তথ্যচিত্রের ইতিহাস : দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী পর্ব
- 08 December, 2020
- লেখক: লিপিকা ঘোষ
বিংশ শতাব্দীর তিনের দশক থেকে ভারতবর্ষে তিনজন তথ্যচিত্রকার সাড়া ফেলেছিলেন। তথ্যচিত্রের ইতিহাসে এঁদের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁরা হলেন - ড.পি.ভি.প্যাথি, ডি.জি.তেন্ডুলকার, কে.এস.হিরলেকার।
পি.ভি.প্যাথি সোরবনে সিলভেইন লেভির অধীনে তথ্যচিত্র নিয়ে চর্চা করেন। প্যারিসে সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনাও করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি তথ্যচিত্র নির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন। নির্মিয়মান তথ্যচিত্র গুলিতে মন্তাজ ও ড্রামাটিক কাটিং-এর ব্যবহার শুরু করেন। কুয়েতের ভূমিকম্পের ওপর উনি যে ছবি নির্মাণ করেন তার জন্য স্থল পথের সঙ্গে সঙ্গে আকাশ পথেও শুটিং করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন অধিবেশন নিয়েও তিনি কৌতুহল উদ্দীপক তথ্যচিত্র তৈরি করেন। ভারতের নিজস্ব নিউজরিলের সূচনাও তিনি করেন। এই নিউজরিলটির নাম ছিল “ইন্ডিয়ান স্ক্রিণ গেজেট”।
দ্বিতীয় জন ডি.জি.তেন্ডুলকর মস্কোর সিনেমা নির্মাতা আইজেনস্টাইন এর কাছে চলচ্চিত্র শিক্ষা গ্রহণ করেন। তৃতীয় জন, কে এস হিরলেকার জার্মানিতে এফ. ডবলিউ.মুরনোর কাছে তথ্য চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ভারতে প্রথম মোশন পিকচার্স কংগ্রেসের আয়োজন করেন। তিনিই এই কংগ্রেসে সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেন। তিনি সেই সময় জাতির শিক্ষার উদ্দেশ্যে স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্য চিত্রকে সিনেমা হলে নিয়মিত প্রদর্শনের জন্য সম্পাদক হিসাবে প্রস্তাব রাখেন। পরবর্তীতে তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হয়। ভারত সরকার চলচ্চিত্রের উপর দুটি আইন তৈরি করে,- “সিনেমাটোগ্রাফ এক্ট অফ ইন্ডিয়া” (1918) এবং “বেঙ্গল এমিউজমেন্ট ট্যাক্স অ্যাক্ট” (1922)। এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মান ও চলচ্চিত্র ব্যবসা সরকারের তত্ত্বাবধানে ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এরই মধ্যে দাদা সাহেব ফালকের হাত ধরে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনীচিত্র বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কলকাতায় ম্যাডন থিয়েটারের প্রযোজনায় মোট বাষট্টিটি বাংলা কাহিনী-চিত্র নির্মিত হয়, 1931খ্রিঃএ প্রথম বাংলা সবাক চিত্র “জামাইষষ্ঠী” নির্মিত হয়। ম্যাডনের পাশাপাশি বহু প্রযোজনা সংস্থা গড়ে ওঠে এবং পূর্ণদৈর্ঘের কাহিনী চিত্র নির্মিত হয়। এদের মধ্যে অরোরা ফিল্ম কোম্পানি, ইন্ডিয়ান সিনেমা আর্টস, আর্য ফিল্মস, তাজমহল ফিল্মস, গ্রাফিক আর্টস, বরুয়া ফিল্ম ইউনিট, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম কার্ট, ইন্দো-ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানির নাম উল্লেখযোগ্য। ঐ সময় ফিল্ম কোম্পানি গুলির প্রযোজনায় প্রায় 119 টি ছবি নির্মিত হয়। এই ছবিগুলির প্রামাণ্য দলিল নেই। হ্যান্ডবিল, পোস্টার, আর খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন থেকে ছবি গুলি সম্পর্কে জানা যায় এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তবে এই ছবি গুলি, আইজেনস্টাইনের “ব্যাটলশিপ পোটেমকিন”, চ্যাপলিনের “গোল্ড রাশ”, গ্রিফিথের “বার্থ অফ নেশন”- এর মত উন্নতমানের শিল্পকর্ম ছিল না। অবশ্য চারের দশক থেকে নিমাই ঘোষ ও বিমল রায়ের হাত ধরে কাহিনী চিত্র গুলি পৌরাণিক, রোমান্টিক, মেলোড্রামাটিক- এর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার রূপ পেতে থাকে। পূর্ণাঙ্গ কাহিনী চিত্র গুলি বানিজ্যিক সফলতা পাওয়ার কারণে বাংলায় তথ্যচিত্র নির্মানের কাজ কিছুটা হলেও ব্যহত হয়।
