ফেসবুকের মধ্যে দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ালে কার লাভ হয় ?
- 06 November, 2020
- লেখক: সুমন সেনগুপ্ত
১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি জার্মানিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন অ্যাডলফ হিটলার, তাঁর প্রচার সচিব ছিলেন জোসেফ গোয়েবেলস। তিনি বলতেন একটা মিথ্যেকে যদি বারংবার বলা যায় তাহলে মিথ্যেটাও সত্যি বলে প্রতিভাত হয়। আজকের সময়ে এই কাজটা কি এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো করছে না?
২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে কোনও একটি সংবাদপত্রের হেডলাইন ছিল ‘গুগল কি ভারতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে?’। এই খবরটা বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই ‘গুগল’ যদিও তৎক্ষণাৎ অস্বীকার করেছিল, কিন্তু সেই সময়ে অন্যান্য বেশ কিছু সংস্থা এই বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পায় যে, গুগলে যেভাবে প্রার্থীদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে তা থেকে যদি একটু তথ্য সংশ্লেষণ করে নেওয়া যায়, তাহলে যারা দ্বিধান্বিত নির্বাচক, তাঁদের সহজেই প্রভাবিত করা সম্ভব। ফেসবুক বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। আমেরিকার একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শাসক দলের ঘৃণা ও বিদ্বেষ পূর্ণ মেসেজ এবং ভিডিও ফেসবুক সরায়নি । কেন? তাঁদের তাহলে উদ্দেশ্য কী ? অভিযোগ উঠেছে যে , তাঁরা তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি করতে চায়নি বলে এই ভিডিওগুলো সরাতে চাননি। কিন্তু এর সঙ্গে ফেসবুকের ব্যবসার কী সম্পর্ক ? তাহলে যে অভিযোগ উঠছে যে সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা যায়, বা সম্ভব, সেটা সত্যি ?
আজকের সময়ে শুধুমাত্র হোয়াটসআপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ভারতে প্রায় ৫০ কোটি। এই হোয়াটসআপ আবার ফেসবুকেরই সহযোগী সংস্থা। গত লোকসভা নির্বাচনে ভারতে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। তাহলে নির্বাচকমণ্ডলীর প্রায় অর্ধেকের বেশী মানুষ এই মাধ্যম ব্যবহার করেন। সুতরাং যদি কোনও রাজনৈতিক দল চায় যে এই মাধ্যমকে তারা তাদের মতো করে ব্যবহার করবে এবং সত্যি মিথ্যে মেশানো বা অর্ধসত্য খবর প্রচার করবে, তাহলে তাঁরা কী করবে? এই সামাজিক মাধ্যমগুলোকে তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। উল্টোদিক থেকে দেখলে এই ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোর কী লাভ হবে? মানে তাঁরা এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে চাইবে কেন? চাইবে একটাই কারণে, কারণ ভারত বা পিছিয়ে পড়া বেশ কিছু দেশে এখনও বেশির ভাগ মানুষের কাছে ইন্টারনেটের মানে এই সামাজিক মাধ্যম বা খুব বেশি হলে একটু আধটু মেইল দেখা বা করা। সেখানে এইরকম একটি সামাজিক মাধ্যমকে যদি দেখানো যায় এই প্রক্রিয়াকেই ইন্টারনেট বলে তাহলে লাভ ই লাভ। অথচ সত্যিটা কী? যদি গুগল করা যায় ‘ভারত’ শব্দটি লিখে তাহলে যতটা ভারতবর্ষের চেহারা দেখতে পাওয়া যায়, ততটাই ভারতবর্ষ গুগলের বাইরে পড়ে থাকে। কেউ মনে করতেই পারে যে ইন্টারনেট তাঁদের অধিকার অথচ এই ভারতবর্ষেই সবচেয়ে বেশি দিন ইন্টারনেট বন্ধ থেকেছে, তা নিয়ে কিন্তু ভারতবাসী খুব বেশি সোচ্চার হয়নি। ভারতবর্ষের ইন্টারনেটের স্পিড বা গতি বেশীরভাগ জায়গাতেই ধীর এবং পরিবর্তনশীল অথচ ভারতবাসীর স্মার্টফোন কেনার প্রবণতা ঊর্দ্ধমুখী, হয়তো বা বিশ্বে প্রথম। ভারতে এখনও মহিলাদের মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ২১ শতাংশ মাত্র, পুরুষদের ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণ। সামাজিক কারণেই মহিলারা পুরুষদের তুলনায় অনেক কম ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। দেখা গেছে গ্রামীণ ভারত, যেখানে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বসবাস করেন, তার এক চতুরার্থংশের কাছে ইন্টারনেট আছে।
