তথ্যচিত্রের ইতিহাস : দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পরবর্তী পর্ব

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরই ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আসে। একশ নব্বই বছর পর স্বাধীনতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার ব্রত আরম্ভ হয় নতুন উদ্যমে। এর ফলে দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিপুল পরিবর্তন আসতে থাকে। শিক্ষা -সংস্কৃতিকেও ঢেলে সাজানোর যজ্ঞ শুরু হয়। উন্নত মানের চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণের দিকে নজর দেওয়া হয়। গুণগত মানের ওপরেও গুরুত্ব দেওয়া হলে ভারত সার্থক তথ্য চিত্রগুলি তৈরি করতে সক্ষম হয়। কিছু বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থাও তথ্য চিত্র তৈরি  করতে থাকে। টাটা, ডানলপ, আই. টি. সি., হিন্দুস্থান লিভার, এউ. এস. আই. এস. এবং টি. সি. এম. এর মতো সংস্থার উদ্যোগে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, উপত্যকা প্রকল্প প্রভৃতি নানা বিষয় নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি হতে থাকে এই সময় থেকে। তখন ‘সেইল’ এর মত সংস্থাও তথ্যচিত্রের পৃষ্ঠপোষকতা করে। 1948 সালে ভারতের স্বাধীন সরকার ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল প্যারেড’ কে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করে। ভারতের অতীত ও বর্তমানকে জানার জন্য, বোঝার জন্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্য তথ্য ও বেতার মন্ত্রক  থেকে ‘ফিল্ম ডিভিশন’ এর জন্ম হয়। এছাড়া ট্রেড নেম, ‘ইনফরমেশন ফিল্ম অফ ইন্ডিয়া’র বদলে রাখা হয় ‘ডকুমেন্টারি ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড’ এর বদলে ‘ইন্ডিয়ান নিউজ  রিভিউ’ নামকরণ করা হয়। ফিল্ম  ডিভিশন ধীরে ধীরে  বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যচিত্র  নির্মাণ সংস্থাতে  পরিণত হয়। ফিল্ম ডিভিশন -এ সিনেমা সম্পাদনা, সাউন্ড রেকর্ডিং এবং প্রজেকশনের জন্য কর্মী নিযুক্ত করা হয়। এখানে কর্মীরা ‘সিফ্ট ওয়ার্ক’ এ কাজ করতে শুরু করে এবং তারা অন্যান্য সরকারি  সংস্থার কর্মচারীদের  মতই  সুবিধা  ভোগ করে থাকে। 
পাঁচের দশকে ভারতীয় তথ্যচিত্রের জগতে ‘পল জিলস’ এর হাত ধরে বিপ্লব আসে। এই ‘পল জিলস’ ছিলেন একজন জার্মান যুদ্ধবন্দি। তিনিই স্বাধীন ভারতে তথ্যচিত্র আন্দোলনের নেত্রিত্ব দেন। তাঁর যোগ্য শিষ্যদের মধ্যে  অন্যতম হলেন শুকদেব‌, ফালি বিলি মরিয়া, ক্লেমেন্ট ব্যাপ্টিস্টা, শান্তি চৌধুরী, হরি সাধন দাশগুপ্ত প্রমুখ। এঁরাই ভারতীয় তথ্যচিত্রকে নতুন ভাবে এগিয়ে যাবার পথ দেখায়।  তবে স্বাধীন ভারতে ‘ইন্ডিয়া 67’ নামে তথ্যচিত্রটি  তৈরি  করেন  রবার্টো রোসোলিনি  নামে এক বিদেশি।  
গত শতাব্দীর তিনের দশক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিল্ম ফেস্টিভ্ল এর আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে শ্রেষ্ঠ গুণ সম্পন্ন চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্রকে পুরস্কৃত করা শুরু হয়। বিশ্বের প্রাচীনতম চলচ্চিত্র উৎসব হল’ ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্ল’, এটি 1932 সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়। ভেনিসের লিডো দ্বীপে প্রথম উৎসব হয়। এর পর 1935 সাল থেকে’ অত্তাভিও ক্রযে’র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হতে থাকে। 