1931খ্রিঃএ বামপন্থী চলচ্চিত্র-পরিচালক “জরিস ইভান্স” এবং “হেনরি স্টক” - এর নির্দেশে “বরিনেস” নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজে বিশ্ব জুড়ে। 1939খ্রিঃ এ 1লা সেপ্টেম্বর জার্মান পোল্যান্ডকে আক্রমণ করে, দুদিন পর ইংল্যান্ড পোল্যান্ডের হয়ে জার্মানকে পাল্টা আক্রমণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। এই বিভৎস, ভয়াবহ, রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধ চলে টানা ছয় বছর। 1945খ্রীঃএ 2রা সেপ্টেম্বর জাপান আত্ম সমর্পণ করলে যুদ্ধ শেষ হয়।
যুদ্ধের শুরুতেই ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে যুদ্ধের প্রচারের উদ্দেশ্যে তথ্যচিত্রকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। এই সময় ভারতের ব্রিটিশ শাসক “ফিল্ম এডভাইসরি বোর্ড” প্রতিষ্ঠা করে তথ্যচিত্র নির্মান ও তা প্রদর্শণ করার ব্যবস্থা করে। আসলে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তথ্য চিত্রের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধকে মহিমান্বিত করতে চেয়েছিল। ঠিক এই সময় ইউরোপে ও আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু তথ্য চিত্র নির্মিত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -
1)“জার্মান পানজার” (1940) - জার্মানে নির্মিত, ওয়াল্টার রাটম্যান এর ছবি।2)“জার্মান উইপনস-ফ্রগ” (1940)। এটিও জার্মানে নির্মিত, ওয়াল্টার রাটম্যান এর ছবি।3)“এডল্ফ হিটলার - দ্য গ্রেটেস্ট স্টোরি নেভার টোল্ড” (1940)। ডেনিস ওয়াইজ -এর ছবি, ছবিটি জার্মানে নির্মিত।4) “এ কল ফর আর্মস” (1940)।5) “চার্লিস আইল্যান্ড”(1941)ছবিটি কানাডায় তৈরি হয়।6)“ইনসাইড ফাইটিং চাইনা” (1941), কানাডায় নির্মিত, 22 মিনিটের একটি ছবি।7)“কুকন” (1941),এটি আমেরিকায় নির্মিত ছবি।8)“মেন অন দ্য বটম” (1941) ইটালির ছবি। পরিচালক ফ্রান্সিসকো ডি রবার্টিস-এর 99 মিনিটের ছবি। এটিকে সেমি-ডকুমেন্টারি ও বলা হয়।9)“মেন সি এন্ড স্টর্মস” (1942), এটি জার্মানে নির্মিত ছবি। “সোলজার্স ফুড”(1942) এটি ইংল্যান্ডে নির্মিত ছবি।10)“দ্য ব্যাটল ফর দ্য ম্যারিয়ানাস” (1944)ছবিটি আমেরিকায় তৈরি হয়,পরিচালক-গর্ডন হলিঙ্কস।11)“কলিং অস্ট্রেলিয়া” (1944), জাপানে নির্মিত ছবি,পরিচালক - হি ইয়াঙ।12)“মেমফিস বেল : এ স্টোরি অফ ফ্লাইং ফরট্রিস” (1944) আমেরিকায় নির্মিত ছবি, নির্মাতা উইলিয়াম ইলার। 45 মিনিটের ছবি।13) “ডেনমার্ক ইন চেইনস্” (1945) ডেনমার্কের ছবি। নির্মাতা-স্ভেন মেথলিঙ।14) “লেটস দেয়ার বি লাইট” (1946) আমেরিকায় নির্মিত। পরিচালক ওয়াল্টার হাস্টনের 58 মিনিটের ছবি।15) “ব্লাড এন্ড বিস্ট” (1949) নামে ছবি নির্মিত হয়।
তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ভারতকে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত দেশ বলে ঘোষণা করলে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ সরকারের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এমনকি 1939 খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে তাদের যুদ্ধ প্রচেষ্টার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় জনমত গড়ে তুলতে এবং সৈন্যদের মনোবল বাড়াতে, ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধের প্রচারের জন্য তথ্যচিত্রকে কাজে লাগাতে চায় এবং “ফিল্ম এডভাইজার বোর্ড” প্রতিষ্ঠা করেন। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় ফিচার ফিল্মের প্রডিউসর জে. বি. এইচ ওয়াদিয়াকে ।
