উপন্যাস উত্তরঙ্গ - পুঁজি,পরম্পরাগত জীবন ও সমরেশ বসু
- 06 November, 2020
- লেখক: কমল দাশ
সমরেশ স্বনামে মোট একশ আটটি উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে 'উত্তরঙ্গ" 'জগদ্দল','বি. টি. রোডের ধারে', গঙ্গা,'টানাপোড়েন ' ও ' বাধান' এই ছটি উপন্যাসে গোষ্ঠী জীবনের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি ও সমাজ- সম্পর্ক চিত্রিত করেছেন। উত্তরঙ্গ উপন্যাস নিয়ে এই আলোচনায় যন্ত্রশিল্পের অনিবার্য আঘাতে চিরায়ত জীবন জীবিকা হারানো মানুষের অন্তর্দাহকে সমরেশ কি ভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন তা বোঝার চেষ্টা রয়েছে।
পুঁজির সঙ্গে পরম্পরাগত জীবনের সম্পর্ক ওতোপ্রোতো। পুঁজির সহজাত দাপট মানুষকে তার চিরায়ত জীবন জীবিকা থেকে উৎখাত করে, বাধ্য করে অন্য পেশায় প্রবেশ করতে। বাস্তচ্যূত হয়ে আজন্ম লালিত পরিচিতিকে বিসর্জন দিয়ে অন্যের আজ্ঞাবাহী কর্মচারী হিসেবে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে বাধ্য হয় অগণিত মানুষ। প্রজন্ম লালিত কৌম্য জীবন থেকে বিযুক্ত হওয়া মানুষ বুকে যন্ত্রনা চেপে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মুনাফা সৃষ্টির উপাদান হিসেবে বেঁচে থাকে আমৃত্য। আজকের পৃথিবীতে পুঁজি হাঙরের দানবীয় দাপটে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ তার প্রথাগত জীবন থেকে বিতাড়িত হচ্ছে।বাড়ি জমি হারিয়ে,চিরায়ত পেশা থেকে উচ্ছেদ হয়ে শহরের জনসমুদ্রে একজন পরিচয়হীন "আগন্তুক" হিসেবে টিকে থাকে। প্রায় সত্তর বছর আগে সমরেশ বসু ভিটে মাটি হারানো ছিন্নমূল মানুষের এই যন্ত্রণাকে বুঝেছিলেন হৃদয় দিয়ে। গভীর মমতা নিয়ে দেখেছিলাম কৃষক ও কারিগরের জমি ও যন্ত্রপাতি কি ভাবে পুঁজির দখলে চলে যাচ্ছে। কৃষক, কামার,কুমোর,তাঁতি, চর্মকার পৈতৃক ভিটে মাটি ছেড়ে শহরের কারখানায় কাজ নিতে বাধ্য হচ্ছে। শরৎ চন্দ্রের গফুর যে ক্ষত বুকে নিয়ে মেয়ে আমিনার হাত ধরে বাস্তু ছেড়ে ফুলবেড়িয়ার চটকলে কাজ নিতে বাধ্য হয়েছিল; সমরেশ সেই ক্ষতকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
'পুঁজি' গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ' প্রিমিটিভ আ্যকুমুলেশন' পরিচ্ছেদে মার্ক্স দেখিয়েছেন প্রাথমিক উৎপাদক অর্থাৎ কৃষক আর কারিগরদের তাদের উৎপাদনের উপকরণ থেকে বিযুক্ত করতে পারলে তবেই সেই উপকরণ বিশেষ করে জমি আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি পুঁজির দখলে আসবে। সেই সঙ্গে বিরাট সংখ্যক মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়ায় শহরের কারখানায় এসে মজুর হিসেবে শ্রম বিক্রি করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। ফলে পুঁজিবাদী শিল্পোৎপাদনের দুটি আবশ্যিক শর্ত জমি আর মজুর -দুটিই পূরণ হবে। পুঁজির এই আন্তর্জাতিক চেহারা সম্পর্কে সমরেশ বসু সচেতন ছিলেন কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী বনিক ইংরেজ এ দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পরম্পরাগত জীবন থেকে উৎখাত করে জল জমি কেড়ে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে নিক্ষেপ করেছিল,সমরেশ তা মর্মে মর্মে বুঝেছিলেন ।' শিল্পায়নের মধ্যে ভবিষ্যত সমাজ জীবনের অঙ্কুর ঘটেছে 'এ কথাকে আপ্তবাক্য হিসেবে না ধরে যন্ত্রশিল্প কিভাবে দেশের অগণিত মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত করে তুলেছিল,ভিটে ছাড়া করেছিল তা তুলে এনেছেন তাঁর লেখায়।