1935 সাল থেকে রাশিয়ায় ‘মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্ল’ও শুরু হয়।
চারের দশকেও  ব্রিটেনে  সিনেমা ও তথ্য চিত্রের ওপর পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। ‘একাডে্মি  অওয়ার্ড’ নামে এই পুরস্কারটি দেয়’ অকাডেমি অফ মোশন পিকচার্স আর্ট এন্ড সাইন্সেস’( এ এম পি এ এস)।  সেরা তথ্য চিত্রের জন্য প্রথম অকাডেমি অওয়ার্ড্ পায় ‘কাকুন’ ছবিটি। ‘টার্গেট ফর টু-নাইট’ নামক ছবিটিও প্রশংসিত হয়। এই পুরস্কার দেওয়া হয় 1942 সাল থেকে।
 ফ্রান্সের ‘কান’ শহরে ‘কান ফিল্ম ফেস্টভ্ল’ 1946 সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উৎসব এটি। দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর ‘কান’ এ প্রতি বছর সাধারণত মে মাসে এটা অনুষ্ঠিত হয়।
জার্মানের ‘বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্ল’ প্রথমে পশ্চিম বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয় 1951 সালে। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব। এই উৎসব ‘বার্লিনেল’ নামে ও পরিচিত। 
‘সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্ল’ 1954 সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও যেগুলি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র উৎসব সে গুলি হল- ‘টোকিও ফিল্ম ফেস্টিভ্ল’, ’টরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্ল’ এবং ’ট্রাইবেকা ফিল্ম ফেস্টিভ্ল’। এর ফলে বিশ্বের সমস্ত দেশেই উৎকৃষ্ট মানের ছবি নির্মাণের আগ্রহ বড়তে থাকে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ‘জাতীয় পুরস্কার’ দেওয়া হয় 1953 সাল থেকে। প্রথম জাতীয় পুরস্কার লাভ করে ’মহাবলীপুরম’ তথ্য চিত্রটি। ছবিটি ফিল্ম ডিভিশনের পক্ষ থেকে বানানো হয়। পরিচালনা করেন জগৎ মুরারি। প্রথম হিন্দি ভাষায় তথ্যচিত্র জাতীয় পুরস্কার পায় 1958 সালে এ কে চৌধুরি পরিচালিত ‘কল অফ মাউন্টেইন’ ছবিটি। দাদা সাহেব ফালকে  ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের দিশারী। প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন  দ্বিতীয় দশকেই। সারা জীবন নিরলস পরিশ্রম করে তিনি মোট পঁচানব্বইটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ও ছাব্বিশটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি করেন। ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য 1969 সাল থেকে তাঁর নামে পুরষ্কারের আয়োজন করা হয়। ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানকারী  পুরস্কার হল ‘দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার‘। দেবিকা রাণী প্রথম এই পুরস্কার পান। ভারতের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
আমেরিকায়  চলচ্চিত্র ও তথ্য চিত্রের ওপর প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের আয়োজন করা হয়। সান্ডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্ল 1985 সাল থেকে শুরু হয়। প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত  তথ্য চিত্র ‘Seventeen’ পরিচালনায় ছিলেন ‘joel De Mott’ । 