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, ফেসবুক তো একটা বন্ধুত্বের মাধ্যম, এর মধ্যে ব্যবসা কোথায়? এতো শুধু নিজেদের পরিচিত মানুষদের সঙ্গে আরও বেশী জুড়ে থাকার মাধ্যম, এতে কী করে ব্যবসা হবে? যদি খেয়াল করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে বেশ কিছু পোস্টে একটা কথা লেখা থাকে, তা হলো ‘ স্পনসর্ড’ অর্থাৎ পয়সা দিয়ে সামনে আনা হয়েছে । কিন্তু শুরুটা কি এরকম ছিল? ২০১২ সালে ফেসবুক যখন প্রথম আসে সারা পৃথিবীতে , তখন কিন্তু ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকেরবার্গ দেখেছিলেন যদি তাঁর ব্যবসা বাড়াতে হয়, তাহলে তাঁকে ভারতে এবং আফ্রিকাতে বাড়াতে হবে। ২০১৪ সালে উনি যখন একটি হেলিকপ্টার করে রাজস্থানের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম চান্দৌলিতে পৌঁছন, তখনও উনি জানতে পারেননি, যে কতবড় বাজার ওঁর জন্য অপেক্ষা করছে। জুকেরবার্গ খুব ভালো করে জানতেন কী করে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে প্রথমে ক্রেতা, তারপর বিক্রেতা বানিয়ে ফেলা সম্ভব। ভারতের মতো দেশে যদি বিনামূল্যে ফোন এবং ইন্টারনেট দেওয়ার লোভ দেখানো যায় তাহলেই তো কেল্লা ফতে। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ইন্টারনেটে যদি বাড়ির সাবানের খোঁজ করেন, বা সাধারণ আলু পটলের দামেরও খোঁজ নেন, তাহলে প্রতিটি পোস্টের পরই সে কীভাবে ওই জিনিসগুলো অনলাইন সরবরাহ পেতে পারেন তার বিজ্ঞাপন আসতে থাকে মুহুর্মুহু। কীভাবে একজন মানুষের পছন্দ-অপছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিভাবে পাড়ার দোকান থেকে না কেনাটাকেই নিয়মে পরিণত করে ফেলা যায় সেটাও এই নিয়ন্ত্রণের অঙ্গ। আরও একটি কথা মনে করানো জরুরী। এই যে অনেকে বলছেন প্রধানমন্ত্রী ‘অপরিকল্পিত’ লকডাউন ঘোষণা করেছেন, আদপেই তা নয়, উনি খুব জেনে বুঝে এই লকডাউন ঘোষণা করেছেন যাতে মানুষ আরও ডিজিটাল হয়, মানুষ আরও সোশ্যাল মিডিয়া মুখী হয়ে ওঠে এবং বেশী অনলাইন কেনাকাটা করে, আর সেখানেই প্রতিটি বিজ্ঞাপনে ফেসবুকের লাভ হবে। ঘটনাচক্রে তাই হয়েছে।
সারা পৃথিবীতে বহু বড় সংস্থা ঠিক করেছে যে তাঁরা ফেসবুকে আর তাঁদের বিজ্ঞাপণ দেবে না। সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু সংস্থাও ঠিক করেছে যে তাঁরা কিছু টেলিভিশন চ্যানেলে তাঁদের সংস্থার বিজ্ঞাপণ দেবেন না, কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে? এই মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যমের গ্রাসে যেভাবে প্রায় বেশীরভাগ মানুষ নিমজ্জিত আছেন তাই শুধু কিছু চ্যানেলে যদি বিজ্ঞাপণ না যায় তাহলে কি এই সমস্যার সমাধান হবে? তনিষ্ক বলে একটি গহনা সংস্থার একটি বিজ্ঞাপণকে কেন্দ্র করে যেভাবে পুরো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হল, যার ফলে ওই বিজ্ঞাপণটিকে সরিয়ে নেওয়া হল, তাতে কি আবার প্রমাণিত হল না, যে সামাজিক মাধ্যমই এখন এই সময়ের মানুষের চিন্তাভাবনার নিয়ন্ত্রক?
