগুলির সাথে সরকার গঠনের পক্ষেও ওকালতি করেছে। সেই অনুযায়ী তারা মায়াবতী , জয়ললিতা এবং পরবর্তীকালে  কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট তৈ্রী করে। বস্তুতঃ আঞ্চলিক শাসকদের সাথে ভারতবর্ষের বড়ো বু্র্জোয়া দের ক্ষ মতার দরকষাকষি থাকলেও কোনো মূল্গত বিরোধ নেই। তাই তারা অনেকেই বিজেপির সাথে একসাথে গাঁটছড়া বেঁধেছিল। যত্রতত্র জোট এবং তাদের সরকারগুলিতে সামান্য কিছু সংস্কার করলেও বিভিন্ন জন বিরোধী কার্যক্রম তাদের আজ গুরুত্বহীন করে তুলেছে।

আজকের পরিপ্রেক্ষিতে ডিমিট্রভ থিসিসকে অনেকেই উল্লেখ করছেন। আমরা আগে এই বিষয়টি আলোছনা করেছি। নিচু তলার থেকে ফ্যাসিবাদী বিরোধী লড়াই এর জোট তৈরী করা ডিমিট্রভ থিসিসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল না। তা আরো আগে গ্রামসি সহ ইতালির কমিউনিস্টরা করেছিলেন, যুদি ও যুক্তফ্রন্টের ক্ষেত্রে তাদের এবং তৃ্তীয় আন্তর্জাতিকের সিধান্ত ছিল সোস্যাল দেমোক্রাটদের সাথে যু ক্তফ্রন্টের। ডিমিট্রভ থিসিস আরো এগিয়ে গিয়ে বুর্জোয়া দল গুলির সাথে ফ্রন্ট এবং এমনকি তাদের সাথে মিলে সরকার গঠন করার কথা বলেছিলেন। ডিমিট্রভ এবং তৎকালীন তৃ্তীয় আন্তর্জাতিকের মূল্যায়ন আমরা আগেই করেছি। হিটলারের সর্বগ্রাসী ফ্যাসিস্ট শাসনের সাথে মোদী অমিত শাহ রাজের মিল থাকলেও অমিল ও আছে- হিটলার ও নাজয় শাসন যেভাবে এক শক্তিশালী সামরিক আক্রমণ আন্তর্জাতিকভাবে শুরূ করেছিলেন যা সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিতবকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, তা এখন নয়। ডিমিত্রভ থিসিস মুলতঃ সেই

পরিস্থিতিতে এসেছিল। বুর্জোয়া গ্ণতন্ত্রের ঝান্ডা তুলে সরকার গঠন কমিউনিস্ট আন্দোলনে পরবর্তীকালে সংশোধনবাদী বিচ্যুতি নিয়ে এসেছিল। আর মাথায় রাখতে হবে ফ্যাসিবাদ পরাস্ত হয়েছিল মুলতঃ সমাজে শ্রেণী সংগ্রামের ঢেঊ এর উপর দঁাড়িয়ে, যা আজকে অনুপস্থিত। তাই বুর্জোয়া দল গুলির সাথে সহযোগিতার বিষয়টি পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে মাথায় রাখতে হবে, কিন্তু সরকার গঠন করে সেই সরকারে বামপন্থী-কমিউনিস্টদের অংশগ্রহণকে বিরোধিতা করাই উচিত, বড়জোড় বাইরে থেকে সমর্থন করা যেতে পারে পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে।

আর আজকের ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের চরিত্র হবে গ্ণতান্ত্রিক – তা শ্রমিক, কৃষক, দলিত , আদিবাসীদের সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ আক্রমণের বিরূদ্ধে, পুঁজি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বাড়ানোর পক্ষে লড়াই গড়ে তুলবে, তেমনি মুসলিম সহ সমস্ত সংখ্যালঘু দের অধিকার রক্ষা, সংবিধানের প্রদত্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে আরো খর্ব করার বিরূদ্ধে লড়াই গড়ে তুলবে।

একমুখী আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে এক বহুতব্বাদী সংস্কৃতির প্রচার য় অনুশীলন সেই লড়াই কে আরো জোরদার করবে। রুশ বিপ্লবকে শুধু স্মরণ করাই নয়, কঠিন পরিস্থিতিতে সংসদ ব্যবহার,এবং সংসদসর্বস্বতারবিরুদ্ধে মতাদর্শগত লড়াই চালিয়ে বিপ্লবী আন্দোলনের বিকাশ – এটাই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য।