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় যুদ্ধের ওপরেই ইউরোপ ও আমেরিকাতে বহু তথ্যচিত্র তৈরি হয়। সে সম্পর্কে আগের পর্বে আলোচনা করেছি। যুদ্ধের আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবন- যাপনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে বেশ কিছু দিন। নতুন করে ভাবতে, নতুন স্বপ্ন  গড়তে সময় লেগে যায় সব দেশেরই, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোর তো বটেই। যুদ্ধ থেমে যাবার কিছু দিন পর, গত শতাব্দীর পাঁচের দশক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। ক্যামেরা নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছবি তুলতে যে ক্যামেরার প্রচলন হয়, সেটি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যুদ্ধের প্রচার ধর্মী  কাজে সুবিধা জনক ক্যামেরা তৈরি হয় 16 মি মি  সুপার এইট ক্যামেরা । এই ক্যামেরা  ওজনে হাল্কা, ছোট, সস্তা, ফিল্মও কম লাগে । এই ক্যামেরা বহন করা সুবিধা জনক বলে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ব্যবসা, শিক্ষা ও তথ্যচিত্র নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতে থাকে । আগে 35 মি মি মিচেল বি এন সি ক্যামেরা ব্যবহার করা হত।  ক্যামেরাটি আকারে খুব বড় ছিল,  একজনের  পক্ষে এই ক্যামেরা বহন করা সম্ভব ছিল না। তার ওপর প্রতি সেকেন্ডে 90 ফুট ফিল্ম লাগত, কিন্তু 16 মি মি এর নতুন ক্যামেরায়  মিনিটে মাত্র 36ফুট ফিল্ম দিলে হত। এই সময় আরো যে ক্যামেরা তৈরি হয় সেগুলির মধ্যে আরিফ্লেক্স 35 ক্যামেরা খুব উল্লেখযোগ্য। নির্বাক ছবির জন্য এটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এটি বহনযোগ্য এবং ব্যাটারির আলাদা বেল্ট ও ইন্টার চেঞ্জেবল মোটর ছিল। বেল ও হাওয়েল -এর 35 মি মি ক্যামেরাও বহন যোগ্য এবং বিভিন্ন সাঁটার থাকার কারণে জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে  সবচেয়ে ভালো কাজ করে যে ক্যামেরা তা হল- এক্লেয়ার এন পি আর 16 এবং রোলেক্স রিফ্লেক -16 ক্যামেরা।  শেষোক্ত ক্যামেরাটি  স্পিরিং পাওয়ার মোটর যুক্ত যার ফলে প্রতি সেকেন্ডে 12 থেকে 64 ফ্রেম ছবি তোলার ক্ষমতা রাখে। এই ক্যামেরা ইউরোপ ও আমেরিকায় খুব জনপ্রিয় হয়।  সুবিধাজনক ক্যামেরা হাতে পেয়ে  ছবি তৈরিতে জোয়ার আসে। যুদ্ধ শেষের আশ্বস্ত পরিবেশে, যুদ্ধকালীন সঞ্চিত অভিজ্ঞতা নিয়ে একদল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে নতুন ছবি নির্মাণে। তৈরি হয় অসংখ্য চলচ্চিত্রের সঙ্গে উন্নত মানের তথ্যচিত্রও। কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য তথ্যচিত্রের কথা বলতে গেলে যে ছবিগুলির কথা বলতে হয় সে গুলি হল-
  • ‘Henry Moore’(1951) ছবিটির পরিচালক  হলেন John Read, 
  • ‘Victory at Sea’(1952) এই ছবির পরিচালনা করেন m. Clay Adamas,
  •  ‘Eye to eye: The man at Dover’,(1957 ) ছবিটি পরিচালনা করেন Richard Caws ton’ এবং ‘Pamela bower’
  • ‘Song of valley’(1957),  ছবির পরিচালক John Schlesinger। 
পাঁচের দশকে জার্মানে তৈরি  হয়-Night and fog (Nacht und nebel)- 1956 সালে। পরিচালক Alain Resnais ফরাসি ভাষায় তৈরি করেন 32 মিনিটের এর এই ছবিটি।  
Albert এবং David maysles মিলে তৈরি  করেন Salesman নামক  একটি ছবি। 1969 সালে আমেরিকায়  ইংরাজি ভাষায়, একজন বাইবেল সেলসম্যান কে নিয়ে তৈরি হয় ছবিটি।
1967 সালে ‘Don’t look back’ নামের ইংরেজি ভাষার আমেরিকান ছবিটি পরিচালক-D.A. Pennebaker। ওই বছরে ‘Titicut follies’ নামে আর একটি ছবি তৈরি হয় Frederick Wiseman এর পরিচালনায় ইংরেজি ভাষার ছবিটি  তৈরি হয়।
 আমেরিকায় 1970 সালে ‘Woodstock’ নামে একটি ছবি তৈরি হয় Michael Wad Leigh এর  পরিচালনায় ইংরাজি ভাষায় ছবিটি তৈরি হয়।
1970 সালে ‘Gimme Shelter‘ নামে  ছবি করেন পরিচালক Albert এবং David maysles মিলে। ব্রিটেন ও আমেরিকায় ছবিটি মুক্তি পায়। তাঁদের ‘Grey Gardens’( 1975) নামে আর একটি ছবি খুবই উল্লেখযোগ্য।  মা ও মেয়ের  গ্রে গার্ডনের বাড়ি নিয়ে তৈরি ছবি এটি।