এই বড় টেকনোলজিকাল কোম্পানি এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল একে অন্যের পরিপূরক। নোটবন্দীর পরপর ছিল উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। তখন উত্তরপ্রদেশের একটি হোয়াটসআপ গ্রুপে প্রায় ৩৫লক্ষ সদস্য ছিল ( কোনও ঊর্ধসীমা ছিল না তখন ) একটি খবর ছড়ানো হয়, যে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব নাকি তাঁর বাবা মুলায়ম সিং যাদবকে চড় মেরেছেন। মুহূর্তে এই খবর উল্কার গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায় যে খবরটি ভুয়ো। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ সেদিন এই ঘটনাটিকে উল্লেখ করে বলেছিলেন এই মুহূর্তে তাঁরা এতটাই ডিজিটাল শক্তিমান, যে কোনও খবরকে তাঁরা ‘ভাইরাল’ করে দিতে পারেন। ফেসবুক এমন একটা শক্তিশালী মাধ্যম সেটাতে যদি কোনও ঘৃণা বিদ্বেষপুর্ণ ভিডিও বা মেসেজ কিছুক্ষণ ছড়ানো যায় তাহলে তারপর সেটা হোয়াটসআপ মারফত মুহূর্তে কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। ঠিক এই বিতর্কটি সম্প্রতি সামনে এনেছে আমেরিকার একটি সংবাদপত্র। তাঁরা বলেছে যে ভারতে যিনি এই সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বশীল, তিনি ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্রদের ঘৃণা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যকে ফেসবুকে প্রচারিত হতে দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে দিল্লির দাঙ্গা এবং অন্যান্য বেশ কিছু ছোটখাট দাঙ্গার ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীন কর্মীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই ধরনের প্রচারকে আটকানো হয়নি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে ফেসবুকের কি আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল না?
প্রচলিত যে সংবাদমাধ্যমগুলো আছে তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে, সম্পাদকমণ্ডলী আছে, পাঠকসমাজের কাছে দায়বদ্ধতা থাকে, কিন্তু এই ফেক খবর উৎপাদনকারী সামাজিক মাধ্যমগুলোর কোনও দায়ও নেই, দায়িত্বও নেই। সেই জন্য বারেবারেই দেখা গেছে বিভিন্ন দেশে ফেসবুক এই ধরনের কাজকে ঘুরিয়ে সমর্থন করে। কেন করে ? তাহলে কি ফেসবুক নিজে এই ঘৃণা বিদ্বেষের রাজনীতিকে সমর্থন করে? এখানেই আসে মনস্তত্ব। মানুষের মনকে খুব সহজে তাঁরা পড়তে পারে। মানুষ বিশ্বাস করতে চায়না অনেক কিছু। দেখা গেছে তাও সে সাম্প্রদায়িক হিংসা ও ঘৃণা সঞ্চারক ভিডিও দেখে, কেন দেখে ? অত্যাচারী তো বটেই, অত্যাচারিত সম্প্রদায়ের মানুষও কেন দেখে? দেখে কারণ তাঁরা মনে করে এটা সত্যি হতে পারে না, কোনও জনপ্রতিনিধি এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। যত এই ভিডিওগুলো মানুষ দেখে, যত বেশি করে পছন্দ করা, মন্তব্য করা বা শেয়ার করা বা এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে, তত তথ্য ফেসবুকের হাতে আসে, তত আচরণগত ভাবে মানুষকে তাঁরা চিহ্নিত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী মানুষকে চালনা করতে পারে সেইদিকে। এই ব্যাবসায়িক উৎসাহ প্রদান শুধু ফেসবুকের নয়, সমস্ত সামাজিক মাধ্যম দিয়ে করা হয়, আর সেটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের এই মুহূর্তের ধবংসের মূলে। তাহলে যার হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা আছে, যার কাছে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার অর্থ এবং লোকবল আছে সেই কি তবে জয়ী হবে?
আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবী সহ দেশ করোনা আক্রান্ত। বিভিন্ন রাজ্য নিজের নিজের মত করে চেষ্টা করছেন কি করে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের রাজ্যেও চলছে বেশ কিছু সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগ। যেহেতু চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যয় নূন্যতম, তাই চেষ্টা করা ছাড়া গতি নেই। পশ্চিমবঙ্গে এমনই একটি উদ্যোগ হল সরকারী ‘সেফ হোম’ বা নিরাপদ আস্তানা। সরকার হয়তো বিজ্ঞাপণও দিয়েছে, কিন্তু কতজন জানেন এই বিষয়টি সম্পর্কে? এই ‘সেফ হোমে’ যে কোনও মানুষ ইচ্ছে করলেই থাকতে পারেন, এই স্থানটি ঠিক হাসপাতাল নয়, কিন্তু একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা, ডাক্তারেরা ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসা করেন। কিন্তু যেহেতু এই বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে কেউ ভালো কিছু লেখেন নি, বা কোনও ভিডিও করে ছাড়া হয়নি, তাই এটা নিয়ে আলোচনাও হয়নি, আর যা সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হয়না, তা নিয়ে সাধারণ গণমাধ্যমে খবরও হয় না, ফলে বেশীরভাগ মানুষের চোখেও পড়ে না এটাই এখন নিয়ম। অথচ রাজ্য সরকারের এই ব্যবস্থাপনাটি কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। অথচ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কোনো মন্ত্রী যদি এমন যেকোনও কথা বলেন যে গোমূত্র খেলে করোনা সারে, সেই কথাগুলো কিন্তু এমনভাবে প্রচারিত হয় সামাজিক মাধ্যম জুড়ে তখন যে কোনও মানুষের মনেই এই চিন্তাটা এসে পড়তেই পারে যে সত্যিই হয়তো থালা বাটি বাজিয়ে বা ‘ গো করোনা গো’ বলে আওয়াজ করলে বা শব্দের ফ্রিকুয়েন্সিতে করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব। এখানেই আসলে সামাজিক মাধ্যমের মজা, আপনি যেটা বিশ্বাস করতে চান, সে আপনাকে তাই দেখাবে, বা সেই রকম ধরনের খবরই আসতে থাকে আমার আপনার নিউজফিডে। এখানেই ফেসবুকের বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের মজা। হয়তো আমার আপনার নিউজফিডে আসছে যে বিহারে বা অন্য কোথাও বিজেপি হারতে পারে, কিন্তু সেটাই যে সত্যি এমনটা নাও হতে পারে, কারণ আমার আপনার বন্ধুতালিকার বাইরে এমন বহু মানুষ পড়ে আছেন যাঁদের কাছে হয়তো আমি আপনি পৌঁছতেই পারিনি। কারণ মানসিক ভাবে আমি আপনি তাঁদের পছন্দ করি না, তাই তাঁরা কি ভাবছেন বা তাঁদের নিউজফিডে কি আসছে তা আমরা হয়তো জানতেও পারছিনা, এটাকেই বলে ফলস ন্যারাটিভে বিশ্বাস করা, আর সেটা করতে করতেই আমরা বুঝতে পারি না, কিভাবে বিজেপির মতো শক্তিকে হারাতে হবে।
১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি জার্মানিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন অ্যাডলফ হিটলার, তাঁর প্রচার সচিব ছিলেন জোসেফ গোয়েবেলস। তিনি বলতেন একটা মিথ্যেকে যদি বারংবার বলা যায় তাহলে মিথ্যেটাও সত্যি বলে প্রতিভাত হয়। আজকের সময়ে এই কাজটা কি এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো করছে না? যাঁদের কথা আমরা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করছি? ওই ৩০শে জানুয়ারী ১৯৪৮ সালে খুন হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। সেদিনই কি সত্যের হত্যা হয়েছিল? ভারতের বিরোধী দলের কিন্তু দায়িত্ব বর্তায় মানুষের সামনে সত্যটা উন্মোচন করার। বড় টেকনোলজিকাল কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে এই ঘৃণ্য কাজটি করতে পারেন না, এই সত্যিটা দেশের নাগরিকের সামনে তুলে ধরার মুখ্য দায়িত্বটা বিরোধীদেরই নিতে হবে। যাঁরা নিজেরা রাজনীতি করেন না বলে সত্যিটা জেনেবুঝেও মিথ্যেটা মুখ বুজে মেনে নিচ্ছেন, বা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন, সেই সব অগণন জনতাও দেশের সর্বনাশের জন্য দায়ী থাকবেন। । বহু সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মের এই ভারতে এটা করা শুধু ভুল নয়, অন্যায়ও বটে। এক্ষেত্রে কেউই দায়বদ্ধতা এড়াতে পারেন না।