এই সময় আলেকজান্ডার’শ কে ব্রিটেন থেকে ভারতে আনা হয় তথ্যচিত্র নির্মান ও কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য। সাধারন মানুষ যাতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় তার জন্য সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের ছবি তুলে প্রদর্শণের ব্যবস্থা করা হয়। সেনাবাহিনীতে গড়া হয়,“আর্মি ফিল্ম ইউনিট”। 150 জন অসামরিক ও 50জন সামরিক কর্মকর্তা কে নিয়ে তৈরী হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সব চেয়ে বড় ফিল্ম ইউনিট। এই ইউনিট, শাসকের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের ছবিকে গৌরবান্বিত করতে, সাধারন মানুষের মনোবল বাড়িয়ে তুলতে ও সেনাবাহিনীতে যোগদানে উৎসাহিত করতে তথ্য চিত্র তৈরি করে। ড.প্যাথি এই সময় দুটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন, “হি ইস ইন দ্য নেভি”, এবং “দ্য প্লেন্স অফ হিন্দুস্থান”।
রাজনৈতিক স্বার্থে চলচ্চিত্রের কার্যক্রমকে আরও মজবুত করার জন্য “ফিল্ম এডভাইসরি বোর্ড” কে ভেঙে দুটি বোর্ড গঠন করে। ভারতে জন্ম নেয় আরও দুটি নতুন সংস্থা-“ইনফরমেশন ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া”, এবং ‘ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড’। 1943 খ্রিঃ এ সেপ্টেম্বরে ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড গঠিত হয়। এই সময় নির্মিত তথ্যচিত্রগুলো মূলত যুদ্ধকালীন কাজ কর্ম নৌ বাহিনী, বায়ু সেনার নিয়োগ, কালোবাজারি দের বিরুদ্ধে প্রচার, ও সামরিক উৎপাদনের ফিরিস্তি দেবার জন্য তৈরি হয়। ন্যাৎসী, ফ্যাসিস্ট এবং জাপানি সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির প্রস্তুতির ছবি এইসব তথ্য চিত্রে ফুটে ওঠে। ভারতের ব্রিটিশ সরকারের তত্ত্বাবধানে যে তথ্যচিত্র গুলি তৈরি হয়েছিল সেগুলি মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -
“ইন্ডিয়ান আর্মি স্পেশাল”(1940)।“মেন ইন ইন্ডিয়া”(1941)।“টুলস্ ফর দ্য জব”(1941)।“দ্য ট্রাবল্ ইন ইন্ডিয়া”(1942)।বিমল রায় পরিচালিত,“দ্য ফেমাইন ইন বেঙ্গল”(1943)।“15ই অগাস্ট 1947 দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে ইন ইন্ডিয়া এন্ড পাকিস্তান”(1947)।বেসরকারি সংস্থার তৈরি কিছু তথ্য চিত্র হল- “গান্ধী ইজ হেয়ার” (1931)।“গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া-বম্বে”(1932)।“দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার ইন কালার”।“ডেলহি”(1938)”ইন্ডিয়াস স্ট্রাগল ফর ন্যাশানাল শিপিং” (1947)।
1945খ্রিঃ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয় হলেও সোশালিস্টদের ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন ধরে। ভারতে অন্তরীণ সরকার সক্রিয় হলে “ইনফরমেশন ফিল্ম অফ ইন্ডিয়া” এবং “ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারড” বন্ধ হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের দ্বারা ভারত ছাড়ো আন্দোলন তীব্রতর হলে ভারতের স্বাধীনতা- সংগ্রাম শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছায় 1946খ্রিঃএ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের সরকার বুঝতে পারে ঔ পরিস্থিতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তারা ক্ষমতা এবং অর্থবল দুই-ই হারিয়ে ফেলে। এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। 