1982 সালে ‘koyaanisqatsi’ (life out of Balance) আমেরিকার পরিচালক Godfrey Reggio ইংরাজি ভাষায় ছবিটি তৈরি করেন।
1986 সালে Sherman’s March ছবিটি Rose Mc Elwee এর পরিচালনায়  ছবিটি নির্মিত হয়, এটি 156 মিনিটের ছবি। ছবিটি  ইংরাজি ভাষায় তৈরি হয় এবং 1987 সালে সান্ডান্স ফিল্ম ফেস্টিভলে গ্রান্ড জুরি অওয়ার্ড লাভ করে। 
 পাঁচ থেকে আটের দশকে নির্মিত বহু ছবি তথ্য চিত্রের জগতে বিপ্লব এনেছিল।  তবে স্বস্তির বিষয় হল, এই সময়ে তথ্য চিত্রগুলির যুদ্ধ ছাড়াও সামাজিক জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।
 পাঁচের দশক থেকেই ভারতে ও বাংলায় সার্থক তথ্য চিত্রের আগমন ও বিকাশ ঘটে। স্বাধীনতার পরে সরকারি সংস্থা ’ফিল্ম ডিভিশন’  সিনেমার উপর  নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে থাকে। পাঁচ এবং ছয়ের দশকে বেশ কিছু নতুন ধরনের ছবি তৈরি হয়। এই সময় এম এফ হূসেন বানান ‘ Through the eyes of the painter’। এই ছবিটি বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভলে গোল্ডেন বিয়ার লাভ করে। প্রতাপ চন্দ্র শর্মা বিহারের দুর্ভিক্ষের ওপর নির্মান করেন, ‘ Frame work of Femine’. এই সময়  নির্মিত তথ্য চিত্রের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল,’India-67’। সিনেমার নাটকীয় ট্রিটমেন্ট, কন্ট্রাস্ট শর্ট, ড্রামাটিক জাস্টাপজিশন ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া টি এ আব্রাহাম এবং কে এস চারি মিলে একটি ছবি তৈরি  তার নাম, ‘ Face to Face’, এস এন এস  শাস্ত্রী তৈরি করেন ‘Actual experience no.1’। ফিল্ম ডিভিশন কতগুলি সার্থক তথ্য চিত্র নির্মাণ করে, এগুলি হল- উড়িষ্যার কৃ্ষি মজুরদের জীবন নিয়ে তৈরি হয়,’The house that Anond Build’।
 লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে নিয়ে তৈরি হয়,’হোমেজ অফ লালবাহাদুর শাস্ত্রী’একটি উৎকৃষ্ট মানের তথ্যচিত্র।
জহর লাল নেহেরুকে নিয়ে তৈরি হয়,’হোমেজ অফ জহরলাল নেহেরু’,নেহেরুজ লাস্ট জার্নি’। 
ছয়ের দশকে ফিল্ম ডিভিশন তথ্য চিত্র –নির্মাতাদের কিছুটা হলেও স্বাধীনতা দেয়। এর ফলে নির্মিত হয় মাধবনের ‘রাধাকৃষ্ণ’,শান্তি বর্মার ‘খাজুরাহ’,নীল গোখেলের ‘সিটি অফ জয়’। তবে ফিল্ম ডিভিশনের তৈরি ছবিগুলোতে জাতীয় সংহতি ও ভারতীয় জীবন প্রকাশিত হয় বেশি।
এরপর মিস্টার ভাওনাগরি ‘ফিল্ম ডিভিশনে’র  অধিকর্তা হলে এই শিল্পের জগতে আর একটু স্বাধীনাতার বাতাস লাগে। তাঁর সহযোগী ছিলেন বার্মাসেল কম্পানির ফিল্ম ইউনিটের ‘জেমস ব্রেভারিজ’। চন্দা কমিটি অন ইনফরমেশন আ্যন্ড ব্রডকাস্টিং ও ‘ভাও নাগরি’র  সিনেমা বিষয়ক  প্রস্তাব  তদানীন্তন সরকার মেনে নেয়। কিছু ফিল্ম সোসাইটি  রাজ্য সরকারের নথিভুক্ত সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বদ্ধ হয়ে তৈরি করে এক গুচ্ছ তথ্য চিত্র। বার্মাসেল তৈরি করে’ লাইফ ইন্ডিয়া’ নামে এক গুচ্ছ উল্লেখযোগ্য সিনেমা।
বিংশ শতাব্দির পাঁচের দশকে বাংলা তথ্য চিত্রের বিপ্লব আসে বললেও অত্যুক্তি হয় না । বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই  যে বীজ হীরালাল সেন বপন করেছিলেন, কয়েক দশক অপেক্ষার পর সেই বীজ মহীরুহ হয়ে দেখা দেয় পাঁচের দশকে।  বাংলা তথ্য চিত্র কয়েকজন তরুন যুবকের হাত ধরে বিকশিত হয়ে ওঠে।  এই কয়েকজন শিক্ষিত সিনেমা প্রেমী তরুন কলকাতায় ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট গড়ে তোলেন। শুরু হয় এক নতুন যুগের। যাঁদের হাত ধরে এই যুগ শরু হয় তাঁরা হলেন হরি সাধন দাশগুপ্ত, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, শান্তি চৌধুরী, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, বিমল কর, পূর্ণেন্দু পত্রী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী,  গৌতম ঘোষ প্রমুখ।