এর অন্যতম কারণ হল দেশের মানুষের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা। মনে রাখতে হবে মানুষই সমরেশের সৃষ্টির ভরকেন্দ্র। তাঁর কথা সাহিত্য মূলত মানুষকেন্দ্রিক।সমাজ ও সময় তাঁর লেখায় বারবার ফিরে ফিরে এলেও তিনি আসলে হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন মানুষের কথাকার। মানুষের প্রতি অপরিসীম কৌতূহল ও ঔৎসুক্য নিয়ে তিনি যুগসত্যকে উপলব্ধি করেছেন। যুগ পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী সেদিনের গ্রামীণ মানুষের দৃষ্টিকোন থেকে তিনি ঐতিহাসিক সত্যেকে বলতে চেয়েছেন । সভ্যতার' উত্তরঙ্গ জলোচ্ছ্বাসে মজ্জমান সাধের তরণী নিয়ে ইংরেজ বনিক যখন বাংলা তথা ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে গ্রামীন গোষ্ঠী জীবনে অভূতপূর্ব পরিবর্তন নিয়ে আসছে, তখন সমরেশ ব্যক্তি মানুষের জীবনের ক্ষয় ক্ষতি পরম মমতায় ধারন করছেন নিজের সত্তায়।অমোঘ এবং অনিবার্য পরিবর্তনকে দেখছেন মানুষের নিদারুণ কষ্টের নিরিখে।
উনিশ শতকে ইংরেজ বনিক ভারতবর্ষকে সামন্ততান্ত্রিক যুগ থেকে পুঁজিবাদী শিল্পোৎপাদনের বুর্জোয়া যুগে যে দ্রুত নিয়ে যাচ্ছিল এবং এর ফলে এদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন এসে গ্রামের কৃষি ও হস্তশিল্প নির্ভর অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলছিল তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। সিপাহি বিদ্রোহের পর যন্ত্রশিল্পের আকস্মিক আগমন এবং প্রসারের ফলে ভারতবর্ষের গ্রামজীবনের পুরানো অর্থনৈতিক কাঠামোয় ভেঙে গিয়ে গ্রাম সমাজের পরম্পরাগত সভ্যতা ও সংস্কৃতি যে ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে ছিল তা তিনি নিরাসক্ত দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বাণিজ্যিক স্বার্থের আঘাতে ধ্বংসমুখী বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিকে পরিপূর্ণ মমতা নিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। বাস্তুভিটে এবং পরম্পরাগত পেশা থেকে উৎখাত হওয়া যন্ত্রণাদীর্ণ বাংলার কৃষক-হস্তশিল্পিদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও চট কলে কাজ করতে যাওয়ার নিদারুণ বাস্তবতা সমরেশ চাক্ষুষ করেছিলেন।যুগ পরিবর্তনের সেই মহেন্দ্র ক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলার গ্রামীন মানুষের বিপর্যস্ত জীবন জীবিকা এবং বাস্তুভিটে হারানোর যন্ত্রণাকে চিত্রিত না করে ঐতিহাসিক বস্তুবাদিতার প্রতি সুবিচার করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। সমালোচক সনৎ বসু " লিখেছেন "যে চাষী জমি হারিয়ে তার সমাজ জীবনের ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্য হল চটকালে কাজ করার জন্য, যে তাঁতী তার বংশগত জীবিকার প্রাণকেন্দ্র তাঁতকে উঠিয়ে দিয়ে ভিন গাঁয়ের পথ ধরতে পা বাড়াল" তাদের কথা বাদ দিয়ে যুগ জীবনের বাস্তব সত্য আঁকা সমরেশের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