1947 খ্রিঃ এর গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, 1948 খ্রিঃ এর জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ সরকার অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদনীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭খ্রিঃ এর জুন মাসে “জওহর লাল নেহেরু”, “আবুল কালাম আজাদ”, “মহম্মদ আলি জিন্না”, “ভীমরাও রামজী আম্বেদকর” প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়
স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় 1947খ্রিঃ এর আগস্ট মাসের 15ই আগস্ট।
1947খ্রিঃ এর 15ই আগস্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় কোনও সরকারি ইউনিট এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে ঘটনাটি ক্যামেরা বন্দি করে রাখতে পারেনি। দুটি ব্যক্তি গত ইউনিট ও একটি বিদেশি ফিল্ম ইউনিট এই ঘটনার ছবি তুলে রেখেছিল- “ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে-15 আগস্ট 1947” এবঃ “ইন্ডিয়াস স্ট্রাগল ফর ন্যাশানাল শিপিং”- পরিচালক পল জিল, সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন পি. ভি. প্যাথি এবং প্রযোজনা স্কিনডিয়া স্টিম নেভিগেশন কম্পানি লিমিটেড, বোম্বে টকি ও ফিল্ম ক্লাসিক অফ মাদ্রাজ। এছাড়া অম্বালাল প্যাটেল ও ঐদিন ছবি তুলে রাখেন।
অনুষ্ঠানটি ভারতের জাতীয় দূরদর্শনে চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। পরে ভারত সরকার নির্মাতার কাছ থেকে ছবির প্রিন্ট সংগ্রহ করে দলিল হিসেবে ছবিগুলি সংরক্ষণ করে রাখে।
ভারতের স্বাধীনতার পর তথ্য ও বেতার মন্ত্রক থেকে জন্ম হয় “ফিল্ম ডিভিশন” এর। এ ছাড়া ট্রেড নেম, ইনফরমাশন ফিল্ম অফ ইন্ডিয়ার বদলে রাখা হয় ‘ডকুমেন্টারি ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া’। ‘ইন্ডিয়ান নিউস প্যারড’ কে ‘ইন্ডিয়ান নিউস রিভ্যিয়’ নাম করণ করা হয়।
শুধু যুদ্ধের ছবি দেখার একঘেয়েমি কাটাতে তখন যুদ্ধ ছাড়াও শিল্প ও ভাস্কর্য বিষয়ে কিছু তথ্য চিত্র নির্মান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যেমন-“রয়্যাল ওয়েডিং ইন ইন্ডিয়া”(1946), “ডেয়ারি ফারমিং ইন গুজরাট”(1940), “ডকুমেন্টারি অন মিউজিক”(1940), “সার্ক ফিশিং”(1946),ইন্ডিয়া-দ্য পাঞ্জাব”(1940) ইত্যাদি। এর পর পাঁচের দশকে সরকারি সংস্থা ফিল্ম ডিভিশন ছাড়াও বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা যেমন টাটা, ডানল্প, আইটিসি, হিন্দুস্থান লিভার,ইউ এস আই ও টি সি এম এর মত মার্কিন সংস্থা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ,উপত্যকা প্রকল্প প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নানা ধরনের তথ্যচিত্র তৈরি করতে থাকে। তবে গত শতাব্দীর পাঁচের দশক থেকে ভারতে তথা বাংলায় যথার্থ নান্দনিক তথ্যচিত্রের আগমন ও প্রসার ঘটে।
******
তথ্যসূত্র-1) সিনেমা সপ্তম শিল্প কলা - বরুন দাশ।2)The motion picture-The new York Times, 7th june 2019.3)The early year of Calcutta-cinema in sukanto choudhury edited:Calcutta the leaving city.4)আর রেখো না আঁধারে-সজল চট্টোপাধ্যায়5) list of documentary film about WW-।।.6) সোনার দাগ (শতবর্ষের আলোয় বাংলা চলচ্চিত্র) - গৌরাঙ্গ প্রসাদ ঘোষ।