 এই সময় হরি সাধন দাশগুপ্ত ভারতীয় তথা বাংলা তথ্য চিত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিনেমাটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা করেন। পরবর্তীতে তিনিই হয়ে ওঠেন ভারতীয় তথ্য চিত্র আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারী। তিনি ফিল্ম ডিভিশন, ইউ এস  আই এস, ইউনেস্কো , টি বোর্ড  সংগীত নাটক একাডেমি প্রভৃতি সংস্থার হয়ে নানা ধরনের তথ্যচিত্র  তৈরি করেন। তাঁর  নির্মিত  তথ্য চিত্রগুলি হল-
  •  1)Panchthupi: Avillage in west Bengal-1956
  •  2) A tale of two leaves and a bud-1956 
  • 3) Konark-1958
  • 4)Bare Ghulam ali Khan-1964
  • 5)Baba-1965
  • 6 ) From Mizoram With Love-1982
  • 7)Acharya Nandalal-1984।
  ময়ুরাক্ষী নদীর তীরে পুরুলিয়ার পাঁচথুপি গ্রামের দুর্গা পুজো ও তাকে ঘিরে উৎসবকে কেন্দ্র করে  তৈরি করেন ‘পাঁচথুপিঃ এ ভিলেজ ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’। চা বাগানকে কেন্দ্র করে তৈরি করেন ‘টেল অফ টু লিভস এন্ড বাড’। বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ বড়ে গোলাম আলি খানের জীবন অবলম্বনে তৈরি করেন ‘বড়ে গুলাম আলি খান’ এবং বিখ্যাত সরোদ শিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ-র জীবন অবলম্বনে তৈরি করেন ‘বাবা’ নামক তথ্য চিত্র। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর জীবন অবলম্বনে তৈরি করেন ‘আচার্য্য নন্দলাল’। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হয়। মিজোরাম  রাজ্যের ওপর তৈরি করেন ‘ফ্রম মিজোরাম উইথ লাভ’ নামক তথ্য চিত্রটি। ফিল্ম ডিভিশনের প্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হয়। সারাজীবন নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করে তথ্য চিত্রগুলি তৈরি করেন। তথ্য চিত্র হোক  বা কাহিনী চিত্র,  তার গুনমানই প্রকৃত বিচার্য। গুনমানের দিক থেকে তাঁর তথ্য চিত্রগুলি ছিল উন্নত মানের। তথ্য চিত্র নির্মাণে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে  Honouring the Master বিভাগে সম্মানীত করা হয় 1994খ্রিঃ।
বাংলার আর একজন বিশিষ্ট তথ্য চিত্রকার হলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি  বিশ্ব বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছিলেন। তবে মোট পাঁচটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে তথ্যচিত্রকে  গৌরবান্বিত করে তোলেন । 1947 সালে তিনি চিদানন্দ দাশ ও অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা ফিল্ম সোসায়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।  তাঁর তৈরি তথ্য চিত্রগুলি হল-
  • 1)Rabindranath tegore-1961
  • 2)The Inner eye-1972
  • 3)Bala-1976
  • 4)Sukumar Roy-1987
  • 5)Sikkim-1987
এই পাঁচটি তথ্য চিত্রের মধ্যে  প্রথম চারটি জীবনী মূলক এবং শেষেরটি তথ্য সংগ্রহ মূলক। তাঁর প্রত্যেকটি  ছবিতে মৌলিকত্বের ও তাঁর  নিজস্ব ঘরানার ছাপ রয়েছে ।  তাঁর তথ্য চিত্রগুলির মধ্যে ‘ইনার আই’ শ্রেষ্ঠ ছবি। সত্যজিত রায়ের ভাষায়,  এ ছবি নির্মান করেছি আমি আমার গভীর এক অনুভূতি থেকে।‘