সমরেশ স্বনামে মোট একশ আটটি উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে বাহান্নটি উপন্যাসের উপজীব্য হয়ে উঠেছে ব্যক্তি ও সমাজ সম্পর্ক। গোষ্ঠীবদ্ধ গ্রামীন ও নাগরিক জীবনে সমাজের স্বরূপ তথা সমাজে ব্যক্তির ভূমিকার মূল্যায়ন পাওয়া যায়।'উত্তরঙ্গ" 'জগদ্দল','বি. টি. রোডের ধারে',গঙ্গা,'টানাপোড়েন ' ও ' বাধান' এই ছটি উপন্যাসে গোষ্ঠী জীবনের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি ও সমাজ- সম্পর্ক চিত্রিত করেছেন। আমরা এই আলোচনায় যন্ত্রশিল্পের অনিবার্য আঘাতে চিরায়ত জীবন জীবিকা হারানো মানুষের অন্তর্দাহকে সমরেশ কি ভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন তা বোঝার চেষ্টা করব। একই সাথে মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার মধ্যে তাঁর স্বাদেশিকতা কি ভাবে ব্যপ্ত হয়ে আছে তা আলোচনা করব।
১৯৫১ সালে সমরেশ বসুর প্রথম উপন্যাস 'উত্তরঙ্গ 'প্রকাশিত হয়। যদিও এর আগে তিনি "নয়নপুরের মাটি" লিখেছেন, যেটি তাঁর দ্বিতীয় মুদ্রিত উপন্যাস। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে যন্ত্র শিল্পের আকস্মিক আগমনে ভেঙে পড়া গ্রামীণ সমাজ" উত্তরঙ্গ" র প্রেক্ষাপট। উপন্যাসের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন '"যে উপখ্যান আমি রচনা করেছি,তা উপাখ্যান হলেও ইতিবৃত্তও বটে।'উপাখ্যান' আর 'ইতিবৃত্ত ' শব্দদুটি ব্যবহার করে আসলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন উপখ্যানের আদলে ইতিহাস রচনা করবেন।আর ঠিক এই কারণেই বোধ হয় উপন্যাসের শুরুতে লিখছেন " আঠারোশো ষাট সালের এক রাত্রি।"ইতিহাসের দৃষ্টিকোনে সময়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূণ।এই সময়ে বনিক ইংরেজ বাংলা তথা ভারতবর্ষের গ্রামীন অর্থনীতিতে ব্যপক পরিবর্তন নিয়ে আসে।রেল লাইন প্রতিষ্ঠা,চট কল নির্মাণের মধ্যে দিয়ে গ্রামীন বাংলার যূথবদ্ধ গোষ্ঠীজীবনে চূড়ান্ত আঘাত আসছে।মানুষ তার চিরায়ত জীবন জীবিকা ছেড়ে ইংরেজের চট কল কাজ নিতে বাধ্য হচ্ছে। বৃত্তি বদলে যাওয়া জমি হারানো এই সমস্ত মানুষের হতাশা- দগ্ধ,যন্ত্রণাদর্ণী জীবনের কথা এই উপন্যাসের উপজীব্য।
জনপদ এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছে। ফরাসডাঙ্গার বিস্তীর্ন অঞ্চলের জনজীবনের রূপকে তিনি উপনিবেশিক বাংলার গ্রামকথা তুলে ধরতে চেয়েছেন।গ্রাম্য মানুষের বিশ্বাস- সংস্কার-মূল্যবোধ- আদর্শবাদ সমরেশ নিঁখুতভাবে এেঁকেছেন। গতানুগতিকতায় অভ্যস্ত এই গ্রামীণ মানুষের মধ্যে লখাই,লক্ষ্মীন্দর সিপাহি বিদ্রোহের পলাতক সৈনিকের হঠাৎ করে আর্বিভাব ঘটে।দেশ প্রেমিক যোদ্ধা যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বাংলার গ্রাম সদরে মা মনসার বরপুত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।সে আগন্তুক। ঐতিহাসিক সত্যের খাতিরে লখাই বহিরাগত।তার মত আর্শীবাদ, দেশপ্রেমিক চরিত্র তৎকালীন গ্রামীণ পটভূমিকায় জন্মান সম্ভব ছিল না।লক্ষ্মীন্দরের মধ্য দিয়ে লেখক দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসা এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অন্ধ ক্রোধ ও ঘৃণা ফুটিয়ে তুলেছেন। জমির নতুন আইনে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে সে। চটকলের প্রসার ও চটকলে চাকরি গ্রহনে প্রস্তুত গ্রাম্য মানুষকে সাধ্যমতো বাধা দিতে চেষ্টা করে।