সত্যজিৎ রায়ের পরে যাঁর নাম করতে হয়, তিনি হলেন ঋত্ত্বিক কুমার ঘটক। তাঁর চলচ্চিত্র ও তথ্য চিত্র দুই ই বিশেষ রুচির পরিচয় বহণ করে। তাঁর তথ্যচিত্র গুলি হল-
  •   Adivasiyon ka jeeban Short-1955
  •   Bihar ka Darshaniya Sthan-1955
  •   Scientists of Tomorrow-1967
  •   ChhouDance of Purulia-1970
  •   Amar lenin-1970
  •   Why-1970
প্রথম  দুটি  তথ্য চিত্র তৈরি করার পর আরও  দুটি তথ্য চিত্রের কাজ শুরু করেও শেষ করতে পারেননি। আদিবাসীদের জীবন ও বিহার রাজ্যের দর্শনীয় স্থান নিয়ে তথ্য চিত্র  করার পর দেশে বিজ্ঞান চর্চার প্রসার ও ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা রেখে  আর লোকনৃ্ত্যের প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিক অনুভূতির কথা প্রকাশ করে তৈরি করেছেন ‘সাইন্টিস্ট অফ টুমোরো’ এবং ‘ছৌ ডান্স অফ পুরুলিয়া’। ১৯৭০ সালে  ‘আমার লেনিন’ তথ্য চিত্রে সংগীতের  অসাধারণ প্রয়োগ  করে দেখান। তথ্য চিত্রটিতে সংগীত ব্যবহার খুব প্রশংসা পেয়েছিল। পরিচালনা করেছিলেন  জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। ১৯৭১ সালে  ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে একটি তথ্য চিত্র নির্মাণের  কাজে হাত দেন  কিছুটা কাজ হয়ে ‘দুর্বার গতি পদ্মা’ নামক তথ্য চিত্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি অন্য একটি তথ্য চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করেন কিন্তু সেই ’রামকিঙ্কর ‘ নামক তথ্যচিত্রটি শেষ করার আগেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তথ্য চিত্রটি অসমাপ্ত রয়ে যায়। ঋত্বিক ঘটকের তথ্য চিত্রে বিষয়ের বৈচিত্র যেমন রয়েছে তেমনি বৈশিষ্টেরও বৈচিত্র  রয়েছে। আপন বৈশিষ্ঠে তথ্যচিত্রের জগতে চীরস্মরণীয় হয়ে থাকবে  তাঁর  নির্মিত তথ্য চিত্রগুলি।
পল জিলের আর একজন সুযোগ্য সহকারী ছিলেন  শান্তি চৌধুরী। তাঁর তথ্য চিত্রের মধ্যে  চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে পরিতোষ সেন এবং মকবুল ফিদা হোসেন  নিয়ে তথ্য চিত্রগুলি  অত্যন্ত প্রশংসনীয় হয়। তিনি ‘বাংলার কবিগান’, ’ফোক মিউজিক অফ পাঞ্জাব’  নামক তথ্য চিত্র নির্মাণ করেন । 
কলিকাতা ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্টের অন্যতম পুরোধা হলেন চিদানন্দ দাশগুপ্ত। অত্যন্ত কম সংখ্যক ছবি নির্মান করলেও তিনি বাংলার তথ্য চিত্রকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা দিয়েছেন। তাঁর নির্মিত তথ্যচিত্রগুলি হল-
  • 1) Portrait of the city-1961
  •  2) Dance of Shiva-1968
  • 3)Birju Maharaj-1972
1961 সালে কলিকাতা শহরকে নিয়ে তৈরি করেন ‘পোরট্রেট অফ দ সিটি’। এই ছবিটিতে বারিন সাহা ক্যামেরা ম্যানের কাজ করেন,অসামান্য সেই  কাজ দেশে ও বিদেশে  প্রসংশা পায়। এরপর  আনন্দ কুমার  স্বামীর রচিত প্রবন্ধকে অবলম্বন  করে নির্মিত’ ডান্স অফ শিবা’। 1972 সালে বিখ্যাত কত্থক শিল্পী বিরজু মহারাজের জীবন নিয়ে তৈরি করেন ‘ বিরজু মাহারাজ’ নামক তথ্যচিত্রটি।
  এই সময় মৃণাল সেন বেশ কিছু তথ্যচিত্র নির্মান করেন তার তথ্য চিত্রগুলি হল –
  • 1)      Moving Perspective-1967
  • 2)      Tripura Prosongo-1982
  • 3)      Calcutta my EIDorado-1990
  • 4)      Indian chapter-1990
মৃণাল সেন ভারতের ইতিহাসের পাঁচ হাজার বছরের প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমান সমাজকে দেখিয়েছেন। পরের ছবিতে ত্রিপুরা রাজ্য নিয়ে একটি তথ্য চিত্র তৈরি করেন, ’ত্রিপুরা প্রসঙ্গ’ নামে। সিনেমার শতবার্ষিকী  উপলক্ষে তৈরি ‘এন্ড দ্য শো মাস্ট গো অন’-এর  সিরিজে ইন্ডিয়ান চ্যাপ্টার।
ছয়ের দশকের বাংলা তথ্য চিত্রের আকাশে বিমল রায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।  তিনি দুটি তথ্য চিত্র নির্মান করেন-
  • 1)      Immortal Stupa-1961
  • 2)      Life and messege of Swami Vivekananda-1964
 বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মান করেন ।
  • 1)Abonindranath-1976
  • 2)pata Chitra-1977
  • 3)Kalighat  Pat-1981
  • 4)Khirer putul-1082
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত যে তথ্য চিত্রগুলি তৈ্রি করেন –
  • 1)The continental of love-1968
  • 2) ঢোলের রাজা ক্ষীরোদ নট্ট’-1973
  • 3) Fisherman of sundarban-1974
  • 4) Rythim of Steel-1981
  • 5)biggan o tar abishkar-1980
  • 6)Indian Sceince marches ahead-1984
  • 7) Story of Glass-1985
  • 8)History of Indian jute.1990
কখনও সুন্দরবনের মৎসজীবীদের জীবনে, কখনও ভারতীয় বিজ্ঞানকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মান করে আলোড়ন তুলেছিলেন।
এ ছাড়াও আরো যে  তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছিল, সেগুলি হল বারীন সাহার ‘ভাসা’, সলিল চৌধুরীর ‘গৌতম দ্য বুদ্ধ’, তরুন মজুমদারের ‘অরণ্য আমার’।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম সরকারি প্রযোজনায় তথ্যচিত্র নির্মিত হয় 1967 সালে যার নাম ‘জয়যাত্রা’। সাতের দশকে বেশ কয়েকজন স্বনাম ধন্য পরিচালক তথ্যচিত্র নির্মানে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তপন বোস, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, গৌতম ঘোষ। তপন বোসের ‘An Indian Story’, উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর‘মুক্তি চাই, গৌতম ঘোষের ‘হাংরি অটাম’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। 
1974 সালে পশ্চিমবঙ্গের খরাকে কেন্দ্র করে গৌতম ঘোষের অনবদ্য বাস্তবধর্মী প্রামাণ্য -চিত্র নির্মাণ করেন ‘হাংরি অটম’ নামে। এই সময় থেকে তথ্য চিত্রের বৈশিষ্ট্যে নতুনত্ব লক্ষ্য করা যায়।  ছবিতে ভাষার ব্যবহার কম হতে থাকে-যেমন উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর ‘দেবব্রত বিশ্বাস’, রাহুল বসুর ‘সোম নাথ হোড়’। ইদানিং তথ্যচিত্রের বিষয়ের বৈচিত্র  দেখা দিয়েছে, যেমন –সাক্ষরতা, তেভাগা আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শিশু শ্রমিক, এইডস বিরোধিতা প্রভৃতি নানা বিষয় নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে।
 সাতের দশকের তথ্যচিত্রে শুধু সমাজ নয় রাজনৈতিক বিষয়ও প্রতিপাদ্য হয়ে ওঠে। সেই কারণে রাষ্ট্র বা রাজ্য সরকারের   বিরাগভাজন হয়ে ওঠে কিছু কিছু ছবি। পরাধীন ভারতবর্ষে ভারতীয় তথ্যচিত্র ব্রিটিশ সরকারের ভাবনার ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছিল।  এই জাতীয় চিত্রশিল্পেও পুঁজির ব্যবহার লক্ষ করা গেছে। ফলে নির্মাতারা দেশীয় বা বহুজাতিক সংস্থার পুঁজি নিয়ে কাজে প্রবেশ করেছে । পুঁজি নির্ভরতা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাতাদের দায়বদ্ধতা পুঁজি নির্ভর হয়ে ওঠে। এমনকি বহু ছবি তৈরি করার পর ছাড়পত্র পেতে অসুবিধা হয়। হরি সাধন দাশগুপ্ত,  সত্যজিৎ রায় অকপটে স্বীকার করেছেন যে, তথ্যচিত্র রাজনীতির শিকার হয়। সিকিম ছবিটি সে সময় প্রদর্শনের ছাড়পত্র পায় নি। প্রায় ঊনচল্লিশ বছর পর ছাড়পত্র পায়।