মানুষের অনিবার্য বৃত্তি বদল রুখতে না পেরে হতাশ যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়।শুধ লখাই নয়, ইংরেজ প্রবর্তিত যন্ত্রযুগ,ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ফরাসডাঙ্গার তাঁতি কানু ভড়,তার বৌ- মেয়ে,গণি মিঞা ও তার বিবি সুন্দরী লতিফা,কালো দলে,শ্রীশ, শ্যাম,পবন চাঁড়াল,নারান,মনদ,কাতু,শ্রীনাথ কাঠুরে ও তার দুই বৌ প্রমুখ বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষ ব্যক্তিজীবন তছনছ হয়ে যায়।ফরাস ডাঙার সৌখিন তাঁতি কানু ভড় তুলোর অভাবে তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।সৌখিন বিলিতি সুতোর আমদানিতে দেশি সুতোর আকাল ঘটায় তাঁত শিল্পে ভয়ংকর বিপর্যয় আসে। নতুন খাজনা আইন অনুসারে বর্ধিত খাজনা দিতে না পারায় কানু ভড়ের জমি নিলামে বিক্রি হয়ে যায়।তার কাছে একমাত্র উপায় বেঁচে থাকে " রিষড়ের পাটকলে পাটের বোরো" বুনতে যাওয়া।স্বাধীন শিল্পী এই গোলামী মেনে নিতে পারে না।তার আত্ম মর্যাদায় তাতে আহত হয়।অসুস্থ মেয়ে এবং অসহায় স্ত্রীকে রেখে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।তার মেশে ওধুধ পথ্যের অভাবে মারা যায়।স্ত্রী শেষমেশ চটকলের মজুরনীর কাজে যোগ দিয়ে জীবন টিকিয়ে রাখে।অথচ এক সময় " মহাজনেরা এসেছে,পাইকারি বিক্রেতা এসেছে কানু ভড়ের বাপের, ছেলের নামকরা কাপড় নিতে।সবাই বসে গল্প করেছে, ধামা- ভরতি মুড়ি খেয়েছে,জল খেয়েছে,পান চিবিয়েছে, তামাক টেনেছে দু চোখ বুজে।বসে থেকে মাল নিয়ে গেছে।" শিল্পী কানুর এই পারিবারিক বিপর্যয়, তার দেশকালপরিবেশের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।' পবন চাঁড়াল আর তার জন্ম পিরীতে বৌ' তারা দেনদার দায়ে ভিটে মাটি হারিয়ে চটকালে কাজ নিতে বাধ্য হয়।সেখানে 'নারীমাংসলোভী' মিল মালিক ক্রকসেন সাহেবের লোলুপ চক্রান্তে তাদের ভালোবাসার ঘর ভেঙে যায়।চাষের জমি নিলামে উঠলে গণি মিঞাও সুন্দরী স্ত্রী লতিফাকে নিয়ে ডোমনী পাড়ার কলে খাটতে যাবে বলে স্থির করে ফেলে।সে স্বপ্ন দেখে কলের শ্রমিক হিসেবে সে স্ত্রীকে স্বাধীন জীবন যাপন করবে।মহাজনের মতো অর্থবান কেউ তার স্ত্রীকে কেড়ে নিতে আসবে না।কিন্ত চট কলের বস্তিতে তারা,কাতু,কাঠুরে বৌদের পরিণতি দেখে এ কথা বলা যায় লতিফার নিস্তার সেখানে নেই।জনপদের অপরিহার্য অঙ্গ মুরলী দাসের বোষ্টম আখড়াও ভেঙে দিয়ে চটকল মাথা তুলে দাঁড়ায়।
গ্রামীন সমাজ সংস্কৃতি ধ্বংস করে দুলে পাড়া,ডোম পাড়া,সেনাপাড়া,বোষ্টম আখড়ার ভগ্নস্তূপের উপর " এক বিচিত্র বিশাল যন্ত্র দাঁড়াচ্ছে মাথা তুলে।..... তারপর আরো আরো..... সমস্ত জগৎটাই যেন ছেয়ে ফেলছে কেবলি চটকল... চটকল... চটকল।" সর্বগ্রাসী পুঁজির এই আক্রমণে সেদিন ভেঙে পড়েছিল কৃষিভিত্তিক গ্রাম জীবন,পারস্পরিক মানবিক সম্পর্ক এবং একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে গড়ে ওঠা একাত্ম গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন।সমরেশ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ হৃদয় ভাঙার কথা আমাদের শোনাতে চেয়েছেন।