 সিকিম সে সময় একটি স্বাধীন রাজতন্ত্র ছিল।
সিকিমে পর্যটকদের আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন রাজা পালডেন থনডুপ নামগিয়্যাল সত্যজিত রায়কে এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রাজা নামগিয়্যালের আমেরিকান স্ত্রী হোপ কুকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল, এবং সেই সূত্রেই রাজার সাথে যোগাযোগ হয়।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে খ্যাতি অর্জনের পর সত্যজিত রায় যে দুটো প্রামাণ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন, ‘সিকিম‘ ছিল তারই একটি।
সিকিম তৈরি হওয়ার পর এর একটি শট নিয়ে রাজা এবং তাঁর আমেরিকান স্ত্রী তীব্র আপত্তি তুলেছিলেন।
রাজধানী গ্যাংটকে রাজকীয় একটি ভোজসভার পর ফেলে দেয়া খাবার নিয়ে প্রাসাদের বাইরে দরিদ্র মানুষের কাড়াকাড়ির এক দৃশ্যে ক্ষুব্ধ রাজা শটটি বাদ দিতে বলেন সত্যজিত রায়কে।
 তিনি শটটি বাদ দিয়ে চলচ্চিত্রটি চূড়ান্ত করার পরপরই সিকিমের রাজনৈতিক পট আমূল বদলে যায়।
1975 সালে সিকিম ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
সে সময় যে কোনো ধরণের বিতর্ক এড়াতে ভারত সরকার সত্যজিৎ রায়ের এই তথ্যচিত্রের  ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রায় চার দশক পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
শুধু আমাদের দেশে নয়, আমেরিকাতে বহু আগে থেকেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ‘মর্ডান টাইমস’ 1934 সালে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক বিতর্ক জড়িয়ে পড়তে থাকেন চার্লি চ্যাপলিন। বৃহৎ শিল্পায়নের যুগে মানুষ কি করে অমানুষ পরিণত হয়, নির্বাক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছেন। এর পর 1940 সালে ‘গ্রেট ডিক্টেটর’ মুক্তির পর তাকে পুরোপুরি রাজরোষে পড়তে  হয়। যুদ্ধের পর মার্কিন বিরোধী কাজের জন্য হাউজ কমিটিতে ডাকা হয়। চার্লির কৈফিয়ত এ হাউজ কমিটি সন্তুষ্ট হয় না, শেষে 1952তে চ্যাপলিন আমেরিকা ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। 
সাধারণত তথ্যচিত্র নির্মাতাদের স্বাধীন চিন্তা ভাবনা তাঁদের ছবিতে ফুটে ওঠে। তথ্য চিত্রের মধ্যে  পাহাড়, জঙ্গল, জনপদ, লোকসংস্কৃতির নানা দিক, ভাষা, প্রভৃতি অত্যন্ত বাস্তবতার নৈপুণ্যে প্রতিভাত হয়ে ওঠে। গৌতম ঘোষের কথায়, ’শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা  হচ্ছে সত্যকথন,যা সত্যি তাই শিল্প।‘-তথ্য চিত্র সেই সত্যের প্রকাশ। তবে একথা বলা যায় বিংশ শতাব্দীর শেষ কয়েক দশকে  সিনেমার মান অনেক উন্নত হয়েছে। ভারতে নির্মিত তথ্যচিত্র গুলি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তথ্যচিত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে সক্ষম হয়। এখানকার ক্যামেরার কাজও উন্নত হয়েছে। বাংলায় যে মানের তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে তা দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জাতীয় জীবনকে কেদ্র করেই গড়ে ওঠেছে। 
 
তথ্যসুত্র -
 

1) সিনেমা সপ্তম শিল্প কলা-বরুণ দাশ.

2) আর রেখোনা আঁধারে- সজল চট্যোপাধ্যায়

3) সোনার দাগ-(শতবর্ষের আলোয় বংলা চলচিত্র)-গৌরাঙ্গ প্রসাদ ঘোষ

4) The Mossion Picture.-The new York times.

5) The early year of culcatta-cinema in sukantochOudhuriy edited:-calcutta the leaving city.